নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজায়েত শামীম

শামীম সুজায়েত

ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977

শামীম সুজায়েত › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ : আসলে লাভ কত এবং গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১৮

এই পোস্টটি সরাসরি গণমাধ্যমের সমালোচনা না। "পরামর্শ"ও না। বরং বলতে পারেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে যারা জড়িত আছেন, তাদের পেশার প্রতি আরও বেশী যত্নশীল হওয়ার অনুরোধ। একজন সাধারণ পাঠক হিসাবে এই অনুরোধ করার অধিকার আছে বলেই মনে করি। সহজ কথা হলো লেখালেখি যাদের পেশা, রুটিরুজি, পুঁজি, তাদের অনেক দায়িত্বশীল হতে হয়। উপলব্দি করা উচিৎ, যে তথ্যটি আমি দিচ্ছি, তা দেশ ও দেশের বাইরে কোটি কোটি মানুষ জানতে পারছে।

আমরা যারা লেখালেখি করতে ভালবাসি, অফুরন্ত লেখার সুযোগ পেয়ে একসময় হয়ে যাই ব্লগার এবং নিজেকে যারা ব্লগার পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, তারা এইসব অসঙ্গতি দেখলে ব্লগে এসে দু কলম জানিয়ে যায়। তেমনই একটা ব্যাপার উপলব্দি করে "প্রসঙ্গ : আসলে লাভ কত এবং গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা" ব্লগপোস্ট।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। সাংবাদিকতা পেশায় যারা ব্যাংক বিট করেন, বছরে দুবার তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রিপোর্ট করতে হয়। একটি পহেলা জুলাই, অপরটি পহেলা জানুয়ারি। গতানুগতক প্রতিবেদন হলেও বছরের প্রথম দিনে ওই রিপোর্টের প্রতি আগ্রহ থাকে ব্যপক সংখ্যক মানুষের। বিশেষ করে যারা ব্যাংকের মালিক, ব্যাংক পরিচালনায় যারা অবদান রাখেন, ব্যাংকে চাকরি করেন এবং যারা বিভিন্ন ব্যাংকে লেনদেন করেন। ব্যাংকের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত সকলের কম-বেশী আগ্রহ থাকে বছর শেষে কোন ব্যাংক কত লাভ করলো তা জানার। শুধু কি তাই! শেয়ার বাজারে জড়িতরাও থাকেন যথেষ্ট আগ্রহী। কিন্তু হতাশাজনক খবর হলো এই লাভ-ক্ষতির হিসাব প্রকাশের ক্ষেত্রে শুধু গরমিল নয়, কেউ কেউ ভুল তথ্য প্রকাশ করেছেন। তবে এটি ঠিক বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে পরিচালন মুনাফা প্রকাশের ওপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ রয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো বিধিনিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করে । এই বিধিনিষেধ এসেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এর পরামর্শে। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাতে সম্মতি দিয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রকৃত তথ্য পেতে বিনোয়গকারীরা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতি ভরষা করে থাকেন সবচেয়ে বেশি। বাস্তবতা হলো বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা প্রকাশের চলন রয়েছে। এটি অতি সাধারণ নিয়ম। কিন্তু আমাদের মিডিয়াগুলোতে ভুলতথ্য চলে আসাই বা একটি কাগজের সাথে অন্য কাগজের মিল না থাকায় অবাক হতে হয়! কেননা এই হিসাবগুলো তো কোটি টাকায় এবং একই দিন সবকয়টি কাগজে প্রকাশ পেলো, কিন্তু গরমিল। সমস্যা কি নিউজ সোর্সে? নাকি ব্যাংকের পদস্থ কর্মকর্তারা মনগড়া যা খুশি তথ্য দিয়ে দেন। সেটি যদি হয়ে থাকে, তাহলে লাখ লাখ টাকা বেতন দিয়ে কেনো রাখা হয় দায়িত্বহীন লোকজনকে ব্যাংকের চাকরিতে।

