নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার গল্প

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৩

সেই তুমি
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
"মা আমার নতুন ঘড়িটা কি হয়েছে, কোথাও খুজে পাচ্ছিনা কেন? আমি সেদিন কিনে এনে আমার ড্রয়ারের মধ্যে রাখলাম। হঠাৎ করে কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো?
মা, মা তুমি শুনছো আমার কথা? আমার ঘড়িটা কই?"
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মেহেদী তার নতুন ঘড়িটা খুঁজছে। মাত্র কয়েকদিন হলো ঘড়িটা কিনেছে সে। যেমন তেমন ঘড়ি হলে সে এতটা জোর দিয়ে খুঁজতোনা। বেশ দামি একটা ঘড়িই বলা চলে।
মেহেদীর মা তখন রান্নার কাজে ব্যস্ত। রান্না ঘর থেকেই তিনি বললেন "দেখ কোথাও হয়তো রেখেছিস। এখন হয়তো তোর মনে হচ্ছেনা। ভালো করে খুঁজে দেখ।"
- না মা, কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা। তুমি একটু এসে খুঁজে দিয়ে যাও।
- না এখন পারবোনা। এখন রান্না করতে হবে। তোর বাবা অফিসে যাবে। তোর বোনটা স্কুলে যাবে।
- আর আমি?
- তুই আবার কি?
- আমি কোথাও যাবোনা বুঝি? হুম বুঝেছি, তুমি শুধু ওদেরকেই ভালোবাসো। আমাকে বাসোনা।
- কি বললি আবার বল?
- যদি ভালোই বাসতে তাহলে এসে ঘড়িটা একটু খুঁজে দিতে। আজকে আমার চাকরি জীবনের প্রথম দিন। আর আজ যদি একটু স্মার্ট হয়ে অফিসে যেতে না পারি, তাহলে আর কোনকালেই পারবোনা।
.
মেহেদীর মা রান্নার কাজ ফেলে এসে মেহেদীর ঘড়ি খুঁজতে লাগলো। সাথে মেহেদীও খুঁজছে।কিছুক্ষণ খোঁজার পরেই কিছু একটা খুঁজে পেয়ে মেহেদী থমকে দাঁড়ালো। তার জীবনটা তখন পুরো এলোমেলো হয়ে গেলো।
লক্ষ লক্ষ বালুকণার মাঝ থেকে যখন কোন অমূল্য রতন খুজে পেলে, গভীর সমুদ্রের জলরাশি থেকে যখন কোন মহা মূল্যবান কিছু খুঁজে পেলে যেমনটা অনুভুত হয়। ঠিক তার চেয়েও শতগুন বেশি ভালো লাগা অনুভুত হচ্ছে মেহেদীর এখন। কারণ সে মহা মূল্যবানের থেকে মহা মূল্যবান কিছু খুঁজে পেয়েছে। যেটা সে গত ১৫ বছর ধরেও খুঁজে পায়নি। এর আগেও অনেক খুঁজেছে সে এই মূল্যবান জিনিসটা। কিন্তু পায়নি। সে হাল ছেড়ে দিয়েছিলো। সে মনে মনে ভেবছিলো, হয়তো কোথাও সেটা হারিয়ে গিয়েছে তার অগোচরেই। যা সে কখনো বুঝতেই পারেনি। জিনিসটা মূল্যবান বলছি এই কারণে যে, সেই জিনিসটা হয়তো অন্যকারো কাছে নিছক একটা খেলনা, একটা হাসি তামাশার বস্তু হতে পারে। কিন্তু সেটা মেহেদীর কাছে হিরের সমতুল্য।
আজ পনেরো বছর পর জিনিসটা খঁজে পেয়ে মেহেদীর মনে যে খুশির বন্যা বয়ে চলেছে, সেই খুশিটা তার তেইশ বছরের জীবনে কখনোই আসেনি।
খুঁজে পাওয়া বস্তুটা যে তার প্রিয় মানুষের দেওয়া একটি উপহার। আজ থেকে পনেরো বছর আগে রিতু তাকে সেটা উপহার দিয়েছিলো। আপনাদের হয়তো জানার আগ্রহ হচ্ছে জিনিসটা আসলে কি? জিনিসটা তেমন কোন মহা মূল্যবান কিছু নয়। সেটা ছিলো একটা বেসলেট।
যেটা পড়লে মেহেদীকে বেশ ভালো লাগতো।
বেসলেট টা হাতে নিয়ে সে রিতুর ভাবনাতে ডুবে গেলো।
রিতু ছিলো তার খেলার সাথি। সেই ছোট বেলায় তারা একসাথে ঘুরে বেড়াতো, চলতো ফিরতো। রিতু তার থেকে তিন বছরের ছোট ছিলো। রিতুর বাবা একজন সরকারি কর্মচারি। চাকরির সুবাদে তার বাবাকে কয়েক মাস পর পর স্থান পরিবর্তন করতে হতো। কিন্তু যেইবার রিতুরা মেহেদীদের বাসাতে উঠেছিলো সেইবার প্রায় তিন বছর ছিলো সেখানে।
এই তিন বছরে মেহেদী আর রিতুর মধ্যে একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়। বন্ধুত্বটা তখন শুধুই বন্ধুত্ব ছিলো। কিন্তু আজ এতবছর পর সেই বন্ধুত্বটা ভালোবাসায় রুপ নিয়েছে। আজ রিতু মেহেদীর থেকে অনেক দূরে। মেহেদী জানেনা রিতু আজ কোথায় থাকে, কি করে? সে কেমন আছে, কত বড় হয়েছে, আর দেখতেই বা কেমন হয়েছে? সেই পনেরো বছর আগের রিতুকে মনে করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে মেহেদী। রিতুর সেই ভুবন ভোলানো হাসিটা তার আজও মনে জাগে, যেমনটা জাগতো আগে।
সে হঠাৎ আনমনেই বলে ওঠে "অাচ্ছা! রিতুরও কি তাকে মনে পড়ে? নাকি সে কালস্রোতে হারিয়ে গেছে রিতুর জীবন থেকে, মুছে গেছে তার স্মৃতির দৃশ্যপট থেকে?"
খুব জানতে ইচ্ছে করছে মেহেদীর। এই পনেরোটা বছরের প্রতিটা দিন সে রিতুকে স্মরণ করেছে। কিন্তু আজ তার দেওয়া বেসলেট টা পেয়ে তার বেশি বেশি মনে পড়ছে রিতুকে।
.
- কিরে, কি আবোল তাবোল বকছিস তুই? মাথা ঠিক আছে তোর?
হঠাৎ মেহেদী তার মায়ের ডাকে ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। সে অপ্রস্তুত ভাবে বলে
- ক. ক..কই! কিছুনা তো মা। কি বলবো আমি?
