নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাহিনী কি সত্যি?

০৮ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ১০:২০

কাহিনী কি সত্যি
পর্ব-৪
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
তিনি মুচকি হেসে বললেন, শোনো তাহলে।
আমি নড়েচড়ে বসে বললাম, বলুন।
তিনি বলতে শুরু করলেন, "আসলে কাহিনী সত্যি টত্যি কিছুই না। এটা একটা প্রবাদ বাক্য মাত্র। আমাদের নাটোরের এক বড় ভাই প্রায়শই এই প্রবাদ বাক্যটা ব্যবহার করতেন। আমরা কিছু করি বা না করি। তিনি বলতেন, কী ছোট ভাই? কাহিনী কি সত্যি? তার কথা শুনে আমিও প্রথম দিন তোমার মতো অবাক এবং ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যেদিন তিনি আমাকে প্রথম এই কথাটি বলেছিলেন, সেদিন আমি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে একটা ছেলের মাথা ফাঁটিয়ে দিয়েছিলাম। যখন খেলার মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম, ঠিক তখনই বড় ভাইটা আমাকে বলেছিলেন, কী ছোট ভাই? কাহিনী কি সত্যি?

স্বাধীন ভাইয়ের এ কথা শুনে নাঈম ভাই হাসতে লাগলেন। তিনিও বললেন, কী স্বাধীন ভাই? তাহলে কাহিনী সত্যি!
আমি কিঞ্চিৎ হেসে বললাম, ও তাহলে এই ব্যাপার? আমি তো প্রথমদিন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কেননা প্রথম যেদিন আপনি আমাকে এই কথাটা বললেন। সেদিন বাসের মধ্যে আমি একটা ঘটনা ঘটিয়ে এসেছিলাম।
পাশে থেকে নাঈম ভাই বলে উঠলেন, কী ঘটনা?
আমি বললাম, ঘটনা তেমন কিছু না। ঐ মুরুব্বী গোছের একটা লোকের সাথে দূর্ব্যবহার করেছিলাম। অবশ্য অমন দূর্ব্যবহার করার যথেষ্ট কারণ ছিলো।
নাঈম বললেন, লোকটাকে নিশ্চয়ই শয়তানে নাড়া দিয়েছিলো।
আমি খানিক হেসে বললাম, শয়তানে নাড়া দিয়েছিলো বৈকি! নাড়া দিয়ে কাতুকুতুও দিয়েছিলো। সে ব্যাপারে যাক। এর পরেরদিন যখন স্বাধীন ভাই আর আপনি আমাকে বললেন, কাহিনী কি সত্যি? সেদিন আমি গতদিনের থেকে একটুও বেশিই অবাক হয়েছিলাম। কারণ সেদিন আমি "ভার্সিটির যেই মেয়েটাকে পছন্দ করি" সেই মেয়েটাকে প্রপোজ করতে চেয়েছিলাম। অবশ্য প্রপোজ করিনি। তবে প্রপোজের জন্য এক পা এগিয়ে গিয়েছিলাম। বাসায় ফেরার পরে যখন স্বাধীন বললেন, কাহিনী কি সত্যি! আর বললেন, তোমার বড় ভাইকে সব বলে দেবো। তখন আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভয় পাওয়ার অন্তে ভেবেছিলাম, ভাইয়া জানলো কী করে আমার ভার্সিটির কথা! আমি তো তখন জানতাম না যে, কাহিনীটা আসলে কী! তবে এই যে এখন জেনে গেলাম। এখন থেকে ভার্সিটির বন্ধুদের সাথেও মজা করবো এটা বলে।
.
আমি পরিকল্পনা করতে লাগলাম, প্রথমে কার উপর এটা প্রয়োগ করা যায়! সৌরভ, জেবু, কোরিয়ান, না না। এদের উপর পরে করা যাবে। আগে ডাইনির উপর প্রয়োগ করবো। ডাইনি হলো আমার নতুন বান্ধবী। শ্যাম বর্ণের চেহারা। দেখতে মাশআল্লাহ। তাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম, সেদিন ভেবেছিলাম, তার সাথেই প্রেম করবো। কিন্তু জেবুর জন্য করতে পারিনি। কেননা, জেবু মেয়েটাকে ভীষণ ভালোবাসি আমি। কিন্তু মেয়েটা তা কিছুতেই বুঝতে চায় না।

