নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন শখের ব্লগার, ব্লগ লিখছি প্রায় বারো বছর হবে, তবে কোনো ব্লগে বেশীদিন থাকতে পারিনি, কেননা, লেখার কারণে হউক, বা ব্লগের নিয়ম কানুনের কারণে হউক, বার বার থেমে যেতে হয়েছে, ব্লগ লেখার বা হেল্প চাওয়ার কারণে সব কিছু হারিয়েছি।

সভ্য

আমি একজন ভালো মানুষ।

সভ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

শোনো গো দক্ষিনা হাওয়া প্রেম করেছি আমি.........

২৪ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:০১



একটি ভুতের গল্প

কিছুদিন আগের কথা বলছি........গো।

ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে নয়নের মা যেই হাটতে যাবে তখন দেখলো তার পায়ের পাতাগুলো পিছনের দিকে ঘুরানো। বিষয়টা কি? তার মানে সে কি ভূত হয়ে গেলো? “এ তো বড়ই আশ্চর্যের ব্যাপার” বলেই সে গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসলো। ভাবতে গিয়ে তার মনে পড়ে গেলো তার গতকালের ঘটনা।

গতকাল নয়নের মা ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে আছড়ে পড়লো রাস্তার পাশে। সকলের চিৎকারে জায়গাটা নরকের মতো মনে হচ্ছিলো, এতো জোরে ধাক্কা খাওয়ার পরও তার গায়ে এতটুকু ব্যাথাও তার অনুভুত হলো না, বরং তার খুব ঘুম পেয়ে গেলো, এমনিতে রাত্রে ইদানিং তার ঘুম কম হয়, নয়নের জন্য সারারাত তার দুশ্চিন্তায় তার ঘুম কমে গেলো, কারন আট বছরের নয়নের বাপ নয়নের জন্মের দুই বছরে হঠাৎ এক জ্বরে মারা গেলো, তাই বাপহীন নয়নকে এই দুনিয়ায় কিভাবে নিজের পায়ে দাড় করাবে এই চিন্তায় সে সব সময় অস্হির থাকতো।

কিন্তু সেই যে ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে শুধু একটা আওয়াজ তখন শোনা গেলো, “পট্টাস” আর অমনি নয়নের মার চোখে এসে গেলো রাজ্যের ঘুম, কে যেনো শুধু বলছিলো, ও দিদি, একটু পানি খান’ বলেই তার মুখে খানিক পানি ঢেলে দিলো, সেই পানি পান করার পর তার আর কিছুই মনে রইলো না, বাপরে সে কি ঘুম। যত্তবার সে চোখ খুলতে চায় ততবার তার চোখ ঘুমে জড়িয়ে ধরে।

নয়নের মা কোনো রকমে চোখ খুলে দেখতে পায় তাকে মেডিকেলে নিয়ে এসেছে, বয়স্ক এক ব্যাক্তি খুব সম্ভব ডাক্তার হবে, তিনি কি সব যেনো পরীক্ষা করে বলে দিলেন, “উনি বেচে নেই”।

সেই তখন থেকেই তার পা হাত গুলো উল্টোতে শুরু করেছে, প্রথমে সে ভয় পেযে গেলো, কিন্তু পরে সে বুঝতে পারলো সে মরে ভুত হয়ে গেছে। এই প্রথম সে কথাটার মানে বুঝতে পারলো, “মরে ভুত হয়ে গেছে” আগে কথায় কথায় বলতে শোনা যেতো।

তার চোখ ঝেপে কান্না এলো। ভাবল, হায় হায়, তার নয়নের এখন কি হবে?

এই দুনিয়ায় আপন বলতে নয়নের যে আর কেউ রইলো না। কান্না করতে গিয়েও আরেক বিপত্তি, তার কোনো মতেই কান্না পায় না, চোখ থেকে পানি আসে না। ভুতরা নাকি কান্না করতে পারে না, শুধু এ এ করে।

নয়নের মা তখন নিজে নিজেই বলতে লাগলো, ওরে আমরা নয়নের মনি নয়নরে, আমার বাজান, তুই গেলি কই? যতো সে কথা বলতে থাকলো ততই সে বুঝতে পারছিলো তার কথাগুলো কেমন নাকে নাকে হয়ে বের হচ্ছে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নাকে নাকে হয়ে যাচ্ছে কথাগুলো, তার আর সন্দেহ রইলো না যে সে ভুত হয়ে গেছে।

এরপর গা ঝাড়া দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলো নয়নের মা। হোক তার পা উল্টো। তবু সে এবার হাঁটবে। বিছানা ছেড়ে উঠে দেখলো এতো বিছানা নয়, হাসপাতালের মর্গ, পাশে মাথায় গামছা বাধা কয়েজন লোক বিড়ি ফুকছে আর হাসাহাসি করছে। সে আরও দেখলে কেবল তার লাশ পড়ে আছে তা নয়, আরও কয়েকজন সেখানে শুয়ে আছে, আহা কি সুন্দর একখানা ১৬/১৭ বছরের মেয়ে শুয়ে আছে, পরীর মতো দেখতে, তার নয়নকে যদি এমন একজন সুন্দরী মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারতো....

ধূর, এসব কি ভাবছে সে, এতক্ষণে বুঝতে পারলো পাশে বসা লোকগুলো হলো ‘মর্গের লাশকাটা ঘরের ডোম” এরা যুবতী মেয়েটার শরীর বিষয়ে কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। একজনতো বলেই বসলো” ওই যত্ত সুন্দরী হউক না রে, সবারই ছোবরা একই বুঝছিস’ নে এবার আমার টান, এরা মনে হয় গান্জা খাচ্ছে, কি বিকট গন্ধ, ভুত হয়েও নয়নের মা গন্ধ টের পাচ্ছে কেমনে? নয়নের মা এগিয়ে গিয়ে লোকটার গালে ঠাস করে একটা চড় দিলো। বাজে কথা বলো, ঘরে মা বোন নেই, এইরুপ বলে সে পিছনে ফিরে না তাকিয়ে সোজা হাটা ধরলো। লাশকাটা ঘর টি খুব ঠান্ডা, নয়নের মা সেখান থেকে পাশের ঘরে এলো, এখানেও কত্ত রোগী, কারও মাথায় ব্যান্ডেজ, চারিদিকে কেবল রক্ত আর রক্ত। একটি বেডে সে দেখলো এক কঙ্কালসার মেয়ে পানি পানি করছে, মেয়েটার পায়ে আর মাথায় ব্যান্ডেজ। নয়নের মার খুব মায়া হলো। ওদিকে সিস্টার ফোনে কার সাথে পিরিতির কথা বলছে আর হাসছে, নয়নের মা কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো, ইস, জায়গার এত্ত অভাব, এত্ত রোগী, এদিকে মেয়েটা মনে হয় পানি পান করেই নয়নের মার মতো ভুত হয়ে যাবে। নয়নের মা দেখে একটু দূরে পানির গ্যালন আর একটা গ্লাস। কিন্তু উল্টো হাতে কোনো ভাবে নয়নের মা পানির গ্লাস আর পানি ঢালতে পারলো না, এবার সিস্টারের কাছে গিয়ে তার সাথে ধাক্কা খেয়ে বললো, ‘দিদি, ঔই মেয়েটা পানি চাচ্ছে, মেয়েটাকে পানি দাও, কিন্তু সিস্টারের কোনোদিকে খেয়াল নেই, এক নাগাড়ে হাসতেই চলছে..নয়নের মার বেজায় রাগ পেয়ে গেলো, সে সিস্টারের কানের কাছে গিয়ে খুব জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিলো, এতে কাজ হলো, সিস্টার চিৎকার করে বলতে লাগলো, ওরে কে আমার কান কামড়ে দিলো রে, বলেই চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠে পড়লো, ততক্ষণে মেয়েটির কাতর আর্তনাদ সিস্টারের কানে পৌচেছে। সে মেয়েটার কাছে গিয়ে বললো, দিদি দিদি করছো কেনো? আয়াকে বললেই তো পারতে, কিন্তু আমার কান কামড়ে দিলো কে? কোন শুয়োরের বাচ্চা আমার কান কামড়ে লাল করে দিলো রে...