- রিতুটা কে রে?
- না না, কেউ না।
- তোর পছন্দের মানুষ?
মেহেদী মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো।
- মেয়েটাকে একদিন নিয়ে আসিস তো?
- কেমনে আনবো মা?
- কেমনে আনবি মানে? সাথে করে নিয়ে আসবি।
- সে তো আমার থেকে অনেক দূরে।
- অনেক দূরে মানে?
- বাদ দাও এখন এসব কথা। কিছু খেতে দাও। অফিসে যেতে হবে।
- এই নে তোর ঘড়ি।
- কোথায় পেলে?
- তোর বিছানাতে।
- বিছানাতে এলো কি করে?
- সেটা তুই ভালো জানিস। আয় খেতে আয়।
.
মেহেদীর মা তার রুম থেকে চলে যাওয়ার পর মেহেদী ভাবতে থাকলো, ঘড়িটা তো সে ড্রয়ারে রেখেছিলো। তাহলে বিছানায় আসলো কি করে?
ঠিক তখনই তার মনে হলো গত রাতের কথা। গতকাল সকালে তার বোন তার থেকে ঘড়িটা নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলো। রাতে যখন সে ঘড়িটা ফিরিয়ে দিতে এসেছিলো তখন মেহেদী তাকে বলেছিলো তার বিছানার উপর রেখে যেতে।
মনে মনে বোনটার উপর তার বেশ রাগ উঠলো। শুধু শুধু তাকে এতক্ষণ হয়রানি হতে হলো। তবে আবার বোনটার উপর খুশিও হলো সে খুব। কারণ তার জন্যই হয়তো সে আজ তার মনের মানুষের দেওয়া সেই উপহার, শেষ স্মৃতিটা ফিরে পেয়েছে। একবার যখন সে এটাকে ফিরে পেয়েছে, তখন আর সে এটাকে হারাতে দিবেনা।
.
নাস্তা করে মেহেদী অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। আজ তার অফিসের প্রথম দিন। পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরিও করছে সে। সামনে তার মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা। সপ্তাহে সময় পেলে এক দুইদিন হয়তো সে কলেজে যেতে পারবে।
ইন্টার, অনার্স শেষ করলো সে। কিন্তু কখনো কলেজ জীবনে সে কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকায়নি। তাকায়নি বলতে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করেনি সে। কারণ তার চোখ দুটো যাকে একটিবার দেখার জন্য পাগল থাকে, তার দিকে ছাড়া সে অন্য কোন মেয়ের দিকে কিভাবে তাকাবে!
পনেরোটি বছর মেহেদী রিতুকে খুঁজে চলেছে নিঃশব্দ পায়ে। কাউকে কখনো বুঝতে দেয়নি যে, সে প্রতিদিন কাউকে খুঁজে ফিরে। অনেক বন্ধু বান্ধবও হয়েছিলো তার। তারাও কখনো মেহেদীর মনের চাওয়া পাওয়াটা বুঝতে পারেনি।
হ্যাঁ, তবে তাদের বন্ধু বান্ধবের মধ্যে একজন মেয়ে ছিলো, যে তার অতীত সম্পর্কে জানতে চাইতো। অনেকবার মেয়েটি তার অতীতে ঘটে যাওয়া কিছু মুহূর্তের খোঁজ নিতে চাইতো। কিন্তু মেহেদী তাকে কিছুই বলতোনা। মেয়েটির নাম ছিলো মিতু।
মিতু মেয়েটি দেখতে শুনতে বেশ সুন্দর। তাকে দেখলে যে কেউ তার প্রেমে পড়তে বাধ্য। বন্ধুদের মধ্যে সবাই তাকে চাইতো। শুধু মেহেদী চাইতোনা। মিতুর কাছে বিষয়টা বেশ অদ্ভুত লাগতো। আর এ কারণেই সে মেহেদীর অতীত সম্পর্কে এমন কিছু জানতে চাইতো, যার জন্য মেহেদী তার মতো এত সুন্দরী মেয়ের দিকে একবারও ভালেবাসার চোখে তাকাতো না।
কিন্তু মেহেদী কাউকেই তার অতীত সম্পর্কে বলতোনা। বলতোনা তার সেই খেলার সাথি রিতুর কথা।
সে যে শুধু রিতুকেই ভালোবাসে।
.
- এই মামা, নামেন। আপনার গন্তব্যে চইলা আইচি।
রিক্সাওয়ালার কথা শুনে মেহেদী ঘোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে তাকিয়ে দেখে সে তার অফিসের নিচে চলে এসেছে।
অফিসে ঢুকলো সে। জীবনের প্রথম দিন আজ তার চাকরি জীবনের। তাই সে একটু নার্ভাস ফিল করছে। সে স্যারের সাথে দেখা করে তার কাজে মনোনিবেশ শুরু করলো।
প্রথম দিন বলে তাকে বেশি কিছু একটা করতে হলোনা। তবুও সে বেশ পরিশ্রান্ত। পকেটে হাত দিয়ে টিস্যু পেপার বের করতে গিয়ে দেখে পকেটের মধ্যে সেই বেসলেট টা। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বেসলেট টা রেখে আসতেই ভুলে গেছে সে।
এই বেসলেটটা যে তাকে বেশ যত্নে রাখতে হবে। না হলে যে তার কাছ থেকে রিতুর শেষ স্মৃতিটুকু বিলীন হয়ে যাবে।
.

