নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেয়েটির জীবনি

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৭

ভুল
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
কাউকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করলে সে আপনাকে কখনোই সেই বিশ্বাসের মর্যাদা দেবেনা। যখন আপনি কাউকে চোখ বুজে বিশ্বাস করবেন, তখন হয়তো সেও আপনাকে আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা দেবে। তবে!
তবে সেই মর্যাদাটুকু আপনি পাবেন আপনার প্রতি তার চাহিদা যতক্ষণ থাকবে, ঠিক ততক্ষণ। আপনার প্রতি তার চাহিদা, মোহ, ভালোবাসা কেটে গলে কিংবা প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সে কিন্তু আপনাকে আর পূর্বের মতো ভালোবাসবেনা।
একটা অপরিচিত ব্যক্তিকে না জেনে, না চিনে তার সাথে সম্পর্কে জড়ানোটা একটা বড় ভুল। এ ভুলটা হয়তো সে তখনই বুঝতে পারে, যখন সে সম্পর্কের অনেক গভীরে তলিয়ে যায়।
.
মেয়েটা ভালোবেসেছিলো একটি ছেলেকে। বেশ অদ্ভুত ভাবেই তাদের সম্পর্কটা হয়। মেয়েটি দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী ছিলো। সে ইচ্ছে করলেই পারতো আট দশটা ছেলের সাথে প্রেম নামক খেলা খেলতে। কিন্তু মেয়েটি তেমন ছিলোনা। সে বেশ ভদ্র, শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে ছিলো। তবে সে বেশ চঞ্চল ছিলো।
কিন্তু পরবর্তীতে একটা ভুলের জন্য তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। কে যেন বলেছিলো, কোন শান্তশিষ্ট মেয়ে যদি একবার কাউকে ভালোবেসে ফেলে, তবে সে তার সবটুকু দিয়ে তাকে ভালোবাসে। ঠিক এই মেয়েটিও ছিলো তেমন। তবে সে একজন ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলো।
এখন যুগটা আধুনিক। সো, এই আধুনিক সময়ে সব মেয়েরাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এতে কোন সন্দেহ নেই। সেই মেয়েটিও করতো। একদিন হঠাৎ করেই একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেয়েটির ফোনে কল আসে। স্বাভাবিকভাবে অন্য সবার মতো মেয়েটি কলটা রিসিভ করে। কিন্তু সে জানতোনা এই ফোন কলটাই একদিন তার দুঃখের কারণ হবে।
মেয়েটি ফোনে কথা বলে জানতে পারে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি তার কোন রিলেটিভ না। সে তার অপরিচিত একজন ব্যক্তি। কিন্তু অপর প্রান্তে থাকা সেই অপরিচিত ব্যক্তিটিই একসময় মেয়েটির পরিচিত হয়ে যায়। প্রথমত মেয়েটি অপরিচিত কারো সাথে অর্থ্যাৎ সেই ব্যক্তিটির সাথে কথা বলতে চাইতোনা।
আর হ্যাঁ, সেই ব্যক্তিটি ছিলো একটা ছেলে। যেই ছেলে ছিলো মেয়েটির অপরিচিত। প্রথমদিন কথা বলার পর ছেলেটি মেয়েটিকে প্রতিদিন কল করতো। মেয়েটি প্রথম প্রথম কথা না বলতে চাইলেও একসময় নিজের ইচ্ছাতেই সে ঐ ছেলেটির সাথে কথা বলা শুরু করে। দিন যায় তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হতে থাকে। একসময় এই ক্ষণিকের সম্পর্কটাই ভালোবাসায় রুপ নেয়।
.
মেয়েটির বাড়ি ছিলো নোয়াখালি জেলার/খানার চাটখিল উপজেলায়। মেয়েটি মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। রুপে গুনে, মেধাতে, সবদিক দিয়েই সে ছিলো ভালো। তার বাবা একজন সরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা। মধ্যবিত্ত পরিবার তাদের। বাবার উপার্জনে তাদের পরিবারের ভরণ পোষণ বেশ ভালোভাবেই কেটে যেতো। তাদের পরিবারের বেশ নাম ডাক ছিলো সমাজে। বেশ সম্মানিত ব্যক্তিত্বের অধিকারি তারা। পুরো গ্রামে তাদের পরিবারকে সবাই এক নামে চিনতো। কারণ তারা ছিলো ন্যায়বান, সত্যনিষ্ঠা।
বয়সের ভারে এখন আর মেয়েটির বাবা কাজকর্ম করতে পারেনা। তাই তিনি চাকরি থেকে বর্তমানে অবসরে আছেন। তবে পেনশনের টাকাতে তাদের বেশ ভালোভাবেই চলে যায়।
মেয়েটির বাবা একটা সুস্বাস্থ্যময় পরিবেশে থাকার জন্য বড় করে একটি বাড়ি তৈরি করেন। যার জন্য তাকে ব্যাংক থেকে বেশ মোটা অংকের ঋণ নিতে হয়। একসময় ঋণ পরিশোধও করে দেন তিনি।
তিনি এখন যেই পেনশনের টাকাগুলো পান, তার উপর তার মেয়েটিরও ভরণ পোষণ চালান তিনি। অথচ মেয়েটিকে কিন্তু বিয়ে দিয়েছেন বছর খানেক হলো।
আর হ্যাঁ, মেয়েটির পরিচয় দিতে গিয়ে আমি মেয়েটির নামটা বলতেই ভুলে গিয়েছি। মেয়েটির নাম রাবেয়া।
.
অন্যদিকে যেই ছেলেটির সাথে রাবেয়ার ফোনে কথা হতো, সেই ছেলেটি ছিলো প্রবাসি। তার নাম রুবেল। ডুবাইতে কর্মরত সে। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালি জেলারই খিলপাড়া গ্রামে।
রাবেয়ার সাথে ছেলেটির ঐ ফোনের মাধ্যমে কথা বলেই একসময় তাদের মধ্যে প্রেম নামক ভালোবাসা তৈরি হয়। আর তারা একসময় বিয়েও করে ফেলে।
ছেলেটির পরিবারে তার বাবা, মা, একটা বোন আর কয়েকজন সদস্য আছে। ছেলেটি বিদেশে কর্মরত থাকা স্বত্তেও তার ঘরবাড়ি, তার পারিবারিক অবস্থার কোন উন্নতি ছিলোনা।
কেন উন্নতি ছিলোনা, এটা বলবো খানিক পর।
এবার আসল গল্পে আসা যাক।
প্রতিদিন রুবলে রাবেয়াকে কল দিতো। রাবেয়াও কল রিসিভ করে তার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতো। রুবেলের কন্ঠটা ছিলো অনেক সুন্দর, যার কারণে রাবেয়া তার প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়। শুধু সে রুবেলের কন্ঠ শুনেই তার প্রেমে পড়ে। অথচ সে কখনো রুবেলকে দেখেইনি।
এমন প্রেমকে হয়তো কেউ অন্ধ প্রেম বলে অখ্যায়িত করবে। হ্যাঁ, সেটা আসলেও একটা অন্ধ প্রেম। রুবেলের প্রতি তার মনে গভীর ভালোবাসা আর অন্ধ বিশ্বাসের জাগরণ ঘটে।
সে ধীরে ধীরে রুবেলকে এতটাই ভালোবেসে ফেলে যে, তাকে ছাড়া সে বাঁচবেনা এমন টাইপ। অথচ সে কখনো রুবেলকে দেখেইনি।
.
না দেখে ভালোবাসাকে আমি কখনোই সাপোর্ট করিনা। কারণ আজ যদি আপনার চেহারা কারো মনে না ধরে, তাহলে কেউ আপনার সাথে প্রেম নামক ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হবেনা।
যে বলে, প্রেম হলো মনের সাথে মনের মিল। তার কথার বিরোধিতা করি আমি। কারণ তার চাক্ষুষ প্রমাণ আমি নিজেই। সবাই সুন্দরের পূজারি। সুন্দর ছাড়া কেউ কখনো কাউকে ভালোবাসা তো দূরের কথা, কেউ কারো সাথে বন্ধুত্বও করতে চায়না।
তবে আমার এই ধারনাটি একদম ভুল প্রমাণিত হয়েছিলো রাবেয়ার কথা শুনে। সে কিভাবে একটি ছেলেকে না দেখে ভালোবাসতে পারে?
আমার মনে প্রশ্ন জাগে। তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেসও করেছিলাম, কিন্তু সে কিভাবে যেন অদ্ভুত একটা উত্তর দিয়েছিলো। আমি তার উত্তর শুনে সেদিনই বুঝেছি, কাউকে না দেখেও ভালোবাসা যায়। আসলেও ভালোবাসা হলো মনের সাথে মনের মিল, আত্মার সাথে আত্মার সংমিশ্রণ।
.
