নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্প, অনুভূতি আর জীবনের টুকরো কথা

সুম১৪৩২

আমি লিখি আমার দেখা, শোনা আর অনুভবের গল্প। কল্পনা আর বাস্তবের মিলনে গড়ে তুলি নতুন এক জগত। কলমে আমি হলো আমার একান্ত লেখা, শুধু আমার নিজের শব্দের ভুবন।

সুম১৪৩২ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিক্ষিপ্ত খাতা : CNG vs বাংলার টেসলা :-&

১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫



আমার একটা মারাত্মক ভুল ধারণা ছিল—ভাবতাম, কোনো একটা পয়েন্ট নিয়ে লেখা শুরু করলে, লেখা কোনো না কোনো ভাবেই বের হয়ে যাবে। আমার কাছে লেখার জন্য আছে অনেক অনেক পয়েন্ট। কিন্তু কোনো ভাবেই লেখার শুরুটাকে সাজাতে পারছি না। এখন বুঝতে পারছি, লেখার শুরুটাই আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আজকের লেখার শুরুও নাই, শেষও নাই। কিছু না ভেবে, হুট করেই শুরু করে দিলাম। যা হবার হবে।

মাঝে মাঝে আমার ড্রাইভার ছুটিতে থাকলে, আমি সিএনজি তে করে অফিসে যাই। বেশ কিছু মাস যাবত গাড়ি চালানো ছেড়ে দিয়েছি। এখন ব্যাটারি রিকশায় (বর্তমান নাম—টেসলা) জ্বালায়। গাড়ি ড্রাইভ করা এখন বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

আমার এক পরিচিত সিএনজি ড্রাইভার আছে, কিন্তু মাঝে মাঝে ওই বেটাকেও পাওয়া যায় না। অফিস টাইমে উবার পাওয়া মানে যুদ্ধ জেতা। উবারে কমপ্লেইন দিলে কাজ হয়—এই ধারণা এখন আর আমার নেই। তাই উবারের ঝামেলায় না গিয়ে, সোজা রাস্তায় নেমে পড়ি সিএনজি খোঁজার জন্য।

কে জানি একবার বলেছিল—“প্রতি টা জিনিস নিয়েই গল্প লেখা যায়।” তারপর থেকে আমিও প্রতিটা জিনিসের ভেতর গল্প খুঁজি। আমার গল্প খোঁজার কয়েকটা মাধ্যম আছে—তার মধ্যে একটা হলো সিএনজি, আর সিএনজি ড্রাইভারদের সঙ্গে গল্প করা। কিছু সিএনজি ড্রাইভারের কথা নিয়েই আজকের এই লেখা।

আবছার

প্রায় ৩০ বছর যাবত বেবি ট্যাক্সি আর সিএনজি চালাচ্ছে আবছার। বয়স প্রায় বাষট্টি কিংবা তেষট্টি । এক ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে ঢাকায় থাকে বত্রিশ বছর ধরে। ভিটে-বাড়ি পিরোজপুরে। তার নিজের তিনটা সিএনজি আছে—একটা সে নিজে চালায়, আর বাকি দুইটা ভাড়া দিয়ে রেখেছে। এই হলো মোটামুটি তার বিবরণ।

ছেলের সাথে তার সম্পর্কটা ভালো না। ছেলে —-------- থেকে (বাংলাদেশের খুবই নামকরা একটা পাবলিক ইউনিভার্সিটি) পাশ করেছে। নিজের ইচ্ছায় ভালো একটা ফ্যামিলিতে বিয়েও করেছে। এখন বাবা-মায়ের খবর রাখে না।

আবছার চাচার মুখের কথা তুলে দিচ্ছি—
“বাবা জি, ছেলের এখন অনেক পয়সা। ছেলে আমায় বলে, তার নাকি এখন তার বাবার থেকেও বেশি পয়সা। নাতিরা যদি জানে তাদের দাদা সিএনজি চালায়, তাহলে নাকি তাদের মান-ইজ্জতের সমস্যা হবে। আরে, এই সিএনজি চালিয়ে তোদের তিন ভাইবোনরে মানুষ করলাম, আর এখন তোর মান-ইজ্জত যায়!”

