নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন শখের ব্লগার, ব্লগ লিখছি প্রায় বারো বছর হবে, তবে কোনো ব্লগে বেশীদিন থাকতে পারিনি, কেননা, লেখার কারণে হউক, বা ব্লগের নিয়ম কানুনের কারণে হউক, বার বার থেমে যেতে হয়েছে, ব্লগ লেখার বা হেল্প চাওয়ার কারণে সব কিছু হারিয়েছি।

সভ্য

আমি একজন ভালো মানুষ।

সভ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজধানীতে ঠান্ডা মাথায় একটি খুনের ঘটনা।

০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৩২

কুল ব্লাডেড মার্ডার

ঢাকা শহরে বিখ্যাত যতো কসমেটিক সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছেন ডাক্তার লরেন্স তাদের মধ্যে অন্যতম, প্রধানমন্ত্রী থেকে গোল্ড মেডেল পুরস্কার পাওয়া ছাড়াও তার ঝুলিতে আছে দেশের এবং দেশের বাইরের অনেক অনেক পুরস্কার ও মেডেল। গরীব রোগীদের জন্য তিনি বিনা পয়সায় চিকিৎসা করেন বলে তার খুব নাম এই পেশায়। তার বেশীরভাগ রোগী হচ্ছেন অভিনয় জগতের মানুষ থেকে শুরু করে সরকারী ও বেসরকারী দলের বড় বড় নামী দামী ব্যাক্তিবর্গ। আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীসহ এসিডে ঝলসানো মুখগুলোও তিনি সারিয়ে তুলেন তার নিখুঁত হাতের কাজ দিয়ে, তাই তার নাম সারা বাংলাদেশ জুড়ে। বিদেশে পড়ালেখা করলেও শুধুমাত্র মাটির টানে তিনি দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন প্রায় বিশ বছর ধরে কাউকে বিনা পয়সায় আবারও পয়সাওলাদের কাছ থেকে বেশী পয়সায়, তার জগত সংসারের সকলেই আমেরিকার মাটিতে সেটেল্ড। শুধু তিনিই থাকেন বাংলাদেশে।

ঘড়ির কাটা দশটা বাজার সাথে সাথে মিষ্টি শব্দে দশটার ঘন্টা বেজে উঠে, আর ডাক্তার লরেন্সের সেইদিনকার মতো কাজ শেষ হয়। পেশায় যদিও তিনি একজন বিশেষজ্ঞ কসমেটিক সার্জারির ডাক্তার তবে গরীবদের প্রতি তার আছে নিখাদ ভালবাসা। প্রতিদিন নিয়ম করে বিকাল চারটা থেকে রাত দশটা পূর্যন্ত রোগী দেখেন ডাক্তার লরেন্স।

সেইদিন ছিলো শনিবার, বাইরে ঘুটি ঘুটি বৃষ্টি পড়ছে, এক নাগাড়ে কাজ করে চলেছেন ডাক্তার লরেন্স, বাইরে ওয়েটিং রুমে তখন আরেকজন রোগী আছেন যার সিরিয়াল দেওয়া আছে যদিও তখন রাত দশটা বাজতে আর মাত্র দশ মিনিট বাকী, ডাক্তার লরেন্স সিন্ধান্ত নিয়ে ফেললেন যে শেষের রোগীটিকে আগামী পরশু আসতে বলবেন কেননা রবিবার তিনি রোগী দেখেন না, ধর্ম-কর্ম আর বাইবেল পাঠসহ গরীবদের পাশে সময় কাটান। শেষ রোগীকে বিদায় দিয়ে তিনি আজকের মতো কাজ শেষ করবেন ভেবে রাখলেন। তার এসিস্টেন্ট সোহানাকে নির্দেশ দিলেন একটা ইনজেকশন পুশ করতে আর ঠিক তখন তিনি ঘড়িতে দশটার ঘন্টা শুনতে পান, তিনি তার গ্লাভস খুলে তার এসিস্টেন্ট সোহানাকে জানালেন বাইরে ওয়েটিং রুমের রোগীকে যেনো বলে দেন পরশুদিন দেখা আসতে, আজ আর কোনো রোগী দেখবেন না। এসিস্টেন্ট সোহানা বাইরের আগুন্তককে কথাটা বলতে যাবার ঠিক আগেই রাজা (ছদ্মনাম) নামক রোগীটি দরজা দিয়ে আওয়াজ ছাড়া ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকে পড়েন।