রাবেয়ার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে কিছুদিন হলো। এর মধ্যে তার বাবা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। অনেক বড় বড় ঘর থেকে সম্বন্ধ আসে, শুধু ঘরই বড় নয় বরং ছেলেগুলোও বেশ হ্যান্ডসাম। রাবেয়ার বাবার তাদের গ্রামে অনেক সুনাম আছে বলে যত গুলো সম্বন্ধ আসে, তার সবই খুব ভালো পরিবারের থেকে আসে। কিন্তু দূর্ভাগ্য যে, রাবেয়া সবগুলো সম্বন্ধই ফিরিয়ে দেয়। প্রথম কয়েকটা ফিরিয়ে দেওয়াই রাবেয়ার বাবা কিছু মনে করেনি। কিন্তু বারবার ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যপারটা তার কাছে কেমন যেন লাগে। চেহারা সুন্দর, ছেলে ভালো, কিন্তু রাবেয়ার পছন্দ না। এটা রাবেয়ার বাবার কাছে একটা সন্দেহনীয় ব্যপার।
এদিকে রাবেয়া বারবার রুবেলের কাছে ফোন দিয়ে বলছে, তুমি কবে দেশে আসবে? একটু তাড়াতাড়ি আসো প্লিজ, বাবা আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখছে।
এমন প্রচুর আকুতি মিনতি করে রাবেয়া রুবেলের কাছে। প্রত্তুত্তরে রুবেল জানায়, আর একটু অপেক্ষা করো সোনা। আমি এই মাসেই চলে আসবো দেশে। তুমি একটু তোমার দিকটা সামলে নাও। তোমার বাবাকে বলো, এখনো তোমার বিয়ের বয়স হয়নি। আর তাতেও যদি তিনি বিয়ের জন্য অতিরিক্ত চাপ দেন, তবে তুমি আমাদের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দাও।
রাবেয়ার মনে ভয়ের বিভীষিকা উকি দেয়। যদি তার বাবা তাকে ধমক দেয়, গায়ে হাত তোলে!
তবুও সে সিদ্ধান্ত নেয় তার বাবাকে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে জানাবে। তাতে যা হয় হোক।
.
অন্ধ ভালোবাসায় রাবেয়া এতোটাই বিভোর যে, সে অপরিচিত একটা ছেলের কথায় বাবার মুখের উপরে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করে।
অন্যান্য দিনের মতো আজও একটা সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে তার বাবা। ছেলেটা অন্যসব ছেলেদের তুলনায় ওভারঅল ভালো। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও রাবেয়া সেটাকে ফিরিয়ে দেয়। রাবেয়ার এমন আচরণ দেখে তার বাবা বেশ অবাক না হয়ে পারেনা। তার বাবা তাকে নানা ভাবে বোঝায় যে, এই ছেলেটা সবদিক থেকে ভালো। তোকে বেশ সুখেই রাখবে। আর তুইও কখনো কষ্টে থাকবিনা। কিন্তু কে শোনে কার কথা! রাবেয়া বিয়ে করবেনা, এ কথা সে তার বাবাকে বলে দেয়।
কিন্তু কেন বিয়ে করবেনা, এ কথা জিজ্ঞেস করলে সে তার বাবাকে রুবেলের শেখানো কথা বলে। তাতেও যখন কাজ হয়না, তখন সে বাধ্য হয়ে তার আর রুবেলের সম্পর্কের কথা তার বাবাকে জানায়। তার বাবা মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি কখনো ভাবতেও পারেননি তার মেয়ে এমন একটা কাজ করে বসবে। এখন তিনি বুঝতে পারছেন, এত গুলো ভালো ভালো সম্বন্ধ নিয়ে আসা স্বত্তেও কেন তার মেয়ে বিয়েতে রাজি হয়নি। কেন তার মেয়ে বারবার বিয়ে ভেঙে দিয়েছে।
.
রাতে রাবেয়ার বাবা রাবেয়াকে ডেকে বলে, তুই কি রুবেলের সম্বন্ধে সবকিছু জানিস? উত্তরে রাবেয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, না বাবা আমি তার ব্যপারে কিছুই জানিনা। তবে শুধু এটুকু জানি সে বিদেশ থাকে। তার বাড়ি আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামে।
- তোর সাথে তার পরিচয় কিভাবে? (বাবা)
- একদিন একটা রং নাম্বার থেকে কল আসে, আর সেখান থেকেই তার সাথে আমার পরিচয় এবং সম্পর্ক।
একেবারে কোনো সংকোচ ছাড়াই কথাটা বলে রাবেয়া।
- তুই তাকে দেখেছিস কখনো?
- না বাবা।
- দেখিস নি, তো তাকে ভালোবাসলি কিভাবে? এই না দেখা, রং নাম্বারের ভালোবাসার জন্য তুই এতগুলো সম্বন্ধ ফিরিয়ে দিয়েছিস এতোদিন?
ধমকের সুরে রাবেয়াকে কথাটা বলে তার বাবা।
রাবেয়া মাথা নামিয়ে নিচু স্বরে "হুম" বলে
- দেখ, তুই ছোট মানুষ। তোর কোন কিছু বোঝার ক্ষমতা এখনো হয়নি। আর এসব ভালোবাসা, ভালোবাসা না। সব ক্ষণিকের মোহ। তুই এবারের পাত্রটাকে বিয়ে কর। ভীষণ সুখে থাকবি মা। ছেলেটা অনেক ভালো। ভালো একটা চাকরিও করে।
- বাবা আমি পারবোনা রুবেলকে ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করতে।
বরাবরই রাবেয়ার মুখে "না" বাচক উত্তর শুনে তার বাবা বেশ রেগে যায়। তবুও তিনি তার রাগকে কন্ট্রোল করে বলেন
- শোন আমি তোর বাবা। আমি কখনো তোর খারাপ চাইবোনা। আমি সব জায়গা দেখেশুনে, খোঁজ খবর নিয়ে, তবেই তোকে বিয়ে দেবো। যাতে তুই সুখে থাকিস।
রাবেয়া তার বাবার কথা শুনে চুপ করে থাকে। তার এই চুপ থাকার মানে সে রুবেলকে ছাড়া অন্যকাউকে তার জীবনসঙ্গী করবেনা।
অনেক সময় নিরবতা সম্মতির লক্ষণ হয়। কিন্তু রাবেয়ার এই নিরবতাটা কোন সম্মতির লক্ষণ নয়। রাবেয়ার বাবা বুঝতে পারে বিষয়টা। তাই তিনি আর বাড়তি কোন কথা বলেন না। শুধু এটুকু বলেন, ছেলেটা দেশে আসবে কবে?
রাবেয়া তার বাবাকে চলতি মাসের কথা বলে। সে বলে, এই মাসেরই শেষের দিকে আসবে।
- আচ্ছা, সে দেশে আসলে তার সাথেই তোর বিয়ের ব্যবস্থা করবো।
মেয়ের উপর এক প্রকার বিরক্ত হয়েই তিনি এ কথা বলেন। যার যার জীবন তার তার কাছে। সে কোথায় সুখি থাকবে আর কোথায় থাকবেনা, এটা যদি সে নিজেই ঠিক করতে পারে। তাহলে তো আর বাবা মায়ের সেখানে কিছু করার থাকেনা।
.
রাবেয়ার একটা ভাই বিদেশ থাকে। সেও রাবেয়াকে প্রচুর বোঝায় , কিন্তু রাবেয়া অন্ধ ভালোবাসাতে ডুবে আছে। যার কারণে কারো কথাই তার মাথায় ঢোকেনা। সে তার নিজের সিদ্ধান্তে অটল।
তার পরিবার পরিজন সবাই তাকে বোঝায় যে, অপরিচিত একটা ছেলের সাথে রং নাম্বারে কথা বললেই প্রেম হয়ে যায়না। আর প্রেম না হয় হলোই, কিন্তু তাকে বিয়ে করার কোন প্রশ্নই ওঠেনা। সে তোর সাথে যাস্ট টাইমপাস করছে। দেখবি একসময় সে তোকে চিনবেইনা।
সবাই যার যার মতো রাবেয়াকে বোঝাতে থাকে। কিন্তু রাবেয়া কারো কথাকেই গ্রাহ্য করেনা। তার নিজের সিদ্ধান্তই তার কাছে সবার কথার থেকে বড় মনে হয়। একসময় তার বাবার মতো সবাই তার কথাকেই মেনে নেয়। আর মেনে না নিয়েই বা উপায় কোথায়। যার বিয়ে তার মতামতই প্রাধাণ্যময়। সেখানে যদি অন্যকেউ মতামত দিতে যায়, আর সেই মতামতের দ্বারা যদি বিয়েটাও হয়ে যায়। তবে কোন একদিন তার সংসারে অশান্তি লাগলে সব দোষ সে তার বাবা মা, পরিজনকে দিবে। তখন সে গলা উচুঁ করে বলবে "তোমাদের জন্যই আজ আমার এই হাল, তোমাদের কথা অনুযায়ী তোমাদের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে আমার জীবনটা শেষ। আজ যদি আমার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতাম তাহলে আজ এমন দিন দেখতে হতোনা আমাকে।"
এই কথাটা ভেবে সবাই চুপ থাকে। যদিও এমনটা হলে পরিবার থেকে যথেস্ট সাহায্য দেওয়া হবে!
