![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে মাথার পিছনে।তীব্র না হলেও সহনীয়।প্রচন্ড পানি পিপাসা পাচ্ছে।নীতু থাকলে ওকে বলা যেত।দৌড়ে গিয়ে পানি নিয়ে আসত।কপালে হাত বুলিয়ে দেখত জ্বর এসেছে কিনা।ওর মতে জ্বর,মাথাব্যাথা,কাশি সর্দি এগুলোই হচ্ছে মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট।ওর পিছনে ওর যুক্তিগুলো চমৎকার। তার এক দুসম্পর্কের মামা নাকি এরকম জ্বরে মারা গিয়েছিল।ভাল মানুষ সারাদিন কাজ করে রাতে খেয়েদেয়ে শুয়েছে।মাঝরাতে প্রচন্ড জ্বর।সকালবেলায় মারা গেছে।
অ্যালার্ম বেজে উঠেছে।ইদানীং অ্যালার্মের আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায়।তখন আর করার কিছু থাকে না।নীতু নেই।থাকলে ওকে জাগিয়ে কথা বলা যেত।কিন্তু সেটা সম্ভব না।দুদিন আগে ঝগড়া করে চলে গেছে।মোবাইল ফোনের এ যুগে চাইলেই খোজ নেয়া যেত।নেয়া হয়নি।নেয়া দরকার ছিল।
হঠাত মোবাইলটা বেজে উঠল।নীতুর পছন্দ করা রিংটোন।একটা হিন্দি গান।কি যেন এক হিন্দি ছবি নাম মার্ডার টু।একবার দেখতে বসেছিলাম নীতুর সাথে।প্রথম দশ মিনিট দেখার পর আর সম্ভব হয়নি।নীতু ঠিকই দেখেছে বসে বসে।
“হ্যালো।কে বলছেন?”
“শফিক সাহেব বলছেন?”ফোনের ওপাশে শীতল কন্ঠস্বর।
“জি।বলছি”
“আপনার স্ত্রীর নাম নীতু আহমেদ?”
“আপনি একটু হলি ফ্যামিলিতে আসুন।উনি অসুস্থ”
“আচ্ছা।আসছি”
দ্রুত বিছানা ছেড়ে হাসপাতালের জন্য তৈরি হতে শুরু করলেন।পিছনের ব্যাথাটা বেড়ে যাচ্ছে।
ধবধবে সাদা একটা বিছানায় শুয়ে আছে নীতু।জ্ঞান ফিরেনি এখনও।ঘুমের ঔষুধ খেয়েছিল অনেকগুলো।শফিক এসব জানতে পেরেছে নীতুর বান্ধবী সুরভীর কাছ থেকে।নীতুর ছোটবেলার বান্ধবী।সেই ভর্তি করেছে নীতুকে।কেবিনে নীতুর পাশে বসে ছিল সুরভী।সিঙ্গেল মাদার।ছেলে আছে একটা।শফিককে দেখে দাঁড়িয়ে গেল সুরভী।
“কি কান্ড শফিক ভাই বলেন দেখি?ভাল মেয়ে রাতে ঘুমালো।রাতে গোঙ্গানীর আওয়াজ শুনে লাফিয়ে উঠি দেখি এত্তগুলা ঘুমের ঔষুধ পড়ে আছে।কয়টা খাইছে কে জানে? তাড়াহুড়া করে ভর্তি করলাম এখানে।বাসায় ছেলেটা একা আছে।”
“সমস্যা নাই।আমি আছি এখন।আপনি বাসায় গিয়ে রেস্ট নেন”
“আচ্ছা।বিকালে আসব।আর রাগারাগি কইরেন না।জানেনই তো একটুতেই মাথা গরম হয়ে যায় নীতুর”
“হুম”
সুরভী বেরিয়ে গেল।কেবিনটা বেশ সাজানো গোছানো।জানালা আছে একপাশে।সকালের রোদের আলোটা নীতুর মুখে পড়ছে।ভালই লাগছে ওকে দেখে।খুব সুন্দরী না হলেও মন্দ নয়।গায়ের রঙ একটু ময়লা।কিন্তু দেখলেই মায়া লাগে।আগে এরকম ছিল না।যখন ওর সাথে বিয়ে হয় তখন অল্পতেই মাথা গরম হত না।কথা খুব কম বলত।একান্ত দরকার না হলে বলত না।ল্যাপটপে সারাদিন বই পড়ত।আর এখন অল্পতেই রেগে যায়।কান্নাকাটি করে।ঝগড়ার বিষয়বস্তুও খুব আহামরি না।সেদিন অফিসে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল।মেজাজ এমনিতেই খারাপ হয়েছিল শফিকের।তার উপর রাতে ভাত খেতে বসে দেখে ভাতের ভিতর ইয়া লম্বা একটা চুল।এই নিয়ে লেগে গেল।লাগলে যা হয়।তিল হয়ে তাল।রাগ করে বেরিয়ে গেল।ভুল না হয় হইছে এই জন্য দুইদিন বাসার বাইরে থাকতে হবে?তারপর আবার কি কান্ড করে বসল।এই মেয়েটা কি এখনো বোঝে না যে সে মেয়েটাকে কত ভালবাসে।
২.
