নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোয়েন্দা গল্প

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:১৬


স্বর্ণ রহস্য
পর্ব-২ (শেষ পর্ব)
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
মধ্যাহ্নে একটু বাহিরে বের হইয়াছিলাম। ফিরিতে ফিরিতে বৈকাল পার হইয়া গেলো। বাড়ি ফিরিয়া দেখিলাম একজন ভদ্রলোক বসার ঘরে বসিয়া আছেন। বুঝিতে বাকি রহিলো না যে, ইনিই সকালের সেই নিরেশ বাবু। মুখ ভর্তি দাঁড়ি, উস্কুখুস্কু চুল, বয়স আনুমানিক ত্রিশ হইবে।
আমাদের ঘরে ঢুকিতে দেখিয়া লোকটি উঠিয়া দাঁড়াইলেন। আদিত্য বলিলো, বসুন বসুন।
"নিতাই তুমি তিনজনের জন্য চা নিয়ে এসো।"
লোকটি আপত্তি করিয়া বলিলেন, "না না মশাই, আমি চা খাই না। যদি পান থাকে তবে একটা আনতে বলবেন।"
"আচ্ছা, নিতাই তুমি তাহলে দুইটা চা আর একটা পান নিয়ে এসো।"
নিতাই ঘর হইতে প্রস্থান করিলে আদিত্য নিরেশ বাবুকে বলিলো, "তা কেমন চলছে আপনার স্বর্ণের ব্যবসায়?"
নিরেশ বাবু আদিত্যের কথা শুনিয়া অবাক হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, "আপনি জানলেন কি করে আমার স্বর্ণের ব্যবসায়ের কথা?"
"তারপর বলুন, এখন আপনার জন্য আমি কী করতে পারি?"
"মশাই আমি একজন ক্ষুদ্র স্বর্ণ ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ে যা টাকা আয় হয়। তা দিয়ে আমার পরিবারের ভরণ পোষণ অনায়াসে চলে যায়। বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই কাটছিলো আমার দিন। কিন্তু সম্প্রতি কিছু ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে স্বর্ণ আমদানি করে কম মূল্যে বিক্রয় করছে। যা আমার ছোট্ট ব্যবসায়টির জন্য হুমকি স্বরূপ বলতে পারেন।"
লোকটির কথা শুনিয়া আমি তাঁহাকে কিছু বলিবার জন্য মাত্রই উদ্যত হইয়াছি। ঠিক তখন আদিত্য আমায় বাঁধা দিয়া নিরেশ বাবুকে বলিলো,"আপনি এককাজ করুন। বাজারে যে স্বর্ণ কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। সেগুলো কিনে সিন্দুকে ভরে রাখুন। যখন দাম বাড়বে তখন বিক্রি করবেন।"
"না না আদিত্য বাবু। তা কি করে হয়? নকল স্বর্ণ আমি কখনও বিক্রি করি না।"
লোকটির কথা শুনিয়া আমি বলিলাম, "তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন, কালভ্রম বাজারের স্বর্ণদ্বয় সব নকল?"
"ধারণা করেছি মশাই। তাছাড়া দেখুন, এতো কম দামে কেউ স্বর্ণ বিক্রি করে?"
আদিত্য কিয়ৎকাল ভাবিয়া বলিলো "তা অবশ্য মন্দ বলেননি। নিরব যাও তো আমার হরিণখানা নিয়ে এসো।"
আমি আলমারি হইতে হরিণখানা আনিয়া তাঁহার হাতে দিয়া বলিলাম, স্বর্ণের আসল নকল পরীক্ষা করবে নাকি?"
সে কোনো উত্তর না দিয়া হরিণ হইতে স্বর্ণ বাহির করিয়া নিরেশ বাবুকে বলিলো, "দেখুন তো এগুলো আসল কিনা?"
নিরেশ বাবু স্বর্ণগুলো কিছুক্ষণ এদিক সেদিক নাড়িয়া চাড়িয়া বলিলো, এ তো আসল স্বর্ণ মশাই। এগুলো বহু পুরোনো জিনিস। আপনি কোথায় পেলেন এগুলো?"
নিরেশ বাবুর কথা শুনিয়া আমি বলিলাম, "বহু পুরোনো জিনিস মানে? আপনি কী বোঝাতে চাইছেন?"
"মশাই এগুলো প্রাচীন আমলে ব্যবহার হতো। যার মধ্যে কোনো খাদ নেই।"
আদিত্য বলিলো "এগুলো বাড়ির পুরোনো জিনিস। ভাবলাম একবার আপনার থেকে পরীক্ষা করিয়ে নিই।"

