![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রুপবতী
পর্ব-৭ (অন্তিম পর্ব)
.
সে 'কিন্তু' বলে চুপ হয়ে গেলো। তার এভাবে কিন্তু বলাতে আমি থমকে গেলাম। সোমা কি বলতে চায় তাহলে? আমি বললাম, কিন্তু কি সোমা?
সে একগাল হেসে নিয়ে বললো, কিন্তু এখন যে তোমাকে ছেড়ে যেতে হবে! পুরো সাতটা দিন রয়েছি এখানে। আজকের মধ্যে বাসায় না গেলে সমস্যা হতে পারে। ওর কথা শুনে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। তৃষ্ণার্ত হৃদয় ফিরে পেলো তার সমুদ্র তট। আমি তাকে আর কিছুসময় জড়িয়ে রেখে ছেড়ে দিলাম। সে ব্যাগপত্র গোছানো শেষে আমায় একাকী রেখে চলে গেলো। অবশ্য এখন আমিও চলে যাবো।
সোমা চলে গেলে আমি আমার জিনিসগুলো ব্যাগে ভরে মমোকে ডাকতে গেলাম। গিয়ে দেখি সে কার সাথে যেন কথা বলছে। আমি একটু এগিয়ে গিয়ে আড়ি পেতে দেখার চেষ্টা করলাম। হ্যাঁ, সে কোন মেয়ের সাথে না, বরং একটি ছেলের সাথে কথা বলছে। আমি ছেলেটিকে দেখেই চিনতে পারলাম। সে আর কেউ নয়, সে আমারই প্রাণপ্রিয় বন্ধু অার্দ্র। ছেলেটা বেশ সহজ সরল। আর একটু বোকা টাইপের। মোটা ফ্রেমের একটা চশমা পড়ে থাকে সবসময়। চেহারাতেও বড্ড মায়া আছে তার। যখন আড্ডা দেওয়ার ফাঁকে তাকে জিজ্ঞেস করতাম, দোস্ত তোর কি কোন মেয়েকে পছন্দ হয়েছে? সে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিতো। আমরা সবাই তখন তাকে ধরে বসতাম। বলতাম, মেয়েটা কে?
তখন সে আমার দিকে একবার তাকাতো। তারপর আর কিছুই বলতোনা। আমরা তাকে হাজার রিকুয়েস্ট করলেও সে বলতোনা।
কিন্তু কেন বলতোনা? আর জিজ্ঞেস করলে আমার দিকেই বা তাকাতো কেন? এটার উত্তর আজ পেয়ে গেলাম আমি। মমোকে আর্দ্রের সাথে কথা বলতে দেখে তাদের আর বিরক্ত করলাম না। একটু ফাঁকে এসে মমোকে ফোন দিলাম। সে ফোন রিসিভ করলে বললাম, মমো দ্রুত চলে আয়। আমার সবকিছু গোছানো শেষ। খানিক বাদেই সে তার ব্যাগপত্র নিয়ে বেরিয়ে এলো। সে হয়তো লক্ষ করেনি, আমি তার আর আর্দ্রের কথপোকথন শুনে ফেলেছি। যাওয়ার সময় মমোকে জিজ্ঞেস করলাম, কি রে মদন কোন বয়ফ্রেন্ড খুঁজে পেলি? সে আমার কথায় হুট করে রেগে গেলো। বললো, ভাইয়া তুই আবার আমাকে মদন বলছিস? আমি তার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে বললাম, যেটা প্রশ্ন করেছি সেটার উত্তরটা আগে দে। সে একটু চুপ থেকে বললো, পেয়েছি তো অনেক আগেই।
আমি তার কথায় মোটেও অবাক হলাম না। কারণ, আমি জানি আর্দ্রের সাথে তার অনেকদিনের সম্পর্ক। বড়জোড় হলেও দুই বছর তো হবেই।
আমি তাকে অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম, বলিস কি? ছেলেটা কে? বাসা কোথায় আর কি করে সে?