নয়নের মা এদের কান্ড কারখানা দেখে ‘হোপলেস’ কথাটা বলে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে পড়ল। এই ইংরেজী শব্দটা সে শিখেছে যাদের বাড়ীতে কাজ করতো সে বাড়ীর কলেজ পড়ুয়া ছেলেটার কাছ থেকে, ছেলেটা কথায় কথায় বলতো, ‘হোপলেস’।

চা দিতে দেরী হলে, তুমি একজন হোপলেস বুয়া, বুঝেছো। মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের সামনে বেজায় ভীড। মানুষ, রিকশা, সিএনজি, অটো, ট্রাক, প্রাইভেটকার থেকে শুরু করে প্রাইভেটে লাশ নিয়ে দেশের বাড়ী যাবে এমন গাড়ীর লাইনও আছে, আর আছে আঞ্জুমানে মফিদুলের গাড়ী। নয়নের মার লাশটা মনে হয় সেরকম কোনো গাড়ীতে করে বাড়ী নিয়ে যাবে। নয়নের মা থাকে কাওরান বাজারের পিছনের বস্তিতে। নয়নকে নিয়ে সুখে দুখে তার দিন বেশ কেটে যেতো, দুশো টাকা ঘর ভাড়ায় একটা মাত্র ছোটো মেটো ঘর। তবুও সেই ঘরে নয়নকে নিয়ে তার দিন কেটে যাচ্ছিলো।

কিন্তু এখন নয়নের কি হবে...ভাবতে ভাবতে সে শুনতে পেলো একটা লোক সিএনজি ঠিক করছে, “এই যে ভাই কাওরান বাজার যাবে? দরদাম ঠিক হলে লোকটা সিএনজিতে উঠে বসলো, নয়নের মা দেরী না করে লোকটার সাথে সাথে সিএনজিতে উঠে পড়লো, ভাগ্যিস ভুত হওয়াতে কেউ তাকে দেখতে পাচ্ছে না। ফলে গাড়ী ভাড়ার কথাও তার ভাবতে হচ্ছে না।

কাওরান বাজার বস্তিতে গিয়ে নিজের ঘরের সামনে দাড়ালো নয়নের মা। এর মধ্যে কিছু ভীড় জেমেছে, কিছু লোক জোরে জোরে কথা বলছে, আহা রে, তার নয়ন হাটুতে মুখ গেড়ে বসে বসে কাদছে। অঝোরে চোখ থেকে পানি পড়ছে তার। একজন নয়নের দিকে তাকিয়ে বলছে, বেচারা নয়নটার কান্দনের আর শক্তি নাই, কাইল থেইকা একভাবে কানতে কানতে গলায় আর জোর নাইকা।

নয়নের মার প্রাণটা দুঃখে মুচড়ে গেল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নয়নের মা বলল, ‘আর কান্দস না বাপধন। এই দুনিয়াডা মাত্র দুই দিনের রে নয়ন। আরেকজন বলল, তুই চিন্তা করিস নারে নয়ন, তোর মার লাশ হাসপাতাল কতৃপক্ষ কবর দিবো কইসে।

এরপর নয়নের মা দেখলো বস্তির মালিক মাস্তান কেরামত মোল্লা এগিয়ে আসছে, তাকে আসতে দেখে অনেকে জায়গা ছেড়ে দাড়ালো, কেরামত বলল, তুই কুনো চিন্তা করবি নারে নয়ন, আমার দোকানে তরে কাম দিমু, তর মা তিন মাসের ভাড়া বাকি রাখছিলো, হেইডা মাফ কইরা দিছি, তয় এই ঘরে তুই আর থাকবি না, আইজ রাইতে আমার দোকানে ঘুমাইবি, ঠিক আছে?

নয়ন তার কথায় কোনো উত্তর দিলো না’।

নয়নের মা চিন্তা করলো ‘সে তো এখন মরে ভুত হয়ে গেছে তার আর ঘুমাবার জন্য ঘর দরকার হবে না। বস্তি থেকে একটু দূরে একটা বট গাছ আছে সেখানেই আপাতত ঘুমাবার একটা ব্যবস্হা সে করবে, নয়নের কাছে কিনারে থাকতে হবে, নতুবা নয়নডারে দেখবো কেডা’। নয়নের মা আরেকটা জিনিষ খেয়াল করলো মোটামুটি দুরত্বে একটু হাত মেললে সে উড়ে গিয়ে পৌঁছতে পারে কয়েকবার চেষ্টা করে সে বটগাছের একটা ডালে গিয়ে বসতে পারলো, যাক, মরে একটা লাভ হয়েছে, হাটাহাটি বেশী করার দরকার নাই, বেশী দুরের পথ হলে কারো সাথে করে বা ট্রাকে করে চড়ে চড়ে যাওয়া যাবে, আর নয়নকে দেখার জন্য উড়াল দিয়ে গাছ থেকে কেরামতের দোকানে চলে আসা যায়। কিন্তু কেরামত একটা কথা ঠিক বলে নাই, সে একমাসের ভাড়া বাকী করেছিলো, তিন মাসের নয়। কেরামতরেও একটা শিক্ষা দিতে হইবো সময় সুযোগ মতো।

এই ভেবে বট গাছের মগডালে গায়ে বাতাস লাগে আবার দোল ও খাওয়া যায় এমন একটি ডালে সে দোল খেতে খেতে ঘুমাবার আয়োজন করবে ঠিক তখন আওয়াজ আসলো, নাকি নাকি সুরে, এইঁডা কিঁডা রেঁ, আঁমার ডাঁলি পা ঝুলোঁয় বসে কিঁডা দোঁল খাঁয় রেঁ, বলতে বলতে হাউ মাউ করে তেড়ে এলো এক বুড়ি।

বুড়ির এমনই অবস্হা যে চোখ কোটরে নেই, পুরো কঙ্কাল বলতে যা বুঝায়, বুড়িকে দেখেই নয়নের মা ভয় পেয়ে গেলো। বুড়িটা নয়নের মার কাছে এসে তাকে ভালো ভাবে দেখে নিয়ে বিশ্রী ধরনের হাসি দিয়ে বললো, ওরে মুখপুড়ি কোথাকার, তোর এত বড়ো সাহস তুই কিনা পেত্নীর ঘরে হানা দিস? ঘাড় মটকানো খাবার ইচ্ছা হয়েছে বুঝি?

নয়নের মা কি করবে বুঝতে পারছিলো না, তাড়াতাড়ি জায়গা ছেড়ে দিয়ে একপাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলল, টেরাকে ধাক্কা দিয়া আমার এই হাল করছে নানি, আমি হোপলেস গো নানি। নানি বলে, অ। তুই তালি মরেই ভুত হইলি? কিন্তু আমার এইখানে কোনো জায়গা নাই, বইলে দিলাম, হি হি। নয়নের মা করুণ মুখে বলল, তাহলে আমি কই যামু নানী? আমি এই লাইনে নতুন, এখনও ঘাচ ঘোচ কিছু জানিনে। বুড়ি পেত্নী তার জায়গায় আরামসে দোল খেতে খেতে বললো ‘তাইলে তুই মর’ আবারও এই কথা বলে বুড়ি পেত্নী হাসতে হাসতে দোল খাচ্ছিল।

ঠিক তখন কে যেন নাকে নাকে কথা বলে উঠল,’ ঐ বুড়ি গাছের ডাল কি তোর বাপের, নয়নের মা ঐ বস্তিতে থাকতো, ওর অধিকার বেশী’, ওঠ ওঠ, এই জায়গা নয়নের মার, ও আমার মেয়ে, আজ থেইকা ও এইখানে থাকবে, কথাগুলো যে বললো সে এবার অন্ধকার থেকে বেড়িয়ে আসলো, নয়নের মা দেখে ইয়া মোচ ওয়ালা ছয়ফুটের মতো লম্বা এক মদ্দা ভুত। এর আবার মাথা উল্টা। নয়নের মা এইটারে দেখে মাথা ঘুরে গাছ থেকে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলো, কিন্তু লম্বা ভুতটা তাকে ধরে ফেললো।

লম্বা ভুতটার মাথা উল্টা হলে কি হবে, দিলে মায়া মহব্বত আছে বেশ। নয়নের মা তার ব্যবহারে খুশী হলো। বললো, আপনি আমার ধর্মের বাপ, আপনের উপকার আমি জীবনে ভুলুম না। আমার মতন হোপলেস রে এই প্রথম কেউ মায়া দেখাইলো, তা ছাড়া আমার নয়নের বাপ আগেই ভুত হইছে, তার দেখা নাই, এবার আমি হইলাম, আমার নয়নডারে দেখার আর কেউ রইলো না। লম্বা ভুত জিগাই, তোমার নয়নরে আমি চিনি, কতো হইবো বয়স জানি? নয়নের মা বলে এই আগামী মাসে নয় বছরে পা রাখবো।

বস্তির কেরামত কইছে দোকানে ওরে কাম দিবো। এইটুকুন দুধের বাচ্চা কি কাম করতে পারে বলেন তো বাবা?

লম্বা ভুত বলল, ‘তুমি কোনো চিন্তা লইও না, আমরা গিয়া মাঝে মাঝে নয়নরে দেইখা আসুম। অর কাম দেখুম, অরে সাহায্য করুম কি কও? কথাগুলো শুনে নয়নের মার চোখ থেকে এবার সত্যিকারে পানি এসে গেলো, জীবনকালে কাউকে সে পায়নি যে এতটুকু সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে, অথচ ভুত হয়ে তার মনে হলো ‘বেশ ভালই হয়েছে’। ভুতদের দিলে যে পরিমাণ মায়া দয়া আছে মাইনষের দিলে তার এক চিটে ফোটা ও নাই, এটা সে আজ বুঝতে পারলো।

দুঃখ কইরো না নয়নের মা, সবই উপরওয়ালার ইচ্ছা, নতুন নতুন ভুত হইলে অনেক সমস্যা হয়, তারপর উপরওয়ালার ইশারায় সব ঠিক হইয়া যায়। তবে ভুতের মতো স্বাধীন জীবন আর নাই বুঝছো। কিসের স্বাধীন আব্বা? স্বাধীন মানে এই ধরো, যেখানে ইচ্ছা যাইতে পয়সা লাগবে না, কেউ তোমারে যন্ত্রনা দিবো না, বেশী ত্যাড়ামী করলে ঘাড় মটকাইয়া দিবা। আইচ্ছা আব্বাজান, আইচ্ছা ঘাড় কেমনে মটকাই? ও, তুমি এখনো ঘাড় মটকানো শিখো নাই না, সবুর করো আমি তোমারে শিখাইয়া দিমুনে। মনে মনে নয়নের মা বেশ খুশী হয়।

