নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেমালাপ

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২১

প্রেমালাপ
পর্ব-৫ (অন্তিম পর্ব)
.
তাহলে কি নিশাতের কথায় ঠিক? কালকে দুইটা বিয়ে হতে যাচ্ছে!
.
গভীর রাত। চারিদিকে বিয়ের উৎসব। হৈ চৈ, গান বাজনা, সবকিছুতে ছেঁয়ে গিয়েছে পুরো বাড়ি। নিরব ভাবনার সাগরে ডুবে আছে। কিনারা খুঁজতে গিয়ে সে বারবার অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। সে একবার ভাবছে সোমার সাথে সে এই বিষয়ে কথা বলবে। কিন্তু সে কথাটা বলবে কিভাবে? কথা বলতে গেলেই তো যত বাধা বিপত্তি তার। নিরব নিজের রুম থেকে বের হয়ে ছাঁদের দিকে পা বাড়াতেই সোমা সামনে এসে যায়।
- সোমা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো। (নিরব)
- হু, করো।
- একটু এদিকে এসো।
- হু, এবার বলো।
- মা হঠাৎ তোমাকে শাড়ি পছন্দ করতে বললো কেন? আর আমাকেই বা পাঞ্জাবি পছন্দ করতে বললো কেন?
- সেটা জানিনা, তবে...
- তবে কি?
- তুমি একটু এখানে দাঁড়াও, আমি যাবো আর আসবো।
সোমা ছাঁদে না গিয়ে তার রুমের দিকে যায়।
নিরব মনে মনে ভাবে, তবে কি? সোমা কি বলতে চাচ্ছে? অবশ্য কালকে সোমার আর আমার বিয়েটা হলে মন্দ হয় না। আর না হলেও মন্দ হয় না।
সে চুপচাপ সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। পাঁচ মিনিট যায়, দশ মিনিট যায়, তবুও আসে না সোমা। নিরব সোমার রুমের দিকে যেতেই সোমা রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। এসেই সে বলে
- এটা তোমার জন্য।
- কি এটা?
- এর মধ্যে শেরওয়ানি আছে দুইটা।
- শেরওয়ানি দিয়ে কি করবো?
- হাদারাম কালকে পড়বে তুমি এটা?
- আমি?
- হ্যাঁ, তুমি।
- কিন্তু শেরওয়ানি কেন?
- অতো কিছু বলতে পারবো না। এটা কালকে পড়তে হবে তোমার। এটাই শেষ কথা। এবার সোজা রুমে যাও, নয়তো ছাঁদে এসো।
- ছাঁদে কেন?
- হাডুডু খেলতে গাধা।
- হুম।
- কিসের হুম?
- হাডুডু।
.
পরদিন ভোর বেলা কারো ডাকে নিরবের ঘুম ভাঙে। কে যেন বারবার দরজায় টোকা দিচ্ছে। আর তাকে ডাকছে। কাঁচা ঘুমটা নষ্ট হওয়াতে নিরবের মেজাজটা গরম হয়ে যায়। বাসায় কলিংবেল থাকতে কোন মূর্খ দরজায় টোকা দেয়? চোখ মুছতে মুছতে সে দরজার কাছে এগিয়ে যায়।
দরজা খুলতেই দেখে নিশাত দাঁড়িয়ে আছে। নিরব কিছু বলতে গিয়েও বলে না।

- কিরে নিজের বিয়ের খবর শুনে যে মনের সুখে ঘুমের অতলে ডুবে আছিস। (নিশাত)
- মানে?
- বিয়ের দাওয়াতটাও দিলি না!
- কিসব আবল তাবল বলছিস এই সাত সকালে। যা এখন, ঘুমাতে দে আমাকে।
- হুম, ঘুমা ঘুমা। যেন বিয়ের আসরে তোর ঘুম না ধরে।
নিরব আর কিছু না বলে দরজা লাগিয়ে দেয়। এই ছেলেটা বড়ই অদ্ভুত। কোথা হতে কখন এসে হাজির হয়, উপরওয়ালা জানেন। আর আসার আগে কোথ থেকে যে এসব অদ্ভুত খবর নিয়ে আসে সেটা অকল্পনীয়। নিরব নিশাতের কথা মাথায় নিয়ে ভাবতে থাকে আবারও। অতি সাধের ঘুমটা তার কেঁটে যায়।
.
এই বর এসেছে, বর এসেছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এমন আওয়াজে নিরব গেটের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই বরের গাড়ি চলে এসেছে। ছেলেটা গাড়ি থেকে নামতেই নিরব থমকে যায়। আরে এটাতো নিশান।  নিশাতের খালাতো ভাই। তবে কি এই কারণে নিশাত এখানে? হয়তো হবে তাই। আর তা না হলে সে এখানে কি করতে এসেছে। তাকে তো আমন্ত্রণও করা হয়নি বাড়িতে।

