নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার গল্প

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪২

অব্যক্ত কথা
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
- ঐ কুত্তা কই ছিলি এতক্ষণ, এতোবার ফোন দেওয়া স্বত্তেও ফোন রিসিভ করিস নি কেন? আমাকে টেনশনে রাখতে তোর ভালো লাগে তাইনা?
.
গতরাতে একটুও ঘুম হয়নি নিরবের। কোন কারণ ছাড়ায় সে ভোর রাত অব্দি জেগেছিলো। সকালেও তার চোখে তেমন ঘুম আসেনি। তাই সে দুপুরে একটু বিছানায় শুয়ে ছিলো। শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে, সেটা সে খেয়ালই করেনি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হবে হবে ভাব। তখন ফোনের ভাইব্রেটের শব্দে তার ঘুম ভাঙে। ঘুম ঘুম চোখেই সে ফোনটা রিসিভ করে। আর তখনই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সে উপরের কথাগুলো শুনতে পায়। কন্ঠটা তার বেশ চেনা চেনা লাগে। কিন্তু সে ঘুমের ঘোরে থাকার কারণে মনে করতে পারেনা কন্ঠটা কার। সদ্য ঘুম থেকে উঠে সে এতোটাই অলস হয়ে গেছে যে, সে ফোনের স্কিনের দিকে একবার তাকিয়েও দেখছেনা, নম্বারটা কার!
- কে আপনি, আর এভাবে কথা বলছেন কেন?
- কি? কে আমি? শালা কাল কলেজে আয় তোরে তখন বোঝাবো আমি কে!
নিরব কিছু বলতে যাবে। কিন্তু তার আগেই ফোনের লাইনটা কেটে যায়। এবার সে ফোনের স্কিনের দিকে তাকায়। ওহ নো! এটাতো ফারিয়ার নাম্বার। কত সুন্দর করে "ফারু" নামে সেভ করা রয়েছে। আর সে কিনা সেটা খেয়াল না করেই কথা বলছিলো।
নিরব বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। সে ভাবছে, পাগলী মেয়েটা বোধ হয় অনেক রেগে আছে। তাকে একবার ফোন দিই।
বলতে বলতেই নিরব ফারিয়াকে ফোন দেয়। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে ফোন রিসিভ হয়না। বেশ কয়েকবার সে ফোন দেয়, তবু ফারিয়া ফোনটা ধরেনা।
নিরব যখন ঘুমিয়ে ছিলো তখন ফারিয়া তাকে যতবার ফোন দিয়েছিলো, নিরব এখন তাকে তার ডাবল বার ফোন করে। তবুও ফোন রিসিভ করেনা ফারিয়া। নিরব জানে মেয়েটা খুব রেগে আছে তার উপর। তার কোনমতেই উচিত হয়নি তার সাথে ওভাবে কথা বলা। কিন্তু তার কি দোষ! সে কি আর দেখে ওভাবে কথা বলেছে নাকি? সে তো ঘুম ঘুম চোখে 'কে ফোন করেছে' সেটা না দেখেই কথা বলেছে। এতে তো তার কোন দোষ নেই। কিন্তু এই কথাটিই ফারিয়াকে বোঝাবে কে? সে তো অভিমানে সেরা, রাগের দিক দিয়েও আবার নাম্বার ওয়ান।
রাত ১১টা বাজে। নিরব তার মেসের বেলকনিতে একটা চেয়ারে বসে আছে। ছাঁদে গিয়ে দাড়ানোর কোন উপায়ই নেই। সেদিন একবার ছাঁদে যাবে বলে ঠিক করে সে। কিন্তু হায়! পুরো চার তলা পেরিয়ে ছাঁদে উঠতে গিয়ে দেখে ছাঁদের গেটে একটা পুরোনো তালা ঝোলানো। শেষ তালাতে যারা থাকে তাদের কাছে অবশ্য চাবিটা আছে। চাইলেও দিতে পারে। কিন্তু তার এসব চাওয়া চাওয়ি পছন্দ না।
আর এই কারণেই সে আজও ছাঁদে যেতে পারেনি। বেলকনিতে দাঁড়িয়েই ল্যামপোস্টের হলুদ বাতিগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক তখনই তার তার প্যান্টের পকেটে থাকা ফোনটা কেঁপে ওঠে। হঠাৎ করেই ফোনটা কেঁপে ওঠাতে সে কিছুটা নড়ে ওঠে। পকেট থেকে ফোন বের করে প্রথমে সে স্কিনের দিকে তাকায়। এবার আর কোন ভুল করা যাবেনা। একবার না দেখে ফোন রিসিভ করে সে অনেক প্যারায় আছে। সেই প্যারাটা আর দ্বিতীয়বার পেতে চায়না। সে দেখে ফারিয়া ফোন করেছে। তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করতে গিয়ে ভুল করে ভুল স্কিনে সুইপ করতেই লাইনটা কেটে যায়।
ধুর! এটা কি হলো! সে তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করতে যায়, কিন্তু ফরিয়ায় তাকে আবার কল করে। সে ফোন রিসিভ করেই বলে
- সরিরে...
- কিসের সরি?
- তখনকার জন্য। রেগে ছিলি এতক্ষণ?
- আমি রাগ করলে তাতে তোর কি?
- আমার কি মানে? তুই আমার বন্ধু, আর তোর রাগের কারণটা যদি আমিই হই। তাহলে আমার 'কি' হবেনাতো কার হবে?