.
পরদিন রুবেল রাবেয়াকে ফোন করে জানায়, সে চলতি মাসের চব্বিশ তারিখে দেশে আসবে। আর এসেই তাকে বিয়ে করবে। রাবেয়াও তাকে জানায় যে, সে তার বাবা মাকে রাজি করিয়েছে। দুজনেই বেশ গভীর ভালোবাসার সহিত একে অপরের সাথে প্রেমের আলাপ করতে থাকে।
আজ মাসের ১৭ তারিখ। আর মাত্র ৬টা দিন বাকি। তারপরেই রাবেয়া তার ভালোবাসার মানুষকে দেখতে পাবে, তার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারবে, এটা ভাবতেই সে বারবার লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। তার মনের মাঝে প্রচুর পরিকল্পনা, স্বাদ আহ্লাদ জমে আছে রুবেলকে ঘিরে।
"তারা একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবে, কখনো কখনো অজানা কোন গন্তব্যহীন পথে দুজনে হাত ধরে হেঁটে চলবে। প্রতিদিন সকালবেলা সে রুবেলকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবে, যদি সে উঠতে না চায় তবে তার উপর পানি ঢেলে দিবে। জোৎস্না রাতে বাসার ছাদে কিংবা খোলা আকাশের নিচে কোন ফাকা মাঠে বসে জোৎস্না বিলাস করবে।" এমন প্রচুর পরিকল্পনা রাবেয়ার মনে। সে এতগুলো ইচ্ছের কথা রুবেলকে বলবে বলবে করেও বলেনা। সে চায় আগে বিয়েটা হোক, তারপর বলবে।
.
২৩ তারিখ রাত ১টার দিকে ফোন আসে রাবেয়ার ফোনে। তখন সে গভীর ঘুমে মগ্ন। রাজ্যের সব ঘুম তার নয়নজুড়ে বসে আছে। ফোনের রিংটোনে ঘুম জড়ানো চোখে সে একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোনটা কাটতে যাবে, ঠিক সে সময়ই সে দেখলো রুবেল তাকে কল করেছে। সে তাড়াতাড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। বেশ কৌতুহল নিয়ে সে ফোনটা রিসিভ করে চুপ করে থাকে। অপর প্রান্ত থেকে রুবেল তাকে বলে ওঠে, ও আমার জান আমার প্রাণ, আমি আগামীকালই দেশে ফিরবো। এখন প্লেনে উঠলাম।
এ কথা শুনে রাবেয়া অবাক হয়ে উত্তর দেয়, সত্যি? রুবেল তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, বিশ্বাস হয়না?
পরদিন বিকেল পাঁচটার সময় রুবেল বাংলাদেশে আসে। আর এসেই সর্বপ্রথম সে রাবেয়াকে ফোন দেয়। রাবেয়া তখন গোসলে থাকাতে ফোন ধরতে পারেনা। বেশ কয়েকবার ফোন দেয় রুবেল। পরে যখন দেখলো রিসিভ হচ্ছেনা। তখন সে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। সে চেয়েছিলো দেশে এসে সে প্রথম রাবেয়ার সাথে দেখা করবে। কিন্তু তা আর হলোনা। রাবেয়া গোসল সেরে এসে যখন ফোন হাতে নেয়, তখন সে দেখে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে বেশ কয়েকবার ফোন এসেছিলো। রাবেয়া কল ব্যাক করে। ব্যাক করার সাথে সাথেই রিসিভ হয়ে যায়। রাবেয়া বলতে যাবে, আপনি কে?
কিন্তু সেটা বলার সুযোগই পায়না সে। তার আগেই রুবেল তাকে তার বাংলাদেশে আসার খবরটা জানায়। রুবেল দেশে এসেছে, এটা শুনতেই রাবেয়ার মন খুশিতে ভরে ওঠে। তার মুখে এক ধরনের গভীর আবেগময় হাসি লক্ষ করা যায়। যেন পৃথিবীর সব হাসি তার মুখে লেগে আছে। সে মরিয়া হয়ে পড়ে রুবেলের সাথে দেখা করার জন্য।
পরদিন রুবেলের দেওয়া সময় এবং স্থান অনুযায়ী রাবেয়া তার সাথে দেখা করতে যায়। দেখা করতে গিয়ে সে বড় এক ধরণের ধাক্কা খায়। সে কল্পনাতে রুবেলকে যেমনটা ভেবেছিলো, রুবেল তার একদম বিপরীত। তার কন্ঠের সাথে চেহারার কোন মিল নেই। তার কন্ঠ যতটা সুন্দর, সে দেখতে ততোটা সুন্দর নয়। খারাপ হোক সুন্দর হোক, ভালোবাসার মানষ তো! রাবেয়া এই সুন্দর কন্ঠের ছেলেটিকেই যে ভালোবাসে।
সেদিন তারা অনেক ঘুরাঘুরি করে, অনেকদিনের জমানো কথা তারা একে অপরের সাথে সেয়ার করে। রুবেল রাবেয়াকে জানায়, সে অতি দ্রুতই তাদের বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চায়। সে আগমাীকালই রাবেয়ার বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাবে।
এ কথা শুনে রাবেয়ার মনে এক প্রশান্তির ঢেউ খেলে যায়।
.
পরদিন রুবেল তার বাবা মা, আর মামা মামিকে সাথে করে রাবেয়ার বাড়িতে আসে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। রাবেয়ার বাবাও প্রস্তাবটা না করতে পারেনা। যতো হোক মেয়ের পছন্দ তো!
কিন্তু মনে মনে তিনি ঠিকই না করেছিলেন। তিনি চাইছিলেন না যে, তার মেয়েকে এমন একটা প্রবাসী ছেলের সাথে বিয়ে দিতে।
বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে রুবেলের পরিবার চলে যায়। এদিকে রাবেয়া তো মহা খুশি। আর কিছুদিন পর তার বিয়ে। খুশিতে সে একেবারে আত্মহারা হয়ে যায়। যেন সে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছে। সামনের মাসের দুই তারিখে তার বিয়ে। সে তার রুমে বসে বসে একটা হিসাব কষছে, কাকে কাকে বিয়েতে ইনভাইট করবে। সে আগামীকাল থেকেই বিয়ের কার্ড তার বন্ধুদের কাছে পৌছে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।
অন্যদিকে রাবেয়ার বাবা বেশি মানুষকে জানায় না। তিনি চান যত কম মানুষকে বিয়েতে আমত্রণ করা যায় ততোই ভালো। তাই তিনি হাতে গোনা কয়েকজনকে বিয়েতে আমত্রণ জানান।
.
বিয়ের দিন ক্রমেই এগিয়ে আসছে। সামনে আর দুইটা দিন বাকি। কিন্তু রাবেয়ার কাছে মনে হচ্ছে যেন আরও দুই যুগ বাকি। এই দুইটা দিন তার কোনভাবেই যাচ্ছেনা। সে রুবেলের প্রেমে এতোটাই উম্মাদ যে, সে রুবেলের সম্পর্কে কোন কিছু না জেনেই তাকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লাগে।
বিয়েতে সবাইকে ইনভাইট করা অলরেডি শেষ। এখন শুধু বিয়ের দিনটা আশার পালা। আগামীকাল রাবেয়ার বিয়ে। সে রুমে বসে আছে আর রুবেলের কথা ভাবছে। হঠাৎ সে শুনতে পেলো বাইরে থেকে কে যেনো তাকে ডাকছে। ডাকছে বললে ভুল হবে, একেবারে হাপিয়ে হাপিয়ে ডাকছে। রাবেয়া ঘটনাটা দেখতে রুম থেকে বের হয়ে বাইরে যায়। গিয়ে দেখে তার বান্ধবী অর্ণি দাড়িয়ে আছে আর হাপাচ্ছে।
- কিরে কি হয়েছে তোর? (রাবেয়া)
- আমার কিছু হয়নি, তবে তোর হবে।
- মানে? আমার আবার কি হবে!
