নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুফি রায়হান

আমি একজন সাধারণ নগণ্য মানুষ।আম জনতাও বলা যায়।লিখতে ভালবাসি।পড়তেও ভালবাসি

সুফি রায়হান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিথি ও জোছনা

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৪

বহুদিন পর রাতের বেলা রাস্তায় হাটছি।খুব সুন্দর জোছনা নেমেছে।চাদের মধ্যে হলুদ হলুদ একটা ভাব চলে এসেছে।কালো কালো অংশগুলো কেমন কেমন যেন লাগছে।চাদের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না।নেশা নেশা লাগে।
“উপরের দিকে চাইয়া কি দেহেন?”বলল কেউ একজন।পাশে তাকিয়ে দেখি কিসলু ভাই।
“আরে কিসলু ভাই।কেমন আছেন?”
“ভালা আছি।ভালা কাম করি।ভালতো থাকুমই”বললেন কিসলু ভাই।
কিসলু ভাই মানুষটা আসলেও অনেক ভাল।আগে এলাকার টপ টেরর ছিল।কয়েক বছর আগে হিমু নামে একজন লোক তাকে ভাল কাজ করার করার শান্তি দেয়।সেই থেকে শুরু তার ভাল কাজ করা।সে এখন ভাল কাজ করার পাশাপাশি সেই হিমু লোকটাকে খুজে বেড়ায়।বিশেষ করে যখন জোছনা নামে।
কিসলু ভাইয়ের পরিচয়টাও হয়েছে ভাল কাজের বদৌলতে।একদিন ফুটপাথে বসে আছি।আমার তিথির সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছিল।কিন্তু ফোনে কোন টাকা নেই।পকেটেও নেই।তখনি কিসলু ভাই আমার কাছে আসলেন।
“ভাইসাব আপনে কোন বিপদে পড়ছেন?”জিজ্ঞেস করল সে।
“কেন মনে হল আপনার এটা?”
“”সারাদিন একটা ভাল কামও করতে পারি নাই।আপনারে ফুটপাথে বইসা থাকতে দেইখা মনে হল বিপদে আছেন”
“ও” লোকটার ইচ্ছা পূরণ করা যায় কিভাবে ভাবছি।তিথির সাথে কথা বলাটা এত জরুরীও না।তবে তার ফোন দিয়ে বলা যায়।দুজনেরই ইচ্ছা পূরণ হোক।
“ভাই আপনার মোবাইলটা একটু দেন।একটু কল করি।”বললাম আমি।
“নেন”বলে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে দিলেন কিসলু ভাই।
তিথির বাসার টিএনটিতে কল দিলাম আমি।
“হ্যালো কে বলছেন?কাকে চাই?” সুন্দর মিষ্টি স্বরে প্রশ্নগুলো করল তিথি।
“তোমাকে চাই সোনা”
“তুইই?ফাজলামো করলে ধরে থাবরা লাগায়া দিব”
“প্লিজ থাবড়া মেরে আমার দাত ফেলে দে”
“ইতরামি করিস না।এই নাম্বার কার?”জিজ্ঞেস করল তিথি।
“আছে একজনের।তুই কি বিপদের মধ্যে আছিস?”
“না।কেন?”
