নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘা (অন্তিম পর্ব)

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৪৬

মেঘা
পর্ব-৪ (অন্তিম পর্ব)
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
আজ বারোটার দিকে রওনা দিলাম। পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ১২:৫০ বেজে গেল। দেখলাম, সবাইকে খাতা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। সবাই সবার রোল রেজিস্ট্রেশন নাম্বার পূরণ করছে। কিন্তু নীলা কোনো কিছু পূরণ না করে চুপচাপ বসে আছে। আমি কাছে গিয়ে "কখন এলেন" বলে আমার সিটে বসে পরলাম।
সে মৃদুস্বরে উত্তর করলো, এইতো ঘণ্টা খানেক আগে। কিন্তু আপনার আজ দেরি হলো কেন?
- আজকে একটু দেরি করেই বের হয়েছিলাম। তা, আপনি লেখা বাদ দিয়ে বসে আছেন কেন?

ঠিক তখনই স্যার হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন, এই কে কথা বলেরে? চুপ একদম চুপ। চুপচাপ মুখ বন্ধ করে পরীক্ষা দাও সবাই।

নীলা বললো, এমনিই। আপনি সবকিছু পূরণ করুন। খানিকপর প্রশ্নপত্র দেবে। আর হ্যাঁ, পরীক্ষার শেষে একটু দাঁড়াইয়েন কেমন?
আমি মাথা নেড়ে "হ্যাঁ" বললাম।
.
পরীক্ষা শেষে সবাই রুম থেকে বের হয়ে যেতে থাকলো। আমি বের হতে গেলে নীলা আমাকে বললো, একটু দাঁড়ান। কিছু কথা ছিল।

স্যার ততক্ষণে খাতা নিয়ে নিচে চলে গিয়েছেন। রুমও তখন মোটামোটি কিছুটা ফাঁকা। নীলা তার ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমার হাতে দিয়ে বললো, ধরুন।
আমি বললাম, কী এর মধ্যে?
- আপনি এতো প্রশ্ন করেন কেন বলুন তো? বাসায় গিয়ে দেখবেন কী এর মধ্যে।

আমি বাধ্য ছেলের মতো মাথা নিচু করে বললাম, আচ্ছা।
সে বললো, আর শুনুন।
- হ্যাঁ।
- আপনাকে না নিষেধ করেছি মেঘার সাথে না মিশতে?
- হ্যাঁ।
- তাহলে তার সাথে মিশেন কেন?
- হ্যাঁ।
- হ্যাঁ কী?
- মিশবো না আর।
- এইতো গুড বয়। এবার যান। সোজা বাসায় যাবেন। কোনো দিকে তাকালে, কোথাও দেরি করলে খবর আছে। আমার বড় ভাইকে দেখেছেন না? ঐ যে সেদিন আমাকে সিট খুঁজে দিয়ে গেল।
- হ্যাঁ।
- কোনো দিকে তাকালে, কোথাও দেরি করলে ভাইয়াকে বলে আপনার পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেবো।
- কী?
- কিছু না। এবার বাসায় যান।
.
সেদিন আর মেঘার সাথে কথা হয়নি। কেননা সেদিন আমি পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় চলে আসি। এজন্য তার সাথে দেখা হয়নি এবং কথাও হয়নি।

রাতে যখন প্যাকেটটা খুললাম। তখন তো আমি রীতিমতো অবাক না হয়ে পারলাম না। প্যাকেটটা খুলতেই একটা চিরকুট পেলাম। সাথে শাওমী ফোনের একটা বক্স। আমি চিরকুটটা হাতে নিয়ে ভাঁজ খুলে দেখলাম, অল্প কিছু লেখা। আমি পড়তে শুরু করলাম।

"সেদিন আপনি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মেঘাকে বলেছিলেন, আপনার ফোন চুরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার বললেন, চার্জ ছিল না সেজন্য ফোন বন্ধ ছিল। আমি তখন আপনার থেকে ঠিক দু'হাত বামে দাঁড়িয়ে ছিলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম, সত্যই বোধ হয় চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছিল আপনার ফোনের। কিন্তু সেদিন রাতে যখন দেখলাম, আপনি অনলাইনে নেই। তখন বুঝলাম, সত্য সত্যই আপনার ফোন চুরি হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া আমি খেয়াল করে দেখেছি, আপনি সচরাচর কখনো মিথ্যা কথা বলেন না।

এখন আপনি ভাবছেন নিশ্চয়ই, আমি কিভাবে বুঝলাম, আপনি অনলাইনে ছিলেন না? 'নীল প্রজাপতি' নামের যে আইডিটা আছে, ওটা আমার আইডি। অবশ্য আপনি নাও চিনতে পারেন। কেননা আপনাকে কখনো নক করিনি আমি।

আর হ্যাঁ, বক্সের মধ্যে আপনার জন্য একটা ফোন রয়েছে। সাথে সিম কার্ডও। আর এই সিমের নাম্বার যেন আপনার বাবা মা আর আমি ছাড়া অন্যকেউ না জানে। অন্যকেউ বলতে বিশেষ করে মেঘা যেন না জানে। ওকে?

