নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেন মৃত্যু হচ্ছে লোকালয়ে প্রতিদিন,মরে যাচ্ছি আজাবে সুদহীন...

নির্বাসিত শব্দযোদ্ধা

শহুরে ডিপ্রেশনে আবদ্ধ.....

নির্বাসিত শব্দযোদ্ধা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন আর শখ যেগুলোর পেছনে ছুটেছি এপর্যন্ত...

০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:২৩

খুব বাচ্চা মানে ক্লাস সেভেন-এইটে যখন ছিলাম তখন প্রযুক্তিব্লগগুলা এতো ঘাটতাম যে নিজেই অবাক হয়ে যেতাম।স্বপ্ন ছিলো ফ্রিল্যান্সার হবো।অনেক টাকা কামাবো।পেমেন্ট ওয়ে,কাজ কি কি করতে হবে,কিভাবে করলে প্রোফাইল ইম্প্রুভ হবে,কি করলে কাজ শুরু হবে এসব পড়তে পড়তে বছর দুই-তিন কেটে গেলো।বাবা-মায়ের চোখ রাঙানী উহ্য করে ইন্টারনেটের বিল মেটানোর ভয়ে কখনো সরাসরি টাকা কামানো হলো না।অল্প কিছু ডলার মানে ৪০-৫০ ডলার এর মতো উঠিয়েছিলাম সব মিলিয়ে মাইক্রোওয়ার্কাস থেকে।ফ্রিল্যান্সার হওয়ার শখটা ওই বাচ্চামীর মধ্যেই থেকে গেলো...
.
ক্লাস নাইনেই বোধ হয় ব্লগার ডট কমের টেমপ্লেট এডিট-টেডিট করে একটা ব্লগ সাইটও বানিয়ে ফেললাম।ওটায় বোধহয় দেড় লাখের মতো ভিউ ও আছে এখন।আমি ব্লগার টেমপ্লেটের আগা-মাথা সব বুঝতাম...
.
লেখবো এমন চিন্তা ভাবনা বাচ্চা বয়স থেকেই ছিলো।বড় হতে হতে এগুলো মোটামুটি চাগার দিয়ে বসলো।একাধিক প্রেম এবং সেখান থেকে হতাশা-ভালোবাসা এটাকে মোটামুটি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেলো।প্রচুর লেখা আসতে থাকলো।নাইন থেকে শুরু এবং শেষ হয়তো এখনো হয়নি।অল্প বয়সেই কয়েকটা স্ক্রিপ্ট লিখে ফেললাম।একটার কাজ শুরু ও হলো।ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলের স্ক্রিপ্ট নিয়ে ফুললি কমার্শিয়াল নাটক হচ্ছে ব্যাপারটা ভাবেরই বটে।নাটক শেষের দিকে এসে অফ হয়ে গেলো।প্রডাকশনটাই ভেঙে গেলো।মন আমার যতটা খারাপ হয়েছিলো আমার স্ক্রিপ্ট যে ভাই অনেক বলে নিয়েছিলো তার বেশি হলো।কারণ সে কথা দিয়েছিলো স্ক্রিপ্ট দিয়ে নাটক সে বানিয়েই ছাড়বে...
.
এর পাশাপাশি চলতো প্রচুর ব্লগ পড়া।আমি ক্লাস সেভেন থেকেই এখনো পর্যন্ত কয়েকটা জিনিস নিয়মিত চেক করি। এক,মেইল দুই,ব্লগের আপডেট।আগে প্রযুক্তিগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতাম। বড় হওয়ার সাথে সাথে সামুতে আসক্ত হলাম।মাথায় ভূত চাপলো জাপান যেতে হবে। সব প্রসিডিউর মোবাসাকু স্কলারশিপের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ কোনটায় কম খরচে যাওয়া যায় তার চিন্তা।