![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বারটি মাস ঘুরেই আসে নববর্ষ। কিন্তু সেই বার মাস কারো কাছে 'চোখ ফেরাতেই চলে যায় । আবার কারো কাছে মনে হয় এক প্রলম্বিত অধ্যায়-আঠার মাসে বছর। তবে সেই বার মাস কিংবা আঠার মাস যাই হোক না কেন, বছরের প্রথম দিবসটি সর্বদাই নববর্ষ। আক্ষরিক অর্থে যদিও সেটা ঠিক কিনা অর্থাৎ প্রথম দিনটিকে কেন ভুল করে সবাই উদযাপন করে হ্যাপী নিউ ইয়ার কিংবা শুভ নববর্ষ বলে, সেই স্থলে কেন শুভ নববর্ষের প্রথম দিন বলে না সেই প্রশ্নটি এই বেরসিক ব্লগারের বুঝে আসে না!
ছোটবেলায় দেখেছি বছরের প্রথম দিনটিকে ঘিরে কী বিশাল প্রস্তুতি আমাদের পাড়া্প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে। বাজার থেকে বড় মাছ দেখে কিনে আনা কিংবা গৃহস্থ ঘরে খৈ ভাজা ছিল বছরের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের অন্যতম অংশ। বড় মাছ যদি বছরের বিশেষ দিনটিতে খাওয়া হয়, তাহলে সারা বছরই এভাবে বড় বড় মাছ খাবার সৌভাগ্য হবে। কিংবা প্রথমদিন খৈ ভাজা হলে সেই পরিবারের শনৈ: শনৈ: ভাগ্য উন্নতি ঘটবে, এই সংস্কারেই কীনা, উপলক্ষ্যের দিনটিকে বিশেষ তাৎপর্যময় করে তুলা হতো। এতে অবশ্য বরাবরের মতই, অন্য কারো ভাগ্যের উন্নতি না হলেও, মাছ বিক্রেতাদের জন্য দাম চড়ানোর একটা সহজ মওকা মিলতো।
এখন তো বর্ষবরণের এতো বেশী উপায় যা লিখতে গেলে এই অক্ষমের কল্পনাও হার মানবে। খাই্খরচের বিষয়টি বাদ দিলেও, শুধু প্রস্তুতির কথা বললেই অনেক ফিরিস্তি দিতে হবে! প্রিয় বন্ধু কিংবা বান্ধবীকে নিদেনপক্ষে একটি টেক্স মেসেজ কতটা আনকমনভাবে দেয়া যায়, সেটা নিয়ে যে গবেষনা চলে, আমার মনে হয় এটা বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষায় করলে অনেকেই লেটার মার্কস পেতেন। কার কী পোশাক হবে, ম্যাচিংটা সবার মধ্যে হচ্ছে কীনা, প্রথম প্রহরে মোবাইলের কানেকশনটা পাওয়া না গেলে বিকল্পটা কী, এইসব অতি সাধারণ ব্যাপারের সাথে আছে দেখা করার জন্য নীরব পরিবেশটা কীভাবে বের করা যায়। ঢাকায় বছরের প্রথম দিনে পুরনো ঢাকার নীরব হোটেল সগৌরবে সরব হয়ে উঠে, বর্ষ বরনের অনুগ্রাহীদের পদচারণায়!
নতুন বছর আসে আমাদের জন্য অফুরন্ত স্বপ্নের ভান্ডার নিয়ে, আমরাও তাকে সাদর সম্ভাষন জানাই অতি আন্তরিকতায়। যদিও আমরা জানি যে আমাদের জীবনযাপনের যে প্রচলিত ধারা, তাতে অতি ব্যত্যয় না হলে, কিছু স্বপ্ন আমাদের কোন দিনই পূরণ হবে না। আমরা আগের বছরগুলোয় যেভাবে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছি, আগামীতেও তার আশু পরিবর্তন হবে এমন সম্ভাবনা নিতান্তই কম। এটা শেয়ালের সেই তওবা করার গল্পের ন্যায়। অনেকেই হয়তো জানেন, তবুও আরেকবার বলছি।
দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকার জন্য জঙ্গলের ভিতরে শেয়ালের যে গর্ত, তার প্রবেশ পথ ছিল খুবই ছোট। সারাদিন ঘুমিয়ে কাটানোর পর সন্ধ্যার লগ্নে শেয়াল যখন গর্ত থেকে বের হয়, তখন ক্ষুধার তাড়নায় তার পেটের সাইজ ছোট হয়ে আসে। গর্ত থেকে অনায়াসে বের হতে তার কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু সারারাত বাইরে শিকার ধরে ধরে আর এটা সেটা খেয়ে প্রত্যুষে সে যখন ভরপেটে ফিরে আসে, তখন দেখা দেয় মহাবিপদ। পেটের বাড়তি সাইজের কারনে