খানিক বাদে আদিত্য নিরেশ বাবুকে বিদায় জানাইয়া আমাকে বলিলো, নিরব চলো আগামীকাল ঘুরে আসি।"
এরই মধ্যে নিতাই আসিয়া বলিলো, বাবু আপনাদের "চা।"
"চা আর লাগবে না। তুমি খেয়ে নিও। সন্ধ্যের পরে একটু বের হবো। রাতে জমপেশ একটা রান্না করে রেখো।"
"জ্বী বাবু।"
.
রাতে আহার করিবার পরে আদিত্যকে বলিলাম, নিরেশ বাবুর কথা কী সত্য?
"হ্যাঁ সত্য।"
"কিভাবে বুঝলে তার কথা সত্য?"
"অনুমান। সকালে বের হতে হবে কিন্তু, ঘুমিয়ে পড়ো।"
"সকালে আবার কোথায় যাবে?"
"হরিহর বাবুর আমন্ত্রণের কথা ভুলে গেলে নাকি?"
"না, তা ভুলিনি। তা কালকেই যাবে?"
"হ্যাঁ, চলো ঘুরে আসি। হাতে তো তেমন কোনো কাজ কর্মও নেই।"
"হুম যাওয়া যাক তবে।"
.
পরদিন প্রাত হইতেই আদিত্য আমাকে ডাকিয়া বলিলো, "নিরব ওঠো তৈরি হয়ে নাও। মধ্যাহ্নে রৌদ্রের উত্তাপ বাড়বে।"
ঘুম ঘুম চোখে তাকাইয়া বলিলাম, "তুমি তৈরি হও। আমি আসছি।"

দু'জনে সকাল সাত ঘটিকা নাগাদ বাহির হইলাম। মাহেন্দ্রপুরে আমার পূর্বে কখনও যাওয়া হয় নাই। আদিত্যের কথা বলিতে পারিবো না। সে যাইতেও পারে। ডিটেক্টিভ বলিয়া কথা! আমি আদিত্যকে জিজ্ঞাসা করিলাম, "তা আদিত্য মাহেন্দ্রপুরে কি আগে কখনও গিয়েছিলে?"
"হ্যাঁ, সেখানে আমার এক বন্ধুর বাড়ি আছে। এইতো বছর পাঁচেক আগে একবার গিয়েছিলাম।"
"বাহ্ বেশ তো! তা হরিহর দাশের পুরান বাড়ি পরিদর্শন করা হয়েছিলো?"
"একটা কাজে গিয়েছিলাম। তাই আর ঘুরাঘুরি করা হয়নি। কাজ শেষ হতেই সেখান থেকে প্রস্থান করেছিলাম।"
"এবার তো আর কোনো কাজে যাচ্ছো না। বরং ঘুরতেই যাচ্ছো।"
"হ্যাঁ।"

