নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুকনো গোলাপ

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৩

শুকনো গোলাপ
লেখক: Srabon ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
তোমার ফিরিয়ে দেওয়া সেই গোলাপ টা আজ শুকিয়ে কালচে রুপ ধারণ করেছে। গোলাপের মতো যে আমার এ হৃদয়টাও আজ শুকিয়ে গিয়েছে। এ হৃদয়ের শুকানো কালচে বর্ণটা তুমি কখনোই দেখতে পাবেনা। শুধু পাবে দেখতে এই শুকনো গোলাপটা।
.
- মেহেদী দোস্ত সামনের সপ্তাহে আমার বোনের বিয়ে। তুই কিন্তু থাকবি সেদিন। কোন কাজের অজুহাত দেখাতে পারবিনা। (সাব্বির)
- আচ্ছা দেখি, সেদিন কোন কাজে আটকে না পড়লে অবশ্যই থাকবো। (মেহেদী)
- কাজ টাজের কথা বাদ দে, তোর সেদিন থাকতেই হবে। আমার একটি মাত্র বোন। আর সেই বোনের বিয়েতে তুই যদি না থাকিস, তাহলে তুই কেমন বন্ধুরে আমার?
- দোস্ত এভাবে বলিস কেন? জানিস তো নতুন চাকরি পেয়েছি, কাজের চাপও অনেক।
- তবুও তোর থাকতেই হবে।
- আচ্ছা চেষ্টা করবো।
.
সামনের সপ্তাহে সাব্বিরের বোনের বিয়ে। মেহেদী ভাবছে আজকেই তার অফিসের স্যারকে বলে রাখবে ছুটির কথা। যাতে করে সে বিয়েতে যেতে পারে।
অফিসের স্যার আবার মেহেদীকে খুব পছন্দ করে। মাত্র কয়েকদিন চাকরিতে জয়েন করে মেহেদী যে পারফরমেন্স দেখিয়েছে তা অবাক করার মতো।
মেহেদী অফিসে গিয়ে প্রথমেই স্যারের রুমে নক করলো।
- আসতে পারি স্যার?
- জ্বী জ্বী আসুন, বসুন।
সৌজন্য সাক্ষাত শেষে মেহেদী তার ছুটির ব্যপারে স্যারকে জানালে স্যার বললো "অবশ্যই। তোমার বন্ধুর বোনের বিয়ের জন্য তোমার ছুটি লাগবে, এটাতে না করার কি আছে? তুমি সামনের সপ্তাহে অবশ্যই ছুটি পাবে।"
মেহেদী তার স্যারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার নিজের কেবিনে এসে সাব্বিরকে ফোন দিলো।
- হ্যাঁ দোস্ত বল। (সাব্বির?
- অামি থাকবো তোর বোনের বিয়েতে।
- ওকে দোস্ত, ধন্যবাদ তোকে।
- এখানে ধন্যবাদের কি আছে?
- তুই তো জানিস আমার বাবা নেই, তুই সাথে থাকলে আমি একটু শক্তি পাবো।
- আচ্ছা দোস্ত থাকবো আমি।
.
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো। আগামীকাল মিতুর বিয়ে। সাব্বির মেহেদীকে বিয়ের আগের দিন যেতে বলেছিলো। তাই মেহেদী আজই বেরিয়ে পড়লো সাব্বিরের বাসার উদ্দেশ্যে।
সাব্বিরের বাসা বেশি দূরে না। হেঁটে গেলে আধাঘন্টার মতো লাগে।
সাব্বিরের বাসায় পৌছে সে দেখে সাব্বির বাড়ির সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত। আসলে তার আপন বলতে তেমন কেউ নেই। আর যারা আছে, তারা থেকেও নেই। আগামীকাল বিয়ে। তাই আজকেই বাড়ির সাজসজ্জাসহ আরো নানান বাহ্যিক কাজ গুলো মেহেদী আর সাব্বির সেরে ফেললো।
.
রাতে মেহেদী আর সাব্বির বাড়ির উঠোনে পাটি পেতে বসে আছে। বাড়ির এককোণে কয়েকটি মেয়েও বসে আছে। তাদের সাথে সাব্বিরের বোন মিতুও রয়েছে। মেহেদী তাদের দিকে তাকিয়ে তার চোখ দুটো ফেরাতে পারছেনা। তার চোখ দুটো কিছু একটার দিকে আটকে গেছে। সে সাব্বিরকে বললো
- দোস্ত ঐ মেয়েটা কে রে?
- কোন মেয়েটা?
