নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প

২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১০:৫৫


দ্বিলীপ হত্যা
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
বিখ্যাত বিজনেস ম্যান "দ্বিলীপ রায়" খুন হয়েছেন চারদিন হলো। অদ্ভূত ছিলো তার মুখাকৃতি। ব্লেডের প্রতিটা দাগ তার মুখে আড়াআড়িভাবে লেপ্টে ছিলো, হাত দু'টো শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো, হাতের প্রতিটি আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছিলো, টাখনুর নিচ থেকে তার পা দু'টোও আলাদা করা ছিলো। লোকটির খুন হওয়ার কারণ খুঁজতে গেলে খুন, ধর্ষণ, মারামারি, হানাহানি, লুটতরাজসহ বহু কারণ পাওয়া যাবে। তার ডুপ্লেক্স বাড়িটার গেস্টরুমে তাকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ "দ্বিলীপ" হত্যার খুনিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু খুনির কোনো হদিশই মিলছে না। এদিকে "দিপালী রায়" অর্থ্যাৎ "দ্বিলীপ রায়ের স্ত্রী" খুন হওয়ার পর মুহূর্ত থেকে বেপাত্তা। তিনি একাকী নিভৃতে এই বাড়িটাতে থাকতে ভয় পাচ্ছেন। সেজন্য তিনি সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে তার বাবার বাড়ি চলে গিয়েছেন। পুলিশ অবশ্য তার বাবার বাড়িতে লোক পাঠিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন। কিন্তু তেমন আশানুরূপ কোনো তথ্য তারা পাননি। এমনকি দিপালী রায়কেও খুনি বলে মনে হয়নি।
.
শ্যামপুর থানায় "নবীন" নামে একজন পুলিশ অফিসারের আগমন ঘটেছে। তিনি যে কেসটা হাতে নেন, তার শেষটা তিনি খুব শিঘ্রই করে ফেলেন। টিভি চ্যানেলে রোল পড়ে গিয়েছে দ্বিলীপ হত্যাকাণ্ড নিয়ে। জনসাক্ষাৎকারে সকলের মুখে শোনা যাচ্ছে, দেশ থেকে একটা কুলাঙ্গার বিদায় হয়ে ভালোই হয়েছে। বরং আরও কিছুদিন আগে কুলাঙ্গারটার মৃত্যু হলে বেশ ভালো হতো। নীরেশ বাবুর মতো একজন সমাজসেবীর মৃত্যু হতো না।

নীরেশ চন্দ্র, একজন বিখ্যাত বিজনেস ম্যান ছিলেন। সততার সাথে তিনি তার ব্যবসায় কার্য পরিচালনা করতেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো "দ্বিলীপ রায়।" লোকমুখে শোনা যায় দ্বিলীপ হত্যার ঠিক দশদিন আগে নীরেশ চন্দ্রকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কাঁচা বাজারের মধ্যস্থানে নৃশংসভাবে জনসম্মুখে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকারী আর কেউ নয়, বরং দ্বিলীপ রায় নিজেই।

পুলিশ এ ব্যাপারে খুনিকে ধরার তেমন কোনো সুযোগ পায়নি। শ্যামপুরের "দ্বিলীপ ভিলা" জুড়ে পুলিশের নজরদারি ছিলো বেশ কড়া। কিন্তু তিনি ঠিক সেমময় শহর থেকে একটু দূরে তার তৈরি সুবিশাল বাংলোতে অবস্থান করছিলেন। পুলিশ সে খবর পেয়ে বাংলোতে অভিযান চালায়। আর সাথে উদ্ধার করে দ্বিলীপ রায়ের মৃত দেহ।
.
দশ দিন চলে গেলো। কিন্তু দ্বিলীপ হত্যার খুনির কোনো খোঁজ মিললো না। এদিকে বিদেশ থেকে হিরোইন, ফেন্সিডিলি, মারিজুয়ানাসহ সকল নেশা জাতীয় দ্রব্যের অনুপ্রবেশও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রকাশ্যে মানুষ হত্যাও কিছুটা কমে গিয়েছে। সাথে ধর্ষণের হারও কমে গিয়েছে। যেখানে প্রতি দশ দিনে দ্বিলীপ দ্বারা পাঁচটি মেয়ে ধর্ষিত হতো। সেখানে আজ একটি মেয়েকেও ধর্ষিত হতে দেখা যায়নি।