পরিকল্পনা জোড়ালো করে পরদিন ভার্সিটিতে গেলাম। নিজের ক্লাসরুমে ঢুকার আগে আমি ডাইনির ক্লাসরুমের সামনে গেলাম। মেয়েটা বায়ো-ক্যামিস্ট্রিতে পড়ে। আর আমি মার্কেটিংয়ে। তার ক্লাসের সামনে গিয়ে দরজা দিয়ে ইঁদুরের মতো উঁকি মেরে দেখতে চেষ্টা করলাম, সে এসেছে কিনা। কিন্তু নাহ! সে এখনও ভার্সিটিতে আসেনি। আমি তার ক্লাসরুমের সামনে থেকে চলে আসার সময় তাকে কল দিলাম। বেশ কয়েকবার রিং ঢুকার পর সে কল রিসিভ করে বাচ্চা বাচ্চা কণ্ঠে বলে উঠলো, হ্যা শ্রাবণ বল।
আমি বললাম, কোথায় তুই?
- কেন?
- ভার্সিটিতে আসিসনি?
- আসছি তো।
- কই? তোকে তো খুঁজে পেলাম না।
- তুই আমার ক্লাসরুমে গিয়েছিলি?
- হু, কোনো সমস্যা আছে নাকি?
- আরে তুই জানিস না.......
এটুকু বলেই সে থেমে গেলো।
আমি বললাম,
- কী? কী জানি না।
- না কিছু না। কোথায় তুই? সেটা বল।
- এইতো আমাদের ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছি।
- বাইরে আয়।
- বাইরে কোথায়?
- ভার্সিটির গেটের সামনে।
- কেন?
- কেন মানে?
- হ্যাঁ তাইতো! কেন মানে?
- ফাইজলামি না করে দ্রুত আয়। নাস্তা করে ক্লাসে ঢুকবো।
- ওকে, একটু অপেক্ষা কর। আমি মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে আসছি।
- আচ্ছা আয়।
.
কল কেটে দিয়ে ক্লাসে না গিয়ে উল্টো পথে হাঁটা ধরলাম। উল্টো পথ বলতে ক্যান্টিনের দিকে।
ভার্সিটির গেটের সামনে গিয়ে দেখি ডাইনি বুড়িটা চিকন ফ্রেমের একটা চশমা পড়ে হাতে বড় বড় পুতুলওয়ালা একটা ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটাকে অপরূপ লাগছে দেখতে। মন চায়ছে, কাছে গিয়ে একটু ছুঁয়ে দিই। কিন্তু সেই অধিকার এবং সাহস, কোনোটাই আমার নেই।
তার কাছে যেতেই সে বললো, চল নাস্তা করে আসি।
আমি বললাম, বিলটা কে দেবে?
- কেন? কে দেবে আবার? আমিই দেবো।
- হুম, চল।

ক্যান্টিনে বসে খাবার অর্ডার করে দু'জনে গল্প করছি। গল্প করার ফাঁকে তাকে হঠাৎ করেই বলে উঠলাম, কাহিনী কি সত্যি?
সে অবাক চোখে চেয়ে বললো, কোন কাহিনী?
আমি বললাম, ঐ যে!
- সাজ্জাদের ব্যাপারে?
- সাজ্জাদটা আবার কে?
- আমার বয়ফ্রেন্ড।

তার মুখে বয়ফ্রেন্ডের কথা শুনতেই বক্ষমাঝে শূন্যতা অনুভব করলাম। এতো সুন্দর একটা বান্ধবীর যদি বয়ফ্রেন্ড থাকে, তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় সে, যে তার কাছের বন্ধু। যেমন আমি।
আমি বললাম, তাহলে ঘটনাটা সত্যিই?
সে কী বুঝলো, না বুঝলো। বললো, "হ্যাঁ, ওর সাথে আমার এক বছরের রিলেশন। ছেলেটি অনেক ভালো। আমাকে অনেক.....

তাকে পুরো কথাটা বলতে না দিয়ে বললাম, তোর সেই ময়দা মাখা বান্ধবীটার কী খবর?
- কোন বান্ধবী?
- ঐ যে ট্যাডিবিয়ার।
- ও হ্যাঁ, ও খুব ভালো আছে।

এর মধ্যে ওয়েটার এসে নাস্তা দিয়ে গেলো। রুটির কিছু অংশ চায়ে ভিজিয়ে মুখে দিয়ে ডাইনিকে বললাম, তারপর বল কেমন হয়েছে আজকের চা রুটিটা?
সে কিছু অংশ ছিড়ে মুখে দিয়ে বললো, অস্থির দোস্ত। তোর মুখে রুচি আছে, বলতে হবে। এতো সব নিত্য নতুন খাবারের সন্ধান কোথথেকে পাস?
- নিজে নিজেই আবিষ্কার করি।
হুদাই পাম মারলাম, একদিন এক বন্ধুর সাথে খেতে বসে এভাবে চা আর রুটি খেয়েছিলাম। অনেক স্বাদ ছিলো তাতে। আর তারপর থেকেই হোটেল কিংবা ক্যান্টিনে খেতে বসলে চা রুটি খাই।

