নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুপবতী

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫০

রুপবতী
পর্ব-৪
.
আমি সোমার কথা অনুযায়ী যেই না বাইরে যাওয়ার জন্য রুমের দরজা খুলেছি। ঠিক সেই সময় দেখি মমো একটা তরতাজা গোলাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুই এখানে কেন? আর তোর হাতে ওটা কি?
সে বললো, কেন, এটা কি তুই জানিস না?
আমি বললাম, জানি তো। তবে এটা তোর হাতে কেন? আর এটা দিয়ে তুই কি করবি?
তখন সে আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে বললো, এটা দিয়ে আমার ভাইটার জন্য একটা ভাবির ব্যবস্থা করবো।
- মানে? (আমি)
- মানে টানে কিচ্ছু না। এই নে ধর, এখন এটা দিয়ে সোমাকে প্রপোজ করে আয়। যা..
- তুই কি করে জানলি যে, সোমা আমাকে একটি সদ্য ফোটা তরতাজা গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করতে বলেছে?
- সব জানি আমি।
- তোর এই সব জানার শাস্তিও তোকে পেতে হবে। আগে বিয়েটা শেষ হোক।
- যা পারিস করিস, এখন যা আগে প্রপোজ কর।
আমি গোলাপটা হাতে নিয়ে রুমে ঢুকলাম। এতো দ্রুত রুমে ঢুকতে দেখে সোমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার এতো দ্রুতই ফিরে এল যে? গোলাপ পাওনি তাইনা?
আর পাবেই বা কি করে! সদ্য ফোটা গোলাপ এখানে মাত্র একটাই ছিলো। আর সেটাও মমোকে বলে আমি সরিয়ে রেখেছি, যাতে তুমি কষ্ট করে দূর থেকে এনে আমায় প্রপোজ করো।
আমি তার কথা শুনে কিছুক্ষণ হেসে নিলাম। হাসার পরে কিছু বলতে যাবো, ঠিক তখন সে বলে উঠলো, কি হলো এমন মদনের মতো হাসলে কেন?
তার কথা শুনে আমি বড় ধরনের একটা শক খেলাম। হায়রে কপাল, শেষ পর্যন্ত হবু প্রেমিকাটা আমাকে মদন নাম উপাধি দিলো! এই দুঃখ আমি কই রাখুম?
আমি বললাম, কি বললে তুমি? আবার বলো!
আমার কথাতে সে এমন একটা ভাব ধরলো, যেন সে কিছুই বলেনি। সে আরো আমাকে উল্টো প্রশ্ন করে বসলো। তোমার পছন্দের মানুষ যদি তোমাকে আদর করে একটা নাম উপাধি দেয়, তবে কি তুমি সেই নামটা গ্রহণ করবেনা?
আমি তার কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে বললাম, কেন নয়? অবশ্যই গ্রহণ করবো। আমার পছন্দের মানুষ আমাকে নতুন নামে ডাকবে আর সেটা যদি আমি গ্রহণই না করি, তবে সেটা কেমন দেখায় না?
এই কথাটা শুধু বলতে বাকি। এরই মধ্যে সে আমাকে নতুন একটা নাম উপাধী দিয়ে দিলো। আমি তো তার দেওয়া নামটা শুনে পুরা বোকাবনে গেলাম। নতুন প্রেমিকা যদি প্রেম শুরু না হওয়ায় আগেই এসব নামে ডাকতে থাকে, তবে প্রেম তো হবেইনা। বরং আরো অন্যসব প্রেমিকাগুলোও দূরে চলে যাবে। যদিও আমার অন্যকোন প্রেমিকা নেই। তবে অনেকেই আমার পিছে পিছে ঘোরে। আর তারা আমার এই নামটা জেনে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে।
আমি একটু করুণ স্বরেই বললাম, সোমা এটা কি কোন নাম?
হঠাৎই পেছন থেকে কে যেন বলে উঠলো, কেন যখন আমাকে এই নামে ডাকিস তখন তোর মনে থাকেনা এটা কি কোন নাম?