তাঁর মেয়েদের ব্যাপারে তার ভাষ্য ছিল—
“সত্যি বইতে কী বাবা জি, আসলে আমি কাউরে মানুষ করতে পারি নাই। ছেলেটা একটু পড়াশোনা করে বড় হইয়া বাপ-মারে দেখতে পারে না। আর মাইয়াগুলা ঠিক মতো পড়াশোনা না করে, অন্য পোলাদের হাত ধইরা চলে গেছে। তয় তারা যোগাযোগ রাখে। যোগাযোগ রাখার কারণ হলো, তাদের বাপের টাকা-পয়সা।”

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “হাত ধইরা চলে গেছে মানে?”

উনার উত্তর—
“মাইয়া দুইটা পড়াশোনা করে নাই ঠিক মতো। একটা মেট্রিক পরীক্ষা দিছে, তারপর আর পড়াশোনা না করে, সিএনজি ড্রাইভার রে বিয়ে করে ফেলছে। আরেকটা মাইয়া ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রে বিয়া করছে। অনেক দুঃখ রে বাবা জি।”

আমি বললাম, “ও আচ্ছা,” তারপর একটু হেসে বললাম, “এই গুলা তো জানি সিনেমা, নাটকে হয়, বাস্তবে হয় শুনি নাই কখনো।”
আবছার চাচা বলল, “বাবা জি, হয় হয়, আপনি বুঝতাইন না, গরিব আর দুঃখ অনেক।”
আমি বললাম, “কি জানি চাচা, হয় তোবা হয়, আমি শুনি নাই।”
হাসতে হাসতে আবার বললাম, “চাচা, শুনেন, একদিন আপনার ছেলে এসে হঠাৎ করে বলবে—‘বাবা, আমায় ক্ষমা করে দিও, আমার ভুল হয়ে গেছে।’ আপনি চিন্তা করবেন না।”
আমার কথা শুনে আবছার চাচা অনেক জোরে হেসে উঠল—
“বাবা জি, ওই গুলা নাটক-সিনেমায় হয়, বাস্তবে না।”

তার এত জোরে হাসির শব্দে আমি অবাক হয়ে ভাবছি—পুরোটাই তো আমার কাছে একদম নাটক-সিনেমার গল্প মনে হচ্ছে। আর তার ওপর আমি একটা কথা বললাম, ওটা উনি বলছেন—বাস্তবে হয় না।

যাই, আমার পরের সিএনজি ড্রাইভারের কাছে।

আবদুল মতিন

মতিনের সঙ্গে আমার পরিচয়টা একটু অন্যরকম। পরিচয় পর্বটা আগে বলি।

কোনো এক বৃষ্টির দিনে আমি অফিস যাচ্ছিলাম। জাহাঙ্গীর গেটের সিগন্যালে এসে একটা সিএনজি তাড়াহুড়ো করে সিগন্যাল ক্রস করতে গিয়ে, সিএনজির কাটাকাটা বাম্পারের ভিতর আমার গাড়ির বাম্পার ঢুকিয়ে দেয়। যার জন্য আমার গাড়ির বাম্পার খুলে যায় এবং কিছু স্পট পড়ে।

আমার ড্রাইভার বৃষ্টির মধ্যে নেমে সিএনজি ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলা শুরু করে। এর মধ্যে গাড়ি আর সিএনজি এমনভাবে পেঁচে যায় যে কোনোটা ঠিকমতো চালানো যাচ্ছিল না। আমার ড্রাইভার আর সিএনজি ড্রাইভার দুইজনের টানাটানি লেগে যায়—বাম্পারগুলো ছুটানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু কোনো ভাবেই ছুটানো যাচ্ছিল না। যার কারণে ছোটখাটো ঝামেলা লেগেই যাচ্ছিল।

পরে ট্রাফিক পুলিশ এগিয়ে এল। তারা এই অবস্থা দেখে আমার ড্রাইভারকে বলল,
“তুমি গাড়িতে ওঠো, ডান পাশে টান দাও।”
আর সিএনজি ড্রাইভারকে বলল,
“ক্লাচ ব্রেক করে রাখো।”

ওদের কথা মতো আমার ড্রাইভার তাই করল। সত্যি সত্যি চোট খুলে গেল। আসলেই এক্সপেরিয়েন্স বলে কথা। যাই হোক, চোট খুলে যাবার পর আমরা সিগন্যাল পার হলাম। সিএনজি ড্রাইভারকে গাড়ি সাইডে করতে বললাম।

