নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুপবতী

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৭

রুপবতী
পর্ব-১
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
ভাইয়া ভাইয়া তুই এখনো ঘুমিয়ে আছিস? তোকে না বললাম, আজকে একটু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে। অন্যদিন তো এর আগে উঠিস, আর গতরাতে বলেছিলাম আজ একটু তাড়াতাড়ি উঠার কথা। আর আজকেই তুই বেশিক্ষণ ঘুমাচ্ছিস? ঐ, ঐ ভাইয়া কথা বলিস না কেন? ওঠ, ওঠ বলছি। ধুর....
.
গতকাল রাতে মমো আমাকে বলেছিলো, আজকে যেন একটু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠি। আর ঠিক সেই কারণেই আমি আজ অনেক বেলা অব্দি ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছি। বোনটাকে জ্বালাতে খুব ভালো লাগে আমার। সেই সকাল থেকে আমাকে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তুু আমি তার ডাকে কোন প্রকার সাড়া না দিয়ে ঘাপটি মেরে শুয়ে আছি। এর মাঝে সে অনেকবার ডেকে গেছে। তবুও আমি উঠিনি।
আর এবার প্রায় এক ঘন্টা পর সে ডাকতে এলো আমায়। এসে দেখে আমি এখনো শুয়ে আছি। আর তার ডাকে কোন সাড়া দিচ্ছিনা। এটা দেখে বোনটা আমার অভিমান করে চলে গেলো। অবশ্য এইসব দুই মিনিটের অভিমান পাঁচ মিনিটও থাকেনা। যখন তার পছন্দের আইসক্রিম এনে বলবো, আপু এই দেখ তোর জন্য কি নিয়ে এসেছি। তখনই তার সব রাগ অভিমান নিমিষেই গলে পানি হয়ে যাবে।
রাতে বোনটা আমায় বলেছিলো, আগামী সপ্তাহে আমার মিমের বিয়ে। মিম আমার খালাতো বোন। আমার থেকে দুই বছরের ছোট। সেদিন আমি মিমকে দেখলাম পুতুল নিয়ে খেলতে। আর আজ কিনা সে অনেক বড় হয়ে গেছে, কয়েকদিন বাদেই নাকি তার রিয়ে! যদিও বছর দুয়েক হলো আমি খালাদের ওখানে যাইনা। খালা, মিম আমাকে প্রায় প্রতিদিনই ফোন দিয়ে যেতে বলে। তবুও আমি যাইনা।
তো, আগামী সপ্তাহে মিমের বিয়ে। মিম মমোকে বলেছে "মমো যেন আমাকে সঙ্গে নিয়ে এক সপ্তাহ আগেই তাদের বাড়িতে যায়।"
আর সেই কারণেই মমো গতরাতে আমাকে বলেছিলো, ভাইয়া তুই আগামীকাল একটু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠিস।
এসব কিছুই মনে মনে ভাবছি আমি। হঠাৎ করেই কে যেন আমার উপর পানি ঢেলে দিলো। আমি হুড়মুড় করে বিছানা ছেড়ে উঠে দেখি, মমো দুই হাত কোমরে বেঁধে পানির বালতিটা পাশে রেখে আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওর অমনভাবে তাকানো দেখে আমি আর ওর উপর রাগ দেখাতে পারলাম না। আমি ভেবেছিলাম, বোনটা বোধ হয় আমায় ডাকতে ডাকতে রেগে অভিমান করে চলে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু একি! এটাতো কোন অভিমানের ফল না। এটাতো একটা জ্বলন্ত রাগের ফুলকি।
আমি তবুও তার উপর একটু রাগ দেখিয়ে বললাম, ঐ তুই আমার গায়ের উপর পানি দিলি ক্যান?
সে আমার কথাটাই ভেংচি কেটে বললো, ঐ তুই আমার গায়ে উপর পানি মারলি ক্যান!
