নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র

পারভেজ আলম

হাসরের ময়দানে ইট কাঠ আর কংক্রিটের দেয়ালে, রক্তের কালিতে, কবিতা কালাম লিখে মরা মানুষএর মিছিলে দাঁড়ায় একবিংশের রাসুল। দুই হাত ভরা ব্যাগে নানান ব্র্যান্ডের আমলনামা।

পারভেজ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাসেল পারভেজ'রা কারো পোষা বাদর নয়

১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৬

সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়না, যা কিছু খারাপ কাজ তুমি করো তার দায় তোমার, আল্লাহর না, আল্লাহ তোমারে স্বাধীন চিন্তা এবং কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছে। সুতরাং, যা কিছু খারাপ কাজ এবং পাপ তুমি জালিম সরকার করো তার দায় একান্তই তোমার। ধর্মের নামে এই পাপ, এই জুলুম তুমি জায়েজ করতে পারবানা। উমাইয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে এইরকম সাহসী উচ্চারণের জন্যেই মাবদ আল জুহানিকে ধর্ম বিরোধীতার অভিযোগ এনে হত্যা করা হয়। একি কারনে হত্যা করা হয় গাইলাম আল দিমেস্কিকে। এইটা ইসলামী দুনিয়ার স্বর্ণযুগের শুরুর কালের মুক্তচিন্তার বিদ্রোহের সময়কার কথা। জুহানি, দিমেস্কির রক্ত বৃথা যায়নাই। তাদের উত্তরসূরী হাসান আল বসরি, ওয়াসিল বিন আতা, আমর বিন ওবায়েদএর নেতৃত্বে মুসলিম দুনিয়ায় মানুষের স্বাধীন মত ও চিন্তা, এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্বে যুক্তিবিদ্যার চর্চার প্রসার হয়। আসে আব্বাসীয় খেলাফতের আমলে মুসলিম দুনিয়ার স্বর্ণযুগ।



সেই যুগ চিরস্থায়ী হয়নাই। প্রথম মুসলিম দার্শনিক হিসাবে বিখ্যাত আল কিন্দি একজন ধার্মিক ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও মোল্লাদের পক্ষ থেকে ধর্ম বিরোধীতার অভিযোগের মুখে পরেন, তার পাঠাগার বন্ধ করে দেয়া হয়। আল কিন্দি হারেন নাই, লড়াই করে জিতেছেন, পালটা অভিযোগ তুলেছেন "ধর্মীয় মুখপাত্ররাই অধার্মিক। তাঁরা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করায় প্রবৃত্ত। আল কিন্দির শিষ্য আল সারাখশির অবশ্য কপাল অতো ভালো ছিলনা, বেচারা নবি রাসুলদের বাগারম্বরকারী এবং প্রতারক বলে লেখালেখি করেন। ফলাফল ইনকুইজেশন, মৃত্যু। বিখ্যাত চিকিৎসাবীদ ও দার্শনিক আল রাজি তাতে ভয় পান নাই, তিনি বরং ওহী এবং নবুয়াত বিষয়ে সন্দেহ তুলে পাতার পর পাতা লিখে গেছেন। মুসলিম দুনিয়ার স্বর্ণযুগের সেইটা মধ্য গগন। ইবনে সিনা, আল ফারাবিদের জয় জয়কার। তবে সেই যুগ স্থায়ী হয়নাই। গাজালি আসলেন, এসে লিখলেন 'তাহাফুত আল ফালাসিফা', দাবি করলেন ইবনে সিনা, আল ফারাবিরা ধর্মবিরোধী। মাদ্রাসা থেকে উঠে গেলো দর্শন, বিজ্ঞানের পাঠ। একমাত্র কবি, বিজ্ঞানী ও দার্শনিক ওমর খৈয়াম শেষ দিন পর্যন্ত নিজের ছাত্রদেরকে ইবনে সিনা পড়িয়েছেন। আরব দুনিয়ায় মুসলিম দর্শন বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগের পতন চোখের সামনে দেখতে দেখতে ওমর খৈয়াম বিদায় নিলেন। সেই বিদায়ও শান্তির হলোনা। শেষ বয়সে বেচারা পরলে নিশাপুরের ইনকুইজিশনের ফেরে। জীবন বাঁচাতে হজ্জ করতে গেলেন। নিশাপুরে যখন ফিরলেন আরব দুনিয়ায় জগতখ্যাত মুসলিম স্বর্ণযুগের তখন পতন হয়েছে। সেই পতনের কষ্ট বুকে চেপে তিনি বিদায় নিলেন, এমনকি ইতিহাসের পাতা থেকে শত শত বৎসরের জন্যে নিজেই বিস্মৃত হলেন।