কিন্তু আশ্চর্যজনক একটি বিষয় হচ্ছে "সরকার হতে শ্যামপুরের পুলিশ অফিসারের উপর বেশ চাপ দেওয়া হচ্ছে দ্বিলীপ হত্যার খুনিকে খুঁজে বের করার জন্য।"
অথচ যখন "নীরেশ চন্দ্র" খুন হয়েছিলেন। তখন কোনো প্রকার চাপ তো দূরের কথা, সরকার হতে কোনো নোটিশ অব্দি আসেনি। পুলিশ নিজ থেকেই কিছুদিন খুনিকে ধরার চেষ্টা করেছিলেন।
.
যেই "নবীন" একটা কেস হাতে নিলে পাঁচ দিনের মধ্যে তার সমাধান করে ফেলতো। দেখতে দেখতে তার বিশ দিন চলে গেলো। অথচ সে দ্বিলীপ হত্যার খুনির দর্শন অব্দি পেলো না। আজও নোটিশ এসেছে সরকার হতে।  সেখানে জোরপূর্বক আদেশ জারি করা হয়েছে দ্বিলীপ রায়ের খুনিকে ধরার। চেয়ারে হেলান দিয়ে মনের সুখে সিগারেট ফুঁকছে নবীন। কেননা দ্বিলীপ রায়ের খুনিকে ধরার প্রতি তার কোনো আগ্রহই নেই। গতকাল সকালে তিনি তার বাংলো পরিদর্শনে গিয়ে খুনির খোঁজ পেয়ে এসেছেন। সাথে তার অবৈধ ব্যবসায়ের কাজে নিয়োজিত সকল ব্যক্তির গোপন তথ্যও পেয়েছেন।

পুরোনো কিছু খত ছিলো সে বাংলোতে। প্রত্যেকটি খতে চুক্তিনামা সাক্ষরিত ছিলো। চুক্তিনামার সারাংশ এই বলে যে,
  "ব্যবসায়ের ফিফটি পার্চেন্ট লভ্যাংশ তোমার এবং আমার।"

নিচে সাক্ষরৃকত দু'জন ব্যক্তির নাম দেখে  নবীন প্রথমে বেশ কিছুটা অবাক হয়ে যান। তাহলে সরকার কর্তৃক "দ্বিলীপ হত্যার" খুনিকে ধরার জন্য তার প্রতি এই লোকই বারবার আদেশের নোটিশ জারি করছিলেন।

"স্যার, আপনার একটা চিঠি এসেছে।"
কনস্টেবল সুরেশ দত্ত নবীনের হাতে একটা চিঠি দিয়ে যান। নবীন খামসমেত চিঠিখানা হাতে নিয়ে দেখেন, খামে কোনো ঠিকানা লেখা নেই। চিঠিটা খাম থেকে বের করে পড়তে গিয়ে তিনি হেসে ফেলেন। কেননা দ্বিলীপ রায়ের সেই খুনিই তাকে চিঠিটা পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে লেখা ছিলো,
                           "কী করবো স্যার বলুন? জানোয়ারটার অত্যাচারে আমরা শ্যামপুরবাসি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম। সেদিন আমার আদরের বোনটাকে হারামজাদাটা ধর্ষণ করে মেরে ফেলে। আমি অধম নিরুপায় ছিলাম স্যার। পুলিশে রিপোর্ট করলে তারা আমার রিপোর্ট নেয়নি।  তাই তো তাকে আমি নিজ হাতে মেরে দিলাম। আমি জানতাম, পুলিশ কখনো তাকে তার অপকর্মের শাস্তি  দিতে পারবে না। তাই বাধ্য হয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে তাকে অাক্রমণ করি এবং সফল হই।
প্লিজ স্যার আমাকে ধরবেন না। আপনার প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা রইলো স্যার। আগামীকাল একবার থানায় আসবো আপনার সাথে দেখা করতে। কেননা আপনাকে আমার ভালো লেগেছে ভীষণ। কারণ আপনি দ্বিলীপের খুনির হত্যার কেসটা গতরাতে ক্লোজড করে দিয়েছেন।"
.
সমস্ত প্রমাণ সাথে নিয়ে নবীন এবং তার শক্তিশালী কিছু ফোর্স "তথ্য মন্ত্রীর" বাড়ি ঘিরে ফেলেন। কোর্টে বিচারকার্যে তথ্য মন্ত্রীর "মন্ত্রীত্ব" বাতিল করে তাকে ১৪ বছরের জেল দেওয়া হয়।

অপরদিকে সরকার কর্তৃক নবীনকে পুরস্কৃত করা হলে সে আয়োজিত সভায় সবার সামনে সেই পুরস্কারটি পলক কুমারের হাতে তুলে দেন, যিনি ঐ দেশদ্রোহী, অবৈধ বিজনেস ম্যান দ্বিলীপ রায়কে হত্যা করেছিলেন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১১:২৭

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: মন্ত্রী দ্বীলিপের পার্টনার ছিলেন।

খুনি ত খুনিই। তারে পুরস্কৃত করাটা বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে!

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: মনে হলো সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি দেখলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.