নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজায়েত শামীম

শামীম সুজায়েত

ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977

শামীম সুজায়েত › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিনতি লতা (র্পব - ১০)

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭



আগের পর্ব

----------------------------------------------------------

একরকম দৌড়াতে দৌড়াতে চলে এলাম রুনা দিদির অফিসে। সাড়া শব্দ না দিয়েই রুমে ঢুকে গেলাম। দরজা খোলার শব্দে তিনি কম্পিউটারের স্কিনের ওপর থেকে দৃষ্টি সরালেন। হাসি মুখ করে হাত নেড়ে কাছে ডাকতেই আমি টেবিলের সামনে এগিয়ে গেলাম। তিনি বললেন ওখানে না বোকা, আমার এপাশে এসো।

রুনা দি’র টেবিলটা বেশ বড়। আমি ঘুরে তাঁর চেয়ারের পেছনে দাড়াতেই কম্পিউটারের স্কিনের দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন, এবার দেখো, নিজের বউকে চিনতে পারো কিনা!



আমি ছবির দিকে তাকালাম। ঠিকই আছে। লতাই তো। বেশ অসুস্থ দেখা যাচ্ছে। কাহিল একটা ভাব ফুটে আছে তার চাহনীতে। জানিনা কতক্ষণ চেয়ে ছিলাম। গায়ে খোচা মেরে তিনি যখন টিস্যুর বক্স এগিয়ে দিলেন, টের পেলাম ভিজে গেছে দু’চোঁখ। রুনা’দি বললেন, নাও চোঁখ মুছে ফেলো। পুরুষ মানুষদের কাঁদতে হয়না। আমি নির্বাক হয়ে আছি। এখনও কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা। তিনি মাউস ঘুরিয়ে লতার ছবি উপরে তুলে দিলেন। বললেন, নাও এবার নিউজ পড়। অনেক কিছু লিখেছে। এ সময় এক তরুনি রুমে ঢুকলো। একটি কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললো, আপু, এই যে নিউজের প্রিন্ট কপি। রুনা’দি সেটি আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, মনিটরে যে নিউজটা তুমি পড়ছিলে, সেটির প্রিন্ট কপি এটা। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় সংবাদটি বেরিয়েছে। ভাল করে পড়ে দেখো।

আমি পড়তে শুরু করলাম,

কেনো ঘর ছেড়ে ছিলেন, কেনোই বা দিলেন সিমান্ত পাড়ি, কিছুই মনে করতে পারেন না গৃহবধূ মিনতি লতা। কেবলই জানা আছে তাঁর, স্বামীর বাড়ি ওপার বাংলায় নীলফামারির ডিমলায়। নাম তার দু:খবন্ধু। পেশায় কলেজ শিক্ষক।

টানা চার’মাস হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ওঠা বাংলাদেশী নাগরিক মিনতি লতা এখন স্বামীর কাছে ফিরে যেতে ব্যাকুল। হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝেই যেন ঘুরে ফিরে আর্তনাদ করে উঠছে তার মুক্তির আকাঙ্খা। কখনও শব্দ করে, কখনও বা ডুকড়ে কেঁদে উঠছেন। এতে করে তার মনের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তার মানসিক সুরক্ষার স্বার্থে এখন প্রয়োজন পারিবারিক সান্নিধ্যে নিবিড় পরিচর্যা। কিন্তু সেটিতো হচ্ছেই না, বরং আবারও তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিলিগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নির্মল বেরা। তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী সুস্থ হয়ে যাওয়ায় মিনতিকে এখন জেলখানায় ফেরত পাঠাতে হবে। কেননা তিনি অবৈধ পথে ভারতে ঢুকেছেন। যদিও মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে হিসাবে তাকে এখানে ভর্তি করা হয়। সাধারণত এধরণের রোগীকে “নন ক্রিমিনাল লুনেটিক” নামের একটি বিশেষ ইউনিটে রাখা হয়। চিকিৎসার পর ভাল হয়ে যাওয়া রোগীদের পরিবার বা আত্নীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। অনেক সময় দেখা যায় খবর দেয়ার পরও পরিবারের লোকজন রোগীকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেননা। তখন কোন সেল্টার হোমে তাদেরকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশী নাগরিক মিনতি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হওয়ায় তাকে কারা হেফাজতে প্রেরণ করতে হচ্ছে।