অাশ্চর্য হয়ে বলে রাবেয়া। সে কিছুক্ষণের জন্য ভাবনাতে চলে যায়, তার কি এমন হবে? কোন খারাপ কিছু হবেনা তো!
- কালকে তো তোর বিয়ে তাইনা?
অর্ণির কথায় রাবেয়া ভাবনা থেকে ফিরে এসে বলে
- হ্যাঁ, কিন্তু কি হয়েছে?
- কি হয়নি সেটা বল।
- অর্ণি তোর কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
- তুই রুবেলকে কতদিন ধরে চিনিস?
- কেন? এই ধর তিনমাস হবে!
- তার সম্বন্ধে কি কি জানিস?
- তেমন কিছুই জানিনা, তবে শুধু এটুকু জানি সে ভালো একটা ছেলে, সে বিদেশে থাকে। আর আমাদের পাশের গ্রামেই তার বাড়ি।
- সে যে ভালো ছেলে, এটা তোকে কে বললো?
- তার কন্ঠ, কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে তাকে ভালো মনে হয়েছে।
- এই নে।
- কি এগুলো?
- দেখ কি, এখানে তোর সেই ভালো ছেলের ভালো কিছু ছবি আছে।
- মানে?
- মানে মানে না করে প্যাকেট খুলে দেখ।
রাবেয়া অর্ণির কথামতো প্যাকেটটা খোলে। প্যাকেট খুলে ছবি গুলোর দিকে তাকাতেই সে বড় মাপের একটা ধাক্কা খায়। সে কিছুক্ষণের জন্য কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। তার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যায়। সে কখনো ভাবতেই পারেনি সে আজ এমন কিছু দেখবে। ছবিগুলো দেখার পরেও রাবেয়ার এসব কিছু বিশ্বাস হয়না। সে কিছুতেই মানতে পারেনা, সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায়না তার রুবেল এসব কাজ করতে পারে, তার ভালোবাসার মানুষটি এমন হতে পারে! সে অর্ণিকে বলে, এসব তুই কোথায় পেলি।
উত্তরে অর্ণি বলে, কোথায় থেকে পেয়েছি সেটা বড় কথা না। বড় কথা হলো তুই বিয়েটা ক্যান্সেল কর। দেখ তোর ভালোর জন্যই আমি তোকে এটা বলছি। ঐ রুবেলের এমন অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। সে শুধু ফোনেই কথা বলেনা, সরাসরি সে এসব নোংরামিতেও লিপ্ত হয়। আজ অব্দি অনেক মেয়ের সাথেই সে সেক্স করেছে। দেশে তার এসব নোংরামি কাজের খবর কেউ জানেনা। সে এসব কাজ সবই বিদেশি মেয়েদের সাথে করে। আর দেশি মেয়েদের সাথে সে শুধু ফোনে কথা বলে। শোন রাবেয়া আমি চাইনা তুই এমন একটা নোংরা ছেলের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হ। আমি আসি এখন, ভালো থাকিস। আর নিজের ভালো চাইলে বিয়েটা ক্যান্সেল করিস।
অর্ণি রাবেয়াকে রুবেলের কৃতকর্মের কিছু ছবি দিয়ে চলে যায়। রাবেয়া ছবিগুলো হাতে নিয়ে ঠাঁই উঠানে দাড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তার মাথাটা ঘুরছে খুব। তার মনের আকাশে আজ ঘনকালো মেঘের ভেলা। সে নির্বাক, নিঃস্তব্দ হয়ে গেছে। তার কান্না পাচ্ছে খুব। কিন্তু সম্মান এবং নিজ সংকোচের কারণে কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা।
আগামীকাল তার বিয়ে, আর এখন সে এমন একটা খবর শুনতে পাবে, সেটা সে কখনোই ভাবতেও পারেনি। "এখন সে কি করবে" এই চিন্তাতে সে বেশ চিন্তিত। রাতে রুমে বসে বসে সে কান্না করছে আর ভাবছে, কি করবে সে এখন! যদি সে তার বাবাকে কথাটা জানায়, তবে তার বাবা তাকে ধমক কিংবা মারতেও পারে। আবার অনেককেই বিয়েতে ইনভাইট করা শেষ। এখন সব ইনভাইট বাতিল করে বিয়েটা ক্যান্সেল করবে কিভাবে।
রাবেয়া কিছু ভেবে পায়না। সে মুখ চেপে নিঃশব্দে কান্না করতে থাকে। এখন আর তার মধ্যে রুবেলের প্রতি একটুও ভালোবাসা নেই। সে এখন রুবেলকে ঘৃণা করে, প্রচুর ঘৃণা করে।
কিছুদিন আগেও যেই রাবেয়া রুবেলকে বিয়ে করার জন্য উন্মাদ ছিলো, আজ সেই রাবেয়ায় রুবেলের সাথে বিয়ে ভাঙার জন্য ব্যকুল হয়ে প্রহর গুনছে। কিন্তু তার সে প্রহর কখনো শেষ হবেনা, সেটা সে জানে। কিন্তু কিছু তো একটা করতে হবে। কিন্তু কি করতে হবে, এটা তার মাথায় আসেনা।
সে বারবার তার বাবাকে বলতে চায় বিয়েটা সে করবেনা। কিন্তু ভয়ে বলতে পারেনা। আর অন্যদিকে সবাইকে আমন্ত্রণ করাও শেষ। রাত পোহালেই বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে যাবে। এই এতটুকু, সীমিত একটা সময়ের মধ্যে সে বিয়েটা ক্যান্সেল করার কোন উপায় খুজে পায়না। সে ভাবে আর একদিন আগে যদি অর্ণি তাকে এই খবরটা জানাতো, তাহলে আজ সে বিয়েটা বাতিল করতে পারতো।
.
নানান রকম চিন্তা ভাবনার মধ্যে দিয়ে রাবেয়া ঘুমিয়ে যায়। পরদিন খুব সকালেই তার ঘুম ভাঙে। অতিরিক্ত চিন্তার কারণে সে ভালোভাবে ঘুমাতেও পারেনি। অন্যদিনের মতো আজ আর তার মুখে হাসি নেই, নেই কোন চঞ্চলতা। আজ তার বাবার আনা সেই ভালো ভালো প্রস্তাবগুলোর কথা বেশ মনে পড়ছে। আসলে কোন বাবাই তার সন্তানের ক্ষতি চান না, এটা সে এখন খুব ভালো করে বুঝতে পারছে।
কিন্তু এখন বুঝতে পেরে যে তার আর কিছুই করার নেই। অনেক দেরি করে ফেলেছে সে।
.
যথারীতি ঠিক সময়ে তার বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে যায়। যখন সে বিয়ের পিরিতে বসে ছিলো। তখন সে মনে মনে শুধু একটা চিন্তাই করেছিলো "ভুল তো মানুষেরই হয়। আর সেই ভুলকে তো একমাত্র মানুষই সংশোধন করতে পারে। আমিই না হয় রুবেলের সেই ভুলগুলো শুধরাতে সাহায্য করবো। আমিই না হয় তাকে আমার সবটুকু দিয়ে তার সর্ব চাহিদা মেটাবো।" এসব বলে সে নিজেকে স্বান্ত্বনা দিচ্ছিলো তখন।
এখন রাবেয়া বাসর ঘরে বসে আছে। সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রুবেলকে সে শপথ করাবে। সে যেন তাকে ছাড়া আর অন্য কোন মেয়ের সাথে কথা না বলে, সঙ্গ না দেয়। এতোদিন যা করেছে তা করেছেই। কিন্তু এখন থেকে আর করতে দেওয়া যাবেনা।
খানিক বাদেই রুবেল বাসর ঘরে ঢুকে। ঢুকে সে সোজা রাবেয়ার সামনে গিয়ে বসে। রাবেয়া যে তার সব কুকর্মের খবর জানে, এটা সে জানেনা। রুবেল রাবেয়ার সামনে বসে যখন রাবেয়াকে স্পর্শ করতে যাবে ঠিক তখনই রাবেয়া তাকে ওয়াদা বদ্ধ করায়। সে পবিত্র কোরআন মাজীদ স্পর্শ করিয়ে তাকে শপথ করায়, সে যেন শুধু মাত্র রাবেয়াকে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে না মিশে।
রাবেয়ার এমন আচরণে রুবেল খানিকটা ভরকে যায়। সে ভাবে, এই মেয়ে তার সম্বন্ধে এতকিছু জানলো কি করে। পরে সে রাবেয়ার অাকুল আবেদনে ওয়াদাবদ্ধ হয়। ওয়াদা করানো শেষ হলে রাবেয়া নিজেকে তার কাছে সপে দেয়।
ধীরে ধীরে তারা গভীর ভালোবাসায় মেতে ওঠে। রুবেলের সেক্স করার ধরণ দেখে রাবেয়ার এখন পুরোপুরি বিশ্বাস হয় যে, সে এর আগেও অনেক মেয়েদের সাথে সেক্স করেছে। একদম বিদেশিদের মতো তার সেক্স করার ধরণ। তবুও রাবেয়া কিছু মনে করেনা। সে চায় রুবেলকে যেন সে তার সবটুকু দিয়ে চাহিদা মেটাতে পারে। বাসর করার আগে রুবেল রাবেয়াকে বলে, সে এবার বাচ্চা নিবেনা। তাই সে সতর্কতার সাথে রাবেয়া সাথে মিলিত হয়। রাবেয়াও ভাবে পরে হয়তো নিবে। তাই সে আর অমত প্রকাশ করেনা।
.
