নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাশ্বত স্বপন

শাশ্বত স্বপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের ধারায় দূর্গাপূজা ৩য় পর্ব

০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৩৫



পরিব্রাজক, বৌদ্ধ পন্ডিত হিউয়েন সাংকে নিয়ে দূর্গাপূজার একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। চীনা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাখায় বিভ্রান্ত হয়ে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের মূল পান্ডুলিপি সংগ্রহে ৬৩০ সালে ভারত সফরে আসেন। ভারত বর্ষের নানা বিহারে বিদ্যা অর্জন করেন। ৬৩৫-৬৪৩ পর্যন্ত দীর্ঘ আট বছর তিনি হর্ষবর্ধনের রাজ সভায় ছিলেন। তবে তার কাহিনী দূর্গা, কালী, কালীর আরেক রূপ চন্ডি নাকি বন দেবীকে নিয়ে-তা নিয়ে মতবেধ আছে। তবে তার রচনায় উল্লেখ করেছেন, হর্ষবর্ধন এর সময়ে দস্যু তস্কর এর উপদ্রব খুব বেশি ছিল এবং তিনি নিজেও একাধিক বার দস্যুর হাতে নিগৃহিত হয়েছিলেন। তার প্রবাস জীবনের কোন এক সময়ে গঙ্গাপথে (প্রাচীন গঙ্গারিডি) এই পরিব্রাজক কোন বৌদ্ধ বিহারে যাচ্ছিলেন। পথে দস্যুর কবলে পড়লেন। দস্যুরা তাকে দেবী দূর্গার সামনে বলি দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। কেউ মনে করেন, বন দেবী, কেউ মনে করেন কালী, কারণ প্রাচীনকালে নরমুন্ড ভোগ দেবার বিষয়টি বনদেবী বা কালী দেবীর জন্য প্রযোজ্য ছিল--যা এখন পাঠা দিয়ে পূরণ করা হয়। দূর্গা মাকে খুশী করার জন্য নরমুণ্ড ভোগ দেবার বিষয়টি ইতিহাস থেকে জানা যায় না। যাই হোক, বলির পূর্ব প্রস্ততি প্রায় শেষ, এমন সময় প্রচন্ড বেগে ঝড় ছুটে এল। সব আয়োজন ঝড়ের কবলে লন্ডবন্ড হয়ে গেল। ডাকাতরা জান বাঁচাতে পালাতে লাগল। সেই সুযোগে হিউয়েন সাংও পালিয়ে যান।

মধ্য যুগে বাংলা সাহিত্যে দূর্গা পূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ঢাকেশ্বরী মন্দির চত্বরে আছে দুই ধরনের স্থাপত্যরীতি মন্দির। প্রাচীনতমটি পঞ্চরত্ন দেবী দূর্গার--যা সংস্কারের ফলে মূল চেহেরা হারিয়েছে। মন্দিরের প্রাচীন গঠনশৈলী বৌদ্ধ মন্দিরের মত। দশম শতকে এখানে বৌদ্ধ মন্দির ছিল--পরবর্তীতে কিভাবে সেন আমলে হিন্দু মন্দির হয়েছিল--তা ইতিহাসে লিখা নাই। ১১শ বা ১২শ শতক থেকে এখানে কালী পূজার সাথে দূর্গা পূজাও হত। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। ধারণা করা হয় যে, সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেন ১২শ শতাব্দীতে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে সেই সময়কার নির্মাণ শৈলীর সাথে এর স্থাপত্যকলার মিল পাওয়া যায় না বলে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন। তবে বিভিন্ন সময়ে এই মন্দিরের গঠন ও স্থাপনার নানা ধরনের পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। ইতিহাসবিদ দানীর মতে, প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে রমনায় কালী মন্দির নির্মিত হয়েছিল এবং এখানেও কালী পূজার সাথে দূর্গা পূজা হত।