খুশীর চোটে সে বলেই ফেললো, আব্বাজান, ইলিশ মাছ খাইবার মুঞ্চায়? মাছ না হইলেও চলে মাছের আঁশ পাইলে ও আশ মিটাইয়া চিবাইতে পারি।

তাইলে চলো, আমার লগে, নয়নের মা জিগাই, কই আব্বাজান? কই আবার দোকানে, রাস্তায় তো আর ইলিশ মাছ পাইবা না, রান্না খাইবা না কাঁচা খাইবা, নয়নের মার লোল পড়া শুরু হয়ে গেছিলো, নিজেকে অনেক কষ্টে সংবরণ করে সে বলে "আব্বা কাচা হইলে ভালা হয়, তাইলে চলো, দোকানে গিয়া দেখি, আমার চেনা এক দোকান আছে, হেরা আমার দস্তি মানুষ। শোনো দুনিয়ার বেবাক লোক কিন্তু খারাপ না, কিছু মানুষের জন্য আজ সকল মানুষ জাতিরে আমরা গালাগাল পাড়ি, এটা কিন্তু ঠিক না, চলো, তুমি তো নতুন, বেশী দূর উড়তে পারবা না, তয় এক্খান আরিচামুখী ট্রাকে উড়াল দিয়া দুই ভুত বাপ-বেটি গিয়ে জায়গা করে দোল খেতে খেতে যেতে থাকে।



আজ সকাল থেকে নয়নের মন খারাপ। কাজে বার বার ভুল হয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে ইয়া বড়ো এক গামলা আটা মাখছে নয়ন। এই কাজে সে নতুন বলে বার বার আটা মাখতে গিয়ে বেশ কিছু আটা মাটিতে ছড়িয়ে পড়েছে বলে দোকানের হেড নসু মিয়া তার মাথায় গোট্টা মেরেছে কয়েকটা। মাথাটা তার সেজন্য জ্বালা করছে, তারপর ভুল করে বেশি পানি দিয়ে দেওয়ার কারণে আটা প্যাচপ্যাচে কাদার মতো হয়ে যাচ্ছে, সেটা ঠিক করার জন্য আরও বেশি আটা ঢালতে হয়েছে, এই ব্যাপারেও নসু মিয়া কিছু বলবে নিশ্চয় সেই ভয়ে তার বুক সারাক্ষণ দুরু দুরু করছে।

পরোটা সব বিক্রী না হলে তখন খেয়াল করবে। আর তখন নিশ্চয় একচোট নিবে। নসু মিয়ার হাতের আঙুলের গিট গুলো বেশ শক্ত। একবার গোট্টা খেলে কম পক্ষে আধা ঘন্টা ঝালা করে। এমনিতে গতকাল রাত্রে তার এক ফোটা ঘুম হয় নি। যেখানে তাকে ঘুমাতে দিয়েছে দোকানের মালিক কেরামত, সেখানে আছে অসংখ্য তেলাপোকা, রাত্রি হলে সব পিল পিল করে বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে এসে নয়নের শরীরটাকে রসালো খাবার মনে করে কামড়ায়। তেলেপোকার কামড়ে নয়নের হাতের কড়ে আঙুলে ঘা হয়ে গেছে। কিন্তু নয়ন অসহায়। এই দোকান আর দোকানের মেঝেয় তার এখন প্রধান আশ্রয়। তার মা বাপ নেই, আত্মীয় স্বজন নেই। এই বিশাল রাজধানীতে তার কেউ নেই।

বস্তির মাস্তান মালিক কেরামত তার মা মারা যাবার পর তাকে কাওরান বাজারের এই হোটেলে কাজ দিয়েছে। এই দোকানটায় এখন নয়নের ঠিকানা। দোকানে ছোট ছোট চেয়ার টেবিল পাতা আছে। সেইখানে বসে লোকজনরা সকাল বিকাল নাস্তা করে আর দুপুরে রাত্রে ভাত খায়।

কাজ করতে করতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লে নয়ন মেঝেতে হেলান দিয়ে একটু ঘুমিয়ে নেয়। আবার নসু মিয়ার হাক ডাকে তাকে ধড়মড় করে উঠে বসে কাজে মনোযোগ দিতে হয়। নয়নের কাছে এই দুনিয়াটা বড়ো বিস্বাদের মনে হয়। দোকানে কাজ করতে করতে সে দেখে দোকানের সামনে সকাল বেলা ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কি সুন্দর জামাকাপড় পরি পিঠি বই আর ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যাই। তার খুব খারাপ লাগে, ইস যদি স্কুলে পড়তে পারতো।

একটা বাচ্চা মেয়ে ইদানীং নয়নকে মনে হয় চিনে, প্রায় দিন সে হোটেলে এসে নয়নকে বলে, ‘এই ছেলে, গ্লাসে করে এক গ্লাস পানি খাওয়াতে পারবে? নয়নের খুব ভালো লাগে, নয়ন বলে কেন পারবো না, তুমি বসো আমি এখনই এনে দিচ্ছি বলেই নয়ন সাবান দিয়ে গ্লাস ধুয়ে মেয়েটার জন্য পানি এসে দেয়, মেয়েটা পানি খেতে খেতে নয়নের সাথে কথা বলে, নয়নও দুয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করে, যেমন তোমার নাম কি?

মেয়েটা বলে আমি আখিঁ, আর তুমি, নয়ন বলে আমার নাম নয়ন, আখিঁ বলে, বাহ, দারুন তো, নয়ন বুঝতে পারে না কিসের দারুন, সে জিজ্ঞাসা করে কিসের দারুন? মেয়েটা বলে, তোমার নাম নয়ন আর আমার নাম আখিঁ, দারুন না, নয়নের মাথায় আসে না’ এতে দারুন হয় কেমনে, মেয়েটা বুঝিয়ে বলে, শুনো, তোমার নাম আর আমার নাম প্রায় এক, নয়নের আরেকটা অর্থ হলো আখিঁ আবার আরেকটা অর্থ হলো চোখ। অর্থাৎ নয়ন আখিঁ চোখ এই তিনটা শব্দই একই অর্থ, এবার নয়ন বুঝতে পারে, আরও বুঝতে পারে পড়া্লেখা জানা থাকলে সেও এইসবের মানে জানতো। পড়ালেখা করাটা যে কি দরকার। আখিঁর জন্য সে তাড়াতাড়ি কাজ সেরে রাখে যেন একটু কথা বলতে পারে। কাজ ফেলে রেখে কথা বললে নসু মিয়াটা গোট্টা দিতে ছাড়ে না।

আখিঁর পড়নে নীল ফ্রক, চুল দুপাশে মুঠি করে বাধাঁ, আখিঁর কাঁধে স্কুলের ব্যাগ, তাকে দেখতে এতো ভালো লাগে। পানির তৃষ্ণা না পেলেও সে একবার হলেও নয়নের হোটেলের সামনে দাড়াঁবে, নয়নের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে তারপর চলে যাবে, এই হাসিটা যেনো সারাদিন নয়নকে উজ্জীবিত করে রাখে। তার কাজে ভুল তেমন হয় না। এইভাবেই তার দিনগুলো চলছিলো।



এদিকে ভুত হয়ে গিয়ে নয়নের মা’র মনে বেজায় শান্তি। খাওয়া দাওয়া ঘুম কোনোদিকেই কোনো অসুবিধা নেই, বাসাবাড়িতে কাজ করতে হয় না বলে মেম সাহেবদের গালাগালিও শুনতে হয় না। সবচেয়ে বড়ো সুবিধা মাসে মাসে দুশো করে টাকা ঘর ভাড়া দেওয়া প্রশ্নই আসে না, বটগাছের মগডালের সবচাইতে আরামের জায়গাটা তার পাকাপোক্ত করে নিয়েছে, সাহেব বাড়ীর ফেলে দেওয়া একটা ফোম জোগাড় করে সে কায়দা করে বিছানা করেছে এমন ভাবে যেনো দোল খেতে খেতে তার ঘুম চলে আসে, শুধু মাঝে মাঝে চিন্তা হয় নয়নের জন্য। এই প্রবলেম ছাড়া তার আর কোনো প্রবলেম নেই, এর চেয়ে জীবনে বড়ো শান্তি আর কি আছে?