- সব ঢং।
- তখন ঘুমিয়ে ছিলাম, রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। আর ঘুমের ঘোরেই তোর সাথে কথা বলেছিলাম।
- হিহিহি।
- হাসিস কেন?
- মন চাইছে তাই। আচ্ছা শোন..
- কি?
- কালকে কলেজে আয় তারপর বলবো।
- কি বলবি, এখনই বল।
- না, এখন বললে সারপ্রাইজটা দেওয়া হবেনা।
- ওকে।
- আচ্ছা শোন আরেকটা কথা।
- বল।
- আগামী মাসের প্রথম তারিখে আমরা বেড়াতে যাবো, তুইও যাবি কিন্তু আমাদের সাথে।
- ওকে চেষ্টা করবো।
- না না, চেষ্টা করলে হবেনা। তোকে যেতেই হবে। আর তুই যাতে বেড়াতে যাওয়ার পেপারেশনটা খুব ভালো করে নিতে পারিস, তাই অনেক আগেই বলেই রাখলাম।
- আচ্ছা যাবো। কিন্তু....
- কিন্তু কি?
- কিছুনা।
- নিরব শোন...
- আবার কি?
- কিছুনা, হিহিহি।
- পাগলী।
- হু।
.
পরদিন একটু দ্রুতই কলেজে যায় নিরব। ফারিয়া কি এমন সারপ্রাইজ দিবে, সেই চিন্তাতে সে একটুও ঘুমাতে পারেনি। তবে আজ অবশ্য সে খুব দ্রুতই বিছানা ছেড়ে উঠেছে। বেশ কৌতুহল কাজ করছে তার মাঝে।
কলেজে গিয়ে দেখে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ আসেনি কলেজে। তাহলে কি আজ কলেজ বন্ধ? সে তার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মাত্র সাড়ে আটটা বাজে। আর এতো সকালে কেউ আসবেই বা কি করে। আর যারা এসেছে তারা নিজেদের কাজের জন্যই এসেছে। কাজটাও তাদের বেশ জমজমাট চলছে। ক্যামপাসের বড় আমগাছটার নিচে বসে প্রেম করাটাই তাদের বড় কাজ। এখনো তো কলেজে তেমন কেউ আসেনি, সেই জন্য তাদের প্রেমের কাজের দিকে কেউ তেমন নজরও দিচ্ছেনা। তবে নিরব মাঝে মাঝে তাদের দিকে তাকাচ্ছে, তবে সেটা লুকিয়ে লুকিয়ে। কাউকেই বুঝতে দিচ্ছেনা সে।
একটা ছেলে একটা মেয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আর মেয়েটি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আহা, সে কি দৃশ্য! দেখলেই প্রেম করতে মন চায়।
আবার আরেকটু দূরে একটা মেয়ে বাদাম ছিলে তার প্রেমিককে দিচ্ছে। যেখানে তার প্রেমিকেরই দেওয়ার কথা ছিলো।
এসব দেখে তার বেশ ভালোই লাগছে। নিরব আবার তার হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো। এখনো নয়টাই বাজেনি। আর ফারিয়া তো বলেছে সাড়ে নয়টাই সে চলে আসবে। সময়টা যেন কাঁটছেই না তার।
চাতকে যেমন একফোটা বৃষ্টির জন্য চেয়ে থাকে বারোটা মাস। ঠিক তেমনভাবে চেয়ে আছে সে। কখন ফারিয়া আসবে আর কখন তাকে তার সারপ্রাইজটা দেবে। একটু অদূরেই একটা ব্রেঞ্চের দিকে এগিয়ে যায় সে। ঠিক তার থেকে একটু দুরেই ঐসব প্রেম পিরিতি চলছে। নিরব সেদিকে কোন লক্ষ না করেই পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফারিয়াকে একটু দ্রুত কলেজে আসার জন্য ফোন দেয়। ফোন ঢোকার সাথে সাথেই রিসিভ হয়ে যায়। এটা দেখে সে খুব অবাক হয়। তাহলে কি ফারিয়া এতক্ষণ তার একটা ফোন কলের জন্যই অপেক্ষা করছিলো? না, না সেটা হতেই পারেই না। ফারিয়া তো তাকে কোন পাত্তাই দেয়না। তবুও কিভাবে যে এই ভাবওয়ালী মেয়েটা তার বন্ধু হলো, এটা সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেনা।
- কিরে হঠাৎ ফোন দিলি কেন? (ফারিয়া)
- ফোন দিলাম কেন, সেটা পরে বলি। আগে বল তুই এতো দ্রুত কেন ফোন রিসিভ করলি? নাকি তুই আমার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলি?
- ধুর.. তোর ফোনের অপেক্ষাতে থাকবো কেন?
- তাহলে এতো দ্রুত ফোন রিসিভ করলি! কেমনে কি ম্যান?
- আরে ফোনটা হাতেই ছিলো, তাই একটু দ্রুতই রিসিভ করেছি।
- আচ্ছা!
- তা, ফোন দিলি কেন?
- কখন আসবি কলেজে?
- বলেছি সাড়ে নয়টায়।
- কিন্তু আমি তো অলরেডি কলেজে এসে বসে আছি।
- কি?????
- হ্যাঁ।
- কিন্তু কেন?
- গতকাল রাতে যে তুই বললি আজকে নাকি আমাকে তুই কি একটা সারপ্রাইজ দিবি! সেজন্য।
- আরে কিসের সারপ্রাইজ?
- কিসের সারপ্রাইজ মানে?
- তুই আসলে একটা গাধা। আমি তো তেমন কোন সারপ্রাইজের কথা বলিনি।
- তাহলে?
