নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুপবতী

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৪৬

রুপবতী
পর্ব-৫
.
হ্যাঁ, এটা আকাশের কন্ঠ। কিন্তু সে এখানে কি করছে? সে তো ফার্মগেটে। আমি এগিয়ে গেলাম তার কাছে। তাকে আমি কিছু বলতে যাবো, কিন্তু না! সেই আমাকে বলে উঠলো, কিরে বেডা তলে তলে পিরিত করো। আর আমরা জিগাইলে কও তুমি ওসব কিছুই বোঝনা। তুমি আট মাসের বাচ্চা, ফিডার খাও।
আমি ওর কথার কোন মানেই বুঝলাম না। আমি বললাম, কি হয়েছে তোর? এত জলদি তলব করলি কেন? আর তুই এখানে কেন? তোর তো ফার্মগেট থাকার কথা। সে বললো, আয় আমার সাথে।  বলেই হাত ধরে টানতে টানতে আমাকে একটা সরু গলির মধ্যে নিয়ে গেলো। গলিটাতে সূর্যের আলো পর্যাপ্ত পরিমাণে না আসায় খানিকটা অন্ধকারে ঢেকে গেছে চারদিক। কিছুদূর যেতেই আমি লক্ষ করলাম আমার পিছনে আরো কয়েকজন আসছে। এদিকে আকাশ আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে। আমি আকাশকে জিজ্ঞেস করলাম, দোস্ত কোথায় যাচ্ছি আমরা। সে কিছু না বলে চুপ করে রইলো। আমি আবার একই প্রশ্ন করলাম তাকে। এবার সে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, তোরে জমের বাড়ি পাঠানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছি। আমি অবাক হলাম তার কথা শুনে। এসব কি বলছে সে? তার মাথা ঠিক আছে তো? সে একটা পুরোনো বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলো। ঠিক তখন আমার মনে হলো, আমাদের পেছন পেছন আসা লোকগুলোও দাঁড়িয়ে গেলো।
আকাশ আমাকে বললো, কিরে ভয় পাচ্ছিস? তার কথা শুনে  এবার আমার ভয়ের পরিমাণটা সত্যিই  বেড়ে গেলো। যদিও এতক্ষণ অল্প পরিমাণে ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎই তার এরকম কথায় আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম। আর আকাশকেও আজকে কেমন যেন অচেনা অচেনা লাগছে। এই আকাশ কি সেই আকাশ, যে সব সময় বেশি বেশি কথা বলে আমাদের বন্ধু ব্যাচের সবাইকে বিনোদন দিয়েছে?
আমি মুখে একটু হাসি এনে বললাম, কই না তো! ভয় পাবো কেন? আর এখানে ভয় পাবারই বা কি আছে?
সে এবার উচ্চস্বরে একটু হেসে বললো, তাহলে তুই এতো ঘেমে যাচ্ছিস কেন? আমি লক্ষ করে দেখলাম সত্যিই তো তাই। আমি ঘেমে যাচ্ছি।
.