অন্তু আজ খুব খুশি তাকে আজকেও স্কুলে যেতে হবে না।ঘুমাচ্ছিল। ভোরবেলায় বাবা এসে ডেকে তুললেন, “আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।তুমি একা থাকতে পারবে না?”
“হুম।পারব”
“গুড ইয়াংম্যান”
তখন বলেছিল পারবে কিন্তু এখন একা থাকতে ভাল লাগছে না।আজ তিনদিন স্কুলে যাচ্ছে না।তিনদিন সিমরানের সাথে বসে টিফিন খেতে পারে নি।খাবারের কথা মনে পড়তেই টের পেল অনেক ক্ষুধা লেগেছে।মা থাকলে এতক্ষণে খেয়েদেয়ে স্কুলে চলে যেত।এই দুইদিন মা ছিল না।বাবা ব্রেকফাস্ট তৈরি করে দিত।খাওয়া শেষ হলে বলত পড়তে বস।স্কুলে যাওয়া লাগবে না।শুনে খুব আনন্দ লাগত।কিন্তু টিফিন পিরিয়ডের সময় আসলেই সিমরানের কথা মনে পড়ে যায়।বারবার মনে পড়ার কারণটা রেহান মামাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।সে জানে না এমন কোন প্রশ্নের উত্তর নেই।তখনি কলিং বেল বেজে উঠল।কে এল? দরজা খুলেই দেখল ওর রেহান মামা।
“কিরে পাগলা কেমন আছিস?”
এই জন্যই মামাকে ওর মাঝেমাঝে সুপারম্যান মনে হয়।যখনই ওর কোন সমস্যা হয় তখনি রেহান মামা হাজির।হাতে কি যেন আছে।খাবার মনে হয়।ঠিকই বুঝেছে যে ও ক্ষুধার্ত।চোখে পানি চলে আসছে অন্তুর।পানি দেখানো যাবে না।রেহান মামা মানুষ ভাল হলেও মুখ পাতলা।সবাইকে বলে দেবে যে ক্লাস সেভেনে পড়া একটা ছেলে ভো ভো করে কাদছে।
“ভাল আছি।তুমি কেমন আছ?”
“ভাল।তোর মা কই?”
“বাইরে গেছে”
“কোথায়?”
“জানিনা”
“আর তোর বাবা?”
“সেও নাই”
“তাইলে তো ভাল।মামা ভাগ্নে আরামে খাওয়া যাবে।চল খিচুড়ী এনেছি তোর জন্য।এক্কেবারে ফার্স্টক্লাস।সকালে কিছু খেয়েছিস?”
“না”বলতেই আবার চোখে পানি চলে এল।অন্তু ভিতরে চলে এল।
দুজনে খাচ্ছে।অন্তু বেশ আরাম করেই খাচ্ছে।আসলেও ফার্স্টক্লাস।
“বুঝলি অন্তু খিচুড়ি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে মজাদার খাবার।ঠিক বলেছি না?”
“বলতে পারছি না মামা।আমার কাছে পিজাও ভাল লাগে”
“আরে ওগুলা হল জাঙ্ক ফুড।কোন পুষ্টিগুণ নাই”
“তাও ঠিক।মামা তুমি আর কথা বল না।আমাকে খেতে দাও”
“আচ্ছা যা বলব না।তুই আরাম করে খা”
খাওয়া শেষ করে দুজনে খেলতে বসেছে।ধনী হবার মজার খেলা।এই খেলাটার একটা মজা কখনো শেষ হয়না।আরো মজা যখন কেউ দেউলিয়া হবে হবে করেও উতরে যায়।অনেক সময় লাগে যদিও খেলাটায়।রেহান আর অন্তু তার ভিতরে ওদের গল্প চালায়।বিভিন্ন ধরনের কথা।অন্তুর মজাই লাগে।এমন কোন প্রশ্ন নাই যে তার মামা উত্তর দেয় না।
রেহান বলল “অন্তু তোর সিমরানের খবর কি?”
“ভাল”এই প্রশ্নটা শুনলে অন্তুর কান লজ্জায় গরম হয়ে যায়।জীবনে যদি কোন ভুল করে থাকে সেটা হচ্ছে মামাকে সিমরানের ব্যাপারে ওর দুর্বলতার কথা বলা।যদিও মামা মজা করে না।সিরিয়াস ভাবেই কথা বলে।
“এখনো এক সাথে বসে টিফিন খাস?”
“হু”
“ভাল চালিয়ে যা।একদিন টুপ করে বলে দিবি”
“কি বলব?”
“এই যে তুই পছন্দ করিস ওকে”
“তুমি কোনদিন বলছ মামা?”
