নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি\nমানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি

সূফি বরষণ

ানু মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি

সূফি বরষণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোলকাতা কেন্দ্রীক উচ্চ বর্ণের হিন্দু জমিদাররা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে বাংলার কৃষকদের উপরে জুলুমের রাজ্যত্ব কায়েম করে। পর্ব পাঁচ ।

২০ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৬:৫৪



হিন্দু জমিদার সুদ ব্যবসায়ী বাবু কৃষ্ণ চন্দ্র ও তাঁর পুত্র মুসলমান কৃষকদের উপরে গুলি বর্ষণ করে এতে নিহত ও আহত হয় মুসলিম কৃষক, বন্দুক চালিয়ে তৃপ্ত জমিদার আনন্দের হাসি হাসেন।

রক্ষণশীল পত্রিকা হিন্দু রঞ্জিকা র এক মন্তব্য _ ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ।

হিন্দু মহাজন ও জমিদারদের অত্যাচারেও বাংলার মুসলমানরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল । ........আর হিন্দুরা ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করে ইংরেজকে তোষামদ করে অনেকটা উন্নতির দিকে অগ্রসর_ শেখ মুজিবুর রহমান_।

হয়েছিল ।.
সূফি বরষণ
ক্যামব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জয়া চ্যাটার্জীর কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য, তিনি বলেন: অধীন প্রজা ( কোর্ফা) ছিল সবচেয়ে বেশি গরীব; জমিদারদের চেয়ে তাদের ওপর বেশি অত্যাচার করত রায়তি স্বত্বের অধিকারী বা পতনিদার_ কারণ তাদের কাছ থেকেই তারা জমি গ্রহণ করত। রায়তি স্বত্বের অধিকারী বা পতনিদার জমিদারকে যে খাজনা দিত তার চেয়ে বেশি তারা আদায় করত অধীন প্রজাদের কাছ থেকে । বাঙলা ভাগ হল( হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও দেশ বিভাগ ১৯৩২- ১৯৪৭ ) জয়া চ্যাটার্জী, এল অ্যালমা পাবলিকেশনস, প্রথম সংস্করণ ১৯৯৯।

বাঙলা ভাগ হল( হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও দেশ বিভাগ ১৯৩২- ১৯৪৭ ) জয়া চ্যাটার্জী তাঁর বইয়ের ৯৯ পৃষ্ঠায় বলেন, "খাজনা না দেওয়ার খারাপ ( বর্ণ হিন্দু সাম্প্রদায়িক জমিদারদের নির্যাতনের কারণে ) মানসিক অবস্থা সারা বাঙালায় ছড়িয়ে পড়ার পর ১৯০৩ নাগাদ পূর্বাঞ্চলের জেলা গুলোর হিন্দু সম্প্রদায় ঐ আন্দোলন এসবের বিরুদ্ধে উৎকন্ঠা প্রকাশ করতে শুরু করে। খাজনা পরিশোধে বাধ্য করার জন্য অনেক জমিদার আদালতের শরণাপন্ন হয়, অন্যরা বল প্রয়োগের মাধ্যমে খাজনা আদায়ের জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে, অবাধ্য কৃষকদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য লাঠিধারী পাইক নিয়োগ করে। একাধিক উচ্ছেদ মামলা দায়ের করে হুগলীর জমিদারেরা খাজনার জন্য তাদের প্রজাদের উপর অবৈধ চাপ প্রয়োগ করে বলে জানা যায়। সালতোরা থানায় অবিলম্বে খাজনা পরিশোধে বাধ্য করতে স্থানীয় জমিদারেরা তাদের প্রজাদের ধান কাটা থেকে বিরত রাখার জন্যে বরকন্দাজ নিয়োগ করলে, বাঁকুড়া জেলার জমিদার ও প্রজাদের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। জমিদার হিন্দু এবং প্রজা মুসলমান হলে এ ধরনের ঘটনা সাম্প্রদায়িক ঘটনা বলে দৃঢতার সঙ্গে চিহ্নিত করা হতে থাকে ।

