নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার তাকে নিয়ে লেখা প্রথম গল্প

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৭

তোমাতে বিভোর আমি
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
সবার চোখের মনি হতে হলে সর্বপ্রথম যে কাজটি করা উচিত, তা হলো "এমন কিছু করা, যার মাধ্যমে খুব সহজেই সকলের দৃষ্টিগোচর হওয়া যায়।" হয় আপনি অধিক ভালো হোন নয়তো অধিক খারাপ হোন। কিন্তু কখনো মধ্য জায়গাতে অবস্থান করবেন না।

দিনটা ছিলো ৩১ অক্টোবর। ভার্সিটির ক্লাসের প্রথম দিন ছিলো সেটা। সকাল ৯ টার সময় অরিয়েন্টেশন ক্লাসে সবাইকে উপস্থিত হতে হবে। কিন্তু আমি সেদিন ঠিক সময়ে উপস্থিত হতে পারিনি। ঐ যে লোকমুখে শোনা যায় না, যে "পূর্ব পরিকল্পিত কাজ সাধিত করতে যে বা যারা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয়, সে বা তারাই উক্ত কাজটি সবার শেষে সম্পন্ন করে। আমার বেলাতেও ঠিক তেমনটাই হলো।

বাসা থেকে বের হয়ে মিনিট পাঁচেকের পথ পায়ে হেঁটে মিরপুর-১ ওভারব্রিজ পার হয়ে দক্ষিণ দিকের রাস্তাটাতে গিয়ে দাঁড়ালাম। গন্তব্য আমার "ফার্মগেট, তেজগাঁও কলেজ।" এখান থেকে হাতে গোণা তিনটা বাস ফার্মগেট যায়। তন্মধ্যে "তানজীল আর নিউ ভিসন" এই দুইটা বাসের ভাড়া কম। আরেকটা আছে দিশারী, যেটাতে হাফ পাস নেই। স্টুডেন্ট আর এমনি মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই সেই বাসে। আবার কিন্তু সেই বাসটাতে ভাড়াও বেশি নেয়। অবশ্য তখন সবে মাত্র ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। সাথে স্টুডেন্ট কার্ডও নেই যে, অর্ধেক ভাড়া দিয়ে যাবো। তাই তিনটা বাসের মধ্যে যে বাস আসবে সে বাসে করেই ভার্সিটিতে যাবো, এই উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে আছি বাসের অপেক্ষায়।

দাঁড়িয়ে আছি তো আছিই। কোনো বাস আসে না। আমার মতো শত শত মানুষের সমাগম সেখানে। সবার ভাবসাব দেখে আমার মনে হলো বাস আসলে বোধ করি সবাই উঠতে পারলেও অন্তত আমি আর উঠতে পারবো না। কেননা খানিক আগে গাবতলীর একটা বাস আসার সাথে মানুষের যেসব কার্যকলাপ চক্ষুগোচর হলো, তা বলার বাইরে। ঠেলাঠেলি, মারামারি, চাপাচাপি করে যে যার আগে উঠতে পারছে, উঠছে। জোর যার মুল্লুক তার।
প্রায় পনেরো মিনিট অপেক্ষা করার পর একটা বাস আসলো। আমি দৌড়ে গিয়ে বাসে উঠতে যাবো, ঠিক সেসময় একজন মুরুব্বি করে লোক বলে উঠলো, বাবা এই বাসের জন্য আমরা এতক্ষণ যাবত লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। তুমিও গিয়ে লাইনে দাঁড়াও।
মুরুব্বির কথা শুনে আমি হাঁ হয়ে গেলাম। বলে কি ইনি! আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি বিশাল বড় লাইন। পরপর দুইটা লাইন। আমি লাইনে দাঁড়ানোরত একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা ভাইয়া এতো বড় বড় দুইটা লাইন করার কারণ কী? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, ভাই বাসের সংকট দেখা দিয়েছে। ফার্মগেটের বাস মাত্র তিনটা। তার মধ্যে এটা হলো (যেটাতে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন) নিউ ভিসন আর ঐটা হলো দিশারীর লাইন।