সপ্তাহে মেহেদীর দুই দিন ছুটি। এটা অবশ্য সে চাকরির প্রথমেই বলে নিয়েছে। দুদিন ছুটির কারণ হলো, তার কলেজের জন্য। কলেজে তো যেতে হবে তার। যদিও এখনকার দিনে কেউ মাস্টার্সের ক্লাস করেনা। কিন্তু মেহেদী করবে। সে সবার থেকে আলাদা প্রকৃতির মানুষ।
সপ্তাহের সোমবার আর বৃহঃস্পতিবার তার ছুটি। তাছাড়া শুক্রবার তো আছেই।
আজ বৃহঃস্পতিবার। মেহেদী কলেজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে বাসের জন্য দাড়িয়ে আছে। মনটা তার বেশ ফুরফুরে। রৌদ্রের তাপে শরীর থেকে ঘাম ঝড়া স্বত্তেও সে ক্লান্ত হচ্ছেনা।
সে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ঐ দূর হতে একটা বাস আসছে। বাসটি কাছে আসতেই সে এক প্রকার লাফিয়েই বাসে উঠে পড়লো।
কিন্তু একি! বাসের মধ্যে বসার মতো তেমন কোন সিট খালি নেই। যদিও বা একটা আছে, তবুও তার পাশের সিটে একটা বোরকাধারী মেয়ে বসে আছে। তাই সে দাড়িয়েই যেতে থাকলো। বাসে চড়েও প্রায় ত্রিশ মিনিটের মতো সময় লাগে কলেজের গেটে পৌছাতে। তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাশের সেই বোরকা পড়া মেয়েটি তাকে বললো, আপনি চাইলে এখানে বসতে পারেন।
মেহেদী মেয়েটির কন্ঠ শুনে তার দিকে ঘুরে তাকালো। কন্ঠটা তার অতি পরিচিত মনে হচ্ছে। এবার সে মেয়েটির চোখের দিকে তাকালো।
এই চোখ বোধ হয় সে আগেও কোথাও দেখেছে।
কিন্তু মনে করতে পারছেনা এই কন্ঠ, এই চোখ দুটো কার সাথে যেন মিলে যায়।
কিন্তু সে এটা বুঝতে পারছে এই কন্ঠ, এই চাহনি তার অতি পরিচিত।
- কি হলো? বসুন।
- জ্বী, জ্বী।
মেহেদী চুপচাপ মেয়েটির পাশে গুটিশুটি মেরে বসে পড়লো। এমনিতেই মেহেদীর অপরিচিত কোন মেয়ের সাথে কথা বলার অভ্যাশ নেই। তার উপর আবার একটা মেয়ের পাশে বসে বাসে চড়ে যাওয়াটা তার কাছে কেমন যেন বিরক্তিকর লাগে।
তবুও সে কিছু না বলে চুপটি করে বসে থাকে।
.
বাসে বসে মেহেদী তার পাশে বসা মেয়েটির কন্ঠ আর তার চোখের চাহনির কথা ভাবতে লাগলো।
আচ্ছা তার কেন মনে হচ্ছে যে,এই কন্ঠটা, এই চোখের চাহনিটা তার অতি পরিচিত?
মেহেদী হাজার খুঁজেও তার এই প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারেনা।
সে মনে মনে ভাবে, মেয়েটিকে কি সে জিজ্ঞেস করবে? নাহ! মেয়েটিকে এটা জিজ্ঞেস করলে মেয়েটি তাকে একটা পাগল ছাড়া অন্যকিছু ভাববেনা। হঠাৎ মেহেদীর মনে হলো, পাশে বসা মেয়েটিকে সে 'মেয়ে' বলছে কেন? এটা তো মহিলাও হতে পারে।
সব ভাবনার অন্তে কন্টেক্টার মামা এসে বলতে লাগলো, এই তেঁজগাও কলেজ নামবেন কে কে? তারা গেটে আহেন।
এবার পাশে বসা মেয়েটি মেহেদীকে বললো, দেখি একটু উঠুন, আমি নেমে যাবো।
মেয়েটির কন্ঠের মধ্যে বয়সের কোন ছাপ নেই। এতক্ষণ ধরে সে এটাই লক্ষ করছে।
" কি হলো উঠুন, একটু সাইডে দাড়ান। আমি সামনেই নামবো" মেয়েটি আবার বললো কথাটা।
মেয়েটির কথা শুনে মেহেদীও বললো, আমিও সামনেই নামবো।
.
কলেজের গেটের সামনে এসে বাস থামলে মেয়েটি নেমে পড়লো বাস থেকে। সাথে মেহেদীও নামলো। কলজের ভেতরে মেয়েটিকে ঢুকতে দেখে সে এবার একেবারে সিউর হলো যে, মেয়েটি কোন মহিলা নয়। সে একটা মেয়ে।
মেয়েটির পিছে পিছে মেহেদীও ঢুকে পড়লো কলেজের মধ্যে। মেয়েটি হাঁটছে আর তার পিছু পিছু মেহেদীও হাঁটছে। খানিক সামনে এগোতেই মেয়েটি পেছেন ফিরে এলো।
- আপনি আমার পিছু পিছু আসছেন কেন? (মেয়েটি)
- কই? আমি আপনার পিছু পিছু যাবো কেন?
- তাহলে এইযে আমার পিছে পিছে হেঁটে চলেছেন!
- ও, আচ্ছা! আমি এই কলেজেই মাস্টার্সে পড়ি।
মেহেদীর এই কথা শুনে মেয়েটি কিছুক্ষণের জন্য যেন থমকে গেলো। লজ্জায় আর কিছু না বলে মেয়েটি তার ক্লাসের দিকে চলে গেলো।
আসলে মেয়েটি এবার অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ে।
আর মেহেদী যেহেতু তার বড়, তাই মেহেদীর সাথে অমন আচরণের জন্য সে বেশ লজ্জিত।
.
মেহেদী কলেজে গেলে ক্লাস যেমন তেমন, বরং আড্ডাতেই বেশি সময় দেয়। তার ইন্টার, অনার্স লেভেলের বন্ধুরাও আসে তার সাথে আড্ডা দিতে।
আজকেও এসেছে তারা। আড্ডা দেওয়ার এক পর্যায়ে একটি বাচ্চা ছেলে তাদের কাছে এসে বললো, ভাইয়া ঐ আপুটা আপনাকে ডাকছে।
মেহেদী ছেলেটির দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়।
তখন ছেলেটি বলে, হ্যাঁ ভাইয়া আপনাকেই ডাকছেন উনি।
মেহেদীকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে ছেলেটি। মেহেদী সেই আপুটার দিকে তাকিয়ে দেখে সকালের সেই বোরকা পড়া মেয়েটি।
সে তার বন্ধুদেরকে বলে মেয়েটির কাছে গেলো।
- আমি দুঃখিত। (মেয়েটি)
- কেন?
- ঐযে সকালে আপনার সাথে ঐভাবে কথা বলার জন্য।
- ও, ব্যপার না। এতে আপনার সরি বলার কোন দরকার নেই।
- ধন্যবাদ।
আর কিছু না বলেই মেয়েটি দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
এতে মেহেদী বেশ অবাক না হয়ে পারলোনা। শুকনো পাতা যেমন গাছ থেকে পড়ার সাথে সাথেই দমকা বাতাসে নিমিষেই উড়ে চলে যায়। ঠিক তেমনি এই মেয়েটিও।
.
