নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাহিনী কি সত্যি?

০৯ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:২৯

কাহিনী কি সত্যি
অন্তিম পর্ব
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
তখন আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম, কাহিনী তাহলে সত্যিই! সৌরভসহ সবাই ঘটনাটা জেনে যাবে।
- প্লিজ শ্রাবণ, কাউকে বলিস না। কেউ ঘটনাটা জেনে গেলে তখন আমাকে উরাধুরাভাবে পঁচানো শুরু করবে।
- আমি তো সেটাই চাই।
- কী?
- কোথায় কী, কিসের কী?
- তুই না আমাকে ভালোবাসিস?
- তো?
- তো, তুই "আমাকে কেউ পঁচালে" সেটা সহ্য করতে পারবি?
- পারবো না কেন? কেন পারবো না হু? তুই তো আর আমাকে ভালোবাসিস না।
- ব্ল্যাকমেইল করছিস?
- না, কবিতা আবৃতি করছি। ও গো সখি, তোমারে দেখিবার লাগি পরাণডা মোর ছটফট করে। রাখিও তুমি বাহুডোরে অনুক্ষণ, যতন করে।
- আচ্ছা বল, কী করলে তুই ঘটনাটা কাউকে বলবি না?
- ঐ যে বললাম, আমাকে ভালোবাসতে হবে।
- পারবো না আমি।
- কেন পারবি না?
- এমনিই।
- আজ আমি দেখতে সুন্দর না বলে? আজ আমি নিম্নবৃত্ত পরিবারের ছেলে বলে?
- না, সেটা না।
- তবে কোনটা বল?
- দেখ শ্রাবণ আমরা বন্ধু আছি বন্ধুই থাকি। এর থেকে বেশি কিছু ভাবতে পারবো না তোকে নিয়ে।
- আমিও তোকে পঁচানো দেখা ছাড়া থাকতে পারবো না। শুভ রাত্রি প্রিয় সখি, ভালো থেকো। কেউ পঁচালে "শ্রাবণ" নামে একবার ডেকো।

তাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম। মেয়েটা এবার আফসোস করুক, কেন সে আমায় ভালোবাসলো না কিংবা ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দিলো না! তবে মেয়েটা বোধ হয় "কাহিনী সত্যি" এই ব্যাপারটাকে বুঝে উঠতে পারেনি। আর পারবেই বা কী করে। প্রথম প্রথম তো আমি নিজেই এই ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারিনি।
.
- তা ছোট ভাই, কাহিনী কি সত্যি?
পেছনে ঘুরে দেখি স্বাধীন ভাই দাঁড়িয়ে। আমি কিঞ্চিৎ হেসে বললাম, ভাইয়া আপনার এই কাহিনী সত্যির গুণ অনেক। আমি আমার বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে যেসব কথা জোর করেও বের করতে পারিনি। আজ তারা সেসব কথা অনায়াসেই বলে দিলো আমাকে।
স্বাধীন ভাই বললেন, কার কার উপর প্রয়োগ করেছো?
- এই দুই তিনজনের উপর।
- তাদের চেহারায় কেমন পরিবর্তন এসেছিলো?
- চেহারা পরিবর্তনের কথা আর কী বলবো? কেউ কেউ টেনশনে পড়ে গিয়েছিলো। কেউ কেউ আবার অজানা গোপন তথ্যও বলে দিয়েছিলো।
- বাহ, বেশ তো!
- হুম, একদম।
.
পরদিন সকাল সকাল ঘুম ভাঙতেই মোবাইলটা বেজে উঠলো। স্কিনে তাকিয়ে দেখি ফিমু কল দিয়েছে। ফিমু মেয়েটার সাথে পরিচয় হয়েছিলো ফেসবুকে গল্প লেখার সুবাদে। আজ থেকে বছর খানেক আগে "পরিত্যাক্ত বাড়ি" নামে একটা গোয়েন্দা গল্প লিখেছিলাম। আর সেই গল্প লেখার সময়ে ফিমুর সাথে আমার কথা হয়। "পরিত্যাক্ত বাড়ি" গল্পটা নাকি তার ভীষণ প্রিয়। সে বলতো, শ্রাবণ সাহেব এরপর যখন আরেকটা পর্ব ছাড়বেন , তখন আমাকে ট্যাগ দিবেন।
মেয়েটার সাথে কিয়ৎকাল প্রেমও করেছিলাম। আজ সকাল সকাল মেয়েটার ফোন পেয়ে কিছুটা অবাক হলাম। কিছু হয়নি তো তার? চোখ ডলতে ডলতে কলটা রিসিভ করে কানে ধরতেই সে সালাম দিলো। তারপর বললো, কেমন আছো?
আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ। হঠাৎ এতদিন পর কল দিলে যে?
- তোমাকে ভীষণ মনে পড়ছিলো।
- আমাকে আবার কারো মনেও পড়ে? হাহাহা!
- শয়তানের মতো হাসবে না একদম।
- তবে কার মতো হাসবো?
- তোমার কণ্ঠটা শুনার জন্য মনটা ব্যাকুল ছিলো খুব। এখন ভালো লাগছে অনেক।
- কাহিনী সত্যি?
- কি কাহিনী?
- ঐ যে!
- ঐ যে কী?
- ঐ যে সেদিন শুনলাম!
- তুষারের কথা বলছো?
- তুষার কে আবার?
- আমার বয়ফ্রেন্ড।

