নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুধবার (২২/০১/২০২০)

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২৫

বুধবার (২২/০১/২০২০)
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
সকাল ন'টার সময় অরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হবে। রাতে ভাইয়াকে বলে রেখেছিলাম, আজ যেন একটু সকাল সকাল আমাকে ডেকে দেয়। রাতে বারোটার দিকে ঘুমাবো ঘুমাবো করেও বারোটার সময় ঘুমাতে পারলাম না। ইউটিউবে ঢুকে দেখি "ফ্যামিলি ক্রাইসিস" নাটকের নতুন পর্ব ছেড়েছে। সেটা দেখতে দেখতে রাত প্রায় একটা বেজে গেল।

সকাল সাতটার সময় ভাইয়া আমাকে ডেকে বললেন, ওঠ ওঠ। সকাল সাতটা বাজে।
আমি ঘুম জড়ানো কণ্ঠে কম্বলের কোণা দিয়ে ইঁদুরের মতো মাথা বের করে বললাম, এত ডাকাডাকি কিসের?
তিনি বললেন, ডাকাডাকি কিসের মানে? গতকাল রাতে না বললি তোকে যেন আজ সকাল সকাল ডেকে দেই?
- ও হ্যাঁ। ধন্যবাদ ভাইয়া।

বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখি বুয়া চলে এসেছেন। ভাবলাম, উনার রান্না করতে কমপক্ষে ঘণ্টা খানেক তো লাগবেই। আর খেয়ে যাওয়ার আশা করলে অরিয়েন্টেশন ক্লাসে যথা সময়ে উপস্থিত হতে পারবো না। তার চেয়ে বরং বাইরে থেকে নাস্তা করে নেবো।
.
ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বের হলাম বাসা থেকে। হোটেলে ঢুকবো কিছু খাওয়ার জন্য। ঠিক সেই সময় দেখি "তালুকদার" বাসের কন্ট্রাক্টর মামা জোড়ে জোড়ে চিল্লাচ্ছেন, এই আসাদগেট, ফার্মগেট, গুলিস্তান, সদরঘাট।
পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখলাম, পৌণে আটটা বাজে। ভাবলাম কলেজের ক্যান্টিনে গিয়ে নাস্তা করবো। তাই আর হোটেলে না ঢুকে সোজা বাসে চড়ে বসলাম।

টেকনিক্যাল পার হতেই বাস জ্যামে পরলো। ভাবলাম, "যাক, জ্যামে পরেছে ভালোই হয়েছে। বসে বসে 'মেঘা' গল্পটির শেষ অংশটুকু লিখতে থাকি।"
মোবাইল বের করে ফেসবুকে ঢুকলাম। নোটিফিকেশন, মেসেজ, এসব চেক করতে করতে বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল। ঘড়িতে তখন সময় আটটা বেজে বিশ মিনিট। আমি ফেসবুক থেকে বের হয়ে গল্প লিখতে শুরু করলাম।

কিছুক্ষণ পর লক্ষ করলাম, সূর্যের তাপটা বাসের জানালার কাঁচ ভেদ করে আমার মুখের উপর এসে পরছে। মোবাইল পকেটে রেখে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজলাম। জ্যাম তখনো ছাড়েনি। এদিকে সময় তার আপন গতিতে অতিবাহিত হচ্ছে।

অনেকে বাস থেকে নেমে যেতে লাগলো। আমি একজনকে বললাম, ভাই জ্যাম কি খুব বেশিই লেগেছে?
উনি বললেন, ভাই শুনতেছি ভিআইপি নাকি যাচ্ছে। তাই রোড ব্লক করে দিয়েছে।

লোকটির কথা শুনে আমি নেমে পরলাম বাস থেকে। দারুস সালাম থেকে হাঁটা ধরলাম ফার্মগেটের উদ্দেশ্যে। হাঁটছি তো হাঁটছিই। কল্যাণপুর পার হয়ে মোবাইলে একবার সময় দেখে নিলাম। ন'টা বেজে ২৯ মিনিট।