মমো আমাকে অবাক করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললো, ভাইয়া তুই তাকে চিনিস।
আমি তার কথায় অবাক হওয়ার ভান ধরে বললাম, চিনি মানে? কিভাবে? কখন?
আর আরেকটা কথা, তুই না বলতি তোর কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। তবে আজ বয়ফ্রেন্ডটা এলো কই থেকে?
সে বললো, তোর কি মনে হয়? যে, আমার মতো সুন্দরী একটা মেয়ের কোন বয়ফ্রেন্ড থাকবেনা? আর সময় হলে তোকে জানিয়ে দেবো, ছেলেটা কে?
মমোর এমন খোলামেলা কথা শুনে তাকে একটা ধমক দিলাস আমি। ধমক খেয়ে সে চুপসে গেলো। আমি রাগতস্বরেই বললাম, তুই ভুলে যাস না আমি তোর বড় ভাই। সো, বড় ভাইয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, সেটা তুই ভালো করেই জানিস। আর এটা মনে রাখিস। তোর সাথে এতোটা ফ্রি মানে এই নয় যে, তুই যেকোন বিষয়ে আমার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে পারবি!
মমো এক ধমকেই চুপ হয়ে গেলো। হয়তোবা সে এখন এই মুহূর্তে আমাকে একজন বড় ভাই হিসেবেই দেখছে। এতোদিন হয়তো সে বন্ধুর চোখে দেখতো, সব কথা শেয়ার করতো। কিন্তু আজ তার চাহনিতে ভয়ের একটা ছাপ বিদ্যমান। সে সারা পথ একেবারে চুপচাপ গুপটি মেরে পাশে বসে রইলো।
রিক্সাটা বাড়ির গেটে থামতেই আমি মমোকে বললাম, ছেলেটা কিন্তু অনেক সহজ সরল। একদম সাদা মনের মানুষ। তাকে একদম কষ্ট দিস না কখনও।
মমো আমারা কথায় অবাক হয়ে গেলো বেশ। সেটা তার চেহারার ভাবমূর্তিটাই বলে দিচ্ছিলো। আমি তার অবাক চাহনিটা কাটাতে বললাম, তুই এতোদিন ধরে আর্দ্রের সাথে রিলেশন করিস। অথচ আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করলিনা। আর যখন তোকে জিজ্ঞেস করতাম, তুই প্রেম করিস কিনা!
তখন তো খুব ভাব ধরতি, উচু গলায় বলতি- হু! আমি প্রেম করতে যাবো কেন? ওসব তো আমি বুঝিইনা।
ওসব যাইহোক, আর্দ্রের পড়ালেখা শেষ হলেই তোকে ঐ হাবাগোবার কাঁধে ঝুলিয়ে দেবো।
আমার কথা শুনে মমো লজ্জা পেয়ে দৌড়ে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো। রিক্সাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে আমিও বাড়িতে ঢুকলাম। যখন আমি আমার রুমে ঢুকতে যাবো, তখন দেখি রুমের দরজা লাগানো। আর সেটাও আবার ভেতর থেকে। নিশ্চয়ই কেউ না কেউ ভেতরে আছে। তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে আমার রুমে? মমো?
কোন উত্তর নেই। আমি বললাম, মমো দরজা খোল।
কারণ আমি জানি একমাত্র মমো ছাড়া কেউ আমার রুমে ঢুকে দরজা লাগায়না। খানিকপর দরজা খুললে অামি রুমে ঢুকে একেবারে সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম। জন্মদিন সেই কবেই চলে গেছে। অথচ আজকে বাবা মা, বোন সবাই আবার একসাথে জন্মদিনের আয়োজন করছেন। ভাবতেই এক প্রকার ভালো লাগা কাজ করতে লাগলো।
.
