![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এক ঐতিহাসিক নব সৃষ্টি / মুক্ত লিখি দুর্বার দৃষ্টি
একটি প্রেম ফুল , গল্পের বাকি অংশ ।
***********
তিন
সাগর আর জুঁই দুটি যেন কলেজ এর প্রান । সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান , নাটক , কলেজের নবীন বরণ , বৈশাখী মেলা , সব ক্ষেত্রেই তাদের কে অগ্রে পাওয়া যায় । এবার জুঁই কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্য নাছ এবং কবিতা আবৃতি তে পেরেছে ১ম পুরস্কার আর সাগর এর গানের গলা চমৎকার । সেও পেয়েছে ১ম
পুরস্কার ।।
অনুষ্ঠান শেষে দুজন হাত ধরাধরি করে সেই কদম গাছটার তলায় গিয়ে বসে ।
জুঁই ডাকে ।
সাগর
হু
এই যে আমরা যখন পুরস্কার আনতে গেলাম দেখলি কত মানুষ আমাদের দিকে দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল ।
তাই ত মনে হয় গিলেই খাবে ।
আচ্ছা সাগর তুমি কি আমাকে ভুলে যাবে
হটাৎ এ প্রশ্ন কেন জুঁই ।
না এমনিতেই ।
ধর বিধাতা যদি চায় চিরদিন পাশে থাকব আর যদি কপালে অন্য কিছু লেখা
থাকে হয়ত হারিয়ে যাব অন্য কোন অজানায় ।
চিৎকার করে জুঁই, না সাগর আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে আমি হারিয়ে বাচতে পারবনা ।
তুমি আমাকে বুঝি খুব বেশি ভালবাস জুঁই ।
জুঁই হটাৎ পাগলের মত ছুটে যায় নদীর পাড়ে বেড়া দেওয়া কাঁটা তারের পাশে ।
হাত ডুকিয়ে দেয় কাঁটায় , হাত কেটে রক্ত ঝরে । সাগর ব্যাপার টা লক্ষ্য করে
চিৎকার জুড়ে ওর হাত ধরে ফেলে । ইশ একাজ কেন করতে গেলে জুঁই ।
অনেকটা কেটে গেছে ।
আমি রক্ত দিয়ে আমার বুকে লিখে রাখব তোমার নাম ।
রক্ত গড়িয়ে পড়ছে দেখে সাগর জুঁই এর হাতটা নিয়ে নিজের মুখে জিব্বা দিয়ে
চেটে চেটে পরিস্কার করে ।
প্রিয় তোমার পবিত্র রক্ত আমি কোথাও ফেলে দিতে পারিনা তাই হজম করে
নিলুম ।। এবার চল লক্ষ্মীটি কংসের দ্বারে গিয়ে কিছুক্ষন হাওয়া খেয়ে আসি ।
কংস নদীটি ধরম পাশা উপজেলা সদর ছুঁয়ে চলে গেছে সুদুর পুবে এবং একসময় ভাটি বাংলার হাওড় বাওর এলাকা ছাড়িয়ে মিশেছে সুরমার সাথে ।
প্রতিদিন নদী পথে লঞ্চ , ইঞ্জিন চালিত নৌকা সহ নানা রকম যান বাহন চলে । নদীর জল কেটে কেটে যান গুলু চলে দেখতে ওদের ভালই লাগে ।।
জুঁই দেখ দেখ ঐ যে তোমাদের নৌকা এসে গেছে এবার বিদায় নিতে হবে ।
আরে না আমাদের নৌকা আসবে আরও ঘণ্টা খানেক দেরি করে ।
হয়ত আমারই চোখের ভুল , তুমি এখানটায় বস আমি না হয় কিছু বাদাম কিনে আনি ,সময়টাও ভাল কেটে যাবে । কলেজ ছুটির পর প্রতিদিন জুঁই কে
সাগর নৌকায় তুলে দিয়ে সে নিজে বাড়ীর দিকে পা বাড়ায় ।