আমি অসহায় চোখে আবারও লাইন দু'টোর দিকে তাকালাম। নাহ, লাইনে দাঁড়ালে এ জন্মে আর ঠিক সময়মতো অরিয়েন্টেশন ক্লাসে উপস্থিত হতে পারবো না। বিকল্প কোনো উপায় খুঁজে বের করতে হবে আমায়। হঠাৎই মাথায় বুদ্ধি এলো। আরে লেগুনাতে চড়ে গেলেও তো হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। ঘুরে রাস্তার এপাশে এসে মিরপুর-২ এর একটা বাসে উঠে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন নামলাম। ওখান থেকে দক্ষিণ দিকের গলিতে ঢুকে লেগুনা স্ট্যান্ডে গেলাম। ঠিক তখনই শান্ত নামের একটা বন্ধুর ফোন। শান্ত ছেলেটার সাথে ভর্তি হওয়ার দিন দেখা হয়েছিলো। আমার পরের রোলটাই তার। সেও মিরপুরে থাকে। সে আমাকে বলেছিলো, অরিয়েন্টেশনের দিন যেন আমি আর সে একসাথে যাই। সে তাঁদের "ষাট ফিট" যেতে বলেছিলো আমাকে। আর আমি কিনা সেটা ভুলে গিয়ে বাসে যাওয়ার জন্য বিশ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম।
ফোন রিসিভ করতেই সে বললো,
- নিরব কোথায় তুমি?
তুমি করে বলারও কারণ আছে। কেননা সদ্য পরিচিত হয়েছি তার সাথে। একদিনেই তো আর "তুই" সম্বোধনে ডাকা যায় না। আমি বললাম,
- এইতো বন্ধু লেগুনা স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি।
- একটা লেগুনার সামনের একটা সিট বুকিং করে পাকা মসজিদ চলে এসো।
- ঠিক আছে বন্ধু। আসছি আমি, একটু অপেক্ষা করো।
- ওকে।

ফোনটা পকেটে রেখে দাঁড়িয়ে আছি লেগুনার জন্য। এক গাদা লেগুনা সেখানে। অথচ ফার্মেগেটের জন্য একটা লেগুনাও নেই। সেখানেও দাঁড়িয়ে ছিলাম প্রায় আধা ঘন্টা। এর মাঝে শান্ত আমাকে অনেকবার কল করে বলেছে, কতো দূর বন্ধু। আমি বারবার বলেছি, ভাই ফার্মগেটের লেগুনা তো পাচ্ছি না।
অবশেষে সে বলে, বন্ধু যেকোনো একটাতে করে পাকা মসজিদ আসো। তারপর দেখা যাবে কিসে করে যাওয়া যায়। আমি "হুম" বলে ফোন রাখলাম। হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি ৮:৩৫ মিনিট। অরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হবে ৯:১০ মিনিট। তাড়াতাড়ি করে একটা লেগুনাতে চড়ে বসলাম। লেগুনা দশ সেকেন্ড সামনে এগোয় তো এক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। জ্যামে জর্জরিত সকল গাড়িদ্বয়। মাঝখানে একটু ফাঁক পেলে তবেই খানিকটা সামনে এগোনো যায়।
জ্যামে আটকে বার বার ঘড়ি দেখছি আমি। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমি পেরোতে পারছি না। শান্ত বারবার কল করে বলছে, কত দূর বন্ধু। আর আমি বলছি, এইতো আরেকটু। সে আমার কথায় বিরক্ত হয়ে বলে, হেলপারকে জিজ্ঞেস করে দেখো, কোথায় আছো এখন। আর বলো যে, উক্ত স্থান হতে পাকা মসজিদ কতদূর। আমি তার কথা মতো হেলপার তথা পিচ্চি একটা ছেলে, তাকে জিজ্ঞেস করলাম, পিচ্চি 'পাকা মসজিদ' এখান থেকে কতদূর?
সে বললো, এইতো সামনেই বেশি দূরে নয়। "বেশি দূরে নয়" কথাটি শুনতেই আমি নেমে পড়লাম। নেমেই সোজা হাঁটা ধরলাম। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আমি পাকা মসজিদ পৌঁছিয়ে দেখি শান্ত দাঁড়িয়ে আছে। তারপর একটা রিক্সা করে দু'জনে ফার্মগেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রিক্সার গতি সম্পর্কে সকলেই আশাকরি অবগত আছেন। রিক্সা চলছে তার আপন গতিতে। মাঝখানে সিগন্যালে আঁটকে পড়ার কারণে আরো মিনিট দশেক দেরি হয়ে গেলো।
ঘড়িতে তখন নয়টা বেজে পনেরো মিনিট। ইতোমধ্যে পাঁচ মিনিট চলে গিয়েছে।
আমরা নিরুপায়, ইচ্ছা করলেও অতি দ্রুত পৌঁছাতে পারবো না। ধৈর্যই এখন একমাত্র পন্থা।
.
যখন ক্লাসে পৌঁছালাম, তখন নয়টা বেজে ৩৪ মিনিট। ক্লাস ভর্তি স্টুডেন্ট। কোথায় বসবো, সে জায়গা খুঁজতে খুঁজতে একেবারে পেছনে গিয়ে বসলাম। তখনও অরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হয়নি। মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক বাবা বাঁচা গেলো।