- ঐ যে মিতুর পাশে নীল শাড়ি পড়ে বসে অাছে।
- ও, ও তো রিতু। মিতুর বান্ধবী।
- বাসা কোথায় ওর?
- আমি বলতে পারবোনা। মিতুর থেকে শুনতে হবে।
- মেয়েটা দেখতে দারুণ, তাইনা?
- হুম। কিন্তু কেন বলতো? তোর কি ওকে পছন্দ হয়েছে?
- হুম।
- বলবো ওকে।
- না থাক, বলার দরকার নেই।
- এখন বলে রাখি। তাহলে পরে কিছু একটা হতে পারে।
- আরেহ না, তোর বলতে হবেনা। দেখি আমি নিজেই কিছু বলতে পারি কিনা?
- যা ভালো মনে করিস।
.
মেহেদী উঠে গিয়ে মিতুদের ওখানে গেলো।
- কেমন আছিস মিতু?
- এইতো ভাইয়া ভালোই আছি। আপনি কেমন আছেন?
- সামনে তোর এতো সুন্দর বান্ধবী থাকতে খারাপ থাকি কেমনে?
রিতুর দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো মেহেদী।
- মানে?
- না, কিছুনা।
মেহেদী রিতুর রুপের প্রশংসা করাতে রিতু লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। ব্যপারটা বুঝতে পেরে মেহেদী মিতুকে বললো
- তোর সুন্দরী বান্ধবীটার নাম কি রে?
- আমাকে বলছেন কেন ভাইয়া? ওরেই জিজ্ঞেস করেন না!
- তোর বান্ধবী বোধ হয় লজ্জা পেয়েছে।
- লজ্জা পাবেনা? আপনি যেভাবে আমার বান্ধবীটার প্রশংসা করছেন, তাতে কি লজ্জা না পেয়ে পারে?
রিতু মিতুর এমন কথা শুনে অন্যদিকে মুখ করে বসলো। তাই দেখে মেহেদী বললো
- নাম কি তোমার?
রিতু ছোট্ট করে বললো
- আমার নাম রিতু।
- তুমি এত সুন্দর কেন? তোমাকে দেখে আমার হৃদয়ের কোণে উথাল পাথাল ঢেউ খেলছে কেন?
- আপনার হৃদয়ে সমস্যা আছে বোধ হয়। ভালো ডাক্তার দেখান।
হাসতে হাসতে বললো রিতু।
মেহেদী রিতুর হাসি দেখে মনে মনে বলছে, আহা! কি অপরুপ তোমার হাসি। মন চায় প্রেমে পড়ি, তোমায় একটু ভালোবাসি। গোধূলী লগ্নের কোন অপ্সরীর হাসির ন্যায় তোমার এই হাসি। চারিদিক তোমার হাসিতে মুখোরিত। ভুবন ভোলানো তোমার এ হাসি আমাকে পাগল করে দিয়েছে কন্যা। তোমাকে যে আমার চায়, শুধু এই হাসিটা সবসময় দেখার জন্য।
- কি ভাবেন মিস্টার?
- তোমাতে বিভোর আমি, বিভোর তোমার হাসিতে। চাই তোমার ভালোবাসা, চাই একটু ভালোবাসিতে।
- কি?
- ক ক কই, কি?
কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে আমতা আমতা করে বলে মেহেদী।
- এইযে কেবল বিড়বিড় করে কি যেন বললেন?
- কই, কিছু বলিনি তো।
- আমি শুনেছি কিন্তু?
- শুনেছোই যখন তবে আবার জিজ্ঞেস করো কেন?
- আপনি কি কবি মানুষ?
- কেন, কবি হতে যাবো কেন?
- এইযে কত সুন্দর করে আমার রুপের, হাসির বর্ণনা দিলেন!
- হাহাহা।
- হাসেন কেন?
- তোমার কথা শুনে।
- ও, আচ্ছা আপনার নামটাই তো জানা হলোনা।
- আমি মেহেদী। মিতুর ভাইয়ের বন্ধু।
- ও।
.
রাতে এরকম আরো টুকিটাকি কথা বলার পর সবাই ঘুমাতে চলে গেলো। শুধু মেহেদী আর সাব্বির বাদে। তারা দুজন উঠোনে বসেই রইলো।
বসে বসে রিতুর ব্যপারে কথা বলতে লাগলো মেহেদী। আর সাব্বির সেটা চুপচাপ শুনতে লাগলো।
মেহেদী সাব্বিরকে বললো
- দোস্ত মেয়েটা তো অনেক ফ্রি।
- কিভাবে বুঝলি?
- ওর কথা বলার ধরণ দেখে।
- কি বললি ওকে?
