নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতির পাতা

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৪৬

স্মৃতির পাতা
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
গভীর রাত, নিস্তব্ধ চারিপাশ, গ্রাম্য অঞ্চল। বাড়ি থেকে একটু দূরে পথের মধ্যে থাকা কালভার্টের উপরে দাঁড়িয়ে আছি। এশার আজান পরেছে প্রায় ঘণ্টা তিনেক হবে। এই নিশীথ রাতে নিভৃতে এমন বিজন স্থানে দাঁড়িয়ে থাকার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। দাঁড়িয়ে আছি শুধু ছোট্টবেলার পুরোনো সব স্মৃতিগুলো উপলব্ধি করার জন্য। একটা সময় এখানে বন্ধুরা মিলে কত আড্ডা দিয়েছি। মায়ের মুখে ভীষণ বকা শুনেছি সেজন্য। এই কালভার্টের উপর দাঁড়িয়েই আমি আর বাধন দু'জন দু'দিকে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছি। কখনও দু'জন এক দিকে দাঁড়িয়ে পাল্লা দিয়েছি কারটা কতদূর যায়। কখনও আবার ভূত সেজে বাইসাইকেল আরোহী ব্যক্তিদের ভয় দেখিয়েছি। বিনিময়ে কিছু বকাও শুনেছি।

- কিরে এখানে কী করিস?
সহসা এমন প্রশ্ন শুনে সচকিত হয়ে পেছনে তাকালাম। দেখলাম, বাধন দাঁড়িয়ে আছে। তার থেকে একটু দূরে সাগর দাঁড়িয়ে। আমি কিছু না বলে বাধনকে জড়িয়ে ধরলাম। সে বললো, কিরে কী হয়েছে তোর? ঠিক আছিস তো তুই?
আমি বাধনের প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে কোনো উত্তর দিলাম না। আকাশের চাঁদটা যেন পূর্বের থেকে অধিক আলো ছড়াচ্ছে। বাধনকে ছেড়ে দিতেই সে বললো, কিরে কাঁদছিস কেন? কী হয়েছে ভাই তোর?
আমি চোখটা মুৃছে সিক্ত কণ্ঠে বললাম, হারিয়ে ফেলেছি তাকে।
- কাকে?
- ছোটবেলাকে।

আমার কথা শুনে বাধন হাসতে লাগলো। কিয়ৎকাল বাদে সে হাসি থামিয়ে বললো, আরে এ নিয়ে কান্না করার কী আছে? চল বাড়ি চল, অনেক রাত হয়েছে। তোর মা তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমাদের বাড়িতে চলে এসেছে। চল এখন।
.
ভোরবেলা ফোনের রিংটোনে ঘুম ভাঙলো। ঘুম ঘুম চোখে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি, সৌরভ কল করেছে। ছেলেটা বড্ড সহজ সরল এবং মিশুক প্রকৃতির। ভার্সিটিতে আমার যে পাঁচজন বন্ধু রয়েছে, তার মধ্যে সে একজন। আমি মুখে কিছু না বললেও সে কিভাবে যেন আমার মনের কথাগুলো বুঝে ফেলে। এইতো বেশ কিছুদিন আগে জান্নাতের সাথে থাকা আমার সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাওয়াতে আমি খানিকটা ভেঙে পড়েছিলাম। কয়েকটা দিন ক্লাসে ঠিকমতো মনযোগী হতে পারিনি। এজন্য অবশ্য স্যারদের কাছে বকাও শুনেছি। সেদিন ক্লাস শেষে ছেলেটা আমাকে টানতে টানতে ক্যাফে নিয়ে গেল। তারপর কিছু সিঙ্গারা আর কোকাকোলা এনে বললো, কী হয়েছে তোর? মন খারাপ? আমাকে চুপ থাকতে দেখে সে বললো, জান্নাতের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে?
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লে সে বললো, "যে ভালোবাসে, সে কোনো কারণ ছাড়াই ভালোবাসে। আর যে যেতে চায়, সে তুচ্ছ একটা কারণ দেখিয়ে চলে যায়।"

কল রিসিভ করতে গিয়ে দেখি কল কেটে গিয়েছে। আমি কল ব্যাক করতে যাবো, ঠিক সেই মুহূর্তে আবার ফোনটা বেজে উঠলো। আমি কলটা সিরিভ করে কানে ধরতেই সে বলে উঠলো.....