সেদিনের মতো মেহেদী কলেজ শেষ করে বাসায় ফিরলো। বাসায় ফিরতে না ফিরতেই তার ছোট বোনটা দৌড়ে এসে তাকে বলতে লাগলো "ভাইয়া ভাইয়া, তাড়াতাড়ি আসো। দেখো আম্মু কেমন যেন করছে।" কান্না জড়িত কন্ঠে কথাটি বললো
তার বোন। মুহূর্তেই মেহেদীর মনে শ্রাবণের ঘনকালো মেঘের উদয় হলো। তার হৃদয়টা হু হু করে কেঁদে উঠলো। সে দৌড়ে তার মায়ের রুমে গেলো। দেখলো তার মা বিছানায় শুয়ে আছে।
"সে আজ সকালেই তার মাকে সুস্থ দেখে গেলো। আর এখন কি হলো তার মায়ের"? মনে মনে ভাবছে মেহেদী।
সে ভাবছে, সকালে তার মা তাকে নিজে হাতে খাইয়ে দিলো। চুলগুলো আচড়িয়ে দিলো। আজকে আবার সেদিনের মতো ঘড়িটাও খুজে দিলো। সবই তো ঠিকঠাক ছিলো। তবে এখন আবার হঠাৎ করে কি হলো মায়ের!
মেহেদীর মাথায় কিছু কাজ করছেনা। সে যে তার মাকে তার নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে। তার মায়ের কিছু হয়ে গেলে সে কি নিয়ে বাঁচবে? সে তার বোনকে জিজ্ঞেস করলো, বাবা কোথায়। তার বোন উত্তরে বললো, বাবা বাইরে গেছে।
মেহেদী সাতপাঁচ না ভেবে তার মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিছানা থেকে উঠাতে যাবে, ঠিক সেসময় তার বোন বলে উঠলো, এই কি,, কি করছো ভাইয়া? আম্মু তো অসুস্থ। তুমি আম্মুকে টেনে তুলছো কেন?
- কেন, মাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে তো!
বলতে বলতেই মেহেদীর চোখ দিয়ে অনবরত জল ঝড়তে লাগলো। শ্রাবণের সেই ঘনকালো মেঘগুলো এখন বৃষ্টি হয়ে ঝড়ছে মেহেদীর নয়ন থেকে।
- না না, আম্মুকে কোথাও নিতে হবেনা। আমি আম্মুকে মাথায় পানি দিয়েছি। ঔষুধ খাইয়েছি। এখন আম্মু আগের থেকে একটু সুস্থ।
- তবুও ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
- না, নিতে হবেনা।
মেহেদী তার বোনের মুখে এমন কথা শুনে বেশ অবাক হলো। সে তার মাকে ডাক্তারের কাছে নিতে চাইলে তার বোন তাকে বাধা দিচ্ছে। এটা তার কাছে কেমন যেন লাগলো।
আর বাধা দেওয়ারও যথেষ্ট কারণ আছে। যা মেহেদী জানে না। মেহেদীর বোন আর তার মা বুদ্ধি করে মেহেদীকে বিয়ে দেওয়ার জন্য এই অসুখের নাটকটা করেছে। মেহেদীকে প্রায় তিনমাস যাবত তার মা হাজারবার বিয়ের কথা বললেও সে বিয়ে করতে রাজি হয়না। তার বাবা তার উপর রেগে গিয়ে আর কথায় বলেনা।
আর হ্যাঁ, মেহেদী বিয়ে করার জন্য রাজিই বা হবে কেন? সে তো তার ঐ ছোট বেলার খেলার সাথি রিতুকে ভালোবাসে। তাকে ছাড়া যে সে অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবেনা, অন্য কাউকে জীবন সঙ্গীনি করতে পারবেনা। যদি তাই পারতো তাহলে এই তিনমাস ধরে তাকে বিয়ের কথা বলতে হতোনা।
যতবার তার মা তাকে বিয়ের জন্য বলেছে, ঠিক ততবার সে তার মাকে রিতুর কথা বলেছে। সে একদিন তার মায়ের মুখের উপর সরাসরিই বলে দিয়েছিলো, সে রিতুকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবেনা। আর রিতুকে যদি কোনদিন খুজে নাও পায় সে, তাহলে সে আর বিয়েই করবেনা।
মেহেদীর এমন কথা শুনে তার মা সেদিন খুব হেসেছিলো। কিন্তু মেহেদী তার মায়ের সেই হাসির কারণটা জানতে পারেনি। অবশ্য কারণটা জানার সে বহু চেষ্টা করছে। কিন্তু সব চেষ্টা তার বিফলে গিয়েছে।
.
মাকে অসুস্থ দেখে মেহেদীর মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সে খুব অস্থির হয়ে উঠেছে, তার মাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। কিন্তু দূর্ভাগ্য, তার বোন তার মাকে কোথাও নিতে দিচ্ছেনা।
মেহেদী মায়ের পাশে বসে মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তার চোখ দুটো জলে ভরপুর। কখন যে চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে তার মায়ের মুখের উপর পড়েছে, সেটা সে খেয়ালই করেনি।
সে অন্যদিকে তাকিয়ে বারবার চোখ দুটো মুছছে। মায়ের মুখের উপর জল পড়তেই তার মা চোখ খুলে দেখে মেহেদীর চোখে হাজারো জলের উৎস। মেহেদী যে তার মাকে অনেক অনেক ভালোবাসে। তবুও তার কান্না দেখে তার মা নিজেকে শক্ত রাখলেন। তিনি মেহেদীকে "বাবা" বলে একটা ডাক দিলেন। ডাক দিতেই মেহেদী বিদ্যুৎ গতিতে তার মায়ের দিকে তাকালো। তিনি বললেন, বাবা আমি বোধ হয় আর বেশিদিন বাঁচবোনা।
এটুকু বলতেই মেহেদী তার মায়ের মুখে হাত দিয়ে বললো, মা তুমি না থাকলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো। তুমি আর কখনো এমন কথা মুখেও আনবেনা। চলো তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।
- না বাবা, আমাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবেনা।
- কেন?
- বাবা শোন।
- হ্যাঁ মা, বলো।
মেহেদী চোখে এক সাগর জল নিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে কথা বলছে তার মায়ের সাথে। তার এমন অবস্থা দেখে তার মা মনে মনে বলছে, যাক এবার ডোসে কাজ হয়েছে। এবার আর আমার কথায় না করতে পারবেনা।
- আমার একটা কথা রাখবি বাবা?
- হ্যাঁ মা রাখবো, তুমি যা যা বলবে আমি সব রাখবো।
- একটা বিয়ে কর বাবা। আমি বেঁচে থাকতে বউমা এবং নাতি নাতনির মুখ দেখে যেতে চাই।
- কিন্তু মা......