ভালো করে পড়ালেখা করুন। সামনে 'ব্যবসায় পরিচিতি' পরীক্ষা। যদিও দেখতে সহজ। কিন্তু কঠিন আছে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। বাই বাই গিটারিস্ট।"

চিরকুটটা রেখে বক্সটা খুললাম। দেখলাম মোবাইলের সাথে একটা সিম কার্ড।
.
কাল শুক্রবার। ভেবেছিলাম হাতে থাকা এক হাজার টাকা দিয়ে কাল ছোটোখাটো একটা ফোন কিনবো। কিন্তু তা আর কিনতে হলো না। তবে একটা বিষয় আমার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। নীলা পরীক্ষার শেষে আমার সাথে অমন আচরণ করলো কেন? মানে অমন অধিকার খাটিয়ে কথা বললো কেন? আর আমাকে ফোনই বা কিনে দিলো কেন? তার সাথে তো আমার তেমন কোনো সম্পর্কও নেই।

মেসেন্জারে ঢুকতেই অনেকগুলো টেক্সট দেখতে পেলাম। দেখলাম মেঘাও নক করেছে। সে লিখেছে, তোর ফোন বন্ধ কেন, তুই অনলাইনে আসিস না কেন, আজ পরীক্ষা শেষে আমার সাথে দেখা করিসনি কেন? অনেক কথা। আমি ছোট্ট করে লিখলাম, একটা সমস্যার কারণে অনলাইনে আসা হয়নি। সাথে সাথেই সে মেসেজ দিলো, কাল ঘুরতে যাবি?
আমি বললাম, কোথায়?
- হাতিরঝিল।
- কখন বের হবো?
- দুপুর দুইটার দিকে বের হয়ে আমার বাসার নিচে চলে আসবি।
- আচ্ছা। আর শোন শোন..
- হ্যাঁ, বল।
- পরীক্ষা কেমন হয়েছে আজ?
- আজ তো প্রায় পুরোটাই কমন এসেছিল। আচ্ছা তুই কি পুরো বই পড়ে পড়ে নোট তৈরি করিস?
- পুরো বই না পড়লে নোট তৈরি করা যায়?
- হুম, তাও ঠিক। যাইহোক, কালকে আসার সময় গিটারটা সাথে করে নিয়ে আসবি। কেমন?
- গিটার?
- হ্যাঁ।
- না, না। গিটার আনা যাবে না।
- কেন?
- না মানে, এক বড় ভাই নিয়ে গিয়েছে গিটারটা। আগামীকাল নাকি তার জন্মদিন।
- ও। তাহলে আনতে হবে না।
- হ্যাঁ।

মোবাইল রেখে ঘুমাতে যাবো। ঠিক সেই সময় মেসেন্জারের টুং করে একটা শব্দ হলো। মেসেন্জার চেক করে দেখলাম, 'নীল প্রজাপতি' আইডি থেকে মেসেজ এসেছে, "এখনো ঘুমাননি? রাত বারোটা বাজতে চললো।"
আমি উত্তর করলাম, হ্যাঁ ঘুমাবো। রবিবারে আপনার সাথে কিছু কথা রয়েছে।
- কী বলবেন সেটা জানি আমি।
- কিভাবে?
- বলবেন যে, আমি আপনাকে মোবাইল কেন দিলাম, পরীক্ষার শেষে আপনার সাথে অমন আচরণই বা কেন করলাম? তাইতো?
- হ্যাঁ।
- আপনি একজন সহজ সরল মানুষ। আমি আপনার বন্ধু হতে চাই। আর ভাবুন, মোবাইলটা আমি বন্ধু হিসেবেই আপনাকে গিফট করেছি।

আমি আর রিপ্লে দিলাম না। খানিকপর সে আবার মেসেজ দিল, ঘুমিয়ে পড়ুন।
.
বিকেল তিনটার দিকে রওনা দিলাম মেঘার বাসার উদ্দেশ্যে। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, মেঘাকে একবার জিজ্ঞেস করি, সে কেন এসব করছে আমার সাথে? কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম, সে তো চায় সে ক্লাসের ফার্স্ট হোক। এদিকে পরীক্ষায় সবকিছু কমন আসা সত্ত্বেও আমি অল্প স্বল্প করে লিখে আসছি। যাতে করে ফার্স্টক্লাস পেলেও যেন মেঘার থেকে বেশি মার্ক না পাই। তবে আমি শিওর মেঘা সেকেণ্ড হবে। কেননা, আমি ফার্স্ট না হলেও নীলা ঠিকই ফার্স্ট হবে।