রাজা সোজা ডাক্তারের কাছে এসে বলেন, ডা্ক্তার সাহেব, দেখুন আমি সকালে সিরিয়াল দিয়ে তবে আপনাকে দেখাতে এসেছি, অতএব আমাকে না দেখে আপনি চেম্বার বন্ধ করতে পারেন না। ডাক্তার লরেন্স এক মিনিট চিন্তা করলেন এবং সোহানাকে প্রেসক্রিপশেন বুঝিয়ে দিয়ে আগের রোগীকে বিদায় দিতে বলে রাজার দিকে মনোনিবেশ করলেন আর রাজাকে বললেন, আপনি পরশুদিন আসবেন আর অনুমতি ছাড়া এভাবে চেম্বারে ঢুকে পড়বেন না, কথা শুনে রাজার মধ্যে কোনো ভাবান্তর হলো না তিনি তার পিছনের পকেট থেকে একতাড়া পাচশ টাকার নোট বের করে ডাক্তারের টেবিলের উপর রাখলেন এবং সামনের পকেট থেকে ওয়াল্টার নাইন এম এম পিস্তলটা রাখলেন ঠিক ডাক্তারের সামনে এবং বললেন, দেখুন হয় আপনি আমার কথা মতো কাজ করবেন নয়তো আমাকে গুলি করে মেরে ফেলবেন, ডাক্তার লরেন্স নিরুপায় হয়ে শেষে রাজার কথায় মনোযোগ দিলেন, আজ তার সব নিয়মকানুনের চেইন ভঙ্গ হলো, তবু রোগী বলে কথা, ঠিক তখন চেম্বারের দরজায় ধাক্কা পড়লো, ডাক্তার ‘কাম ইন’ বলার সাথেই সোহানা ঢুকলো, এবং টেবিলের উপর টাকা আর পিস্তল দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো, তবে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন ডাক্তার আমার আজকের মতো কাজ শেষ, আমি কি যেতে পারি? ডাক্তার থাকে চলে যেতে ইশারা করলেন, শেষে যোগ করলেন আগামী কাল রাউন্ড ডিউটি দেওয়ার জন্য, সোহানা চলে যেতেই ডাক্তার রাজার দিকে ফিরলেন, “এবার আপনার কথা শোনা যাক”,।

সোহানা দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে প্রতিটি ক্যাবিনে একবার করে উকিঁ দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হলেন, মনে মনে ভাবলেন আজ তার একটু তাড়াতাড়ি যাবার দরকার ছিলো, ছোটো মেয়েটা অংকে খুবই বাজে নম্বর পেয়েছে তাই তাকে নিয়ে বসতে হবে, তাই ডাক্তারকে বলবো বলবো করেও বলতে পারেনি, কিন্তু এ রোগীটি কেমন যে ডাক্তারের টেবিলে টাকা আর পিস্তল রেখে চিকিৎসা করাতে চাই? আজ প্রায় ছয় বছর সোহানা ডা্ক্তার লরেন্সের এসিসটেন্ট হিসাবে কাজ করছে এইরুপ কখনও আগে তার চোখে পড়েনি, তবে কি তার পুলিশে খবর দেওয়া উচিত, তবে যেহেতু ডাক্তারের থেকে কোনো নির্দেশ পান নি তাই তিনি নিজ গন্তব্যের দিকে যাওয়ার জন্য একটা সিএনজি নিলেন।