- আচ্ছা তুই যখন বিয়ে করতে পারবিনা, তখন আর তোকে জোড়ও করবোনা।
একটু অভিমানি সুরে মুখে গোমড়া একটা ভাব এনে কথাটা বললো তার মা।
- না, মা। আমি বিয়ে করবো। তুমি আগে সুস্থ হয়ে ওঠো, তারপর।
যে ছেলেটা কখনো বিয়েই করবেনা বলেছিলো ঐ রিতুকে না পেলে, সেই ছেলের মুখে আজ বিয়েতে সম্মতির বাণী শুনে ছোয়া অর্থ্যাৎ মেহেদীর বোন হাসতে হাসতে কেঁদে ফেললো। মেহেদী তার বোনকে তার অসুস্থ মায়ের পাশে এভাবে হাসতে দেখে একটা ধমক দিলো। ধমক খেয়েও তার বোন হেসেই চলেছে আর তার মাকে বলছে, দেখছো আম্মু, বলেছিলাম না ভাইয়া এবার ঠিকই বিয়ে করবে। ছোয়ার কথার সাথে তার মাও তাল মিলিয়ে বলছে, তোর বুদ্ধিটা বেশ ছিলো।
মেহেদী তার মা আর বোনের কথাবার্তার ধরণ কিছুটা আঁচ করতে পারলো।
তাহলে কি এটা তার মা এবং বোনের সাজানো নাটক ছিলো? তার মা এতক্ষণে বিছানা ছেড়ে উঠে বসেছে। এই দেখে মেহেদীর বুঝতে বাকি রইলোনা যে, তারা কিসের জন্য এই নাটকটা করেছে।
কিন্তু এখন মেহেদীর আর কিছু করার নেই। সে যে তার মাকে কথা দিয়ে ফেলেছে। মনে মনে খুব রাগ হলো তার। সে তার মা আর বোনের অমন খিলখিল হাসি দেখে তার নিজের রুমে চলে গেলো।
রুমে বসে বসে সে ভাবছে, তাহলে কি সে তার সেই ছোটবেলার খেলার সাথি রিতুকে হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছে? তাকে যে সে অনেক ভালোবাসে। তার হৃদয়ের পুরোটা জুড়ে কেবল রিতুরই বসবাস। রিতুকে ছাড়া তার চলবে কি করে? যে করেই হোক কিছু একটা করতে হবে। তার আগে রিতুকে খুজে বের করতে হবে। আর তার মা যেই মেয়ের সাথেই বিয়ে ঠিক করুক না কেন, সে সেই মেয়েকে এমন কিছু বলবে যার জন্য সেই মেয়ে তার সাথে বিয়েটা ভাঙতে বাধ্য হবে।
.
ভাবতে ভাবতে মেহেদী কখন যে রিতুর দেওয়া সেই বেসলেট টা হাতে করেছে। সেটা সে খেয়ালই করেনি। বেসলেটটার দিকে সে আনমনে তাকিয়ে আছে। রিতুকে কোথায় খুজবে সে, এ ভাবনাতেই সে বিভোর।
তার ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে তার ছোট বোনটা রুমে ঢুকে তাকে ডাক দিলো।
- ভাইয়া একটু এদিকে তাকাও। আর মিষ্টি করে একটা হাসি দাও।
বোনের কথা শুনে মেহেদী তার বোনের দিকে তাকাতেই সে ছবি তুলে ফেললো মেহেদীর। ছবি তোলার সময় মেহেদীর হাতের বেসলেটটাও ক্যামেরা বন্দি হয়ে যায়।
- কিরে, ছবি তুললি কেন?
- কেন আবার! আমার হবু ভাবিটাকে দেখাতে হবেনা?
বলেই ছোয়া তার ভাইয়ের রুম থেকে নাচতে নাচতে বের হতে লাগলো। তখন মেহেদী তাকে ডাক দিয়ে বললো
- ছোয়া শোন।
ছোয়া আবার ফিরে এসে বললো
- হ্যাঁ ভাইয়া বলো।
- তুই এমনটা না করলেও পারতি?
- কেমনটা?
- আমার ইমোশন নিয়ে খেলার। তুই তো জানিস আমি রিতুকে ভালোবাসি। আর তাকে ছাড়া আমি কাউকে ভালোবাসতে পারবোনা। হয়তো তোদের দেখা মেয়ের সাথে আমার বিয়েটা ঠিকই হবে। কিন্তু মেয়েটাকে কখনো আমি ভালোবাসতে পারবোনা।
- সরি ভাইয়া।
মেহেদী তার হাতের পিঠ দিয়ে চোখটা মুছে বললো
- যা এখন।
- ভাইয়া আমি সত্যিই সরি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি।
মেহেদী আর কোন কথা বললোনা। ছোয়া তার ভাইয়ের রুম থেকে চলে গেলো। তারও বেশ কষ্ট হচ্ছে। কারণ তার ভাইয়ের চোখের পানি যে তার হৃদয়ে বারবার আঘাত করছে। তার ভাইকে যে সে খুব ভালোবাসে। তার ভাইটা তাকে কত আদর স্নেহ করে, কখনো কোন কিছু চাইলে না করেনি। যদি সেটা নাও থাকে, তবুও সেটা তাকে দেওয়ার জন্য তার এই ভাইটি কত কি না করেছে।
কিন্তু আজ!
আজকে সেই ভাইকেই সে কাঁদালো। ছোয়া নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে। কি দরকার ছিলো তার ভাইকে কষ্ট দেওয়ার!
"ভাই তো সেই অনেক আগে থেকেই বলে আসছে, সে রিতুকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবেনা। কিন্তু কেন তার সাথে এমন অভিনয় করতে গেলাম" ছোয়া তার ভাইয়ের কষ্টে নিজেকে আজ বড় পাষাণ ভাবছে।
.
- কিরে ওর ছবি তুলেছিস? (মা)
মায়ের কথায় ছোয়া শুধু মাথা ঝাঁকালো।
- আগামীকাল মেয়ের কাছে এই ছবি গুলো পাঠানোর একটা ব্যবস্থা কর।
ছোয়া তার মায়ের কথার কোন উত্তর না দিয়ে ক্যামেরাটা তার মায়ের কাছে দিয়ে সে তার নিজের রুমে চলে গেলো।
পরদিন সকালে মেহেদীর সেই ছবিগুলো পাত্রীর বাড়িতে পাঠানো হলো।
ওদিকে আবার আরেক ঘটনা ঘটেছে। পাত্রীও নাকি বিয়েতে রাজি নয়। পাত্রীটা নাকি কোন ছেলেকে ভালোবাসে। তার বাবা মা অনেক বোঝানোর পরেও পাত্রী তার সিদ্ধান্তে অটল। কারণ সে যেই ছেলেকে ভালোবাসে, সেই ছেলে তার হৃদয়ের পুরোটা জুড়ে অবস্থান করে সবসময়। ছেলেটাকে সে ১৫ বছর ধরে তার হৃদয়ে গেঁথে রেখেছে। আর আজ সে কি করে অচেনা অজানা একটি ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হবে!