“এক ভাইয়ের সাথে দেখা হইছে।উনি ভাল কাজ করতে বিপদ খুজেন।মানুষের উপকার করতে চান”
“ভাল তো”
“নাম্বারটা সেভ করে রাখ।বিপদে পড়লেই কল করবি”বলে ওপাশ থেকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলাম আমি।
“নেন ভাই আপনার ফোন।আপনার নাম কি?”জিজ্ঞেস করলাম আমি।
“কিসলু।সবে কিসলু মাস্তান নামে চিনে।তয় অহন আর মাস্তান নাই।ভাল হইয়া গেছি”
“ধন্যবাদ”বলে ওখান থেকে চলে এলাম আমি।
স্মৃতি রোমান্থন শেষে বাস্তবে ফিরে এলাম আমি।
“ভাই দেখছেন কেমনে আকাশ ফাইট্টা জোছনা নামছে?লাইটের আলো ফ্যাল”বললেন কিসলু ভাই।
“হুম।আসলেও লাইটের আলো ফেল”
“জানেন শেষ যখন হিমু ভাইরে দেখি হেদিন ও এরকম আকাশ ফাইট্টা জোছনা নামছিল।হেইযে দেখলাম আর তার দেখা পাই না।চলেন হাটি”
“না।কিসলু ভাই আপনি থাকেন।আমি বাসায় যাব”জোছনা খুবি ভয়ংকর জিনিস। মনকে অবশ করে দেয়।মনের নিয়ন্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেয়।
“আইচ্ছা যান”বলে উদাস ভঙ্গিতে হাটা শুরু করল কিসলু ভাই।আর আমি বাসার দিকে হাটছি।কাল স্ট্রাকচারের সিটি আছে।তবে এটা নিয়ে এত চিন্তিত না।মোবাইলটা ভাইব্রেট করছে।তিথির ফোন।
“কই তুই?”জিজ্ঞেস করল তিথি।
“কেন?”
“দেখছিস কি সুন্দর জোছনা?”
“তো কি হইছে?এতে সুন্দরের কি আছে? সুর্যেরই তো আলো।দিনের বেলাতেও দেখা যায়”
“কি বলতেছিস তুই এসব?এত সুন্দর জোছনা আর তুই?”
“প্যাক প্যাক করিস না।কালকে সিটি আছে।পড় নইলে ঘুমা”বলে ফোন কেটে দিলাম। ইচ্ছা করেই মন খারাপ করে দিলাম।সবাই মন ভাল করে।আমি না হয় খারাপ করলাম।ওইযে মনের নিয়ন্ত্রণ এখন নিজের হাতে নেই।
কি দরকার ছিল মেয়েটার ফোন করার।এখন মন খারাপ করে বসে থাকবে।এটা সত্য যে জোছনা রাত আর মন খারাপ অন্যরকম ব্লেন্ডিং।আগের চেয়ে বেশী ইনজয় করবে তিথি।যদি এখনও জোছনা দেখতে থাকে।এরকম জোছনা রাতে একমাত্র আনন্দে থাকে সদ্য বিবাহিত যুগলরা।তারা খুজে পায় আনন্দের রং।যদিও এখন ফেসবুকের যুগে সবাই রাত জেগে থাকলেও ঘটা করে জোছনা দেখা হয় না।
“একটু শুনবেন?”নারীকন্ঠে কেউ একজন।পাশে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে।অন্ধকারে মুখ দেখা যাচ্ছে না।রিকশার হুড উঠানো।তার ভিতরে বসে আছে।রিকশাওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে।মনে হয় রাগান্বিত।এগিয়ে গেলাম।
“জি বলুন”
“আপনার কাছে পঞ্চাশ টাকা হবে?আপনার ফোন নাম্বার দিন।আপনাকে কাল সকালে ফ্লেক্সি করে দিব।আমার পার্সটা এই কিছুক্ষণ আগে ছিনতাই হয়ে গেছে।রিকশাওয়ালাও আর যেতে চাচ্ছে না।”
পঞ্চাশটা টাকাই পকেটে ছিল।প্ল্যান ছিল কাল ক্যান্টিনে খিচুড়ী খাবার।হল না।বের করে দিলাম রিকশাওয়ালাকে।মেয়েটি নামল।মেয়েটি বোধ হয় না নামলেই ভাল ছিল।এত সুন্দর কোন মানুষ হতে পারে।আশেপাশে তিথি থাকলে দাত বের করে হেসে হেসে দেখাতাম “দেখ কি সুন্দর”
জোছনার আলোটা একেবারে সুন্দর মানিয়ে গেছে মেয়েটির মুখের সাথে।যেন সারামুখে জোছনা খেলা করছে।ফিরোজ সাথে থাকলে আমি শিউর ও পারলে এখানেই মেয়েটার কালার পেইন্ট শুরু করে দিত।এরকম দৃশ্য সহজে আসে না।ইঞ্জিনিয়ারিং এর এত প্যারা নিয়েও ছেলেটা ভাল ছবি আকে।একবার তো শ্রদ্ধা কাপুরের একটা ছবি থেকে থিম নেয়ার জন্য বেচারা টানা সাতদিন মেয়েটার ছবি মাথার নিচে রেখে ঘুমিয়েছিল।এতকিছুর পরও লাস্ট সেমিস্টারে জিপিএ ৩.৭৩।ভাবা যায়?