এবার হসপিটাল সমপর্কে কিছু কথা।

লরেন্স কসমিটোলোজী হসপিটাল’ বনানীর ৪ নম্বর রোডের দুই নম্বর বাড়ীটিতে বিশাল জায়গা নিয়ে গড়া হয়েছে। আপাতত দশ শষ্যা বিশিষ্ট হসপিটাল, এর একদিকে বার্ন ইউনিট, ল্যাব লাইব্রেরীসহ অপরদিকে দুটি ভিআইপি কেবিন রোগীর আত্মীয়স্বজনদের বসার জায়গা এবং উপরের তলায় ডাক্তারের একান্ত নিজের থাকার জায়গা, ড্রাইভার, সিকিউরিটি গার্ড, বাবুর্চিসহ দুইজন ওয়াড্রেনের থাকার জায়গা, দোতলা এমন ভাবে তৈরী করা হয়েছে যেনো কারো প্রাইভেসীর সমস্যা না হয়। চব্বিশ ঘন্টা হাসপাতাল পাহাড়া দেওয়ার লোকসহ সিসিটিভি ক্যামেরা অপারেটর সর্বক্ষণ নিযুক্ত রয়েছে যাদের ডিউটি রোষ্টার টাইপের অর্থাৎ একজন না আসা পূর্যন্ত অন্যজনকে ডিউটি চালিয়ে যেতে হবে। তবে যে আসবে না তাকে অবশ্যই একদিন আগে জানাতে হবে, আর অসুখ বিসুখ ইত্যাদি হলে একটা ফোন কল করে দিলে সে জায়গায় অন্য লোক ডিউটি করবে, হাসপাতালের নিয়ম কানুন তেমন কড়া না হলেও তবে শৃঙ্খলার মধ্যে। তাই ডাক্তারকে তার ডিউটি করতে তেমন বেগ পেতে হয় না।
কিন্তু রাজা নামক যে রোগীটি তার সামনে বসা’ এ কেমন রোগী যে পিস্তল আর টাকা দিয়ে তাকে পরীক্ষা করছে তাহলে বিষয়টাকি মানষিক? দেখাযাক রোগী কি বলতে চাই। ডাক্তার বললেন, বলুন আপনার কথা।
রাজা তার কাহীনি শুরু করলো এইভাবে। সে চট্টগ্রামের একজন জঙ্গী-সন্ত্রাসী। তার নামে প্রায় এগারোটি মামলা আছে, দুইটা মার্ডার কেসে সে সরাসরি জড়িত আর দুইটা সে নিজের হাতে করেছে যার প্রত্যাক্ষদর্শীরা সরকারী লোক, সে ডাক্তারকে অনুরোধ করে যে ‘দেখুন ডাক্তার সাহেব, আমার যা হবার হউক, আপনি আমার চেহারাটা পরিবর্তন করে দিন’, আমি ভালো হতে চাই, এইসব কাজ ছেড়ে দিয়ে একটা সুন্দর জীবনযাপন করতে চাই, কিন্তু যতবারই আমি সৎ জীবনযাপন করতে চেয়েছি ততবারই আমার চেহারার কারনে আমি পারছি না, এই চেহারাটায় আবারও আমাকে আগের জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, আমি চাই কেউ আমাকে না চিনুক। শুনেছি ইদানীং কসমেটিক সার্জারী করে চেহারা পাল্টানোর কথা, তাই আপনার কাছে এসেছি, আপনি আমার চেহারা পাল্টানোর ব্যবস্হা করে আমাকে একটা সুন্দর জীবনযাপনের ব্যবস্হা করে দিবেন যেনো আমাকে দেখে কেউ আর চিন্তে পারবে না, টাকার জন্য চিন্তা করবেন না, কথাটা বলে রাজা এবার তার ছোটো ব্রিফকেস খুলে এক তাড়া হাজার টাকার নোট বের করে ডাক্তার লরেন্সের টেবিলের উপর রাখেন। এবং বললেন, দেখুন আমার বর্তমান চেহারা প্রতিটি থানায়, পুলিশের ওয়ানটেড লিষ্টের ছবিতেও আছে, তাই আমি আমার বর্তমান চেহারা পরিবর্তন করতে চাই, আপনি আমাকে এই বিষয়ে সাহায্য করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

কথাগুলো বেশ মোলায়েম ভাবে রাজা উচ্চারণ করেন। আর যদি তা না পারেন তবে আমাকে মেরে ফেলুন, এই নিন বলে রাজা আবারও পিস্তলটা ডাক্তারের দিকে বাড়িয়ে ধরেন। ডাক্তার মনে মনে হাসেন আর বুঝতে পারেন, এই নাছোরবান্দা রোগীটিকে সে খুব সহজে বিদায় করতে পারবেন না, তাছাড়া একরাতে কখনো চেহারা বদলানো যায় না। ডাক্তার বলেন, দেখুন মিষ্টার, আপনি যা চাইছেন, তা করতে অন্ততঃ চার থেকে পাচঁ দিন সময় লাগবে, এই সময় না দিলে আমার পক্ষে আপনার চেহারা পাল্টানো সম্ভব নয়, আর আমাদের নিয়ম কানুন মতো চলতে হবে’ এইসব যদি মানেন তবে আপনাকে ভর্তি করাবো নয়তো আই এম সরি’ বলে ডাক্তার তার জিনিষপত্র গোছাতে শুরু করেন।