এর মধ্যে আমি বৃষ্টিতে পুরো ভিজে গেছি। সিএনজি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম,
“তুমি এমন করলে কেন? এত তাড়াহুড়ো কিসের?”
সে বলল, “সার, ভুল হয়ে গেছে। মাপ করে দেন।”

আমি সিএনজি ড্রাইভারের ছবি আর সিএনজির দরজার পাশে থাকা মালিকের নাম ও ঠিকানার ছবি তুলছিলাম। ঠিক তখনই এক সিএনজি প্যাসেঞ্জার আমার সঙ্গে রেগে একটা বাজে কথা বলে ফেলল।

আমি রেগে গিয়ে প্যাসেঞ্জারকে বললাম,
“আমার গাড়ির ক্ষতিপূরণ না দিলে আমি সিএনজি ছাড়ব না। আপনাদের তাড়া থাকলে, নেমে অন্য সিএনজিতে যান।”

আমার উত্তপ্ত কথা শুনে প্যাসেঞ্জাররা চুপ হয়ে গেল। আমি শুরু করলাম খারাপ ব্যবহার সিএনজি ড্রাইভারের সঙ্গে। আসলে, আমি চলেই যাচ্ছিলাম। ওই প্যাসেঞ্জারগুলোর কথায় আমি রেগে গিয়েছিলাম। যাই হোক, কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমি সিএনজি ড্রাইভারকে মারার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন এক ট্রাফিক পুলিশ আমায় ধরে বলল,
“ভাই, ছেড়ে দেন। গরিব মানুষ। তার ওপর আপনার থেকে বয়সে অনেক বড়।”

ওই কথা শুনে আমি কিছুটা শান্ত হলাম। ক্ষতিপূরণের বাবদ কিছু টাকা নিলাম। তারপর চলে গেলাম অফিসে। মার্চেন্ডাইজারদের বলে স্যাম্পলের টি-শার্ট নিয়ে কাপড় চেঞ্জ করলাম।

এর মধ্যেই সিএনজি ড্রাইভারের জন্য খারাপ লাগা শুরু হলো। (আসলে আমি খুব অল্পতেই রেগে যাই। আবার একটু পরেই মাথা ঠান্ডা হয়ে গেলে, আমি ক্ষমা চাইতে দেরি করি না। আমার দোষ থাকুক বা না থাকুক।)
মোবাইল থেকে ওই সিএনজি ড্রাইভারের মালিকের নাম্বার বের করে ওকে ফোন দিলাম। বললাম,
“ভাই, আপনার একটা সিএনজি—ড্রাইভারের নাম আবদুল মতিন। ও আজ জাহাঙ্গীর গেটে আমার গাড়ির সঙ্গে অ্যাক্সিডেন্ট করেছিল। আমি রাগ করে ওর থেকে কিছু টাকা জরিমানা নিয়েছিলাম। আপনি আমাকে ওর নাম্বারটা দিন, আমি টাকা ফেরত দেব।”

ওই পাশে সিএনজি মালিক বলল,
“সার, আমি ওকে ফোন দিয়ে আপনার নাম্বার দিয়ে দিচ্ছি। ও আপনাকে ফোন দেবে। সার, আমরা গরিব মানুষ। যা হয়েছে, হয়েছে, মাফ করে দেন।”

আমি হেসে বললাম,
“আরে ভাই, কোনো সমস্যা নাই। আমি কিছু মনে রাখি নাই। আপনি ওকে বলবেন, আমায় কল দিতে।”

আবদুল মতিন আমাকে কল দেয়নি। মতিনকে খুঁজে পেতে প্রায় এক মাস লেগে গেল। আনোয়ার (আমার পরিচিত সিএনজি ড্রাইভার) ওকে খুঁজে বের করল। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে আমার পার্সোনাল অফিসে নিয়ে এলো। মতিন তো কোনো ভাবেই আসবে না। ও ভেবেছিল আমি আবার কী না কী করি।মতিন এলো আমার অফিসে।

আমি ওকে দেখেই জড়িয়ে ধরলাম। বললাম,
“ভাই, আমি ভুল করেছি। তুমি কিছু মনে কোরো না। আমি তোমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি।”
আমাকে অবাক করে দিয়ে মতিন কেঁদে ফেলল। বলল,
“সার, আপনি আমায় লজ্জা দিচ্ছেন। সার, আমায় ছাড়েন। আমার লজ্জা লাগছে।”