যে বছর ভাবলাম এ বছর আবেদন করবো সে বছরেই শুনলাম জাপানী ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট দেয়া ছাড়া আবেদন করা যাবে না।মন খারাপ হলো।বাবা-মা এবারও সায় দেয় নি ঘর ছাড়তে।বিদেশ আমাকে এখনো টানে সুন্দর লাইফস্টাইল আর নীল আকাশের জন্য।যে দেশে পরিষার সবুজ ঘাস আর নীল আকাশ আছে সে জুতো মুছতেও রাজী আমি।শুধু পাশে একটা নোটখাতা চাই।স্মার্টফোন হলেও চলবে। কলেজ লাইফ ভালোই যাচ্ছিলো।পুরোপুরি স্বাধীন জীবন যাপন।স্কুলের মতো এ জীবনেও টাকা পয়সা ছিলোই না।অনেকটা ফুটো পয়সার মতোই চলেছি।যেই স্বপ্ন টা যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো জাপানে। সেটা এসে থামলো ইন্ডিয়ায়।বহুৎ ইনফরমেশন আর বহুৎ ঘাটাঘাটি করে ICCR এ এপ্লাই করলাম।রিটেনে টিকে ভাইভার ও ডাক পেলাম।ভাইভা তে গিয়ে মন গেলো খারাপ হয়ে।আমার চাইতে কম বয়সী ছেলে-মেয়েগুলা যেখানে বাবা-মা আর সাথে একটা কোর্ট-টাই হাকিয়ে গিয়েছি আমি গিয়েছিলাম সাদা শার্ট আর প্যান্ট পড়ে।বাসা থেকে বাবা তো যাওয়ার ভাড়াই দিবে না। মা দিয়েছিলো ভাড়া। জীবনের প্রথম কোনো এম্ব্যাসীতে ঢুকলাম।কোলকাতা আমার স্বপ্নের শহর।শুধু ট্রামে চড়ে ওই শহরে ঘুরতে চাই আমি।আমি চাই মাটির বাসনে চা খাওয়া বাসন গুলো দেখতে। শহরের পুরোনো শ্যাওলা ধরা বিল্ডিং এর ফাকে ফাকে হাটতে।আমি কোলকাতার রাইটারদের ব্লগের ভীষণ ফ্যান।আমি জানিনা কেনো তাদের শব্দ চয়ন অস্বাভাবিক ভালো লাগে আমার।যেটা বলছিলাম,ভাইভার পরে আর কখনো এম্ব্যাসী থেকে কল আসেনি কর্কশ কণ্ঠের ওই রাগী ব্যক্তির।
.
যদিও বাবা-মায়ের উপর অভিমানের কমতি ছিলো না।আমার স্বপ্নই ছিলো ঢাকাতে পড়বো।সেটা যেই কলেজেই হোক।চুরি করে আবেদন করলামও ঢাকার কলেজগুলোতে। আবেদন করলাম না শুধু বাবার কলেজ রাজেন্দ্রতে।রাজউক,সিটিতে চান্স পেয়েও বাবার তোপের মুখে ভর্তি হতে পারলাম না।কষ্ট লাগতো যখন অনেক বন্ধুর বাবা মা এসব কলেজে ছেলে চান্স না পাওয়ায় আক্ষেপ করতো। পুরোপুরি মা রিস্ক নিয়ে ভর্তি করালো যশোর ক্যান্টে।মা ই সব খরচ দিতো।সব বলতে কলেজ বেতন,আর স্যারের খরচ।হাত খরচ শূণ্যই ছিলো।৪০০ এর জায়গায় ৫০০ করে স্যারদের বেতন নেয়া। আর ছুটির সময়ের বেতন মেরে আমার উদরপূর্তি হতো।আহেম!!আমার না। আমার মোবাইলের বিলের।
.
এসময়ের আবার এক মহিয়সী নারী ছেড়ে যাওয়ার দরুণ চিন্তা ভাবনা কনভার্ট হয়ে মুভিতে গেলো।সাথে চালু হলো ফ্রি নেট।প্রতিদিন ১-৩ টা মুভি দেখে হতাশা কাটাতাম।লাস্টে হতাশা কাটলো রেজাল্ট টাও আল্লাহ আল্লাহ করে ভালো হয়ে গেলো।বেচে গেলাম ওই যাত্রায়।ভয়ে ছিলাম,বাবার অবাধ্য হয়ে যশোরে আসলাম রেজাল্ট খারাপ হলে কি না হয়।
.