খানিক বাদেই স্যার ম্যাডামেরা ক্লাসে আসলেন। সকলকে পড়ালেখার প্রতি উৎসাহিত করলেন এবং সাথে কিছু বাস্তবিক প্রেক্ষাপটও তুলে ধরলেন।
.
আমি জানি পাঠকেরা মনে মনে বিরক্ত হচ্ছেন। কেননা গল্পের নাম অনুসারে গল্পের কোনো মিলই খুঁজে পাচ্ছেন না আপনারা। অযথা আপনার মূল্যবান সময়টা নষ্ট করছেন। মনে মনে ভাবছেন, এটা কী কোনো প্রেমের গল্প? লেখক সাহেব গল্প খেয়ে গাঁজা লিখতে বসেছেন। আসলে যদি শুরুটা অন্যসব গল্পের মতোই করতাম, তবে আপনাদের থেকে প্রেষণাসহ কিছু সুন্দর মন্তব্যও পেতাম।
তো এতটুকু যখন কষ্ট করে পড়েছেন, তবে বাকিটুকুও পড়বেন আশা করি। আপনাদের মনের মতোই হবে, এটা আশা রাখি আমি।
.
সেদিন আর কোনো ক্লাস হলো না। শান্ত এর সাথে আগে থেকেই পরিচিত ছিলাম। সেদিন আরও একটা ছেলের সাথে পরিচিত হলাম। তার নাম ছিলো আলভী।
আলভীর ব্যাপারে পরে আসবো।
স্যার ম্যামেরা বলে দিলেন, আগামী এক তারিখ তথা নভেম্বরের এক তারিখ থেকে তোমাদের ক্লাস শুরু হবে।

ওহ হো, আপনাদের একটা কথা বলতে ভুলেই গিয়েছি আমি। অরিয়েন্টেশন ক্লাসে কিন্তু অনেক মেয়েও এসেছিলো। তাদের দিকে তেমন চক্ষুগোচর করিনি। সব অপরিচিত মুখ। ক্লাস ভর্তি স্টুডেন্টদের শোরগোল। সবমিলিয়ে সেদিনের মতো ক্লাস শেষ হয়।