ছোট গর্ত দিয়ে শরীর আর ঢুকাতে পারে না, জোরাজুরি করতে গেলে চামড়া ছিলে যায়, কিংবা পেটের উপর চাপের কারনে জান বেরিয়ে যাবার উপক্রম হয়। শেষমেষ অনেক কষ্ট করে যখন কোনমতে শরীরটা গর্তে ঢুকাতে সক্ষম হয়, তখন শপথ নেয় পরের রাত্রে অবশ্যই গর্তের মুখটা বড় করতে হবে। কিন্তু সারাদিন ঘুমানোর পরে আর খাবার হজম হয়ে যাবার কারনে সন্ধ্যার সময় গর্ত দিয়ে বের হতে আর কোনই সমস্যা হয় না। একারনে শেয়ালেরও আর উপলব্ধি হয় না গর্তের প্রবেশ পথ বড় করার বিষয়টি।
প্রতিটি বছরই আমরাও কী সেই গল্পের শেয়ালের ন্যায় সিদ্ধান্ত নিই না নতুন বছরে পুরনো ভূলগুলো আর করব না, যে সব কাজ করলে জীবনে অনেক উন্নতি করা সম্ভব কিন্তু নিছক আলস্য আর অবহেলায় আমাদের স্বপ্নকে তাড়া করার দিকে ধাবিত হই না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক ইয়ারমেট, যে কীনা নাইজেরিয়া থেকে ল' পড়ে এসেছে ব্যবসায় প্রশাসনে উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য, আমাকে একদিন বলেছিল, স্বপ্নটা সব সময়ই বড় রাখতে হয়। তুমি যদি স্বপ্ন দেখ সূর্যকে স্পর্শ করার, তবে মনে রেখ, তুমি অন্তত: চাঁদে হলেও একদিন পৌঁছাবে যদি সে পথেই যাও।এ সম্পর্কে আরেকটি মহাজনী বাক্য অবশ্য মনে পড়ছে, প্রতিটি মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়!
অনেকের জন্যই স্বপ্ন নিয়ে নতুন বছর এলেও, এই ব্লগারের এক বন্ধুর জন্য প্রতিটি বছরই নিয়ে আসে কিছু বাড়তি বিড়ম্বনা। বলছি সেই বন্ধুর ভাষ্যেই। 'দোস্ত, পুরনো বন্ধুদের অনেকের সাথেই যোগাযোগ নেই কিংবা বলা যায় নিজেই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলি। রাস্তায় মাঝে মাঝে দু-একজনের সাথে হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেলেই যে প্রশ্নটি আসে তার উত্তরটি নিজের জন্য এক বিড়ম্বনাময়। বন্ধুদের দোষ দিয়ে তো আর লাভ নেই, তারা নিছক আমার শুভাকাংক্ষী দেখেই প্রশ্নটি করেন। নতুন একটি বছর,মানে নিজের বয়স আরেকটি বছর বেড়ে যাওয়া। জীবনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির খেরো খাতায় অনেক যোগবিয়োগ হলেও, সাংসারিক অংকের সরল (কিংবা জঠিল অনেকের জন্যই!) হিসাবটি ত্রিশোর্ধ বয়সে এসেও একের ঘরেই আটকে আছে! সারা বছর কাটাই ছোট একটা খাটে, সেটা কেটে যে মুরুব্বীদের একটু বুঝাবো 'এত বড় খাটের আমার দরকার নেই- সেই জো'ও নেই। কারণ বিছানা এতই ছোট যে কাটার পরে সেটাকে আর দাঁড় করানো যাবে না। আরেকটি কিনে আনতে হবে সেই নিজের উপার্জিত টাকায়! কী মুশকিল ! কী করে বুঝাই!!
আমার সেই বন্ধুটির মতই দেশে-বিদেশে আরও অনেক বন্ধু আছেন যারা হয়তো নববর্ষ কে আনন্দ ও বিড়ম্বনার এক ব্যন্জনাময় উপাখ্যান হিসাবেই দেখছেন। তবুও নতুন এক বৎসরের প্রান্তলগ্নে যারা এই লেখাটি পড়ছেন তাদের সবাই কে জানাচ্ছি শুভ নববর্ষের সাদর শুভেচ্ছা। নববর্ষ সত্যিকার অর্থেই হোক আমাদের সুন্দর আগামীর সূচনা, এই প্রত্যাশা রাখছি।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:৩৮
পরদেশী মেঘ বলেছেন: পড়া ও মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০৭
অসাদুল ইসলাম বলেছেন: ভাল লাগল। ......চালিয়ে যান