“বলছি না আবার।দুইজনকে বলছি।দুইবারেই ফেল”বলে হো হো করে হাসল রেহান।অন্তুও হাসল।
“কিভাবে সম্ভব?তোমার মত মানুষ ফেল করছে?”অবাক হয়ে বলল অন্তু।
“তাইলে শোন প্রথমবারের কাহিনী।তখন এসএসসি পরীক্ষা দিব।একজনকে পছন্দ করতাম।সামনে মামার বিয়ে।সবাই নানুবাড়ি গেলাম সাথে গাট্টি ভরে বই।ঠিক করেছিলাম এবারই তাকে মনের কথা বলে দিব।মেয়েটাও আমাদের সাথে গিয়েছিল।নানুবাড়ি গিয়েই পড়তে বসে পরলাম।এক মাস পর পরীক্ষা।মেয়েটা ঘরে আসল।আমাদের ভিতর ভাল বন্ধুত্ব ছিল।আমি টেবিলের উপর বসা।টেবিলের উপর বসে পড়তেছি।কেন বসছিলাম ভুলে গেছি।আর মেয়েটা খাটের উপর বসা ছিল।যখন মেয়েটাকে বললাম,মেয়েটা বলল যে সে জানে না।বুঝে নিলাম সে আগ্রহী না।আমিও ঘাটালাম না আর।মেয়েটা চলে গেল।আমি ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে ভাল ছেলের মত পড়তে থাকলাম।”একটানা বলে গেল গেল রেহানের।
“ভেরি স্যাড স্টোরি।এখন চল খেলি”বলল অন্তু।
“নাহ খেলতে ইচ্ছা করছে না।ঘুম পেয়েছে।ঘুমাবো”
“তাহলে আমি কি করব?”
“দাড়া।ফোন করে পিজার অর্ডার করে দিচ্ছি।পিজা খা আর টিভি দেখ”
অন্তুর মনটা আনন্দে ভরে গেল।আহ জীবনটা এত আনন্দের কেন? ভাগ্যিস মা নেই।থাকলে মামাকে ধমক দিয়ে বারণ করে দিত।
৩.
জয়নাল সাহেবের মেজাজ সকাল থেকে গরম।আজ তিনটা মিটিং ছিল।সব বাতিল।বড় সাহেব সকাল বেলা ফোন করে বলে দিয়েছে আজ সব বাতিল।অথচ গতকাল সারারাত ধরে কাজ করেছে সে।এই বয়সেও পরিশ্রম করতে হচ্ছে।এসআর কন্সট্রাকশন ফার্মের ম্যানেজার উনি।তাকে কাজ করতেই হবে।বড়সাহেব রেহানকে দেখলে মাঝে মাঝে হিংসাই লাগে।এত অল্প বয়সে এত বড় কোম্পানীর মালিক।কোন অহংকার নেই।জয়নাল চাচা ছাড়া কখনো ডাকে না কিন্তু মাথায় হালকা সমস্যা আছে মনে হয়।হুটহাট করে কাজ করে।যেমন আজকে সকাল আটটায় ফোন করল
“হ্যলো জয়নাল চাচা”
“জি বল”
“চাচা আজকের সব মিটিং সব ক্যান্সেল”
“মানে?”
“কোন মানে নাই”
“অনেক লস হয়ে যাবে”
“চাচা মালিক আমি ।আপনি না।আল্লাহ চাইলে আবার হবে।বাসায় যান।রেস্ট নেন”
বললেই বাসায় যাওয়া যায়।শৃঙ্খলার একটা ব্যাপার আছে না।সিনিয়র যদি অফিস থেকে আগে চলে যায় তাহলে কিভাবে হবে।কিছুক্ষণ আগে মেজাজ আরও খারাপ হল।তার বড় সাহেব ফোন করে একটা ঠিকানা দিল।বলল এই ঠিকানায় একটা পিজা পাঠাতে।আজব সে কি তার চাকর নাকি? মাঝে মাঝে মনে চায় চাকরি টা ছেড়ে দিতে।বাসার অবস্থা খারাপ।ওনার একার আয়ে ছয়জনের সংসার চলে।তারমধ্যে সোমার মায়ের অনেকদিন ধরে অসুখ।সোমার বিয়ে দিয়েও শান্তি হল না।স্বামীটা বিদেশ গিয়েও লাপাত্তা।অথচ বাচ্চা হয়ে বসে আছে।ছোট বাচ্চা।কত খরচ।ছোট মেয়েটারও বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।কিছু একটা করা দরকার।আর ছেলেটা অকর্মণ্য।ইন্টার পাশ করে একটা কোথাও ভর্তি হতে পারল না।সারাদিন বাসায় বসে থাকে।এসব কথা মাথায় আসলেই মরে যেতে ইচ্ছে করে।জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে কোনরকমে বেচে আছেন।
“স্যার চা খাবেন?”রহিম মিয়ার গলা।বড়সাহেবের অ্যাসিসটেন্ট।আজ সে মহা খুশি।স্যার আসবেন না।ওনার ঝাড়ি শুনতে হচ্ছে না।এমনি সময় বড় সাহেব থাকলে রহিম সবসময় দৌড়ের উপর থাকে।একসময় ক্লান্ত হয়ে জয়নাল সাহেবের সামনে বসে বলে ‘স্যার বড়সাবেরে একটু বলেন না”বেচারার জন্য তখন মায়াই লাগে।কিন্তু এমনিতে সে একজন বিরক্তকর প্রাণী।
“না চা খাব না”উত্তর দিলেন জয়নাল সাহেব।
“স্যারের মেজাজ কি গরম?”