পরদিন থেকে ক্লাস শুরু হয়ে গেলো। আমি নিয়মিত ছাত্র। তাই প্রত্যহই ভার্সিটি যাই। কিছুদিনের মধ্যেই আমি পুরো ক্লাসের একটা পরিচিত মুখ হয়ে উঠলাম। তন্মধ্যে একটা মেয়েকে দেখে ভালো লেগে যায় আমার। যাস্ট ভালো লাগা, অন্য কিছু নয়।
দিন যেতে থাকে, যে মেয়েকে দেখি তাকেই ভালো লাগে। আমার কী কোনো রোগে ধরেছে কিনা সেটাও আমি জানিনা।
সেদিন ক্লাসে বসে আছি। স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। ঠিক তখনই একটা মেয়ে ক্লাসে প্রবেশ করে। দেখলাম সবাই তাকিয়ে আছে সেই মেয়েটার দিকে। আমি অন্যদের থেকে ভিন্ন নই। আমিও তাকালাম। মেয়েটা দেখতে কেমন হবে, তার বর্ণনা আমি লিখে প্রকাশ করতে পারবো না। ছোট্ট করে শুধু এটুকু বলতে পারি, তার চেহারা ছুরোত বিদেশীদের ন্যায়। মনে মনেই তার নাম রাখলাম আমি "কোরিয়ান।" তার প্রকৃত নাম মারিয়াম সুলতানা মেরী। ডাকনাম মেরী।

সময়ের সাথে সাথে কোরিয়ানের সাথেও বেশ ভালো রকমের বন্ধুত্ব হলো। অনেক ছেলেদের সাথেও বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। তারেক নামে একটা ছেলে ছিলো। ছেলেটাকে দেখে বোঝার উপায় নেই, তার মনটা স্বচ্ছ পানির ন্যায় পরিস্কার! পুরো ক্লাসের মধ্যে সে অন্যতম। তার চালচলন, কথাবার্তা, সব দিক দিকেই সে পরিপাটি। এক কথায় সুন্দর যাকে বলে।
অল্পদিনের মধ্যে আমাদের বন্ধুত্বের একটা দল তৈরি হয়ে গেলো। আমি, তারেক, কোরিয়ান, আলভী, আবু নাঈম, সাথে আরও একটা মেয়ে। এই নিয়েই আমাদের বন্ধুত্বায়ন।

বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা, সময় অসময়ে আড্ডা দেওয়া, বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া, এই খাওয়া বিষয় নিয়ে অন্য একদিন লিখবো। বড় মজার মজার ঘটনা ঘটতো খেতে গেলে। অবশ্য সব ঘটনাই আমি ঘটাতাম।
সে যাক গে। এবার মূল গল্পে আসি....

