নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস দেওয়ান

বাঙালির স্বার্থ সবার ওপরে

এস দেওয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কলির কালের নেতা

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:৪৪

নির্বাসিত রাজনীতিবিদ বারেকের সাক্ষাৎকার নিতে তাঁর বাসায় এক দমপতি এসে উপনিত হলো । বারেকের দারোয়ান এসে বললো- ''স্যার, দু'জন লোক আপনার সাথে দেখা করতে চাইছেন'' । বারেক বললো- ''আমার সাথে দেখা করতে চাইছেন, কোথা থেকে এসেছেন তাঁরা'' ? দারোয়ান বললো- ''স্যার, বাংলাদেশ থেকে এসেছেন । তাঁরা নাকি আপনার দলের লোক । আমারদেশ কাগজের সাংবাদিক'' ।

বারেক- '' তাই নাকি ? ঠিক আছে তাঁদেরকে ভেতরে নিয়ে আসুন'' ।

দারোয়ান বাকী ও তাঁর স্ত্রী রাখিকে ভেতরে নিয়ে আসলো । তাঁদেরকে দেখতেই বারেক সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো- ''আরে বাকী সাহেব- রাখি ভাবি কেমন আছেন আপনারা'' ?

উত্তরে রাখি- '' আমরা ভালো আছি বারেক ভাই, আপনি কেমন আছেন'' ?

বারেক- '' এই তো নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছি । তা পৌঁছনোর আগে আমাকে একটা কল করে দিলেই তো আমার লোকেরা গিয়ে আপনাদেরকে এয়ার পোর্ট থেকে নিয়ে আসতো'' ।

বাকী বললো- ''সেই চেষ্টা অনেক করেছি বারেক সাহেব কিন্তু কিছুতেই আপনার নাম্বারে কল মেলাতে পারলাম না । আপনার সব ক'টি নাম্বারই অফ যাচ্ছিল'' ।

বারেক- ''ওহ ! আমি আজই আমার সব নাম্বার চ্যাঞ্জ করিয়েছি, এই জন্য আপনি কল করতে ব্যর্থ হয়েছেন'' ।

বাকী- ''এত ঘন ঘন নাম্বার চ্যাঞ্জ করেন কেন'' ? উত্তরে বারেক- ''সাংবাদিকতা করেন আর এই কথাটি বোঝেন না- আমাদের মতো নেতাদের কি শত্রুর অভাব ? শত্রুরা আমার বাবাকে মেরেছে, আমাকে যে মারবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে'' ।

বাকী- ''এই বৃটেনেও তো রাজনীতিবিদ আছেন, কৈ- তাঁরা তো নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন না'' ?

বারেক হেসে বললো- ''বৃটেনে আবার নেতা আছে নাকি ? ক'জন লোক তাঁদের জন সভায় আসে ? বাকী সাহেব, ক্ষমতা দখলের জন্য অনেক বৈরিতামূলক কাজক করতে হয় আর তখনই শত্রু সৃষ্টি হয় । যাগগে, আপনারা জার্নি করে এসেছেন, ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম করে নিন; তার পর বিস্তারিত আলাপ করা যাবে'' ।



পর দিন বারেক ও বাকীর মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল । বাকী জানতে চাইলো- ''আচ্ছা বারেক সাহেব- আপনি হঠাৎ করেই দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট প্রসঙ্গে মন্তব্য করে সারা দেশে বিতর্কের ঝড় তুলে দিলেন এর কারণ কি জানতে পারি'' ?

বারেক- ''হুম- একটু বাজিয়ে দেখলাম আমার প্রভাব বাংলাদেশে অশিষ্ট আছে কিনা । দেখছেনই তো কত বছর ধরে নির্বাসনে আছি, জানি না আরো কত বছর থাকতে হবে । চুপ মেরে থাকলে মানুষ তো আমার নাম পর্যন্ত ভুলে যাবে । এই ভাবে যদি আওয়ামী লীগ টানা দশ বছর ক্ষমতায় থেকে জনগণকে তাঁদের পাঠ পড়াতে থাকে তাহলে আমাদের কথা আর কেউই বিশ্বাস করবে না, তাই শেখ মুজিবের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় খোচা মেরে দিলাম'' । কথা শেষ করেই বারেক হাসতে শুরু করলো ।

বাকী- ''সত্যি বারেক সাহেব, আপনাদের মতো নেতাদের চাল বোঝা বড়ই কঠিন । আচ্ছা, আপনারা পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনে কেন অংশ নিলেন না ? উপজেলা নির্বাচনে জনগণ তো আপনাদেরকেই বেশি ভোট দিলো'' ?