খাওয়া শেষ হলে তাকে আবারও বললাম, কাহিনী কি সত্যি?
সে মুচকি হেসে বললো, আরে বিলটা আমিই দিচ্ছি। এখানে সত্য মিথ্যার কী আছে?
আমি মনে মনে বললাম, বাহ! কাহিনী সত্য, এই ব্যাপারটা বেশ মজার তো। ডাইনিকে শুধু "কাহিনী কি সত্যি" বলাতে সে আমাকে তার বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে বলে দিলো। আর এখন আবার বিলটাও সে দিচ্ছে। যাই হোক, স্বাধীন ভাইয়ের "কাহিনী সত্যি" ব্যাপারটা মন্দ নয়।
.
ডাইনিকে বিদায় দিয়ে নিজ ক্লাসরুমের দিকে পা বাড়ালাম। ক্লাস পাওয়া পাওয়া ভাব। ঠিক সে সময় সৌরভ কল দিলো। আমি রিসিভ করতেই সে বললো, কিরে বেটা কই তুই?
আমি বললাম, এইতো ক্লাসরুমে।
- শালা আমিও তো ক্লাসরুমে। তোরে তো দেখছি না।
- চোখ পেছনে রেখে সামনে তাকিয়ে দেখ।

ততক্ষণে আমিও ক্লাসরুমের সামনে পৌঁছে গিয়েছি। সে দরজার দিকে তাকানো মাত্রই আমাকে দেখে বেন্চ থেকে উঠে এলো। আমি বললাম, বন্ধু কাহিনী কি সত্যি?
সে অবাক চোখে চেয়ে বললো, কোন কাহিনী?
আমি বললাম, ঐ যে!
সে বললো, আরে কোন কাহিনী বেটা?
- কাহিনী তাহলে সত্যিই?
- মেরীর কথা বলছিস?
- কেন মেরীর কী হয়েছে আবার?
- না কিছু হয়নি।
- তো মেরীর কথা বললি যে!
- আরে বাদ দে, এখন বল বেড়াতে যাবি কিনা?
- কোথায়?
- গাজীপুর সাফারি পার্ক।
- কে কে যাবি?
- আমরা বন্ধুরা সবাই।
- কাহিনী সত্যি?
- কিসের কাহিনী?

সৌরভের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে আমি আমার বেন্চে গিয়ে বসে পড়লাম। এর মধ্যে সে আমাকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে, "কোন কাহিনী, কিসের কাহিনী।"
কিন্তু আমি তার একটা কথাও গ্রাহ্য করিনি।

পাশের বেন্চে তাকিয়ে দেখি মেরী অর্থ্যা সেই কোরিয়ান মেয়েটা বসে আছে। সাথে জেবুও রয়েছে। মাথায় তখন দুষ্টু বুদ্ধি উঁকি দিলো আমার। আমি জেবুর কাছে গিয়ে বললাম, কেমন আছো সখি?
সে রেগে বললো, সখি কেডা হ্যাঁ?
- কই, কেউ না তো?
- তাহলে বললি যে!
- কই বললাম?
- কই বললাম মানে? মাত্রই তো বললি!
- কাহিনী সত্যি?
- কিসের কাহিনী?
- ঐ যে!
জেবু এবার একটু নড়েচড়ে বসে বললো,
- ঐ যে কী? কোন কাহিনী বল?
- ঐ বাসের মধ্যে!
- তুই জানলি কেমনে?
- হাহাহা, ওয়েট কর। সৌরভকে বলে দিচ্ছি।

হুদাই ফাপড় মেরে চলে আসলাম। বাসের মধ্যে কী হয়েছে না হয়েছে, আমি জানবো কেমন করে? তবে এই "কাহিনী সত্যি" প্রবাদ বাক্যটা প্রয়োগ করলে সব গোপন তথ্যও বের হয়ে আসে।
.
রাতে জেবু কল দিয়ে বললো, শ্রাবণ বাসের ঘটনাটা কাউকে বলিস না প্লিজ। আমি তো ইচ্ছে করে কাজটা করিনি। ভুলে হয়ে গিয়েছে।
আমি তার কথা শুনে খানিক হেসে বললাম, ওকে বলবো না। তার আগে কথা দে, আমাকে ভালোবাসবি তুই!
সে বললো, কখনই না।
তখন আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম, কাহিনী তাহলে সত্যিই!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:২৪

করুণাধারা বলেছেন: সব ভালো তার, শেষ ভালো যার! প্রথম তিন পর্ব পড়ে বিরক্ত লাগছিল ঘটনা কি জানতে না পেরে। শেষ পর্বে এসে জানা গেল, চমৎকার লেখার হাত!!!

০৮ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:৪৩

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়

২| ০৮ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম।

কাহিনি তবে সত্যি ;)

হা হা হা

আপনার কাহিনীও কিন্তু ব্লগে কাউকে বলবো না;)
=p~ =p~ =p~

০৮ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:৪৪

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: হাহাহা, ওকে বলার দরকার নেই। ভালোবাসা নিবেন প্রিয়।

৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.