ধানের কর্জ সম্পর্কিত ব্যাপারে এক হিন্দু জমিদার একজন মুসলমান প্রজাকে আক্রমণ করতে তার মুসলমান বরকন্দাজকে নির্দেশ দিলে গোলযোগ শুরু হয়। একজন মুসলমান প্রজার বিরুদ্ধে খাস জমির অধিকার প্রাপ্তির ভিত্তি পাওয়ার পর এক হিন্দু জমিদার বিরোধপূর্ণ জমিতে নির্মিত মসজিদ ভেঙে ফেলার হুমকি দিলে হাওড়ায় এক ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। পশ্চিম বাঙালার জেলা গুলোতে জমিদার ও তাদের প্রজাদের মধ্যে অত্যন্ত তিক্ততাপূর্ণ বিরোধ দেখা দেয়। কিন্তু উত্তর ও পূর্ব বাঙলার পাট উৎপাদনের বিভিন্ন জেলায় হিন্দু সুদ ব্যবসায়ীরাই আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ......... পাওনা খাজনা সম্পূর্ণ মাফ করার জন্য স্থানীয় কৃষক সমিতি পরিচালিত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ঐ আক্রমণ চালানো হয়। মুসলমান স্বেচ্ছাসেবকেরা একটা ছাপানো ঘোষণা পত্র প্রচার করে: ঐ ঘোষণা পত্রের বক্তব্য ছিল, কৃষকেরা দেশ ও দেশের সম্পদের মালিক না হওয়া পর্যন্ত শান্তি আসবে না। "

সমগ্র উপমহাদেশের ন্যায় বাংলার পূর্বাঞ্চলের নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসাধারণ ছিল অনগ্রসর, ঈঙ্গ-হিন্দু শোষণ আর জুলুমে নিঃশেষিত তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক। উইলিয়াম হান্টার তাই তার বিখ্যাত ‘ইন্ডিয়ান মুসলমানস’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘‘খুব কম সরকারি অফিস আছে, যেখানে মুসলমানরা দারোয়ান, সংবাদ বাহক, দোয়াত সংরক্ষক নয়তোবা কলম মেরামতকারীর ঊর্ধ্বে কোনপদ আশা করতে পারে…..’’।

হিন্দু জমিদারগণ এ অঞ্চলের প্রজাদের শোষণ করে সে শোষণলব্ধ অর্থ কলকাতায় বসে বিলাসীতায় উড়াতেন। প্রজাদের শিক্ষা-দীক্ষা, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এবং নানাবিধ মৌলিক অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে তারা ছিলেন চরম উদাসীন। এককথায় বঙ্গবিভাগের আগে ঢাকাকেন্দ্রিক পূর্ববঙ্গ ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক তথাকথিত প্রগতি বঙ্গের ‘‘লুণ্ঠনক্ষেত্র’’। পূর্বের কাঁচামালে পশ্চিমে গড়ে উঠেছিল শিল্প-কারখানা, পূর্ব বাংলাকে লুণ্ঠন করে পশ্চিম বাংলায় এনেছিল রেনেসাঁ, সেখানে গড়ে তুলা হয়েছিল স্কুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-হাসপাতাল। প্রতিবেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের যে চরম সাম্প্রদায়িক ও বীভৎসরূপ তারা প্রত্যক্ষ করে যার ফলে তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বার চেতনা বদ্ধমূল হতে থাকে এবং মুসলমান কৃষকদের মধ্যে বর্ণ হিন্দু জমিদারদের নির্যাতন অত্যাচার জুলুমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন দানাবাধতে থাকে ।

বাঙলা ভাগ হল( হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও দেশ বিভাগ ১৯৩২- ১৯৪৭ ) জয়া চ্যাটার্জী তাঁর বইয়ের ১০০ পৃষ্ঠায় আরও বলেন, অতীতে মুসলমান কৃষক ও হিন্দু জমিদারদের মধ্যে গোলযোগ অবশ্যই ছিল। কিন্তু ঐ সব গোলযোগের সঙ্গে বিশেষ সাম্প্রদায়িকতার সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু ভদ্রলোকেরা ( হিন্দুরা) নিশ্চিতভাবে মুসলমান কৃষকদের আক্রমণকে সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত বলে ব্যাখ্যা করত। স্থানীয় হিন্দুদের ওপর গোঁড়া মুসলমানদের এ ধরনের আক্রমণের ঘটনাকে, এমনকি তা অর্থনৈতিক কারণে হলেও সাম্প্রদায়িক আক্রমণ বলে চিহ্নিত করা হত।
১৯৩০ সালে সংঘটিত কিশোরগণ্জের একটি ঘটনা সম্পর্কে এক পুস্তিকার বিবরণ থেকে এরকম বিষয় জানা যায়।