মাহেন্দ্রপুর রেল স্টেশনে নামিতেই একজন ভদ্র লোক আমাদের সমীপে আসিয়া আদিত্যের পানে চাহিয়া বলিলেন, আদিত্য রায় দত্ত? "
"জ্বী, বলুন। আমিই আদিত্য রায় দত্ত।"
"বাবু আপনাদের জন্যে গাড়ি পাঠিয়েছেন।"
লোকটির কথা শুনিয়া আমি আদিত্যকে বলিলাম, "এই লোক  কী করে জানলো যে, আমরা আসতেছি?"
"পত্র পাঠিয়েছিলাম।"
"বাহ্ বেশ তো! তা চলো তাহলে।"
"হ্যাঁ চলো।"
.
বেশ চাকচিক্যময় পুরান বাড়ি। অবশ্য তাঁহাকে পুরান বাড়ি না বলিয়া জমিদার বাড়ি বলাটাই শ্রেয়। কেননা হরিহর দাস পেশায় একজন জমিদার। কিন্তু তিনি তাঁহার উক্ত পরিচয় পত্রে উল্লেখ করেন নাই। বাড়ির গবাক্ষ পথগুলো বিভিন্ন সাজে সজ্জিত।
"আসুন আসুন, আসুন সাহেব।"
ভৃত্য ব্যক্তিটি আমাদের সঙ্গে করিয়া বাড়ির মধ্যে লইয়া গেলো।
"আপনারা এখানে বসুন। আমি বাবু মশাইকে ডেকে দিচ্ছি।"

ভৃত্য প্রস্থান করিলে আমি আদিত্যকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তুমি এর আগে এখানে কখনও আসোনি?
আদিত্য প্রত্যুত্তরে শুধু "হুম" বলিয়া আমাকে উল্টো প্রশ্ন করিয়া বসিলো।
"নিরব দেয়ালের কারুকার্যগুলো দেখেছো?"
আমি বলিলাম, "তা দেখে আর কাজ কি আমার? তার চেয়ে বরং তুমিই দেখো।"
"অনেক পুরোনো কার্য তাইনা? হয়তো বাড়িটি তৈরির সূচনা লগ্নে এসব কারুকার্য করা হয়েছিলো।"
"ঠিক বলেছেন আপনি। এগুলো আমার পূর্ব পুরুষদের তৈরি নকশা।"
হরিহর দাস কক্ষে প্রবেশ করিয়া উক্ত কথাখানা বলিয়া আমার পানে চাহিয়া বলিলেন, "আপনিই নিরব বাবু?"
আমি বিস্ময়ের চোখে তাঁহার পানে দৃষ্টি রাখিলাম। তিনি বলিলেন, আদিত্য বাবু আপনার কথাও পত্রে উল্লেখ করেছেন। আপনি একজন লেখক মানুষ। অবশ্য আপনার বই পড়ার সৌভাগ্য আমার কখনও হয়ে ওঠেনি। তবে পড়বো সময় করে।"
আমি তাঁহার কথার বিপরীতে ছোট্ট করিয়া কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিলাম। তিনি আদিত্যের পানে চাহিয়া বলিলেন, "আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো?"
আদিত্য বরাবরের মতোই প্রশ্নের উত্তর না দিয়া উল্টো প্রশ্ন করিয়া বসিলো। সে বলিলো, "আপনি যে একজন জমিদার। তা আগে বলেননি কেন?"
"নিজেকে প্রকাশ করতে চাই না তেমন।"
"আচ্ছা বেশ তো! তা কী কারণে এমন তলব করেছেন? বলুন শুনি।"
হরিহর বাবু এবার আমাদের সমীপে বসিয়া কিয়ৎকাল চুপ করিয়া থাকিয়া নিম্নস্বরে বলিলেন, "সে অনেক ঘটনা। আপনি খানিক জিরিয়ে নিন। আমি নাস্তার ব্যবস্থা করতে বলি।"
"জ্বী।"
"আগামীকাল ঘুরতে বের হয়ে আপনাকে সবকিছু খুলে বলবো।"
.
সায়াহ্নে আমি, আদিত্য আর হরিহর বাবু বসার ঘরে বসিয়া একটু গল্প করিতেছিলাম। হঠাৎই একজন ভদ্রলোক আসিয়া হরিহরকে বলিলেন, "কিরে, হবে নাকি তাশের আড্ডা?"
লোকটি সম্ভবত হরিহরের বন্ধু হইবে বলিয়া আন্দাজ করিলাম। পাশেই পানের কৌটা রাখা ছিলো। ভদ্র লোকটি সেখান হইতে একখানা পান মুখে পুরিয়া অস্পষ্ট স্বরে হরিহরকে  বলিলেন, এরা কারা?
হরিহর বাবু আদিত্যের পানে ইঙ্গিত করিয়া বলিলেন, "ইনি হলেন 'ডিটেক্টিভ আদিত্য রায় দত্ত।' আর ইনি হলেন 'নিরব।' একজন বিখ্যাত লেখক।"
দেখিলাম লোকটি কিঞ্চিৎ হাসিলেন মাত্র। হরিহর বাবু আদিত্যকে বলিলেন, আপনি তাশ খেলতে পারেন?
পাশ হইতে আমি আদিত্যের হইয়া বলিলাম, "মাঝে মাঝে একটু আধটু খেলি।"
"তো চলুন খেলা যাক কিছু সময়।"