পুরো রাস্তা জ্যাম। মানে ব্লক করা আরকি। শ্যামলী পার হলাম, কলেজ গেট পার হলাম। আসাদগেটে গিয়ে দেখি সেখান পর্যন্ত জ্যাম। সংসদ ভবনের রোড একদম ফাঁকা। টেকনিক্যাল থেকে আসাদগেট পর্যন্ত পুরো রাস্তা ব্লক। কিন্তু কোনো ভিআইপির গাড়ি আমার চোখে পরলো না।
.
কলেজে পৌঁছালাম দশটা বেজে আঠারো মিনিটে। অডিটোরিয়াম ফাঁকা। স্যার বলেছিলেন, তোমাদের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। তাই তোমাদের অরিয়েন্টেশন ক্লাস অডিটোরিয়ামে নেওয়া হবে।

অডিটোরিয়ামে কাউকে না পেয়ে ক্লাসরুমের দিকে হাঁটা ধরলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম বারান্দায় অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে ক্লাসে উঁকি দিতেই দেখি ক্লাস ভর্তি স্টুডেন্ট। অথচ অন্য কোনো দিন এদের চরণধুলিও কলেজ কিংবা ক্লাসরুমে পরে না।

তখনো অরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হয়নি। মনে মনে ভাবলাম, বাহ। ভালোই হয়েছে। ক্লাসে ঢুকে তৃতীয় বেন্চে একটু জায়গা পেয়ে বসে পরলাম। খানিকবাদে ম্যাম এসে কিছু কথা বললেন। সাথে এও বললেন যে, উপরে বিবিএ ভবনের আট তালায় একটা বড় অডিটোরিয়াম তৈরি করা হয়েছে। তোমরা সবাই সেখানে চলে যাও।

আমরা সবাই তখন নতুন অডিটোরিয়ামে গিয়ে বসলাম। খানিকবাদে সকল স্যার ম্যামেরা এলেন। উনাদের মূল্যবান বক্তব্য পেশ করলেন। শেষে প্রিন্সিপ্যাল স্যার এসে মোটিভেশনাল বেশ কিছু কথা এবং গল্প বললেন।

আমাদের এই হঠাৎ করে আয়োজন করা অরিয়েন্টশন ক্লাসের মূল টপিক ছিল "ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপস্থিতি।"
স্যার যখন বললেন, তোমরা সবাই শনিবার থেকে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হবে তো?
সকলে তখন সমস্বরে উত্তর দিলো, জ্বী স্যার।

তবে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। আগামী শনিবারে এই এত এত স্টুডেন্টের মধ্যে হাতে গোণা ত্রিশ চল্লিশ জন ছাড়া কেউই আসবে না। আর, কিছুদিন গেলে তখন সেই ত্রিশ চল্লিশ জনও আসবে না।

স্যার আমাদের জন্য অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিলেন। তন্মধ্যে একটি সুবিধা হলো, যাদের রেজাল্ট ভাল হবে। তাদেরকে স্যার ফিন্যান্সিয়ালি হেল্প করবেন। ফিন্যান্সিয়ালি হেল্প বলতে তাদের অার্থিক অবস্থা অনুযায়ী বেতন এবং ফর্মফিলাপের টাকার পরিমাণটা কমিয়ে দেবেন। সাথে যারা নিয়মিত ক্লাস করবে, তাদের প্রতিও স্যারের সুনজর থাকবে।
.
ক্লাস শেষ করে বের হতেই তারেক বললো, কী খাবি বল?
তারেক আমার বন্ধু। পুরো তেজগাঁও কলেজের মধ্যে আমার হাতে গোণা সাতজন বন্ধু আছে। তন্মধ্যে সে একজন এবং সেই সর্বপ্রথমে রয়েছে।
আমি বললাম, না কিছু খাবো না। সোজা বাসায় যাবো। বাসায় রান্না হয়েছে।
সে বললো, আরে এতদিন পর দেখা হলো। আর খাওয়ার অফার করলে কখনো না করবি না।