আয় হায়, মেয়ে বলে কী? তার নাকি বয়ফ্রেন্ডও আছে। শালার আমিই জীবনে কারো বয়ফ্রেন্ড হতে পারলাম না। সে যাক গে, "কাহিনী সত্যি" বলাতে এভাবে যে সে তার বয়ফ্রেন্ডের কথা বলে দেবে, সেটা ভাবতে পারিনি। "কাহিনী সত্যি" ব্যাপারটা তো বেশ মজার দেখছি। বললাম,
- তাহলে কাহিনী সত্যিই?
- হুম সত্যি। জানো সে আমাকে অনেক ভালোবাসে?
- এই ভালোবাসার কথা বলার জন্য আমাকে ফোন দিয়েছো?
- না, তোমার সাথে কথা বলতে ফোন দিয়েছি। তোমাকে এবং তোমার কণ্ঠটাকে অনেক বেশি মিস করছি।
- গুড গুড, এখন ফোনটা রাখো। বেশি মিস করলে আবার প্রেমে পড়ে যাবে। তখন কিন্তু প্রেম থেকে উঠতে পারবে না।

আমি ফোনটা রাখতে যাবো, ঠিক সে সময়ে মেয়েটা বলে উঠলো, শ্রাবণ সাহেব...
- হ্যাঁ বলো।
- ভালোবাসি।
- কাকে?
- এখন যার সাথে কথা বলছি।
- কাহিনী সত্যি?
- হ্যাঁ সত্যি।
- সত্যি হলে ফোনটা রেখে মনে মনে আমার কথা ভাবতে থাকো, কেমন?

সে কিছু বলার আগেই ফোনটা রেখে দিলাম। কী মেয়েরে বাবা? আমাকে নাকি সে মিস করে! আবার এখন বলছে ভালোও বাসে নাকি! এতো ভালোবাসা রাখবো কোথায় আমি?
.
- কী ছোট ভাই কাহিনী কি সত্যি?
পাশে তাকিয়ে দেখি স্বাধীন ভাই জেগে গিয়েছেন। চোখ ডলতে ডলতে তিনি আবার বললেন, আজকে একটা পার্টি হবে, কী বলো?
আমি অবাক নয়নে চেয়ে বললাম, এই সাত সকালে আবার পার্টির কথা এলো কোথা থেকে?
- স্বপ্নে দেখলাম ছোট ভাই।
- কী?
- হ্যাঁ, দেখলাম আজ আমরা সবাই মিলে ছাঁদে পার্টির ব্যবস্থা করেছি। খুব মজা করছি সবাই।
ভাইয়ার কথা শুনে বললাম,
- কাহিনী সত্যি?
- স্বপ্নে তো সত্যি হয়েছে। এখন শুধু বাস্তবে সেই সত্যিটা রূপায়ন করা বাকি আছে।