বিয়ের প্রথম কয়েকমাস খুব ভালোই কাটছিলো তাদের। কিন্তু কয়েকমাস যেতে না যেতেই তাদের সংসারে নেমে এলো দুর্বিষহ হাহাকার। রুবেলের মা কোনমতে জানতে পারে যে, বাসর রাতে রাবেয়া তার ছেলেকে কোরআন ছুইয়েছে।
আর এটা জানার পর থেকেই তিনি রাবেয়াকে দুচোক্ষে দেখতে পারেন না। রাবেয়া যদি কোন ভালো কাজও করে, তবুও তিনি তার একটা ভুল ধরে তাকে অপমান অপদস্ত করেন। প্রথম প্রথম রাবেয়া এটা নিয়ে তেমন মাথা ঘামায়না। কিন্তু ক্রমেই যখন তার প্রতি তার শাশুড়ির অবিচার, অত্যাচার বাড়তে থাকে। তখন সে তার শাশুড়ির তার প্রতি অত্যাচার, নির্যাতনের কারণ জানতে চায়। সেদিন তার শাশুড়ি তাকে অনেক কথা শুনিয়ে দেয়। আর সেটাও আবার রুবেলের সামনেই। কিন্তু রুবেল তখন কিছুই বলেনা, একদম চুপ থাকে সে। তার অন্তত কিছু একটা বলা উচিত ছিলো, যেহেতু রাবেয়া কোন ভুল কিংবা দোষ করেনি। বরং তাকে একটু ভালো হওয়ার জন্য বলেছে মাত্র।
.
রাবেয়া যতই তার শাশুড়ির মন জয় করার চেষ্টা করে, তার শাশুড়ি তাকে ততই বকাঝকা করে। আর তার সাথে রুবেলের পরিবারের অন্যরা তো আছেই। রুবেলের মামা মামিও তাদের সাথেই থাকে। তারাও কেউ সুবিধার মানুষ না।
রুবেল আর রাবেয়ার বিয়ের বেশ কয়েকমাস চলে গেছে। তখন আম কাঁঠালের সিজিন চলছিলো। রাবেয়াদের বাড়ির আমগাছে, কাঁঠালগাছে প্রচুর আম কাঁঠাল ধরেছে। সেগুলো মোটামুটি পাকতেও শুরু করেছে। রাবেয়ার বাবা মোন তিনেক আম কাঁঠাল নিয়ে রাবেয়ার শশুড় বাড়ির দিকে যান।
তিনি তার মেয়েকে দেখে আসেন এবং আম কাঁঠালগুলো দিয়ে আসেন। এতো এতো ফল দেখে রাবেয়ার শাশুড়ির চক্ষু চরকগাছ। তিনি একসাথে এতগুলো ফল কখনোই দেখেননি। রাবেয়ার বাবা চলে যেতে না যেতেই তিনি ফলগুলো একটু করে খেয়ে দেখতে থাকেন।
এর মাঝে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে। সবগুলো ফল তো আর একসাথে খাওয়া যায়না।
তাই মাঝে মাঝে বের করে খায়। ফলগুলো এদিকে একেবারে পেঁকে মজে গেছে। এক দুদিনের মধ্যে সেগুলো না খেলে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই দেখে রাবেয়ার শাশুড়ি তার আত্মীয়দের দাওয়াত করে ফল খাওয়ার জন্য। বস্তা বস্তা আম কাঁঠাল পড়ে আছে ঘরের মেঝেতে। আত্মীয়রাও যথাসময়ে চলে আসে। তারা এসে দেখে প্রচুর আম কাঁঠাল রয়েছে এখনো। যা দুদিন ধরে খেলেও ফুরানো অসম্ভব। তাদের যখনই মন চায়, তারা তখনই একটা একটা করে বের করে করে খায়। তাদের খাওয়া দেখে মনে হয় যেন এসব তাদের বাপের গাছের ফল। তাদের এমন রাক্ষসী খাওয়া দেখে রাবেয়ার মনে কোন হিংসে কাজ করেনা। বরং তার বেশ ভালোই লাগে। সে পেরেছে আজ তার শশুড় বাড়ির সবার মুখে হাসি ফোটাতে। তারা মন প্রাণ, নাক কান, চোখ মুখ ডুবিয়ে খেতে থাকে। কিন্তু একবারের জন্যও তারা রাবেয়াকে জিজ্ঞেস করেনা যে, সে খেয়েছে কিনা। অবশ্য রুবেল মাঝে মাঝে তাকে বলে, সে খেয়েছে কিনা। তখন রাবেয়া না খেয়েও মুখে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটিয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়।
.
কিছুদিন পর রুবেল বিদেশ চলে যাবে। অনেকদিন হয়ে গেছে তার দেশে আসা। সে রাবেয়াকে রুমে ডেকে বলে, রাবেয়া আমি সামনের মাসের ১৫ তারিখ চলে যাচ্ছি। কথাটা শুনতেই রাবেয়ার মনটা কেঁপে ওঠে। সবে মাত্র বিয়ে হয়েছে তার। এখনি যদি তার স্বামী তাকে ছেড়ে বিদেশ চলে যায় তাহলে সে কাকে নিয়ে সংসার করবে। সে খানিক সময় চুপ থেকে বলে, আর দুইটা মাস থাকোনা প্লিজ।
- দেখো আমার টিকিট কাটা হয়ে গেছে, সামনে মাসের ১৫ তারিখে আমার ফ্লাইট। এখন কেমন করে থাকি বলো।
- আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো?
- আরে বোকা, আমি একেবারে চলে যাচ্ছি নাকি। ছয়মাস পর আবার আসবো।
কিছুক্ষণ নিরবতা চলে দুজনের কথার মাঝে। তারপর রাবেয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুবেলকে ডাক দেয়
- রুবেল...
- হুম বলো।
- তুমি তো জানো তোমার মা আমাকে দু চোক্ষে দেখেতে পারেনা। তাহলে আমি কিভাবে এখানে থাকবো বলো।
- আচ্ছা সে বিষয়টা আমি দেখবো। তোমাকে এ নিয়ে টেনশন করতে হবেনা।
- আচ্ছা রুবেল, আমি কি কোন খারাপ ব্যবহার করি কারো সাথে?
- না তো, কেন?
- তাহলে এখানকার কেউ আমাকে সহ্য করতে পারেনা কেন?
- তুমি চিন্তা করোনা, সব ঠিক হয়ে যাবে।
রুবেল আর রাবেয়া, তারা একে অপরের সাথে কথা বলছে। কথা বলার মাঝখানে হঠাৎ করেই রুবেলের মা রাবেয়াকে ডাক দেয়। বেশ জোড় গলাতেই ডেকে ওঠে রাবেয়াকে। রাবেয়া তখন রুবেলের বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়েছিলো। শাশুড়ির এমন ডাকে সে হকচকিয়ে উঠে রুবেলকে ছেড়ে দেয়। কি এমন হয়েছে, সেটা দেখতে সে পাশের রুমে যায়। গিয়ে দেখে সবাই সেই আগের মতোই আম কাঁঠাল খাওয়াতে ব্যস্ত। কিন্তু তার শাশুড়ি তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে সে খুব ভয় পেয়ে যায়। সে মনে মনে ভাবতে থাকে, সে আবার কোন ভুল করে ফেললো না তো! ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে শাশুড়ি একটা কাঁঠাল হাতে করে কড়া গলায় বলে ওঠে, ভালো ভালো আম কাঁঠাল থাকতে এই পঁচা আম কাঁঠাল তোর বাবা আমাদের এখানে দিয়ে পাঠিয়েছে! শাশুড়ির মুখে এমন কথা শুনে সে কাঁঠালটার দিকে তাকায়। সে দেখে আসলেও তো কাঁঠালটা পচে গেছে।
- মা, আমার বাবা তো সব ভালো কাঁঠালই দিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু বেশিদিন অতিবাহিত হওয়ার কারণে অতিরিক্ত গরমে কাঁঠালটা হয়তো পঁচে গেছে।
- হারামজাদি তুই আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস?