প্রিন্সে ঢুকলাম দু'জন। সে দুই প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানি অর্ডার করলো। ছেলেটা কেমন যেন? সেই প্রথম বর্ষ থেকে খাইয়ে আসছে। আবার কোথাও ঘুরতে গেলে সবার খরচ সে একা বহন করে। ২০১৮ এর নভেম্বরে সাফারি পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম। মোট চারজন গিয়েছিলাম। প্রায় আট হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। সব টাকা সে একাই বহন করেছিল। আবার সবার বাসায় যাওয়ার জন্য বাস ভাড়াও সে-ই দিয়েছিল।

আমার দেখা তারেক-ই একজন ব্যক্তি, যে ধনী হওয়া সত্ত্বেও কখনো অহংকার করে না। আর আমার দেখা সেই একজন ব্যক্তি, যে এই অল্প বয়সে নিজের টাকায় চলে। তার বাবা রিটায়ার্ড প্রাপ্ত একজন আর্মি অফিসার। সংসদ ভবনে ঢুকতে গেলে তাকে কেউ কখনো আটকায় না। ছেলেটা বেশ হ্যান্ডসামও বটে। আমার সামনে কত মেয়ে যে তাকে প্রপোজ করলো। অথচ সে সরাসরি তাদের রিজেক্ট করে দিল। আর তার সবচেয়ে বড় একটা গুণ হলো, সে কারো চোখ দেখলেই বলে দিতে পারে ব্যক্তিটি কেমন এবং কোন মানসিকতার?

একদিন রাতে ফোনে তার সাথে কথা বলার সময় সে বললো, বন্ধু একটা জব পেয়েছি।
কন্টেন্ট রাইটার না কিসের যেন কথা বললো। আমি বললাম, করতে থাক।
সে বললো, আরে বেটা বেতন মাত্র পনেরো হাজার টাকা। আর আমি প্রতিমাসে খরচই করি বিশ পঁচিশ হাজার টাকা। এর মাঝে আবার ইন্ডিয়া, চীন, নেপাল, এসব দেশে ভ্রমণ তো আছেই।

এইতো মাস দু'য়েক আগে তার পরিবার থেকে তার হবু বউকে পড়ালেখার জন্য জার্মান পাঠালো। কাচ্চি খাওয়ার সময় সে বললো, আমি এবার পরীক্ষা দেবো না। নভেম্বরে জার্মান চলে যাচ্ছি।

খাওয়া শেষে সে আমাকে বললো, এখন কোথায় যাবি?
আমি বললাম, বাসায়।
- ফ্রি থাকলে চল আইডিবি থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
- না রে, মেসের বাজারের দায়িত্ব আমার উপর পরেছে।
- তাহলে বাসায় যা। আর চারটা থেকে তো তোর অফিস রয়েছে।
- হ্যাঁ।
- যা তাহলে, বাসায় যা।

বাজার করে বাসায় এসে দেখি সাড়ে তিনটা বাজে। চারটার সময় অফিসে পৌঁছাতে হবে।

এখন অফিসেই বসে আছি। আমি ক্লান্ত, বড্ড ক্লান্ত। "মেঘা" গল্পটা আজ রাতে কিংবা আগামীকাল দিতে পারি।
ধন্যবাদ সকলকে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার ডায়েরী পড়লাম।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫২

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি পড়ছেন, কাজও করছেন? তা'হলে দেশে শিক্ষিত বেকার কোথা থেকে?

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫৩

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: হ্যাঁ প্রিয়

৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি মন্তব্যের উত্তর দেয়া নিয়ে সিরিয়াস হোন।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫৩

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: জ্বী দাদা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.