দাঁত ব্রাশ করে এসে মাত্রই মোবাইলটা হাতে নিয়েছি। ঠিক তখনই আসিফ ওরফে আসফুর মেসেজ পেলাম। মেসেজে সে লিখেছে "কেমন আছিস?"
আমি উত্তরে লিখলাম, কাহিনী কি সত্যি?
সে বললো, কোন কাহিনী?
- ঐ যে!
- কী?
- যা শুনলাম।
- বা*ল.....
- তাহলে ঘটনাটা সত্যিই?
সে কয়েকটা রাগের ইমুজি দিয়ে বললো,
- হ, বা*লডা সত্যি।

তার মেসেজ দেখে হাসলাম খানিকক্ষণ। বেটারে সকাল সকাল চেতায়ে দিলাম। তবে ব্যাপারটা মন্দ নয়।
.
আজকে ভার্সিটিতে সৌরভের ফর্ম ফিলাপ করতে গিয়ে দেখি সেখানে প্রচুর জনমানবের ভীড়। ভীড় দেখে মনে হচ্ছে যেন সরকারি মাল বিতরণ করা হচ্ছে। আর তারা সবাই সেগুলো নেওয়ার জন্য ভীড় জমিয়েছে। ঘটানাটা কিন্তু তার উল্টো। অডিটোরিয়ামে বসে আছি। বাইরে প্রচুর আওয়াজ। অডিটোরিয়ামই একমাত্র জায়গা, সেখানে কোনো কোলাহল নেই। খানিক বাদেই আমার ডান পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা বের করে স্কিনে তাকাতেই দেখি গুরুজি কল করেছেন। রিসিভ করে লম্বা একটা সালাম দিলাম। গতানুগতিক মত বিনিময় করে গুরুজিকে বললাম, দাদা কাহিনী কি সত্যি?
তিনি অন্য সবার মতোই বললেন, কোন কাহিনী?
- ঐ যে!
- কী?
- যা শুনলাম।
- কী শুনলে?
- তাহলে ঘটনাটা সত্যিই ছিলো!

গুরুজিকে চিন্তায় ফেলতে মনে চায়ছিলো না। তাই তাকে পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে দিলাম। তিনি ব্যাপারটা বোঝার পর হাসলেন অনেকক্ষণ ধরে। তারপর বললেন, ও এই ব্যাপার? খুব ভালো আইডিয়া। আমিও আজ থেকে প্রয়োগ করবো।
আমি বললাম, হুম প্রয়োগ করে দেখুন কী হয়। ফলাফল জানাবেন কিন্তু?

গুরুজি হলো আমার কবিতার গুরু, সামুরা ইবনে লোকমান। তিনিই আমাকে কবিতা লেখা শিখিয়েছেন। একসময় আমি ছন্দ মিলিয়ে দু'চার লাইন বাক্য লিখতাম। সেটা দেখে তিনি আমাকে নক করে বললেন, শ্রাবণ তোমার লেখার হাত খুব ভালো। তবে তোমাকে কবিতার ব্যাপারে কিছু নিয়ম শিখতে হবে।

ঠিক তখন থেকেই তিনি আমাকে কবিতা লেখার নিয়মাবলী এক এক করে শিখিয়ে দিয়ে এসেছেন। আর এই কারণে গুরুজিকে চিন্তায় না ফেলে "কাহিনী সত্যির" রহস্যটা বলে দিলাম।
.
এর মধ্যে ফেসবুকে কয়েকজন বন্ধুকে "কাহিনী কি সত্যি" বলাতে তারা বিভিন্ন প্রশ্ন করে বসেছে আমাকে। পরে তাদেরকে বলেছি, আমার টাইমলাইনে চোখ রাখতে।

