![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শাহবাগীরা কাদের মোল্লার ফাঁসি চেয়েছিল। ফাঁসিটি খুব নিকটে মনে হচ্ছে। কিন্তু শাহবাগীরা শাহবাগে হাজির হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে রেখে। তাই আন্দোলনটা কেবল আর কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আটকে থাকেনাই, তা বাংলাদেশের একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ যারা মুক্তিযুদ্ধের উপর ভর করে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন করতে চান তাদের একটা শো ডাউনে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশে এখনো যারা ক্ষমতাবান তারা কেউ এই শো ডাউনটিকে কবজা করতে চেয়েছে, কেউ ধ্বংস করতে চেয়েছে। শো ডাউনটি যাতে একটি স্থায়ী বিজয়ে পরিণত হতে না পারে তা নিশ্চিত করতে অনেক মাথা খাটিয়ে, অনেক টাকা পয়সা খরচ করে হেফাজতকে মাঠে নামিয়ে মতিঝিল কান্ড করা হলো। তাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এখনকার প্রতিনিধীরা যাদের বাদ রেখেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গঠন করতে চান, সমজের সেই অংশকে একটা ধর্ম সম্প্রদায়গত রাজনীতির পতাকার নিচে হাজির হতে আমরা দেখলাম। মুক্তিযুদ্ধের উপর ভর করে বাংলাদেশ যারা গঠন করতে চান তাদের জয়যাত্রা তাই বাধাগ্রস্থ হয়েছে।
কাদের মোল্লার ফাঁসিতো আর কাদের মোল্লার ফাঁসিতেই আটকে নাই। এই ফাঁসিটা হবে শাহবাগীদের একটা নৈতিক বিজয়। বাদি পক্ষের আপিলের সুযোগ না থাকাটা ট্রাইবুনালের একটি মৌলিক ত্রুটি ছিল। সুবিচারের দাবি নিয়ে শাহবাগীরা এই মৌলিক ত্রুটি সংশোধনের পথ তৈরি করে দিয়েছে। এবং আপিলের মাধ্যমে আইনী প্রক্রিয়াতেই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় এসেছে। বিচার প্রক্রিয়ায় সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে অভিযোগ আছে, আপোষের অভিযোগ আছে। এইসব অভিযোগ জামাত তুলেছে, শাহবাগীরাও তুলেছে। মৌলিক পার্থক্য হলো জামাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়না, মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি করে বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মানও চায়না, তাদের ইতিহাস বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিরোধীতার ইতিহাস। তারা তাই ট্রাইবুনালের বিরোধীতা করে। শাহবাগীরা তা করেনাই, তারা বিচার প্রক্রিয়া অথবা রায়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেও ট্রাইবুনালের বাতিল চায়নাই, বরং ট্রাইবুনালকে শক্তিশালী করাই তাদের লক্ষ্য, শুদ্ধতম করাই তাদের দাবি।
বহু রাজনৈতিক বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর সাথে এখন মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামও জড়িয়ে গেছে। কাদের মোল্লার ফাঁসি সেই সংগ্রামের মুকুটে একটুকরা রত্ন হবে, বাঙলা মায়ের খোপায় একটা সুন্দর ফুল হবে। যে নৈতিক বিজয় আমাদের অর্জন হবে, তা রক্ষা করতে আরো বড় সংগ্রাম আমাদের করতে হতে পারে, তার জন্যে আমাদের তৈরি থাকতে হবে। যারা আনন্দ মিছিল করছেন, বিজয় মিছিল করবেন তাদের আনন্দের কিছু ভাগ সামান্য স্বস্তি হয়ে আমাকে খানিকটা আরাম দিবে বটে। কিন্ত মিছিলে, মাঠে, ময়দানে, ফেসবুক অথবা ব্লগের পাতায় যেখানেই থাকিনা কেনো আমি তাকিয়ে থাকবো সেই দিগন্তের দিকে যেই দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আহমদ ছফা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন - "‘যাঁরা একটি নতুন জাতির জন্মের স্বপ্ন দেখে রণধ্বনি তুলেছিলেন, সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন — সমাজের কোলে বিকশিত সেই কেন্দ্রবিন্দুটি থেকে আগামী দিনের নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবেই।’
©somewhere in net ltd.