অতীব রাগের সুরে বলে কথাটি। রাবেয়া তার শাশুড়ীর মুখে এমন ভাষা শুনে স্তব্দ হয়ে যায়। পাশেই রুবেল দাড়িয়ে, অথচ সে কোন প্রতিবাদই করছেনা। কম করে হলেও তার কিছু একটা বলা উচিত ছিলো। কিন্তু না! সে কিছু না বলে চুপচাপ সব দেখতে থাকে। রাবেয়ার চোখ দুটো পানিতে টলমল করতে থাকে। সে অসহায় দৃষ্টিতে তার স্বামীর দিকে তাকায়। বেশিক্ষণ সে তাকিয়ে থাকতে পারেনি। চোখের কোণ বেয়ে অঝোর ধারায় জল গড়তে থাকে।
একে তো সবাই চোখ, মুখ ডুবিয়ে খাচ্ছে। আবার সেই সাথে দুর্নামও করছে। রাবেয়া ভেবে পায়না, তার শাশুড়ী তার সাথে এমন আচরণ করে কেন।
.
ক্রমেই রাবেয়ার উপর চাপের পরিমাণ বাড়তে থাকে। উঠতে বসতে তাকে কথা শুনতে হয়। এভাবে চলতে চলতে সে বেশ হাপিয়ে উঠেছে। সে আর পারছেনা এই নরকপুরীতে থাকতে।
এদিকে রুবেলেরও ফ্লাইটের দিন চলে এসেছে। আগামী পরশুদিন তার ফ্লাইট। সে বিছানায় বসে আছেে। ঠিক সে সময় রাবেয়া রুমে ঢুকলো। তার মনটা আজ খুব খারাপ। একে তো বাড়ির কেউ তাকে ভালোবাসেনা। আবার রুবেলও পরশুদিন বিদেশ যাবে। দুইটা মিলিয়ে তার চেহারা জুড়ে বিষন্নতার ছাপ পড়ে গেছে। সে রুবেলের কাছে গিয়ে বলে
- রুবেল আমি আর পারছিনা এ বাড়িতে থাকতে। আমাকে তুমি তোমার সাথে বিদেশ নিয়ে চলো। তোমাকে ছাড়া আমি একলা এখানে থাকতে পারবোনা।
রুবেল কোন কথা বলেনা। সে চুপচাপ আগের মতোই বসে থাকে। রাবেয়া আবার বলে কথাটা। এবার রুবেল রাবেয়াকে টান দিয়ে এক ঝটকায় তার বুকে জড়িয়ে নেয়। রাবেয়াও পরম আবেশে রুবেলের বুকে মুখ লুকায়। রুবেল তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর বলে সে যাওয়ার আগে তার ব্যবস্থা করে দিয়ে যাবে। রুবেলের কথাতে রাবেয়ার মনে সাহস সঞ্চার হয়। কেউ তাকে ভালো না বাসুক, শুধু রুবেল বাসলেই চলবে।
পরদিন রুবেল তাকে একটা বড় ফ্ল্যাট বাসার একটা রুমে রেখে আসে। আর বলে আসে, আজ থেকে তুমি এখানেই থাকবে। সময়মতো সব ধরনের খরচাদি পেয়ে যাবে। আর কোন সমস্যা হলে আমাকে অবশ্যই জানাবে। রাবেয়া শুধু মাথা নাড়ে।
একা একা থাকতে মন চাইছেনা তার, তবুও তাকে থাকতে হচ্ছে। অবশ্য রুবেলের মামা, মামি তাকে বলেছিলো তাদের মাথে থাকতে। কিন্তু তাদের আচার ব্যবহারও সুবিধার না হওয়ায় সেখানে সে থাকতে পারেনা। ওখানকার অত্যাচারেরর চেয়ে এখানকার নিঝুম, নিঃশব্দ একাকি পরিবেশে সে বেশ ভালোই থাকতে পারবে।
.
রুবেল পরদিন বিদেশ চলে যায়, আর এদিকে রাবেয়া বড্ড একা হয়ে পড়ে। রাবেয়াকে আলাদা করে একটা বাসায় রাখাটা রাববেয়ার শাশুড়ির মোটেও ভালো লাগেনা। তার মনে অনেক সংশয় উঁকি দেয়। তিনি ভাবেন তার ছেলের পাঠানো সব টাকা পয়সাই বোধ হয় রাবেয়ার কাছে যাবে। আর যদি রাবেয়ার কাছে সব টাকা যায়, তাহলে তার কি হবে! এসব নানান কুচিন্তা খেলা করে তার মাথায়। তিনি মনে মনে একটা বুদ্ধি আটেন। কিন্তু বুদ্ধিটা কাজে লাগাতে পারেন না সময়মতো। তিনি চান রাবেয়াকে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু পারেন না। কারণ রুবেল রাবেয়াকে তার মায়ের কাছে থাকতে দেবেনা। থাকতে দিলেই রাবেয়াকে তার মা নানান অত্যাচার করবে, কটু কথা বলবে, সবসময় তাকে পায়ের নিচে ফেলে রাখবে। এসব ভেবেই রুবেল রাবেয়াকে বাড়িতে পাঠায়না। আর এই কারণেই দুষ্টু শাশুড়ির কুবুদ্ধিটা কার্যকর হয়না।
দিন যায়, মাস যায়, রাবেয়া নিজেকে মানিয়ে নেয় একাকী বদ্ধ ঘরে। অবশ্য সময়মতো রুবেল তার জন্য সবকিছু পাঠিয়ে দেয়। তার যত খরচ লাগে সবকিছু না চাইতেই রুবেল তাকে দেয়। এটা দেখে সে খুব খুশি হয়। সে মনে মনে ভাবে, সেই বোধ হয় সবচেয়ে বড় ভাগ্যবতী। তার বরটা তাকে কতো ভালোবাসে!
কিন্তু তার এই ভাবনাটা ছিলো তার ভাবনার পুরো বিপরীতমুখী। একদিন রুবেল তাকে ফোন করে বলে তার মা নাকি অসুস্থ। তার মাকে দেখার মতো কেউ নেই। তাই রাবেয়া যেন অতি দ্রুতই বাসায় ফিরে যায়। স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে রাবেয়ার প্রথমে কিছুটা সন্দেহ হলো। কারণ, তার শাশুড়ি তো অসুস্থ হওয়ার মানুষ না। নিশ্চয়ই অন্যকোনো কুবুদ্ধি এটেছে। কিন্তু উপায় নেই, তাকে যে তার স্বামীর কথা শুনতেই হবে। সেদিন বিকেলেই সে তার শশুড় বাড়িতে ফিরে যায়। গিয়ে দেখে সবকিছু ঠিকঠাকই আছে। তার শাশুড়ি দিব্যি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। দেখে তো মনে হচ্ছেনা কোন অসুখ হয়েছে। তাহলে কি রাবেয়ার সন্দেহটাই ঠিক ছিলো?
