নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোনো কিছুর সাথেই খাপ খাওয়াতে না পারা একজন। খানিকটা বোহেমিয়ান তবে ঐতিহ্যর প্রতি ভীষণ অনুরাগী। নিজেকে প্রায়শই মনে হয় ভুল জায়গায় ভুল মানুষ। এলোমেলো আর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক চিন্তা ভাবনা নিয়েই যাপিত জীবন।

নীল অভ্র

নিজের ওপর খুব অল্প বয়েস থেকেই বিভিন্ন ধরণের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে চলছি, বাঁধনহারা হবার বাসনা চিরকাল ছিল,আজো আছে, তবে আজকাল বেশ সাহস আর আত্মবিশ্বাস আছে মনে, বুঝে গেছি নিজেকে মেলে দিলেই ভালো, তাতে কার কী আসে আসে যায়, এটা ভাবার দরকার নেই, এখন তাই আমি এক উড়ন্ত, দুরন্ত পাখি নই-অভ্র, খুশিতে ভিজিয়ে দিতে, দুঃখে অশ্রু লুকোতে, আমি সত্যিই আজ দু্রন্ত, দুরন্ত অভ্র।

নীল অভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাক ভারতের সমর্থকদের নিয়ে কিছু কথা, এবং একটি প্রশ্ন

২১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৪২

১৯৭১ সনে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৪৭ সনে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ভারত এবং পাকিস্তান নামের দু’টো রাষ্ট্র বিভক্তভাবে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ শুধু এই কারণে পাকিস্তানের অধীনে প্রদেশ হিসেবে ব্রিটিশের কবল থেকে মুক্ত হয়।
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ অবধি ২৩ বছর পাকিস্তান আমাদের উপর শোষণ চালায়, নাগরিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা, শিক্ষা, কর্ম ক্ষেত্র সকল ক্ষেত্রেই আমাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তবু, এদেশের নিরীহ জনগণ সব মেনে নিয়েই চলছিলো, পাকিস্তানের আশ তাতেও মেটেনি, নির্যাতনের মাত্রা দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছিলো। এতটাই বেড়ে গেলো যে, নিরীহ বাংলাদেশি যুদ্ধে নামতে বাধ্য হলো।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা অর্জন করি লাল সবুজের পতাকা, লাখো মানুষ নিজের প্রাণ বিসর্জন দেন আর অজস্র মা-বোন নির্যাতিত হোন।
এই সকল কিছুর বিনিময়ে আমরা অর্জন করি সুজলা,সুফলা, শস্য, শ্যামলা এই অপরূপ বাংলাদেশ।
১৯৭১ সনে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর অসামান্য সহযোগীতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দ্রুত পর্যদুস্ত হয়। স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয় মিত্র বাহিনীর সহায়তায়। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে তাদের এই অসামান্য অবদান অনস্বীকার্য।
১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বার জন্ম নিলো বাংলাদেশ, লাল সবুজের বাংলাদেশ। কৃষক, মজুরের বাংলাদেশ।