- ওর নাম জিজ্ঞেস করলাম।
- শুধুই নাম? আর কিছু বলিস নি? তোর যে ওকে ভালো লাগে সেটা ওকে বলিস নি?
- বলেছি তো।
- তারপর ও কি বললো?
- আরে মনে মনে বলেছি।
- ধুর বেডা মনে মনে বললে হবে? সরাসরি বলে দে।
- তোর মাথায় মনে হয় সমস্যা আছে!
- কেন, আমার মাথায় সমস্যা হবে কেন?
- সমস্যা না হলে তুই এই কথা বলতে পারতি যে, ওকে মনের কথা বলে দে? হ্লা কেবল মাত্র পরিচিত হলাম আর এখনই ওকে ভালোবাসার কথা বলবো?
আরো নানান রকম কথা বলে তারাও ঘুমোতো গেলো।
.
এদিকে রিতুও মেহেদীকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। সে ভাবছে, ছেলেটা বেশ ভালোই। কত সুন্দর করে কথা বলে। কত সুন্দর করে একজনের প্রশংসা করে। ছেলেটির সাথে বন্ধুত্ব করলে মন্দ হয়না।
সে আরো ভাবছে, আজ যদি তার বয়ফ্রেন্ড না থাকতো তাহলে সে মেহেদীর সাথেই প্রেম করতো। তবে এখন শুধু তার সাথে বন্ধুত্ব করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
মেহেদীকে নিয়ে নানান কথা ভাবতে ভাবতে রিতুও ঘুমিয়ে পড়লো।
.
পরদিন মেহেদী একটু সকাল সকাল ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিলো। সে অপেক্ষা করতে থাকলো কখন রিতু ঘুম থেকে ওঠে।
ওদিকে রিতুও একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ঘুম ঘুম চোখে বাইরে এলো। রিতু বাইরে আসতেই মেহেদী তার দিকে অবাক চাহনিতে অপলক চেয়ে রইলো। যেন তার দিক থেকে চোখ ফেরানো বড় দায় হয়ে গিয়েছে মেহেদীর। একটু চোখের পলক পড়লেই বোধ মেহেদীর এই ঘুমপরীটা নিমিষেই হারিয়ে যাবে।
কিন্তু মেহেদী চায়না যে, তার ঘুমপরীটা চোখের পলকে হারিয়ে যাক। সে নির্লজ্জের মতো চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রিতুর দিকে।
আহা! সদ্য ঘুম থেকে ওঠা একটা মেয়েকে খোলা চুলে যে এতোটা সুন্দর লাগে সেটা মেহেদী কখনো কল্পনাতেও ভাবেনি।
রিতুর দু'চোখ জুড়ে এখনো হাজার রাজ্যের ঘুমেদের হাতছানি। কিন্তু রিতু সেই হাতছানিকে উপেক্ষা করে ঘুম ঘুম চোখে মেহেদীর দিকে এগিয়ে এসে বললো
- কি মিস্টার, এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
মেহেদী ঘোরের মধ্যে থেকে বললো
- সদ্য ঘুম থেকে ওঠা পরীটা যেন পাগল করেছে আমাকে, চোখের একটা পলক পড়লেই বোধ হয় হারিয়ে ফেলবো তাহাকে।
- আমি কোন পরী নই।
- তবে পরীর থেকেও তুমি কোন কিছুতে কম নও।
- কে বলেছে?
- পরীকে যে পছন্দ করে, সে।
রিতু এবার একটা লজ্জা মাখা হাসি হেসে ফ্রেশ হতে গেলো।
.
সারাদিনের মধ্যে মেহেদী আর একবারও রিতুকে দেখেনি। হয়তো কাজে ব্যস্ত ছিলো সেজন্য!
মিতুর বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলে, মিতুকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে সাব্বির মেহেদীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকলো। সাব্বিরের কান্না দেখে মেহেদীর চোখের কোণেও জল চলে এলো। আজ যদি সাব্বিরের মতো মেহেদীরও একটা বোন থাকতো, তাহলে তাকেও মেহেদী এতো আয়জন করে বিয়ে দিতো।
.
সবাই বিয়ে বাড়ি ছেড়ে যে যার মতো চলে যাচ্ছে। বাড়ি প্রায় খালি খালি অবস্থা। মেহেদী এদিকে রিতুকে খোঁজাতে ব্যস্ত। সে ভাবছে, আচ্ছা রিতু কি চলে গেছে? নাহ, সে গেলে তো একবার তাকে বলে যেতো!
কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হলো, সে তাকে বলে যাবে কেন? রিতু তার কে হয় যে, তাকে বলে যাবে!