নয়নের কথা মনে পড়লে সে সন্ধ্যেবেলা পা ছড়িয়ে দিয়ে হু হু হু করে কাদেঁ আর বলে আমার নয়নের মনি, আমার নয়ন, তোকে ছেড়ে থাকতে আমি যে আর পারছি না রে বাপধন। কত আশা ভরসা ছিলো তোকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করবো, কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেলো যে বাপধন। এইসব যখন সে বলে আর কাদেঁ তখন নানী পেত্নীটার বড়ো বিরক্ত লাগে, তার আরামের ঘুম হারাম হয়ে যায়।

সে নয়নের মা’কে দু চক্ষে দেখতে পারে না। এই ভর সন্ধ্যায় অলুক্ষনে কান্না-কাটি করবি না বলে রাখছি’ বলে সে নয়নের মাকে শাসায়। নয়নের মা মাঝে মাঝে ভাবে বুড়িটাকে যদি এই গাছ থেকে সরানো যেতো তাহলে কি যে ভালো হতো। কিন্তু বুড়ি চোখে তেমন একটা দেখে না।

তবে ঝগড়াঝাটিতে কম যায় না। তবুও তার কান্না পায়, বুড়ি ও চেচামেচি করে, নয়নের মা বুড়িকে বলে, ‘চক্ষু থাকলে কান্দন আসে, তর মতন তো শুধু অক্ষিকোটর লইয়া থাকি না, বুড়ি নয়নের মার কথা শুনে লাফ দিয়ে নয়নের মার চুল টেনে ধরে ঝুলতে থাকে। আর নয়নের মা চিৎকার করে বলে, ওরে আমারে মাইরা ফেলল রে, তখন মাথা উল্টা লম্বা ভূতটা কোত্থেকে হাজির হয়ে বলল, ঝগড়া ঝাটি বন্ধ কইলাম, ছাড়, ওই বুড়ি ওর চুল ছাড়, না হইলে কইলাম গাছ থিক্কা লাথ্থি দিয়া ফেলাইয়া দিমুনে। বুড়ি তখন নয়নের মার চুল ছেড়ে দেখে লম্বা ভুতের হাতে কলাপাতাই মোড়ানো ইলিশমাছের আশঁ।

বুড়ি পেত্নীটা ভীষণ লোভী। মাছের আশ দেখে তার জিভে জল গড়াতে থাকে, নাকি সুরে বলে, ওরে আমার লম্বা দাদুরে, যা, আর ঝগড়া করমু না, কথা দিলাম। লম্বা ভুত তখন কলাপাতার ঠোঙা বুড়িকে দিয়ে বলে সমান তিন ভাগ করবি, তিন জনের তিন ভাগ। নয়নের মা বলে আমি কিছু খাবো না। ওরে আমার নয়ন রে। আমি কোথায় যাবো রে, তোর জন্য আমার মনটা ছটফট করতেছেরে নয়ন।

উল্টো মাথার লম্বা ভুত নয়নের মার মাথায় হাত দিয়ে বলে, এত কান্দস কেন বলতো দেখিনি, নয়নরে বুঝি দেখবার মনচায়? নয়নের মা মাথা নাড়ে বলে আইজ কত্তদিন দেখি না আমার বুকের ধনরে, লম্বা ভুত বলে, ও, এই কথা, দাঁড়াও তোমারে তো বলি নাই, তোমার ছাওয়াল ভালো আছে, আইজকা মাছের আশ আনতে গিয়া তোমার ছাওয়ালরে দেখলাম, বেশ ডাঙ্গর হইছে, খুব শক্তি ও হইছে, ইয়া বড়ো থালায় আটা মাখে, কি সুন্দর হইছে চেহারা। এইসব শুনে নয়নের মার কান্দন থামে। চোখ বড় বড় করে সে নয়নের কথা শুনে। বলে হ্যা গো, সত্যি বলছো তো? আমার না খুব দেখার শখ হইছে, লম্বা ভুত বলে শখ হইলে আমার সাথে গিয়া দেইখা আসতে পারো।

তোমার ছাওয়ালের মনে দেখলাম বেশ স্ফূর্তি। আটা মাখে আর গান গায়। নয়নের মা চোখ মুছে বলে, আমার নয়ন গান ও গায়, মার মরণের তিন মাস ও হয় নাই আর সে গান গায়।

লম্বা ভুত বলে, আরে বোঝনা ক্যান, সে রকম গান না। মাইনষের মনে দুঃখ হইলেও তো গান গায়? গায় না? তুমি কও? নয়নের মা বলে, হ সেটা তো সত্যি। লম্বা ভুত বলে ‘তোমার দেখার শখ হইলে চলো নিজ চক্ষে দেইখা আসবা, নাও একটু মাথার চুল ঠিক কইরা লও, চুলাচুলি কইরা তো, চুলের কি অবস্হা করছো, নয়নের মা তাকায় পেত্নীটার দিকে, বলে আমার ভাগও দিলাম, আমার নয়নের জন্য একটু দোয়া কইরো। বুড়ি পেত্নী মনে মনে হাসে আর বলে, ঢং দেখে আর বাঁচিনে। এই হাসি এই কান্না।

উল্টো মাথার লম্বা ভুত বলে, ‘কি কও তুমি আপন মনে, ও নানি?

কিচ্ছু না।

এই বলে নানী ভুত গোমড়া মুখে মাছের আঁশ চিবোতে থাকে।



দিনকাল বেশী ভালো যাচ্ছে না নয়নের। কাল রাতে নাকি বস্তির মালিক কেরামতের হাতে মার খেয়েছে। গতকাল রাতে হোটেলের সারাদিনের হিসাব মিলাচ্ছিলো তখন নসু মিয়া মালিকের কাছে নালিশ করে বলল নয়ন নাকি আটা মাখতে পারে না। এত বেশী করে পানি ঢালে ফলে আটা বেশী লাগে, তাতে পরোটা বেশী বানাতে হয় আর এতে বেশীর ভাগ পরোটা পড়ে থাকে, অনেক পরোটা বিক্রী হয় না, পড়ে থাকে থালায়। নসু মিয়া খেয়েও কুলাতে পারে না।

কেরামত নয়নকে ডাকতে পাঠায়, নয়ন তখন সবে বিছানা বানানো শেষ করেছে, মালিক ডাকে শুনে সে তাড়াতাড়ি বাতি নিবিয়ে হোটেলের দিকে আসে, মালিক বলে, এইসব কি শুনছি রে নয়ন, তুই নাকি এখনো আটা মাখানো শিখিস নি? প্রতিদিন পরোটা থেকে যায়, নয়ন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে, তখন মালিক তার মুখে কষে এক চড় মারে, চড় খেয়ে তো মাথা ঘুরে গেল নয়নের। চোখের সামনে সবকিছু হলুদ দেখতে লাগলো। সে হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে ঠোটে ব্যাথা পেয়ে কেটে গেলো। এর ফলে গতরাত থেকে তার জ্বর। জ্বরে মাথা তুলতে পারে না এমনি কষ্ট। নসু মিয়া নয়নের কষ্ট দেখে ব্যঙ্গ করে বলল, ‘তরে তো পেটে ভাতে রাখনও মালিকের লস।

নয়ন কাচুমাচু মুখে বলল, আজ রেষ্ট-এ থাকলে কাল জ্বর ভালো হয়ে যাবে নসু চাচা। নসু বলে, রেষ্ট, ওরে বাপস, ইংলিশ শিখছোস খুব, কামের বেলায় ঠনঠন, আবার বলছ রেষ্ট। নয়ন কি আর বলবে, তার গায়ে তখন কেপে কেপে জ্বর আসছে। পরের দিন জ্বর গায়ে সে কাজ করা শুরু করে। বেলা যখন একটা তিরিশ, নয়নের কানে তখন লাগছে, কেউ বলছে ‘আমাকে একগ্লাস পানি দাও?

কথা শুনে নয়ন দৌড়ে এসে দেখে আখিঁ। স্কুল থেকে ফেরার পথে সে হোটেলে আসে এক নজর নয়নকে দেখতে, আজ কি সুন্দর লাগছে আখিঁকে, নয়ন জ্বর গায়ে কাপা কাপা হাতে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। গ্লাস নিতে গিয়ে আখিঁর হাতের সাথে নয়নের হাত লাগলে, আখিঁ প্রশ্ন করে ‘তোমার গা তো বেশ গরম, তোমার কি জ্বর? নয়ন মাথা নাড়ে। আখিঁ পানি খাওয়া শেষ করে নয়নের কপালে হাত রাখে, নয়ন আখিঁর হাতের ছোয়ায় কেপে উঠে, আখিঁ বলে, ‘ইস, তোমার গা যে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে নয়ন।

নয়ন বলে, ও কিছু না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

আখিঁর বাড়ির বুয়া রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলো, বুয়া বলল, রাস্তার পানি খাইতে খালাম্মা আপনারে নিষেধ করেছে আপামনি? তাড়াতাড়ি বাড়ি চলেন, দেরি হইয়া যাইতেছে। আখিঁ হঠাৎ নয়নের হাত আঁকড়ে ধরে বলে, আমাদের বাড়ি চল নয়ন, আমার মা তোমাকে ওষুধ দেবে, তোমার জ্বর ভালো হয়ে যাবে।

নয়ন বলে, ধূর, এখন কিভাবে যাবো? আমার অনেক কাজ আছে না?