তার বাসার নিচে গিয়ে ফোন বের করে তাকে কল করতে যাবো। ঠিক তখনই মনে হলো, আরেহ! নীলা না নিষেধ করেছিল?
কিন্তু তাকে এখন কল করা ছাড়াও তো কোনো উপায় দেখছি না। তার নাম্বারটা মুখস্থ থাকায় কোনো ঝামেলা পোহাতে হলো না। আমি কল করলাম। কল করার সাথে সাথেই সে রিসিভ করে বললো, "হ্যা রুহান বল। কী অবস্থা তোর? আমি শ্রাবণকে নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে যাচ্ছি। দেখে নিস, সে পরীক্ষায় নিশ্চিত ফেল করবে। আর তখন ওর ক্লাসের ঐরকম ফটর ফটর করা বন্ধ হয়ে যাবে।

আমি কোনো কথা না বলে ফোন রেখে দিলাম। নাহ! নীলা তো মিথ্যা বলেনি? আর তাছাড়া যে মেয়ে পর্দা করে চলাফেরা করে, সে মেয়ে কখনো মিথ্যা বলতে পারে না।

মেঘাকে কল করে বুঝতে পারলাম সে ঘুরতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। সে বোধ করি "কে কল করেছে" এটা না দেখেই কথা বলতে শুরু করে দিয়েছিল। হয়তো তার কিছুক্ষণ অাগেই সে রুহানের সাথে কথা বলছিল।

রুহান আমাদের সাথেই পড়ে। ছেলেটার সাথে একদিন কথা হয়েছিল। ক্যাম্পাসে বসে সেদিন গান গাইছিলাম। হঠাৎ সে এসে বললো, ভাই আপনি তো দারুণ গাইতে পারেন!

আমাকে বাসার সামনে পায়চারি করতে দেখে তাদের বাসার সেই দারোয়ানটা বাইরে বের হয়ে এসে বললো, মামা কি আমার উপর রাইগা আছেন?
আমি বললাম, রেগে থাকবো কেন?
- ঐযে সেইদিন আপনের লগে ঐরহম ব্যবহার করছিল্যাম!
- না না, ঠিক আছে। আমি কিছু মনে করিনি।

আমি তাদের বাসা থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম। কী মনে করে যেন ডাটা চালু করে ফেসবুকে ঢুকলাম। আর তখনই টুংটুং আওয়াজ করে বেশ কয়েকটা মেসেজ এলো। দেখলাম মেঘা মেসেজ দিয়েছে, "তোর ফোন বন্ধ কেন? কোথায় তুই? ঘুরতে যাবি না?"
আমি রিপ্লে দিলাম, তোর বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি।
সে অনলাইনেই ছিল। সাথে সাথে সে রিপ্লে দিলো, ওকে। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে নিচে নামছি।
.
পুরো বিকেল তার সাথে ঘুরাঘুরি করে রাতে বাসায় ফিরলাম। শরীরটা বড্ড ক্লান্ত। একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম চলে এলো। যখন ঘুম ভাঙলো, তখন মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম, রাত বারোটা বাজে। এখন আর জোর করলেও চোখে ঘুম আসবে না। উঠে গিয়ে মুখ ধুয়ে এসে পড়তে বসলাম। আজ শুক্রবারের রাত ছিল। ভাইয়া রুমে ছিল না। তাই রাত বারোটার দিকে রুমে লাইট অন করে পড়তে লাগলাম।

পরে কখন ঘুমিয়েছিলাম মনে নেই। ঘুম ভাঙলো ফোনের রিংটোনে। ঘুম ঘুম চোখে কলটা রিসিভ করে হ্যালো বললাম।
- এখনো ঘুমিয়ে আছেন?
- হু।
- হু কী?

নীলা কল করেছে। বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতেই ঘুমের রেশটা কেটে গেল। পরে তাকে মেঘার সাথে আমার স্বল্প সময়ের ফোনকলের কথাগুলো বললাম।
সে বললো, আমি আপনাকে কী বলেছিলাম? এখন তো নিজ কানে শুনতে পেয়েছেন!
.
রবিবারে "ব্যবসায় পরিচিতি" পরীক্ষা ছিল। গত দুইটা পরীক্ষার মতো সেই পরীক্ষার আগের দিনও মেঘাদের বাসার দারোয়ানের কাছে নোট তৈরি করে দিয়ে এসেছিলাম।
পরীক্ষার শেষে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মেঘার সাথে কথা হতো। আমি দেখতাম, নীলার চোখ দু'টো রাগে লাল হয়ে যেত। আমি তবু মেঘার সাথে কথা বলতাম।

দেখতে দেখতে পাঁচটা পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। আর মাত্র একটা পরীক্ষা বাকি আছে। আমাদের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টদের আবার একটা সুবিধা আছে। আমাদের কোনো প্র্যাক্টিক্যালের ছুতো নেই। এটা করতে, ওটা করতে হবে, এসবের কিছুই নেই। তবে ক্লাস চলাকালীন সময় এসাইনমেন্ট করতে হতো।