ঐ সময় মুসলমান কৃষকেরা ক্ষমতাশালী হিন্দু জমিদার ও সুদ ব্যবসায়ী বাবু কৃষ্ণ চন্দ্রকে আক্রমণ করে। একদল মুসলমান কৃষক জমিদারের সুদৃঢ় ভাবে নির্মিত বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে এবং তারা জমিদারের কাছে রক্ষিত ঋণের সব দলিলপত্র ফেরত দেওয়ার দাবি জানায়। কৃষ্ণ চন্দ্র তা দিতে অস্বীকার করেন । কিন্তু উন্মত্ত জনতা তাঁকে হুমকি দিলে তিনি ও তাঁর পুত্র তাদের উপরে গুলি বর্ষণ করে। এর ফলে কিছু লোক (মুসলমান কৃষক ) নিহত ও কিছু লোক আহত হয়। বন্দুক চালিয়ে তৃপ্ত জমিদারের গুলি ফুরিয়ে গেলে তাঁর একজন হিন্দু চাকর উন্মত্ত জনতাকে পুনরায় ফিরে আসার আহ্বান জানায়। সে তাদেরকে আশ্বস্ত করে যে, তার মনিবের হাতে আর গুলি নেই । প্রতিশোধ গ্রহণের আগ্রহী জনতা আবার ফিরে আসে, তারা হতভাগ্য জমিদার ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। এবং তাঁর বাড়ি ও মটর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনাটি ছিল অর্থনৈতিক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত সাম্প্রদায়িকতার বিষয়ের সাথে নয়। জমিদারের চোখ ধাঁধানো সম্পদ জনতার ক্রোধকে উত্তেজিত করে ছিল।
অভৃতপূর্ণ দুঃখ কষ্টের সময় কৃষকদের প্রতি জমিদারদের সহানুভূতির অভাব এবং নিরস্ত্র জনতার (মুসলমান কৃষক ) ওপর নৃশংস আক্রমণ শুধু মুসলমান প্রজাকে নয়, বরং তা হিন্দু গৃহ ভৃত্যকেও উত্তেজিত করে।

১৯১০ সালে ডিএসপি শামসুল আলমকে হত্যা করা হয়। বোমাবাজির ঘটনা তো নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হিন্দু দেবতাদের নামে এসব হত্যাকান্ড উৎসর্গীকৃত হতো। এছাড়া প্রশিক্ষিত যুবক বাহিনী ব্যাপক দস্যুবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে। হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণের উদাত্ত আহবান সম্বলিত সাহিত্য ও প্রচার পুস্তিকাসমূহ বিতরণ করা হতো মহোৎসাহে। ‘স্বদেশী’ আন্দোলনের জন্য শপথ গ্রহণ করান হতো কালী মন্দির প্রাঙ্গণে।

১৯০৮ সালের ৩০ মে কলকাতার ‘যুগ্মান্তর’ পত্রিকা হিন্দুদের এ সকল কর্মকান্ডকে সমর্থন করে চরম উস্কানিমূলক এক নিবন্ধে উল্লেখ করে : ‘‘…. মা জননী পিপাসার্ত হয়ে নিজ সন্তানদেরকে জিজ্ঞেস করছে, একমাত্র কোন বস্তু তার পিপাসা নিবারণ করতে পারে। মানুষের রক্ত এবং ছিন্ন মস্তক ব্যতীত অন্য কিছুই তাকে শান্ত করতে পারে না…’’।