সেদিন সকালবেলা ভার্সিটি গিয়ে ক্লাসরুমে বসে আছি। একটা ক্লাস শেষ হতেই কোরিয়ান আমাকে ডেকে বলে, কবি চল নাস্তা করে আসি। গল্পের মধ্যে একটা কথা লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম আমি। আর সেটা হলো, আমি অধিক মাপের পেটুক এবং ধান্দাবাজ। বন্ধুদের টাকায় নাস্তা করা আমার একটা গুনগত দিক। তাতে যে যা ভাবে ভাবুক, আমার কিছু যায় আসে না।
ভার্সিটির ক্যান্টিনে গেলাম আমরা সবাই নাস্তা করতে। ভেবেছিলাম, আমি আর কোরিয়ানই যাবো শুধু। কিন্তু না, সেখানে আমি, কোরিয়ান, একটা বড় ভাই, সাথে আরো দুইটা মেয়ে। তার মধ্যে একটা মেয়েকে দেখে আমার পছন্দ হয়ে যায়। আমি কোরিয়ানকে বলি, কোরিয়ান ওই মেয়েটাকে আমার ভালো লেগেছে। সে একটা বিদেশী মার্কা হাসি হেসে বলে, "তোর তো সব মেয়েকে দেখেই ভালো লাগে। এতে বলার কী আছে?"
খেতে বসে কোরিয়ান বললো, কার জন্য কী অর্ডার করবো। সবাই বললো, পরোটা এবং ভাজি। আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি বললাম, তোরা যা খাবি আমিও সেটাই খাবো। তবে তোরা দুইটা নিলে আমার জন্য চারটা নিবি। জানিস তো আমি পেটুক।
সবাই একটা করে পরোটা আর ভাজি নিলো। আমি নিলাম দুইটা। পরবর্তীতে আবারও নিলাম। আবারও নিলাম বলতে শুধু আমি একা না কিন্তু! খাচ্ছি খুব সানন্দে। একসময় সবাই আমার প্লেটে তাদের পরোটাগুলো তুলে দিলো। বললো, "খা, বেশি করে খা। নাক মুখ ডুবিয়ে দিয়ে খা।"
সবার দেখাদেখি আমার সেই পছন্দের মেয়েটাও তার পরোটা খানা আমার প্লেটে তুলে দিলো। আমি না না করলেও সে দিয়েই দিলো। নিজের মধ্যে তখন একটু লজ্জাই লাগলো। ধুর শালা! এ কি করলাম আমি। তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করলাম, যেখানেই খেতে বসি না কেন, ধীরে ধীরে খাবো। যেন সবার আগে আমার খাওয়াটা শেষ না হয়।
.
ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে ফুটপাতের টং দোকানে গিয়ে চা খাওয়ার সময় আমি মেয়েটাকে বললাম, তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। মেয়েটা একটু মুচকি হেসে বললো, তোর তো সবাইকেই ভালো লাগে। প্রত্যুত্তরে আমি আর কিছু বললাম না। আমার কথাটাকে সবাই মজা হিসেবে নিয়েছিলো, সেটা জানি। কিন্তু আমার সত্য সত্যই মেয়েটাকে অনেক ভালো লেগেছিলো। কিছুদিন থেকেই মেয়েটাকে লক্ষ্য  করে আসছিলাম। সে সব মেয়ে অপেক্ষা ভিন্ন। অতি নম্র, ভদ্র, চুপচাপ একটা সুন্দর মেয়ে। চেহারাটাও মাশআল্লাহ আমার মনে ধরেছে।

সেদিন ক্লাস শেষ করে বাসে চড়ে বাসায় ফিরছিলাম আমি আর আলভী। আলভীর বাসাও মিরপুরের দিকেই। আলভীর সাথে আবার সেই মেয়েটার ব্যাপক বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমি তাকে বললাম, "দোস্ত ঐ মেয়েটাকে আমার পছন্দ হয়েছে।"
সে আমার কথা শুনে অবাক চোখে চেয়ে বললো, "কোন মেয়ে?"
আমি বললাম, "ঐ যে জেবা নামের মেয়েটা।"
সেও তখন সবার মতো আমাকে বললো, "শালা লুচ্চা তোর তো সব মেয়েকেই পছন্দ হয়। বড় আপুদের থেকে শুরু করে ক্লাসের মেয়েদের পর্যন্ত। আজ জেবাকে ভালো লেগেছে, কাল অন্যজনকে ভালো লাগবে।"
আমি একটা ঝাড়ি মেরে বললাম, "ধুর বেটা। আমি সত্যই বলছি। তোর সাথে ওর ভালো সম্পর্ক, তুই যদি একটু বলতি আমার ব্যাপারে।"
তখন সে বললো, "নাম্বার নিবি তার?"
আমি বললাম, " বেটা ফোনে কথা বলে পিরিত করার পাত্র আমি না। তুই শুধু ওকে বলবি, আমি ওকে পছন্দ করি। আর আমি সিরিয়াস।"
আলভী তখন হাস্যের স্বরে বললো, "হাহাহা, কবি সাহেব অবশেষে তাহলে কোনো একটা মেয়ের প্রেমে পড়লো।"
.
পরদিন ভার্সিটি গিয়ে দেখি মেয়েটা আসেনি। মনে ব্যথা পেলাম একটু। গতকালের মতো আজও বাসের মধ্যে আলভীকে বললাম, "দোস্ত বলেছিলি মেয়েটাকে?"
সে বললো, "বলেছিলাম, তবে মেয়েটা বলেছে, সে নাকি রিলেশনে জড়াবে না। আর এখন বন্ধু আছিস তোরা বন্ধুই থাকতে চায় সে।"
আমি ওকে আবারও বললাম, "আজকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবি সে কেন ভার্সিটিতে আসেনি আর গতকালের কথাটি আজকে আবারও বলবি। ঠিক আছে?"
"হুম, ঠিক আছে।"
.
সময়ের আবর্তনে মেয়েটার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা একটু জোড়ালো হয়ে ওঠে। লাইব্রেরীতে বসে অংকের সল্যুশন করা, টং দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাওয়া, সব মিলিয়ে এক অনন্য মুহূর্ত। আবার ক্লাসের ফাঁকে তাকে আড়চোখে দেখা তো আছেই।
একদিন লাইব্রেরীতে বসে হিসাববিজ্ঞানের  অংক করার সময়, মেয়েটা আমাকে বলে, শ্রাবণ লেখাটা আইডিটা কী তোর?
আমি বললাম, এতোদিন  ঝুলিয়ে রেখে আজ বলছিস, আইডিটা আমার কি না!