পেছনে ঘুরে দেখি মমো দাঁড়িয়ে। আমি এতক্ষণে বুঝতে পারলাম, কাল থেকে যা যা হচ্ছে সবকিছুই এদের সবার পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে। ওদের পরিকল্পনাতে ওরাই জয়ী হলো। মাঝখানে আমি শুধু মদন নামটা উপাধি হিসেবে পেলাম। সেটাও আবার হবু প্রেমিকার দেওয়া। তবে আমি সন্দিহান যে, এই প্রেমের প্রস্তাবের বিষয়টাও আবার কোন ঠাট্টা মসকরা নয়তো?
আমি চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম সেখানে। ভেবেছিলাম সোমা হয়তো বলবে, কি হলো প্রপোজ করছোনা কেন? কিন্তু না, সে তেমন কোন কিছুই বললোনা। বরং সে আমার বোনকে উদ্দেশ্য করে বললো, কেমন দিলাম দোস্ত? আমার বোনটাও তার কথার প্রত্তুত্তরে বললো, একদম ফাটিয়ে দিয়েছিস। আমাকে খানিকটা পঁচাতে পেরে তারা এতোটাই খুশি যে, তা ভাষায় প্রকাশের বাইরে।
আমি আমার বোনের এমন কার্যতে কষ্ট পেলাম একটু, তবে বোনকে বুঝতে দিলাম না। বোনের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম তার মুখে বিজয়ের হাসি। তার হাসিতেই যে আমার সুখ। আমি তখন তাকে আর কোন প্রকার ধমক কিংবা বকাও দিলাম না। তার খুশিতেই যে আমি সুখী। নিজে কষ্ট পেলেও বোনকে কখনো কষ্ট পেতে দেইনি। আর দিবোও না কখনো। এখন যদি তাকে ধমক দিই, বকা দিই তবে সে অনেক কষ্ট পাবে।
.
তারা হয়তো মজা করেছে আমার ভালোবাসা নিয়ে, তবে আমি তো সিরিয়াস ছিলাম। আমি কখনো কল্পনাতেও ভাবিনি যে এমনটা হবে।
আমার বোনের প্রতি আমার পুরো আস্থা ছিলো। তার কাজকর্মে কখনো মনেই হয়নি যে, সে এমনটা করবে আমার সাথে! কে যেন কবে বলেছিলো, মেয়েদের মন বোঝা বড় দায়। সে যদি তোমার বোনও হয়, তবুও।
আমি এই কথাটাকে সেদিন কোন গুরুত্ব দেইনি, বিশ্বাসও করিনি। কারণ আমি আমার বোনকে খুব ভালো করেই চিনি। আর আমার বোনটা তার সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করে। তার মন মানেই আমার মন। কিন্তু আজ! আজ সেই কথাটির সত্যতা প্রমাণিত হলো। আসলেও তাই! মেয়েদের মন বোঝা বড় দায়।
.
মমো আর সোমা দুজনে হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম সেই সদ্যফোটা তরতাজা গোলাপটা হাতে নিয়ে। গোলাপটা এখনো তার সুভাস ছড়াচ্ছে পুরোটা ঘর জুড়ে। আর সেই সুভাসেই আমার মনটা বিষিয়ে উঠছে। বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার। আমি হাতে থাকা অপরুপ সৌন্দর্যে আবর্তিত গোলাপটা ছুড়ে মারলাম। কিন্তু না, গোলাপটা ফ্লোরে না পড়ে পড়লো মিমের গায়ের উপর। মিম রুমে ঢুকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তাহলে তুমিই আমার গোলাপটা ছাঁদ থেকে চুরি করে এনেছো? ছিঃ ভাইয়া ছিঃ! তুমি আমাকে একবার বললেই পারতে। আমি নিজেই তোমাকে ফুলটা এনে দিতাম। তুমি যে ফুলটা চুরি করবে সেটা আমি কখনো আশা করিনি।
আমি মিমের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি জানি মিম আমাকে আরো অনেক কিছুই বলবে। কথাগুলো বিষাক্তের চেয়েও অধিক বিষাক্ত হবে। তার পর্ববতী কথাগুলো শোনার জন্য আমি মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম। আর হ্যাঁ, মিমও তো ভুল কিছু বলেনি। আমার উচিত ছিলো মিমকে বলে ফুলটা নেওয়া। কিন্তু আমি তো জানতাম না এই ফুলটা তার গাছের ফুল।
- কি হলো চুপ করে আছো কেন? (মিম)
মিমের কথার কোনো উত্তর দিলাম না আমি। আর কি উত্তরই বা দিবো?