রাবেয়া বাড়ির মধ্যে ঢুকতেই খুব আদরের সহিত তার শাশুড়ি তাকে ঘরে নিয়ে গেলো। প্রায় ছয় মাস পর তার শাশুড়ির কুবুদ্ধিটা কার্যকর হলো। এই ছয়টা মাস তিনি খুব কষ্টে ছিলেন। "তার ছেলে বাড়িতে কি পাঠায়, না পাঠায়। সবকিছু বোধ হয় রাবেয়ার কাছে পাঠায়" এটা ভেবে তিনি বেশ দুঃচিন্তায় ছিলেন এ কয়টা মাস। এখন রাবেয়াকে ঘরে আনতে পেরে তিনি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। এখন থেকে তিনি তার ছেলের পাঠানো সব টাকারই খোজ রাখতে পারবেন। প্রথম একটা মাস বেশ ভালো আচরণই করলেন তিনি রাবেয়ার সাথে। যেই না তার ছেলে বাড়িতে টাকা পাঠানো ধরলো, সেই থেকে তিনি আবার তার আগের রুপে ফিরে গেলেন। সবসময় রাবেয়াকে কোন না কোন হুকুমের পরেই রাখে। একটা কাজ শেষ না হতেই আরেকটা কাজের হুকুম করে। যদি কাজে কোনো ভুলত্রুটি হয়ে যায়, তবে তো রাবেয়ার নিস্তার নেই। মুখে তো বলবেই, তার উপর আবার গায়েও হাত তুলবে।
রাবেয়া অপেক্ষায় থাকে কখন তার স্বামী তাকে ফোন করবে। আর সে তার শাশুড়ির এসব অত্যাচারের কথা তাকে জানাবে। মাঝখানে টানা বেশ কয়েকটা মাস কেটে গেলো। এ কয়েকটা মাসে রাবেয়া একেবারে শেষ হয়ে গেছে। সে না পারে কোন প্রতিবাদ করতে, না পারে তার বাবার বাড়ি ফিরে যেতে। তার ভীষণ কষ্ট হয়। সে প্রতিরাতেই বালিশে মুখ লুকিয়ে কান্না করে। দিনের বেলা প্রায় সময়ই মনমরা থাকে। সে তার শাশুড়ির এতো অত্যাচারের পরেও কখনো শাশুড়ির মুখের উপর কথা বলেনি। বরং তার শাশুড়ির বিপদে আপদে তাকে সাহায্য করেছে। সবসময় শাশুড়ির মন জয় করার জন্য কত কিছুই না করে সে প্রতিনিয়ত। তবুও শাশুড়ির মনে তার জন্য একটুও মায়া তৈরি হয়না। তাদের বাড়িতে রুবেলের মামা মামিও থাকে। তারাও তাকে দেখতে পারেনা।
একদিন হঠাৎ করেই রুবেল কাউকে না জানিয়ে দেশে আসে। এসে সোজা বাড়িতে ঢুকে রাবেয়াকে ডাক দেয়। রাবেয়া বেশ চমকে যায় হঠাৎ করে অসময়ে রুবলের কন্ঠ শুনে। সে প্রথমে ভেবে বসে হয়তো ভুল শুনেছে। কিন্তু আবার ডাক দেওয়াতে সে বুঝতে পারে তার ভালোবাসার মানুষটি সত্যি সত্যিই চলে এসেছে। সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। দ্রুত সে বাইরে গিয়ে দেখে রুবেল দাড়িয়ে আছে। রুবেলকে দেখে সে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। দৌড়ে গিয়ে সে তাকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু রুবেল তাকে জড়িয়ে ধরার বদলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুমে যেতে বলে।
রাবেয়া রুমে গেলে রুবেল তাকে জিজ্ঞেস করে
- আমার মায়ের সাথে তুমি কি করেছো?
রাবেয়া তার এমন কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। সে উত্তর দেয়
- কই? কিছু করিনি তো!
- তাহলে মা আমাকে দ্রুত দেশে আসতে বললো কেন?
- সেটা আমি কি করে বলবো।
তাদের কথা বলার মাঝখানে রুবেলের মা এসে রাবেয়ার নামে খারাপ কথা বলে রুবেলকে বিষিয়ে তোলেন। আর রুবেলও তার মায়ের কথাতে সায় দিয়ে রাবেয়াকে কড়া গলায় কথা বলে।
রাবেয়া বেশ অবাক হয় রুবেলের এমন আচরণে। সে আরেকবার রুবেলে দিকে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নেয়। এটাই কি তার সেই রুবেল? যে তাকে প্রচুর পরিমাণে ভালোবাসে!
নাহ, এটা তার সেই রুবেল হতেই পারেনা। তার এমন আচরণ রাবেয়ার কাছে কেমন যেন সন্দেহভাজন লাগে। তাহলে কি তার শাশুড়ি তাকে ব্রেন ওয়াশ করেছে?
.
সেদিনের মতো সব চুপচাপ থাকলো। কিন্তু প্রায় দিনই রুবেল রাবেয়াকে কড়া গলায় কথা বলতে থাকে। সে আর আগের মতো রাবেয়াকে ভালোবাসেনা, তার যত্ন নেয়না। আর এর পিছেও অবশ্য একটা কারণ আছে।
রুবেলকে সাম্প্রতিক সবসময় ফোনে কথা বলতে দেখে রাবেয়া। সে যদি জিজ্ঞেস করে, কার সাথে এতো কথা বলছো। তাহলেই রুবেল রেগে আগুন হয়ে যায়। আর তাকে যা ইচ্ছে তাই বলে।
সেদিন রুবেল গোসলে ছিলো। এদিকে রুবেলের ফোনটা বিরামহীন ভাবে বেজেই চলেছে। ধরার মতো কেউ নেই। রাবেয়া ফোনটা রিসিভ করে ফোনটা কানে ধরতেই
- ঐ তুমি কই থাকো বলোতো? সেই কখন থেকে তোমাকে ফোন দিচ্ছি রিসিভ করছোনা কেন? কবে দেখা হচ্ছে তোমার সাথে বলো? আর কখন বাংলাদেশে আসলে, সেটা জানালেনা কেন?
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে একটি মেয়ের এরুপ কথা শুনে তার অার বুঝতে বাকি রইলোনা যে, রুবেল আরো মেয়েদের সাথে ফোনে কথা বলে। তার কষ্ট হয় খুব। সে ভাবে, কাকে সে বাসর রাতে কোরআন স্পর্শ করিয়ে শপথ করিয়েছিলো! সে আরো ভাবে, না জানি আরো কতো মেয়েদের সাথে তার এমন সম্পর্ক আছে। রুবেলকে গোসল সেরে আসতে দেখে সে তাড়াতাড়ি করে ফোন রেখে দেয়। রুবেলকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, সে কোন মেয়ের সাথে নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছে। তার আচার ব্যবহার খুব নরমাল। একদম স্বাভাবিক আচরণ করছে সে। যেনো কিছুই করেনি সে।
রাবেয়া আরো ভাবে, তাহলে কি তার এই হঠাৎ করে দেশের আসার কারণ ঐ ফোনের মেয়েটি? নাহ এটা কি করে হতে পারে? রুবেল তো একমাত্র তাকেই ভালোবাসে। কিন্তু ফোনের মেয়েটি কি বললো ওসব।
রাবেয়া এসব ভাবতে ভাবতে আবার টেবিলে রাখা ফোনটা বেজে ওঠে। ফোন বাজতে দেখে সে রুবেলের দিকে তাকায়। রুবেল বেশ হাসিখুশি মনে ফোনটা হাতে নিয়ে বাইরে চলে যায়। এবার আর রাবেয়ার বুঝতে বাকি থাকেনা যে, রুবেল একমাত্র ঐ মেয়েটির জন্যই দেশে এসেছে।
.
রাতে ঘুমানোর সময় রুবেল রাবেয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চাইলে রাবেয়া বাধা দেয়। এতে রুবেল বেশ ক্ষেপে যায়। রাবেয়া এতোদিনে বুঝতে পেরেছে, রুবেল শুধু তার শরীরকে ভালোবাসে, তাকে নয়। রুবেলের চোখে ক্ষুধার্ত বাঘের ন্যায় ভাবটা সাদৃশ্য। রাবেয়া বুঝতে পারে রুবেল এখন তার কাছে কি চায়।
সে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেকে রুবেলের কাছে সপে দেয়। কারণ তার কিছু সময়ের ভাবনাটা ছিলো এমন "তাদের একটা সন্তান হলেই রুবেল ঠিক হয়ে যাবে"।
কিন্তু রুবেল এবারও সন্তান নিবেনা বলে ঠিক করে। সে সন্তান না নেওয়ার জন্য রাবেয়ার সাথে খুব সতর্কতার সহিত মিলিত হয়। এতে রাবেয়ার বেশ মনঃক্ষুণ্ণ হয়। তবুও সে তার স্বামীকে কিছু বলতে পারেনা।
সে একদিন তার শাশুড়িকে বলতে শুনেছিলো, রুবেল যেন সন্তান না নেয়।
.