কেক কাটা শেষে যখন বাবা মা আমার রুম থেকে চলে গেলো, তখন মমো আমাকে অতি নরম কন্ঠে বললো, ভাইয়া একটা কথা ছিলো।
আমি বললাম, নির্দ্বিধায় বলে ফেল। সে একটা বড় শ্বাস নিয়ে বললো, ভাইয়া আমি আর্দ্রকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুই কিন্তু বাবা মাকে বলে আর্দ্রের সাথেই আমার একটা ব্যবস্থা করে দিবি।
আমি ওর কথা শুনে ওকে বললাম, আরে পাগলি তোকে এর আগেও বলেছি তো যে, আর্দ্রের পড়ালেখাটা শেষ হোক। তারপর আমি ব্যবস্থা করে দিবো। যা এখন, তোর রুমে যা। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
মমো আমার রুমে থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আমি আবার তাকে ডাক দিলাম। সে পেছন ফিরে বললো, কিছু বলবি? আমি বললাম, যদি কিছু না-ই বলি তবে ডাক দিলাম কেন?
সে বললো, আচ্ছা যা বলার বলে ফেল।
আমি বললাম, সোমার ফোন নাম্বার আছে তোর কাছে?
- হ্যাঁ আছে, তো?
- আসলে হয়েছে কি! ওর থেকে ওর নাম্বারটাই নেওয়া হয়নি। দে তো নাম্বারটা।
- উহু, নাম্বার নিতে হলে তো ঘুস দিতে হবে!
- ঘুস?
- হ্যাঁ।
- কেন ঘুস দিবো?
- ওমা! কেন ঘুস দিবো মানে কি? আমার বান্ধবীর সাথে প্রেম করবে আবার আমার থেকে নাম্বার চাইবে। তো, আমি কি সব ফ্রিতে করে দিবো নাকি?
- কয় টাকা লাগবে?
- টাকা না, দুইটা আইসক্রিম লাগবে আমার।
- পাগলী একটা।
মমো সোমার নাম্বারটা দিয়ে চলে গেলো। সেই রাতে ঘুমিয়ে পড়ার কারণে সোমাকে আর কল করা হয়নি। ভোর বেলা ঘুমিয়েই ছিলাম। কানের কাছে ফোনের ভাইব্রেটটা বারবার বিরক্ত করছে। বালিশসহ কেঁপে কেঁপে উঠছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি সোমার কল।
আমি কলটা রিসিভ করে কানের কাছে রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। সে কি বলেছে, কি না বলেছে, সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই ছিলোনা আমার। সকালে যখন ঘুম ভাঙলো তখন মনে হলো, ভোররাতে কে যেন আমাকে কল দিয়েছিলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি সোমার নাম লেখা। কিন্তু এট কিভাবে সম্ভব। তাহলে কি সোমার কাছে আমার নাম্বার ছিলো?
যদি নাই থাকবে তবে সে কল দিলো কি করে। আর রাতে মমোর থেকে সোমার নাম্বারটা নিয়ে ফোনে সেভ করে রাখার কারণেই তার নামটা ভেসে উঠেছে।
.
বিকেলে সোমাকে দেখা করতে বলে তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। অবশ্য আমাদের ঘুরাঘুরির নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। যেদিকে চোখ যাচ্ছে, সেদিকেই দুজন হেঁটে চলেছি। চারপাশে সবুজে ঘেরা কোন জায়গায় নেই। শুধু রোদ্দুরে উত্তপ্ত হওয়া পিচঢালা রাস্তা আর ফুটপাত। ফুটপাতের ধারে ধারে কতশত দোকানপাট। এসব কিছু কয়েকদিন আগেও আমার কাছে বিরক্তিকর লাগতো। কিন্তু আজ কেন জানি সবকিছুই আমার কাছে ভালো লাগছে। ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে সোমা বললো, চলোনা একটু শপিংমল থেকে ঘুরে আসি। একটা শাড়ি কেনার ছিলো। গত সপ্তাহে দেখে গিয়েছি আমি।
সোমার কথাতে তার সাথে শপিংমলে গেলাম। সে শাড়ির নাম করে আরো অনেক কিছুই নিলো। মেয়েটা যখন সবকিছু নিজের শরীরে লাগিয়ে দেখছিলো, তখন তাকে এতোটাই সুন্দর লাগছিলো যে, তার দিক থেকে চোখ ফেরানোটাই দায় হয়ে গিয়েছিলো।
.