এদিকে মেয়েটিও তার কথার নড়চড় করছেনা। আবার অন্যদিকে মেয়েটির বাবা মাও তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারছেন না। কারণ তারা যে মেহেদীর বাবা মাকে কথা দিয়েছে।
মেহেদীর বাড়ি থেকে পাঠানো মেহেদীর ছবিগুলো নিয়ে মেয়েটির মা তার কাছে গিয়ে বললো
- দেখ মা ছেলেটি অনেক সুন্দর। কত হ্যান্ডসাম। তোর সাথে মানাবে ভালো।
মেয়েটি তার মায়ের কথা শুনে অন্যদিকে মুখ করে বসলো। তার মা-ও বুঝতে পেরেছে সে তার ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া আর অন্য কাউকে বিয়ে করবেনা। তার মা টেবিলের উপরে ছবিগুলো রেখে চলে গেলো। আর যাওয়ার সময় বলে গেলো, বিয়ে করিস আর না করিস অন্তত একটিবারের জন্য ছেলেটিকে দেখিস। আমি তোর বাবাকে বলবো সম্পর্কটা যেন আর সামনের দিকে না নেয়।
.
বিকেলে মেয়েটি টেবিলের ওপর থেকে তার ডায়েরীটা নিতে গেলে সেই ছবিটার দিকে চোখ পড়ে। ছেলেটি আসলেও অনেক সুন্দর। কিন্তু সে কোথায় যেন ছেলেটিকে দেখেছে।
"কোথায় দেখেছে" এটা ভাবতে ভাবতেই সে ছবিটা হাতে নিলো। ছবিটার দিকে ভালো করে তাকাতেই সে চমকে উঠলো। ছবির ছেলেটির হাতের বেসলেটট যে তার চিরচেনা। এই বেসলেট যার কাছে আছে, সেই যে তার ভালোবাসার মানুষ। তাহলে কি এই ছেলেটাই তার সেই ছোটবেলার খেলার সাথি? এই ছেলেটাই কি তার সেই মেহেদী?
মেয়েটির মনের মধ্যে এক সাগর অানন্দ বিরাজ করছে।
আর হ্যাঁ, পাঠকগন। এই মেয়েটিই সেই রিতু। আর সেই কারণেই হয়তো সেদিন বাসের মধ্যে রিতুর কন্ঠটা মেহেদীর কাছে বড্ড চেনা চেনা লেগেছিলো। ১৫ বছর আগের কন্ঠের সাথে ১৫ বছর পরের কন্ঠের মিল হয় কি করে?
প্রশ্ন একটা থাকতে পারে।
যত হলেও সে তার ছোটবেলার খেলার সাথি, আবার ভালোবাসার মানুষ। আর ভালোবাসার মানুষের কন্ঠ চিনতে কেউ কখনো ভুল করেনা।
রিতু তাড়াতাড়ি করে তার মাকে ডাকতে লাগলো। - কিরে এত চিল্লাচ্ছিস কেন? (মা
- মা তুমি সকালে যে ছেলের ছবিটা দিয়ে গেলে তার নাম কি?
- কেন? তোকে তার নাম বলতে যাবো কেন? তুই তো তাকে বিয়েই করবিনা।
- প্লিজ মা বলোনা।
- পছন্দ হয়েছে?
রিতু মাথা নেঁড়ে হ্যাঁ বললো।
- ছেলেটির নাম মেহেদী।
- সত্যি বলছো?
- না, মিথ্যা বলছি।
- ওর নাম্বার আছে তোমার কাছে?
- না তো! কেন কি করবি?
- ওর সাথে কথা বলবো।
- এখন আর কথা বলে কি করবি? তুই না বললি বিয়েটা তুই করবিনা! তাই তোর বাবাকে বলে না করে দিয়েছি।
- মা আমি বিয়ে করবো।
- দেরি করে ফেলেছিস তুই।
রিতু আর কিছু না বলে হনহন করে হেঁটে তার রুমে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। এটা দেখে রিতুর মা মনে মনে হাসছে।
পাগলি মেয়ে একটা! সকালে বললো বিয়ে করবেনা। আর এখন বলছে করবে।
.
রাত হয়ে গেলো এখনো রিতু দরজা খুলছেনা। তার মা তাকে সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু তার কোন সাড়াই পাওয়া যাচ্ছেনা। মায়ের মনে ভয় বাসা বাঁধতে থাকলো। তিনি রিতুর বাবাকে ডাক দিলেন। এবার দুজনে মিলে রিতুকে ডাকা শুরু করলেন। অনেক্ষণ ডেকেও যখন তারা দেখলেন রিতু দরজা খুলছেনা। তখন রিতুর মা কান্না শুরু করে দিলেন। আর ওদিকে রিতুর বাবা রিতুকে ডেকেই চলেছে।
এভাবে কিছু সময় যেতেই রিতু দরজা খুলে দিলো। দরজা খোলার আওয়াজ শুনে তার মা উৎসুক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকালেন। দেখলেন রিতু দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখদুটো ফুলে লাল হয় আছে। হয়তো কান্না করেছে সে।
তাকে কাছে পেয়েই তার মা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আর বলতে থাকলো "কি করছিলি এতক্ষণ রুমের মধ্যে, এত ডাকাডাকির পরেও দরজা খুলছিলিনা কেন?"
- মা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম।
- তখন কি তুই কষ্ট পেয়েছিলি?
- কখন?
- ঐ যে তখন বলেছিলাম বিয়েটা ভেঙে দিয়েছি!
রিতু মাথা নাড়লো।
তার মাথা নাড়া দেখে তার মা আবার বললো
- আরে বোকা মেয়ে, আমি তখন এমনিতেই বলেছিলাম। যখন তুই বলেছিলি তোর ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া তুই বিয়ে করবিনা। তখন থেকেই আমরা মেহেদীকে খুজতে থাকি।
আর খুঁজতে থাকি তার বাবা মাকে। অল্পদিনের মধ্যেই পেয়ে যাই তাদের। আর তখনই আমরা তাদের সাথে কথা বলি তোর আর মেহেদীর বিয়ের ব্যপারে। মেহেদীও নাকি তোকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবেনা। আর সকালে যেই ছবিটা তোকে দিয়েছিলাম, সেটা মেহেদীর ছবি।
- আমি জানি।
- কিভাবে?
- তার হাতে থাকা ঐ বেসলেট টা দেখে। যেটা আমি তাকে ছোটবেলায় উপহার দিয়েছিলাম। আর বলেছিলাম, যদি কখনো হারিয়ে যাই তবে তুমি আমার এই বেসলেট টা যত্নে রেখো। হয়তো এর মধ্যেই তুমি আমায় খুঁজে পাবে। আর সেও আমাকে একটা জিনিস উপহার দিয়েছিলো।
- কি দিয়েছিলো তোকে?