সামনে টানা আটদিন ছুটি। আটদিন পর একটা পরীক্ষা হলেই সব ঝামেলা শেষ। আমি আগের মতোই মেঘার সাথে মিশতে থাকলাম। আমি পরখ করলাম, মেঘা যেন আমার সাথে আগের থেকে আরো বেশি মিশতে চাইছে।

এই টানা আটদিন ছুটির মাঝে নীলা একদিন আমাকে হুট করে দেখা করতে বললো। আমি বললাম, কিছুদিন পর তো এমনিই দেখা হবে।
সে বললো, এখন মেঘা ডাকলে ঠিকই চলে যেতেন।
আমি আর কিছু না বলে দেখা করতে গেলাম। তার কথামতো ধানমণ্ডি বত্রিশে নেমে তাকে কল করলাম। কিয়ৎকাল বাদে সে এসে আমাকে একটা সিম কার্ড দিয়ে বললো, এই নিন আপনার সিম কার্ড।
আমি বললাম, কিসের সিম কার্ড এটা?
- ভুলে গিয়েছেন? সেদিন না আপনি বললেন, আপনার মোবাইল চুরির সাথে সিম কার্ডও চুরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কাগজ না থাকায় আপনি তুলতে পারছেন না। এই ধরুন আমি তুলে দিয়েছি।
- আপনি কিভাবে তুললেন? আপনাকে তারা তুলে দিল?

আমার কথা শুনে বোধ হয় একটু হাসলো সে। কেননা তার চোখ দেখেই আমি বুঝতে পারলাম, সে হাসছে।
.
দেখতে দেখতে আটটা দিন চলে গেল। কাল শেষ পরীক্ষা। রাতে একটু তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পরলাম। যেন সকাল সকাল উঠতে পারি। আজ আর কারো সাথে কথা বললাম না।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে পুরো বই রিভিশন দিচ্ছিলাম। এর মাঝে মেঘা আমাকে কল করে বললো, বাসস্ট্যাণ্ডে আয়। আমি দাঁড়িয়ে আছি।
আমি বললাম, এখন বাসস্ট্যাণ্ডে কী করতে যাবো?
- পরীক্ষা দিতে যাবি না?
- হ্যাঁ, যাবো। তো এখন কেন? কেবল তো দশটা বাজে। এক ঘণ্টা পর বের হই?

ঠিক তখনই সে শুরু করে দিলো তার সেই মায়া মাখা কথাবার্তা। আমি বললাম, কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। আমি আসছি।

বাসস্ট্যাণ্ডে পৌঁছে দেখি তার মুখটা কালো হয়ে আছে। আমি বললো, কিরে? কোনো প্রবলেম?
সে কোনো কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। খেয়াল করলাম, সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
আমি বললাম, কী হয়েছে তোর? বল আমাকে।
- আম্মু অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
- কী বলিস এসব? কী হয়েছে আন্টির?
- সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলো। তারপর মাথায় অাঘাত লেগে প্রচুর রক্ত বের হয়েছে।
- কখন ঘটেছে এই ঘটনা?
- সকালে।
- কোন হাসপাতালে নিয়েছিস?
- শাহবাগ পিজি হাসপাতালে।
- এখন কেমন আছে আন্টি?
- ছোট ভাই ফোন করে জানালো, রক্ত লাগবে এক ব্যাগ।
- রক্তের গ্রুপ জানিস?
- হ্যাঁ, এ পজেটিভ। কিন্তু আমাদের কারোরই রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ না।
- আমি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললাম, যাক বাবা বাঁচা গেল। আমার রক্তের গ্রুপ "এ পজেটিভ।" কখন লাগবে রক্ত?
- দুপুর বারোটার মধ্যে।
- চল তাহলে।
.
সকল যানজট ঠেলে সোয়া এগারোটার সময় হাসপাতালে পৌঁছালাম। ডাক্তার আমার রক্তের গ্রুপ চেক করে একটা বেড দেখিয়ে বললেন, এখানে শুয়ে পড়ুন।

কিছুক্ষণ পর আমি মেঘার ভাইকে বললাম, ঘড়িতে সময় কত?
সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কোনো কথা বলছে না। আমি আবারো বললাম, ছোট ভাই কয়টা বাজে?
সে এবার নড়ে চড়ে উঠে বললো, বারোটা বেজে দশ মিনিট।
আমি বললাম, মেঘাকে ডাক দাও।

সে মেঘাকে ডাক দিতে বাইরে গেল। কিছুক্ষণ পর মেঘা কেবিনে ঢুকে বললো, ঠিক আছিস তো?
আমি বললাম, আমি ঠিক আছি। শোন, তুই চলে যা। ওদিকে পরীক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে। আমি রক্ত দিয়ে ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবো।
সে প্রথমে না না করলেও আমার কথাতে পরীক্ষা দিতে চলে গেল।

