নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুব্রত দেব নাথ

সুব্রত দেব নাথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজন হত্যায় ফেসবুকে ব্লগারদের তীব্র প্রতিবাদ

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:০১





শিশু রাজন হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল দেশ। বিচারের দাবিতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সোচ্চার সকলে। তারা ফেসবুকে পোস্ট করছেন ক্ষোভ, শাস্তির দাবি এবং মানবতার প্রতি এই হুমকির প্রতি ঘৃণা। পোফাইল কিংবা কভার ছবি বদলে দিয়েছেন বাঁচার জন্য রাজনের আকুতি। এ আর্তচিৎকার শুধু রাজনের নয়, আমাদের সকলের-ব্লগারদের ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা স্ট্যাটাসগুলো শেয়ার করা হলো নববার্তা পাঠকদের জন্য…

জ্যোতিকা জ্যোতি

কাল সকালে ” নির্মম, পৈশাচিক ” শিরোনামের নিউজটা পড়ে অনেকক্ষণ চুপ করে বসেছিলাম ঘৃণা আর হতাশায়। স্বাভাবিক হতে পারছিলামনা। হেডলাইনের চেয়ে ঘটনাটা অনেক বেশী নির্মম, অনেক বেশী পৈশাচিক। সামিউল রাজন আমার ছেলে কিংবা ভাই না হলেও যন্ত্রণাটা একইরকম। একটা বিষাদ ভরা ঘোর তৈরি হয়েছে ভেতরে। সারাদিন ধরে মন খারাপ। আর ভয় লাগছিল একটা নৃশংস ভিডিও কিংবা ছবি পড়বে চোখে। খেলার জয়, কাজ বা কোনকিছুই আমার টাচ করছিলনা। রাতে নিউজ ফিড ভরা রাজনের ছবি দেখে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। একটা বাচ্চাকে পিটাতে পিটাতে মেরে ফেলা আবার এটা ভিডিও করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব আমি এটা কল্পনাও করতে পারিনা । অথচ কল্পনার অতীত বাস্তব ঘটছে এই দেশে ! এরাই তো ধর্ষন করতে করতেও ভিডিও করে।মানুষের কি জঘন্য অধঃপতন! কিসের জন্য, কিসের লোভ বুঝিনা। মনে পড়ছে ত্বকীর কথা। একেকটা ঘটনা দিন দিন মনকে বিষিয়ে তুলছে। জানিনা এর কোন বিচার আছে কিনা, হবে কিনা । বিচারহীনতাই তো দেখে যাচ্ছি সব জায়গায়। এটা কোন দেশের কালচার হতে পারেনা।

অবিবেচক দেব নাথ


কি বলব? কাকে বলব? কেন বলব বুঝছি না,
যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্র আহম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে,
যেখানে দায়-দায়িত্ব, ন্যায়-নীতি সব পর্যবসিত স্বার্থের করতালে,
যেখানে বিবেক দায় সারতে নিয়ত ব্যস্ত,

সেখানে রাজনদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ক্রমাগত চলবে, হায়েনারা লিকলিকে জিহ্বায় রক্তের স্বাদ নিতে উন্মাদ হবে, এ নিয়ে আর ভাববার কি আছে?

রুদ্র আমিন

“জানি এদেশটা আমার নয়, ক্ষমতার নিকট বিক্রি হয়ে গেছে
দেশ মাতা, দেশ দরদী, দেশ প্রতিনিধিত্বকারী মরে গেছে সেই হাজার বছর আগে
হিংস্র জানোয়ারে ছেয়ে গেছে সমাজ, দেশ ও মানবের প্রতিটি রক্ত কণিকা
আলো-আঁধারকেও বশ করে নিয়েছে তারা, আমরা পশুর বশে পশুত্বের আবেগে
মানবতা, ভালবাসা, স্নেহ সব বিকিয়ে সামান্য স্বার্থে আজ মানবে দানব।”

যেমনটা ভাবতেছিলাম রাজন হত্যার প্রথমদিন থেকে ঠিক তেমনটিই ঘটে গেলো। আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মায়া-মমতা কত? শিশু বাচ্চা যারা হত্যা করেছে তাদের জন্য প্রাণ কাদেনি। কেদেছে হত্যাকারীদের জন্য। ১২ লক্ষ টাকায় নিজের বিবেক কিভাবে বিকিয়ে দিয়েছে। তবে সত্য কখনো চাপা থাকেনি থাকে না আর কোনদিন থাকবে না।

সেই যে গেলো আর ফিরে এলো না, বিশ্বজিত, সাগর-রুনী সবাই তো হারিয়ে গেছে । আজ তো আর শুনতে পাইনা তাদের শাস্তির কোন কথা। এসকল কার্মকাণ্ড কি দেশের সরকারের কাধে পড়ে না? নাকি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিবার এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন। একটি ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য অন্য একটি নতুন ঘটনার সৃষ্টি করে যাচ্ছেন?