পরদিন বিকেলে রুবেল বেশ পরিপাটি হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। রাবেয়া তাকে "কোথায় যাচ্ছো" জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দেয়, সে তার বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। রাবেয়ার তখন একটুও বুঝতে বাকি রইলোনা ঐ ফোনে কথা বলা মেয়েটিই তার বন্ধু।
রুবেল দেশে এসে রাবেয়াকে বেশি সময়ই দেয়না। সবসময় তার ফোনে কথা বলতেই দিন চলে যায়। আর প্রায় সময়ই তাকে তার মায়ের সাথে কি নিয়ে যেন আলোচনা করতে দেখে রাবেয়া। সে শুধু শারীরিক চাহিদা মেটাতে রাবেয়াকে কাছে টানে। এ ছাড়া সে আর রাবেয়াকে ভালোবাসেনা। রাবেয়ার সাথে যত কথা বার্তা হয় তার, সেটা হোক গোপনীয় কিংবা প্রকাশ্য, সব কথায় তার মায়ের কানে পৌছে যায়।
এর বেশ কিছুদিন পর রুবেল আবার বিদেশে যাবার জন্য টিকিট কেটে আসে। বিদেশের মেয়েদের সাথেও তার রিলেশন চলে, তবে সেটা শারীরিক।
রাবেয়ার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো এই রুবেল নামের দুঃচরিত্রের ছেলেকে ভালোবাসাটা। সে প্রায়শই সবার চক্ষুর আড়ালে গিয়ে কান্না করে আর তার বাবা কথাগুলো মনে করে। সে এতোটাই জেদি মেয়ে ছিলো তখন, যখন তার বাবা তার জন্য সুন্দর সুন্দর সম্বন্ধ নিয়ে আসা স্বত্তেও সে রুবেলের জন্য তার বাবার আনা সব সম্বন্ধ ফিরিয়ে দিয়েছিলো।
সে চায় নতুন করে বাঁচতে। কিন্তু সে কিভাবে আবার নতুন করে জীবন শুরু করবে এটা সে ভেবে পায়না। সে না পারছে তার বাবার বাড়ি ফিরে যেতে, না পারছে রুবেলকে আপন করে পেতে। সে আজ গভীর সমুদ্রের মাঝে দাড়িয়ে। কোনদিকেই সে যেতে পারছেনা। আজ সে বড্ড অসহায়।
রুবেলকে সবসময় অন্য মেয়েদের সাথে ফোনে কথা বলতে দেখে সে ভাবে, বিদেশে থাকাকালীন সময়ে রুবেল তাকে একটিবারও ফোন করেনা। বলে, সে নাকি ব্যস্ত থাকে। তাহলে কি এটাই তার ব্যস্ততা!
.
নির্দিষ্ট তারিখে রুবেল আবার প্রবাসে চলে যায়। রুবেল যেতে না যেতেই রাবেয়ার উপর তার শাশুড়ির অত্যাচার আগের থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। এমনিতেই সে এসব অত্যাচার সইতে সইতে বড্ড ক্লান্ত। তার উপর আবার দ্বিগুন অত্যাচারে সে বড়ই বিপদে পড়ে যায়। ঠিকমতো খাবার, পোশাক আশাক দেওয়া হয়না তাকে। ধীরে ধীরে তাকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করা হয়। রুবেলকে সে এসব কথা জানালে রুবেল কোন উত্তর দেয়না। সে এর প্রতিবাদও করেনা। কারণ রুবেলই যে এসবের মূল কারণ।
রুবেল রাবেয়াকে বলে, বেশি সমস্যা মনে হলে তুমি আমার মামাদের সাথে থাকতে পারো। কিন্তু রাবেয়া জানে তার মামার চরিত্র কতটা ভালো আর কতটা খারাপ। এর আগে তার মামা রাবেয়ার বাবাকে বেশ দুঃখজনকভাবে অপমান করে। আর সেটা রুবেলের সামনেই। সেদিনও রুবেল একদম চুপ করে ছিলো। সে এর কোন প্রতিবাদ করেনি। আর সেই থেকেই রুবেলের প্রতি রাবেয়ার ভরসা উঠে যায়। তবুও রাবেয়া তাকে ভালোবাসে। কারণ রুবেল যে তার পুরো হৃদয় জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
রাবেয়া রুবেলকে বলে, তোমার মামার আচার ব্যবহার ভালোনা। আমি পারবোনা তাদের সাথে থাকতে। তুমি আমাকে কোথাও থাকার একটা ব্যবস্থা করে দাও।
এ কথা বলতে বলতে ততক্ষণে অপর প্রান্ত থেকে রুবেল ফোন রেখে দিয়েছে।
রুবেল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পূর্ণ মানুষ। তার প্রকৃত পরিকল্পনা ছিলো রাবেয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া। কিন্তু সে তো আর সরাসরি তাকে বলতে পারছেনা এই কথা। তাই সে চতুরতার সাথে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কুবুদ্ধি আটে। সে জানে তার মা যদি রাবেয়ার উপর আগের থেকে বেশি অত্যাচার করে, তাহলে রাবেয়া নিজে থেকেই তার বাবার বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হবে। কুবুদ্ধিটা তার মন্দ ছিলোনা। রাবেয়াকে অবহেলা করলে রাবেয়া যদি সেই অবহেলা সহ্য করতে না পেরে তাকে ডিভোর্স দেয়, তাহলে সে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা থেকে বেঁচে যাবে। আর সে নতুর করে আরো মেয়েকে তার শিকার করতে পারবে।
.
অত্যাচারের মধ্য দিয়ে কিছুদিন অতিবাহিত হলো রাবেয়ার দুঃখের সংসারি জীবন। সে যখন আর পারছিলোই না, তখন সে কোন কিছু না ভেবে, কোন দ্বিধা সংকোচ না করে সোজা তার বাবা বাড়ি চলে যায়। সে জানে তার বাবা তাকে কখনোই সাহায্য করবেনা, কখনোই তার বাড়িতে তাকে তুলবেনা। তবুও সে নির্লজ্জের মতো তার বাবার বাড়ি চলে যায়।
কথায় আছেনা, সবাই যদি পর হয়ে যায় তবুও বাবা মা কখনো পর হয়না। হাজার দোষ কররলেও বাবা মা তার সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নিতে দু'বার ভাবেনা। রাবেয়ার সাথেও ঠিক তেমনই হয়। তার বাবা তাকে তার বাড়িতে আশ্রয় দেয়। বাড়িতে পৌছে রাবেয়া তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে প্রচুর কান্না করে। আর তার বাবার কাছে ক্ষমা চায়। আজ যদি সে তার বাবার কথা শুনতো তাহলে তাকে আর আজ এই দিনটা দেখতে হতোনা।
তার বাবা তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে স্বান্ত্বনা দেয়। তবুও রাবেয়ার কান্না থামেনা। কারণ তার বাবার দেওয়া স্বান্ত্বনাটা যে মিথ্যে বুলি।
.
এখন বর্তমানে রাবেয়া তার বাবার বাড়িতেই থাকে। সে তার বাবার বাড়িতে থাকার কারণে পাড়ার মানুষজনে নানান কথা বলাবলি করে। তবে সে এগুলোতে তেমন মাথা ঘামায়না। কিন্তু সে এটা ঠিকই বুঝতে পারে যে, তার কারণে গ্রামে, পাড়াতে তার বাবার সম্মান কমে গেছে।
রাবেয়া এখন বসে বসে তার বাবার টাকাতে ভাগ বসাচ্ছে। গল্পের প্রথমেই বলেছিলাম, রাবেয়ার বাবা বর্তমানে একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। তিনি যে টাকা পেনশন হিসেবে পান, তা দিয়ে সংসারের খরচের পাশাপাশি রাবেয়ারও ভরণপোষণ করেন।
.
এর মাঝে প্রায় সাত থেকে আট মাস গত হয়ে গেছে। তবুও রুবেল ভুলবশতও রাবেয়াকে একবার ফোন পর্যন্ত করেনি। আর করবেই বা কেন? সে যে টাকা বেতন পায়, তার প্রায় সব টাকাই মেয়েদের পিছে খরচ করতেই তার ফুরিয়ে যায়। বিদেশি সাদা চামরার মেয়ে, দেশি মেয়ে, এসব থাকতে কি রাবেয়াকে তার আর ভালো লাগে?
অত্যাচারের শিকার হওয়ার পর থেকে রাবেয়া ফেসবুক চালানও বাদ দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সে আবার তার ফেসবুক আইডি লগিন করে। লগিন করে সে দেখতে পায় রুবেল অনলাইনে আছে। রুবেলকে অনলাইনে দেখে সে তাকে ইনবক্স করে। কিন্তু রুবেল তার মেসেজের কোন উত্তর দেয়না। প্রায় ১৫ মিনিট পর রিপ্লে আসে। আর তখনই রাবেয়া তাকে বলে, তুমি কি আমাকে আর ভালোবাসোনা?
মেসেজ সিন হয়, কিন্তু রিপ্লে আসেনা। রাবেয়াও বুঝে গেছে সে তাকে আর ভালোবাসেনা। তাই সে তাকে আবার নক করে বলে, তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও।
মেসেজটি সিন না করেই রুবেল অফলাইনে চলে যায়।
রাবেয়া মেয়েটা প্রতিরাতেই রুবেলের কথা ভেবে বালিশে মুখ লুকিয়ে কান্না করে। এটা দেখে তার বাবা তাকে স্বান্ত্বনা দেন। তিনি বলেন, অতি শিঘ্রই নাকি তার সাথে রুবেলের ডিবোর্সের ব্যবস্থা করবে।
কয়েক মাস পর নাকি রুবেলের বাবা আর রুবেল দেশে আসবে। আর তখনই তারা একটা মিটিংয়ে বসে সব সম্পর্কের ইতি টানবে।
এখন শুধু অপেক্ষার পালা, কবে রুবেল এবং তার বাবা দেশে ফিরবে। আর কবে রাবেয়াকে মুক্তি দিবে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.