রক্ত দেওয়া শেষ হলে বড্ড ক্লান্ত লাগছিল নিজেকে। দেখলাম, মেঘার ভাই কিছু ফল নিয়ে এসেছে। ফলগুলো বেডের উপর রেখে আমার পা জড়িয়ে ধরলো। আমি বললাম, এই কী করছো? কী করছো এসব? পা ছাড়ো, পা ছাড়ো বলছি।
- ভাইয়া আমাকে মাফ করে দেন।
- কেন? তুমি আবার কী করলে?
- ভাইয়া আমার ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ ভাইয়া আমাকে মাফ করে দেন।
- আরে বোকা ছেলে, বলবে তো কী হয়েছে? আর আমার জানামতে তুমি তো আমার সাথে এমন কোনো খারাপ ব্যবহার করোনি যে, যার জন্য আমার কাছে মাফ চাইতে হবে।
- ভাইয়া সেদিন....
- সেদিন কী?
- সেদিন আপনার ফোন আমি আর আমার বন্ধুরা ছিনতাই করেছিলাম।
- কি?
- হ্যাঁ ভাইয়া। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করবেন। ভুল হয়ে গেছে আমার।
- আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। পা ছাড়ো।

আমি ফলগুলো না নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পরলাম। যখন পরীক্ষার হলে পৌঁছালাম, ঘড়ির কাঁটা তখন দুইটা ছুঁই ছুঁই। স্যারের থেকে খাতা নিলাম, প্রশ্নপত্র নিলাম। স্যারকে বললাম, স্যার আমার এ্যাটেণ্ডেন্স খাতাটা দিন। সেখানে সাক্ষর করে সবকিছু ফিলআপ করতে লাগলাম। এর মাঝে নীলা বেশ কয়েকবার আমাকে প্রশ্ন করেছে, এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? আমি কোনো উত্তর করিনি। শরীরটা ঘেমে আছে।

কিছুক্ষণ পর নীলার প্রশ্নের উত্তর দিলাম, হাসপাতালে ছিলাম।
- কি? হাসপাতালে কেন? কী হয়েছে আপনার?
- চুপ। কথা বললে কিন্তু খাতা নিয়ে নেবে। পরীক্ষা শেষে বলবো।
সে "আচ্ছা" বলে চুপ করে রইলো।

আমি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কম কম করে লিখে পুরো মার্কের উত্তর করলাম। স্যার আমাকে বললেন, তুমি চাইলে আরো কিছু সময় লিখতে পারো।
আমি বললাম, না স্যার। লেখা শেষ। ধন্যবাদ আপনাকে।
.
রুম থেকে বের হতেই নীলার এক গাদা প্রশ্ন। আমার কী হয়েছে? হাসপাতালে কেন ছিলাম? কোথায় আঘাত পেয়েছি ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি বললাম, তেমন কিছু হয়নি। মেঘার আম্মু সিড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিল। তাতে বেশ খানিকটা রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাই উনাকে রক্ত দিতে গিয়েছিলাম।
- কিন্তু মেঘাকে তো দেখলাম সে ঠিক সময়েই পরীক্ষার হলে ঢুকলো?
- হ্যাঁ, আমি তাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
- কেন? দেরি হলে তারও হতো। আপনি তাকে পাঠিয়ে দিলেন কেন?

আমি তার এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলাম না। আমাকে চুপ থাকতে দেখে সে বললো, খেয়েছেন কিছু?
আমি বললাম, না।
- তো চলুন আমার সাথে। খাবেন কিছু।

এর মাঝে মেঘা এসে হাজির। সে আমার হাত ধরে টানতে টানতে একটু দূরে নিয়ে গেল। বললো, ঐ মেয়ের সাথে এতো কিসের কথা তোর? তোকে না বলেছি, তুই ওর সাথে কথা বলবি না?
- ও আমাকে জিজ্ঞেস....
- ও যাই বলুক, তবু তুই ওর সাথে কথা বলবি না। তুই শুধু আমার।
- হুম।

নীলা আমাদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে থেকে চলে গেল। আমি বুঝতে পারলাম, সে রেগে গিয়েছে ভীষণ।
.
ক্লাস আপাতত বন্ধ। দ্বিতীয় বর্ষে উঠলে শুরু হবে আবার। টানা দুই আড়াই মাস বন্ধ মানে অনেক লম্বা সময়। এই সময়টা কাজে লাগাতে হবে। একটা ভালো কোনো জব খুঁজতে হবে। সাথে দ্বিতীয় বর্ষের কিছু বই কিনে পড়ালেখা শুরু করতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। বিডিজব থেকে বেশ কয়েকটা কোম্পানিতে সেলসম্যানে এপ্লাই করলাম। সেখানে আবার স্নাতক ছাড়া কোনো বড় পোস্টে এপ্লাই করা যাবে না। সাথে তো কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার কথাও লিখে দিয়েছেন তারা।