ওর কান্নাটা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিল। কারণ, এতদিন ও আমার ব্যবহারে কষ্ট পাচ্ছিল, কিন্তু কারো কাছে বলতে পারছিল না। আমার ক্ষমা চাওয়াতে ওর অভিমানগুলো নেমে গেল। সত্যি বলতে কী, আমি ওই দিন ওর সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছিলাম। আমি ওকে সামনে বসালাম। ওর থেকে যে টাকা নিয়েছিলাম, সেটা ফেরত দিলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম,
“তোমার পরিবার কেমন?”
ও বলল, “দুই ছেলে-মেয়ে আছে, দুজনই মাদ্রাসায় পড়ে।”

আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম,
“মতিন, তোমার দুই ছেলে-মেয়েকে আমি পড়াব। তুমি এখন থেকে মাসে মাসে আমার কাছ থেকে ওদের মাদ্রাসার খরচটা নিয়ে নিও।”

মাঝে মাঝে মতিন আমার অফিসে আসে, দেখা করে যায়। যখনই সে গ্রাম বা বাড়ি যায়, আমার জন্য কিছু না কিছু আনবেই—যেমন নারিকেল, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি। একবার সে আমাকে অবাক করে দিয়ে পুরো পনেরো কেজি কালোজিরা চাল নিয়ে হাজির। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
—“কি ব্যাপার মতিন? এতগুলো কালোজিরা চাল কেন আনলা? আমি তো পোলাওর চাল দিয়ে ভাত খেতে পারি না।”
—“ছোট স্যার পোলাও পছন্দ করে, তাই নিয়ে আসলাম।”

এক শুক্রবার নামাজের পর মতিন হাজির আমার পার্সোনাল অফিসে। হাতে বিশাল টিফিন ক্যারিয়ার। তাতে আমার দুপুরের খাবার। ওই খাবারের মধ্যে একটা আইটেম ছিল পায়েশ। আমার এত ভালো লেগেছিল পায়েশটা, এরপর মাঝে মাঝে আমি মতিনকে বলি,
“আমাকে পায়েশ রান্না করে দিয়ে যেও।”

আজ প্রায় তিন বছর হতে চলল। মতিনের বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ আমি দিচ্ছি। আমার বিশ্বাস, মতিনের ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে, সিনেমা বা নাটকের মতো আবছার এর ছেলের মতো মতিনকে ভুলে যাবে না।

দেখা যাক, কী হয়।

আনোয়ার

আমার আসেপাশের কিছু বিশ্বস্ত লোকদের মধ্যে আনোয়ারও একজন। আনোয়ারের মতো আরেকজন সিএনজি ড্রাইভার ছিল আমার বিশ্বস্ত—নাম বেলাল। ওর কথা বলা আছে আমার ‘মৃত্যু’ বইতে।

ওর বয়স পঞ্চান্ন কিংবা সাতান্ন হবে। আমার পরিচিত সিএনজি ড্রাইভারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান ব্যক্তি এই আনোয়ার মিয়া। কেন বুদ্ধিমান বলছি, একটু পরে বলছি—তার আগে বলি, আমার সঙ্গে তার পরিচয় কীভাবে।

আমি তখন স্কুলে পড়ি। আনোয়ার আমাদের এলাকায় আসেপাশেই থাকত। আমি যখন স্কুলে যেতাম, তখন প্রায়ই সময় তাকেই দেখতাম রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওই রিকশাতেই করেই স্কুলে যেতাম। তখন ভাড়া ছিল মাত্র তিন টাকা। হঠাৎ করেই ভুতুড়ে স্টাইলে আনোয়ার গায়েব হয়ে গেল। রিকশাওয়ালা হলেও, আমাদের এলাকায় আর পাশের এলাকায় আনোয়ার মিয়া বেশ জনপ্রিয় ছিল। কারণ, যে কারো বিপদে তাকে পাওয়া যেত।

গায়েব আনোয়ার মিয়া হঠাৎ করেই আবার ভুতুড়ে স্টাইলে ফিরে এলো—তবে এবার রিকশা না, সিএনজি নিয়ে। এখনো সিএনজি চালাচ্ছে, যদিও এর মধ্যে আরও তিনবার গায়েব হয়ে গিয়েছিল।