“না?”
“স্যার জানেন বড়সাব কই গেছে?”
“না।জানতেও চাচ্ছি না”
“আরে শুনেন সে তার খালাতো বোনের বাসায় গেছে।ঐ বোনের বাসায় প্রায় যায়।ঐ বোন স্বামী আর ছেলে নিয়ে থাকে।বোনে পলায়া বিয়ে করছে।কেউ মাইনা নেয় নাই।খোজখবর নেয় না।বড়সাব একলাই খোজখবর নেয়।বাসায় যায়”
“ভাল।এত কিছু কিভাবে জানলে?’
“জানি স্যার।পড়ালেখা কম করবার পারি।আমার বুদ্ধিটা একটু বেশি।জানেন ভাসা ভাসা শুনছি এই বোনরে বড়সাব মনে হয় পছন্দ করত।এই জন্য বড়সাব বিয়াও করে নাই”
“ভাল।এখন যাও”
“যাইতেছি।আর একটা কথা বলি।আপনের শরীর মনে হয় খারাপ লাগতেছে”
আসলেও খারাপ লাগছে।সকাল থেকেই মাথা ঘুরাচ্ছিল।রাতে না ঘুমানোর কারণে হতে পারে।বাসায় চলে যাওয়াটাই বোধ হয় ভাল হবে।
৪.
বিকেলবেলা শফিক নীতুকে নিয়ে বাসায় ফিরল।এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।নীতু থাকবে না।তার হাটাচলা করার শক্তি চলে এসেছে।একরকম জোর করে চলে এসেছে নীতু।অন্তুর জন্য চিন্তা হচ্ছে।ছেলেটা সারাদিন কিছুই খায়নি।এসে দেখে সোফার উপর ঘুমুচ্ছে।টিভিতে কার্টুন চলছে।সামনের টেবিলে পিজার একটা প্যাকেট।অবাক হল নীতু।পিজা পেল কোথায়?নীতু অন্তুর ঘরে যেতেই দেখল রেহান অন্তুর ঘরের ফ্লোরে ঘুমুচ্ছে।কিছু বলল না নীতু।নিজের ঘরে চলে গেল।
ঘ্যার ঘ্যার করে শব্দ হচ্ছে।কান চেপেও শব্দের তীব্রতা কমানো যাচ্ছে না।চোখ খুলল রেহান।ও ফ্লোরে শুয়ে আছে কেন?তখন মনে পড়ল ওর ও তো নীতুর বাসায়।অন্তুর ঘরে।
শফিক ঘরে ঢুকল।শফিককে দেখে রেহান উঠে খাটের উপর বসল।
“কি ঘুম হল?”শফিক প্রশ্ন করল।
“হুম।কেমন আছেন আপনি?”
“ভাল।তুমি তো আমাদের বাসায় আসা বোধ হয় ভুলে গেছ।নাও চা খাও।দার্জিলিং এর চা”বলে একটা মগ এগিয়ে দিল শফিক।
“কই পেলেন?গিয়েছিলেন নাকি?”
“আরে নাহ।যেই বেতন পাই তাতে বিদেশ ভ্রমণ?অফিসের একজন গিয়েছিল।তাকে দিয়ে আনিয়েছি।দারূণ গন্ধ বের হয়”আসলেও চা থেকে সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসছে।
“কই ছিলেন?সকালে এসে দেখি কেউ নাই?ঝগড়া হইছে নাকি আবার?”জিজ্ঞেস করল রেহান।
“নীতুকে তো তুমি জান।অল্পতেই রেগে যায়।এবার ঘুমের ঔষধ খেয়েছে অনেকগুলো। হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছি আজকে।বুঝ কি ভয়ানক ”
“তাই নাকি?”
“হ্যা।রাতে খেয়ে যাবে কিন্তু।খাসির মাংস এনেছি।নীতু রান্না করছে”
“আপনার অফিসের কি অবস্থা?”