আখিঁ বলে, ‘থাকুক কাজ, জ্বরে কেউ কাজ করে না, চলো আমাদের বাড়ি? নয়ন বলে, ‘আজ না, জ্বর ভালো হউক তখন যাবো তোমাদের বাড়ি’।

‘কে রে ওইখানে, এত ভীড় কিসের? এই বলে পিছন থেকে চেচিয়ে উঠলো নসু মিয়া। দোকানে তখন তিনজন কাষ্টমার হাপুস হুপুস করে ভাত তরকারি খাচ্ছিল আর মাছের কাটা ছড়িয়ে রাখছে টেবিলে। নয়ন তাড়াতাড়ি আখিঁর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, এখন বাড়ি যাও, কাল কথা হবে।

আখিঁ করুণ চোখে তাকিয়ে বুয়ার হাত ধরে রাস্তায় নেমে গেলো।

আখিঁর সাথে কথা বলার পর মন ভালো হয়ে গেলো নয়নের। তার জ্বর অর্ধেক কমেও গেলো। এরপর বিকেলের দিকে নয়নের শরীর চাঙ্গা হয়ে গেল। সে গামলার ভিতর আটা নিয়ে মাখতে বসলো। মনের স্ফুতিতে তার গান চলে এলো। সে ভাবলো আসলে জীবনে স্ফুর্তি না থাকলে মন কি ভালো থাকে, আর মন ভালো না থাকলে রোগ দেখা দেয়।

উল্টো মাথা ভুতের সাথে নয়নের মা এসে নয়নকে দেখে মহাখুশি। খুশিতে নয়নের মার বুক ভরে গেলো, এই তিন মাসে ছেলে তার কত লম্বা হ্যান্ডসাম হয়েছে দেখতে। উলটোমাথার ভুত বলল, ‘কি? নয়নরে কেমন দেখ? উল্টো মাথার ভুতের কথা শেষ হতে না হতেই হুংকার দিয়ে উঠলো নসু মিয়া।

এই নয়ন তুই এই দিকে আয়, নয়ন মনে মনে ভাবছে, ‘আবার কি হলো কে জানে’ আটা মাখানো ফেলে সে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল নসু মিয়ার দিকে। দেখল, নসু মিয়ার হাতে একটা ভাঙ্গা কাচের প্লেট, এই প্লেটে বস্তির মালিক সকালে নাস্তা খাই। নসু মিয়া জিগাই, কখন ভাঙছোস এই প্লেট? কিন্তু নয়ন তো প্লেট ভাঙ্গেনি। সে তো মাস্তান মালিক কেরামতকে নাস্তাও দেয় না, এই নাস্তা মালিককে নসু অথবা কালু নিজ হাতে প্রতিদিন নাস্তা দেয়। কালু রোজদুপুরে রেষ্টুরেন্টে এসে ভাত খাবার কাষ্টমারদের সামলায়। সকালে কালু মালিকের অন্য দোকানে কাজ করে। মাঝে মাঝে মালিকের সাথে সকালেও আসে কালু। ঢোক গিলে নয়ন বলল, আমি ভাঙি নাই, আমি কি মালিকরে নাস্তা দেয়? এই প্লেট আমি ধরিও না।

নসু মিয়া আরও উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘তার মানে তুই কইবার চাস, ‘আমি ভাঙছি, আমারে মিথ্যাবাদী বলস তুই, এতবড় সাহস’?

এই কথা বলে নসু মিয়া জলন্ত কড়াই এর পাশে রাখা মস্তবড় লোহার হাতাটা তুলে নিল হাতে। হু রে, আমার নয়নরে মাইরা ফ্যাল্লোরে, বলে মুহুর্তে নয়নের মা নসু মিয়ার ডান হাত আকঁড়ে ধরল।

নসু মিয়া পড়ে গেলো মহ মুশকিলে, তার হাত নীচে ও নামে না আবার উপড়ে ও উঠে না, মাঝখানে শূণ্যে ঝুলে থাকলো। ব্যাপার কি? অবাক হয়ে নসু মিয়া খালি এদিক দেখে ওদিক দেখে, কোন বেয়াদপ তার হাত আটকে রেখেছে সে বুঝতে পারে না। রাগে দাঁত কিড়মিড় করে উঠল নসু মিয়া। লাফিয়ে গদি ছেড়ে নেমে সে লাথি মারতে গেলো নয়নকে। নয়নের মা উল্টো মাথার ভুতের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠল, আব্বাজান আমার নয়নরে মাইরা ফেলাইলো গো।

ঘাবড়াও মাৎ বেটি, এই বলে উল্টোমাথার ভুত নসুমিয়ার পা আকঁড়ে ধরল। ব্যস সেখানেও বেধে গেলো সমস্যা। নসু মিয়ার ডান পা ঝুলে থাকলো শূণ্যে। নসু মিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে একবার হাত আরকবার পা’র দিকে তাকাতে লাগল।

নসু মিয়ার অবস্হা দেখে ভয় পাবে কি হাসি পেয়ে গেলো হোটেলের সকলের। নিজের প্রানের মায়া ভুলে নয়নও নসু মিয়ার অবস্হা দেখে হি হি করে হেসে উঠলো।



এরপর থেকে নয়নের মার এই এক কাজ হলো, রেষ্টুরেন্টে বসে নয়নকে পাহাড়া দেওয়া। দিনের বেলা সে একটা টিকটিকির বেশ ধরে ছাদে লেপ্টে পড়ে থেকে বড় বড় চোখে সবকিছু দেখতে থাকে যাতে তার নয়নের গায়ে কেউ হাত দিতে না পারে। এইভাবে পাহাড়া দিতে গিয়ে আখিঁকেও দেখল নয়নের মা, আর দেখে তার মন বেশ খুশি হয়ে উঠল, ভাবল, আহা, আখিঁ মেয়েটা তার নয়নকে তো বেশ পছন্দ করে। রোজ স্কুলে যাবার সময় অথবা ফেরার পথে আখিঁ একবার হোটেলের সামনে এসে দাড়াঁয়। আর কোনোদিন যদি দাড়াঁতে না পারে তবে দূর থেকে নয়নের দিকে তাঁকিয়ে হাসে আর হাত নাড়ে। তার উত্তরে নয়নও হাসে, মাথা নাড়ে।

এইসব দেখে মন ভরে যায় নয়নের মার। মনে মনে ভাবে যদি নয়নের সাথে আখিঁর বিয়ে হতো তাহলে বেশ হতো। পরক্ষণেই তার মন হতাশায় ভরে উঠে, এটা কি করে সম্ভব। এতো ছেঁড়া কাথাঁয় শুয়ে রাজপ্রাসাদের স্বপ্ন দেখা নয়নের গরীব মায়ের। যে কিনা আবার ভুত। তবু মন থেকে আশা তাড়াতে পারে না। তবে নসু মিয়া সেই দিনের পর থেকে নয়নের গায়ে আর হাত দিতে সাহস পায় না, মুখে মুখে যা আসে তাই বলে ঠিক, কিন্তু গায়ে হাত দেয় না। এতে নয়ন একদিকে যেমন নিশ্চিন্ত তেমনি তার ভয় অনেক কমে গেছে।



সেই দিন রাতে একটা ঘটনা ঘটলো।

তখন অনেক রাত।

হোটেলের সব খরিদ্দাররা খাওয়া দাওয়া শেষ করে কখন চলে গেছে। নয়ন ঘুমোবার আগে সব বাসন কোসন মেজে সাজিয়ে রেখেছে টেবিলে। তারপর ভেতরের একটা ঘরে ঘুমোতে গেছে। এই ঘরটাতে সে রোজই ঘুমায়। তার পাশে আরেকটা ঘরে ঘুমায় নসু মিয়া। ছোট ছোট খুপরীর মতো ঘর। নসু মিয়ার ঘরটা সবার চাইতে বড়ো এবং জানালা নেই বলে এই ঘরটাকে গুদাম বলা যেতে পারে..কেননা সব চাল ডাল আটা ময়দা তরি তরকারী ইত্যাদির বস্তায় এক্কেবারে ঠাসা। সেখানে খুব আরামদায়ক খাটে ফোমের উপর নসু ঘুমায় এক কোণে টেবিল ফ্যানের বাতাসে। বাতাসও বেশ আরামদায়ক।

হঠাৎ ফিস ফিস আওয়াজে নয়নের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সে শুনতে পেলো মালিকের গলা, মালিক নসুকে বলছে, “আটার বস্তা যেটাতে লাল ক্রস দেওয়া আছে সেটা ফেলে রাখবি নয়নের ঘরটাতে” কিন্তু মালিক, কেন লাল ক্রস? বিষয়টা কিছু বুঝতে পারছি না? “আরে গাধা” ক্রস দেওয়ার অর্থ হচ্ছে “এই বস্তায় বিশেষ কিছু আছে” কি আছে মালিক? “আরে বেকুবের ঘরে বেকুব, বস্তাটায় হেরোইন আছে, কয়বার বলতে হবে তোকে, বদ লোক কোথাকার” কিন্তু মালিক যদি পুলিশ.. নসুর কথা কেড়ে নিয়ে মালিক এবার তার ঘাড়ে হাত রেখে বলল, শোন, পুলিশকে বখরা দিলে তোরা আছিস কি জন্য, আর পুলিশকে বখরা দিতে গেলে আমার যে কিছু থাকে না? নসু এতক্ষণে ঘেমে উঠেছে,

কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওদিকে নয়ন একটু মাথা উচু করে দেখলো মালিক নসুর ঘাড়ে হাত রেখে ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলছে, নসু বলল, ওস্তাদ, আমার ঘরে ময়দার বস্তায় যে ফেন্সিগুলান আছে সেগুলান চালান হইব কখন? আমার তো আর সয় না, ডরে ঘুম ও আসে না, এদিকে পুলিশরেও আপনি বখরা দেবেন না, যদি একবার ধরা পড়ি...বলতে গিয়ে কথা গিলতে হলো তাকে, কারণ মালিকের লাল চোখ যেনো ঠিকরে বের হচ্ছিলো, মালিক বলল, “ডরের কিছু নাই, ফেন্সিগুলান কাল চালান হয়ে যাবে, নসু শুধু মাথা নাড়লো মুখে বলল ‘আইচ্ছা’ বলেই চুপ করে গেলো।