দ্বিতীয় বর্ষের দুইটা বই কিনে ফেললাম। "ফাণ্ডামেন্টাল অব ফিন্যান্স এবং বিজনেস স্ট্যাটিস্টিক।" বাসায় বসে নিজে নিজেই বই দু'টোর ম্যাথগুলো সলভ করতে শুরু করলাম। এর মাঝে মেঘার সাথে ঘুরাঘুরি, চ্যাটিং, সবকিছু আগের মতোই চলছে। মাঝখানে শুধু নীলার সাথে বেশ ভাল একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

এদিকে আবার "প্রাণ" গ্রুপ থেকে আমাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য নক করা হয়েছে। নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে ইন্টারভিউ কক্ষে উপস্থিত হলাম। এর আগে কখনো কোনো চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দেইনি। সেজন্য তেমন কোনো অভিজ্ঞতাও নেই। জানি না কী প্রশ্ন করবেন। সামনে থাকা ডান পাশের একজন স্যার প্রশ্ন করলেন, সিভিতে দেখলাম আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড কমার্স এবং আপনি বর্তমানে অনার্সে মার্কেটিং নিয়ে পড়ালেখা করছেন।
আমি বললাম, জ্বী স্যার।
তিনি বললেন, নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। আপনি শান্ত হয়ে বসুন।
পাশে থেকে আরেকটা স্যার জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকে দুইটা প্রবলেম দেওয়া হবে। আপনি সেখান থেকে যেকোনো একটা প্রবলেম সলভ করে আমাদের দেখাবেন।
- জ্বী স্যার।
- ১ নম্বর প্রবলেম, ধরুন আপনি কোনো নতুন পণ্য বাজারে ছাড়বেন। এখন সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী? আর ২ নম্বর প্রবলেম, আপনার পণ্যটি পূর্ণতা পর্যায়ে চলে গেলে আপনি সেই পণ্যের জন্য কী পদক্ষেপ নেবেন?
- স্যার, আমি কি দুইটা প্রবলেমেরই সলভ করতে পারি?
- নিশ্চয়ই।

আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম দুইটা প্রবলেম সলভ করার। অনেকেই ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। একেকজনের জন্য সময় ছিল পনের মিনিট করে। এদিকে আমার প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পার হয়ে গেল। তবু তারা আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছেনই।

ইন্টারভিউ শেষে "প্রশ্ন করা" স্যারটি বললেন, এবার আপনি আসুন। আপনার রেজাল্ট পরে জানানো হবে।

ঠিক তার পাঁচদিন পর আমাকে এ্যাপোয়েনমেণ্ট লেটার দেওয়া হলো। আমি চাকরিতে জয়েন করলাম। আর বর্তমান করা পার্টটাইম জবটা ছেড়ে দিলাম। মেঘাকে আমার নতুন জবের ব্যাপারটা জানালাম। দেখলাম তার মাঝে খুশির কোনো অন্ত নেই। নীলাকে জানালে সে বললো, আলহামদুলিল্লাহ। করতে থাকুন। সামনে আপনার জন্য ভাল কিছু রয়েছে।
.
ভার্সিটি থেকে সকলকে দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেঘাকে বললাম, কবে যাবি ক্যাম্পাসে? নির্দিষ্ট দিনেই? নাকি তারও পরে?
সে বললো, নির্দিষ্ট দিনেই।
আমি বললাম, আমার সেদিন যাওয়া নাও হতে পারে।
- কেন?
- সেদিন আমাদের কোম্পানির একটা প্রোগ্রাম রয়েছে।
- ও, তাহলে পরদিন চলে আসিস।
- আচ্ছা।
.
ক্লাস শুরু হয়ে গেল। আমি প্রথম ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারলেও তার পরের ক্লাস থেকে আবারও নিয়মিত হয়ে গেলাম। এদিকে জবের ওখান থেকেও বেশ সুবিধা পেলাম। আমার নির্দিষ্ট একটা টার্গেট দেওয়া থাকে। সেটা পূরণ করলেই হবে। তাছাড়া সেখানে যেই স্যারের অধীনে আমার কাজ। সেই স্যারও আমাকে খুব ভালবাসেন।

দেখতে দেখতে রেজাল্টের দিন চলে এলো। আজ দুপুর বারোটা কিংবা বিকেল চারটায় আমাদের পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ করা হবে। সকালে ক্যাস্পাসে গেলে মেঘা আমার 'রোল আর রেজিস্ট্রেশন' নাম্বারটা রেখে দিল। ক্লাসে নীলাকে দেখলাম খুব মনমরা হয়ে বসে আছে। তার সাথে একটু কথা বলার সুযোগ হয়ে উঠতেই তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাকে এমন বিষন্ন দেখাচ্ছে কেন? আপনার চোখের মধ্যে আজ কোনো উল্লাস নেই, হাসির আভাস নেই। কোনো সমস্যা হয়েছে?
সে বললো, না। তেমন কোনো সমস্যা না। রেজাল্ট নিয়ে একটা টেনশনে আছি। জানি না কী হবে?
- চিন্তা করবেন না। ইনশাল্লাহ ভাল কিছুই হবে।
- দোয়া করবেন।
- নিশ্চয়ই।