তবুও মেহেদীর চোখ দুটো শুধু রিতুকেই খুজছে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো "কি মিস্টার, কাকে খুজছেন?"
মেহেদী পেছন ফিরে দেখে রিতু দাড়িয়ে।
"তোমাকেই খুজছিলাম" মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো কথাটি মেহেদীর মুখ থেকে।
- আমাকে?
- না মানে হ্যাঁ।
- কেন, আমাকে খুজছিলেন কেন?
- জানিনা।
- এটা রাখুন।
- কি এটা?
- রাখতে বলছি রাখুন। এতো প্রশ্ন করেন কেন?
রিতু মেহেদীর হাতে ছোট্ট একটা চিরকুট দিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো
- এবার তাহলে আসি। ভালো থাকবেন।
বলেই রিতু চলে গেলো। মেহেদী কৌতুহল সামলাতে না পেরে চিরকুট টা খুললো। দেখলো সেখানে কারো ফোন নাম্বর লেখা। আর তার নিচে লেখা, কখনো মনে পড়লে ফোন দিয়েন।
মেহেদী ভাবতেও পারছেনা এতো সহজে এতো কিছু হয়ে যাবে। কোথায় সে চাইবে রিতুর থেকে নাম্বার। আর উল্টো রিতুই কিনা তাকে নাম্বার দিয়ে গেলো। ভাবতেই অবাক লাগছে তার।
তাহলে কি রিতুও তাকে পছন্দ করে?
.
বাসায় এসে মেহেদী ফোন দিলো নাম্বারটিতে। রিং ঢুকতেই রিসিভ হয়ে গেলো।
- আমি জানতাম আপনি বাসায় গিয়েই আমাকে ফোন দিবেন। (রিতু)
- তুমি কি তাহলে আমার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলে?
রিতু এবার একটু ভাব দেখিয়ে বললো
- আমি আপনার ফোনের অপেক্ষায় থাকতে যাবো কেন?
- তাহলে একবার রিং ঢুকতেই রিসিভ করলে কেন?
.
এই থেকে শুরু হলো মেহেদী আর রিতুর কথা বলা। একসময় তাদের মধ্যে খুব ভালো একটা বন্ধুত্ব তৈরি হলো। মাসে হঠাৎ একবার তারা দেখা করতো।
মেহেদী ধীরে ধীরে রিতুকে ভালোবাসতে শুরু করে। রিতু সেটা বোঝে। কিন্তু প্রকাশ করেনা। কারণ রিতু যে একজনকে ভালোবাসে। তার যে বয়ফ্রেন্ড আছে। রিতু এ ব্যপারে কখনো মেহেদীকে বলেনি যে, তার বয়ফ্রেন্ড আছে।
.
অন্যদিকে রিতু মেহেদীকে শুধু বন্ধুর চোখেই দেখে। যেকোন সমস্যায় পড়লে সে মেহেদীকে সবার আগে জানায়। কারণ একমাত্র বন্ধুরাই সবার থেকে সবচেয়ে আগে এগিয়ে আসে।
সেদিন রিতুর সাথে ফাহিমের ঝগড়া হয়। ফাহিম রিতুর বয়ফ্রেন্ড। ফাহিম রিতুকে বলে, সে ইচ্ছা করলে শত শত মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারে।
রিতুও রেগে গিয়ে বলে, আরে তোমার মতো হাজার হাজার ছেলে আমার পিছে লাইন দিয়ে থাকে।
তাদের কথা বলার এক পর্যায়ে ফাহিম রিতুকে বলে, দেখাও দেখি একটা প্রেম করে! রিতুও ফাহিমকে পাল্টা জবাব দিয়ে আসে, তুমি দেখাও আমাকে যে তুমি শত শত প্রেম করতে পারো।
.
সেই রাতে রিতু মেহেদীকে ফোন করে বলে
- মেহেদী তুই একটু দেখা করতে পারবি আমার সাথে?
- কোথায়, কখন? সেটা বল। এখনই আসবো?
- না না এখন না।
- তাহলে?
- কালকে বুদ্ধিজীবিতে চলে আসিস।
- কখন আসবো?
- সকাল দশটায়।
- আচ্ছা।
বন্ধুত্ব এতটাই গভীর যে, তারা একে অপরকে "তুই করে বলে।
.
রিতু জানে ফাহিম বুদ্ধিজীবিতেই তার নতুন গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরতে আসবে। তাই সেও মেহেদীকে বুদ্ধিজীবিতেই আসতে বললো।
এদিকে মেহেদী তো খুশিতে ডিজে ড্যান্স দেওয়া শুরু করেছে। গত পরশুদিনই তারা দেখা করলো। আবার আগামীকাল করবে ভাবতেই তার ভালো লাগছে। আর এটা ভেবে তার আরো বেশি ভালো লাগছে যে, আগামীকাল ছুটির দিন।
.