শপিং শেষে দুজনে আবার হাঁটছি। অবশ্য এবার আমার হাঁটার কোন ইচ্ছাই নেই তবুও সোমার কারণে হাঁটতে হচ্ছে আমাকে। খানিকক্ষণ হেঁটে আমি একটা রিক্সা নিলাম। দুজনে এক রিক্সাতে পাশাপাশি বসে আছি। আমাদের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভুতি কাজ করছে। জীবনে কখনো মমো ছাড়া কোন মেয়ের সাথে এক রিক্সায় যাতায়াত করিনি। আর ঘুরাঘুরি তো অনেক পরের ব্যাপার।
মনটা বারবার চাইছে সোমার হাতটা ধরি। কিন্তু কিসের যেন একটা বাঁধা কাজ করছে আমার ভেতরে। আমি না পারছি তার হাত ধরতে, না পারছি তাকে হাত ধরার কথা বলতে। সোমাকে আজকে কেন যেন অন্যরকম লাগছে। তার চোখে আমি ঘোর নেশার আভাস দেখতে পাচ্ছি। হয়তো সে আমার মনের আকাঙ্খাটা বুঝতে পেরেছে। তাইতো সে বলে উঠলো, কি হলো হাত ধরতে এতো সংকোচ বোধ করছো কেন? আমি কি বাঘ? নাকি ভাল্লুক, যে আমাকে ভয় পেতে হবে?
কথাটা বলা মাত্র সোমা নিজেই তার হাতটা আমার হাতে রাখলো। আহা! কি নরম হাত। আচ্ছা, মেয়েদের হাত এতো নরম হয় কি করে? কিন্তু এই হাত দিয়ে যখন কাউকে চড় মারে তখন তো খুব জোড়েই লাগে। তবে এখন কেন এতো নরম মনে হচ্ছে?
- কি হলো? চুপচাপ কেন? কিছু বলো। (সোমা)
- কি বলবো?
- কি বলবে, সেটাও আমাকে বলে দিতে হবে?
- হু।
- আমি তোমার কাঁধে মাথা রাখবো।
- নিষেধ করেছে কে?
- যদি কিছু মনে করো!
- তোমার এমনটা মনে হলো কেন?
- না, এমনিই।
.
সোমার বাড়ির সামনে রিক্সা থামলে সোমা রিক্সা থেকে নেমে রিক্সাওয়ালার ভাড়াটা মিটিয়ে আমাকে বিদায় জানিয়ে ভেতরে চলে গেলো।
আমি অবাক হলাম তার কার্যক্রম দেখে।আজ হঠাৎ সে রিক্সা ভাড়া দিলো কেন? এসব ভাবছি মনে মনে। ঠিক তখনই সোমার ফোন।
- কি ভাবছো হ্যাঁ?
- কই? কি ভাববো আমি?
- কেন? কিছু ভাবছো না?
- হু, ভাবছি তো বটেই।
- তোমার মানিব্যাগ আমার কাছে। হি হি হি...
কথাটা বলা মাত্রই সে ফোনটা কেটে দিলো। আমি আমার সবগুলো পকেট চেক করে দেখলাম কোথায়ও আমার মানিব্যাগ নেই। ঠিক তখনই আমার মনে হলো, যখন মানিব্যাগ থেকে বিল পেমেন্ট করার জন্য কার্ড বের করেছিলাম, তখন তো মানিব্যাগটা তার হাতে দিয়েছিলাম। পরে আর নেওয়া হয়নি।
.