সেদিন থেকে ফেসবুকে তার সাথে দু'চারটা কথা হতে থাকে। একদিন রাতে তার সাথে মেসেজিং করার সময় বললাম, জেবু একটা কথা বলার ছিলো। ওকে আমি জেবা থেকে ছোট্ট করে জেবু বলে ডাকি।
সে বলে, বল কী কথা?
আমি তখন একটু প্রস্তুতি নিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে তাকে লিখে পাঠালাম, "জেবু তোকে আমার অনেক ভালো লাগে। তোকে পছন্দ করি আমি।"
প্রত্যত্তুরে সে বলে, "কী বললি তুই? আমরা ফ্রেন্ড ওকে? এর থেকে বেশি কিছু না।"

পরদিন লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়ার সময় দেখলাম তার ব্যাগের পেছনে দুইটা পুতুল। আমি ওকে বললাম, দেখি তোর ব্যাগটা একটু। সে ব্যাগটা আমার কাছে দিলে আমি পুতুল দুইটার ছবি তুলে নিলাম। আর সেদিনই ফেসবুকে পুতুল দুইটার ছবি তুলে কবিতা লিখে পোস্ট করে দিলাম।
কবিতাটা পড়তে চাইলে আমার "প্রতিলিপি কিংবা সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে পড়ে নিতে পারেন। কেননা আমার পূর্বের আইডিটা ডিজেবল।"

তারপর থেকে তার সাথে মোটামোটি খুব ভালোই কথা হতে থাকে। ধীরে ধীরে আমি তার উপর পূর্বের থেকে আরো অধিক মাত্রায় দূর্বল হতে থাকি। একদিন রাতে আমার কী হলো আমি জানি না। আমি তাকে মেসেন্জারে বললাম, জেবু আমি তোকে পছন্দ করি, তোকে আমার ভালো লাগে।
মানে সেই পূর্বের কথাগুলোই আমি আবার পুনরাবৃত্তি করি। সে আমাকে বারবার বলতে থাকে, শ্রাবণ আমার এসব ভালো লাগে না। আমরা বন্ধু আছি বন্ধুই থাকি। আর একবারও আমাকে তুই এসব কথা বলবি না।
আমি তবুও তাকে বলতে থাকি। ঠিক সেসময়ই কোরিয়ান আমাকে কল করে।
সে বলে, "তোর সমস্যাটা কী?"
প্রথমে তার কথাটা বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পারি।
সে বলে, তুই কী শুরু করেছিস এসব? জেবা আমাকে বারবার মেসেজ দিয়ে বলছে তোর কথা। তুই ওর সম্বন্ধে কিছু জানিস? নাকি তুই ওকে চিনিস?
ওকে ডিস্ট্রাব করবি না আর। ও সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে, কবি তার জন্য নাকি পাগল। তাকে ক্লাসের কারো সাথে মিশতে দেখলে নাকি কবি জেলাস ফিল করে।