এরপর আবার ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলতে বলতে তারা উভয়ে হোটেলের দিকে হাটা শুরু করলো এমনিতে নসু হেরোইন কি জিনিষ কখনো দেখেনি, শুধু জানে তাদের মহল্লার কিছু ছেলে এইসব খেয়ে পাগল হয়ে গেছে, অকারনে ক্ষিপ্ত হয়ে যায়, এইসব সময় মতো না পেলে বিঘ্ন ঘটায়, একই কেইস ফেন্সির বিষয়েও সে দেখেছে, কি আছে এইসব ওষুধে। আর যারা এই সব সেবন করে তাদের বেশীরভাগ চুরি ছেচড়ামি, সন্ত্রাসি, চাঁদাবাজী করে বলে নসু শুনেছে, এমনকি মালিকের পোষা কিছু গুন্ডা আছে যারা এইসবের উপর নির্ভরশীল।

মালিক এইসবের বিনিময়ে তাদেরকে দিয়ে বিশেষ বিশেষ কাজ করিয়ে নেয়। কি কাজ সে এখনও জানে না, নয়নও জানে কিছু ছেলে আছে মালিকের যারা ওষুধ খায়, এরা বেশী চা খেতে দোকানে আসে, এদের জন্য চা আর সিগারেট ফ্রি। মালিকের পরিস্কার কথা, “এরার সাথে বেশী কথা বলবি না” তাড়াতাড়ি বিদায় করে দিবি। বুঝছোস নয়ন? নয়ন মাথা নেড়ে জানান দেয় সে বুঝেছে, নয়নের তখন মায়ের কথাগুলো মনে পড়ে, মা একবার বলেছিলো, তরে একটা কথা কই, "কুনোদিন তুই ফেন্সি আর হিরোইঞ্চি খাইবি না, বাজান, আমারে ছুইয়া কথা দে, সে তার মায়ের দিকে দেখে বলেছিলো, কও কি মা, এইসব আমি তো জীবনেও দেখি নাই।

আর আমি এইসব কেমতে খামু। তাছাড়া তুমারে ছুইয়া কথা দিতেছি ‘আমি কখ্খনো এইসব খাবো না মা, এবার হইছে? তার মা আরো বলেছিলো, বিনা পয়সায় দিলেও এইসব খাবি না রে বাপজান, মনে থাকবে? সে মাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো, মা রে আমি তুমারে কথা দিছি কইলাম না, আমি এগুলার কিনারেও থাকমু না। নয়ন দেখলো তার মার চোখ ভিজে উঠেছিলো, নয়ন তার মায়ের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে, মাগো, তুমারে কইলাম না, আমি এগুলান কোনোদিনও ধরমু না। এখন এইসব শুনে তার শরীরটা কেমন কেমন করতে থাকে, তার ঘুম হারাম হয়ে যায়, তার মানে তার মালিক এইসবের ব্যবসা ও করে...

নয়ন যেনো বিপদের আঁচ পাচ্ছে, ছোটো হলেও সে বেশ বুঝতে পারছিলো তার মালিক কেরামত হইলো একটা শয়তান প্রকৃতির মানুষ, তার আসল ব্যবসা তাইলে হেরোইন আর ফেন্সি, হোটেল ব্যবসা হইলো তার শো, সে তাইলে একজন চোরাচালানীর লোক। নয়ন জানত, এই ব্যবসা হইলো খারাপ ব্যবসা, যারা এইসব করে তারা হইলো দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। সেই রাত্রে কোনো রকমে সে অর্ধঘুম অর্ধ জাগরণের মাঝ দিয়ে রাত পার করে দিলো।

পরেরদিন সে কিছু হয়নি, এমনভাবে আটা মাখতে শুরু করে দিলো আর বার বার রাস্তার দিকে তার চোখ চলে যাচ্ছিলো। সে আর্খিঁ মেয়েটার অপেক্ষায় ছিলো, আর্খিঁরা কাওরান বাজারেই দোতলা ঘরের দোতলার পশ্চিম দিকের ঘরে থাকে, সেখান থেকে নয়নের শোবার ঘরটা খুব কাছেই হয়। সে বুঝতে পারছিলো স্কুলের সময় পার হয়ে যাচ্ছে অথচ মেয়েটা এখনও বের হলো না, কিন্তু সেইদিন আর্খিঁ স্কুলে গেলো না। নয়নের মনটা খারাপ হয়ে গেলো, কি হলো তার বন্ধু আর্খিঁর?

বন্ধুকে না দেখে তার কেমন অস্হির অস্হির করতে লাগলো। কি হলো তার বন্ধুর, জ্বর? মাথা ব্যাথা? কি হতে পারে আর্খিঁর? এইসব ভাবতে গিয়ে তার বার বার ভুল হচ্ছিলো কাজে। এদিকে হোটেলে কাষ্টমারদেরও প্রচন্ড ভীড়, আল্লা-মালুম এত কাষ্টমার এলো কোত্থেকে? সকলই যেনো নাস্তা খেতে ঢুকেছে নয়নদের হোটেলে। সবারই পরোটা চাই ডিমপোচ চাই, কলিজা ভুনা, ছোলার ডাল, মুরগীর লটপটি, দই সহ আরো কত কিছুর অর্ডার আসছে। নয়ন কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না।



নয়নের সাথে সাথে নসু মিয়াও দৌড়াদৌড়ি করতে লাগল, কালু মিয়া তো দুপুরের আগে আসবে না। বাবুর্চি সেলিম মিয়া একহাতে পরোটা আরেক হাতে ডিম ভাজতে ভাজতে হয়রান হয়ে যেতে লাগল। অনেক খরিদ্দার আবার মোঘলাই পরোটা চাই, তাদের জন্যে ডিমের পুর দিয়ে পরোটা, ভাজা হতে লাগল।

দেখতে দেখতে পরোটার স্তুপ সাফ, ডিম সাফ, মুরগির লটপটি, গিলা-কলিজা সব, সবকিছু সাফ হয়ে যেতে লাগলো। এর মাঝে ঝাকরা চুলের গলায় তাবিজ ঝুলিয়ে হাতে তিনটি বিভিন্ন পাথরের আঙটি পরা মাস্তান মালিক কেরামত এসে হাজির। সে ভেতরে ঢুকেই চিৎকার করে বলল, নসু দেখি নাস্তা দে আগে?

তারপর চোখ ঘুরিয়ে সে হোটেলের অবস্হা দেখতে লাগলো, তার হোটেলে এত যে ভীড় যেন তার গায়েই লাগছে না এমনি ভাব দেখাতে লাগল। ভাবটা যেন তার রোষ্টুরেন্টে এরকম ভীড় রোজই লেগে থাকে।

সব কাষ্টমাররা গবগব করে খাচ্ছে এবং সাথে সাথে আরও খাবারের অর্ডার দিচ্ছে, কাষ্টমারদের খাওয়া দেখে নয়নের মনে হতে লাগল যেন এতদিন কিছু তারা খায়নি। আর এর ভেতরেই মালিক মাস্তানের আগমন, আর সময় পাই নাই যেনো। নসু দৌড় দিয়ে মালিকের কাছে যায়। এদিকে আবার সব খরিদ্দাররা পানি চাচ্ছে। সবারই যেন পিপাসা পেয়েছে একসাথে। সকলেই চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে, এই খোকা পানি দাও, এই ছ্যারা এইদিকে পানি আনো, এই চ্যেংরা পানি দাও তো, এই পিচ্চি, পানি লে কার আও।

নয়ন বেচারা কি করবে বুঝতে পারছিলো না। কতদিকে সে দৌড়োবে? শেষে একজন গেলাস পানি ভর্তি করে একটা ট্রের ওপর রেখে সে ঘুরতে শুরু করল কাষ্টমারদের টেবিলে টেবিলে। এমন সময় হঠাৎ করে কীসের সাথে যেন পা হড়কে গেল নয়নের, আর সঙ্গে সঙ্গে তার হাত থেকে ট্রে ছিটকে মাটিতে পড়ে গেল, সেই সাথে ভেঙে চুরমার হলো এক ডজন কাচের গেলাস। গেলাসগুলো যেন হাজার হাজার টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল মেঝেয়।

‘উরে বাপস’ বলে খাওয়া বন্ধ করে কাষ্টমাররা চোখ বুজে দু’পা তুলে ফেলল চেয়ারের ওপর। তাদের এটো হাত ঝুলতে লাগল বাতাসে। মালিক মাস্তান খাবারে হাত দেবার আগেই লাফিয়ে উঠল চেয়ার ছেড়ে। রাগে তার শরীর কাপতে লাগল থরথর করে। নয়নের মাথা ঘুরে গেল। সে ভাবল আজ তার আর রক্ষা নেই, আজ নয়নের রোজ কেয়ামত। ছাদের উপর টিকটিকি হয়ে ঝুলে থাকতে থাকতে সব কিছুই দেখল নয়নের মা। ভয়ে তার জান শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।