খেলিবার মধ্যখানে কথায় কথায় জানিতে পারিলাম, ভদ্রলোকটি একজন সরকারি কর্মকর্তা। নাম "রঞ্জিত চ্যাটার্জি " কাচারি পাড়ায় তাঁহার বাড়ি। ছোটকাল হইতে তিনি আর হরিহর বাবু এক সঙ্গে বিদ্যা শিখিয়াছেন। কালক্রমে হরিহর বাবু হইয়া গেলেন 'জমিদার।' আর রঞ্জিত হইলেন 'সরকারি কর্মচারী।' অবশ্য হরিহর বাবু জমিদারিত্বটা তিনি তাঁহার পূর্ব পুরুষ হইতে পাইয়াছেন।

খেলা সম্পূর্ণরূপে শেষ না হইতেই রঞ্জিত বাবু হরিহর বাবুকে বলিলেন, "থাক, আজকের মতো উঠি। কাল আবার আসবো।"
লোকটি বড় বড় পা ফেলিয়া প্রস্থান করিলেন। কোনো জুরুরি কাজ পড়িয়া গিয়াছে, এমন মনে হইলো।
.
পরদিন আমি, আদিত্য আর হরিহর বাবু প্রাতঃভ্রমণে বাহির হইলাম। চারিপাশে বড় বড় গাছ-গাছালি। মাঝখান দিয়া অদূরে যাইবার পথ চলিয়া গিয়াছে।

"তো যে কথা বলছিলাম"
হঠাৎই পথ চলিবার মধ্যখানে হরিহর বাবু কথাখানা বলিয়া উঠিলেন। আদিত্য শুধু সম্মতিসূচক মাথা নাড়াইলো। হরিহর বাবু বলিতে আরম্ভ করিলেন।

"আমাদের বংশে পূর্ব পুরুষ হতে একটা কঠোর বাক্য এখন অব্দি চলে আসছে। পুরোনো জমিদারদের রেখে যাওয়া স্বর্ণ যদি এই জমিদার বাড়ি থেকে কোনোভাবে অন্যত্র চলে যায়। তবে সেই বাড়িতে থাকা বর্তমান জমিদারের দ্রুত পতন হবে।"

এটুকু বলিয়া তিনি কিঞ্চিৎ থামিলেন। অতঃপর আবারও বলিতে আরম্ভ করিলেন।
"এইতো বেশ কিছু দিন হবে। লোহার সিন্দুক থেকে সকল স্বর্ণ চুরি গেছে। অবশ্য আমি তা জানতাম না। যদি না আমার ভৃত্য আমাকে খবরটা দিতো।"