গিটারের নেশা আসলো।কয়েকমাস ইউটিউবে টিউটোরিয়াল নামিয়ে টুং টাং করলাম।কাজ হলো না।খুব বাজে স্মৃতিশক্তির জন্য।লেখা চলছিলো।কবিতা ওই সময়টাতে ভালো পরিমানেই লিখে ফেলি।কবিতা বললে ভূল হবে লাইন মেলানো বা অক্ষর মেলানো শব্দ।মাত্রা কখনো মিলেছে কিনা জানিনা।
.
ঢাকায় আসলাম।সেই স্বপ্নের শহর।ঢাকায় যাওয়ার পর ঢাকা ঘুরতে ঘুরতে মাথা গেলো।এক গাদা নতুন লোকের সাথে পরিচয় হলো।অনলাইনে যাদের সাথে ক্লাস সিক্স সেভেন থেকে কথা হতো তাদের সাথে দেখা হলো।ব্যাপারটা উপভোগ করতাম।মিউজিসিয়ান,ডিরেক্টরসহ অনেকের সাথেই সামনাসামনি দেখা হলো।অনেক আগের ক্রেজ নতুন করে চাড়া দিলো। পশু ভালোবাসে এমন লোকগুলোর কয়েকজনের সাথে কাজ করলাম।কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার পড়াশোনা ছেড়ে এসব কাজে পুরোপুরি নামতে ভয় করতো।
.
এক বন্ধুর সাথে ঘুরে তাকে কিছু গানও লিখে দিলাম,সুর ও করে দিলাম। গান ও হলো আনপ্ল্যাগড।বন্ধুও কোথাও চান্স না পেয়ে হতাশ হয়ে গেলো।আমার গান লেখা আর সেটা নেয়ার লোকের অভাব দেখা দিলো।আর গান হলো না।আমি ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম।রাস্তায় শুয়ে থাকা মানুষের কথা থেকে শুরু করে বাসের কন্ডাকটর, সব্জী বিক্রেতার গল্প শুনতাম।আমি মানুষ দেখতে ভালোবাসি।আমি ফিজিক্যালের সামনে বসে জ্যাম দেখতাম।ইফতারের সময়ে ফাকা রাস্তায় দোকা রিক্সায় চুমু খেয়ে ইফতারি করা যুগলকে দেখতাম।বড় বড় মসজিদে গিয়ে তাকিয়ে ভাবতাম মানুষ এতো টাকা কিভাবে কামায়?
.
নষ্ট হয়ে গেলো সব।স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় জাবিতে অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণের স্বাদ পেয়েও বাবার ইচ্ছায় আসলাম বরিশাল।অনেক ক্রেজ উঠলো কবিতার বই বের করবো।পিসি ছিলো না।বাবা-মা কে বারবার বলেও টাকা না পেয়ে নিজের নামে একটা বই বের করা হলো না। পান্ডুলিপি ছাড়া কবিতা জমা দিয়ে প্রথমেই এক সংকলনে ঠাই করলাম।নামকরা অনেক কবির অপ্রকাশিত কবিতার পাশে নিজের নাম দেখে ভালো লাগতো...
.
অনেক ডিরেক্টর স্ক্রিপ্ট চাইতো।দিতাম,অনেকে কাজ করতে চাইতো কিন্তু আমি স্ক্রিপ্টে এমন সব প্যাচ লাগিয়ে রাখতাম যেটা অনেক ডিরেক্টর ম্যানেজ করতে পারতো না।আবার ওটা ছাড়া মানানোও যেতো না গল্পটা।বরিশালে এসে কিছু ভূল করে ফেলেছিলাম।ভূলের মাসুল দিলাম নিজেকে আবার ভলান্টিয়ারিজমে কনভার্ট করে।সাথে আরও কিছু করতে চাইতাম।এখনো চাই, কবিতা গুলোর একটা আশ্রয়স্থল চাই।চাই একগাদা সার্টিফিকেট।শুধু সার্টিফিকেট না,অভিজ্ঞতা আর পরিচিত মানুষ। আর চাই কতোগুলো ক্রিয়েটিভ মানুষের সাথে মিশতে।এখানে অনেক কিছু থাকলেও মন মতো আমি লোক পাই না মেশার।মানুষ স্বার্থের পেছনে ঘোরে এটা একরকম কিন্তু এরা অহমিকার পেছনে ঘোরে।