রিতু তার ডায়েরীর মধ্যে থেকে মেহেদীর দেওয়া একটা চেইন বের করে তার মাকে দেখালো।
.
.
এদিকে মেহেদী আর কারো সাথে তেমন কথা বলেনা। এতে তার মা কিছুটা কষ্ট পেলেও তা প্রকাশ করেনা। আর তার বাবা আর মা ছাড়া তো আর কেউ জানেনা যে, মেহেদীর সেই ভালোবাসার মানুষটির সাথেই তারা তার বিয়ে ঠিক করেছে। মেহেদীর মা ভাবছে, এখন মেহেদী কষ্ট পাচ্ছে পাক। বিয়েটা হয়ে গেলেই সে সব বুঝতে পারবে।
মেহেদীর বোনও জানেনা যে, যে মেয়ের সাথে তার ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে সেটা তার ভাইয়ের ছোট বেলার খেলার সাথি, ভালোবাসার মানুষ।
জানলে সে সাথে সাথেই বলে দিতো তার ভাইকে। কারণ সে যে তার ভাইয়ের কষ্ট একদম সহ্য করতে পারেনা। ছোয়া বারবার তার ভাইয়ের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাচ্ছে। কিন্তু তার ভাই কিছুই বলছেনা।
মেহেদী রিতুর দেওয়া বেসলেটটা হাতে নিয়ে রিতুর ভাবনাতে বিভোর। কয়েকদিন পরেই সে রিতুকে হারিয়ে ফেলবে। তার ১৫ বছরের জমানো ভালোবাসা এক নিমিষেই ধুলোয় মিশে যাবে।
তার মায়ের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য যে তাকে এইটুকু কাজ করতেই হবে। মায়ের মুখের এক চিলতে হাসির কাছে যে তার ভালোবাসা অতি তুচ্ছ। সে ভাবছে, যে মেয়েটার সাথে তার বিয়ে হতে যাচ্ছে সেই মেয়েটা শুধু শুধু কষ্ট পাবে। কিন্তু সে যে তাকে কষ্ট দিতে চায়না। মেয়েটার সাথে একটু কথা বলতে হবে। কিন্তু কথা বলবে কিভাবে?
মেহেদীর মনের মধ্যে প্রচুর অভিমান ভরপুর। তার ছোট্ট বোনটি কিভাবে পারলো তার সাথে এমনটা করতে! তার মা-ই বা পারলো কিভাবে? সে তো তার বাবা মা, বোন, সবাইকেই রিতুর ব্যপারে বলেছে অনেক আগেই। তবুও তারা অন্য একটি মেয়ের সাথে কিভাবে তার বিয়ে ঠিক করতে পারলো। এসবের কোন কিছুই মেহেদীর মাথায় আসছেনা। সে চুপচাপ বসে আছে টেবিলের সামনের চেয়ারটায়। আর তার বোন তার থেকে ক্ষমা চাচ্ছে। বলছে, ভাইয়া আমি সত্যিই জানতামনা তুমি রিতু আপুকে কতটা ভালোবাসো। ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। কিন্তু মেহেদীর সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার ডায়েরীতে কিছু একটা লিখতে চাইছে, কিন্তু ভেবে পাচ্ছেনা, সে কি লিখবে। তার পুরো ডায়েরি জুড়ে শুধু রিতুকে নিয়েই লেখা। সব লেখাগুলোর মধ্যেই তার ভেতরে থাকা রিতুর প্রতি ভালোবাসা বিরাজমান।
কিস্তু আজ! আজ যা লিখবে তার মধ্যে থাকবে বিষাদ, বেদনা।
.
বিয়ের দিন...
মেহেদী আগের মতোই মন খারাপ করে বসে আছে। সেদিনের পর থেকে সে কারো কথাকেই কোন গুরুত্ব দেয়না। যে যা বলে বলুক, সে কোন কথারই রেসপন্স করেনা। আগের থেকে সে একটু শুকিয়েও গিয়েছে, খাওয়া দাওয়া করেনা ঠিকমতো, রাতে ঘুমায়না। কিছুদিন হলো সে অনেক রাত করে বাসায় ফিরে। বাবা মা তাকে কিছু বলারও সাহস পায়না। তার মায়ের খুব কষ্ট হয় ছেলের এমন পরিবর্তনে।
কিন্তু ছেলেকে কিছুই বলেনা।
আর ঐদিকে রিতুর মনে আজ আনন্দের উথাল পাতাল ঢেউ শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর সে আজ তার মেহেদীকে কাছে পেতে যাচ্ছে। তার মনের ভেতর এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছে।
.
বিয়ের আসরে বসে আছে দুজন। একজনের চেহারায় গভীর অন্ধকার। আর অন্যজনের চেহারায় আনন্দের জোয়ার।
নিজের ভালোবাসাকে মাটি চাপা দিয়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে মেহেদী বিয়েটা করে ফেললো।
রাতে রিতু একা একা বসে আছে বাসর ঘরে। রাত একটা বেজে গেছে, তবুও মেহেদীর বাসর ঘরে ঢোকার কোন নাম গন্ধও নেই। অপেক্ষার পালা শেষ হলে রিতু ঘুমের জন্য বিছানায় শুতে যাবে ঠিক সেসময় মেহেদী রুমে ঢুকলো।
রিতু উঠে গিয়ে তাকে সালাম করে আবার খাটে এসে বসলো। মেহেদীও গিয়ে তার পাশে বসলো।
রিতু কিছু একটা বলতে গেলে মেহেদী তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো
- শুনুন আপনাকে আমি বিয়ে করেছি ঠিকই, কিন্তু কখনো আপনাকে আমি ভালোবাসতে পারবোনা। আমার হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা শুধু একজনের জন্যই আমি জমিয়ে রেখেছি। সে ভালোবাসার ভাগ আমি আপনাকে দিতে পারবোনা। আর হ্যাঁ, আপনি কখনো আমার থেকে সে ভালোবাসা আশা করবেন না।
রিতু মনে মনে হাসছে তার কথা শুনে। হাসার পরিমাণ ক্রমেই বাড়তে থাকে তার। একসময় সে জোড়ে হেসে ওঠে। তার এমন হাসি দেখে মেহেদীর রাগ হলো খুব। সে নিজেকে সংযত রেখে বললো
- হাসছেন কেন?
- আপনার কথা শুনে।
- কেন, আমি কি কোন হাসির কথা বলেছি?
- না, আচ্ছা বাদ দিন। এখন বলুন আপনার সেই ভালোবাসার মানুষের নাম কি, কোথায় থাকে?