রাজা চিন্তা করতে থাকেন, কি করা যায়, অতপর চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে পাচঁ দিনের মধ্যে রাজার চেহারা পরিবর্তন করে দেওয়া হবে এইরুপ কথাবার্তার মধ্য দিয়ে ডাক্তারের সাথে এক সমঝোতায় আসে রাজা এবং সেই রাতেই রাজাকে ডাক্তার লরেন্সের প্রাইভেট হাসপাতালের ভিআইপি ক্যাবিনে ভর্তি করিয়ে নেওয়া হয়, অন্য ক্যাবিনগুলো থেকে তখন রোগীদের নাক ডাকার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, এই হাসপাতালে নরমাল ক্যাবিন পেতে একমাস আগ থেকে লাইন দিয়ে রাখতে হয়, কারণ এখানে নরমাল ক্যাবিন আছে শুধু দশটি যার প্রতিটি বেডে রোগী আছে, ইমারজেন্সী বা ভিআইপি দুটো ছাড়াও আরও দুটি ভিভিআইপি ক্যাবিন আছে যেগুলো সরকারী মন্ত্রীদের জন্য রাখা আছে। আপাতত: রাজাকে ভিআইপি ক্যাবিনে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়, পুরো চার লাখ টাকা এডভান্স নিয়ে ডাক্তার রাজাকে একটা ঘুমানোর টেবলেট ও মুখের স্কিন লুজ করার ক্রিম লাগিয়ে একটা স্যালাইন পুশ করতে বলে দেন কর্তব্যরত নার্সদের, সেইদিনের মতো ডাক্তার লরেন্স তার চেম্বার বন্ধ করে উপরে উঠে চলে যান, নীচে তার হসপিটাল দেখার জন্য দুইজন আয়া ছাড়াও দুইজন নার্স সর্বক্ষণ রোগীদের সেবায় নিয়োজিত আছেন, রাজা তার কাজুয়াল ড্রেস ছেড়ে হাসপাতালের নিয়মমতো নাইট গাউন পড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেও তার মনে চলছে তখন অন্য চিন্তা, তার চেহারা ঠিকমতো পরিবর্তন করতে পারবে তো এই ডাক্তার?

এদিকে রাজাকে ক্যাবিনে পাঠিয়ে ডাক্তার তার দুতলায় উঠে যান রাত্রে তেমন একটা খান না তিনি ফল জাতীয় কিছু একটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। আজ খুব ধকল গেছে শরীরের উপর তাই বিছানায় গা লাগাবার সাথে সাথে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।

প্রথম রাত সবকিছু ঠিকঠাক মতো কাটে, দিনটি রবিবার থাকায় ডাক্তার চেম্বার বন্ধ থাকলেও রোগীদের আত্মীয়রা বিকালে দেখা করার সময় তাদের নিকটাত্মীয়দের দেখতে চলে আসেন বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পূর্যন্ত দেখা করার সময়। রাজার এই ঢাকা শহরে দেখা করার কেউ নেই, তাই তাকে টিভি দেখে সময়টা কাটাতে হয়। কিন্তু বেশীক্ষণ টিভি দেখতে কার ভালো লাগে, একসময় সে রুম থেকে বের হয়, ঘুরতে ঘুরতে এক ফাকে সে ল্যাবে ঢুকে পড়ে, ডা্ক্তার সাহেবের এই ল্যাবে আছে নানান ওযুধের কাচামাল, রাজা ঘুরতে ঘুরতে একটা জারের দিকে চোখ আটকে গেলে সে এগিয়ে গিয়ে জারটিকে ভালো করে দেখে, তারপর জারটির ঢাকনা খুলে কিছু পা্উডার জাতীয় তুলে এনে নাকের কাছে ধরে গন্ধ নিয়ে বুঝতে পারে এই জিনিষ দিয়ে ডা্ক্তার কি করেন? এটাতো ব্রা্উন সুগার বা বাংলায় যাকে বলে হিরোইন? জারের মাঝে যে পরিমাণ হিরোইন আছে এর বাজার মূল্যই হবে প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি, তার মাথা চিলিক দিয়ে উঠে, কিন্তু হঠাৎ কারো পদশব্দে সে তাড়াতাড়ি ল্যাব থেকে বেড়িয়ে পড়ে, কিন্তু ধরা পড়ে যায় এক নার্সের কাছে, নার্স তাকে কর্কশ ভাবে জিজ্ঞাসা করে, “আপনার এখানে কি দরকার?” রাজা আমতা আমতা করতে থাকে, কি বলবে সে বুঝতে পারে না, শেষে বলে ‘দেখুন একটু ঘুরে দেখছিলাম এই আর কি; নার্স বলেন, যান, নিজের ক্যাবিনে যান, আর অনুমতি ছাড়া ক্যাবিন থেকে বের হবেন না। দিস ইস ইওর লাষ্ট ওয়ার্নিং, বলেই নার্স চলে যায়।