- ভাইয়া তুমি কাঁদছো? (মিম)
মিমের কথা শুনে আমি দ্রুত চোখটা মুছে নিলাম। এই চোখের পানিটাও বড্ড বেহায়া। সময় নেই অসময় নেই, সে বর্ষিত হবেই।
আমি বললাম
- কই না তো?
- মিথ্যে বলোনা ভাইয়া, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার চোখে পানি। কি হয়েছে বলো আমাকে।
- না রে বোন তেমন কিছুই না। চোখে কি যেন পড়েছে। যাক গে, বল তোর কি খবর?
- আমার খবর সবসময়ই ভালো। জানো ভাইয়া নয়ন একটা চাকরিও পেয়ে গেছে। রাতে সে আমাকে জানালো।
- বাহ, বেশ তো!
- হ্যাঁ।
মিম চলে গেলো রুম থেকে। মিমের ওরকম কথায় আমি কিছু মনে করিনি। কারণ যেখানে আমার নিজের বোনই অমন, সেখানে খালাতো বোন তো অমন হতেই পারে।
.
আমি ভেবে পাইনা, সোমাই বা কেমন? সোমা যদি আমার সম্পর্কে এতো কিছু জেনেই থাকে তবে সে এমন করলো কেন? সোমাকে দেখে তো কখনো মনে হয়নি সে অভিনয় করছিলো আমার সাথে! তার কথা বলার ভঙ্গিমা তো ওরকম ছিলোনা তখন।
সেদিন বিকেলেই আমি চলে আসি মিমদের বাসা থেকে। আসার সময় কাউকেই জানাইনি। আর জানাবোই বা কাকে? জানালে কিই বা হতো? মাথা ব্যথা করছিলো খুব। তাই বাসায় এসেই ঘুমিয়ে পড়ি। এর মাঝে মা এসে অনেকবার ডেকেও গেছে। ঘুম ঘুম চোখে সেটাও বুঝতে পেরেছি আমি। ঘুম ভাঙলে উঠে দেখি রাত দশটা ছুই ছুই। হয়তো মা ডেকে ডেকে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো, তাই আর ডাকেনি। এদিকে আমার ক্ষিদেও পেয়েছে খুব। বিছানা ছেড়ে উঠে মোবাইল হাতে নেওয়ার জন্য টেবিলে হাত রেখে দেখি মোবাইল নেই। তাড়াতাড়ি করে চোখটা ডলে ভালো করে টেবিলের উপর তাকিয়ে দেখি সত্যিই তো আমার মোবাইলটা নেই!
মাকে ডাক দিলাম, মা রুমে আসলে মাকে মোবাইলের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললো, দেখ কোথায়ও হয়তো রেখেছিস!
আমি বিছানার এপাশ ওপাশ খুঁজেও যখন মোবাইলটা পেলাম না, তখন রাগে বিছানা থেকে বালিশটা ছুড়ে মারতেই দেখি মোবাইল সেখানে। আমার সবমসময়ের সঙ্গি এই মোবাইল। মোবাইলটাকে হাতে নিয়ে ভাবতেছি হয়তো তখন ঘুমের ঘোরে ছিলাম, তাই হয়তো মোবাইলটা কোথায় রেখেছিলাম সেটাও ভুলে গিয়েছিলাম।
এখন এই সময়ে ছাঁদে যেতেও তেমনটা মন টানছেনা। তাই বেলকনিতে গিয়ে ইজি চেয়ারটাতে বসলাম। আর বেলকনিতে যাওয়ার আগে মাকে ডাক দিয়ে কিছু খাবার দিতে বললাম।
ইজি চেয়ারটাতে বসে মোবাইলটা অন করতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। ২৪৯ টা মিসকল, ২৩ টা মেসেজ। মিসকলগুলো চেক করে দেখলাম সবগুলোই মমোর দেওয়া। শুধু একটা অপরিচিত নম্বার থেকে পাঁচবার কল এসেছিলো। কল লিস্ট দেখেই বুৃঝতে পারলাম মেসেজগুলোও হয়তো মমোরই দেওয়া। তাই আর সেগুলো চেক করলাম না। মোবাইলটা পকেটে রাখতে যাবো ঠিক তখনই মোবাইলটা কেঁপে উঠলো। আমি স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখি আকাশের ফোন। আমি জানি এর ফোন রিসিভ করলে, প্যাচাল ধরবে তো ছাড়বেনা। আমি ভেবে পাইনা