- আগে কলেজে যাই, তারপর বলবো।
- তাহলে একটু দ্রুত আয় না প্লিজ। সেই সাড়ে আটটা থেকে বসে আছি কলেজ মাঠে।
- এত সকালে তোকে ঢুকতে দিলো কে? দারয়োয়ান মামা তো জীবনেও তোকে দিবেনা।
- কেন, আমাকে ঢুকতে দিবেনা কেন? দেখলাম কলেজের মধ্যে অলরেডি দুইজোড়া ঢুকে বসে আছে। তাই মামা আমাকেও ঢুকতে দিলো। তার জন্য অবশ্য কিছু দিতে হয়েছে মামাকে।
- তোকে এতো সকালে কে কলেজ যেতে বলেছে?
- তুই?
- আমি মানে?
- তাহলে কে হবে?
- হারামি আমি আগে কলেজে যাই, তারপর বুঝাবো আমি তোকে এতো সকালে কলেজে যেতে বলেছি, কি বলিনাই।
- হুম, তাহলে একটু তাড়াতাড়ি আসিস। সেই কখন থেকে বসে আছি। অবশ্য বসে থাকতে খারাপ লাগছেনা। ফ্রিতে নাটকের সুটিং দেখা হচ্ছে।
- নাটকের সুটিং মানে?
- সেটা তোর বুঝতে হবেনা।
- লুইচ্চা, হারামি, কুত্তা খ্রা আমি আইতাছি। তারপর বোঝাবো সুটিং দেখার মজা। সারাদিন শুধু মেয়েদের পিছে পিছে ঘুরা, না? তোরে আজ আমি কি যে করবো!
- আচ্ছা যাই করিস, দ্রুত এসে কর।
ফোনের লাইনটা কেটে গেলো। নিরব বুঝতে পারলো ফারিয়া বেশ রেগে গেছে। "আচ্ছা, সে রাগবে কেন? আমি তো রাগার কোন কথা বলিনি!" নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে নিরব।
"তাহলে কি ফারিয়াও আমাকে ভালোবাসে? মনে তো হচ্ছে সেও আমাকে ভালোবাসে। যতটা আমি বাসি, হয়তো তার থেকেও বেশি। আর যদি ভালো নাই বাসবে তাহলে কেন সে এমন আগুনের ফুলকির মতো জ্বলে উঠবে।" এসব অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা নিরবের মাথায় ঘুরতে থাকে।
.
নিরব অপেক্ষা করছে ফারিয়ার জন্য। কিন্তু বেশিক্ষণ তাকে অপেক্ষা করতে হয়নি। ফারিয়া হন্তদন্ত হয়ে চলে এলো কলেজে। অবশ্য ততক্ষণে কলেজে সবাই আসতে শুরু করেছে। ফারিয়া এসেই নিরবের পাশে ধপ করে বসে পড়লো। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সে বেশ দৌড়ের উপরে এসেছে।
- পানি খাবি? তাকে হাঁপাতে দেখে নিরব তার দিকে পানি এগিয়ে দেয়। সে ঢকঢক করে বোতলের সবটুকু পানি খেয়ে ফেলে। পানি খাওয়া শেষ হলে নিরব তাকে জিজ্ঞেস করে
- কিরে, এবার সারপ্রাইজটা দে।
- না দিবোনা।
- তাহলে আমার এতো সকালে কলেজে আসার মানে কি হলো?
ফারিয়া কোন উত্তর দেয়না। সে শুধু নিরবের দিকে চেয়ে থাকে।
কিছুক্ষণ একভাবে চেয়ে থাকার পর সে তার ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে নিরবের দিকে এগিয়ে দেয়। নিরব কৌতুহল বশত এক প্রকার টান দিয়েই খামটা তার হাত থেকে নিয়ে নেয়। তাড়াতাড়ি করে খামটা খুলে সে বেশ হতাশ হয়। সে রাগি চোখে ফারিয়ার দিকে খামটা এগিয়ে ধরে বলে "এটা কি?"
তখন ফারিয়া অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো। নিরবের কথায় সে চোখ ফিরিয়ে দেখে সে ভুল করে একটা খালি খাম তাকে দিয়েছে।
- সরি। (ফারিয়া)
- কিসের সরি?
- খাড়া দিচ্ছি।
- দে।
- না দিবোনা।
- কেন?
- তুই অন্যায় করে ফেলেছিস একটা।
- কি অন্যায় করেছি আমি?
- তুই এতো সকালে কলেজে আসলি কেন? জানিস তোর জন্য আমি কতো দ্রুত কলেজে এসেছি!
- হাহাহা।
- হাসিস কেন?
- তোর কথা শুনে। একেবারে বাচ্চা বাচ্চা ভাব ধরে কথা বলছিস যেন।
- এই নে।
- কি এটা?