“চলছে কোনরকম।তুমি চা খাও।আমি আসি।”বলে চলে গেল শফিক।
বেচারা শফিক ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগে রেহানের।নীতুকে সে এত ভালবাসে।আর নীতু তার সাথে মাঝে মাঝে এমন করে লোকটা খুব কষ্ট পায়।নীতুকে রেহান কত বুঝালো।কোন কাজ হয় না।শফিক ভাইয়ের একটু দোষত্রুটি আছে।নীতুরও আছে।দুজনে মিলে অ্যাডজাস্ট করে নিলেই হয়।না নীতু তা নিবে না।ছেলে কত বড় হয়েছে এখনও ঝগড়া করে।কতবার রেহান বলেছে শফিক ভাইকে তার কোম্পানীতে জয়েন করতে।নীতুর কারণে করতে পারে না।নীতুর আত্মসম্মান বোধটা একটু বেশি।শফিক ভাইকে রেহানের কোম্পানীতে চাকরি করতে দিবে না।নিজের যোগ্যতায় চাকরি করতে হবে।নইলে সে বলে দিছে শফিক ভাইয়ের ভাত খাবেনা।এটা কোন কথা? একসময় রেহানও হাল ছেড়ে দিয়েছে।বন্ধুর একটা কোম্পানীতে বলে তাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।নীতু এখনও সেটা জানে না।জানলে সারা বাড়ি মাথায় তুলবে।ভাংচুর শুরু করবে।
নীতুর মেজাজ খারাপ।রেহানটা আসার আর দিন পেলনা।ও দেখেছে যেদিন ওর মেজাজ খারাপ থাকে সেদিনই রেহান এসে হাজির হয়।একগাদা ভাল কথা বলে।মন ভাল হয়ে যায়।কিন্তু আজ মন ভাল করতে ইচ্ছে করছে না।রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে।মাংসটাতে ভাল ঘ্রাণ বেরিয়েছে।আজকের মাংসটা ভাল সিদ্ধ হয়েছে।অনেক সময় হয়না।তখন এত বিরক্ত লাগে।মাংসটা নামিয়ে ফেলল।সালাদের জন্য শসা কাটতে লাগল।অন্তু তখন রান্নাঘরে এল।
“মা”
“কি?”
“কাল কি আমি স্কুলে যাব?”
“যাবে না কেন?”
“এই কদিন যাইনি”
“মানে তুমি এই দুদিন স্কুলে যাও নি?”
“না।বাবা যেতে মানা করে দিয়েছে।”
“ও আচ্ছা।যাও এখন পড়তে বস।সারাদিন তো বসেই টিভি দেখলে”
“আচ্ছা মা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“কর”
“রেহান মামার আর তুমি তো ভাল বন্ধু তাই না?”
“হুম কেন?”
“মামা তোমাদের নানুবাড়িতে কাকে প্রপোজ করেছিল তুমি জান?”জিজ্ঞেস করল অন্তু।প্রশ্ন শুনে নীতু অবাক হয়ে গেল।
“তোমাকে এসব কে বলেছে?”
“রেহান মামা”
“আর কি বলেছে?”জলজ্বলে চোখে জিজ্ঞেস করল নীতু।অন্তু ভয় পেয়ে গেল।
“না।আর কিছু না”
“পাকনা হয়েছ।বেয়াদব ছেলে।যাও পড়তে বস”রাগে কাপছে।আজকে রেহানকে একটা ধমক দিতে হবে।বাচ্চাদের এসব আজেবাজে কি বলছে।এই রেহানটাকে নিয়ে হয়েছে এক জ্বালা।মাঝে মাঝে এত পাগলামী করে।যদিও এই পাগলামীর জন্যই ওকে এত ভাল লাগে।ওর সাথে নীতু কখনও রাগ করতে পারে না।ও যখন বাসায় আসে ওর মনে আনন্দে ভরে যায়।ইচ্ছে করে সারাদিন ওর সাথে থাকতে।কি ভয়ানক কথা ভাবছে নীতু।
“নীতু”শফিকের কন্ঠ।
“হু”
“রেহান উঠে পড়েছে।ওকে খেতে দাও।আমি খাব না।আমার ঘুম পাচ্ছে।আমি ঘুমাতে গেলাম”বলে চলে গেল শফিক।
নীতু জানে আজ শফিক কেন খাবে না।সে আধাকেজি মাংস এনেছে।এতে চারজনের হবেনা।তাই সে খাবে না।কিন্তু শফিক জানে না নীতু কি চীজ।
৫.
রাস্তায় হাটছে রেহান।রাত নটার মত বাজে।খিদেয় পেট চো চো করছে।সেই খিচুড়ীর পর এক কাপ চা ছাড়া আর কিছুই খাওয়া হয়নি।নীতু খাওয়ার জন্য অনেক জোর করেছিল।কিন্তু না খেয়েই চলে এসেছে।জিজ্ঞেস করেছিল
“আসলে কেন?”
“ঘুমাতে?”
“কেন তোমার ঘরবাড়ি নাই?”
“আছে।তোমাদের সুখী পরিবারে ঘুমালেও কি শান্তি”
“থাক।এখন তেল মারা লাগবে না”
“না সত্যি।ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলে কেন?”
“কে বলল?”
“আমার নেটওয়ার্ক আছে”
“শফিক বলেছে তাই না?”
“হুম।লোকটাকে এত কষ্ট দাও কেন?”
“জানি না”
“ছেলে বড় হচ্ছে।কয়েকদিন পর প্রেমফ্রেম করবে।কোথায় আদর করে সাপোর্ট করবা।উল্টা দুজনে ফাইট করতেছ।ছেলেটা কি শিখবে?আর ঝগড়া করো না”
“অন্তু কে কি বলেছ তুমি?”
“কি বলেছি?”