বাদাম আনতে গিয়ে ফিরে এসে দেখে ৩/৪ টা পোলা পান জুঁই কে ঘিরে ।
জুঁই সাগর কে দেখেই গুমরে কেঁদে ফেলে । আরে কাদছ কেন কি হয়েছে সেটা বল তো ।
ঐ যে ওরা আমাকে অপমান করে কথা কয় । কি কয়
কয় হেরার সাথে নাকি আমার যাওয়া ভাল ।
সাগর গর্জে উটে , কুত্তার বাচ্ছারা তগ এত্তবড় সাহস । পাশেই ছিল একটা
কাটের চেলা সেটা দিয়ে ধুম ধাম পিটায় ।
ঘটনা কি , হইছে কি জনগনের হইহল্লায় বখাটেরা পালায় ।।
এক বখাটের আঘাতে বাম হাতে ছুট পায় সাগর ।।
জুঁই আর সাগর একসময় সরে আসে এখান থেকে ।
চার
সাগর শেষতক কোন উপায়ান্তর না পেয়ে হকারের চাকরি নেয় । সময় মত সকাল বিকাল পত্রিকা বিক্রি করে । এই ভাবে কষ্টে সৃষ্টে কোন ভাবে সংসার চালায় । বৃদ্ধ বাবা আগে যৎসামান্য রোজগার করত এখন
টাইপয়েটে ভুগছে ।
বাবার চিকিৎসার টাকা জুগার করবে কি করে । এখন সে মহাভাবনায় পড়ে তার একমাত্র সাইকেল টি বিক্রি করে দেয় ।
তার বই টেবিল সখের জিনিস সব বিক্রি করে বাবাকে ডাক্তার দেখায় ।
বাবা রমজান আলী এখন সুস্থ কিন্তু সে অসুস্থ ।
তার চাচাত ভাই ফাহিম কাঠ মেস্তরি । ফাহিম একদিন এসে বললে কি হে সাগর , এভাবে বসে বসে ভাত গিললে তো খাবার আসবেনা , আমার কাঠের
দোকানে আয় , মাঝে মধ্য কাজ কর । কিছু পয়সা পাতি মিলবে আর কাজও
শেখা হয়ে যাবে ।।
লেখা পড়া তো কতজনই করেছে , দেখছি চাকরি আজ সোনার হরিন ।
যে এর পিছনে হাঁটবে তার ধংশ ছাড়া আর কোন পথ খোলা নাই । আই এ
বিয়ে পাশ দিয়েও লক্ষ লক্ষ টাকা লাগে ঘুষ । আর গরিবের জন্য তো ফেলনা
ছাড়া কিছুই নয় । যার উপড়ে মামা চাচা খালু আছে হেরার চাকরিও আছে ।
ফাহিম ভাইয়ের কথাগুলু মনের মধ্য গেঁথে ফেলে সাগর , সেদিন থেকেই কাঠের মিশ্রি হিসাবে কাজে লেগে যায় সে ।।
তিন চার মাস কাজ করে ভালই উপার্জন হয় তার । কাজের ফাঁকে ফাঁকে যখন
তার জুঁই এর কথা মনে হয় , বুকটা হাহাকার করে উটে ।
ফাহিম ডাকে সাগর , হাতল টা লইয়া আয় তো
জি আসছি ভাইয়া ।
অলক্ষ্য যেই পা বাড়াবে অমনি একটা কাটে বিঁধানো ঘাতক লোহা ডুকে যায় তার বাম পায়ে ।
রক্তের বন্যা নামে তার পা থেকে , সাগর কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । তিন
চার মাস পড়ে থাকে হাসপাতালের ব্যাডে ।
উন্নত চিকিৎসার জন্য সাগরকে এক সময় নিয়ে আসা হয় ময়মনসিংহ চড়পারা হাসপাতালে ।
ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রায় দেয় তার পায়ে সেফটি হয়ে গেছে । পা কেটে ফেলতে হবে ।
একদিন জুঁই এর হাতে গিয়ে পৌঁছে সাগরের চিঠি ।
জুঁই ,
তুমি পবিত্র , তুমি মহৎ , তোমার ভালবাসা আমার হৃদয়ে ফুটিয়েছিল আনন্দ কুসুম । কিন্তু আজ আমি জীবনের যুদ্ধে এক পরাজিত সৈনিক ছাড়া আর কিছই নই । আমি না পারলাম তোমার কথা রাখতে আমি না পারলাম তোমার