বারেক- ''মস্ত বড় ভুল হয়েছে । আমরা ভেবেছিলাম এই সরকারের অধিনে নির্বাচন হলে সরকার কারচুপি করবে কিন্তু সরকার তা করেনি । তাছাড়া, আমাদের ভয় ছিল হয়তো যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে থাকাতে মানুষ আমাদেরকে ভোট দেবে না । কিন্তু উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল আমাদের সব ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছে । দেশে যে এখনও পাগলের অভাব নেই তা বুঝতে পেরে আমি আবার আশায় বুক বেঁধেছি । আমি চাইছি অবিলম্বে আরেকটি নির্বাচন হোক এবং তার জন্য আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী দেশ গুলোর সাথে প্রতিনিয়তোই দরবার করে যাচ্ছি যাতে তাঁরা নতুন নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দেয়'' ।

বাকী- ''কোনও দেশ আপনার প্রস্তাবে কি সাড়া দিয়েছে'' ?

বারেক- ''হ্যাঁ, সৌদি আরব ও যুক্ত রাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ রাজি হয়েছে । পাকিস্তান তো সামরিক সাহায্যসহ সব ধরণের সাহায্য করতে প্রস্তুত আছে বলে আমাকে আশ্বাস দিয়েছে'' ।

বাকী চিন্তিত স্বরে বললো- ''বারেক সাহেব- বিদেশিদের কাছ থেকে সামরিক সাহায্য নিলে তো আমাদের দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে'' ! বাকী কথা শুনে বারেক হাসতে হাসতে আবার সিরিয়াস হয়ে বলল- ''কিসের স্বাধীনতা ? কার স্বাধীনতা ? দেশে থাকবার স্বাধীনতাটুকু আমার নেই, ইংরেজদেরকে তেল মেরে জীনন যাপন করতে হচ্ছে এখানে । যেই স্বাধীনতা আমার কাজে আসে না সেই স্বাধীনতাকে আমি বাংলাদেশ থেকে দূর করে ছাড়বো'' ।

বাকী- ''কিন্তু বারেক সাহেব এই স্বাধীনতার জন্য তো আপনার বাবাও যুদ্ধ করেছিলেন'' ।

উত্তরে বারেক বললো- ''আপনারা হয়তো জানেন না যে, বাবা শুরু থেকেই স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলেন । কোনও সৈনিকই তার দেশ কে দু'টুকরো করার পক্ষে যেতে পারে না । মুজিবের স্বাধীনতা সংগ্রামের ফলে অনিচ্ছাকৃত ভাবে বাবাকে তথাকথিত মুক্তি যুদ্ধে যোগ দিতে হয়েছিল । অন্যথায় অন্যান্য বাঙালি সৈনিকদের মতো পাকিস্তানিরা বাবাকেও নিরস্ত্র করে বন্দি করতো'' ।

বাকি- ''আপনি তো বলেছেন শেখ মুজিব নাকি অবৈধ ভাবে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, এর যৌক্তিকতা কোথায়'' ?

বারেক রাগাম্বিত হয়ে বললো- ''অবৈধ নয় তো কি ? মুজিবের স্বাধীনতা সংগ্রামও অবৈধ ছিল । তাঁর পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন করাটাও অবৈধ ছিল । একটি দেশের কোনও অঞ্চলকে জোর করে স্বাধীন করা কোনও ভাবেই বৈধ কাজ হতে পারে না । বর্তমান সরকারও অবৈধ'' ।

বাকীর শেষ প্রশ্ন- ''বারেক সাহেব আপনার বাবা কি বৈধ ভাবে পেসিডেন্ট হয়েছিলেন'' ?

বারেক রেগে বললো- ''মিস্টার বাকী, জানতে চাওয়ারও একটা সীমা রেখা থাকা উচিৎ'' ।

বাকী- ''সরি বারেক সাহেব, ভুল হয়ে গেছে । সাংবাদিক তো তাই স্বভাবটা একটু সাংবাদিক মার্কা । আগামীতে এমন ভুল আর হবে না'' ।

বারেক বললো- ''আচ্ছা ঠিক আছে । আপনি এখন আসুন । আমার বিশ্রামের প্রয়োজন ।

বাকী- '' ঠিক আছে বারেক সাহেব- আপনি বিশ্রাম করুন, পরে কথা হবে'' ।

বাকী বারেকের কক্ষ থেকে প্রস্থান করলো ।

সমাপ্ত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.