আমি চোঁখের পানি ঠেকাতে পারছিনা কোন ভাবেই। এমনিতেই ছোটবেলা থেকে আমি খুব আবেগ প্রবণ। যেকোন কষ্টের কাহিনী দেখলে, শুনলে বা জানলে আমার চোঁখে জল চলে আসে। এখনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চোঁখের জল চোঁখেই ধরে রেখে রুনা’দি কে বললাম, এখন কী করতে হবে?

তাকে জেলে পাঠিয়ে দেবে কেনো?



তিনি বললেন, পুরো নিউজটা আগে পড়ো। সবকিছু পরিস্কার লেখা আছে।



আমি আবার পড়তে শুরু করলাম, হাসপাতালের রেজির্স্ট্রারের তথ্য মতে ১১ মে সন্ধ্যায় মিনতিকে ভর্তি করে স্থানীয় থানা পুলিশ। এর আগে সলসলাবাড়ি পরিত্যক্ত রেল স্টেশন এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয় বলে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন শিলিগুড়ি থানার আই সি অলোক গুপ্ত। তিনি বলেন, সলসলাবাড়ি রেল স্টেশনটি অনেক বছর ধরেই ভুতুরে বাড়ি। এটি পরিত্যক্ত হয়ে থাকায় সেখানে মাদক গ্রহন, অসামাজিক কর্মকান্ডসহ নানা অপরাধ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সেখানে আকস্মিক অভিযান চালানো হলে পরিত্যক্ত একটি কক্ষে ওই গৃহবধূকে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়।

এদিকে মিনতির স্বামীর কাছে খবর পৌছে দিতে কলকাতাস্থ বাংলাদেশী দূতাবাসে লিখিত ভাবে জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিদেশমন্ত্রক। গত সপ্তায় রাজ্য পুলিশের দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিদেশমন্ত্রকে প্রেরণ করা হয়েছে। অপরদিকে মিনতিকে আইনি সহায়তা দিতে রাজ্য মহিলা আইনজীবী সমিতির দুই সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল হাসপাতালে মিনতির সাথে দেখা করেছেন।




রুনা’দি হঠাৎ বললেন, লতাতো মানসিক রোগী ছিল, নয় কি?



আমি নিউজ পড়া থামিয়ে বললাম, হ্যা দিদি, ছিল।



মানসিক রোগীদের ভেতরে হঠাৎ করেই ঘর ছেড়ে বাইরে চলে যাওয়ার প্রবণতা যে থাকে, তা তুমিই একদিন বলছিলে। তোমর এক ডাক্তার বন্ধু না তোমাকে বলেছিল।

হ্যা, বলেছিল।

রুনা’দি বললেন, লতার অন্তর্ধান রহস্য আমার কাছে পরিস্কার। তোমার বাড়ির পশ্চিমে ত্রিশ-চল্লিশ কিলোমিটার গেলেই তো সিমান্ত।

হ্যা।

নিউজটা পড়ার পর আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে তা হলো কোন না কোন ভাবে সে সিমান্ত পার হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে তার মানসিক রোগটি আরও বৃদ্ধি পায় এবং একেবারেই অচেনা, অজানা এলাকায় চলে গিয়ে সে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে।

কিন্তু দিদি, কাগজে লিখেছে ১১ মে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। লতা হারিয়ে যায় ২৮ এপ্রিল। তাহলে মধ্যে বারো-তেরো দিন সে কোথায় ছিল?

হতে পারে ওই সময়টুকু বিক্ষিপ্ত ভাবে সে পথ চলেছে।পথে-ঘাটে ঘুমিয়েছে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা ভবঘুরে জীবন যেমন হয়। তোমার এখন এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি না। সবার আগে জরুরি হচ্ছে শিলিগুড়ি যেতে হবে এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তোমার পাসপোর্ট আছে তো?