কোরিয়ান আমাকে এসব বলার পরে আমার নিজের উপরই খুব রাগ হয়। মনে মনে বলি, হায়রে! যাকে পছন্দ করি, সেই কিনা আমাকে!
.
পরদিন ভার্সিটিতে গিয়ে তাকে সরি বলি। কিন্তু সে আমার সাথে কোনো প্রকার কথা বলে না। কথা বলে না তো বলেই না।
ক্লাস শেষ করে বাসায় যাওয়ার সময় আমি তার পথ আটকে দাঁড়াই। তখন তাকে আবারও সরি বলি। তাকে বলি, আমার সাথে কথা বলছিস না কেন?
প্রত্যুত্তরে সে কিছু বলে না। অবশেষে সে আমার চাপে পড়ে কথা বলতে বাধ্য হয়। আমাদের মধ্যে আবারও পূর্বের ন্যায় বন্ধুত্ব ফিরে আসে।
বন্ধুত্বটা ফিরে এলেও তাকে কখনও আমি বন্ধুর চোখে দেখতাম না। কেননা সে আমার পছন্দের মানুষ, ভালোবাসার মানুষ।
.
দেখতে দেখতে ইনকোর্স পরীক্ষা এগিয়ে আসে। ক্লাসের সর্ব পরিচিত মুখ এবং সর্বসেরা ছাত্র হওয়ার সুবাদে পরীক্ষার সাজেশনের সল্যুশনসহ সকল কিছু আমাকে করতে হয়। সকলকে সাহায্যার্থে আমি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর সহ বড় প্রশ্নের উত্তরগুলোও সলভ করে দিই। কিন্তু অন্যদেরকে দেওয়ার আগে সর্বপ্রথম আমি আমার পছন্দের মানুষ জেবুকে দিই।
তখন তার সাথে শুধু পড়ালেখার বিষয় নিয়েই কথা হতো।
কিন্তু কথায় আছে না "প্রেমে মজিলে মন, মন উদ্বিগ্ন রয় সারাক্ষণ।"
আমার পক্ষেও তার ব্যতিক্রম হলো না। আমি ক্রমশই তার প্রতি দূর্বল থেকে অধিকতর দূর্বল হতে থাকি। পূর্বের ন্যায় তাকে আবারও আমি ভালোবাসার কথা বলে বসি। রাত তখন ১ টা ছুই ছুই। সে আমাকে বারবার বলতে থাকে, শ্রাবণ শোন ভালো হচ্ছে না কিন্তু। তুই যদি আরেকবার বলিস তো!
"তো কী?"
"দেখতেই পারবি খানিক পর।"

হ্যাঁ ঠিক তার পরপরই সে আমাকে আনফ্রেন্ড করে দেই। আনফ্রেন্ড করতেই "সৌরভ" নামে একটা বন্ধু ফোন করে আমাকে বলে, তোর সমস্যাটা কী? মাথায় প্রবলেম আছে নাকি তোর? তোকে না বলেছি ওর পিঁছে না ঘুরতে। আরে যে তোকে গুরুত্ব দেয় না, তার পিঁছে কেন ঘুরবি তুই? তোকে আজ ক্লাসে থাকতে কতবার বুঝালাম আমি। তবুও তুই কী করলি? তুই এতো রাতে ওকে বিরক্ত করছিস। ও কী বলেছে জানিস?
বললাম, " না জানি না। কী বলেছে সে?"
"ও বলেছে তোর জন্য সে রাতে ঘুমাতে পারে না। ভার্সিটি গিয়ে একটু স্বস্তি পায় না। তুই নাকি সবসময় ওকে বিরক্ত করিস।"