কীভাবে অবস্হার সামাল দেবে নয়ন এটা ভাবার আগেই হুড়মুড় করে কারা যেন রেষ্টুরেন্টে ঢুকে “হ্যান্ডস আপ’ বলে চেচিয়ে উঠল। ব্যাপার কি? হতভম্ব নয়ন তাকিয়ে দেখল একদল পুলিশ পিস্তল হাতে রেষ্টুরেন্টের ভেতরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। মানুষজন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কিছু ভাবার আগেই একজন পুলিশ দৌড়ে এসে মালিক মাস্তানের হাতে হাতকড়া পরাতে পরাতে বলল, আপনাকে এ্যারেষ্ট করলাম। চোখ লাট্টুর মত ঘুরিয়ে মালিক মাস্তান কেরামত দাত খিচিয়ে বলল, কীয়ের লাইগ্যা? আমি কি করছি?
এবার পুলিশ ইন্সপেক্টর এগিয়ে এসে বলল, মাদকদ্রব্য চোরাচালানের দায়ে আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।

মাদক দ্রব্য? মানে হেরোইন? মালিকমাস্তান চোখ কপালে তুলে অবাক হবার ভান করল। ‘হ্যা, শুধু হেরোইন না, ফেন্সিডিল, গাঁজা এসবও বটে।

মালিক বলল, প্রমাণ, প্রমাণ কোথায় পেলেন? এরপর ইন্সপেক্টর চোখের ইশারায় দু’তিন জন পুলিম নসুমিয়ার ঘরে ঢুকে চাল ডালের বস্তার আড়াল থেকে বের করে আনল বস্তা কে বস্তা ফেনসিডিল। আরেক জন নয়নের ঘরে ঢুকে বের করে আনল হেরোইনের পুটলি। ইন্সপেক্টর মালিক মাস্তানের দিকে ফিরে বলল, এসব কি? আপনি সামনে মানুষকে দেখান রেষ্টুরেন্ট এর ব্যবসা করেন আর তলে তলে মাদক চোরাচালানের ব্যবসা করেন, তাই না? মালিক মাস্তান চোখ কপালে তুলে চিৎকার করে বলল, আল্লার কিরা, এই জিনিস আমার দোকানে আইল ক্যামনে আমি জানি না। এসব শালা নসুর কামকারবার।

এইভাবে ফেসেঁ যাবে দেখে নসু ভয় পেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলল, আমি কিছু জানি না ইন্সপেক্টর সাব, মালিকে যা কয় আমি তাই করি।

এ কথার পর একজন পুলিশ নসুমিয়ার হাতেও হাতকড়া লাগালো। এরপর পুলিশ ইন্সপেক্টর নয়নের দিকে ফিরে তার কাধে হাত রেখে বলল, সাব্বাস বেটাঁ, তোমার খুব সাহস। মালিক মাস্তান কেরামত যেনো মুহূর্তে বুঝে গেলো ব্যাপারটা। হাতকড়া হাতেই লাফিয়ে উঠে বলল, নয়ন, এইসব তোর কাম তাইলে, নেমকহারাম? দাড়া, আমি জেলখানা থেইকা জামিনে বেরোই, তারপর তর লগে হিসাব হইবো নে।

নয়ন বুঝতে পারলো কেরামতের লোকজন কাছে কিনারেই আছে, সুযোগের অপেক্ষায় তারা নয়নকে ধরার জন্য ওত পেতে আছে, ওদিকে টিকটিকি বেশে তার মা ছাদের থেকে বলে উঠলো, ওরে আমার পরানের নয়নরে, তুই পালা, দৌড় লাগা, কথাগুলো নয়নের কানে গেলো আর নয়নও দেরী না করে পুলিশের গাড়ী ষ্টার্ট দিবার আগেই দৌড়ে পালালো।

পান্হপথের পাশে একটা ঝোপের আড়ালে বসে সে হাপাচ্ছিলো আর ভয়ে কাপঁছিলো। হোটেল থেকে দৌড়ে পালাবার আগে সে একবারও ভাবতে পারেনি পুলিশ ইন্সপেক্টরটা এইভাবে হাটে হাড়ি ভেঙে দেবে। হ্যা, কথাটা সত্যি যে নয়ন গতকাল সকাল সকাল উঠেই আগে তেজগা থানায় গিয়ে সব খবর দিয়ে এসেছিলো। এদিকে সব ধরা পড়ে যাওয়ায় এবং পুলিশের কাছে নয়নের সংবাদ পৌছে দেয়া খবরে কেরামত নামক চোরাচালানী প্রায় কোটি টাকার উপরে হেরোইন ও ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার হওয়ার সংবাদে একদিকে সে যেমন খবরের কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসল অন্যদিকে কেরামতের লোকজনের কাছে তার জীবনের জন্য হুমকি স্বরুপ হয়ে উঠলো।

নয়ন এখন কি করবে? কীভাবে সে কেরামতের লোকজনের হাত থেকে বাচঁবে, ভেবে ভেবে নয়ন কোন কূল কিনারা করতে পারছিলো না। নয়ন আসলেই খুব ভয় পেয়েছিলো, একবার ভাবলো থানায় গিয়ে ধরা দিলে কেমন হয়, ওরা নিশ্চয় নিরাপত্তা দিবে, আবার ভাবলো সেখানেও নিশ্চয় কেরামতের লোকজন আছে, আবার ভাবলো ধূর বরং আত্মহত্যা করলে ভালো, মা মারা যাবার পর থেকেই নয়নের কপালে কেবল দুঃখ আর দুঃখ। নয়ন এইসব ভাবছে আর দু হাটুর ভেতর মাথা গুজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।

এবার কিছু একটা পেয়েছে এমন ভাব করে বলে ফেলল, হ্যা বরং আত্মহত্যাই করবো। এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। এতে মার কাছে চলো যাওয়া যাবে, মা ছাড়া এই পৃথিবীতে বেচে থাকা অর্থহীণ। এই কথা ভাবতে ভাবতে সে রেল ষ্টেশনের দিকে হাটা ধরলো, আর অমনি পিছন থেকে কেউ যেনো ডেকে উঠলো, ‘নয়ন? ওই নয়ন, নয়ন এদিক ওদিক দেখতে লাগলো, নাকি সুরে কে যেনো তাকে ডাকছে। কিন্তু কোথাও কাউকে না দেখে সে হতভম্ব হয়ে গেলো। তখন আবার শুনলো, নয়নরে, আমার লক্ষী বাপ, আত্মহত্যা করবি না রে বাপ, এইটা মহাপাপ। নয়ন ধড়ফড় করে দাড়িয়ে পড়লো চারিদিকে তাকাতে তাকাতে সে জোরে বলল, আপনি কে?

ওরে বাপরে, আমারে চিনোস নাই রে বাপ, আমি যে তোর মা। মা? আমার মা তো বাইচা নাই, আর আপনে আমার মা হইলে দেখা দেন, তখন নাকি সুরে নয়নের মা বললো, বাপরে, আমি তো মরে ভূত হয়ে গেছি, মার কথা শুনে তার খুব দুঃখ পেলো। বললো, মাগো তোমারে একবার দেখতে পেলে খুব ভালা পাইতাম, নয়নের মা বলল, আমারে দেখলে তুই ভিরমি খাবি রে, বরং যা বলছি মন দিয়া শোন, তুই এখান থেকে পালিয়ে ময়মনসিংহ চলে যা, তারপর ওখানে একটা রুটির দোকানে কাজ নে। মাগো, ওখানে গিয়া কোনো লাভ নাই কারণ কেরামতের লোক সব জায়গায় আছে ওরা আমারে ধরতে পারলে জানে মাইরা ফেলবো রে মা। ও, মা আমি ওখানে যাবো না....কথাটা বলতে না বলতে একটা গাড়ী সাৎ করে এসে নয়নের সামনে ব্রেক কষলো।

নয়ন ভেবেছিলো গাড়ীর ভিতর থেকে এবার কেরামতের লোকজন নেমে আসবে আর তার দিন শেষ ভেবে তার আবার কান্না পেয়ে গেলো, সে কাদছে, কিন্তু গাড়ী থেকে নেমে এলো চোখে চশমা পড়া এক মহিলা, তাকে দেখে বলল, এই খোকা, তোমার কি হয়েছে, তুমি কাদছো কেন?

চোখের পানি মুছতে মুছতে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে নয়ন বলল, এমনি কাদছি। মহিলা বলল, এমনে এমনে কেউ কাদে? মহিলা অতঃপর তার সব কিছু জানতে চাইলো নাম, ধাম, বাবা মা ইত্যাদি। মহিলা বললেন, দেখো নয়ন, আমরা ছিন্নমূলদের নিয়ে একটা প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করি। সেই প্রতিষ্ঠানের নাম হলো “এসো বড়ো হই’।

নয়নের মনে হলো মহিলাটি সত্যি কথা বলছে, সে মাথা নেড়ে জানালো সে বুঝতে পারছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় ভাগ ভাগ হয়ে প্রতিষ্ঠান চালাই, প্রায় তিনশ চেচল্লিশজন তোমার বয়সী ছেলেমেয়েরা আমাদের সাথে আছে। তারা সবাই স্কুলে যায়। নিজের হাতে নিজের সব কাজ কর্ম করে, খেলাধুলা ও আছে। তুমি কি আমাদের প্রতিষ্ঠানে যোগ দেবে?