সকল জনতা এসো একসাথে রাজপথ রক্তে লাল করে ফেলি……সকল দূর্নীতিবাজদের উপড়ে ফেলি দেশ থেকে। রাজনকে হত্যা করেছে…রাজন চলে গেছে আমরাও একদিন চলে যাবো…কিন্তু নতুন প্রজন্মকে যেন কিছু উপহার দিয়ে যেতে পারি। এসো সকল জনতা রাজপথ রক্তে ভাসিয়ে দেই………..

আসিফ মহিউদ্দীন

রাজনের হত্যাকারীদের একজন সৌদি আরবে ধরা পরেছে। ধরা পরার ভিডিওটাও দেখলাম। কয়েকজন মিলে পশুর মত সেই হত্যাকারীকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলছে। ভিডিওটির নিচে অসংখ্য মানুষের মন্তব্য দেখলাম এমন, হত্যাকারীটিকে জনসম্মুখে জবাই করা উচিত। বা তাকে ঠিক একই কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করা উচিত। কিংবা আরও নানা নৃশংস কায়দায় কীভাবে কীভাবে লোকটিকে নির্যাতন করে মারা যায় তার বিবরণ। মন্তব্যগুলো পড়ে বুঝতে পারলাম, এই চক্রের শেষ নেই। চক্রটি পক্ষ পাল্টেছে মাত্র।

রাজনের হত্যাকারী মস্তবড় অপরাধ করেছে সন্দেহ নেই। তার জন্য আইনানুগ শাস্তি তার পেতে হবে, তা সে যেন পায় সেই কামনা করি। সেই সাথে এটাও চাই, সে যেন পরিপূর্ণভাবে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পায়। যেন তার সাথে কোন অন্যায় বা অবিচার করা না হয়। এরপরে আদালত তাকে যে শাস্তি দেবে, সেটাকেই আইনের শাসন বলতে পারবো। কেন এমন চাইছি? কেন তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলার পক্ষে সায় দিচ্ছি না?

রাজনের মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে যে বিষয়টা বুঝিয়ে দিয়ে গেছে, যে কাউকে কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জনগণের কাজ নয়। এটা আইনের এখতিয়ার। বিজ্ঞ আদালত বিচার বিবেচনা করে রাজনকে চোর সাব্যস্ত করতে পারতো। কিন্তু তা হয় নি। যা হয়েছে তা হচ্ছে, রাজনকে চোর বলে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। পিশাচ জনগণ তাদের পিশাচ রূপ খুব ভালভাবেই দেখিয়েছে। রাজন যদি চোর হয়েও থাকতো, তাদের উচিত ছিল তাকে পুলিশের হেফাজতে ছেড়ে দেয়া। আইন তার বিচার করতো, জনগণের এখতিয়ারের বাইরে কোন অপরাধীর বিচার।

কিন্তু একদল পিশাচ নিজেদের ঘৃণাকে উগড়ে দিয়েছে ছোট্ট রাজনের ওপর। তারা কিন্তু চোর পেটানোর মহৎ চিন্তা নিয়েই পিটিয়েছে। যারা চোর পেটায়, তারা সাধারণত মনে করে তারা সমাজের উদ্ধার করছে। এবং সমাজ, দেশ, ধর্ম উদ্ধারের এই মহান ব্রত নিজ কাঁধে নিয়ে তারা নিজেদের ভেতরের পিশাচকে বের করে ফেলে। সেই একই ঘৃণা এখন রাজনের হত্যাকারীদের ওপর। হুজুগে বাঙালির পক্ষ পালটাতে একটুও সময় লাগে না। যারা রাজনের হত্যাকারীদের পিটিয়ে মারার পক্ষে বলছে, তারা নিজেরা কাল কোন চোর পেলে এমন ভাবেই পিটিয়ে মেরে ফেলবে। এই ঘৃণার চক্র, নিজেদের ঘৃণাকে মহৎ করে তোলার চেষ্টা, এই ঘৃণার সংস্কৃতির শেষ হবে না। নিটশে বলেছিলেন, He who fights with monsters might take care lest he thereby become a monster. And when you gaze long into an abyss the abyss also gazes into you.

রাজনের হত্যাকারীদের পিটিয়ে মারার, বা জনসম্মুখে জবাই দেয়ার আহবান শুধুই এই ঘৃণা চক্রকে উস্কে দেবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, অপরাধীকে আইন সাজা দেবে, জনগণ নিজের হাতে আইন তুলে নেবে না, কাউকে কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে পিটিয়ে মারার হুমকি দেবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত।