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বসে আছি। ভাবলাম একটু ফেসবুকে ঢুকে দেখি, অনেকদিন হলো ঢোকা হয়না। কিন্তু আমার ল্যাপটপটা কোথায়? ল্যাপটপ খুঁজে পাচ্ছিনা। মমো ডাক দিলাম।
- মমো, মমো....
সে পাশের রুম থেকে বললো
- জ্বী ভাইয়া বলো।
- কি ব্যাপার, ও আজকে হঠাৎ করে আমাকে তুমি করে বলছে কেন? নিশ্চয় ঘাপলা আছে। (মনে মনে ভাবলাম)
- কি হলো ভাইয়া? বলো কি বলবে।
- আমার ল্যাপটপটা কই?
- ও ল্যাপটপ?
- হ্যাঁ।
- ওটাতো আমি নিয়েছি একটু।
- তুই নিয়েছিস মানে?
- তুমি দেখেছই তো, আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
- তা, তোর ফোন নষ্ট হয়েছে তো আমার ল্যাপটপ নিয়েছিস কেন?
- কত শত লোক কমেন্ট করছে আমার পোস্টে। তাদের রিপ্লাই দিতে হবেনা?
- কি?
- হু।
- যা দ্রুত আমার জিনিস আমাকে ফিরিয়ে দে। তোর বোঝা উচিত অন্যের ব্যবহৃত জিনিস অন্য কারো ব্যবহার করা উচিত নয়।
আমার কথা শুনে সে হনহন করে রুম থেকে চলে গেলো। খানিকবাদে ল্যাপটপটা নিয়ে এসে খাটের উপর ফেলে দিয়ে বললো, যে ল্যাপটপ না আবার ভাব। নিলাম না তোর ল্যাপটপ। আমি নতুন ল্যাপটপ কিনেছি। ভেবেছিলাম তোকে দেখাবো। কিন্তু এখন আর দেখাবোনা।
তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে লাফাতে সে চলে গেলো রুম থেকে।
জানি বোনটা আমার রেগে আছে অনেক। আর আমি এও জানি যে, সে কোন ল্যাপটপ কিনে নি। ততক্ষণে আমারও আর ফেসবুক চালাতে মন চাইছিলো না। তাই ল্যাপটপ টা হাতে নিয়ে তাকে দিয়ে আসলাম।
.
.
এর মাঝে অনেকদিন চলে গিয়েছে। অনেকদিন বলতে দুইটা বছর চলে গিয়েছে। মমোকে আর্দ্রের সঙ্গে বিয়েও দিয়ে দিয়েছি। সোমার সাথে আমার সম্পর্কটাও গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। কিন্তু এই দুইটা বছরের রিলেশনে আমি কখনো তার কাছে শারীরিক রিলেশনের দাবি করিনি।
আমি এখন মাস্টার্স করছি। সাথে একটা জব। অবশ্য জব না করলেও চলে।
তবুও করতে হয়। কারণ যদি কিছু না করি তবে সোমার বাসাতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে তার বাবা মা বলবে, ছেলে কি করে!
সেদিন সন্ধ্যাবেলা কফি হাউজে বসে গল্প করার সময় সোমাকে বললাম, আমরা বিয়ে করছি কবে?
আমার কথাটা শুনে তার মুখের ভাবমূর্তি পাল্টে গেলো। সে বললো, বিয়ে? আরে দেরি আছে। কেবল মাত্র তোমার আমার প্রেমের দুই বছর পূর্ণ হলো। আর এক বছর যাক, তখন দুজনে বিয়ে করবো।
আমি বললাম, সোমা আরও একটা বছর অনেক সময়। তুমি বললে, কয়েকদিনের মধ্যে তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।
- না, বললাম তো আরও এক বছর যাক।
- কিন্তু কেন?