ব্যাংকের লাভ-ক্ষতি নিয়ে ২০১৫ সালের পহেলা জানুয়ারি প্রকাশিত এমন ৮টি পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে চালানো হয়েছে একটি ছোট্ট গবেষণা । সেখানে ১৪টি বেসরকারি এবং ১টি শতভাগ সরকার মালিকানাধীন ব্যাংকের লাভ-ক্ষতি তথ্য গুলো নিয়ে দেখা গেছে একই ব্যাংকের লাভ-ক্ষতি নিয়ে দুটো পত্রিকা দিয়েছে দুরকম তথ্য। মিল-অমিলের বিষয়টি একজন পাঠক হিসাবে শুধু ব্যথিত করেনি, সাংবাদিকদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। প্রসঙ্গক্রমে একটি উদাহরণ হলো শতভাগ সরকার মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের ২০১৪ সালের লাভ-ক্ষতি নিয়ে সবকয়টি পত্রিকা যখন লিখলো তারা এবার ৯৮ কোটি টাকা লোকসান করেছে, তখন স্বনামধন্য পত্রিকা সমকাল বেসিক ব্যাংক প্রসঙ্গে লিখেছে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত বেসিক ব্যাংক এবার ১৭৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ৯৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। বরং বেসিক ব্যাংক ২০১৩ সালে ১৭৮ কোটি টাকা লাভ করেছিল। সেই প্রসঙ্গে সমকাল লিখেছে গত বছর তাদের মুনাফা হয়েছিল ২৮৫ কোটি টাকা। জানা নেই সমকালের ওই প্রতিবেদক ওবায়দুল রনি কোথা থেকে পেলেন এমন উদভট তথ্য। অপরদিকে পূবালী ব্যাংক নিয়ে প্রথম আলো ভালো পরিচালন মুনাফা হয়েছে ব্যাংক খাতে শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলছে তারা ৮০০ কোটি টাকা প্রফিট করেছে। একই ব্যাংকের ক্ষেত্রে মানবজমিন পত্রিকা বলছে, ৮৩২ কোটি টাকা। তবে প্রথম আলো ও মানবজমিনের তথ্য প্রকাশে মিল-অমিল প্রসঙ্গে অবশ্য একটা যুক্তি দেয়া যায়। সেটি হলো ব্যাংকগুলোর এই মুনাফা প্রকৃত আয় নয়। এখান থেকে অর্থাৎ বছর শেষে পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ এবং কর (৪২.৫ শতাংশ) বাদ দিয়ে নিট মুনাফার হিসাব হয়। সেহিসাবে মানবজমিন হয়তো নিট মুনাফা উল্লেখ করেছে!! তেমনই ভাবে আলআরাফা ব্যাংকের ক্ষেত্রে মানবজমিন বলছে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা ৪১৯ কোটি থেকে বেড়ে ৬২৫ কোটি, সেক্ষেত্রে প্রথমঅালো, ইত্তেফাক, বণিকবার্তা, যুগান্তর পত্রিকা বলছে ৬৪৫ কোটি টাকা। সুতরাং একই ব্যাংকের লাভ-ক্ষতির হিসাব প্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যবধান ২০ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে আলাপকালে আমার একজন ব্যাংকার বন্ধু একটি যুক্তি দিয়েছেন। এই ব্যবধানের মূল কারণ হলো, কোন সাংবাদিক হয়তো তথ্য নিয়েছেন এমডির কাছ থেকে, কেউ আবার নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কোন অফিসার বা জুনিয়ার অফিসারের কাছ থেকে। তাই এই মিল-অমিল। তবে ইত্তেফাক ও প্রথমআলো পত্রিকা সম্ভাবত একই সোর্স থেকে তথ্য পেয়েছে। অথবা এক কাগজের সাংবাদিক অপর কাগজের সংশ্লিষ্ট বিটের সাংবাদিকের কাছ থেকে তথ্য নেয়ায় মিল থেকেছে। শুধু ২০১৪ সালের লাভ-ক্ষতির হিসাব নয়, ২০১৩ সালের হিসাব প্রকাশের ক্ষেত্রেও মিল পাওয়া যায়নি অনেকগুলো পত্রিকার প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে। যেমন ইসলামী ব্যাংক ২০১৩ সালে ১৬০০ কোটি টাকা লাভ করেছিল বলে উল্লেখ করে প্রথমআলো। মানবজমিন বলছে ১৪৫৬ কোটি। তেমনই একই ব্যাংকের ১৩ সালের মুনাফার ক্ষেত্রে যুগান্তর পত্রিকা বলছে, গত বছর যা ছিল ১ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা

সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বহুবার। বিশেষ করে টিভি সাংবাদিকতায় জড়িত এমন অনেক রিপোর্টারের কান্ডজ্ঞান দেখে টিভি দর্শকদের হতবাগ হতে হয়েছে। রানাপ্লাজা থেকে জিয়াদ, উদ্ধার তৎপরতায় টিভি সাংবাদিকদের হড়াহুড়ি আর প্রশ্ন করা দেখে কখনও কখনও মনে হয়েছে ঘটনাস্থলে গিয়ে টেনে একটা থাপ্পড় মেরে দেই সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে। জিয়াদের মা যখন ছেলের লাশ দেখে হাউমাউ করে কাঁদছেন, তখন একজন টিভি রিপোর্টার তাকে বলছেন, আপনার ছেলে (লাশ) তো আপনার কাছে ফিরে এসেছে, আপনার অনুভূতি যদি বলতেন!!কেবল জিয়াদ নয়, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে গিয়ে অর্ধেক আটকে থাকা শ্রমিকের কাছে তার অনুভূতি জানতে চাওয়ার মতো কাজও করেছিলেন আমাদের দেশের "বুম সাংবাদিকরা।" কোন পরিস্থিতিতে কোন কথা বলতে হয়, এই সেন্স যাদের নেই, তারা কেনো সাংবাদিকতা পেশায় আসেন?

টিভি মিডিয়ার সাংবাদিকদের অনেকেই হয়তো জীবনে প্রথম সুযোগ পেয়েছেন এই পেশায় কাজ করার। কিন্তু প্রিন্ট মিডিয়ায় যারা আছেন, বিশেষ করে স্বনামধন্য পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ বিটের সাংবাদিকরা ওই বুম সাংবাদিকদের মত হলে কি চলবে! সাংবাদিকতার মত মহান পেশায় যারা জড়িত, তাদের নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা জুরুরি হয়ে পড়েছে। যারা টিভি, পত্রিকা বা অনলাইন পত্রিকার মালিক, তাদেরও উপলব্দি করা উচিত এই যে, আপনার প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক যখন ফিল্ডে যান, তিনি তো আপনার মিডিয়ার পরিচয় বহন করছেন। যারা কথা বলতে পারেননা, সঠিক তথ্য আনতে পারেননা, তাদের উচিৎ হবে সাংবাদিকতা পেশা থেকে সরে দাড়ানো। নিজের পেশাগত কাজকে ভালবেসে আরও বেশি দায়িত্বশীল হবেন, এমনই প্রত্যাশা রইলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.