- সারপ্রাইজ।
এবার ফারিয়া নিরবের দিকে আরেকটি খাম এগিয়ে দেয়।। নিরব এবার কোন প্রকার উত্তেজিত না হয়ে ধীর সুস্থে খুলতে থাকে খামটি। খুলে দেখে সেখানে গান রেকর্ডিং সেন্টার থেকে ফারিয়াকে গান গাওয়ার জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে। তারই একটা পত্র খামের মধ্যে। ফারিয়ার কন্ঠটা অনেক মিষ্টি। যেদিন নিরব ফারিয়ার সাথে প্রথম কথা বলে সেদিনই সে তার কন্ঠের প্রেমে পড়ে যায়। ধীরে ধীরে তার সাথে ফারিয়ার বন্ধুত্ব হয়। অবশ্য বন্ধুত্ব করার জন্য নিরবকে অনেকদিন ঘুরতে হয়েছিলো। প্রায় মাস খানেক পর ফারিয়া তার বন্ধুত্বের আবেদনটা গ্রহণ করে।
এইতো কিছুদিন আগে তাদের কলেজে নবীনবরণ অনুষ্ঠান হয়। নতুন নতুন ছাত্র ছাত্রীদের সাদরে বরণ করে নেওয়া হয়। ফারিয়া সেদিন মঞ্চে দাড়িয়ে কয়েকটা গান গায়। সেখানে গান রেকর্ডিং সেন্টারের বেশ কিছুলোক উপস্থিত ছিলেন। সাথে অনেক শিল্পীরাও ছিলেন। সেদিন ফারিয়ার কন্ঠে গান শুনে তারা মুগ্ধ হয়ে যায়। তারা তাকে তাদের রেকর্ডিং সেন্টারে আমন্ত্রণ জানায়।
আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে সে সেখানে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। আর সেটার সংবাদই ছিলো নিরবের জন্য সারপ্রাইজ। নিরব তাকে অভিনন্দন জানায়। আবার নিরবের মনের মধ্যে ভয়ও জাগে। যদি ফারিয়া সবকিছু পেয়ে তাকে কখনো ভুলে যায়! তাহলে কি হবে তার? সে যে ফারিয়াকে ভালোবাসে। এটা ভাবতেই নিরবের মুখটা বিষন্নতায় ভরে যায়। ফারিয়া বিষয়টা লক্ষ করে। সে নিরবকে বলে
- কিরে তুই খুশি হসনি?
নিরব ঠোঁটের কোণে একটু হাসির রেখা টেনে এনে বলে
- কি বলিস? খুশি হবোনা কেন?
- তাহলে এমন মনমরা দেখাচ্ছে কেন তোকে?
- ফারিয়া শোন...
- কি?
- কখনো ভুলে যাবিনা তো আমায়?
- কেন এমনটা মনে হলো তোর?
- না, এমনিতেই।
- তোকে ভুলে গেলে তো আমি নিজেকেই ভুলে যাবো।
ফারিয়ার এই কথাটা শুনে নিরব একট স্বস্তি পায়। সে মনে মনে ভাবে ফারিয়াকে কি সে তার মনের মাঝে জমানো ভালোবাসার কথা জানাবে? আবার ভাবে, সে যদি না করে দেয় আর তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আর না রাখে তাহলে তখন তো সে সব হারাবে। হারাবে ফারিয়াকে, হারাবে একটি সুন্দর বন্ধুকে, হারাবে তার মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলোকে, হারাবে একটু রাগ অভিমানকে।
নাহ! তাকে কিছুই বলা যাবেনা। নিরব চায়না তার ভালোবাসার কথা জানানোর পর ফারিয়া তাকে খারাপ চোখে দেখুক, তার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করুক। সে নিজের ভালোবাসাটাকে নিজের মধ্যেই চেপে রাখে। অনেক সময় অনেক কিছুই বলা সম্ভব নয়। সবাই সবসময় সবধরণের কথা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকেনা।
নিরবের ভাবনার মাঝে ফারিয়া হঠাৎ বলে ওঠে
- কিরে কি ভাবছিস?
- কিছুনা।
- তাহলে চুপ করে আছিস কেন?
- কই, কই চুপ করে আছি?
- এইযে, কোন কথা বলছিস না।
- এমনিতেই।
- নিরব একটা ঘটনা শুনবি?
- কি?
- মজার একটা ঘটনা।
- হুম বল।
- আমার বান্ধবী প্রাপ্তিকে তো তুই চিনিস, তাইনা?
- হুম চিনি। কেন, তার কি হয়েছে?
- তার সাথে একটা ছেলের বন্ধুত্ব ছিলো। যাস্ট বন্ধুত্ব, অন্যকিছু না। কিন্তু ছেলেটি তাকে বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু ভাবতো। তাদের সম্পর্কটা প্রায় ছয়মাসের হবে। একদিন ছেলেটি প্রাপ্তিকে প্রপোজ করে বসে। প্রাপ্তি কখনো ভাবতেও পারেনি, ছেলেটি তাকে প্রপোজ করবে।
ফারিয়ার কথা শুনে নিরব এবার নড়েচড়ে বসে বললো
- তারপর?
- তারপর আর কি! প্রাপ্তি তাকে বেশ কড়াভাবে কথা বলে, আর তাদের মাঝেকার বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়।
- হুম।
- হুম কি?
- কিছুনা।
- দেখেছিস ছেলেটা কতবড় লুচ্চা। যদি সে লুচ্চা নাই-ই হবে, তাহলে কি সে কখনো তার বন্ধুকে প্রপোজ করে?
- হুম।
- ছেলেটা পরে প্রাপ্তির থেকে ক্ষমা চেয়েছিলো। বলেছিলো, সে খুবই দুঃখিত। প্রাপ্তি যেন তার সাথে বন্ধুত্বটা নষ্ট না করে।
- হুম।
- কিসের হুম, হ্যাঁ? সেই কখন থেকে দেখছি তুই শুধু হুম হুম করছিস। ঠিক করে একটা কথাও বলছিস না।
- হুম, তারপর কি হলো? তোর বান্ধবী কি পরে তাকে আবার বন্ধু হিসেবে মেনে নিয়েছে?