মুসলিম বিদ্বেষী প্রচার এতদূর গড়ালো যে, জাতীয়তাবাদী হিন্দুমহল থেকে এমন ঘোষণাও শোনা যেত যে, স্পেন থেকে কয়েক শতাব্দীর পূর্বে যেমন মুসলমানদেরকে নির্মূল করা হয়েছিল, তেমনি ভারত থেকেও তাদের নির্মূল করা হবে। এসব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৃটিশ সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাদের আন্দোলন ক্রমশ স্তিমিত হতে থাকে। কিন্তু ইংরেজদের সেই বিখ্যাত ‘‘ভাগ কর- শাসন কর’’ নীতির কারণেই হোক কিংবা হীনবল মুসলমানদের স্বার্থে অধিকতর শক্তিশালী পুরনো মিত্র হিন্দুদের চটিয়ে কোন বিপদ ডেকে আনার ভয়েই হোক ইংরেজরা রণেভঙ্গ দেয়।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী: শীর্ষক বইয়ের
শেখ মুজিবুর রহমান বর্ণ হিন্দু জমিদারদের নির্যাতন সম্পর্কে লিখেন,
আজাদ পত্রিকার কাটিংও আমার ব্যাগে থাকত ।সিপাহি বিদ্রোহ এবং ওহাবি আন্দোলনের ইতিহাসও আমার জানা ছিল । কেমন করে বৃটিরাজ মুসলমানদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল, কি করে রাতারাতি মুসলমানদের সর্বশ্রান্ত করে হিন্দুদের সাহায্য করেছিল, মুসলমানরা ব্যবসা-বানিজ্য, জমিদারি, সিপাহির চাকরি থেকে কিভাবে বিতাড়িত হল-মুসলমানদের স্থান হিন্দুদের দ্বারা পূরণ করতে শুরু করেছিল ইংরেজরা কেন ? মুসলমানরা কিছুদিন পূর্বেও দেশ শাসন করেছে তাই ইংরেজকে গ্রহণ করতে পারে নাই । সুযোগ পেলেই বিদ্রোহ করত ।ওহাবি আন্দোলন কি করে শুরু করেছিল হাজার হাজার বাঙালি মুজাহিদরা ? বাংলাদেশ থেকে পায়ে হেঁটে সীমান্ত প্রদেশে যেয়ে জেহাদে শরীক হয়েছিল।

তিতুমীরের জেহাদ, হাজী শরীয়তুল্লাহর ফারায়জি আন্দোলন সম্বন্ধে আলোচনা করেই আমি পাকিস্থান আন্দোলনের ইতিহাস বলতাম । ভীষণভাবে হিন্দু বেনিয়া ও জমিদারদের আক্রমণ করতাম ।এর কারণও যথেষ্ট ছিল।একসাথে লেখাপড়া করতাম, একসাথে বল খেলতাম, একসাথে বেড়াতাম, কিন্ত আমি যখন কোন হিন্দু বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যেতাম, আমাকে অনেক সময় তাদের ঘরের মধ্যে নিতে সাহস করত না আমার সহপাঠীরা ।হিন্দু মহাজন ও জমিদারদের অত্যাচারেও বাংলার মুসলমানরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল । ........আর হিন্দুরা ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করে ইংরেজকে তোষামদ করে অনেকটা উন্নতির দিকে অগ্রসর
হয়েছিল ।...........
মুসলমানদের উপর যে অত্যাচার ও জুলুম হিন্দু জমিদার ও বেনিয়ারা করেছিল, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন, তাহলে তিক্ততা এত বাড়ত না। ......এ কথাও সত্য, মুসলমান জমিদার ও তালুকদাররা হিন্দু প্রজাদের সঙ্গে একই রকম ব্যবহার করত হিন্দু হিসেবে নয়, প্রজা হিসেবে ।এই সময় যখনই কোন মুসলমান নেতা মুসলমানদের জন্য নায্য অধিকার দাবী করত তখনই দেখা যেত হিন্দুদের মধ্যে অনেক শিক্ষিত, এমনকি গুণী সম্প্রদায়ও চিৎকার করে বাধা দিতেন । "

একদিকে মুসলিম কৃষকদের নির্যাতন করছে বর্ণ হিন্দু জমিদারেরা আর অপরদিকে একশ্রেণীর বর্ণ হিন্দু ব্রিটিশদের পক্ষে দালালী এবং অত্যাচারি জমিদারের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। কবি হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যয় ইংরেজ প্রভুর উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় গেয়ে উঠলেন-
“না থাকিলে এ ইংরাজ
ভাত অরণ্য আজ –কে শেখাতো, কে দেখাতো
কে বা পথে লয়ে যেতো
যে পথ অনেক দিন করেছ বর্জন”।
-(শতাব্দী পরিক্রমা, ডঃ হাসান জামান সম্পাদিত, পৃঃ ২৮৪)।