সেদিন চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। মুরুব্বী গোছের চায়ের দোকানগুলোতে বয়স্ক মানুষের আনাগোণা বেশি। তারা চা খেতে বসলেই দুনিয়ার যত গল্প আছে, সব বলতে থাকে। আমরা বন্ধুরা মিলে চা খাচ্ছিলাম আর আগামী দিন কোথায় বেড়াতে যাবো তার পরিকল্পনা করছিলাম। ঠিক তখনই পাশে থেকে একটা লোক বলে উঠলেন, এসব কোট কাচারি আমার হাতের ময়লা। কথাটা শুনে আমি লোকটির দিকে তাকালাম। বয়স আনুমানিক পঁয়ত্রিশ হবে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। দেখে মনে হলো, বেডা পাক্কা ডাকাত। আমি চায়ে চুমুক দিয়ে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বললাম, আরে ওরকম আট দশটা পুলিশ অফিসার আমার পকেটে ঘুরাঘুরি করে।
লোকটি আমার কথা শুনে অবাক চোখে আমার দিকে তাকালেন। তারপর দোকানদারকে একটা সিগারেট দিতে বলে চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, সেদিন একটা পুলিশ অফিসারকে থাপ্পড় দিয়ে তার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিলাম।
লোকটির কথা শুনে বুঝতে পারলাম, বেটা পাক্কা গাঞ্জাখোর। মনে হয় গাঞ্জা খেয়ে এসেছে। আমি লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললাম, কাহিনী কি সত্যি?
লোকটি বললেন, কোন কাহিনী?
- এইযে পুলিশ অফিসারকে চড় মেরেছেন।
এবার লোকটি একটু নড়েচড়ে বসে আমতা আমতা করে বললেন, চড় মারা আর এমন কী কাজ? এতো নিত্যদিনই মারি।
- ও, আচ্ছা। তা দেখি স্যারকে তাহলে একটা কল করি। আর আপনার পাওয়ারটাও দেখি।
আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতে যাবো। ঠিক তখনই লোকটি চায়ের কাপ রেখে লুঙ্গিতে কাঁচা মেরে উরাধুরা দৌঁড়।
মনে মনে বললাম, বেটা ফাপড় তো ভালোই নিতে পারিস। কিন্তু ফাপড় নেওয়ার জায়গাটা চিনিস না।

ওদিকে দোকানদার মামা লোকটির জন্য সিগারেট বের করে দিতে গিয়ে দেখে লোকটি নেই। আমি বললাম, মামা সিগারেট এদিকে দেন। আপনার সিগারেট ক্রেতা পুলিশকে চড় মারতে গিয়েছে।
আমার কথা শুনে পাশে থাকা মুরুব্বীদ্বয় হাসতে লাগলেন। আমাকে বললেন, বাবা তোমার বাসা কোথায়?
- ঐ গলির মাথার বাসাটা।
- তুমি তো অনেক বুদ্ধিমান।
- এ আর নতুন কী?
.
রাতে ছাঁদে বসে গল্প লিখছিলাম। ঠিক সে সময় আম্মুর ফোন। আমি রিসিভ করতেই আম্মু বললেন, তোর জেবুর কী অবস্থা?
আম্মুর এই একটাই দোষ। আমি আমার ক্লাসমেট জেবুকে পছন্দ করি, এই কথাটা যবে থেকে আম্মুকে জানিয়েছি। ঠিক তখন থেকেই আমাকে ফোন করলে "আমি কেমন আছি", সেটা জিজ্ঞেস না করে "জেবু কেমন আছে" সেটা আগে জিজ্ঞেস করে। আমি আম্মুর কথার উত্তর না দিয়ে বললাম, কাহিনী কি সত্যি?
আম্মু বললেন, কোন কাহিনী?
আমি একটু মজা করার জন্য আম্মুকে বললাম, ঐ যে!
- ঐ যে কী?
- ঐ যে!
- ও, জমির কথা বলছিস?
- কোন জমি?
- যে জমি নিয়ে ঝামেলা চলছে?
- কোন জমি নিয়ে ঝামেলা চলছে?
- দক্ষিণের মাঠে যে পনেরো বিঘা জমিতে কাঁদের আলী আখের চাষ করে ঐ জমি।
- ও, তা ঐ জমিতে কী আমাদের ভাগ রয়েছে?
- হ্যাঁ রয়েছে, তবে সেটা কিছুদিন আগে জানতে পারলাম।
- তারপর?
- তারপর আর কী? জমিটা তোর নানা কাঁদেরের বাপকে চাষ করে খাওয়ার জন্য দিয়েছিলো। সেসময় নাকি তাদের অনেক অভাব অনটন ছিলো।
- ও, বুঝলাম।
- হুম, তবে ঐ জমির প্রতি আমাদের আর কোনো দাবি নেই।
- দাবি নেই মানে? পনেরো বিঘা জমি, এ কি চারটে খানি কথা নাকি?
- তাও ঠিক।
- আগে বাড়ি আসি আমি। তারপর দেখা যাবে। দলিল ঠিক আছে তো?
- হ্যাঁ আছে, তোর মামার কাছে সব দলিল আছে।
- গুড।