“বড় মামার বিয়েতে তুমি করেছ তার কথা?”
“ও আচ্ছা কিছু বলেছ নাকি ও তোমাকে?”
“হুম বলেছে।কিন্তু আর কিছু বলবে না।বাদড় হয়ে যাবে”
“আচ্ছা।বলব না।গেলাম।”
“খেয়ে গেলে ভাল হত”
“আরেকদিন খাব”বলে বেরিয়ে এসেছে রেহান।সকালের হোটেলটা খুজছে।খিচুড়ী কিনবে আবার।আজকের খিচুড়ীটা ভাল ছিল।দু প্যাকেট কিনতে হবে।রেশমা মেয়েটার জন্য।এত ভাল একটা মেয়ের বাবা কিভাবে এতবড় সন্ত্রাসী হতে পারে ও বুঝতে পারে না।মেয়েটাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে অথচ মেয়েটা কোন ভয় পাচ্ছে না।যেদিন প্রথম দেখে রেহান ও অবাক হয়েছিল।
“নাম কি তোমার?”জিজ্ঞেস করেছিল রেহান।
“রেশমা।তোমার নাম কি?”হকচকিয়ে গিয়েছিল রেহান প্রশ্নটা শুনে।
“রেহান”
“তোমরা আমাকে কিডন্যাপ করেছ তাই না?”
“না।তোমার বাবার সাথে দেখা করাতে নিয়ে এসেছি”
“ও আচ্ছা।জান বাবাকে আমি কতদিন দেখি না।আমার বালিশের পাশে একটা বালিশ রেখে দিয়েছি।যদি বাবা এসে আমার পাশে ঘুমায়।”
“আসবে তোমার বাবা। কাজে ব্যস্ত।কাজ শেষ হলেই আসবে”
“আমি জানি বাবা আসবে না।বাবা দুষ্টু লোক।সবাই বাবাকে অনেক ভয় পায়”
“মোটেও না।তোমার বাবা অনেক ভাল লোক।এখন আমি যাই।তোমার যা যা খেতে ইচ্ছে করবে,যা করতে ইচ্ছে করবে এই লাল বাটনটা চাপবে।তোমাকে এসে দিয়ে যাবে।”
“আচ্ছা।ঠিক আছে।তুমি অনেক ভাল”
খিচুড়ী পাওয়া যায় নি।মোরগ পোলাও পেয়েছে।নিয়ে এসেছে।এটাও খেতে দারুণ লাগছে।হোটেলটার নাম যেন কি?মনে করতে পারছে না।রেহান রেশমার ঘরে গেল।মেয়েটা একমনে ড্রয়িং করছে।
“কেমন আছ রেশমা?”
“ভাল।কোথায় ছিলে তুমি সারাদিন?আজ সকালে আসনি কেন?”বাচ্চামেয়েটা একদম বড় মানুষদের মত কথা বলছে।
“আমার ঠিক তোমার মত একটা ভাগ্নে আছে।ওকে দেখতে গিয়েছিলাম”
“ও”
“আজকে তুমি আমার সাথে খাবে।চল”দুজনে ডাইনিং রুমে আসল।দুজনে খাচ্ছে।
“কেমন হয়েছে?”
“ভাল”
“কাল তোমার বাবা তোমার সাথে দেখা করতে আসবে”
“ভাল”
“তুমি খুশি হওনি?”জিজ্ঞেস করল রেহান।
“হু।আমার খাওয়া শেষ”বলে উঠে চলে গেল রেশমা।
৬.
এই মুহূর্তে জয়নাল সাহেব বসে আছেন রেহানের বাসায়।এতে তার বিরক্ত লাগার কথা না।কিন্তু তার বিরক্ত লাগছে কারণ তার পাশে বসে আছে ঘেডি ব্যাকা আব্বাস।টপ টেরর ঢাকা শহরের।তাদের কোম্পানীর একটা কন্সট্রাকশন আটকে দিয়েছে লোকটা। চাদা চায়।আজকে চাদা দেয়া হবে।এজন্য বাসায় ডেকে এনে চা কফি খাওয়ানোর কোন মানে হয় না।কিন্তু বড় সাহেব বলে দিয়েছেন তাকে যেন বাসায় আনা হয়।শালা সন্ত্রাসী। অথচ সেজে এসেছে হাফবাবুদের মত।কোর্ট টাই পড়ে।তার সাথে আবার পান খাচ্ছে।আর পানের পিক ফেলছে সামনের অ্যাশট্রেতে।
রেহান ঘরে ঢুকল।ওকে দেখে জয়নাল সাহেন উঠে দাড়াল।আব্বাস উঠল না।বসেই রইল।বিরক্তির চোখে আব্বাসের দিকে তাকালেন জয়নাল সাহেব।
“বসেন জয়নাল চাচা।এই লোকের নাম আব্বাস?”
“জি”
“আপনার তো ঘাড় বাকা না?”
“আমি মেরে ঘাড় বাকা করে দেই”
“ও আচ্ছা।তো ভাল আছেন?”