- দোস্ত ভুলে গেছিস আমাকে! তিনদিন হয়ে গেল, অথচ কোনো খোঁজ নিলি না আমার। বাড়ি গিয়ে যে একেবারে ভুলেই গেলি।
আমি বললাম, শ্রাবণ সবকিছু ভুলে যাবে। তবু সে তোদের ভুলবে না।
সৌরভ হেসে বললো, তারপর বল কেমন আছিস? আর কবে ঢাকাতে ব্যাক করবি?
আমি বিছানা ছাড়তে ছাড়তে বললাম, আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো আছি। আর আগামী পরশু ব্যাক করতে পারি। তুই কেমন আছিস?
- আমি আর কেমন থাকবো। যেমন দেখে গিয়েছিস, তেমনই আছি। ভাঙা হাত, অসুস্থ মন, এইতো আগের মতোই।
- সকাল সকাল মনটা খারাপ করে দিলি।
- কেন?
- এইযে, ভাঙা হাত, অসুস্থ মন!
- আরে বেটা মজা করলাম।

সৌরভের সাথে আরও কিছু কথা বলে ফোনটা টেবিলের উপর রাখতে যাবো। ঠিক সেই সময় আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বললো, কাইলকের পরের দিনই চইলা যাইবি বাজান?
আমি আম্মুর দিকে তাকাতেই আমার মনটা কেঁদে উঠলো। আর্দ্র নয়ন, নিষ্পাপ চাহনি, অপলক চেয়ে আছে আমার দিকে। আমি কী বলবো, ভেবে পাচ্ছি না।
আম্মু আবারও বলে উঠলো, আর কয়ডা দিন থাইকা গেলে হয় না বাজান? তোর না ভাজা পিঠা খুব পছন্দের। আইজকে ঢেঁকিতে চাইল গুড়া করমু। প্রতিদিন তোরে ভাজা পিঠা বানায়ে দিমু। যদ্দিন না আটা শেষ হয়, তদ্দিন না হয় থাইকা যাস বাজান!

আমার চোখ দু'টো জলে ভরে উঠলো। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আম্মুকে। আম্মু অঝোর ধারায় কেঁদেই চলেছে। পাশে তাকিয়ে দেখিয়ে আব্বাও কাঁদছেন।
.
সকালে না খেয়ে বের হয়েছি। আম বাগানে বসে আমি, বাধন, সাগর আর শাকিল চারজন মিলে কার্ড খেলে দুপুরে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ চোখ গেল একজন বৃদ্ধার দিকে। দেখলাম, উনি হাত ইশারা করে আমাকে ডাকছেন। আমি এগিয়ে গেলাম উনার দিকে। উনার কাছে যেতেই উনি আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, আমায় ভুইলা গেছিস নাকি ভাই?
সত্য বলতে কি, আমি সত্যই উনাকে চিনতে পারিনি। পাশে থেকে বাঁধন বলে উঠলো, এটা আমাদের বুড়ি মা। ঐ যে, চুরি করে বড়ই খাওয়ার জন্য কত মাইর খেয়েছি উনার হাতে। সাথে আরো কত দৌঁড়ানি।

আমি অবাক হয়ে বললাম, নানি তুমি! কেমন আছো তুমি?
উনি একটু হাসার চেষ্টা করে বললেন, তোর জন্যি কিচু বড়ইয়ের আঁচার রাইখা দিছিলেম।
বলেই তিনি লাঠি ভর দিয়ে বাড়ি মধ্যে ঢুকে গেলেন। খানিক বাদে একটা বয়েম হাতে করে ফিরে এলেন। বললেন, এই নে তোর আঁচার।

আমি বয়েমটা হাতে করলে উনি বড়ই গাছের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই গাছটাই এক গাদা বড়ই হয়। তয় এহন আর কেউ বড়ই চুরি করবার আসে না ভাই। এইবার বড়ই হইলে তুই, বাধন, সাগর, শাকিল সবাই চুরি করবার আসিস ভাই। আমি আবার তোদের লাঠি লইয়ে তাড়া করবার চাই।

আমি লক্ষ করলাম, উনি উনার পরনে থাকা মলিন কাপড়খানা দিয়ে চোখ মুছলেন।
বেশ কিছুটা সময় উনার সাথে কাটিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
.
অপেক্ষা করুন প্রিয় দ্বিতীয় পর্বের।
ধন্যবাদ

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৪৭

নুরহোসেন নুর বলেছেন: স্মৃতি এমন এক অস্ত্র যার ধার মানুষের বয়সের সাথে সাথে বাড়তেই থাকে,
জীবনের শেষ ধাপে পৌছানোর আগ অবধি সুখ কিংবা দুঃখের ছবি চোখে রাঙিয়ে দেয়।
ভাল লাগলো শৈশব স্মৃতিচারন।
টিকে থাকুক প্রকৃত বন্ধুত্বগুলো।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৩৫

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৪:২৫

রাইসুল সাগর বলেছেন: গল্পের আদলে স্মৃতির রোমন্থনে অনেক অনেক ভালোলাগা। শুভকামনা জানিবেন নিরন্তর।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৩৫

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:১৫

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: "যে ভালোবাসে, সে কোনো কারণ ছাড়াই ভালোবাসে।
আর যে যেতে চায়, সে তুচ্ছ একটা কারণ দেখিয়ে চলে যায়।"

....................................................................................
বক্তব্যর সাথে একমত হতে পারলামনা,
স্মৃতিচারন চলতে থাকুক ।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৩৫

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: গল্পটা জমজমাট হয় নি।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:২৯

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.