কোন কথা থেকে কোন কথা বের হয়ে এলো, এটা ভাবার বাইরে। "কাহিনী কি সত্যি" প্রবাদ বাক্যটা আসলেও অনেক মজার এবং সত্য উদঘাটনে বেশ উপযোগী।

- কী দাদা? কাহিনী কি সত্যি?
পেছনে ঘুরে দেখি পাশের রুমের এক ছোট ভাই সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। একটা ধমক দিয়ে বললাম,
- সিগারেট ফেল বেটা। বড় ভাইদের সম্মান করতে জানিস না?
ধমক খেয়ে ছেলেটা সিগারেট ফেলে দিয়ে আমতা আমতা করে বললো, দাদা তোমার থেকেই তো শিখলাম এই কথা।
তার কথা শুনে একটু হেসে বললাম, গুড গুড জব।
ছেলেটি বললো, স্বাধীন ভাইও দেখি এই ডায়লগ দেয়।
আমি মনে মনে বললাম, আরে বেটা এটা উনার থেকেই শিখেছি আমি।
.
কিছুদিন যেতেই দেখি আমার ফেসবুকের বন্ধু-বান্ধবীরাও তাদের বন্ধু-বান্ধবদের "কাহিনী কি সত্যি" বলা শুরু করেছে। পরে তারা সেটার স্কিনসর্ট আমাকে দিয়ে বলে, দাদা তোমার প্রবাদ বাক্যের ফল দেখো।
আমি তখন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাই।

এইতো কিছু দিন আগে স্বাধীন ভাইকে বলেছিলাম, ভাইয়া আপনার 'কাহিনী কি সত্যি' এটা নিয়ে একটা গল্প লিখতেছি।
তিনি বলেছিলেন, লেখা শেষ হলে আমাকে জানিও।

আজ সকাল সকাল স্বাধীন ভাই আমাকে বললেন, তা ছোট ভাই কাহিনী কি সত্যি?
আমি মৃদুমন্দ ভাবে জবাব দিলাম, কোন কাহিনী?
তিনি ফিক করে হেসে দিলেন। বললেন, ঐ যে তুমি নাকি গল্প লিখতেছো?
আমি বললাম, ও হ্যাঁ হ্যাঁ। আজকেই লেখাটা শেষ করে দেবো।
তিনি ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে রেখেই বললেন, ছোট ভাই তুমি এখনও দেখছি মাঝে মধ্যে "কাহিনী সত্যির" ফাঁদে পড়ে যাও।
- আরে না, কি যে বলেন না! ঐ এখন একটু আনমনা ছিলাম, তাই আরকি অমন উত্তর দিয়েছি।
- হু বুঝলাম।
.
বিকেলে একটু শুয়ে ছিলাম। ঠিক তখন আম্মু ফোন দিলো। আমি রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে,
- ভাইয়া ভাইয়া, তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আয়, এখনই আয়।
সুমাইয়ার এমন উত্তেজিত কথা শুনে একটু ভয় পেয়ে গেলাম। বাড়িতে আবার কিছু হয়নি তো? আমি বললাম,
- কী রে, কী হয়েছে? এমন করে কথা বলছিস কেন?