আমি দেখলাম সে ভীষণ রেগে আছে। কারণ সে রেগে গেলে একজনের বলা কথাটাই মুখ ভেংচিয়ে রিপিট করে বলে।
তাই আমি এবার আদরের সুরে তাকে ডেকে বললাম, এইযে আমার লক্ষি পক্ষি কাউয়া বোন, তুমি আমায় পানি দিলা ক্যান? উরিম্মা একি! বোনটা দেখি আরো বেশি ক্ষেপে গেলো। আমি এতো সুন্দর করে ডাকলাম, আর সে ক্ষেপে গেলো। আমি তাকে কিছু বলতে যাবো, ঠিক তখনই বালতির মধ্যে থাকা অবশিষ্ট পানিটুকুও আমায় উপর ঢেলে দিলো। আর রাগি একটা লুক নিয়ে কোমরে ওড়নাটা পেচিয়ে বললো, কি বললি তুই? আবার বল! আমি কাউয়া, না? খাড়া তোর একদিন কি আমার যতোদিন লাগে। তাই বলেই সে বালতিটা হাতে নিয়ে সোজা বাথরুমের দিকে ছুটলো।
আমি উপায়ান্তর না দেখে পেছন থেকে ডাক দিয়ে বললাম, সরি আমার লক্ষি আপুটা। আমি না হয় রাগ করে বলেছি, তাই বলে কি আমার বোনটাও রাগ করবে নাকি? আর আমার বোন হলো পুরো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বোন এবং অনেক সুন্দরী একটা মেয়ে। সে কি কখনো কাউয়া হতে পারে?
দেখলাম বোনটা আমার কথাটা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো। আমি ভাবলাম, পামটা বোধ হয় কাজে দিয়েছে। আর হ্যাঁ এটা পাম হলেও সত্যি যে আমার বোনটা সবার থেকে সুন্দরী।
সে পেছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই আমাকে যাই বলিস না কেন আমার রাগকে থামাতে পারবিনা। আজ তোর পিছে লাগছি তো লাগছিই। আজ আর তোর কোন রেহাই নেই।
আমি তার এমন কথা শুনে বুদ্ধি বের করতে থাকলাম, কি করা যায় এখন! সে পানি আনতে আবার বথরুমের দিকে পা বাড়াতেই বললাম, আমার আপুটার জন্য আমি লাভেলোর সবচেয়ে দামি আইসক্রিমটা এনেছিলাম। আপু যখন রাগ করে আছে, তখন আইসক্রিমটা আমারই খেতে হবে।
এবার বুদ্ধিটা কাজে না দিয়ে যাবে কোথায়? সে বালতিটা ফেলে দিয়ে, কোমর থেকে ওড়না খুলে, ভদ্র মেয়ের মতো এসে আদুরে কন্ঠে বললো, কে বলেছে আমি রাগ করেছি? আমি তো এতক্ষণ মজা করছিলাম। আমি দেখছিলাম, আমার ভাইটা আমার রাগ ভাঙাতে পারে কিনা!
আমি মনে মনে বললাম, কি মজারে বাবা! দুই দুইবার করে পানি ঢেলে দেওয়াটা নাকি মজা।
সে বললো, ভাইয়া কই আমার আইসক্রিম? দাও আমাকে। আমিও এবার মজা করে বললাম, কে বলেছে তোকে আমি আইসক্রিম এনেছি? আরে আমি তো মজা করছিলাম। দেখছিলাম আমার বোনটা মজা বোঝে কিনা।
এই কথা বলতে দেরি শুধু, কিন্তু তার রাগ উঠতে দেরি নেই। সেকেন্ডে রাগ উঠে গেলো তার। হন হন করে ছুটলো বাথরুমের দিকে।
এদিকে আমি তো মনে মনে হাসছি। কি মেয়েরে বাবা! এতো বড় হয়ে গেছে, তবুও বাচ্চা বাচ্চা স্বভাবট এখনো যায়নি।
মিনিট দুয়েক যেতে না যেতেই সে বালতি ভর্তি পানি নিয়ে হাজির। সাথে আবার একটা ছোট মগ। মগ আনার কারণ হয়তোবা, সেটা দিয়ে পানি দেবে। সে বালতি থেকে পানি উঠাতেই বললাম, দে দে আমাকে গোসল করিয়ে দে। তবে তার আগে এই আইসক্রিম দুটো খেতে দেওয়ার জন্য একটু সময় দে। আমি তার জন্য আনা আইসক্রিম দুটো হাতে করে তার সামনে এদিকে ওদিকে নাড়াচ্ছি। দেখলাম সে লোভী চোখে আমার দিকে চেয়ে আছে।
আইসক্রিমের লোভে সে খুবই দ্রুত আমার কাছে এসে বললো, ভাইয়া দাও আইসক্রিম। আমি বললাম, আইসক্রিম দিবোনা। তুই কি করবি কর। আমাকে পানি দিবি, এইতো?
সে এবার মিষ্টি সুরে বললো, তুমি এসব কি বলো ভাইয়া? তুমি না আমার ভাই হও! তোমাকে কি আমি পানি দিতে পারি?