“জি।আলহামদুলিল্লাহ।আমার টাকাটা দিন।আমার অনেক কাজ আছে”
“কি মেয়েকে খুজতে বের হবেন?”জিজ্ঞেস করল রেহান।
প্রশ্নটা শুনে লোকটার বিস্মিত হল।
“আপনি জানলেন কিভাবে?”
“আচ্ছা আপনার মেয়ে তো আপনার মত দেখতে না।আপনার স্ত্রী বোধ হয় খুব সুন্দরী ছিল তাই না?”
“জি।আমার মেয়ে কই?”
“জোর করে বিয়ে করেছিলেন স্ত্রীকে।কি লাভ হল?না পারলেন বউকে আটকে রাখতে না মেয়েকে?বউটা মারা গেল আর মেয়েটাও হারিয়ে গেল”
“আপনাকে টাকা দেয়া লাগবে না।আমার মেয়েকে ফেরত দিন”
“না না।আপনি টাকা নিবেন না কেন?”
“না।আমি আপনার কাছ থেকে কখনই টাকা নিব না।প্লিজ আমার মেয়েকে ফেরত দিন”
“জয়নাল চাচা আপনাকে বন্ড আনতে বলেছিলাম এনেছেন?”
এতক্ষণ জয়নাল সাহেবের কাছে সব ঘোরের মত লাগছিল।কি হচ্ছে এসব।সে বোধ হয় স্বপ্ন দেখছে।স্যারের কথায় সম্বিত ফিরল।
“জি এনেছি”
“দিন”
বন্ডটা বের করে দি্লেন জয়নাল সাহেব।রেহান বন্ডটা হাতে নিয়ে আব্বাসের হাতে দিল।
“নিন সই করুন”
“এটা তো ফাকা বন্ড?”
“প্রশ্ন যত কম করবেন তত তাড়াতাড়ি মেয়েকে ফিরে পাবেন”বলল রেহান।আব্বাস সই করল।রেহান রেশমাকে ডাকল।রেশমা সাথে সাথে চলে এল।পর্দার ওপারেই ছিল হয়ত।রেশমাকে দেখে আব্বাস উঠে দাড়াল।
“মা এরা তোমাকে কষ্ট দিছে?”
“না”বলল রেশমা।
“চল।বাসায় চল”
“আমি তোমার সাথে যাব না”
“কেন?”
“তুমি অনেক খারাপ।তুমি অনেক খারাপ”বলে দৌড়ে ভিতরে চলে গেল।
আব্বাস হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।রেহান একটা ব্যাগ দিল আব্বাসের হাতে।
“এখানে আপনার ডিমান্ডেড সব টাকা আছে।আপনি যেতে পারেন।আমার সাইটের আশেপাশে আপনার কোন লোককে যেন না দেখি”
“আমার মেয়েকে না নিয়ে আমি যাব না”
“আপনার মেয়ে আপনার সাথে যাবে না”
“আমি কোন কথা শুনতে চাইনা।আমি আমার মেয়েকে চাই”
“চাচা বাইরে থেকে সিকিউরিটি ডাকুন।একে বের করেন এখান থেকে”বলে রেহান ভিতরে চলে আসছে।
“আমি আপনাকে ছাড়বো না”চিৎকার করে বলতে লাগল আব্বাস।
রেহান কিছুই শুনল না।
৭.
দরজা খুলতেই নীতু দেখল রেহান দাড়িয়ে আছে।সাথে একটা ছোট মেয়ে আর মেয়েটার কাধে একটা ব্যাগ।
“কে এই মেয়ে?”জিজ্ঞেস করল নীতু।
“রেশমা।ভিতরে আসতে দিবে না?”বলল রেহান।
“ও হ্যা হ্যা।আসো আসো”বলে দরজা থেকে সরে আসল।ততক্ষণে রেহানের গলা শুনে অন্তু চলে এসেছে।সে আজ ভীষণ খুশি।আজ কতদিন পর সিমরানের সাথে টিফিন খেয়েছে।তার ওপর রেহান মামা এসেছে।আজকে আর কোন পড়াশোনা করবে না ঠিক করে ফেলেছে।
“এই হল অন্তু।আর অন্তু আয় পরিচয় করিয়ে দেই ওর নাম রেশমা।অন্তু তুই একটু ওকে তোর ঘরে নিয়ে যা।আমি তোর আম্মুর সাথে একটু কথা বলি”
অন্তু রেশমাকে ওর ঘরে নিয়ে গেল।
“নীতু এখানে বস” সোফায় বসল নীতু।
“আজ থেকে ও এখানে তোমাদের সাথে থাকবে”
“মানে?”চোখ বড় বড় করে তাকাল নীতু।
“হুম আজ সকালে দত্তক নিয়েছি ওকে।”
“কার কাছ থেকে?”