সে আমাকে পুরোনো বাড়িটার ভেতরে নিয়ে গেলো। বাড়িটা এই বড়জোর তিনতলা হবে। বাড়ির কাজ এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। হয়তো বাড়ির মালিকের পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা পয়সা না থাকায় বাড়িটা সম্পন্ন করেতে পারেনি। সে আমাকে কোণার একটা রুমে নিয়ে গেলো। রুমে ঢোকার পরে মনে হলো আমার পিছে আরো কয়েকজন রুমে ঢুকলো। কিন্তু রুমটাও অন্ধকারে ভরা। হঠাৎই পেছন থেকে একজন আমার মুখ চেপে ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। আমি খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম। আমার মনে হচ্ছে যেন আজকেই আমার জীবনের শেষ দিন।
ঠিক সেই মুহূর্তে বারবার আমার বোনটার মুখখানা চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। মমো আমাকে নিয়ে যতই মজা নিক, তবুও তো সে আমার বোন। হয়তো কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমি যদি এখান থেকে বের হতে না পারি তবে কেমনে সব ঠিক হবে? শরীর থেকে ঘাম ঝড়ার পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। উপরে একটা ফ্যানও চলছে। তবুও সেই ফ্যানের বাতাসটা যেন আমার শরীরটাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাতাস দিতে পারছেনা। আসলে মনে ভয় থাকলে শরীর আপনা আপনিই ঘেমে যায়। আমি ভয়ার্ত কন্ঠে আকাশের নাম ধরে কয়েকবার ডাক দিলাম। কিন্তু আকাশের কোন সাড়া শব্দ পেলাম না। প্রায় মিনিট পাঁচেক সময় চারিদিকে নিরবতা বিরাজ করলো। ঠিক তার পরই হঠাৎ করেই রুমে আলো জ্বলে উঠলো। আলো জ্বলে উঠতেই আমার সমস্ত ভয়গুলো কেটে গিয়ে একরাশ খুশিতে পরিণত হলো। আমি যেই চেয়ারটায় বসে আছি ঠিক তার সামনেই একটা টেবিলের উপর গোল করে মোমবাতি সাজানো। আর বাতিগুলোর মাঝখানে একটি কেক। কেকের উপর স্পষ্ট অক্ষরে লেখা, শুভ জন্মদিন নিরব। ততক্ষণে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। আমি ভাবতেও পারিনি এরা আমাকে এভাবে উইশ করবে। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আজ আমার জন্মদিন ছিলো! আমার চোখে পানি দেখে রাজ বলে উঠলো, কিরে শালা তোর চোখে আবার পানি ক্যা? অাবেগে কাইন্দা দিচস নাকি ভয়ে চোখে থেকে বের হইয়া গেছে? আমি তার কথার উত্তর না দিয়ে আকাশ্যার মাথায় টোকা দিয়ে বললাম, এখন উইশ করতাছচ ক্যা? অসময়ে অবেলায় কেউ উইশ করে? তবে ভালোই করেছিস। তোরা আমাকে এভাবে উইশ না করলে আমি তো জানতেই পারতাম না যে আজকে আমার জন্মদিন ছিলো। পাশে থেকে তানজীম বলে উঠলো, আরে আমরাও তো জানতাম না....
তানজীমকে পুরো কথাটা বলতে না দিয়ে আকাশ বলে উঠলো, সবাই তো রাত বারোটা বাজার সাথে সাথেই উইশ করে। আর এরকম উইশটা বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। তাই আমরা এই অসময়ে তোরে উইশ করলাম।
আকাশ থামতেই তানজীম আবার বলে উঠলো, আরে আমরাও জানতাম না যে আজ তোর জন্মদিন।  যদি না.....
এটুকু বলে তানজীম থেমে গেলো। আমি জানি তানজীমের পেটে একটা কথা কখনো আটকে থাকেনা। কিন্তু হঠাৎ করে সে কথাটা বলতে বলতে থেমে গেলো কেন? আমি জিজ্ঞেস করলাম, যদি না কি?
সে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো, যদি না মমো আমাদের বলতো।
আমি তার কথাতে অবাক হলাম বেশ। তাহলে এসবের সবকিছুই মমোর প্ল্যান ছিলো?
রাজ বললো, নিরব পিছনে তাকা।
আমি রাজের কথা শুনে পেছনে তাকালাম। দেখলাম মমো একটা বড় কাগজে সরি লিখে সেটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর কাছে যেতেই সে বলে উঠলো, আমাকে মাফ করে দে ভাইয়া। আমি মজা করতে গিয়ে তোকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। বিশ্বাস কর ভাইয়া, আমি অমনটা করতে চাইনি। কিন্তু তুই বারবার আমাকে মদন বলাতে আমার রাগ হয়েছিলো খুব। আর সেজন্যই আমি অমনটা করেছি। আমাকে মাফ করে দে প্লিজ।
মমোর চোখ দুটিতে জলের কণাগুলো চিকচিক করছে। সে যতই অপরাধ করুক, তার চোখে একটুখানি জল দেখলে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনা।  আমি দু'হাত বাড়িয়ে দিলাম তার দিকে। সে ছুটে এসে আমার বুকে মুখ লুকিয়ে কান্না করতে থাকলো আর বলতে লাগলো, আমি সরিরে ভাইয়া। আমাকে মাফ করে দে প্লিজ।
আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, আরে ধুর, এসব কি বলিস পাগলি? আমি কিছু মনে করিনি।
সে বললো, যদি কিছু মনে নাই করবি, তবে আমার সাথে তখন অমন ব্যবহার করলি কেন? আর মিমদের বাসা থেকেই বা চলে এলি কেন?