আহা, কি সুন্দর কথা গো! জীবনে ভুলেও একবার কখনো "তুমি" বলে ডাকেনি, আর আজ আইসক্রিমের লোভে "তুমি" বলে কথা বলছে। বাহ, আচার ব্যবহারের তো বেশ উন্নতি হয়েছে!
আমি আর কোন বাড়তি কথা না বাড়িয়ে তাকে আইসক্রিম দুটো দিয়ে বললাম, তুই খেয়ে নে। আমি গোসল দিয়ে আসি। মিম বারবার ফোন দিচ্ছে আমাকে। দেখি তাদের ওখানে আজকেই যাবো।
আমার কথার প্রতিবাদ করে পাঁজি বোনটা আমায় বলে উঠলো, ও জানি জানি। এখন মিম বলেছে বলে তাড়াতাড়ি গোসল দিতে যাচ্ছিস। আর আমি যে তোকে গতকালকে বলে রেখেছি, সেটার কোন দাম নেই তোর কাছে! বুঝি আমি, সব বুঝি। মিমের সাথে গোপনে ইটিসপিটিস চলে তাইনা?
ওর সাথে আর কোন প্রকার ঝগড়া না করে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালাম। মেয়েরা কি অদ্ভুত, মিমের সামনে সপ্তাহে বিয়ে। আর এই হারামি বলে কিনা, তার সাথে নাকি আমার ইটিসপিটিস চলে? এই দুঃখ আমি কই রাখি। যদি তাই করতাম, তবে অনেক আগেই তারে ঘরে নিয়ে আসতাম।
আর আমি এমন কোন কথা নেই যে, মমোর সাথে শেয়ার করিনা। আমার প্রতিটা বিষয়, প্রতিটা পদক্ষেপ তাকে জানিয়ে রাখি আমি। তবে শুধু একটা কথা বাদে।
.
গল্পের মাঝে পরিচয়টা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। আমি শ্রাবণ আহমেদ নিরব, তবে কলেজের বন্ধু বান্ধবেরা সবাই আমাকে নিরব বলেই ডাকে। অবশ্য বাসার সবাইও নিরব নামে ডাকে। তবে ছোট খালার বাসাতে গেলে মিম শুধু আমাকে শ্রাবণ নামে ডাকে। তার নাকি এই নামটা খুব প্রিয়।
আর এতক্ষণ যার সাথে উপরের কার্যকলাপগুলো হলো, সে হলো আমার প্রাণপ্রিয় আদরের ছোট বোন মমো। আমরা দুইজন দুই বছরের ছোট বড়। মিম আর মমোর বয়স এক। আর আমি ওদের থেকে দুই বছরের বড়।
ওরা এবার অনার্স প্রথম বর্ষে। আর আমি ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম দিবো। অবশ্য আমরা সবাই একই কলেজে পড়ি।
.
গোসল শেষ করে বের হয়ে দেখি বোনটা আমার সবকিছু রেডি করে রেখেছে। আমার নতুন হাতঘড়ি, নীল পাঞ্জাবী-পায়জামা, জুতা, এক কথায় যা যা লাগে সেসবের সবকিছুই। আমাকে বললো, তুই রেডি হয়ে নে। আমিও একটু পর রেডি হয়ে আসছি। আর শোন, এসে যেন দেখি তুই রেডি হয়ে আছিস। কোন প্রকার দেরি করলে তোর খবর আছে।
আমি বললাম, তুই আমার যে কি খবর করতে পারিস, সেটা তো তোকে দেখলেই বোঝা যায়। শুধু একবার আইসক্রিমের লোভ দেখাবো। আর তাতে তুই নিজেই খবর হয়ে যাবি।
অনেকদিন হলো খালাদের বাসাতে যাওয়া হয়না। অবশ্য বাসাও বেশি দূরে নয়। এই ১২ কিলোর মতো রাস্তা। খালা প্রায় দিনই আমাকে ফোন করে যেতে বলে। অবশ্য আমি গেলে আমার একটু লাভই হয়। যত প্রকার খাবারের আইটেম আছে, সব এসে হাজির হয় তখন আমার সামনে। আর মিমের সেই দামি রুচিধর নুডুলস তো আছেই। প্রথম যেদিন তার রান্না করা নুডলস খেয়েছিলাম, সেদিনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম তার হাতে রান্নার স্বাদ। তবুও অনেক কষ্ট করে কিছু না বলে একটু প্রশংসা করে খেয়ে উঠতাম। আর যদি একবার বলতাম, একদম পঁচা হয়েছে। তখন সে মিচকা কান্না কাঁদতো। তাই হাজার খারাপ হলেও আমি বলতাম, তোর হাতের রান্নাটা দারুণ। অবশ্য এই কথা বলার জন্য আমাকে নানান অখাদ্য কুখাদ্য খাবার খেতে হয়েছে।
.