সে কিছু বলতে গিয়েও বললো না। শুধু ফোনটা রাখার আগে বললো, ভাইয়া আজ রাতেই বাড়ি আসবি তুই। তাড়াতাড়ি আসবি। দেরি যেন না হয়। দেরি হলে কিন্তু....

তার এই 'কিন্তু' কথাটাই আমাকে চিন্তায় ফেলে দিলো। কিন্তু কী? আম্মুর কিছু হয়নি তো? তাড়াতাড়ি শার্টটা পড়ে টেকনিক্যালের দিকে রওনা দিলাম। টেকনিক্যালে পৌঁছে সরকার ট্রাভেলসের একটা টিকিট নিলাম। রাত দশটায় বাস ছাড়বে। আমি টিকিটটা নিয়ে বাসায় আসার পথে রাস্তার ধারে একটি বৃদ্ধকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। একটা রিক্সা নিয়ে চাতকের ন্যায় চেয়ে আছেন তিনি। কেউ তার রিক্সায় উঠছে না। কেননা একজন বৃদ্ধ মানুষের রিক্সায় উঠলে গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে। আবার বৃদ্ধের কষ্টও হবে প্রচুর। আমি এগিয়ে গেলাম লোকটির দিকে। সালাম দিয়ে বললাম, আংকেল ১ নম্বর যাবেন?
আমার কথা শুনে লোকটির চোখ দু'টো জ্বলজ্বল করে উঠলো। ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, উঠেন।
প্রত্যুত্তরে আমি লোকটিকে বললাম, আংকেল আপনি পেছনে বসুন। আমি চালাই।
আমার কথাতে বোধ হয় তিনি অবাকই হলেন। আমি আবারও বললাম, বসুন না। আমি চালাচ্ছি।
.
সন্ধ্যার দিকে সুমাইয়া আবার ফোন করে বললো, ভাইয়া কতদূর তুই?
আমি বললাম, কালকে সকালে ঘুম ভাঙলে প্রথমেই আমার মুখটা দেখতে পাবি।
যখনই তাকে জিজ্ঞেস করতে গেলাম, এতো দ্রুত তলব করার কারণ কী, ঠিক তখনই সে ফোন রেখে দিলো।

রাত দশটার বাসে চড়ে নিজ শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমার একটা খারাপ অভ্যাস আছে। বাসের মধ্যে উঠলে আমার আবার ঘুম পায়। সারারাত ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলাম। মাঝখানে একবার অবশ্য ফুড ভিলেজে বাস পনেরো মিনিটের যাত্রা বিরতী দিয়েছিলো। তখনও আমি বাস থেকে নামিনি। ভোররাতে বাসের কন্ট্রাক্টর মামা বললেন, নামেন সবাই নামেন। এটাই শেষ স্টপেজ, নামেন।
আমি নেমে পড়লাম। এতো সকালে কোনো অটো সিএনজি পাওয়া যাবে না, এটা সিওর। তবুও তো একটা উপায় বের করতে হবে বাড়ি অব্দি পৌঁছানোর। পৈলানপুর মোড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চারিদিকে শুনশান নিরবতা। হঠাৎ দু একটা সাইকেল আরোহীকে দেখা যাচ্ছে। খানিক বাদে পাবনা পাকশি ইপিজেটের একটা বাস এসে থামলো। ভাবলাম, বাসে উঠে চলে যাই। কিন্তু সমস্যা হলো ঐ বাসে যত যাত্রী উঠবে এখান থেকে, সবাই মহিলা। আর মহিলা বাসে আমি একা একজন পুরুষ উঠলে অবস্থা যে কী হবে আমার, তা কল্পনার বাইরে।

ত্রিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা অটো এলো। আমি বললাম,
- মামা কোথায় যাবেন?
- মেন্টাল হসপিটাল।
- নাজিরপুর যাবেন না?
- দেহি মামা, যেনেকার লোক বেশি হবি সেনেই যাবো। (পাবনার ভাষা)