১৯৭১ থেকে ২০১৫। দীর্ঘ ৪৪ বছর, আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ, নিজস্ব ভূ-খন্ড। কিন্তু, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য সহযোগীতা করেছিলো, এই ৪৪ বছরের ইতিহাস, সেই অবদানের প্রতিদানের ইতিহাস, সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। এই ইতিহাস নিপীড়নের ইতিহাস, নির্যাতনের ইতিহাস। ভারত আমাদের প্রাপ্য অধিকারের সবটুকু দেয়নি। সে এক করুণ ইতিহাস। ফারাক্কার পানি বঞ্চনার ইতিহাস, তিস্তার পানি বঞ্চনার ইতিহাস, টিপাই বাঁধ নির্মাণের ইতিহাস।
ইতিহাস এই অবধি এসে থেমে গেলে হয়ত ভালো হত, তা হয়নি। ফেলানীর কাঁটাতারে ঝুলন্ত লাশের ইতিহাস, বিএসএফ-এর সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে হত্যা, নির্যাতন, জমি দখল, ফসল কেটে নেয়ার ইতিহাস।
অভ্যন্তরীণ প্রায় সকল বিষয়ে নাক গলানোর ইতিহাস, আমাদের ভালো মন্দ নিয়ে মুরুব্বিগিরি ফলানো, পদ্মার ইলিশ গেলে পানি বরাদ্দ হবে, এরকম বিভিন্ন ধরণের শাসন আর ঝাঁঝাঁলো হুমকির ইতিহাস।
রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অবজ্ঞা আর অবহেলার ইতিহাস।
আমাদের বাংলাদেশি একটা চ্যানেল সম্প্রচার হয় না ভারতের কোথাও। আমাদের শিল্পিদের ওপারে ডাকা হয় না তেমন, অথচ কলকাতায় আমাদের শিল্পিদের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। পারফর্ম দেখার অসীম আগ্রহ।
কিন্তু, আমাদের সম্ভাবনা আর প্রাপ্য দুটোকেই অবজ্ঞা আর তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে ওরা।
সর্বশেষ ওদেরই দেশের একজন ‘মউকা মউকা’ বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে, যেখানে দেখানো হয়েছে বাংলাদেশ ওদের সৃষ্টি। আমাদের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, লাখো শহীদের রক্ত, অজস্র মা বোনের বর্ণনাতীত কষ্ট সহ্যের সোনালি ইতিহাসকে কটাক্ষ করা হয়েছে।
আমাদের সুন্দরবনের কাছেই ওরা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে, যেটা ওদের দেশে করতে নিষেধ করেছে আদালত, পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটা হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। ওরা ট্রানজিট নিয়েছে আমাদের বুকের ওপর দিয়ে, বিনামূল্যে। সবই নাকি বন্ধত্বের খাতিরে, সম্পর্কের উন্নয়নে!!
এত কিছু বলার কারণ আছে, আর সেটা হলো অসংখ্য ‘সুশীল’ সমাজের সদস্য আছেন, মুক্তির চেতনার মানুষ আছেন, যারা বলেন, এই দেশের মানুষ কীভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করে ১৯৭১ সনে ওরা আমাদের এত নির্যাতন করেছে সেটা জেনেও, ১০০ ভাগ সমর্থন আছে আমার এই কথাটায়।
কিন্তু, বিনীতভাবে প্রশ্ন রাখতে চাই, ২৩ বছর হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণের জন্য পাকিস্তানকে এত ঘৃণা করবেন, আর ৪৪ বছর ধরে প্রতিটা দিন ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী নগ্ন হামলা করছে, হত্যা করছে আমাদের ভাই-বোন-বাপ-চাচাদের।
আর ওদের রাষ্ট্র আমাদের উপর করছে খবরদারি। আমাদের সকল ব্যাপারে ওদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। আমাদের কূটনীতির জটিল জালে ফেলে রক্তচোষার মত চুষছে প্রতি মুহুর্ত।
এতকিছুর পর ভারত প্রীতি কোথা থেকে আসে, কীভাবে ওদের সমর্থন করা যায়, কূটনীতি হোক কিংবা ক্রিকেট।
কীভাবে এদেশের মানুষ ওদের জন্য গলা ফাটায়, লাফায়, উল্লাস করে।
যে দেশের জওয়ানের বুলেটে বিদ্ধ ফেলানির লাশ সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ১৩টা দিন, বিশ্ব মানবতা হাহাকার করে ওঠে, আমার কৃষক ভাইয়ের জমি দখল করে নেয় বিএসএফ। ঘামে, শ্রমে ফলানো সোনালি ফসল কেটে নিয়ে যায় ভারতীয়রা। বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে হত্যা করে মানুষ, ছিনতাই করে নিয়ে যায় হালের বলদ, দুধের গাই।
এর পরেও যদি আপনার সাধ জাগে আপনি ওদের সমর্থন করবেন, ওদের জন্য গলা ফাটাবেন, কিচ্ছু বলার থাকে না।
এই স্বেচ্ছা প্রতিবন্ধি আচরণ বা এই বিবেক বর্জনের কার্যকলাপ নিয়ে কিছু বলার বা লেখার দরকার আছে বলে মনে করি না আমি।
সবাইকে ধন্যবাদ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.