কথার মধ্যখানে আদিত্য বলিয়া উঠিলো, যিনি আমাদের স্টেশন হতে রিসিভ করেছিলেন, তার কথা বলছেন?
তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। সে আমাকে জানালো সিন্দুক থেকে নাকি স্বর্ণ চুরি গেছে। "কী করে চুরি গেলো" সেটা জিজ্ঞেস করতে সে আমাকে বললো, সন্ধ্যের সময় দেখলাম সিন্দুক রাখার কক্ষ খোলা। আপনাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করায় আপনি জানালেন,  আপনি সেখানে যাননি।
ওর কথা শুনে মশাই আমি ক্ষিপ্র গতিতে সিন্দুক কক্ষে প্রবেশ করলাম। গিয়ে দেখি স্বর্ণের বাক্সটি মেঝেতে পড়ে রয়েছে। বাক্সের তালা খোলা। ভৃত্যও ছিলো আমার সাথে। কিন্তু একটা বিষয় কী জানেন? সিন্দুক কক্ষের চাবি সবসময় আমার সাথেই থাকে।

হরিহর বাবু এবার তাঁহার চাবির গোছাখানা বাহির করিয়া আমাদের দেখাইয়া বলিলেন, এই দেখুন মশাই চাবি। সবসময় সাথে করেই রাখি। কিন্তু তবুও কিভাবে চুরি গেলো আর কে চুরি করলো, তা বুঝে উঠতে পারছি না।

হরিহর বাবুর কথা শুনিয়া তাঁহাকে বলিলাম,  আপনার কাউকে সন্দেহ হয়নি?
তিনি জবাব দিলেন, না তেমন কাউকে সন্দেহ মনে হয় না। শুধু....
"শুধু কী?"
"শুধু ঐ ভৃত্যকে ছাড়া।"
"সে কতদিন হলো কাজ করে আপনার বাড়িতে?"
"এইতো মশাই বছর দশেক হবে। আমি তাকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম, তুমি নিয়েছো কিনা। কিন্তু সে বলে, সে নাকি নেয়নি।"

সকল কথা শুনিয়া আদিত্য বলিলো, আপনার বাড়িতে কি আর কোনো স্বর্ণ কিংবা মূল্যবান কিছু আছে?
হরিহর বাবু কিয়ৎকাল ভাবিয়া বলিলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ আছে। স্বর্ণের তৈরি একটা বিস্কুট রয়েছে। যা আমি বছর খানেক আগে বানিয়েছিলাম।

হঠাৎই আদিত্য দাঁড়াইয়া গেলো। বলিলো, "চলুন, অনেক্ষণ তো হাঁটা হলো। এবার বাড়ির দিকে ফেরা যাক।"
"বাবু, চুরি যাওয়া স্বর্ণ কী ফেরত পাবো?"
"হ্যাঁ পাবেন।"
.
গতদিনের মতো আজও রঞ্জিত  বাবু আসিলেন তাশ খেলিতে। আমি হরিহর বাবুকে পূর্বেই সকল কথা শিখাইয়া দিয়াছিলাম। আদিত্য ইশারায় তাঁহা আরম্ভের জন্যে আমাকে ইঙ্গিত করিলো। আমি বলিলাম, তা হরিহর বাবু আপনার কতখানি স্বর্ণ চুরি গেছে?
"কতখানি কী মশাই? পুরো সিন্দুক খালি হয়ে আছে। এখন তো আমার স্বর্ণের
বিস্কুটটা নিয়েও ভয় হচ্ছে। না জানি কখন সেটাও চুরি হয়ে যায়।"

এরই মাঝে রঞ্জিত বাবু একবার পানের কৌটা হইতে পান মুখে লইলেন। তাঁহার দিকে ভালো করিয়া চক্ষুগোচর করিলাম। নাহ! তাঁহার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