পরদিন ঠিক সময়মতো মেহেদী পৌছে গেলো বুদ্ধিজীবিতে। সেখানে পৌছে দেখে রিতু অপেক্ষা করছে তার জন্য।
রিতু মেহেদীকে দেরি করে আসতে দেখে রাগে ফুসতে লাগলো। রাগের কারণ হলো তার থেকে একটু দূরেই ফাহিম একটা মেয়ের সাথে গায়ে গা লাগিয়ে বেশ হেসে হেসে কথা বলছে। আর রিতুকে ইশারায় বোঝাচ্ছে, দেখো আমিও পারি।
মেহেদী রিতুর কাছে যেতেই
- ঐ হারামি এতো দেরি লাগে তোর আসতে।
- কই দেরি করলাম? দশটা বাজতে এখনো পাঁচ মিনিট দেরি আছে। আর এতো জুরুরি তলব কি মনে করে?
- কেন তোকে কি কোন কারণ ছাড়া ডাকা যাবেনা?
- না, যাবেনা কেন? অবশ্যই যাবে।
- চল ঐ পাশটাতে গিয়ে বসি।
- হুম চল।
রিতু মেহেদীকে নিয়ে ফাহিমের ঠিক সামনাসামনি একটু দূরের একটা ব্রেঞ্চে গিয়ে বসলো। যাতে ফাহিম তাকে দেখতে পায়।
ফাহিমকে ঐ মেয়েটির বেশ কাছাকাছি বসতে দেখে রিতুও মেহেদীর কাছাকাছি গা ঘেসে বসে মেহেদীর কাধে মাথা রাখলো।
রিতুকে তার কাধে মাথা রাখতে দেখে মেহেদী বেশ অবাক হলো।
বেশ কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর মেহেদীর মনে হলো এটাই সূবর্ণ সুযোগ রিতুকে প্রপোজ করার। সে রিতুর কাছ থেকে উঠে গিয়ে পাশের একজন ফুল বিক্রেতার কাছ থেকে এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে এলো। এসে সে রিতুর দিকে ফুলগুলো বাড়িয়ে দিয়ে বললো, হতে চাই আমি তোমার স্বপ্নের রাজকুমার, হতে চাই তোমার জীবন চলার সাথি। তুমি কি হবে আমার রাজকুমারী, থাকবে কি আমার সাথে সারা দিনরাতি?
রিতুকে প্রপোজ করা দেখে ফাহিম রাগে ফুসতে ফুসতে সেখান থেকে চলে যেতে লাগলো। রিতু মেহেদীর ফুলগুলো তার দিকে ছুড়ে দিয়ে এক দৌড়ে ফাহিমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো "ফাহিম আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি, অন্য কাউকে না।"
- তাহলে ঐ ছেলেটি কে ছিলো?
- আমার বন্ধু। আর তোমার সাথের ঐ মেয়েটি কে ছিলো?
- আরে ও আমার খালাতো বোন। আমি জানতাম তুমি বেশিক্ষণ আমার উপরে রেগে থাকতে পারবেনা।
তাদের এ কথপোকথন দেখে মেহেদী গোলাপগুলো হাতে নিয়ে বাসায় চলে গেলো।
.
কয়েকটা দিন কেটে গেছে। এর মধ্যে রিতু মেহেদীকে অনেকবার ফোন দিয়েছে। কিন্তু মেহেদী ফোন রিসিভ করেনি। সে বারবার তার ফুলদানিতে রাখা রিতুর স্পর্শ করা গোলাপগুলো দেখে।
আজও সে গোলাপগুলো দেখছে আর বলছে "তোমার ফিরিয়ে দেওয়া সেই গোলাপ টা আজ শুকিয়ে কালচে রুপ ধারণ করেছে। গোলাপের মতো যে আমার এ হৃদয়টাও আজ শুকিয়ে গিয়েছে। এ হৃদয়ের শুকানো কালচে বর্ণটা তুমি কখনোই দেখতে পাবেনা। শুধু পাবে দেখতে এই শুকনো গোলাপটা।"
ওদিকে রিতু বারবার মেহেদীকে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু মেহেদী রিসিভ করছে না।
সে ভাবে, সে কারো বন্ধু না, কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না, কারো অভিনয় বোঝার যোগ্য না। তাই সে রিতুর ফোন রিসিভ না করে ভেজা চোখে শুকনো গোলাপগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.