অনেক্ষণ ধরে নিরব সোমাকে খুঁজে যাচ্ছে। কিন্তু পাচ্ছেনা। সোমার রুম, ছাঁদ, যেখানে যেখানে তার থাকার কথা, সব জায়গাতে খোঁজা শেষ। হঠাৎ তার চোখ যায় কনের স্টেজের দিকে। সেখানে দুইজন মেয়ে বউ সেজে বসে আছে। নিরব অবাক হয়ে যায়। দুইজন মেয়ে কেন সেখানে!
সে স্টেজের দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে তার মা বলে ওঠে, কই যাস তুই? এদিকে আয়। আর আজ আবার শেরওয়ানি পড়েছিস কেন?
নিরব আমতা আমতা করে উত্তর দেয়, সোমা পড়তে বলেছিলো। তার মা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে, যখন আমি তোকে এটা পছন্দ করতে বললাম, তখন তো ভাব দেখালি। নিরব অবাক হয়ে বলে, তখন তো তুমি পাঞ্জাবির কথা বলেছিলে। আমি তো ভেবেছিলাম সাধারণ কোন পাঞ্জাবি হবে হয়তো। নিরবের মা মুখে হাসির রেখা ধরে রেখেই বলে, তোকে তো বেশ মানিয়েছে এই সাজে। তোকে দেখে মনে হচ্ছে আজ তোরই বিয়ে। নিরব মাথা নিচু করে নেয় তার মায়ের কথা শুনে। তার মা বলে, আয় আমার সাথে।
.
নিরব দরজায় নক করেই যাচ্ছে, কিন্তু সোমার দরজা খোলার কোন নাম গন্ধও নেই। পুরো ১২ মিনিট পর সোমা দরজা খুলে দেয়। নিরব রুমে ঢুকতেই সে তাকে সালাম করে। তারপর আবার তার আসন ফুলসজ্জিত বিছানায় গিয়ে বসে পড়ে চুপটি করে।
নিরব মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সেদিকে। যেন হাজার ফুলের মাঝে একটি ফুটন্ত গোলাপ।
ও হ্যাঁ, বিয়ের আসরে যে দুইটা মেয়ে বউ সেজে বসে ছিলো। তার একটা সোমা, আর অন্যটা রুমা। সোমা জানতো আজকে দুইটা বিয়ে হবে। কিন্তু নিরব জানতো না।

নিরব ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় ফুটন্ত গোলাপটির আহ্বানে। বউয়ের সাজে সাজলে বোধ হয় প্রতিটি মেয়েকেই এমন অপরুপা লাগে! নিরব তার চোখ দুটো কিছুতেই সরাতে পারছে না সেদিক থেকে।
- কি দেখো অমন হা করে? (সোমা)
- একটি সদ্য ফুটন্ত গোলাপকে।
নিজের বরের মুখে সোমা তার রুপের এমন প্রশংসা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে বলে
- আজও কি তুমি তোমার কাব্যিক ভাষায় আমার সাথে ভালোবাসা বিনিময় করবে?
- কেন, কাব্যিক ভাষা ভালো লাগে না তোমার?
- ভালো তো লাগে, তবে মাঝে মাঝে বুঝিনা তোমার কথা।
- না বুঝলে বুঝিয়ে দেবো ধীরে ধীরে। 
- যাহ দুষ্টু কোথাকার।

সেদিনের পর থেকে আর তাদের মাঝে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তারা এখন সবসময় তাদের প্রেমালাপনে ব্যস্ত থাকলেও কেউ ভুলেও তাদের ডাক দেয় না। অবশ্য সেদিন নিশাত সত্যই বলেছিলো, বিয়েটা করে ফেল। দেখবি কেউ আর তোদের প্রেমালাপের মাঝখানে হুট করেই হাজির হবেনা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০২

রাজীব নুর বলেছেন: প্রেমালাপ মানে সময়ের অপচয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.