- না, আর মেনে নিবেই বা কেন? অমন একটা ক্যারেক্টার লুজ ছেলেকে বন্ধু বানানোই তো তার বড় ভুল হয়েছিলো।
- আচ্ছা!
- নিরব আরেকটা সুখবর আছে।
- কি?
ফারিয়া এবার খুব উৎফুল্লতার সাথে বলে
- আগামীকাল থেকে আমার গান রেকর্ড করা হবে।
- বাহ, ভালো তো। শুভকামনা।
নিরবের কেন জানি মনে হচ্ছে ফারিয়া অতি দ্রুতই তাকে ভুলতে চলেছে। কারণ, তাকে কেউ কোন একদিন বলেছিলো "দেখবেন যখন আপনার কাছের কেউ বড় কোন জায়গায় চলে যাবে, তখন সে আর আপনাকে চিনবেই না। আর চিনলেও তেমনভাবে গুরুত্ব সহকারে কথা বলবেনা।
- ফারিয়া শোন।
- বল।
- তুই সত্যি করে বলতো, তুই যখন অনেক বড় হবি। তখন আমাকে ভুলে যাবিনা তো?
- ধুর, কি বলিস এসব? তোকে ভুলতে যাবো কেন?
- আচ্ছা আমিও যদি ঐ ছেলেটির মতো কিছু করে বসি, তাহলে কি তুইও আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করবি?
- কি বলতে চাইছিস তুই?
- আমি যে তোকে ভালোবাসি।
- দেখ মজা করবিনা।
- আমি একদম মজ করছিনা।
- শোন, আমি তোকে আমার সবচেয়ে ভালো একটা বন্ধু ভাবি। তুই এমন কিছু করিস না যার জন্য আমিও তোর সাথে প্রাপ্তির মতো ব্যবহার করতে বাধ্য হই।
- ফারিয়া বিশ্বাস কর, যেদিন তোকে প্রথম দেখেছিলাম, যেদিন তোর সাথে প্রথম কথা বলেছিলাম, সেদিনই আমি তোকে পছন্দ করে ফেলি।
- শোন নিরব, আমি তোকে যাস্ট বন্ধু ভাবি। আর তুই কি করে আমাকে প্রপোজ করতে পারিস?
- তোকে যে ভালোবেসে ফেলেছি খুব। ভাবলাম তুই যদি কখনো বড় স্থানে চলে যাস আর আমাকে যদি তখন ভুলে যাস, তাই এখনই তোকে আমার মনের কথা জানিয়ে রাখলাম। আশাকরি ফিরিয়ে দিবিনা।
- তুই কিভাবে ভাবতে পারলি আমি তোর প্রেম নিবেদন গ্রহণ করবো? তোকে তো এখন আমার বন্ধু ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে। আমি কখনো তোর থেকে এটা আশা করিনি। ভালো থাকিস, আসি। আর শোন, তুই কখনো আর আমাকে ফোন দিবিনা।
ফারিয়া হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাচ্ছে। নিরব নির্বাক চোখে তার চলে যাওয়ার পথপানে চেয়ে আছে। সে যে ফারিয়াকে খুব ভালোবাসে। তাকে ছাড়া সে চলবে কিভাবে? তার মনে একটাই ভয় ছিলো। আর সেই ভয়টাই আজ তার উপর দিয়ে চলে গেলো। সে চাইছিলোনা এতো দ্রুতই ফারিয়াকে প্রপোজ করতে। কিন্তু প্রপোজ না করেও সে থাকতে পারছিলোনা।
এখন সে সব হারালো। ফারিয়াকেও হারালো, তার সাথের বন্ধুত্বটাও হারালো।
ফারিয়ার চলে যাওয়ার পথে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে। চোখের কোণে বিন্দু পরিমাণ জলের উৎস লক্ষ করা যায়। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। ফারিয়া কি তাকে সত্যিই ভালোবাসেনা? নাকি সে মজা করে তাকে কথাগুলো বলে চলে গেলো! পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব তাদের। এতোদিন ধরে সে মনে মনেই ফারিয়াকে ভালোবেসেছে। কিন্তু কখনো বলা হয়ে ওঠেনি তাকে "ভালোবাসি" কথাটা।
তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছেনা ফারিয়া তার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে চলে গেলো। পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব কি করে এক নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে? নাহ, এটা কখনোই সম্ভব না। ফারিয়া তার থেকে দূরে চলে যেতে পারেনা। আর এই কয়েক বছরে কি ফারিয়ার মনে একটিবারও তার জন্য বন্ধুত্ব ছাড়া অন্যকিছু উদয় হয়নি!
.
নিরব তার শার্টের হাতা দিয়ে চোখ দুটো মুছে বিষন্ন মনে বাসার দিকে রওয়ানা দেয়। দিনের আলো পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা স্বত্তেও সে কোন কিছু দেখতে পায়না। উদাসীন হয়ে সে রাস্তা পার হচ্ছে। দুর থেকে ছুটে আসা প্রাইভেট কারটি বারবার হর্ণ বাজাচ্ছে, কিন্তু নিরবের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।প্রাইভেট কারটির গতি কমতে কমতে নিরবের সাথে ধাক্কা লাগে। আর তখনই নিরব বেশ কয়েক হাত দুরে ছিটকে পড়ে।
পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার বলে, বেশ কয়েকটাদিন লেগে যাবে তার সুস্থ হতে।
নিরবকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি। ডাক্তার বলেছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার জ্ঞান ফিরে আসবে। তার এ্যাক্সিডেন্টের খবর শুনে তার মা বাবা হাসপাতালে ছুটে যায়। নিরবকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে দেখে তার মা জননী কেঁদে ফেলেন। সকালেই তিনি নিরবকে নাস্তা তৈরি করে দিলেন। নিরবের নাকি কলেজে কি কাজ ছিলো। তাই তাড়াতাড়ি যেতে হবে বলে সে বারবার তার মাকে অতি দ্রুত নাস্তা দিতে বলছিলো। আর এখন তাকে হাসপাতালে দেখে তার মায়ের বুকে হাহাকার শুরু হয়ে যায়।
.