হরিহর বাবু বলিলেন, তা আদিত্য বাবু সোনার বিস্কুটটা রাখবো কোথায়?
আদিত্য কিঞ্চিৎ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলো, সহজলভ্য স্থানে রাখুন। যাতে চোর কখনও বুঝতে না পারে আপনি তা কোথায় রেখেছেন। কেননা চোরেরা সবসময় গোপন স্থানে জিনিসপত্র খোঁজে। তারা সদরে রাখা জিনিসের দিকে একবার তাকিয়েও দেখে না।

এই একই কথা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সকলের তরেই জ্ঞাত করা হইয়াছে। সাথে আরেকটি কথা বলা হইয়াছে, হরিহর বাবু হপ্তা খানেকের জন্যে বাহিরে ভ্রমণে যাইবেন।

তাশের আড্ডা শেষ করিয়া তিনি আদিত্যকে বলিলেন, আমি চাচ্ছিলাম আমার শয়নকক্ষে বিস্কুটটা রাখতে। এতে আপনার মতামত কী?
আদিত্য বলিলো, রাখুন।  বরং সেটাই নিরাপদ হবে। সাথে আপনার কোনো বিশ্বস্ত লোক থাকলে, তাকে সেটার পাহারা দিতে বলবেন।
"হ্যাঁ, সেটাই করবো মশাই।"
বলিয়া হরিহর বাবু তাঁহার সেই স্বর্ণের বিস্কুটখানা হাতে লইলেন। শয়নকক্ষের পর্যাঙ্কের সমীপে গিয়া তিনি মাথা রাখিবার জায়গাতে একটা বাক্সে তাঁহা যতন করিয়া রাখিলেন। সঙ্গে ভৃত্যকে ডাকিয়া বলিলেন, এখানে আমার সোনার বিস্কুটটা রেখেছি। তুমি খেয়াল রেখো একটু। আমি আদিত্য বাবুর সঙ্গে তাদের অঞ্চলে ঘুরতে যাবো হপ্তা খানেকের জন্যে।

ভৃত্য মাথা নাড়িয়া সম্মতি পোষণ করিলে আমরা সে ঘর হইতে প্রস্থান করিলাম। রঞ্জিত বাবু তাঁহার বাড়ির পানে হাঁটা ধরিলেন। ভৃত্য নিজের কাজে ব্যস্ত হইয়া পড়িলো।
.
পরদিন সকাল সকাল হরিহর বাবু বাড়ির সকলের নিদ্রা ভঙ্গ করিয়া বলিলেন, তোমাদের যার যে কাজ, সে কাজ গুলো মন দিয়ে করবে। আমি বের হচ্ছি। ফিরতে দিন পনেরো লেগে যেতে পারে। উত্তরের বাগানে কিছু ফলের চারা লাগানো আছে। সেগুলোর যথাযথ পরিচর্যা করবে।

সকাল দশ ঘটিকা নাগাদ আমরা বাহির হইলাম জমিদার বাড়ি হইতে। পথে হরিহর বাবু আদিত্যকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আদিত্য বাবু বিস্কুটটা যদি চুরি হয়ে যায়?
আদিত্য কিঞ্চিৎ হাসিয়া বলিলো, চোর ধরার জন্যই আপনাকে আপনার স্বর্ণের বিস্কুটটা সদরে রাখতে বললাম। আর আমরা এখন কোথাও যাচ্ছি না।

হরিহর বাবু অবাক হইলেন। চোখে মুখে তাঁহার বিস্ময়ের ছাপ। তিনি বলিলেন, কোথাও যাচ্ছি না মানে?
আমি বলিলাম, আমরা ঠিক সন্ধ্যের আগে আবার আপনার জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করবো।
পাশ হইতে আদিত্য বলিলো, আপনার ঘরের খিড়কির দরজা দিয়ে আমরা আপনার ঘরে প্রবেশ করবো। চোর আপনার অবর্তমানের সুযোগটা নিশ্চয়ই কাজে লাগাবে। সেটা আজ হোক কিংবা কাল।
"আদিত্য বাবু, স্বর্ণ পাবো তো?"
আদিত্য উত্তর না দিয়া বলিলো, "আপনি আপনার ঘরের খিড়কির দরজা ভেতর থেকে খুলে রেখেছেন তো?
"আপনি যেমন বলেছিলেন, তেমনটাই করেছি।"
.
সন্ধ্যের পরপরই আমরা জমিদার বাড়ির পশ্চাৎ হইয়া বাড়ির ভেতরে ঢুকিয়া তাঁহার ঘরের খিড়কির দরজা খুলিয়া শয়নকক্ষে প্রবেশ করিলাম। আড়ি পাতার জায়গা সে পূর্বেই ঠিক করিয়া রাখিয়াছিলাম। ওদিকে সদর দরজায় তালা লাগানো নাই।