আমি উঠে পড়লাম অটোতে। নাজিরপুরের কোনো লোক না পাওয়ায় আমাকে কাঁশিপুর মোড়ে নেমে যেতে হলো। তারপর সেখান থেকে একটা সিএনজি নিয়ে বাড়িতে পৌঁছালাম। ঘড়িতে তখন সকাল ছয়টা বেজে আঠারো মিনিট। বাড়িতে ঢুকে দেখি কেউ এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি। গোয়াল ঘরের দিকে উঁকি দিতেই দেখলাম, আব্বা গরুকে খাবার দিচ্ছেন। আমি আব্বাকে সালাম দিয়ে গতানুগতিক মত বিনিময় শেষে বললাম, আব্বা হঠাৎ এতো জুরুরী তলব!
আব্বা খানিক হেসে বললেন, যা আগে বিশ্রাম কর। তারপর বলছি।

আমি আমার রুমে ঢুকে দেখি বিছানা অনেক সুন্দর করে গোছানো। বিছানা দেখেই মনের মধ্যে ঘুম উঁকি দিলো। কিন্তু পাজি বোনটার জন্য আর ঘুমানো হলো না। সে রুমে ঢুকেই বললো, কী ভাইয়া কাহিনী কি সত্যি?
বোনের কথা শুনে আমি অবাক হলাম। সে জানলো কী করে এই ডায়লগ!
সে তো ফেসবুকও চালায় না যে, আমার গল্পটা দেখে এটা শিখবে।
আমি একটু মজা করার জন্য বললাম, কোন কাহিনী?
- ঐ যে!
- ও বুঝেছি তোর বিয়ের ব্যাপারে?
- ধুর, কিসের বিয়ে? আমার কী বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি?
- তাহলে?
- আরে তোর বিয়ের ব্যাপারে।
- আমার বিয়ে মানে?
- তোকে ফোন দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসার একটাই কারণ, তোকে নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবো।

আয় হায় আমার জেবুর কী হবে? না মানে আমার কী হবে? জেবুকে না পেলে যে এ জীবন মরুভূমির ন্যায় ধূ ধূ করবে।
- তুই সিরিয়াস?
- কী মনে হয়?
- দেখ বোন সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করিস না। কী জন্যে এতো দ্রুত বাড়ি আসতে বললি, সেটা বল। আম্মু আব্বা সবাই তো ভালো আছেন। তো, কী এমন কারণ আছে! যার জন্যে এই অসময়ে বাড়ি ফিরতে বললি?
- আরে বললাম তো পাত্রী দেখতে যাবো।
- এখনই বের হ রুম থেকে।
- কেন? বের হবো কেন?
- মিথ্যা বলা একদমই পছন্দ করি না আমি।
- সময় হলেই টের পাবি। আমি মিথ্যা বলছি না সত্য বলছি!
- সে দেখা যাবে। এখন বের হ তুই।

পাজি বোনটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো। ওর মাথায় সবসময় কুবুদ্ধি ঘুরাফেরা করে। আর আরেকটা ভাবার বিষয়, ও জানলো কী করে "কাহিনী সত্যির" ব্যাপারে?
.
বিকেলে আম্মু দেখি সত্যি সত্যি আমাকে নিয়ে মেয়ে দেখতে গেলো। আমি আম্মুকে বললাম, আমার জেবুর কী হবে?
আম্মু একটা ঝাড়ি দিয়ে বললো, বিয়ে তোরে দশটা করাবো।
আম্মুর কথা শুনে আমি বাকহারা হয়ে গেলাম। আম্মু বলে কী?

মেয়ের সামনে বসে আছি। মেয়েটা দেখতে মাশআল্লাহ। তবে যতই সুন্দরী হোক, আমি এই মেয়েকে বিয়ে করবো না। আমার চাই জেবুকে। জেবু ছাড়া আমি যে মিষ্টি লেবু।
মেয়েটি বললো, আমি ছেলের সাথে একাকী কথা বলতে চাই।
মেয়ের কথা শুনে অবাক হলাম। এ মেয়ে বলে কী? সে নাকি আমার সাথে একান্তে কথা বলবে? ভাবা যায়!
মেয়েটি আমাকে তার রুমে নিয়ে গেলো। আমি রুমে ঢুকতেই মেয়েটি আহ্লাদি কণ্ঠে বলে উঠলো,
ভাইয়া
শুনেন এদিকে চাইয়া,
বলবেন ওখানে যাইয়া,
পছন্দ হয়নি এই মাইয়া।