প্রাচীন স্মার্ত পুথিকার জিমূতবাহনের ‘কালবিবেক’, রঘুনন্দনের অষ্টাবিংশতিতত্ত্ব’, শূলপাণির দুরগোৎসববিবেক আলোচিত হতে পারে ৷ খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে বিহারের সহরসার রাজা শালিবাহনের পুত্র জিমূতবাহন লিখেছিলেন কালবিবেক ৷ চতুর্দশ শতকে নবদ্বীপে জন্মানো পণ্ডিত শূলপাণির লেখা অনেক গ্রন্হের অন্যতম হল দুরগোৎসববিবেক। এই তিন গ্রন্থেই দূর্গাপূজায় সীমাহীন আমোদ-প্রমোদের কথা উল্লেক আছে।

তামিল মহাকাব্য শিলপদ্দিকারম-এ দেবী দুর্গাকে প্রজননের, উদ্দাম যৌবনের ও অবাধ মদ্যপানের দেবী বলে বর্ণনা করা হয়েছে৷ তামিলভাষায় শিলপদ্দিকারম প্রধান পাঁচটি মহাকাব্যের অন্যতম একটি ৷ আনুমানিক ষষ্ঠ শতাব্দীতে এটি লেখেন চের সাম্রাজ্যের রাজা সেঙ্গুত্তুভান-এর ‘ভাই’ হিসাবে পরিচিত পণ্ডিত ইলাঙ্গো আডিগাল৷
দূর্গাপূজার ইতিহাস থেকে জানা যায় বর্তমান পশ্চিম বাংলার বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবাড়িতে ৯৯৭ খ্রীস্টাব্দ বা ৪০৪ বঙ্গাব্দে দূর্গাপূজা শুরু হয়েছিল। আগে বসন্তকালেই হত মূল দুর্গাপুজো, তখন নাম ছিল ‘বাসন্তী’ পুজো৷ বাংলার রাজ়নৈতিক ইতিহাস বলছে, রাজা শশাঙ্কর আমলে বাংলার ধর্মমত ছিল শৈব মানে শিব, তখনও দুর্গার পুজো হত বলে জানা যায় না৷ রাজা গোপাল বা পাল আমলে দূর্গাপূজা হত না। তবে মূর্তি ছাড়াই সুবচনী, মঙ্গলচণ্ডী, শীতলা, মনসা-র মতো অ-কুলীণ দেবীরা নিচু শ্রেণির মানুষের পুজো পেয়েছেন বলে জানা যায়। বল্লাল সেন এর আমলে এ পূজা হত, তবে তা বসন্তকালে বাসন্তী পূজা নামে। বাংলায় বন্যার সময় হল আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস। ফলে এই সময় ফসল নস্ট হত৷ তাই বাংলার শরৎকাল ছিল কৃষকের অভাব ও দুর্যোগের মাস৷ ফলে ইতিহাসে শরৎকালে এ উৎসব প্রচলিত ছিল না। হেমন্তে ফসল নিয়ে সবাই ব্যতিব্যস্ত থাকত। আর শীতে তো উৎসব জমে না। ফলে বসন্তকালেই অন্নপূর্ণা ও বাসন্তী পুজা হত৷ তবে জমিদার-রাজা-মহারাজারা হয়তো শরৎকালে এ পূজা করে থাকতে পারে।

চলবে

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭

মামুন রশিদ বলেছেন: দূর্গাপুজো নিয়ে তথ্যবহুল দারুণ একটা সিরিজ । চলুক ।

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:১৬

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: চমৎকার একটা সিরিজ। সিরিজের বাকি পর্ব গুলো পড়ে দেখছি।

শারদীয় শুভেচ্ছা।

৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৮

শাশ্বত স্বপন বলেছেন: অামি কারো মন্তব্য দেখতে পাই না্। নিজের মন্বব্য প্রকাশ করার পর তা দেখতে পাই না্। সামু কর্তৃপক্ষ কি এসব করছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.