মহিলার কথা শুনে নয়নের খুশী এসে গেলো যে সে পড়ালেখা করতে পারবে এই ভেবে, সে ভাবছে, এটা স্বপ্ন নয় তো? নিজের চামড়ায় নিজেই চিমটি কাটছে, কিন্তু না, সব ঠিক আছে। তুমি যদি রাজী থাকো তাহলে এখনই তুমি ইচ্ছা করলে আমাদের সাথে যেতে পারো। নয়ন জিজ্ঞাসা করলো, ‘কোথায়”? এইতো একটু দূর আছে বটে, একেবারে উত্তরবঙ্গে, দিনাজপুরে, যাবে তুমি সেখানে? নয়ন বলল, আমি যাবো। মহিলা গাড়ীর দরজা খুলে নয়নকে বলল, চলো তাহলে আমার সাথে, নয়ন তখন মনে মনে আখিঁর কথা মনে পড়লো, এবং বললো, আমি কি একটু আখিঁকে বলে আসতে পারি, যদি অনুমতি দেন?

মহিলা জিজ্ঞাসা করলেন, আখিঁ কে? আখিঁ আমার এক বন্ধু, নয়ন খোলামেলা উত্তর দেয়। সে কাওরান বাজারের দিকে থাকে, মহিলা বললেন, ঠিক আছে, আমরা ওই পথ দিয়ে যাচ্ছি যাবার সময় তুমি দেখা করে যেতে পারবে। গাড়ী ষ্টার্ট নিলে নয়ন মনে মনে মাকে বললো, ‘মাগো, আমি যাচ্ছি গো মা, তুমি তো সব দেখছো, সব শুনেছো, তুমি কিছু কি বলবে, নয়ন স্পষ্ট শুনলো, তার মা বলল, ‘যা নয়ন, তোর ভাল হবে এতে’, তুই ভাল থাকবি, যা তুই।

মহিলা কিছু বললেন, নয়ন খেয়াল করে নি, আমাকে কিছু বললেন, "না, তুমি বির বির করে কি বলছো, কার সাথে কথা বলছো" নয়ন বললো ‘আমার মৃত মায়ের সাথে কথা বললাম, মা বললেন, আমার ভালো হবে’ আমাকে যেতে বললেন, মহিলা বললেন আহা ছেলে...কি কষ্ট, সে নয়নের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে তার চোখ টিসু পেপার দিয়ে মুছিয়ে দিয়ে বললেন, আমরা আখিঁর ঘর হয়ে রওনা দেবো ঠিক আছে? নয়ন মাথা নাড়লো।



আখিঁর খুব সম্ভবত জ্বর। সে স্কুলে যেতে পারে নি কয়দিন ধরে। আখিঁর মা আখিঁকে চাদর গায়ে দিয়ে জ্বর মাপছিলেন, ঠিক তখন তাদের ঘরের সামনে গাড়ী থামার আওয়াজ শুনতে পেয়ে আখিঁ রেলিং-এ এসে দেখে গাড়ী থেকে স্বয়ং নয়ন নেমে আসছে। তার মনটা খুশীতে ভরে গেলো। তার যেনো বিশ্বাস হচ্ছিলো না। সে নীচে নেমে নয়নকে উপরে নিয়ে এলো, নয়ন জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে আখিঁ, তুমি চাদর গায়ে? তোমার নিশ্চয় জ্বর, দেখি বলে সে আখিঁর গায়ে হাত দিয়ে দেখলো বেশ জ্বর। সে বললো, আখিঁ, আমি দোয়া করছি, তোমার জ্বর ভালো হয়ে যাবে।

আচ্ছা আখি, শোনো, আমি চলে যাচ্ছি, আখিঁ বললো, কোথায়? অনেকদূরে আখিঁ। কবে ফিরে আসবে? জানিনে আখিঁ। তবু যখনই ফিরে আসি তোমার সাথে দেখা করবো, তুমি এখানে থাকবে তো?

তুমি চিন্তা করো না আমি এখানেই থাকবো, এটা আমাদের নিজেদের বাড়ী। কিন্তু কোথায় যাবে, কেনো যাবে কিছুই তো বললে না? আখিঁ জানতে চাই?

আখিঁ, সে অনেক কথা, শুধু এতটুকু বলতে পারি, আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে পড়ালেখা করার সুযোগ আছে, আমাকে আর হোটেলে কাজ করতে হবে না। তুমি কিন্তু মন দিয়ে পড়ালেখা করবে আখিঁ। তোমার কথা আমার মনে থাকবে। আচ্ছা, তাহলে আজ যাই, আখিঁ বলে “যেতে নেই, বলো আসি” নয়ন আখিঁর হাত ধরে বলে ঠিক আছে আখিঁ, তাহলে আসি, বিদায়। এই কথা বলে ওরা নীচে নেমে আসে আখিঁ নয়নকে গাড়ীতে তুলে দিয়ে উপরে চলে আসে আর আখি হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাই, নয়ন ও হাত নাড়ায়।

broken heart

আজ রাত্রে নয়নের মার বেশ স্ফূর্তি। বট গাছের মগডালে বসে মাথার চুল ছেড়ে পা দোলাতে দোলাতে মুখ উচু করে মুগ্ধ হয়ে চাদের আলো দেখছিলো সে। বেচে থাকতে নয়নের মা কোনদিন চাদের আলো দেখেনি, কখনো দেখার কথা মনেও আসেনি, সারাটা কাল কেবল খেটে গেছে..চাদের আলোও যে এত সুন্দর হয় তা তার কল্পনাতেও ছিলো না..ইশ কি যে সুন্দর চাদের আলো..



এত রাতে কাওরান বাজার এলাকা শান্ত।

দোকানপাট সব আলো নিভিয়ে বন্ধ। গাড়ী বা মানুষজনের চলাচল নেই বললেই চলে। সেই আলো আধারী রাত্রে চাদের আলো দেখতে দেখতে নয়নের মা গুন গুন করে গান ধরে...

“ইলিশমাছ তাজা

খেতে পারি ভাজা

এক-দুই-তিন-চার

আমার পেটে সব টুকরো পার

ওরে টেরাকঅলা ভাই

তোরে ধন্যবাদ জানাই।

কথা আমার হাঁচা

তোর টেরাকে ধাক্কা খেয়ে

গ্যালাম আমি আরিচা

নয়নের মা’র স্বরে গান কানে শুনতে পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো বুড়ো পেত্নীটার। তবে এবার সে ঝগড়া বাধায় না বলে, ওলো আরেকটা ধর তো দেহী, তোর গলা তো মাইরী ভালা, গান তো ভালাই গাস, আরেকটা শোনা.....নয়নের মা আরেকটা গান ধরে...

শোনো গো দক্ষিনা হাওয়া

প্রেম করেছি আমি.........


(সমাপ্ত)

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩

শায়মা বলেছেন: মুগ্ধ হয়ে পড়লাম ভাইয়া।

প্রথমে শুরুতে হাসতে হাসতে মরছিলাম।

যদিও হ্যাপী এন্ডিং তবুও চোখে পানি এসে গেলো শেষে।

এই গল্প আমি প্রিয়তে রেখে দিচ্ছি।

২৫ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৫

সভ্য বলেছেন: প্রিয় শায়মা আপু, মন্তব্য পড়ে বুঝে নিয়েছি যে গল্পটি আপনি খুব সিরিয়াসলি পড়েছেন, আজকালকার কেউ খুব মনোযোগ দিয়ে কোনো কিছু পড়ে ও না লিখে ও না, তবে আমি গল্পটি যতক্ষণটা মাথা থেকে নামাতে পেড়েছি ততক্ষণ আমার শান্তি নেই, একবার লিখে ফেললাম, তারপর আছে কারেকশন, প্রুফরিডিং, যতটুকু পারা যায়.।ভাল লাগলো কমেন্ট পেয়ে। গল্প লেখার আগ্রহ বেড়ে গেলো। পাশে থাকবেন ভালো ভালো গল্প পাবেন ইনশাল্লাহ। ভাল থাকবেন, সুস্হ ও সুন্দর থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন। বিদায় ও শুভ কামনা।

২| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:১০

সিলা বলেছেন: haha... onek din por mojar ekta golpo porlam valolakche khob :)
r ki kokhono akhir sathe noyoner dekha hoyechilo? jante icche korche

৩| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬

ইয়াশফিশামসইকবাল বলেছেন: আমি শায়মার সাথে একমত....খুবি সুনদর মৌলিক গোলপো...

২৫ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৯

সভ্য বলেছেন: সিলা ও ইয়াশফিশামস ইকবাল ভাই কিংবা বোন, ভালো লাগলো কমেন্ট পেয়ে, আজকাল কেউ গল্প পড়তে চাই না, পড়েও তো না পড়লে নিশ্চয় কমেন্ট করবে, আপনাদের উভয়ের সুন্দর জীবন যাপন আশা করছি এবং গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যেখানে থাকবেন ভাল ও সুন্দর থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন। শুভ কামনায়।

৪| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:১৬

শায়মা বলেছেন: ৩. ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬ ১
ইয়াশফিশামসইকবাল বলেছেন: আমি শায়মার সাথে একমত....খুবি সুনদর মৌলিক গোলপো...

ভাইয়া থ্যাংকস আমার সাথে একমত হবার জন্য। :)

২৫ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪১

সভ্য বলেছেন: শায়মা আপু, ভালো থাকবেন, সুন্দর থাকবেন ও নিরাপদে থাকবেন। শুভ কামনা সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.