এদের নিজেকে নিয়ে, নিজের শহরকে নিয়ে গর্ব আছে।গৌরব নেই।এরা নিজেকে কাজে লাগাতে জানে না।এরা আরেকজনকে এপ্রিশিয়েট করতে জানে না। একটা শর্টফিল্ম বানাবো বলে মানুষের পেছনে পেছনে ঘুরতাম।স্ক্রিপ্ট লিখে ফেললাম ৫-৬ টা।একটা প্রজেক্টে গিয়ে এক ফ্রেন্ডকে নিয়ে প্ল্যান করলাম প্র‍্যাংক ইন্টারভিউ করবো।ক্যামেরা,এক্সাম এসব ম্যানেজ হতে হতে দেখলাম কয়েকদিন পরেই ছোট আজাদ ইন্টার্ভিউ নিচ্ছে।কাছের এক বন্ধুর ক্যামেরাও ছিলো।সে প্রথমে আগ্রহ দেখালেও পরে দেখলাম তার আসলে আগ্রহ নেই।কতোগুলো প্রডাকশন কে ধরলাম।তারা টাকা চাইলো প্রচুর।টাকা পাবো কই? স্বপ্ন যাবে কই? কিছুই হলো না...
.
যখন যেই ক্রেজ গুলো উঠেছিলো কোনোটাই ঠিকভাবে পূরণ হয়নাই টাকার অভাবে কথাটা ভূল শোনায়। আমি ম্যানেজ করতে পারি নাই।ম্যানেজমেন্টে পড়েও আমি এখনো ম্যানেজ করতে শিখি নাই।কারণ পাবলিক ভারসিটিকে মানুষ যা বাইরে থেকে ভাবে ভেতরে তার কিছুই হয় না।এখানে মুখস্ত করে হয় টিচার আর মুখস্ত করে এসে ক্লাসে বুলি ছাড়লে হয় লেকচার।আমি ভাবি ক্লাস টু-থ্রিতে আমি স্কুল থেকে গিয়ে আব্বুর ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসে আব্বুর মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা চোখগুলো দেখতাম।কতো চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে মজার মজার গল্প করতো,বোঝাতো আর সবাই শুনতো।আমার শ্রদ্ধা বাবার প্রতি তখনই চলে আসে...
.
আমার খুব খারাপ লাগে আমি কোনোদিন স্থির হতে পারিনি।অল্প বয়সে আমি হারিয়ে গিয়েছি।গলি থেকে গলিতে...
.
আমি নিজে সফল হতে চাই না।আমি মানুষকে সফলতার মুখ দেখাতে চাই... :)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:১৬

অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: আপনার স্বপ্নের পেছনে দৌড়ানোর গল্প পড়লাম। ভাল লেখনী। আপনার বাবার প্রতি অভিমান টের পাওয়া গেল। বিদেশে গিয়ে জুতা মুছতেও রাজী কথাটা ছ্যাবলামি মনে হইল। বলব হাল ছাড়বেন না স্বপ্নের পিছনে লেগে থাকুন। আর যেখানেই, যে শহরে, যে দেশেই আছেন তাকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শিখুন

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৩২

নির্বাসিত শব্দযোদ্ধা বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:১৭

অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: আপনার স্বপ্নের পেছনে দৌড়ানোর গল্প পড়লাম। ভাল লেখনী। আপনার বাবার প্রতি অভিমান টের পাওয়া গেল। বিদেশে গিয়ে জুতা মুছতেও রাজী কথাটা ছ্যাবলামি মনে হইল। বলব হাল ছাড়বেন না স্বপ্নের পিছনে লেগে থাকুন। আর যেখানেই, যে শহরে, যে দেশেই আছেন তাকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.