আছে।

তাহলে আজই ভিসা করতে দাও। আর এর মধ্যে প্রয়োজনীয় কিছু কাজ সেরে ফেলতে হবে। বিশেষ করে লতার ভোটার আইডি কার্ড, তার সাথে তোলা তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর যুগল ছবি, লতা হারিয়ে যাওয়ার পর তোমার থানায় করা জিডির কপি, পত্রিকায় দেয়া হারানো বিজ্ঞাপন, পত্রিকার নিউজ, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনসহ যা যা ডকুমেন্ট আছে, তা গুছিয়ে নিও।

আমিও তোমার সাথে যাবো শিলিগুড়ি।

আপনি যাবেন?

হু, তুমি একা একা সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। ভারতে যাওয়ার আগে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একবার যেতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরণাপন্ন হওয়া লাগতে পারে। এসব কাজ আমি গুছিয়ে নিচ্ছি। তুমি কেবল নিজের ভিসা নেয়ার কাজটা কর। আমার ছ'মাসের মাল্টি ভিসা নেয়া আছে।



----------------------------------------------------------------

(কথা ছিল ১০ পর্বেই টেনে দেবো মিনতি লতার ইতি। না পারার দোষটা আমারই। আর একটি পর্ব টেনে নিতে হচ্ছে গল্পের প্রয়োজনে। সেই পর্যন্ত ক্ষমা চেয়ে নিলাম।)





মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৫

কুমার মিজান বলেছেন: ভাই শামীম সুজায়েত, পাঠকের রেসপন্স না পেলে ক্যামন লাগে আমি জানি। আপনার লেখা পড়লাম সত্যিই ভাল লেখেন আপনি কিন্তু দেখেন মন্তব্যের ঘর ঠিকই খাঁ খাঁ করছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল। পোষ্টে প্রথম +++++

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:০৭

শামীম সুজায়েত বলেছেন: দারুন বলেছেন ভাইজান।
গুণাগুন ঠিক আছে দেখছি আপনার লেখায় Click This Link

প্রমান মিললো। ভাল থাকবেন।

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১২

ঘাসফুল বলেছেন: লেখাটা দারুন লাগছিলো... গল্প পরের পর্বে শেষ করেন ঠিক আছে, কিন্তু এই রকম আরো নতুন নতুন সুন্দর ডেলিভারি প্রত্যাশা করছি... :)

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:০২

শামীম সুজায়েত বলেছেন: অনেক খুশি হলাম। আরও ভাল
ডেলিভারি দেয়ার প্রচেষ্টা শুরু করে দেবো।
ভাল থাকবেন ঘাসফুল।

৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:২৪

ইখতামিন বলেছেন:
অনেক ভালো লাগলো :)

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন।

৪| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৪

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: ভালো আছেন তো?
বেশ কিছুদিন আসা হয়না ব্লগে... আর আসলেও খুব অল্প সময়ের জন্য আসা হয়... সবগুলা পর্বই পড়ে দেখলাম... ভালোই লেগেছে...... আমার মনে হয় চাইলে আরো বড় করতে পারতেন গল্পটা ... ... তবে যা লিখেছেন তাও ভালো হয় নি কি করে বলি... আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে... এর পর আবার অন্য কোন গল্প শুরু করেন...।।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৭

শামীম সুজায়েত বলেছেন: অনেক ভাল লাগলো ইকরাম ভাই, সময় করে পড়লেন পর্বটি।
চাইলে আরও বড় করা যেতো বা চালিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু শেষ পর্বটিও গুছিয়ে উঠতে পারছিনা এখনও।
ভাল থাকবেন।

৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৯

স্বপনচারিণী বলেছেন: অপেক্ষায় আছি পরিণতির জন্য। আশা করি লতা এবার সুস্থ হয়ে উঠবে। ছুটিতে ছিলাম তাই পড়তে দেরী হল। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.