“ধন্যবাদ।আমার নাম সাথী”
“কোথায় যাবেন?”বললাম আমি।নামটা মুখ্য না।মুখ্য আমার পঞ্চাশ টাকা।
“এই যে ঠিকানা”বলে শাড়ির আচল থেকে একটা কাগজের টুকরা বের করে দিল।এই যুগের মেয়েরা শাড়ির আচলে কাগজ বেধে রাখে ভাবতে পারিনি।অবাক হলাম।ঠিকানাটা দেখে বললাম
“এখান থেকে হেটে দশ মিনিটের রাস্তা।চলে যান”
“আমি?এত রাতে?প্লিজ আরেকটু হেল্প করুন”বলল সাথী।
মেয়েটা তিথিদের এলাকায় যাবে।যাওয়া যায়।বেচারী মন খারাপ করে হয়তো বসে আছে।চমকে দেয়া যাবে।আর এই মেয়েটার উপকারও হবে।এই ইটপাথরের শহরে এখন আর কেউ কারো উপকার করতে চায় না।না চাওয়ার চেয়ে ভয় পায়।কেউ বিরক্তও হয়।আমিও হই মাঝে মাঝে।
“চলুন”বললাম আমি।
মেয়েটা অনেক কথা বলে।গড়গড় করে অনেক কথা বলে ফেলেছে।এর মাধ্যমে জানতে পারলাম যে মেয়েটার বাবা নেই।মা থাকে খালার সাথে।খালু বিয়ে ঠিক করেছে এলাকার এক মাস্তানের সাথে।বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে।চাচার বাসায় যাবে।ওর এই চাচা অনেক ভাল।ওর একটা চাচাতো বোন আছে।একদম মাটির মানুষ।ওখানে থেকে একটা চাকরি নিবে। স্বাধীনভাবে বাচতে চায় সে।পরে মাকে ঢাকায় নিয়ে আসবে।
আমি চুপচাপ শুনে যাওয়াটা শ্রেয় মনে হল।
“আপনি কোন কথা বলছেন না?”জিজ্ঞেস করল সাথী।
“না।আমি ভাল শ্রোতা”
“ও আচ্ছা।আপনাকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি?”
“করুন”
“আপনি এত রাতে রাস্তায় কি করছিলেন?”
“খাচ্ছিলাম”
“কি খাচ্ছিলেন?”
“জোছনা”
“জোছনা?”চোখ বড় বড় করে তাকাল মেয়েটা আমার দিকে।এবার মেয়েটা একটু ভয় পেল।
“হুম।খাবেন?খেতে চাইলে চোখটা বড় করে চাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন।দেখবেন চাদের আলোগুলো শা শা করে চোখের ভিতর ঢুকে যাবে।”বললাম আমি।মেয়েটাকে ভয় পাইয়ে মজা পাচ্ছি।মেয়েটা এবার ইনসিকিউরড ফিল করতে শুরু করল।
“আমাদের আর কতক্ষণ লাগবে?”