নিরেট ভালবাসার মর্যাদা দিতে ।
আজ আমি ভাগ্যর নির্মম পরিহাসে না ফেরার দেশের এক যাত্রি । যদি আবার দেখা মিলে প্রিয় তোমাকে দেবার সম্ভল করে রেখেছি কিছু সঞ্চিত অশ্রুকনা । আর যদি দেখা না মিলে তবে সেই কদমের গাছ হতে আমার সমাধিতে এনে দিও কিছু পুস্প মালা । প্রিয় আমি শুধুই তোমার ক্ষমার পূজারী । ইতি
সাগর
চিঠি টা পড়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেল জুই
জুই এর মামি এসে ধরল , আরে কি হল আবার পাগলিটার ।
এক সপ্তাহ পর জুই তার মামাকে নিয়ে এল শিং পুর গ্রামে । সাগর দের বাড়ীতে ।
নিস্তব্দ নিরবতা বাড়ীতে।
এক মধ্যবয়সি মহিলা উঠানে , বোবাকান্নায় তার বুক যেন ফেটে যাচ্ছে , জুই বলল আনটি সাগর কোথায় ।
একটা অজানা আশংকায় কেঁপে উটল জুই এর মন ।
এবার মধ্যবয়সী মহিলা নদীর দ্বারে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলল, মারে আমার
সাগর চিরদিনের জন্য ঘুমাইয়া গেছে , আমি কতবার ডাকলাম সাগর বাবা
রাগ করিছ না , না খাইয়া ঘুমাইয়া গেলে যে শরীরে অসুখ অইব ।
ঘর থেকে বের হল সাগরের বোন শিলা শিপ্লু আর ভাই নহর
নহর ডাকে ,নিশ্চই আপনি জুঁই আপি ।
ভাইয়ার পায়ে সেফটি হইছিল সে খবর এক সপ্তাহ আমরা গোপন রেখেছিলাম ।
কিন্তু কি করে যেন জেনে যায় সে পরের দিনেই সাগর ভাইয়া গলায় রশি দেয় ।।
জুঁই প্রতিবছর আসে সাগরের সমাধিতে ফুল দিতে । তখন তার গণ্ড দেশ বেঁয়ে পড়ে টুপ টুপ বৃষ্টির মত লোনা জল ।।
একটা পাথরে খোদাই করে জুঁই লিখল
পূর্ণ প্রেমের ফুল দিয়ে অনলে সাজালাম হৃদয়বাসর
আজ কেন তুমি অন্তহীন গন্তব্য বাধলে এ সমাধির ঘর ।
২৮ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৪৭
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: আসলে কিছু কিছু ঘটনা এত বাস্তব যে , লেখকরা না লিখে পারেই না ।
কমেন্টে অশেষ ধন্যবাদ ।
২| ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:০২
মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: চমৎকার বর্ণনায় এবং সুন্দর উপস্থাপনায় মুগ্ধপাঠ্য ...
ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম...
শুভকামনা রইলো ...
২৮ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৪৯
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: ধন্যবাদ কষ্ট করে গল্পটি পড়ার জন্য । রইল শুভকামনা ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৩৫
মামুন রশিদ বলেছেন: গল্পটা দিয়ে বাংলা সিনেমার সুন্দর স্ক্রিপ্ট লেখা যাবে । ভালো থাকবেন বন্ধু ।