সন্ধ্যার পরপরই রেজাল্ট হাতে পেলাম। পাঁচটাতে "এ" পেয়েছি। আর একটাতে "বি প্লাস" মনে মনে বললাম, মন্দ না। তবে অ্যাকাউন্টিংয়ে তো 'এ প্লাস' পাওয়ার কথা ছিল। যাইহোক, রেজাল্ট মোটামোটি মাপের হলেও একেবারেই যে খারাপ হয়েছে তা নয়। মেঘাকে কল করলাম। প্রথমবার রিং হলো। কিন্তু রিসিভ হলো না। পরেরবার কল করতে গিয়ে দেখি নাম্বার বন্ধ।

নীলাকে কল করতে যাবো। ঠিক সেই সময়ে নীলাই কল করে বসলো। সে বললো, তা গিটারিস্ট সাহেব রেজাল্ট কেমন হলো?
আমি বললাম, একটাতে "বি প্লাস" পেয়েছি।
সে বললো, বাকিগুলোতে "এ প্লাস?"
- না, শুধু 'এ' পেয়েছি।
তার বোধ হয় একটু মনটা খারাপই হলো। সে বললো, কোনটাতে বি প্লাস পেয়েছেন?
- শেষেরটাতে।
- পাবেনই তো। যান, আরো বেশি করে রক্ত দিতে যান।
আমি বললাম, আপনার কেমন হলো?
- সবগুলোতে "এ প্লাস।"
- আলহামদুলিল্লাহ। মিষ্টি পাচ্ছি তো তাহলে।
- মিষ্টি পাবেন। তার আগে কালকে ক্যাম্পাসে আসার সময় আপনার গিটারটা নিয়ে আসবেন। অনেকদিন আপনার গান শুনি না।
- গিটার তো নেই।
- নেই মানে?
- না মানে, তাঁর ছিঁড়ে গিয়েছে।
- তাঁর লাগিয়ে নিয়ে আসবেন।
- না, তা সম্ভব না। তাছাড়া সেদিন পানিতে ভিজে গিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
- দেখুন, অতো কথা শুনতে চাই না। আপনি গিটার আনবেন, ব্যাস।

সে কল রেখে দিল। আমি বিপদে পরে গেলাম। গিটার তো সেই ফর্মফিলাপের সময়ই বিক্রি করে দিয়েছি। এখন নাফিজকেও কল করে কিছু বলতে পারবো না। ভাবলাম, তাও দেখি। একবার কল করে দেখি। সে কী বলে?
নাফিজকে কল করলাম। সে রিসিভ করেই বললো, শ্রাবণ ভাই আমি পাস করেছি।
বললাম, রেজাল্ট কেমন সেটা বল।
সে তার রেজাল্টের বিবরণ দিতে লাগলো। এ, এ প্লাস, বি, এ মাইনাস......
তাকে বললাম, ভাই কাল একটু গিটারটা নিয়ে আসতে পারবি?
- কেন ভাই?
- না মানে একটু বাজাতে চাচ্ছিলাম আরকি! কতদিন বাজানো হয় না।
- ভাই গিটার তো আমার আপু নিয়ে নিয়েছে। সে আর দেবে না আমাকে।
- ও। আচ্ছা ঠিক আছে। কাল দেখা হবে।

নাফিজের সাথে কথা বলা শেষ করে মেঘাকে আবারো কল করলাম। নাম্বার বন্ধ। ভাবলাম, ফেসবুকে নক করে দেখি। ফেসবুকে নক করতে গিয়ে দেখি আমাকে ব্লক করে দিয়েছে। বিষয়টা বুঝতে আমার কোনো বেগ পোহাতে হলো না। কেননা সে আমার থেকে ভাল রেজাল্ট করেছে। তাছাড়া আমার রোল রেজিঃ তার কাছে ছিল। সে সেটা দিয়ে আমার রেজাল্টটাও দেখেছে।
.
পরদিন সকালে মেঘাকে কল দিলাম একসাথে ক্যাস্পাসে যাবো বলে। যেমনটা পূর্বে যেতাম। রিং হলো। কিন্তু সে কেটে দিল। বার কয়েক কল দিতেই সে রিসিভ করে কড়া মেজাজে বললো, দেখছিস না কেটে দিচ্ছি? তো আবার কল দিচ্ছিস কেন?