রাজা ক্যাবিনে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকেন ‘কোটি টাকার হিরোইন, নিশ্চয় ডা্ক্তারি কাজে এইসব লাগে, কিন্তু বাইরে বিক্রী করলে বেশ টাকা পাওয়া যাবে, ভাবতে ভাবতে তার মুখ চোখ জ্বলজ্বলিয়ে উঠে...। রাত্রের খাবারের আগে সাথে করে নিয়ে আসা কিছু হিরোইন সে বাথরুমে গিয়ে গিলে ফেলে, আহ...কি আরাম, কতদিন পর হিরোইন খাওয়া হলো..আরও কিছু নিয়ে এলে ভালোই হতো, কিন্তু হারামী নার্সটার কারনে...ভাবতে ভাবতে সে রঙ্গীন জগতে চলে যায়, রুমে এসে সে দরজা বন্ধ করে টিভি ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, রাত্রে খাওয়ার সময় ক্ষিদে নেই বলে সে জানিয়ে দেয়, এইভাবে পর পর তিন দিন ওষুধের উপর আর হিরোইন খেয়ে খেয়ে তার কিভাবে তিনদিন কেটে যায়, চতুর্থদিন তার অপারেশন।

রাত দশটার পর তার যেহেতু অপারেশন, সেহেতু তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়, কিছু ওষুধ খাওয়ানো হয় যা অপারেশনের সময় তার বডি টেম্পারেচার, হার্টবিট নরমেল রাখতে সহায়তা করবে, সারাদিন তার খুব বাজে সময় কাটে, বিকেলে ডাক্তার তার রুমে আসে, সাথে কয়েকটা ছবি নিয়ে তার রুমে ঢুকে ডাক্তার সহাস্যে জানতে চাই ‘কেমন আছেন রাজা সাহেব? রাজা মিন মিন করে উত্তর দেয়, ভালো। আচ্ছা দেখুন তো, আপনার অপারেশনের পর কোন ইমেজটা হলে আপনার পছন্দ হবে? রাজা একটা একটা করে ছবি দেখে..সাত নম্বর ছবিটা মোটামুটি, সে সাত নম্বর ছবিটাকে বেছে নেয়। ডা্ক্তার বেড়িয়ে গেলে রাজা যেনো একটা হাপ ছেড়ে দিয়ে মনকে বলে, ডিয়ার রাজা, তোমাকে এবার আর কেউ চিনতে পারবে না, তুমি রাজা থেকে হয়ে যাবে ইরফান আলী, নিজের নাম ঠিক করে রেখেছে সে আগে থেকেই। অপারেশনের পর তার নাম হবে ইরফান আলী। সে তার ব্রিফকেস খুলে দেখে তার পিস্তলটা? না, জায়গা মতো আছে, একবার ম্যাগাজিনটা খুলে দেখে নেয়, তারপর সাইলেন্সারটা লাগিয়ে রেডি করে রাখে, কেননা আজ এই ডাক্তারের শেষ দিন, অপারেশনের পর সে এমন কিছু রাখবে না যা থেকে পুলিশের ধারণা হবে ‘এই লোকটি আগে রাজা ছিলো’।