“রেশমার বাবার কাছ থেকে।লোকটা শীর্ষ সন্ত্রাসী।নাম ঘাড়ব্যাকা আব্বাস।আজকে পুলিশের কাছে ধরা খেয়েছে।ফাসি নিশ্চিত।মেয়েটা এতিম।মা মারা গেছে”
“ভাল।আচ্ছা থাকবে এখানে”
“শফিক ভাইকে তুমি বুঝাবে”
“আচ্ছা।ও সমস্যা করবে না”
“একদম নিজের মেয়ের মত মানুষ করবে কিন্তু।ওর নামে একটা অ্যাকাউন্ট আছে ব্যাংকে।প্রতি মাসে টাকা জমা হতে থাকবে।এবং তোমাকে প্রতি মাসে টাকাটা খরচ করবে।একদম কার্পণ্য করবে না।আর ওর বিয়ের জন্য একটা ফিক্স ডিপোজিট করা আছে।ওটা তোমার নামে করা আছে।বিয়ের সময় ওটা খরচ করবে।খুব ধুমধাম করে ওর বিয়ে দিবে”
“এত কিছু বলছ আর করছ।তুমি কোথায় যাচ্ছ?”
“জানি না।গেলাম।ভাল থেকো”বলে বেরিয়ে গেল রেহান।
নীতু খোলা দরজাটার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর কেন জানি মনে হচ্ছে ও আর রেহানকে কোনদিনই দেখবে না।
৮.
রেহান যখন জয়নাল সাহেবের বাসায় পৌছুল।তখন রাত দশটা।বাসাটা বের করতে কষ্ট হয়েছে।এর আগে একবারই এসেছিল।জয়নাল সাহেবের বড় মেয়ের বিয়েতে।তখন গাড়িতে এসেছিল।তাই খুজে পেতে কষ্ট হল।
বাসার বেল চাপতেই একটা মেয়ে দরজা খুলল।মেয়েটাকে চিনে ও।জয়নাল সাহেবের ছোট মেয়ে।
“কাকে চান?”জিজ্ঞেস করল মেয়েটা।
“তোমার বাবা আছেন?”অচেনা মানুষের মুখে তুমি ডাক শুনে বিরক্ত হল বোধ হয় মেয়েটা।
“দাড়ান ডেকে দিচ্ছি বাবাকে”বলে দরজাটা লাগিয়ে ভিতরে চলে গেল।রেহান দাঁড়িয়ে রইল।
জয়নাল সাহেব যখন দরজাটা খুললেন তখন রেহানকে দেখে আউচ করে উঠলেন বিস্ময়ে।জিহবায় কামড় পড়েছে।
“স্যার আপনি?মানে রেহান বাবা তুমি?”
“আপনাদের দেখতে আসলাম”
“আস ভিতরে আস”
রেহান ভিতরে বসল।ততক্ষণে জয়নাল সাহেব ভিতরে গেছেন।ভিতরে একটা হুটোপুটির মত আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।জয়নাল সাহেব বসার ঘরে আবার ফিরে এলেন।
“চাচা আপনি এখানে বসেন।আমার কিছু কথা আছে”
“কালকে সকালে বললেই পারতে।বা ফোনেও বলল হত”
“না চাচা।এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা”
“বল”
“আজ থেকে আপনার চাকরি নট”
“মানে”জয়নাল সাহেবের চোয়াল ঝুলে পড়ল।
“আপনি চাকরি থেকে অপসারিত”
“ও”বললেন শুধু জয়নাল সাহেব।
“কারণটা জিজ্ঞেস করলেন না?”
“নাহ।নিশ্চয় বয়স হয়েছে তাই”
“না।এই জন্য না।কারণ আপনাকে কোম্পানীর এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।আজ থেকে আপনি আমার কোম্পানীর এমডি।কাল থেকে আমি আর অফিসে আসব না।আপনিই সব দেখাশুনা করবেন”
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।তুমি কি আমার সাথে মজা করছ?”
“আমি আপনার কাছে মজা করার জন্য রাত দশটায় আপনার বাসায় আসিনি”
“ওহ সরি বাবা”
“আমি এখন আসি"বলে উঠে দাড়াল রেহান।
“উঠবে মানে?"
"উঠব মানে উঠব।আপনি শুয়ে টেনে এক ঘুম দেন।কাল সকাল সকাল অফিস যেতে হবে আপনাকে”বলে রাস্তায় চলে এল রেহান।রেহান হাটতে শুরু করল।আজ রেহান হাটবে।হাটবে অজানার দিকে।সাক্ষী থাকবে রাতের আকাশের জ্বলজ্বলে তারা।
আজ অন্তুর বিয়ে।রেশমা খুব ছোটাছুটি করছে।এক বার এখানে তো আরেকবার এখানে।শফিক ড্রয়িং রুমে বসে আছে।কারণ ঘরে ঢুকতে পারছে না।নীতু ঘর আটকে বসে আছে অনেকক্ষণ হল।নীতু সকাল থেকেই কাদছে।আজ তার ছেলের বিয়ে।অথচ আজ নীতু কাদছে।কারণ আজ ২৫শে সেপ্টেম্বর।এই দিনটাতে ওর খুব কান্না আসে।ওর শুধু মনে হয় দূর থেকে কেউ একজন ওর জন্যও এই দিনে কাদছে।
©somewhere in net ltd.