আমি রেডি হয়ে বসে আছি। সবকিছুই পড়েছি শুধু ঘড়িটা ছাড়া। কারণ ঘড়িটা যে আমার বোনটা আমাকে পড়িয়ে দেয় প্রতিদিন।
কিন্তু দশ মিনিট চলে যায়, বিশ মিনিট চলে যায়, সে আর রেডি হয়ে আসেনা। তাকে আসতে না দেখে আমি তাকে ডাক দিলাম। আর ডাক দিতেই সে বললো, আরেকটু দাঁড়া। হয়ে গেছে প্রায়।
আরেকটুর কথা বলে প্রায় ২০ মিনিট পর সে সেজেগুজে বের হয়ে আসলো। আমি আমার ছোট্ট বোনটাকে দেখে একেবারে থঁ হয়ে গেলাম। তাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার বোনটাই যেন বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে।
আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বললো, ঐ ঐ চোখ নামা কইতাছি। একদম নজর দিবিনা আমার দিকে। তখন আবার পরে আমার ডায়রিয়া হয়ে যাবে।
ওর ওরকম আহ্লাদি কথা শুনে আমি হোহো করে হেসে উঠলাম। আমার হাসি দেখে সে চরম মাত্রায় রেগে গেলো। বললো, ঐ অমন মদনের মতো হাসছিস কেন?
আমি ওর মুখে মদন নাম শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলাম। আমার মতো এতো সুন্দর একটা ছেলেকে ও মদন ডাকে। আমি বললাম, "মদন কে" সেটা সবাই ভালো করেই জানে। মদন তো তুই। তা না হলে কি কেউ বলে যে, কারো দিকে তাকিয়ে থাকলে তার ডায়রিয়া হবে?
আজ থেকে আমার লক্ষি বোনটার নতুন নাম রাখলাম আমি। আর এখন থেকে তোকে আমি এই নামেই ডাকবো। হাহাহা।
.
বোনটা আমার আর কোন কথা না বলে হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে যেতে লাগলো। আমি বললাম, কই যাস আপু? হাত ঘড়িটা পড়িয়ে দিবিনা?
সে একটা ভেংচি কেটে বললো, মদনেরা কখনো কাউকে ঘড়ি পড়িয়ে দেয়না।
আমিও তার কথার বিপরীতে বললাম, তাহলে আমার আর যাইতে হবেনা মিমদের বাসায়। তুই একাই যা।
সে রাগে ফুসতে ফুসতে তার রুমে চলে গেলো। আর বলে গেলো, হু আমি একাই যাবো।
তার রাগ দেখে আমি আবার কম যাই কিসে? আমিও রাগ করে সবকিছু খুলে একটা টিশার্ট আর লুঙ্গিটা পড়ে মেঝেতে মাদুর পেতে শুয়ে পড়লাম। খাটে তো আর শোয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। একবারে ভিজে চুপচুপ করছে আমার সাধের খাটটা।
.
কিছুক্ষণ পর কারো রুমে আসার আওয়াজ পেলাম। আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি মমো দাঁড়িয়ে। রাগি একটা লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে সে আমার দিকে। সে বললো, আবার পানি আনতে হবে নাকি?
আমি বললাম, কেন?
এবার সে আমার কানটা ধরে বললো, কেন মানে? তুই কাপড় চেন্জ করছিস কেন? আর আবার ঘুমাচ্ছিস কেন?
- তুই না বললি যে, আমার যেতে হবেনা। তাই চেন্জ করেছি। আর বিছানা ভেজা, তাই এখানে শুয়েছি।
- তাড়াতাড়ি ঐ কাপড়গুলো পড়ে খেতে আয়। মা ডাকছে খাওয়ার জন্য।
মমো চল গেলো রুম থেকে। আমি উঠে আবার পাঞ্জাবী- পায়জামা, জুতা, সবকিছু পড়ে খেতে গেলাম। তবে এবারও ঘড়িটা পড়লাম না।
.
খাবার টেবিলে....
- এটা কি শুনছি নিরব?