আনোয়ার মিয়া কেন গায়েব হতো, একটু বলি—ওর কাছে কিছু টাকা জমলেই, মহা উৎসাহে একটা করে ব্যবসা ধরে। তারপর ওই ব্যবসায় লস খেয়ে আবার পুরোনো পেশায় ফিরে আসে। এইজন্যই আমার দৃষ্টিতে সে অনেক বুদ্ধিমান। কারণ, ও যে ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আসে, আমি প্রথমে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। ও আমাকে লজিক দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে। শেষমেশ আমি হেসে বলি—
“যাও, তুমি যে টা ভালো মনে করো।”

আনোয়ার এখনো আছে আমার সঙ্গে। আমার যখনই ওর প্রয়োজন হয়, ও চলে আসে। এতদিন যাবত কষ্ট করেছে, কিন্তু ওর বারবার গায়েব হয়ে যাওয়ার কারণে কিছুই করতে পারে নাই বেচারা। বড় কথা হলো, দুইটা মেয়েকে মানুষ করেছে। কিন্তু ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারে নাই। কারণ, ওরাও আবছার এর মেয়ের মতো—নিজেদের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে সংসার করছে।

আনোয়ার মিয়া ইদানীং আবার গায়েব হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। রংপুরে কোথায় যেন বালু ওঠানোর একটা ভালো ব্যবসা আছে—ওইখানে খোঁজখবর নিচ্ছে।

এখন আমি আনোয়ারের গায়েব হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছি।

বাংলার টেসলা

এখন বলবো আমার অতি প্রিয় বাংলার টেসলার কথা। বাংলার টেসলা আমার এতটাই প্রিয়, যে তাদের সম্মানে আমি গাড়ি চালানো ছেড়ে দিয়েছি। আমার খুব ইচ্ছা—বাংলার টেসলা ড্রাইভারদের সঙ্গে গল্প করার, যদি কোনো টপিক পাই। কিন্তু আফসোস, এখন পর্যন্ত কারো সঙ্গে গল্প করার সৌভাগ্য আমার হয়নি।

আমার পার্সোনাল অফিস থেকে বাসার দূরত্বটা খুব অল্প। পায়ে টানা রিকশায় গেলে পনেরো থেকে বিশ মিনিট লাগে। আর টেসলায় গেলে ওটা নেমে আসে তিন ভাগের এক ভাগ, মানে পাঁচ থেকে সাত। বুঝতে পারছেন, কিভাবে চালায় ওরা। ওই পাঁচ থেকে সাত মিনিটে আমি থাকি বিশাল আতঙ্কে; ওই পাঁচ থেকে সাত মিনিটে আমার কিছু ডায়লগ থাকে ওদের প্রতি — সেটা হলো:

“ভাইরে আস্তে চালা রে, ভাই আস্তে চালা।”
“ওই ওই সাবধানে, লেগে যাবে তো।”
“কি রে ভাই, তোদের সমস্যা কোথায়, এভাবে চালাস কেন?”


বুঝতেই পারছেন — এই ডায়লগ মারতে মারতেই আমার পাঁচ থেকে সাত মিনিট শেষ। গল্পটা করবো কোন টাইমে? তবু একবার একটা টেসলা ড্রাইভার আমাকে একটা কথা বলেছিলো; সেটা শুনে আমি এতটাই চমক খেয়েছি, তা বলার মতো না। হয়তোবা আপনি চমকাবেন না। আমি চমকে গেছি, কারণ এই ধরণের লজিকাল নাকি এলজিকাল — আমি খুব কমই শুনি। চলুন, শুরু করি কথা কাপন—