ঘণ্টা খানেক চলিয়া গেলো। ঘরের মধ্যে কাহারো প্রবেশ দেখিতে পাইলাম না। হরিহর বাবু ফিস ফিস করিয়া বলিলেন, চোর আসবে তো?
আদিত্য বলিলো, আজ না হোক কাল কিংবা পরশু ঠিকই আসবে।

হঠাৎই ঘরের মধ্যে কাহারো প্রবেশের শব্দ শুনিলাম। কিছুক্ষণ বাদেই পুরো ঘর আলোকিত হইয়া উঠিলো। হরিহর বাবু কিছু বলিতে যাইবেন। কিন্তু আদিত্যের জন্যে বলিতে পারিলেন না।
লক্ষ্য করিয়া দেখিলাম, হরিহর বাবুর ভৃত্য ঘরের এদিক সেদিক পর্যবেক্ষণ করিয়া পর্যাঙ্ক হইতে বিস্কুটের বাক্সখানা একবার দেখিয়া আলো নিভাইয়া ঘর হইতে প্রস্থান করিলো।

এরপরে আরও ঘণ্টা তিনেক কাঁটিয়া গেলো। তবু ঘরের মধ্যে কাহারো প্রবেশের লক্ষণ দেখিতে পাইলাম না। আমি আদিত্যকে বলিলাম, আজকের মতো চলো উঠি। আগামীকাল দেখা যাবে। ঠিক তখনই দরজা খুলিবার শব্দ শুনিতে পাইলাম। হরিহর বাবু ঘামিতে শুরু করিয়াছে। তাঁহা আমি বুঝিতে পারিলাম। প্রবেশকৃত লোকটি ধীর গতিতে ছোট ছোট পা ফেলিয়া বিস্কুটের বাক্সের কাছে উপস্থিত হইলেন। আদিত্য ততক্ষণে আমার পাশ হইতে উঠিয়া অন্যত্রে অবস্থান করিয়াছে। লোকটি বাক্সখানা হস্তে লইবার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের আলো জ্বলিয়া উঠিলো।
আদিত্য বলিলো, "রঞ্জিৎ বাবু, তা শেষমেষ ধরা পড়েই গেলেন?"
তৎক্ষণাৎ তাঁহার হস্ত হইতে বাক্সখানা পড়িয়া গেলো। পেছন হইতে আদিত্যের কথানুযায়ী আমি রশি দিয়া চোরকে বাঁধিয়া ফেলিলাম।
আদিত্য বলিলো, "নিরব, তা এই রঞ্জিৎ বাবুকে চিনতে পারছো?"
"না, তো?"
"ইনিই হলেন, সেই নিরেশ বাবু। যার স্বর্ণের ছোটখাটো ব্যবসায় আছে।"
"সেদিন বিকেলে যিনি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন?"
"হ্যাঁ, তবে তিনি ছদ্মবেশটা সেদিন ঠিক ভালোভাবে করতে পারেননি। মুখের কোণে এই দাগটা দেখছো? সেদিন তিনি এই দাগটা ঢাকতে ভুলে গিয়েছিলেন। আর পান খাওয়ার ব্যাপারটা দেখো। সেদিন তিনটা চা'য়ের কথা বললে তিনি আপত্তি করে বলেছিলেন, পান থাকলে একটা দিতে।"
"তা এই লোক সেদিন আমাদের কাছে এসেছিলেন কেন?"
"দেখতে এসেছিলেন আমরা স্বর্ণের ব্যাপারে কোনো তদন্ত করছি কিনা। রঞ্জিৎ বাবু অর্থ্যাৎ নিরেশ চন্দ্র যেদিন আমাদের ওখানে এসেছিলেন, সেদিন আমি খবর নিয়ে জানতে পারি, ভবানীপুরে এই নামে কোনো লোকের অস্তিত্বই নেই। একজন ছিলেন নরেশ গুপ্ত। তার সাথেও সাক্ষাত হয়েছিলো। কিন্তু সে আর এই নিরেশ এক নয়।