আমার সাথে তার কিসের এতো কথা। এদিকে কলরেট বেড়ে কলেরেটের বাপশুদ্ধ বেড়ে যাচ্ছে। তবুও তার কথা বলার কমতি হচ্ছেনা। বরং দিনদিন বাড়ছে। একরাশ বিরক্তি নিয়ে কল রিসিভ করলাম। রিসিভ করে চুপ করে আছি। ঐ পাশ থেকে আকাশ বলে উঠলো, কি রে বেডা তোর ফোন বন্ধ ছিলো ক্যা? জানিস আজকে একটা পার্টি দিছিলাম। তোরে ফোন দিয়ে দিয়ে হয়রান হয়ে গিয়েছি। পরে তোরে ছাড়াই পার্টি শেষ করি। তবে টেনশন নিস না। তোর জন্য খাবার রেখেছি। চলে আয়। আর শোন আসার সময় ঠান্ডা পানি টানি কিছু আনিস। তাহলে মজা জমবে।
এই যে শুরু হলো আকাশের প্যাচাল, কবে আর কখন যে শেষ হবে, তার নেই ঠিক।
আমি ফোনটা পাশে রেখে দূরের ল্যাম্পোস্টটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অন্যদিন এই সময়ে রাস্তার ধারে কুকুরের ডাক শোনা যায়। কিন্তু আজ সেই ডাকটাও নেই। হয়তো আমার মতো কুকুরের মনেও কষ্ট জমেছে।
- নিরব, খাবার রেখে গেলাম। খেয়ে নিস (মা)
আমি আরেকটু সময় বেলকনিতে থেকে খাবার খেতে গেলাম। ফোনে চার্জও কম। যদিও একটু অন করেছিলাম, আকাশ কল দিয়ে একেবারে ১০% বানিয়ে দিয়েছে। ফোনটা চার্জে দিয়ে খেতে বসলাম। এক লোকমা মুখে দিতেই দরজায় কে যেন নক করলো। আমি বললাম, দরজা খোলা আছে।
- ভাইয়া তোর ফোন বন্ধ কেন? (মমো)
আমি জানতাম মমো আসবে। আমি তার কথার কোন উত্তর দিলাম না। সে আবার বললো
- তোকে সেই কখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু তুই রিসিভ করছিস না। কি হয়েছে তোর? আর তুই চলে এলি কেন?
- মাথাটা ব্যথা করছিলো খুব।
- তো চলেই যখন আসলি, তখন তো আমাকে একবার বলেও আসতে পারতি?
- মনে ছিলোনা।
- ভাইয়া...
- হু।
- কি হয়েছে তোর? এতো কম কথা বলছিস কেন? তুই তো কখনো এমন কম কথা বলিস না?
আমি মমোর কথায় শুধু একটু হাসলাম মাত্র। আমি তার কথার উত্তরে কিই বা বলবো?
- কি হলো হাসছিস কেন? চল আমার সাথে।
বলেই সে আমার হাতটা ধরলো। আমি বললাম, মমো আমি খেতে বসেছি এখন।
সে আমার কথায় খানিকটা অবাক হলো, সেটা আমি তার মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি। আমি জানি এবার সে কি প্রশ্ন করবে আমাকে। আমার যা ভেবেছিলাম, সে ঠিক সেই প্রশ্নটাই করলো আমাকে। সে বললো, ভাইয়া তুই আমাকে নাম ধরে ডাকলি?
আমি তবুও কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। সে আবার বললো, কি হয়েছে তোর? তোর হঠাৎ এমন পরিবর্তন হলো কি করে?
আমি তাকে আবারও বললাম, মাথাটা ব্যথাচ্ছে ঘুম। সে বললো, জলপট্টি করে দিই? আমি তাকে বারণ করে বললাম, না লাগবেনা।
মমো জানে যে আমি সিরিয়াস থাকলে কেমন করে কথা বলি আর মজা করলে কেমন করে কথা বলি! সে আমার রুম থেকে যাওয়ার সময় বলে গেলো, কালকে সকালে আমার সাথে যাবি আবার।
আমি তার কথায় কান না দিয়ে খেতে লাগলাম।
.
পরদিন সকালবেলা ফোনের কাপাকাপিতে ঘুম ভাঙলো আমার। ঘুমের ঘোরে ফোন রিসিভ করেই শুনতে পেলাম
- ভাইয়া তুমি চলে গিয়েছো কেন?
ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখি মিমের ফোন। আমি বললাম
- এমনিই। মাথা ব্যথা করছিলো তাই চলে এসেছি।
- ভাইয়া আমাকে মাফ করে দিও।
- কেন? তুই আবার কি করলি?
- আমি মমোর কথাতেই তখন তোমাকে ওভাবে বকেছি। বিশ্বাস করো ভাইয়া, আমি তোমার সাথে ওভাবে কথা বলতে চাইনি। আর আমি জানতামও না যে মমোর পরিকল্পনাটা কি ছিলো? আমি ভেবেছিলাম হয়তো সে মজা করে বলতে বলছে আমাকে। তাই আমি তোমার সাথে ওভাবে কথা বলেছি। যখন পুরো ব্যাপারটা জানতে পারলাম, তখন নিজেকে খুব ছোট মনে হলো।
- না রে পাগলি, আমি কিছু মনে করিনি।
- তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো কিনা সেটা বলো?
- হুম।
- তাহলে আজকে এসো আমাদের এখানে।
- সেটা আর সম্ভব না বোন।
- কেন?
- এমনিই।
- তুমি না এলে কিন্তু আমি ভীষণ কষ্ট পাবো।
- হুম।
ফোনটা রেখে দিলাম আমি। আমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা, মমোকে শুধু মদন বলার কারণে সে এমনটা করতে পারলো আমার সাথে! সে না আমার বোন হয়?
আমি নিশ্চিত যে, আমার প্রতি সোমার সেই সাময়িক ভালোবাসাটুকুও ছিলো অভিনয় মাত্র। যদি অভিনয়ই না হবে, তবে সে একবার হলেও আমাকে খুঁজতো, আমার খোঁজ খবর নিতো।
.
ভাইয়া দরজা খোল। মমো বারবার আমার রুমের দরজায় নক করছে আর বলছে আমাকে দরজা খুলতে। আমি দরজা খুলে দিলাম। সে এক গ্লাস গরম দুধ আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, নে খেয়ে নে। মমো জানে আমার কোন কারণে মন খারাপ কিংবা রেগে থাকলে তার হাতের এক গ্লাস দুধ পেলেই আমার সব রাগ অভিমান, মন খারাপ এক নিমিষেই হারিয়ে যায়। আমি তাকে বললাম, টেবিলের উপর রেখে যা। সে বললো, না এখনই খা। আমার সামনে খা।
আমি এবার একটু রাগ দেখিয়ে বললাম, তোকে বলছিনা টেবিলের উপর রাখতে? যদি রাখতে না পারিস, তবে নিয়ে যা।
- ভাইয়া তুই এমন করছিস কেন?
- কেমন করছি?
- এইযে কালকে থেকে কেমন যেন একটা ব্যবহার করছিস।
- তুই রুম থেকে বের হয়ে যা।
- কেন?
- না হলে তুই থাক, আমিই যাচ্ছি।
- না না, আমিই চলে যাচ্ছি।
মমো চলে গেলো রুম থেকে। সে পারতো আমার সাথে মজা করতে। তবে এতো আয়োজন করে মজাটা না করলেই পারতো।
.
বিকেলে বাচাল আকাশটা ফোন দিলো। তবে সে এবার কোন কাহিনী বলা শুরু না করে বললো, দোস্ত দ্রুত ফার্মগেট আয়। আমি বললাম, কেন কি হয়েছে? সে কাপা কাপা স্বরে বললো, দ্রুত আয় দোস্ত। বলেই সে ফোন রেখে দিলো।
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। আকাশ্যা মনে হয় কোন বিপদে পড়েছে। তা না হলে সে এমনভাবে কথা বলবে কেন আমার সাথে। আমি সাতপাঁচ না ভেবে বেড়িয়ে পড়লাম ফার্মগেটের উদ্দেশ্যে। বাসা থেকে বের হয়ে যেই না রাস্তায় উঠেছি অমনি একটু দূর থেকে কে যেন আমাকে ডাক দিলো। কন্ঠটা চেনাচেনা মনে হলো আমার কাছে।
হ্যাঁ, এটা আকাশের কন্ঠ। কিন্তু সে এখানে কি করছে? সে তো ফার্মগেটে।
.
অপেক্ষা করুন পঞ্চম পর্বের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.