.
রাতে ফারিয়া নিরবকে ফোন দেয়। কিন্তু নিরবের নাম্বার বন্ধ দেখায়। ফারিয়াও যে নিরবকে ভালোবাসে। তখন সে মজা করে নিরবকে ওভাবে কথাগুলো বলেছিলো। কিন্তু নিরব সেই কথাগুলোকে সত্যি ভেবে নিয়েছিলো। আর ভাববেই বা না কেন? তখন ফারিয়ার কথার মাঝে মজার একটু রেশ পর্যন্তও ছিলোনা। তার কথার মধ্যে সিরিয়াস ভাবটা স্পষ্ট ছিলো তখন।
সে বেশ কয়েকবার ফোন দেয় নিরবকে। তবুও কোন লাভ হয়না। এ্যাক্সিডেন্টের সময় নিরবের ফোনটা বন্ধ হয়ে যায়। পরে আর ফোনটা অন করা হয়নি। ফারিয়া ভাবে, ছেলেটা বোধ হয় অনেক কষ্ট পেয়েছে।
পরদিন ফারিয়া তার গান রেকর্ডের জন্য রেকর্ডিং সেন্টারে যায়। খুব ভালোভাবেই তার রেকর্ডিংটা সম্পূর্ণ হয়। কিছুদিন পরেই তার গান বের হবে। দেশের সবাই চিনবে তাকে। এটা ভাবতেই তার মনে একটা ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। বাসায় এসে সে নিরবকে আবার ফোন দেয়। কিন্তু গতদিনের মতো আজও তার ফোন বন্ধ দেখায়। ফারিয়ার একটু চিন্তা হয়, পাগল ছেলেটা আবার কিছু করে বসেনি তো! না না, সে তো ওরকম ছেলেই না। সে অনেক কঠিন একটা ছেলে। তবে তার ফোন বন্ধ কেন? সে তো কখনো তার বন্ধ রাখেনা। হাজার রাগ করুক, অভিমান করুক, ফারিয়া হাজারবার বলুক, তুই আর আমাকে কখনো ফোন দিবিনা। তবুও তো ছেলেটি তাকে ফোন দিতো। ফোন দিয়ে তার সারাদিনের সব না বলা, জমে থাকা কথাগুলো বলতো। কিন্তু আজ কি হলো তার? ফারিয়ার একটু চিন্তা হয়।
সে সিদ্ধান্ত নেয় তার গান বেরোলেই প্রথম খবরটার সে নিরবকে জানাবে। ট্টিট স্বরুপ সে তার ভালোবাসার প্রপোজালটা একচেপ করবে।
.
এর মাঝে টানা ছয়দিন চলে গেছে। নিরব এখন মোটামোটি সুস্থ। তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। সে এখন তার বাসাতেই বসে আছে। সে তার রুমের টিভিটা চালু করেছে মাত্র। আর তখনই সে একটা পরিচিত কন্ঠ শুনতে পায়। সে থমকে যায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। তাহলে কি টিভি থেকে আসে সেই পারিচিত কন্ঠটা? সে টিভির দিকে তাকাতেই দেখে ফারিয়ার রেকর্ডিং টিভিতে সম্প্রচার করা হচ্ছে। অনেক সুন্দর করে গেয়েছে সে। নিরব তার ফোনটা হাতে নিয়ে ফারিয়াকে কল দিতে যাবে, কিন্তু দেখে তার ফোনে ফারিয়ার নাম্বার নেই। "নাম্বার গেলো কোথায়" ভাবতেই তার মনে পড়ে সেদিনের কথা। ফারিয়ার সাথে তো এখন তার আর কোন সম্পর্ক নেই। ফারিয়া যখন তাকে বলেছিলো, তুই আর কখনো আমাকে ফোন দিবিনা। তখন সে কলেজ থেকে বের হয়েই তার নাম্বার, মেসেজ সব ডিলিট করে দেয়।
কিন্তু আজ ফারিয়ার সাথে তার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। একদিকে তো নাম্বার নেই অপরদিকে ফারিয়াও নিষেধ করেছে ফোন দিতে। সে নির্বাক নিরালশ চোখে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎই তার ফোনটা কেঁপে ওঠে। সে ফোনটা রিসিভ করে 'হ্যালো' বলে। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে কোন উত্তর পাওয়া যায়না। নিরব ফোন রেখে দিয়ে আবার টিভির দিকে মনযোগ দেয়। সেখানে যে সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে দেখতে পাচ্ছে। শুনতে পাচ্ছে তার সেই মিষ্টি কন্ঠটা। কিছুক্ষণ যেতেই আবার তার ফোনটা কেঁপে ওঠে। সে রিসিভ এবার চুপ করে থাকে। কিন্তু প্রথমবারের মতো এবারও কোন কথা শোনা যায়না। নিরব "হ্যালো হ্যালো" বলে কিছুক্ষণ। তবুও কোন উত্তর পাওয়া যায়না। সে ফোনটা কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখে। তার কিছুক্ষণ পরেই কে যেন তার রুমের দরজাতে টোকা দেয়। সে বেশ বিরক্ত হয়েই রুমের দিকেে যায়। দরজাটা খুলে দিতেই তার চোখ দুটো আটকে যায় দরজায় দাড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে। সে যে আর কেউ নয়, সে যে ফারিয়া। কিন্তু ফারিয়া এখানে কেন? সে কিছু ভুল দেখছেনা তো। চোখ দুটো ডলে নিয়ে সে আবার দরজার দিকে তাকায়। নাহ, সে তো ভুল কিছু দেখছেনা। কিন্তু ফারিয়া এখানে আসবে কেন? তার তো এখানে আসার কোন কথাই না।