- দুজন দুজনকে আরো একটু ভালোভাবে চিনে নেই।
- এসব কি বলছো তুমি? দুই বছরের সম্পর্কে তুমি এখনও আমাকে চিনোনাই?
সোমা আমার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে বললো, নিরব আজকে আমাকে একটু দ্রুত বাড়ি যেতে হবে।
সোমা উঠে চলে গেলো। আমি নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলাম তার সেই চলে যাওয়ার পথপানে। আমি বুঝতে পারছিনা, সোমা হঠাৎ এমন ব্যবহার করলো কেন? এর আগেও একবার তাকে বিয়ের কথা বলেছিলাম। সেদিনও সে বিষয়টিকে এড়িয়ে গিয়েছিলো। আর আজ আবারও এড়িয়ে গেলো।
.
সেদিন রাতে তাকে ফোন দিয়ে তার সমস্যার কথা জানতে চাইলাম। কিন্তু সে আমাকে তার কোন সমস্যার কথা তো বললোই না, বরং সে আমাকে কড়া গলায় অনেকগুলো কথা শুনিয়ে দিলো। সোমার এমন ব্যবহার আমাকে অবাক হতে বাধ্য করলো। তার সাথে কথা বলার সময় তাকে আমার কাছে একদম অচেনা একজন মনে হচ্ছিলো।
সে আমাকে তার সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে দিলো। আমি তার এমন ব্যবহারের কোন কারণ দেখতে পেলাম না। তাকে শুধু বিয়ের কথা বলাতে সে এমন ব্যবহার করবে আমার সাথে, সেটা আমি কখনও কল্পনাতেও ভাবিনি।
পরদিন সকালে মমো বাড়িতে বেড়াতে আসলো। এসেই সর্বপ্রথম সে আমার সাথে কথা বললো। মমোর আচরণটা এখনও সেই আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। একটুও বদলায়নি। এখনও তার সেই আইসক্রিমের বায়নাটা যায়নি। সে আমার রুমে এসে অনেক্ষণ ধরে আমার সাথে কথা বললো। আমি ভাবছিলাম একবার তাকে সোমার অমন ব্যবহারের কথাটা বলি। কিন্তু বলিনি।
মমো আমার রুম থেকে চলে গেলে আমি ল্যাপটপটা নিয়ে অফিসের একটা কাজে বসে গেলাম। খানিক পর পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের রিংটনটা আমার ফোনের না। আমি দেখলাম মমোর ফোন বাজছে। সে ভুলে বিছানার উপর ফোনটা রেখে গেছে। আমি মমোকে ডাক দিলাম, কিন্তু তার কোন উত্তর পেলাম না। হয়তো সে মায়ের সাথে কথা বলছে।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে স্কিনের দিকে তাকাতেই শক খেলাম। কারণ সোমা কল করেছে।
আমি ফোনটা রিসিভ করে চুপ করে রইলাম। অপর প্রান্ত থেকে সে বললো
- দোস্ত তোর কথা অনুযায়ী আমি তোর ভাইয়ের সাথে দুই বছর রিলেশন করেছি। কিন্তু আর একটা দিনও ওর সাথে আমি রিলেশন করতে পারবোনা। মিথ্যে রিলেশনকে তোর বোকা ভাই একদম সত্যি ভেবে নিয়েছিলো। জানিস, সে সবসময় শুধু বিয়ে বিয়ে করতো। কিন্তু সে তো জানতো না যে, এটা একটা অভিনয় ছিলো। তবে যা-ই বলিস না কেন, তোর ভাইটা অনেক ভালো। সে কখনও আমার শরীরের দাবি নিয়ে আমাকে ভালোবাসেনি। তোর প্লানটা তো সম্পন্ন করলাম। এখন দেখিস, সে আর কখনও তোকে ভুলেও মদন নামে ডাকবে না। তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করবেনা। দেখবি সে একদম চুপচাপ হয়ে যাবে।
কি রে কথা বলছিস না কেন? হ্যালো, হ্যালো...