- কিরে কেক কাটবি? নাকি আমরাই কেটে খেয়ে ফেলবো? (আকাশ)
মমো এবার আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, আপনারা খাবেন মানে কি হু? কেকটা শুধু আমার ভাইয়ের জন্য। পাশে থেকে পাজি রাজটা বলে উঠলো, ও এখন তো আমরা পর হয়ে গেছি। আমাদের প্রয়োজন শেষ। তাই আমাদের কেক খাওয়ার ভাগ্যটাও শেষ। চল তানজীম ওদের দুজনের জন্য দুই টুকরা কেক রেখে আমরা সবটুকু নিয়ে চলে যাই। প্রচ্চুর খাটুনি করেছি আমরা এই অভিনয়টা করতে। আমাদের পারিশ্রমিক এই কেকেও মিটবে না। তবুও কেকটা খেয়ে তো বলতে পারবো, বন্ধুর জন্মদিনে বন্ধুকে কেক না খাইয়িয়ে আমরা খেয়েছি। বলেই রাজ হাসতে লাগলো।
.
সন্ধ্যার সময় আমি আর মমো বাসায় ফিরছি। মমোর উপরে যতটুকু রাগ অভিমান ছিলো আমার, এখন তার ছিটোফোটাও নেই। কিন্তু একটা বিষয়ে আমি চিন্তিত। সেটা হলো, সোমার বলা ঐ কথাগুলোও কি তবে ফান ছিল? সে যে আমাকে বলেছিলো, সেও আমাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে। আর আমি যে তার জন্যই তাদের ক্লাসরুমের সামনে দাড়িয়ে থাকতাম এটাও নাকি সে জানতো। তবে কি সে আমাকে সত্যি সত্যিই  পছন্দ করে? নাকি শুধু অভিয়ন করেছিলো তখন।
ভাবছি মমোকে কি একবার জিজ্ঞেস করবো এ ব্যাপারে? নাহ থাক, সেও আবার হয়তো মজা নিতে পারে। মেয়ে মানুষের মন সেকেন্ডে ধ্যান ধারণা, মত পাল্টায়।
বাসা পেতে এখনো প্রায় খানিক সময় বাকি। ঠিক সেসময় মমো আমাকে বললো, ভাইয়া তুই তোর নীল পাঞ্জাবীটা পড়ে আয়।  আমি এখানেই দাঁড়ালাম। হঠাৎ করে মমোর এমন কথাতে আমি অবাক হলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
সে বললো, আগে পড়েই আয় না! তারপর বলছি। আর শোন, একটু তাড়াতাড়ি আসিস।
মমোর মুখে এক প্রকার সুখময় হাসি ঝলক দেখতে পেলাম আমি। তাকে আর কোন প্রশ্ন না করে বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম। সে যতই মজা করুক, সে তো আমার বোন। তার কথা তো শুনতেই হবে আমাকে। দুদিন তার সাথে কথা না বলে নিজেও খুব কষ্ট পেয়েছি, তাকেও কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু এখন আর কোন ধরনের কষ্ট পেতে চাইনা আমি।
পাঞ্জাবিটা পড়ে আবার আগের জায়গায় চলে গেলাম। মমো একটা রিক্সা ডেকে বললো, মামা চলুন।
রিক্সা চলছে তার আপন গতিতে। মমো আমার পাশে বসে মুচকি মুচকি হাসছে। আমি তার হাসির কারণটা সম্পর্কে অবগত না। তবে এই মুহূর্তে অবগত হলেও তার সাথে আমি তাল মিলাতাম না।
আমি তাকে 'সে কেন হাসছে' এটা জিজ্ঞেস না করে চুপচাপ বসে অন্যদিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে চুপ থাকতে দেখে সে বললো, কি রে ভাইয়া? এমন চুপচাপ হয়ে বসে আছিস কেন? কথা বলছিস না কেন? নাকি এখনো আমার উপরে রেগে আছিস?