- কিরে, কেমন আছিস? (ফারিয়া)
নিরব এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা যে, ফারিয়া তার সামনে দাঁড়িয়ে। সে সিওর হতে ফারিয়াকে ছুয়ে দেখে। আর তাকে ছুতেই সে চমকে যায়। নাহ, এটাতো জলজ্যান্ত একটা মানুষই তার সামনে দাড়িয়ে।
ফারিয়া এবার কোন কথা না বলে নিরবকে দরজা থেকে সরিয়ে ভিতরে ঢোকে। ঢুকেই দেখে টিভিতে তার গান চলছে। বিছানায় বসতে গিয়ে সে দেখতে পায় বিছানায় সিগারেট ম্যাচ, আরো অনেক কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সে বেশ অবাক হয়ে যায়। নিরব এসব খাওয়া ধরলো কবে থেকে? নিরব এখনো দরজাতে দাড়িয়ে আছে। ফারিয়া উঠে গিয়ে তাকে বলে, এসব কি নিরব? তুই তো এমন ছিলিনা! তুই তো কখনো এসব ছাইপাস হাত দিয়েও ধরতিনা। তাহলে আজ তোর রুমে এসব কি করে এলো?
নিরব তার এমন প্রশ্নে কোন জবাব দেয়না। সে চুপ করে থাকে।
- তুই আমাকে সত্যিই ভালোবাসিস? (ফারিয়া)
এবারও নিরব চুপচাপ থাকে। কারণ সে এখনো ঘোরের মধ্যেই আছে। সে কিছুতেই বিস্বাস করতে পারছেনা, ফারিয়া তার সামনে দাড়িয়ে!
- কি হলো, কথা বলছিস না কেন? তুই কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসিস।
কিন্তু নিরব এবারও কোন কথা বলেনা। সে নিরব চোখে ফারিয়ার দিকে অপলক চেয়ে থাকে। ফারিয়া এবার তাকে ধাক্কা দিয়ে বলে
- এতোদিন তোর ফোন বন্ধ করে রেখেছিলি কেন?
যদিও ফারিয়া আন্টির থেকে অর্থ্যাৎ নিরবের মায়ের থেকে সবকিছু শুনেছে।
ধাক্কা খেয়ে নিরবের ঘোর কাটে। সে এবার বুঝতে পারে যে, সত্যি সত্যিই ফারিয়া তার সামনে দাড়িয়ে।
সে উত্তর দেয়
- এমনিতেই।
- এমনিতেই মানে কি হ্যাঁ? আর এই কয়টাদিন কোন ফোন দিস নি কেন?
- তুই তো নিষেধ করেছিলি।
- আমি নিষেধ করলেই তোর শুনতে হবে নাকি?
- হুম।
- কিসের হুম, হ্যাঁ? এখন কেমন আছিস?
- ভালো।
- এসব খাওয়া ধরলি কবে থেকে?
নিরব কোন উত্ত দেয়না। সে চুপ করে থাকে।
- তুই কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসিস?
- না তো!
- আমি কিন্তু সিরিয়াস।
- হুম, আমিও।
- তাহলে সেদিন বললি যে, ভালোবাসিস আমাকে?
- এমনিই বলেছিলাম।
- কিন্তু আমি যে তোকে ভালোবাসি।
- হাহাহা।
- হাসিস কেন?
- তুই তো এখন সেলিব্রেটি, তোর সাথে আমার যায়না।
- শোন আমার রাগ বাড়াবিনা কিন্তু? কিসের সেলিব্রেটি হু?
- কিছুরই না।
- আচ্ছা ওসব কথা রাখ, তুই এবার সিরিয়াসলি বল আমাকে ভালোবাসিস কিনা?
- নাহ, একদম না।
- তাহলে বসে বসে টিভিতে আমার গান শুনছিলি কেন?
এবার নিরব কোন কথা বলতে পারেনা।
- তোকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাইনা?
নিরব এবারও কিছু বলেনা।
- তুই কি করে ভাবতে পারলি, আমাদের পাঁচ বছরের সম্পর্ক ঠুনকো একটা কথাতে ভেঙে যাবে? আমি সেদিন তোকে এমনিতেই ওসব কথা বলেছি। আমি ভেবেছিলাম, আমি তোকে যাই-ই বলিনা কেন তবুও তুই আমাকে জোর করবি তোকে ভালোবাসতে। কিন্তু তুই কি করলি? তুই আমার কথাকে চুপচাপ মেনে নিলি।
নিরব কোন কথা বলছেনা, সে চুপচাপ ফারিয়ার কথাগুলো শুনছে। একেবারে বাচ্চাদের মতো কথা বলে সে। শুনতে খারাপ লাগছেনা তার।
- নিরব শোন্। (ফারিয়া)
- কি?