সৌরভ অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছে। আর আমি নির্বাক শ্রোতার ন্যায় তা শ্রবণ করছি। কথার অন্তে সে বলে, "যদি আমাকে তোর বন্ধু ভেবে থাকিস, তবে একটা কথা মন দিয়ে শুনে রাখ। মেয়েটার পিঁছে ঘুরা বাদ দে। আর যদি আমাকে বন্ধু না ভেবে থাকিস
তবে ঘুরতে থাক।"

সৌরভের প্রতিটি কথা আমার কানে বজ্রধ্বনির মতো বাজতে থাকে। তার সাথে সেদিন রাতে আমি পুরো চল্লিশ মিনিট কথা বলি। পুরো চল্লিশ মিনিটে তার কথার জবাবে আমি দুই মিনিট কথা বলেছি কিনা সন্দেহ।
ঠিক তারপর থেকেই জেবুর সাথে কথা বলা, তার পিঁছে ঘুরা বাদ দিয়ে দেই। তবে ইনকোর্স পরীক্ষা দিতে এলে তার অলক্ষ্যে তাঁকিয়ে থাকি অপলক। চোখে চোখ পড়তেই দ্রুত গতিতে আমি চোখ সরিয়ে নিই। ফেসবুকেও আর কথা হয় না তার সাথে। কেননা সে আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছে।
.
তার সকল খোঁজ খবরাদি নিতে আমি কোরিয়ানকে জিজ্ঞেস করি, জেবু কেমন আছে, সে ভার্সিটিতে আসবে কি না!"
কোরিয়ান আমাকে তার বিষয়ে কিছু সকল কিছু দেয়। সে বলে, তোর জেবু খুব ভালো আছে।"

মাঝখানে আমার আইডিটা নষ্ট হয়ে যায়। সকলের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমটা মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যায়। পরে এই আইডিটা খুলে আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করি। সবাইকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাই। কিন্তু জেবুকে পাঠাই না। কেননা, সে আমার জন্য বিরক্তবোধ করে। আমার জন্য রাতে ঘুমাতে পারে না।
.
আজ ইনকোর্স পরীক্ষার শেষ দিন। আজকেও তার সাথে কথা বলিনি। কথা বলিনি বললে ভুল হবে। শুধু বলেছিলাম, কেমন আছো জেবু?
উত্তরে সে মাথা ঝাঁকিয়েছিলো মাত্র। কিন্তু আমাকে একটিবারের জন্যও জিজ্ঞেস করেনি, তুই কেমন আছিস।

পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো। প্রতিদিনের মতো সবাই টং দোকানে দাঁড়িয়ে চা খেতে থাকে। কিন্তু আমি খাইনি। আমি চলে আসি বাসায়। জেবু আমাকে একটিবারের জন্যও বলেনি, শ্রাবণ চা খেয়ে যা। সকলের সাথে হেসে খেলে কথা বলে সে। কিন্তু আমার সাথে বলে না। অন্যের হাত ধরে টানাটানি করে সে। কিন্তু আমার দিকে একটিবারও তার হাতখানা বাড়িয়ে দেয় না। ভেতরটা তখন আমার ফেঁটে যায়। ভীষণ ভাবে ফেঁটে যায়।

আমি যে জেবুতে বিভোর,
কাঁটে না মোর প্রেমঘোর,
পাই না তার ভালোবাসা,
ভালোবাসা শুধু প্রত্যাশা।
.
জেবু তোকে আবারও বলছি, তোকে ভালোবাসিরে খুব, খুব খুব খুব।
তোমাতে বিভোর সখি, বিভোর মোর নয়ন।
চেয়ে থাকি অলক্ষ্যে তোমার, আমি এবং মন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর গল্প।

২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৩৭

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: প্রচলিত ধারায় প্রেমের শরুর কাহিনী সুন্দর করেই লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.