তবে লড়াই তখনো কর্ডোবায় শেষ হয়নাই। ইবনে তুফায়েল, ইবনে বাজারা ছিলেন। বাজাকে বিষ পান করিয়ে হত্যা করা হলো। ইবনে তুফায়েল ধর্ম ও দর্শনের সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে লিখলেন 'হাই ইবনে ইয়াকজান', ইবনে সিনার পুস্তকের নামের অনুসারে। ইবনে রুশদ রুখে দাঁড়ালেন, গাজালিকে কাউন্টার দিতে গিয়ে লিখলেন 'তাহাফুত আল তাহাফুত। কিন্তু বেচারা সেই সময়কার কর্ডোভার শাসকদেরকেও সমালোচনা করতে ছারেন নাই। সুতরাং, গ্রেফতার, জুলুম, দ্বীপান্তর। যখন ফিরে আসলেন, তখন তার সব বই পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই অন্যায় বুকে সয়ে মাত্র ১ বছর বেঁচে ছিলেন ইবনে রুশদ। সেই ইবনে রুশদ যার বই পুস্তক মুসলমানরা পুড়িয়ে দিলেও খ্রীষ্টানরা অনুবাদগুলোকে ঠিকই সসম্মানে জায়গা করে দিয়েছিলো ইউরোপের সব বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই ইবনে রুশদ, যার নাম ইউরোপিয় দার্শনিকরা সম্মান করে উচ্চারণ করতোনা, যার মাধ্যমে তার এরিস্টটলকে চিনেছে। সেই ইবনে রুশদএর ইউরোপিয় অনুসারীরা রাজী, সিনা, রুশদএর বইএর অনুবাদ করলো। ইউরোপে এরা পরিচিত ছিলো এভেরশবাদী নামে। এই এভেরসহবাদীরা ইউরোপের চেহারা পালটে দিলো। এদের বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামে আসলো রেনেসা, আধুনিক ইউরোপিয় সভ্যতার স্বর্ণযুগ।



আর মুসলমানরা ততোদিন হাম্বলিবাদে ডুবে থেকে মুখস্ত ইসনাদের শরিয়া আইনের জয়গান গেয়ে ভুলে গেছে যুক্তিবিদ্যা, ভুলে গেছে দর্শন। ইতিহাস বিজ্ঞানের জনক ইবনে খালদুন অবশ্য এবিষয়ে নিজের আপত্ত্বি জানিয়ে দাবি করেছিলেন, ইসনাদের বদলে বিষয়বস্তু বিচার করা হলে বহু হাদিসই টিকবেনা, নাই হয়ে যাবে। শরিয়ার হেফাজতকারী মোল্লারা সেই কথার দাম দেয়নাই কোনদিন।



একজন পদার্থবীদ, একজন ব্লগার, একজন যুক্তিবাদী রাসেল পারভেজকে আজকে যখন ধর্মানুভুতিতে আঘাতের দায়ে বিচার করা হবে মোল্লাদের অভিযোগে, মোল্লাদের হাতে তৈরি লিস্ট হিসাব করে, তখন কি খালদুনের আপত্ত্বি গ্রহণ করে ঐসব হাদিস হেফাজতকারীদের অভিযোগকে কাউন্টার দেয়ার সুযোগ থাকবে? আল রাজী ধর্মগুরু এবং অন্ধ ধার্মিকদের যে সমালোচনা করেছেন, সেগুলার রেফারেন্স টানা যাবে? ইবনে সিনার বরাত দিয়ে কি রাসেল পারভেজএর চিন্তার ভিন্নতার, স্বাধীনতার পক্ষে সাফাই গাওয়া যাবে? ধর্মানুভুতি নামক যে অধিবিদ্যক ও বায়বিয় শব্দের বরাতে রাসেল পারভেজ ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার শরিয়াসম্মত অথবা সংবিধানসম্মত ব্যখ্যা নিয়ে কি প্রশ্ন তোলা যাবে?



রাসেল পারভেজএর দোষ কি ধর্ম সমালোচনা? নাকি মাবদ আল জুহানির মতোই তিনি জালিম সরকারের ধর্মের নামে পাপ আর জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে 'শাহবাগের সবাই হাসিনার পোষা বাদর নয়' বলেছিলেন বলে তিনি দোষ করেছেন? এইসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানতে হবে।



সেইসাথে রাসেল পারভেজদের, আমাদের নিজেদের ধর্ম বিষয়ে ওমর খৈয়ামের ভাষায় স্বাধীনভাবে বলবার অধিকার দিতে হবে -

"পৌত্তলিক, অবিশ্বাসী, মূর্তিপূজক, এই আমি

সব মাজহাবের ঘৃণার পাত্র, এই আমি

আমি আমার আপন প্রভু, তাই আমি ভাই, যা আমি" - রুবাইয়াত



কিনবা মনসুর হাল্লাজের মতো আমাদের শুলে চড়াতে পারেন, হাত পা কেটে ফেলতে পারেন, টুকরো টুকরো করে আগুনে জ্বালিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিতে পারেন। কিন্তু বিশ্বাস করেন, সেই ছাইএর ভেতর থেকেও জনগণ 'আনাল হক্ক' শুনতে পাবে। আপনারা মোল্লারা এবং জালিম সরকার জনগণকে দাবায়া রাখতে পারবেন না।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:০৯

দিশার বলেছেন: পারভেজ ভাই , ফাল্সাফা স্কুল নিয়ে একটা লিখা দিসিলাম। পড়লে খুশি হব

Click This Link

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:১১

নরাধম বলেছেন: রাসেল পারভেজের মুক্তি কাম্য, শীঘ্রই তার মুক্তি চাই।

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৪০

আমিনুর রহমান বলেছেন:

রাসেল ভাইয়ের শীঘ্রই মুক্তি চাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.