রাত দুইটায় জটিল অপারেশন শেষ করে রাজাকে তার ক্যাবিনে আনা হয়, দুইদিন অবচেতন থাকার পর তৃতীয় দিন তার জ্ঞান ফিরে আসে, কিন্তু মুখের অবশ ভাব এখনো অবশ রয়ে যায়, তার মনে হয় মুখে কিছু একটা নাই নাই। খাওয়ার সময় তাকে পাইপ দিয়ে খাওয়াবার চেষ্টা করা হয় কিন্তু সে ঠোট দিয়ে পাইপ ধরতে ব্যর্থ হয় কারণ তার মুখ এখনো অবশ। পরেরদিন তার একটু উন্নতি হয়, সে আয়নায় নিজেকে দেখে, কিন্তু কোথায় যেনো একটা সমস্যা রয়ে যায়, তাকে যে ইমেজ বাছতে দেওয়া হয়েছিলো, তার চেহারা তেমনটি না হয়ে কেমন যেনো চায়ের দোকানের আব্দুলের মতো লাগছে। সে কম কথায় ডাক্তারকে বলাতে ডাক্তার লরেন্স ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে তাকে দেখায় যে তার গাউনে এইসব কি? পাউডার? ডাক্তার বলে এগুলো হিরোইন, আপনি নিশ্চয় এটা চুরি করেছেন? কেন এমন করেছেন, এগুলো আমার ল্যাব থেকে আপনি চুরি করেছেন, তাই না? ভালো কথা চুরি করেছেন, কিন্তু কেনো আপনি এটা খেতে গেলেন, আপনার অপারেশন হবে আপনি জানেন, যার এফেক্ট পড়েছে আপনার চেহারায়। আপনাকে যেভাবে বানাতে চেয়েছি তাই সেভাবে হয়নি। আপনার কর্মফলে এমনটি হয়েছে, আমার আর কিছু করার নেই বলে ডা্ক্তার তার ক্যাবিন থেকে বেড়িয়ে আসে তার আগে তাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে আসে।

রাজার ঘুম ভাঙ্গে রাত দুইটায়, হাসপাতাল পুরোটায় নিরব, রোগীদের নাক ডাকার আওয়াজ আর নিশাচর পাখীদের আওয়াজ ছাড়া কোথাও কোনো আওয়াজ নেই, সে বাতি না জালিয়ে তার ক্ষুদে টচ লাইট’টা জালিয়ে ডা্ক্তারের দুতলায় সিড়ির দিকে রওনা দেয়।
ডাক্তার লরেন্সকে বালিশ চাপা দিয়ে পর পর তিন রাউন্ড গুলি করে রাজা নামের ইরফান (নতুন নাম) যেহেতু সাইলেন্সার লাগানো তাই কোনো আওয়াজ হয় না, কেউ বুঝতে পারে না। রাজা বুঝতে পারে এখানে থাকা আর চলবে না, সে ডা্ক্তারের ড্রইয়ার ঘেটে বেশ কিছু টাকা পায়, রোগীদের কাছ থেকে পাওয়া টাকা...নীচে নেমে ল্যাবের দিকে যাই সে, ল্যাবে গিয়ে হিরোইনের জারটা থেকে সব ঢেলে নেয় ডা্ক্তারের রুম থেকে আনা গামছায়। তারপর নিজের ক্যাবিনে ফিরে আসে। ব্রিফকেসে সব গুছিয়ে ভোরের অপেক্ষায় থাকে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাবে বলে, কারণ সে জানে ভোর হওয়ার আগে হাসপাতাল থেকে বের হতে পারবে না সে, তাতে বিপদ আরও বাড়বে, বরং অপেক্ষায় শ্রেয়......কিন্তু সে যা জানে না তা হলো, হিরোইনের বিষক্রিয়ায় তার অপারেশন করা জায়গাগুলোতে এক সপ্তাহ পর পচন ধরবে, এই পচন ধরা রোধ করতে পারতো শুধু ডা্ক্তার লরেন্স, কিন্তু সে যে আর এই পৃথিবীতে নেই।