আমি তার কথায় মুখে একটু হাসি আনার ব্যর্থ চেষ্টা করে বললাম, কই না তো? রেগে থাকবো কেন? এইতো কথা বলছি।
সে বললো, না তুই কথা বলছিস না। তুই এখনো আমার উপর রেগে আছিস। তা না হলে তুই এমন গোমড়া মুখে চুপচাপ বসে থাকতিস না।
মমোর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখদুটোতে জল টলমল করছে। কি মেয়েরে বাবা, মাত্রই তো দেখলাম মুচকি মুচকি হাসছে। আর এখনই আবার চোখের কোণায় জল এনে ফেলেছে।
সে আমার থেকে আবার ক্ষমা চেয়ে বললো, ভাইয়া আমি না হয় ছোট হয়ে একটু ভুল করে ফেলেছি। তাই বলে কি আমাকে তুই ক্ষমা করবিনা? আমি কি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না? বলতে বলতে দু'ফোটা জল চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো তার। ওর চোখে জল দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। চোখ দুটো মুছে দিয়ে বললাম, আরে ধুর পাগলি। কাঁদছিস কেন? আর এখন কি কথাই বা বলবো?
সে বললো, যা মনে আসে তাই বল। কোন একটা গল্প শোনা।
আমি তাকে শিয়াল আর ছাগলছানার গল্প শোনাতে লাগলাম। আমার থেকে এই বাচ্চাদের গল্প শুনে সে বললো, ধুর এসব কি গল্প বলিস? আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে আমাকে এই শিয়াল ছাগলের গল্প শোনাচ্ছিস? আমি একটু নড়েচড়ে বসে বললাম, তাহলে  তুই না কেবলই বললি যে, তুই ছোট হয়ে না হয় একটু ভুল করেছিস?
আমার কথা শুনে সে চুপ হয়ে গেলো। খানিকপর নিরবতা ভেঙে বললো, তার মানে তুই আমাকে ক্ষমা করিস নি, তাইনা?
আমি একগাল হেসে বললাম, অারে তুই তো কোন দোষই করিস নি। তবে ক্ষমা করবো কি জন্য? আর যা করেছিস তাতে আমি কিছু মনেই করিনি। আমিও যাস্ট মজা নিয়েছিলাম তখন। আর ওখান থেকে বাসায় চলে এসেছিলাম এইজন্য, যাতে তোদের সাথে আমিও মজা করতে পারি। কিন্তু একদিক দিয়ে তুই আমার থেকে এগিয়ে আছিস।
সে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কোন দিক দিয়ে?
আমি বললাম, আমাকে জন্মদিনের উইশ করে। তবে এবারের জন্মদিনে কিন্তু বাবা মাকে সাথে নেওয়া হলোনা। তখন সে বললো, সেটা আমিও জানি। আর তার জন্যই বাবা মাকে আগে থেকেই সব বলে রেখেছিলাম। আর তাদের জন্য একটা কেকও রেখে দিয়েছিলাম।
.