কী মেয়েরে বাবা? নিতান্তই সাংঘাতিক। আমি বললাম, কেন? আর আপনাকে তো আমার পছন্দ হয়েছে। তো ওখানে গিয়ে মিথ্যা বলবো কেন?
মেয়েটা এবার আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে বললো, কাহিনী কি সত্যি?
আমি নিশ্চিত এই মেয়ে আমার গল্প পড়েছে। তাই আমি তাকে একটু বাজিয়ে দেখতে বললাম, কাহিনী মিথ্যা নয় বলেই ওখানে গিয়ে সত্য বলবো।
- ধুর, আপনি উল্টো কথা বলেন।
- তো সোজা কথা শিখিয়ে দেন দেখি!
- যখন বললাম, কাহিনী কি সত্যি? তখন আপনি বলবেন, কোন কাহিনী।
- আমারে কী শয়তানে নাড়ে চাড়ে? আমি মিথ্যা বলবো?

মেয়েটা আর কোনো কথা না বলে হুরহুর করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি পেছন পেছন গেলাম। তারপর আম্মুকে গিয়ে বললাম, আম্মু তোমার পছন্দটা একদম ঝাক্কাস। কবে বিয়ে করবো, সেটা বলো।
আমার কথা শুনে মেয়েটা তার মাকে বলে উঠলো, মা এই ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না।
তার মা বললো,
- কেন?
- এই ছেলে বেশি বোঝে।

মেয়ের কথা শুনে তার মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, কী বাবা? কাহিনী কি সত্যি?
আরেব্বা, মা মেয়ে দু'জনই দেখি পাকা কাঁঠাল। আমি বললাম, কাহিনী সত্যি বৈকি! আলবাত সত্যি। আপনার মেয়ের এতো বড় একটা সমস্যা। আর এই সমস্যা থাকা স্বত্বে আমি তাকে কিভাবে বিয়ে করি? মেয়েকে ডাক্তার দেখান।
আমার কথা শুনে মা তার মেয়ের দিকে চেয়ে বললেন, কিরে কাহিনী কি সত্যি?

আমার পাজি বোনটা তখন মুখ টিপে টিপে হাসছে। ইশারায় বললাম, চুপ থাক। এতো হাসি তোর আসে কোথথেকে?

মেয়ের বাসা থেকে বের হয়ে আসার সময় বললাম, শ্রাবণকে চিনো?
মেয়ে অবাক চোখে চেয়ে বললো, হ্যাঁ চিনি। কিন্তু আপনি....
তাকে সম্পূর্ণ কথাটা বলতে না দিয়ে বললাম,
- আমিই সে শ্রাবণ।
- তার মানে...
- কাহিনী কি সত্যি!
.
বাড়ি এসে আম্মুকে বললাম, সত্যি করে বলোতো বাড়ি আসতে বলেছিলে কেন?
- অনেকদিন তোকে দেখি না তাই।
- এই কথাটা আমাকে বললেই পারতে। আমি চলে আসতাম।
- তখন তুই বাহানা করতি। আজ না কাল, কাল না পরশু।
- তা ভুল বলোনি। আচ্ছা যাই হোক, মেয়েটাকে তোমাদের কেমন লেগেছে?
পাশে থেকে সুমাইয়া বলে উঠলো,
- মন্দ না, ভালোই ছিলো।
- কাহিনী সত্যি?

আমার কথা শুনে আম্মু হেসে উঠলেন, সাথে সুমাইয়াও। আমি আর বাদ যাই কিসে? আমিও হাসিতে অংশগ্রহণ করলাম।
.
উৎসর্গ: Shadhin Naim Parvej Ash Shorov সামুরা আসিফ সুমাইয়া jebun nesa maryaam

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: প্রেম ভালোবাসা ভালোবাসি ছাড়া কি গল্প উপন্যাস হয় না?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.