সে কল কেটে দিল। আমি একা একাই ক্যাম্পাসে গেলাম। গেট দিয়ে ঢুকে শহীদ মিনারের কাছে যেতেই দেখলাম মেঘা কয়েকটা ছেলের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। হাসাহাসি করছে। আমি কাছে গিয়ে বললাম, কেমন আছিস মেঘা?
পাশে থেকে রুহান নামের ছেলেটা বলে উঠলো, মেঘা কেমন আছে সেটা জেনে তোর কি হ্যাঁ?
আমি আবারো মেঘাকে বললাম, মেঘা কেমন আছিস?
মেঘা তখন যা বললো, তাতে আমি বেশ খানিকটা চমকে গেলাম। অবশ্য সে যে এটা বলবে, সে সম্বন্ধে আমি পূর্ব থেকেই অবগত ছিলাম।
সে তার পাশে থাকা ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে বললো, দেখ তো এই ক্ষ্যাত মার্কা ছেলেটা কী বলে?
পাশ থেকে একটা ছেলে কটাক্ষ হাসিতে বললো, তুই কেমন আছিস। সেটা জানতে চায়।
মেঘা বললো, তাকে বলে দে আমি কোনো থার্ড ক্লাস ছেলের সাথে কথা বলি না।

আমার চোখ দু'টো জলে ভরে গেল। আমি জানতাম এমনটা হবে। তবে এত মানুষের সামনে হবে, সেটা জানতাম না। সোজা ক্লাসরুমের দিকে হাঁটা ধরলাম।

ক্লাস ভর্তি স্টুডেন্ট। আজ আর সামনের বেন্চে সিট পেলাম না। দেখলাম নীলা মেয়েদের সারিতে দ্বিতীয় বেন্চে বসেছে। আমি পেছনের একটা সিটে গিয়ে বসে পরলাম। খানিকবাদে মেঘা এবং তার দলবল ক্লাসে ঢুকলো।

স্যার ক্লাসে এসে বললেন, শ্রাবণ এসেছো? আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি বললেন, তোমার রেজাল্ট কেমন?
আমি আমার রেজাল্টটা স্যারকে বললাম। তিনি বললেন, এমন খারাপ হলো কেন রেজাল্ট?
আমি মাথা নিচু করে রইলাম।
স্যার বললেন, আগামীতে ভাল করবে। বসো।
তারপর একে একে স্যার সবার রেজাল্ট শুনতে চাইলো।

ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে নীলা, দ্বিতীয় মেঘা। আর তৃতীয় হয়েছে মামুন নামের একটা ছেলে। আমি দশম স্থানে আছি। স্যার ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলে আমিও স্যারের পিছে পিছে বের হয়ে গেলাম। কিছুদূর যেতেই কারো ডাক শুনে পেছনে তাকালাম। দেখলাম নীলা এগিয়ে আসছে আমার দিকে। তার চোখ দু'টো জলে টলমল করছে। সে কাছে এসে বললো, চিন্তা করবেন না। আগামীতে নিশ্চয়ই ভাল হবে। আর মেঘার সাথে কথা হয়েছে?
আমি মৃদুস্বরে বললাম, হুম।
- কী বললো সে?
- আমি ক্ষ্যাত, আমি থার্ড ক্লাস মার্কা ছেলে।
- ঠিকই তো বলেছে। এটা আপনার প্রথমেই বুঝা উচিত ছিল। এবার তো দেখলেন, সে কেন আপনার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছিল?
আমি মাথা নিচু করে 'হ্যাঁ' বললাম।
- গিটার কোথায়? গিটার আনেননি?
- না।
- কেন?
- নষ্ট হয়ে পরে আছে।
- মিথ্যা বলেন কেন? বললেই তো পারেন গিটারটা বিক্রি করে দিয়েছেন।
- কিন্তু আপনি...
- সে আমি জানি। নাফিজ আমার ছোট ভাই। আমরা এক বছরের ছোট বড়। আপনি যেদিন তাকে ফোন করে বলেছিলেন আপনার গিটার বিক্রির কথা। সেদিন সে আমাকে বিষয়টা বলে। আর আমি তাকে টাকা দিয়ে দেই। পরে সে আপনার থেকে গিটারটা নিয়ে আসে।

আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। সে বললো, চলুন আমার সাথে। নাফিজ নিচে গিটার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকদিন আপনার গান শুনি না। আজ শুনাবেন। চলুন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি আগের পোষ্টে বলেছেন আজ মেঘা শেষ পর্ব পোষ্ট করবেন। আপনি কথা রেখেছেন।
মেঘা সব গুলো পর্ব গুলোই বেশ আবেগ দিয়ে লিখেছেন।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫১

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা।

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১৩

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: প্রতিটি পর্বই পড়লাম, সবাই লিখতে পারেনা - আপনি লিখতে পারেন, লিখতে থাকুন।
লাইক!

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:০০

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়

৩| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনুপম ভাবন, ভালো লাগলো ।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩৬

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.