হঠাৎই মা আমাকে কথাটা বলে উঠলো। আমি বললাম
- কি শুনছো মা?
- তুই নাকি....
- কি আমি?
- তুই নাকি মমোকে বকা দিছস?
মায়ের কথাটা শুনে কলিজায় পানি এলো। নয়তো এতক্ষণে কলিজা শুকিয়ে যেতো। আমি তো ভাবেছিলাম মমোদের ক্লাসের সোমা নামের যে মেয়েটিকে আমি পছন্দ করি, সেই ব্যাপারে আবার জেনে গেলোনা তো? যাক বাবা, বাঁচা গেলো। আমি একটু কাঁশি দিয়ে মমোর দিকে তাকিয়ে বললাম, ঐ মদন আমি তোরে বকেছি?
তাকে আবার মদন বলাতে সে এবার অভিমানি সুরে মাকে বললো, দেখেছো মা! ভাইয়া আমাকে আবার মদন বললো।
- ঐ তুই ওকে মদন বললি কেন? (মা)
- তুমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখোনা, কেউ কি চোখে অতো কাজল দেয়?
মা এবার ওর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। তখন আমি মমোকে বললাম, দেখেছিস মাও তোকে মদন বললো।
এই কথা শুনে সে এবার আমার দিকে রাগি এবং জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বললো, কই কখন মা আমাকে মদন বললো?
আমি বললাম, মা তোর দিকে তাকিয়ে হাসলো, সেটা তুই দেখলিনা?
- হুম দেখলাম, তবে হাসার সাথে মদন বলার সম্পর্ক কি? (মমো)
- আরে মায়ের ওই হাসিটার অর্থই হলো তোকে মদন বলা। হাহাহা।
- তুই একটা ভাল্লুক। আর একদম হাসবিনা বলে দিলাম। হাসলে তোর মুখ সুপার গ্লু লাগিয়ে দেবো। আর মা, তুমিও নাকি আমাকে মদন বললে?
- কই না তো? আমি আবার তোকে মদন বললাম কোথায়? (মা)
- তাহলে যে ভাইয়া বললো!
- ও তো একটা দুষ্টুরর গোডাউন। ওর কথা কানে নিসনা।
আমি মায়ের কথার প্রত্যুত্তরে বললাম, একদম না। মা তোকে মদন বলেছে, এটা আমি দেখেছি।
আমার এরকম কথাবার্তা শুনে মমো খাবার রেখে উঠে যেতে যেতে বললো, আমাকে আরেকবার মদন বললে, তোর বিয়ে হবে না কখনো। আর তোর জীবনে কোন মেয়েও জুটবেনা, জুটলেও তোরে ভাল্লুক বানায়ে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে। এই বলে রাখলাম, দেখিস।
আমি তার এমন বদ দোয়া দেওয়াতে বললাম, শকুনের দোয়াতে কখনো গরু মরেনা। এটাও আমি বলে রাখলাম। মিলিয়ে নিস তুই। আর দেখে নিস, তোর থেকেও সুন্দরী একটা মেয়েকে তোর ভাবি করে ঘরে আনবো।
সে মুখ ভেংচিয়ে বললো, সে দেখা যাবে।
.
বোনটার সাথে যতই ঝগড়া করিনা কেন, কিছুক্ষণ পরে আবার সব আগের মতো হয়ে যায়। দুইজন বেরিয়ে পড়লাম মীমদের বাসার উদ্দেশ্যে। অবশ্য এতো দ্রুত সেখানে গিয়ে আমার কোন কাজ নেই। তবুও বোনটার জন্য যেতে হচ্ছে। যাওয়ার সময় আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম "মমো, আজ কে কে ওদের ওখানে আসবে? শুধু কি আমরাই? নাকি অন্যকেউও আসবে!
আমি মমোর উত্তরের অপেক্ষা করতে করতে ভাবতে থাকলাম, সোমাও যেন আজকে আসে। তবে তার সাথে অন্তত কথাটা তো বলা যাবে। ওকে শুধু দূর থেকেই পছন্দ করেছি এবং ভালোবেসেছি। কিন্তু কখনো তার সাথে কথা বলা তো দূরের কথা, তার সামনেও দাঁড়াতে পারিনি।
মমো বললো, আমার বান্ধবীরা আসবে।
আমি উৎফুল্ল হয়ে বললাম, সোমাও কি আসবে?
সে অবাক চোখে আমার দিকে চেয়ে বললো, সোমা আসবে মানে?
.
অপেক্ষা করুন দ্বিতীয় পর্বের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.