কী অদ্ভুত! আমি বাস করছিলাম একদল নরপিশাচের দেশে-

ছোটবেলায় দেখেছি এলাকার ছেলেমেয়েরা শবে বরাতের রাতে এলাকার কুকুরগুলোর লেজে পটকা বেঁধে দিতো। কুকুরগুলো পাগলের মত দৌঁড়াতো, ভয়ে আতঙ্কে সামনে যাকে পেত কামড়াবার চেষ্টা করতো। একটা বিড়াল পালতাম, একদিন কয়েকটা ছেলে স্রেফ মজা করার জন্য পাঁচতলা থেকে বেড়ালটাকে ফেলে দিলো। বেড়ালের জান বলে কথা, বেড়ালটা মরে নি। দুটো পা থেঁতলে গিয়েছিল। ছোটবেলা থেকে এগুলো দেখে বড় হয়েছি, এগুলো তাই খুব স্বাভাবিক ব্যাপার আমার জন্য। কোরবানীর ঈদে গরু বা ছাগলকে কয়েকজন মিলে ধরে বড় চাপাতি দিয়ে জবাই করা, রক্তারক্তি করে আনন্দ উৎসব করাকে অন্যায় মনে হয় নি। বরঞ্চ এমন হওয়াই স্বাভাবিক মনে হয়েছে। এলাকার পাগলদের ঢিল মারা, চোর বেঁধে তাকে পেটানো, বাসে পকেটমার ধরা পরলে তাকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা, এগুলো আমাদের কাছে ডাল ভাত খাওয়ার মত নৈমিত্তিক ঘটনা। আমি এগুলো দেখেই বড় হয়েছি।

ইউরোপে আসার পরে প্রথম যেই ধাক্কাটা খেয়েছি, সেটা হচ্ছে এই দেশে কেউ কাউকে আঘাত করে না। সেদিন সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে মাছের বার্গার খাচ্ছিলাম, একটা পাখী আমার কাধে বসে ছোঁ মেরে বার্গারটা নিয়ে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। আশেপাশে দেখলাম আরো কয়েকজনার বার্গারই নিয়ে গেছে পাখীগুলো। সবাই তা নিয়ে হাসাহাসি করছে। এদেশের পাখীগুলো জানে, কেউ তাদের আক্রমণ করবে না। কেউ তাদের ধরতেও চাইবে না। তারা খুব সাহস নিয়েই তাই রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে। কারো মনে কোন ভয় নেই।

আর কুকুর বেড়ালদের কথা না হয় নাই বললাম। এমন ভদ্র কুকুর বেড়াল আমি আগে দেখি নি। সেদিন ট্রেনে বিশালদেহী এক ভয়ঙ্কর দর্শন কুকুর আমার পা ঘেঁষে বসে ছিল। ভয়ে আমার তখন নিজের ভেতরে ঢুকে যাওয়ার মত অবস্থা। কুকুরটা সুন্দর আমার সাথে ভাব জমাবার চেষ্টা করছে, আমার হাতের রুটিটার দিকে তার চোখ। রুটিটা ছিড়ে একটু দিতেই সে প্রায় আমার কোলে চড়ে বসলো। আর আমার গাল চেটে দেয়ার চেষ্টা করলো। অনভ্যস্ততার কারণে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, কিন্তু বুঝলাম কুকুর এভাবে তার ভালবাসা প্রকাশ করছে। কুকুরের মালিক মেয়েটা তখন বললো, সে তোমাকে পছন্দ করেছে। শেষমেশ আমার পুরো রুটিটাই তাকে খাইয়ে দিতে হলো।

একটা দেশ, একটা জাতি উন্নত হয় কীভাবে? দেশাত্মবোধক গান হাই ভলিউমে বাজাতে জানলে? ফেসবুকে স্ট্যাটাসে জ্বালাময়ী দেশ উদ্ধার করলে? যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাইলে? নির্লজ্জভাবে আওয়ামী লীগ করতে পারলে? রাজন হত্যাকারীদের জনসম্মুখে জবাই করার আহবান জানালে? তাহলে তার সাথে আমাদের পার্থক্য কোথায় রইলো? আমরা কীসের ভিত্তিতে নিজেদের মানুষ বলে গণ্য করতে পারি?

বাঙলাদেশ ক্রমশ নরপিশাচদের দেশে পরিণত হচ্ছে। রাজন হত্যাকারীদের ধরে লাভ নেই। প্রতিটি বাঙালি মুসলমানের আত্মার মধ্যেই এক একজন হত্যাকারী।

Charu Pintu

৬ লাখ টাকা নিয়ে পুলিশ কামরুলকে সৌদি আরব পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। তাদের সাথে কন্টাক্ট ছিলো আরো ৬ লাখ দিলে রাজন হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া কামরুলের বড় ভাই মুহিত আলমকেও ছেড়ে দেবে পুলিশ। কিন্তু এরআগেই বিষয়টি সর্বত্র জানাজানি হয়ে যাওয়ায় তাকে আর ছাড়তে পারেনি।

এমন অভিযোগ সিলেটে নৃশংস নির্যাতনে খুন হওয়া শিশু সামিউর রহমান রাজনের পিতা আজিজুর রহমানের।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে রাজনকে হত্যার পর বুধবার রাতে জালালাবাদ থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। আমাকে থানা থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় এসআই আমিরুল। পুলিশ হত্যাকান্ডটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। এসআই আমিরুল অপরাধীদের পালাতে সহায়তা করে। আর সে কারণেই মূল হোতা কামরুল ইসলাম সৌদি আরব পালাতে সক্ষম হয় ।
সূএঃ নববার্তা কম

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:২৩

সুব্রত দেব নাথ বলেছেন: সামিউল ‍আলম রাজন হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা কামরুল ইসলামকে সৌদি আরবে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.