ঊনবিংশ শতকের প্রথম পাদে হিন্দু জমিদার ও কোম্পানী শাসনের দ্বারা বাংলার মুসলমান নির্যাতিত, নিষ্পেষিত ও জর্জরিত হচ্ছিল এবং তার প্রতিবাদে বাংলায় ফারায়েজী আন্দোলন ও সাইয়েদ তিতুমীরের আন্দোলন প্রচন্ড আকার ধারণ করে। পরবর্তীকালে সাইয়েদ আহমদ শহীদের জিহাদী আন্দোলন সারা ভারতে এক আলোড়নের সৃষ্টি করে। অতঃপর ভারতের প্রথম আযাদী আন্দোলন শুরু হয় ১৮৫৭ সালে। এ সমস্ত আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার ফলে ভারতীয় মুসলমান ইংরেজদের কোপানলে পড়ে কোন অসহনীয় জীবন যাপন করছিল, তা যথাস্থানে আলোচনা করা হবে। জেল, ফাঁসী, দ্বীপান্তর, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ এবং ইংরেজ কর্তৃক অন্যান্য নানাবিধ অমানুষিক-পৈশাচিক অত্যচারে মুসলিম সমাজদেহ যখন জর্জরিত, সে সময়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যয় লিখনীর নির্মম আঘাত শুরু করেন মুসলিম জাতির জর্জরিত দেহের উপর।

তিনি তাঁর আনন্দমঠ, রাজসিংহ, দুর্গেশনন্দিনী, দেবী চৌধুরী প্রভৃতি উপন্যাসগুলিতে মুসলমানদের বিরুদ্দে যে বিষোদগার করেছেন তাতে পাঠকের শরীর রোমাঞ্চিত হবারই কথা। তাঁর সাহিত্যের মাধ্যমে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টি এবং তাঁর বর্ণনামতে মুসলমান কর্তৃক ‘হিন্দু মন্দির ধ্বংস’, ‘হিন্দু নারী ধর্ষণ’ প্রভৃতি উক্তির দ্বারা হিন্দুজাতির প্রতিহিংসা বহ্নি প্রজ্জলিত করার সার্থক চেষ্টা করা হয়েছে। ১৮৯৮ সালে মুসলিম এডুকেশান সোসাইটি অধিবেশনে নবাব নবাব আলী চৌধুরীর উদ্যোগ বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচারণার তীব্র প্রতিবাদ করে প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত করে হিন্দু পত্র-পত্রিকায় প্রকাশের জন্যে দেয়া হয়। কোন পত্রিকায় তা ছাপা হয়নি, শুধুমাত্র ‘ভারতী’ পত্রিকায় বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করা হয়। -(Bengali Muslim Public Opinion as reflected in the Bengal Press-1901-30: Mustafa Nural Islam PP.141-42)।

এই প্রসঙ্গে মুনতাসীর মামুন তাঁর বই উনিশ শতকে বাংলাদেশের সংবাদ সাময়িকপত্র, (দশম খন্ড, অনন্যা প্রকাশন, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৬) ৪৬ পৃষ্ঠায় বলেন, মধ্যশ্রেণী নিয়ন্ত্রিত পত্রিকায় কখনো বলা হয়নি যে, ইংরেজ শাসনের অধীনে থাকতে আগ্রহী নয়। ইংরেজ শাসন প্রশাসন সম্পর্কে মধ্যশ্রেণীর মনোভাব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে , পূর্ববঙ্গের রক্ষণশীল পত্রিকা হিন্দু রঞ্জিকা র এক মন্তব্য _ ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত । .......... সোমপ্রকাশ সম্পাদক সম্পর্কে লিখেছিল ঢাকা প্রকাশ পত্রিকা, সোমপ্রকাশ সম্পাদক আজকাল ইংরেজদিগের বড় ভক্ত ও হিতৈষী হইয়া দাঁড়াইয়াছেন। ইংরেজদিগকে কেহ কিছু বলিলে তাহার মর্ম্মবেদনা উপস্থিত হয়। .... এরূপ মোক্তারি করিতে পারিলে ইংরেজ মহলে তাহার আদরের সীমা থাকিবেনা। ..... অতএব আমরা এখন বলিয়া দিতেছি সোমপ্রকাশ বিশেষরূপে তাহাদের পথ ধরিয়াছেন, কিছু অনুগ্রহ যেন থাকে।

এই উদ্ধৃতি থেকে আমরা পরিস্কার বুঝতে পারছি তৎকালীন সংবাদপত্র গুলোও কৃষকদের উপরে অত্যাচার নির্যাতনের খবর প্রকাশ তেমনটা করেননি বরং করেছেন অত্যাচারি ইংরেজ ও বর্ণ হিন্দু জমিদারদের পক্ষে সীমাহীন দালালি করতে থাকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.