ফোনটা কেটে দিলাম আমি। আমার ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে যে, সামান্য একটা কথার জন্য মমো আমার সাথে এমনটা করতে পারলো। যেই বোনকে আমি নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি। সেই বোনই কিনা আমার সাথে এমন একটা খেলা খেলতে পারলো।
চারিদিকে সবকিছু অন্ধকার মনে হতে থাকলো। রুমের মধ্যে থাকলে আমি দম বন্ধ হয়ে মরে যেতে পারি। তাই রুম থেকে বের হয়ে বাইরে গেলাম। টঙ দোকান থেকে পাঁচ প্যাকেট সিগারেট কিনলাম। দামি সিগারেটের নাম জানা না থাকায় দোকানদার মামাকে বললাম, মামা সব থেকে বেশি দামি সিগারেট দিও।
দোকান থেকেই একটা সিগারেট ধরালাম। এক টান দিতেই ধোয়াতে বুকটা ভরে গেলো আমার। মনে হচ্ছিলো আমার দমটা যেন বের হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎই পেছন থেকে কে যেন বলে উঠলো, কি রে তুই সিগারেট ধরলি কবে? প্রেমে ছ্যাকা ট্যাকা খাইছিস নাকি?
আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, আকাশ। সে খানিক্ষণ মজা নিলো আমার সাথে। তারপর দুইটা সিগারেট নিয়ে সেও চলে গেলো।
আমি রুমে না গিয়ে সোজা ছাঁদে চলে গেলাম। প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হচ্ছিলো সিগারেট টানতে। কিন্তু কিছুক্ষণ টানার পরেই খুব সুখ অনুভুত হতে থাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল চলে আসলে মমো আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ছাঁদে আসে। এসে দেখে আমি সিগারেট টানছি। সে অবাক চাহনিতে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ভাইয়া তুই এসব খাস?
আমি তার কথার কোন উত্তর দিলাম না।
সে আবারও বললো, কি হয়েছে তোর? এমন মনমরা লাগছে কেন তোকে?
আমি তবুও কিছু বললাম না। সে আমাকে অনেক্ষণ ধরে একই প্রশ্ন করে করে হাঁপিয়ে গেলো। যখন সে ছাঁদ থেকে চলে যেতে লাগলো তখন তাকে বললাম, ফ্রিজে তোর জন্য আইসক্রিম রাখা আছে।
সে চলে গেলো।
মিনিট বিশেক পর সে আবারও ছাঁদে এলো। এসেই আমার পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইলো সে। আমি তাকে উঠিয়ে বললাম, কি করছিস এসব? পা ধরছিস কেন? আর কিসের ক্ষমা? তুইতো এমন কোন কিছু করিস নি যে, যার জন্য তোকে ক্ষমা চাইতে হবে। তুই যা করেছিস ঠিকই করেছিস। আসলে দোষটা আমারই ছিলো। তোর মতো এতো সুন্দর একটা মেয়েকে খামোখা মদন বলতাম, বকা দিতাম। শুধু শুধু তোকে জ্বালাতাম। আমি ক্ষমা চাচ্ছি তোর কাছে।
মমো কান্না করতে থাকলো।
আমি জানি এই কান্নাটাও তার একটা অভিনয়, আসলে রুপবতী মেয়েরা সব এমনই হয়।
তারা রুপেতে যেমন সুন্দর, গুণেতেও তেমনই।
আবার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতেও তারা সেরা, তাদের অভিনয়গুলোও বেশ চমৎকার এবং নিখুঁত। তাদের দ্বারা সবকিছুই সম্ভব।
স্যালুট জানাই মমো, সোমার মতো সকল রুপবতীদের।
©somewhere in net ltd.