দেশী বিদেশী পত্রিকা সহ চ্যানেল ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে ডাক্তার লরেন্সের খুনের কথা। কিন্তু কেউ জানতে পারে না কে তাকে খুন করেছিলো, শুধু জানা যায় তারই এক রোগী তাকে খুন করেছিলো, রোগীর চেহারা দেখে পুলিশ বিভাগ থেকে জানানো হয় ‘এ তো দাগী আসামী রাজা’ এর নামে দশ বারোটি মামলা আছে, কিন্তু সেই দাগী আসামী রাজা পরের দিনই ইরফান আলী নামে ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ালেও কেউ থাকে চিনতে পারে না। কিন্তু পঞ্চমদিনে ইরফান আলী তার চেহারার দিকে তাকাতে পারছে না, অসম্ভব ব্যাথা তাকে কাবু করে ফেলেছে, সে কি করবে? কার কাছে যাবে, সপ্তম দিনে ইরফান আলীর করুণ মৃত্যু হয়, তার চেহারার পচন রোধে অ্নেক ব্যবস্হা নেওয়া সত্ত্বেও কেউ তার মরণ ঠেকাতে পারে নি। কেননা কথায় আছে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।

গল্পটি পড়ে কেমন লেগেছে জানালে লেখালেখির প্রতি মনোযোগ আরও বাড়াবো। আপনাদের সুন্দর সুন্দর গল্প উপহার দেবো কথা দিচ্ছি। সবাইকে অন্তর থেকে ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:০২

কালনী নদী বলেছেন: অসাধারণ গল্প হয়েছে ভাই। সাসপেন্স ছিল অনেক। শেষে রাজার ত্বক পচানোকে আরেকটু সাজালে ভাল হত।

আপনাকেও ঈদ মোবারক।

২| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:১৮

সভ্য বলেছেন: কালনী নদী ভাই/বোন, আপনি যেই হউন, আমার কাছে একজন পাঠক এবং আমার ব্লগের একজন মূল্যবান ব্লগার। আপনার উপদেশ পরবর্তীতে মাথায় রাখবো কথা দিচ্ছি, আপনাকেও ঈদ মোবারক। ভালো থাকবেন।

৩| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:৪৪

মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: দারুণ লিখেছেন । নাটকীয়তা ছিল বেশ ।
আর ঈদ মোবারক :)

০৭ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:০৩

সভ্য বলেছেন: মোঃ ইয়াসির ইরফান ভাই প্রথমে ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার ও কমেন্ট করার জন্য। পরবর্তী গল্পে নাটকীয়তা যেনো আরও বেশী আনতে পারি সে চেষ্টা থাকবে, ঈদ মোবারক।

৪| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১:০০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: গল্পের থিম মিথ দুটোই ভাল লাগল :)

ঈদ মোবারক

শেষটা কি তাড়াহুড়োয় হল!?????

০৭ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:০৬

সভ্য বলেছেন: বিদ্রোহী ভৃগু ভাই, ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার ও কমেন্ট করার জন্য, আজকাল কেউ পড়তে চাই না তাই লেখায় উৎসাহও তেমন পায় না, গল্পের শেষদিকে তাড়াহুড়ো ঘটেছে কেবল বললাম ঐ যে পড়তে চাই না, নতুবা আরও একটা সংকলন বাড়ানো যেতো, যাই হউক, পরবর্তীতে সব বিষয়ে খেয়াল রাখবো, ভাল থাকবেন পাশে থাকবেন। আপনাকে ঈদ মোবারক।

৫| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫২

আব্দুল্লাহ্ আল আসিফ বলেছেন: কিছুই হইনি, বর্ননার কোনো আগামাথা নাই। থিম টা ভাল।

০৮ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:০৯

সভ্য বলেছেন: আসিফ ভাই, এখনও তো লেখক হইতে পারি নাই..আপাতত, যতটুকু পেরেছি ততটুকু লিখেছি, আশাকরছি লিখতে লিখতে লিখেইন হবো..দোয়া করবেন, ঠিক না?

৬| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৫১

হাসান মাহবুব বলেছেন: প্রাঞ্জল লেখা।

০৮ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:১২

সভ্য বলেছেন: মাহাবুব ভাই, আপনার হাতে কি কলম? নাকি গুতা দেওয়ার জিনিষ, দেখবেন, যে ভাবে ধরপাকড় হচ্ছে, তাতে কিনা এটাকে না জানি একটা অস্ত্র বলে আপনাকে চালান করে দেয়. দোয়া করি তেমনটা যেনো না ঘটে, তো ঈদ কেমন করলেন, আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর কমেন্টের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.