সম্মুখ হইতে রঞ্জিৎ বাবু সহাস্যে বলিলেন, আপনাকে নিয়েই ভয়টা ছিলো। কিন্তু আপনি মশাই আমার চেয়েও বড় খেলোয়ার।

আদিত্য হরিহর বাবুকে বলিলেন, আপনার এই বন্ধুই হলেন আপনার স্বর্ণচোর। এখান থেকে চুরিকৃত স্বর্ণ নিয়ে কালভ্রম বাজারে নকল স্বর্ণের ব্যবসায় চালাচ্ছেন ইনি। এই ব্যবসায়ের সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত। তবে তারা পত্যক্ষভাবে নয়। আমি স্বর্ণ কিনতে গেলে পরিস্থিতি বুঝে তারা আমাকে আসল স্বর্ণ দেন। পরে যখন ছদ্মবেশে এই লোক আমার বাড়িতে আসেন, আমি ক্রীত স্বর্ণ তাকে দিয়ে পরীক্ষা করালে তিনি বলেন, "এ তো খাটি স্বর্ণ মশাই। পুরোনো আমলে ব্যবহার হতো এসব।"
আমি যদি ভুল না করি তবে এই স্বর্ণগুলো আপনারই।

বলিয়া আদিত্য পাঞ্জাবীর পকেট হইতে হরিণের মধ্যে রাখা স্বর্ণগুলো বাহির করিয়া হরিহর বাবুর হাতে অর্পন করলো। হরিহর বাবু উত্তেজিত হইয়া বলিলেন, "এগুলা, এগুলা তো আমার স্বর্ণ। আপনি কোথায় পেলেন?"
"ক্রয় করেছিলাম।"
.
বাড়ি ফিরিবার পূর্বে হরিহর বাবু আদিত্যের হাতে ক্রীত স্বর্ণের দামসহ বেশ কিছু টাকা ধরাইয়া দিলেন এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিয়া বলিলেন, পূর্বে আপনার নাম এবং কাজের কথা শুনেছিলাম। আর আজ তা স্বচক্ষে দেখলাম।
আমি আদিত্যকে জিজ্ঞাসা করিলাম, আমরা না বেড়াতে এসেছিলাম?
আদিত্য সিগারেট ধরাইয়া বলিলো, হু বেড়াতে এসেছিলাম।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: মন্টুঃ ঐ যে সামনের টেবিলে বসে আছে তার সাথে আমার শত্রুতা আছে।
বল্টুঃ কিন্তু টেবিলে তো চারজন লোক বসে আছে।
মন্টুঃ যার মুখে গোঁফ আছে সে।
বল্টুঃ গোঁফ তো সবার মুখেই আছে।
মন্টুঃ আরে যে সাদা শার্ট পড়ে আছে।
বল্টুঃ কিন্তু সাদা শার্ট তো সবাই পড়া।
মন্টুঃ (রেগে গিয়ে পিস্তল বের করে তিনজনকে গুলি মেরে দিয়ে বলল)
"যেইটা বাকি আছে সেইটা। ওই বেটারে আমি ছাড়মু না।"

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.