মামা নামেন। আমি রিক্সাওয়ালার কথা শুনে সামনে তাকিয়ে দেখি রিক্সা মিমদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমি মমোর দিকে তাকিয়ে বললাম, এখানে কেন? সে বললো, এখানে না তো কোনখানে যাবো? চল ভেতরে চল। সোমা তোর জন্য অপেক্ষা করছে। এখন পর্যন্ত তো তারে প্রপোজই করিস নি তুই। রিক্সাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে আমি ভেতরে ঢুকলাম। মমো আমাকে সোজা ছাঁদে নিয়ে গেলো। এদিকে রাতও হয়ে গেছে। ছাঁদে গিয়ে দেখি সেখানে কেউ নেই। অবাক হলাম আমি। আর ছাঁদটাও অন্ধকার। আজকে আবার চাঁদও ওঠেনি। আমি মমোকে বললাম, কি রে আমাকে তুই ছাঁদে নিয়ে এলি কেন? কেউ তো নেই এখানে। চল নিচে চল। আমি নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়িতেই হঠাৎই পুরো ছাঁদ জুড়ে আলো জ্বলে উঠলো। আর সমস্বরে আওয়াজ এলো, নিচে গিয়ে কি করবেন? সেখানে তো কেউ নেই। আমি পিছন ফিরে দেখলাম সোমা, মিমসহ তার সব বান্ধবীরা দাঁড়িয়ে আছে। মিমের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। আমি অনুমান করলাম কিসের জন্য তাকে এতো ভয়ার্ত এবং বিষন্ন দেখাচ্ছে! যদি আমি তাকে কিছু বলি, সেজন্য। কিন্তু তাকে বলার মতো কোন কথাই নেই এখন আমার।
দেখলাম সোমা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। তার অবস্থাও মিমের মতোই। কাছে এসে সে তার কান দুটো ধরে বললো, আমি সরি। আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। তার কথার সাথে তার সকল বান্ধবীরাও সমস্বরে বলে উঠলো, সরি সরি।
আমি কি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পাশে থেকে মিম বলে উঠলো, ভাইয়া এই নাও। এবার প্রপোজ করো।
মিম আমার দিকে একটা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বললো কথাটা। আমার সেই মুহূর্তে সোমাকে প্রপোজ করার কোন মন মানসিকতায় ছিলোনা। তাই বললাম, আরে কিসের প্রপোজ? আর কাকে প্রপোজ করবো?
আমার কথা শুনে সোমা, মিম, মমোসহ সবাই অবাক হলো। মমো আমাকে বললো, কিসের প্রপোজ মানে? তুই সোমাকে পছন্দ করিস না? ভালোবাসিস না? আমি একটু হেসে বললাম, পছন্দ ভালোবাসা? হাহাহা, আরে আমি তো মজা করেছিলাম তখন। আর ভালোবাসলেই যে তাকে ফুল দিয়ে প্রপোজ করতে হবে, এটাই বা কোথায় লেখা আছে? ভালোবাসা আসে মন থেকে। এখানে প্রপোজই মুখ্য বিষয় নয়।
আমি তাকিয়ে দেখলাম সোমার চোখেও জল চিকচিক করছে। হয়তো সে আমাকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসে। কিন্তু আমি চাইনা তাকে ভালোবাসতে। দেখা যাবে হঠাৎ করে একদিন সে বলে উঠবে, তোমাকে আমার আর ভালো লাগেনা। তুমি আমার যোগ্য না। কিংবা বলবে, আরে ধুর আমি তো এতোদিন মজা করেছিলাম তোমার সাথে। আর তুমি কিনা মজাটাকেই সত্য ভেবে নিলে!
মেয়ে মানুষের মন, যখন তখন মত পাল্টায়। তাই আমি তাকে প্রপোজ তো করলামই না বরং আরো কিছু কথা শুনিয়ে দিলাম।
সোমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। সে তার ওড়নাটা দিয়ে সেই জল লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে। আমার কাছে খুব ভালোই লাগছে ব্যাপারটা। কি অদ্ভুত তারা। এই মজা করবে আবার এই সিরিয়াসলি থাকবে।
অার কোন কথা না বলে চলে এলাম ছাঁদ থেকে। সোমা বুঝুক, কারো সাথে মজা করে তাকে কষ্ট দেওয়ার ফলটা কেমন হয়!
.
অপেক্ষা করুন ষষ্ট পর্বের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.