- তার নাম রিতু। সে ছিলো আমার ছোটবেলার খেলার সাথি। ১৫ বছর আগে যখন তারা আমাদের এখান থেকে চলে যায়, তখন আমি তাকে ততটা মিস করিনি। যতটা এখন করি। ক্রমেই দিন যেতে থাকে আর রিতুকে আমার বারবার মনে পড়তে থাকে। তার সাথে কাটানো সময়, কাঠাল পাতা দিয়ে খেলা, একে অপরকে ধুলি ছোড়া, ঘুড়ি উড়ানোর সময় ইচ্ছে করেই তার ঘুড়ির সুতা কেটে দেওয়া, বিকেলে পুকুর পাড়ের সেই আমগাছটার নিচে বসে চুরি করা আম খাওয়া, এ সবকিছুই আমি মিস করতে থাকি। একসময় আমি বুঝতে পারি, আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। সেই থেকে আমি তার জন্য আমার হৃদয়ে ভালোবাসা জমিয়েছি। যে ভালোবাসার গভীরতা অনেক। তাকে ছাড়া এ ভালোবাসা আমি কাউকেই দিতে পারবোনা।
- তাকে যদি কখনো খুজে না পান, তাহলে?
- তাহলে আপনার ভাগ্যটা খারাপ। কারণ আপনি আমার স্ত্রী হয়ে থাকবেন ঠিকই। কিন্তু কখনো আমার উপর অধিকার খাটাতে পারবেন না, আমার ভালোবাসা পাবেন না।
- আচ্ছা অধিকার খাটাবো না। এখন এটা বলুন যে, আপনি আপনার সেই রিতুকে অর্থ্যাৎ ভালোবাসার মানুষকে সামনে পেলে বা খুঁজে পেলে তাকে চিনবেন কিভাবে?
- তার কাছে আমার দেওয়া একটা চেইন অাছে। সেটাই তাকে চেনার একমাত্র উপায়।
- আর আপনার কাছে কি এমন কিছু আছে? যার দ্বারা সে আপনাকে চিনবে!
- হুম আছে।
বলেই মেহেদী ড্রয়ার থেকে সেই বেসলেট টা নিয়ে আসলো।
- এটা তার দেওয়া শেষ উপহার।
- আচ্ছা দেখুন তো এই চেইনটা চিনতে পারেন কিনা?
এবার রিতু তার সাথে আনা সেই চেইনটা বের করে মেহেদীকে দেখালো। মেহেদী চেইনটা দেখে তো পুরোপুরি অবাক হয়ে গেছে। এটা যে তার সেই চেইন, যেটা সে ছোটবেলায় রিতুকে শেষ স্মৃতি হিসেবে দিয়েছিলো। কিন্তু এটা এই মেয়ের কাছে আসলো কি করে? তাহলে কি এই মেয়েই তার সেই রিতু?
নাহ! কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা মেহেদীর। সবকিছু গোলমাল মনে হচ্ছে তার কাছে। এই মেয়ে তার সেই রিতু হতে যাবে কেন? সে অবাক দৃষ্টিতে হা করে তাকিয়ে আছে তার বউয়ের দিকে।
- কি মিস্টার? অবাক হয়েছো তাইনা! (রিতু)
- এটা আপনার কাছে এলো কি করে? (মেহেদী)
- তুমি তো বেশ বোকা টাইপের হয়েছো? আমি কখনো ভাবতেই পারিনি আমার মেহেদী এতোটা বোকা হবে। বিয়ের সময় তুমি কি একবারের জন্যও শোনোনি যে, যার সাথে তোমার বিয়ে হচ্ছে তার নামটা কি?
মেহেদী তার বউয়ের কথায় যথারীতি অবাক হয়েই চলেছে।
- তুমি কতবড় একটা গাধাঁ। আগে জানলে তোমায় বিয়েই করতাম না।
মেহেদী অবাক চোখে কাঁপা কাঁপা গলায় তাকে প্রশ্ন করলো
- তাহলে তুমিই আমার সেই রিতু? আমার ভালোবাসার মানুষ? যাকে আমি গত ১৫ বছর ধরে এ হৃদয়ের মাঝে পুষে রেখেছি?
- তা নয়তো কি? গাধাঁ একটা!
- তুমি কি করে জানলে যে, আমিই সেই মেহেদী?
- তোমার ছবি দেখে। সেখানে তোমার হাতে আমার দেওয়া এই বেসলেট টা ছিলো। আর আরেকটু কনফার্ম হতে আমি আমার মাকে জিজ্ঞেস করি যে, ছেলেটির নাম কি? প্রথমে আমিও বিয়েতে রাজি ছিলাম না। যখন আমার মা আমায় সবকিছু খুলে বললো, তখন বুঝলাম তোমার সাথেই অর্থ্যাৎ আমার সেই মেহেদীর সাথেই আমার বিয়েটা হচ্ছে। আর হ্যাঁ, আরেকটি কথা।
- কি?
- তোমার বাবা মাও কিন্তু জানতো সবকিছু।
- কিন্তু আমায় বলেনি কেন?
- তোমাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।
এবার মেহেদী বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে তার মা সেদিন হেসেছিলো কেন? যখন মেহেদী তার মাকে বলতো, মা আমি রিতুকে ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করতে পারবোনা। তখন তার মা একটা রহস্যময় হাসি দিতো। সেই হাসির অর্থটা আজ সে খুব হারে হারে বুঝতে পারলো।
মনে মনে সে তার মাকে এত্তগুলো ধন্যবাদ দিলো।
- কি মিস্টার গাধাঁ, এখন তো অধিকার খাটাতে পারবো। নাকি এখনো পারবোনা? (রিতু)
- হুম।
- কিসের হুম?
- হুম, মানে পারবে।
তারপর তারা ব্যস্ত হয়ে পড়লো তাদের অনেকদিনের ভালোবাসা আদান প্রদানের কাজে।
মেহেদী রিতুকে জড়িয়ে ধরে ভাবছে, ইস! আরো আগে জানলে তো অনেক্ষণ একে অপরের ভালোবাসা উপভোগ করতে পারতাম। ধুর এমন সময় জানলাম, যে সময় রাত্রিটা শেষের দিকে।
দেখি বাসর রাতটা আগামীকাল করবো। এখন শুধু ভালোবাসার পরশে আমার পরীটাকে একটু ছুয়ে দিই।
রাত তিনটা বাজে, এতরাতে কোথ থেকে যেন একটা গান ভেসে আসছে। গানের কথাগুলো এরকম ছিলো "সেই তুমি কেন এতো অচেনা হলে, সেই আমি কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম...."
নাহ! গানটা বেশ ভালোই লাগছে মেহেদীর। সে দুঃখ দিয়েছে রিতুকে, তবে কিছু সময়ের জন্য। যা এখন ভালোবাসা দিয়ে দূর করে দিচ্ছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.