- আমি তোর হতে চাই।
- কিন্তু আমি তো চাইনা।
- আমি কিন্তু এখন মজা করছিনা। যা বলছি সব সত্য বলছি।
- আমি কি মিথ্যা বলছি নাকি?
- তুই সত্যিই আমাকে ভালোবাসিস না?
- না।
ফারিয়ার চোখ দুটো জলে ভরে ওঠে। কান্না কান্না একটা ভাব চলে আসে তার মধ্যে। আর কিছুক্ষণ নিরবের সাথে কথা বললেই সে কেঁদে ফেলবে।
নিরব মনে মনে বলছে, সোনা দেখো কাউকে কষ্ট দিলে তার কেমনটা লাগে। আমিও যে তোকে ভালোবাসি।
ফারিয়া আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা সেখানে। সে চেয়েছিলো, যেদিন তার গান বের হবে সেদিন সে নিরবকে তার ভালোবাসার কথা জানাবে। আর সেজন্যই সে ঐদিন নিরবকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো।
সে নিরবের মুখে বারবার "না" কথাটি শুনে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে তার চোখ থেকে। সে আর কিছু না বলে মুখ চেপে ধরে নিরবের রুম থেকে বেরিয়ে আসতে যাবে। ঠিক তখনই নিরব পেছন থেকে তার হাতটা ধরে ফেলে। ফারিয়া থমকে দাড়িয়ে যায়। সে নিরবের দিকে ঘুরতে নিরব তাকে একটানে তার বুকে জড়িয়ে নেয়।
- পাগলি আমিও যে তোকে ভালোবাসি। (নিরব)
- তাহলে কষ্ট দিলি কেন?
- তুই দিয়েছিলি কেন?
- এমনিই।
- তাহলে আমিও এমনিই।
- এভাবেই জড়িয়ে রাখবি তো সারাটিজীবন?
- কি মনে হয়?
- মনে হয় রাখবিনা।
- হ্যাঁ ঠিক তাই।
- কি?
- না, না রাখবো। সারাটিজীবন কেন, সবসময়ই তোকে জড়িয়ে রাখবো। কখনোই ছাড়বোনা তোকে।
- থাক থাক হয়েছে, আর ঢং দেখাতে হবেনা। সবসময় জড়িয়ে রাখলে বাসার কাজ করবে কে? বাবা মায়ের খেয়াল রাখবে কে?
- হুম, সেটাইতো! আচ্ছা তাহলে তোকে কখনো আর জড়িয়েই ধরবোনা।
- কেন কেন?
- কেন আবার, তুই সবসময় কাজে ব্যস্ত থাকবি। আমি তোকে জড়িয়ে ধরে থাকলে তো তোর সমস্যা হবে।
- হবেনা। তুই সবসময় আমার সাথে থাকবি।
- হুম চেষ্টা করবো।
- চেষ্টা করবো মানে?
- ওকে ওকে আমি সবসময় তোর সাথেই থাকবো।
- নিরব শোন্।
- কি বল।
- এখন থেকে আর "তুই" করে নয়। এখন থেকে তুমি করে বলবি।
- আমি পারবোনা।
- কেন?
- হবেনা আমার দ্বারা।
- কেন হবেনা।
- তুই থেকে তুমিতে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আর 'তুই' করে বললে সমস্যা কোথায়? সবাই তো 'তুমি' করেই বলে। তুমি ডাকটা সবার মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে পুরোনো হয়ে গেছে। আমি চাই ভিন্ন কিছু।
- ভিন্ন কিছু বলতে?
- ভিন্ন কিছু বলতে, তুই আমাকে "আপনি" করে ডাকবি আর আমি তোকে "তুই" করে ডাকবো।
- পাঁজি কোথাকার।
- ফারিয়া...
- কি?
- তোর নরম ঠোঁটের একটু ছোয়া পেতে চাই।
- যা দুষ্টু, পারবোনা আমি দিতে।
- প্লিজ, প্লিজ...
- বললাম তো পারবোনা।
এবার নিরব ফারিয়াকে ছেড়ে দিয়ে বললো
- যা, তোর তাহলে আমাকে জড়িয়ে ধরেও থাকতে হবেনা।
- কি হলো এটা?
- কোনটা কি হলো?
- তুই আমাকে ছেড়ে দিলি কেন?
- মন চাইছে তাই।
- তোর মনতো কত কিছুই না চায়!
- তাহলে দিস না কেন?
- লজ্জা করে যে।
- তাহলে থাক তুই তোর লজ্জা নিয়ে। দিতে হবেনা আর।
- রাগ করেছিস?
- রাগ করবো কেন?
ফারিয়া এবার নিরবকে জড়িয়ে ধরে বললো
- নে, আজ আমি শুধু তোর। তোর যা মনে চাই কর।
- কিছুই করবোনা, শুধু তোর গোলাপি নরম ঠোঁটের একটু ছোয়া নিবো।
ফারিয়া তার চোখ দুটো বন্ধ করে আছে। আর নিরব তার ঠোঁটে হালকা করে ভালোবাসার পরশ একে দিচ্ছে।
নিরব আজ তার সকল অব্যক্ত কথাগুলো ফারিয়াকে বলতে পেরে নিজেকে যুদ্ধে জয়ী হওয়া একজন সৈনিক মনে করছে। আর অপরদিকে ফারিয়াও নিরবকে কাছে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছে।
.
.
উৎস্বর্গ: Fariha Islam Mow (দুষ্টু বাবুনি)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.