“দু মিনিট”বলে হাটতে লাগলাম।
তিথিকে চমকে দিতে গিয়ে আমি নিজেই চমকে গেলাম।তিথিই সাথীর চাচাতো বোন।আমি তিথির বাসার ঠিকানা জানতাম না।তিথির বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।মেয়েটাও পাশে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটা এখন আর ভয় পাচ্ছে না।সে তার পরিচিত জায়গায় চলে এসেছে।ভয় পাচ্ছি এখন আমি।তিথি আমাকে দেখলে যা করবে সেটা নিয়ে ভয়।আবার না মেয়েটার সামনে থাপ্পড় না মেরে বসে।
“আচ্ছা আমি যাই।আপনি থাকুন”বললাম আমি।
“না।দাড়ান।চা খেয়ে যান”
“বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেছে বোধ হয়”
“না।আপু অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে।অনেক ভাল ছাত্রী।আমি এত পড়তে পারি না।পড়লে আপুর মত হতে পারতাম।আর আপু অনেক ভাল চা বানায়।না খেলে মিস”
মনে মনে বললাম হুম তোমার আপু অনেক কিছুই ভাল বানাতে পারে।আমাকে যেমন মানুষ বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।
দরজা খুলল তিথি।একে তো আমি।তার উপর আমার সাথে মেয়ে।মেয়েটা আবার তার চাচাতো বোন।তাও আবার এত রাতে।তিথি স্ট্যাচু হয়ে গেছে মনে হয়।
“তিথি আপু”বলে জড়িয়ে ধরল সাথী।তিথি সাথীকেও জড়িয়ে ধরল।তিথির চোখের দিকে তাকালাম। আহ এ যেন চোখ নয়।অন্যকিছু।চোখ পড়তেই মেরুদন্ডটা বেয়ে একটা শিহরণ বয়ে গেল।
“আপু জান আজ আমাকে ছিনতাইকারী ধরেছিল।ইনি পরে আমাকে তোমার বাসায় নিয়ে এসেছে।উনি না থাকলে যে আমার আজকে কি হত?”
“ধন্যবাদ।তাহলে আমাকে স্ট্রাকচার পড়তে বলে তুই সুপারম্যানের কাজ করতেছিস? ”তিথির কথা শুনে সাথী অবাক হল।
“না মানে?বাসার যাওয়ার পথে...”বললাম আমি
“আপু তুমি ওনাকে চিন নাকি?খুব আজব পাবলিক।মনে হয় ডিনার করে নাই।তাই রাস্তায় জোছনা খাইতেছিল নাকি?চাচা কই?”বলে হিহি করে হাসতে লাগল সাথী।
“ভিতরে।তুই যা।আমি আসতেছি”বলল তিথি।সাথী চলে গেল।
“আমিও তাহলে যাই?”বললাম আমি।
“ডিনার করছিস নাকি জোছনা খেয়েই পেট ভরছিস?”
“আরে ফাজলামো করছি সাথীর সাথে।থাক তাহলে গেলাম”
“ডিনার করে যা”
“না।আমি যা খেতে চাই তা তুই খাওয়াতে পারবি না”বললাম আমি।
“কি খাবি বলেই দেখ?”
“বউয়্যা”
“এটা কি?”
“এটা হচ্ছে একধরনের ভাত।চাল ঝারার পর কিছু ভাঙ্গা চাল থেকে যায়।ওটা দিয়ে রান্না হয়।দেখতে খিচুড়ীর মত।কিন্তু এতে কোন ডাল থাকে না।শুধু ভাত।চাইলে কুচি কুচি করে আলুও দেয়া যায়।শুটকি ভর্তা দিয়ে খেতে অনেক মজা।”
“এমন চাল কই পাব?”
“পাবি না বলেই তো বললাম পারবি না তুই”
“আমার তো মনে হয় তুই আমার বাসায় ডিনার করতে চাসনা বলে এরকম উদ্ভট খাবারের কথা বললি”
“না।এটা সত্যি আছে।আমি খেয়েছি”
“বুঝছি।তোর খাওয়া লাগবে না।যা যেখানে যাবি চলে যা”একটু নরম স্বরে বলল তিথি।আমাকে একটু মায়া করার চেষ্টা করছে।আমিও ছাড়ার পাত্র নই।মায়া করলে চলবে না।মায়া বড় নিষ্ঠুর জিনিস।তিথির কাছ থেকে যা পরিমাণ মায়া পেয়েছি এ জীবনে আর না পেলেও চলবে।
“গেলাম”বলে বেরিয়ে এলাম আমি।হাটছি আবার আগের মত।
হঠাৎ কি মনে করে পিছে ফিরে তিথির বাসার দিকে তাকালাম।দেখলাম তিথি দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়।যখন দেখল আমি তাকিয়েছি ভিতরে চলে গেল তিথি।জানি না কি ভাবছে তিথি।না জানাই ভাল।এরকম চাদনী পসর রাতে জোছনা ছাড়া আর কিছু না ভাবতে নেই।এ রাত মোহ কাটাবার রাত।মায়া করার রাত নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.