“ভাইরে, আস্তে চালা রে, এভাবে চালাস কেন?”
“স্যার, চিন্তা কইরেন না, আমি সাবধানে চালাচ্ছি।”
“তোমার সাবধানটা তো দেখলাম একটু আগে, এক জনকে দিসিলা মেরে।”
(হেসে) “স্যার, ঢাকা শহরে গাড়ি চালাতে হয়, মাপ ছাড়া দর্জির দোকানে জামা বানানোর মতো।”
“বুঝলাম না। রিকশা চালানোর সাথে দর্জি দোকান—কি বলো?”
“বুঝলেন না স্যার! মনে করুন আপনি একটা দর্জি দোকানে গেলেন, আর বললেন আপনার একটা জামা লাগবে, কিন্তু জামার মাপ না দিয়ে আপনি একটা জামা লাগবে বলে চলে আসলেন। ঠিক তেমনিই—ঢাকা শহরে গাড়ি চালাতে হয় সামনে দিকেই দেখে; সামনে ফাঁকা মানেই টান দিতে হবে। পাশ-আস-পাশে তাকালে ঢাকা শহরে গাড়ি চালানো যাবে না।”

এখানেই শেষ। আমি আগেই বলেছি—এই লেখার শুরুও নেই, শেষও নেই।

ওওওও—একটা কথা বলতেই ভুলে গেছি! আপনারা কি কখনো টেসলা ড্রাইভারদের মুখে সেই উজ্জ্বল হাসিটা দেখেছেন? আমি কিন্তু প্রায়ই দেখি। ওই হাসি দেখার একটা গোপন মন্ত্র আছে—মন্ত্রটা আজ আপনাদের শিখিয়েই দিচ্ছি। যখনই উজ্জ্বল হাসি দেখতে চান, তখনই মন্ত্রটা প্রয়োগ করবেন। আসুন, শেখাই—

আমরা তো নরমালি রিকশাওয়ালাদের কিভাবে ডাকি?
‘ওই খালি!’
‘ওই রিকশা!’

এইভাবে না বলে ডাকবেন—
‘ওই টেসলা!’ — ‘ওই টেসলা!’

ওইভাবে ডাকলে, ওরা এমন খুশি হবে—মনে হবে যেন ইলন মাস্ক নিজে এসে ওদের কাঁধে হাত রেখে বলেছে,
“ভাই, ইউ আর দ্য রিয়েল টেসলা ড্রাইভার অফ বাংলাদেশ!”

বিশ্বাস হচ্ছে না?
তাহলে মন্ত্রটা প্রয়োগ করে দেখুন—দেখবেন, হাসিটা এমন জ্বলে উঠবে যে, আপনার সানগ্লাস দরকার পড়বে!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৩৫

dupur১২৩ বলেছেন: ভাই , কেমন আছেন। আপনার লেখা পড়া হয় , কিন্তু লগইন করি না , কারণ আমার মূল ID কমেন্ট ব্যান মারসে। :(

লেখা টা ভালো হয়েছে , বিশেষ করে টেসলা পার্ট টা। মাপ ছাড়া জামা বানানো , হাহাহা মজা পেলাম ভাই। ভালো থাকবেন

একটা রিকোয়েস্ট যদি সম্ভব হয় " জেনারেশন একাত্তর " ব্যান তা ছেড়ে দেন , উনি মুরুব্বি মানুষ , আমার ধারণা উনি খুব একা। আপনারা যদি সবাই ব্যান করে রাখেন , তাহলে কেমনে কি ?

প্লিজ মাইন্ড করবেন না এই রিকোয়েস্ট এর জন্য। :(

ভালো থাকবেন।

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৩৭

dupur১২৩ বলেছেন: যেকোনো কারণে হোক , আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে , তার জন্য ওই রিকোয়েস্ট , কিছু মনে করবেন না

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৭

সুম১৪৩২ বলেছেন: "dupur১২৩" আমার ধারণা আমি আপনাকে চিনি , মনে হয় খুব ভালো ভাবে চিনি। আপনার আরেক তা ID "আবে১২৩" যখন একটা ছবি দিয়েছিলেন , তখনই আপনাকে আমি চিনে ফেলেছি। আমার যত টুকু মনে পরে ওই ছবি টা আমি তুলেছিলাম, UK তে আপনার বাসায়।

OMI রাইট !

যদি omi হয় , bro তোমার রিকোয়েস্ট রাখতে পারলাম না। মেইল করো আমাকে [email protected]। আমার মনে হয় তুমি আমাকে আমার পেজ এ Knock করেছিলা। bro মেইল করো Let’s meet. .. আর দুষ্টামি বন্ধ করো। ওই ছাগল এর ট্রিটমেন্ট দরকার
Let’s meet — I’m waiting for your email.

৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:০৮

জাহাঙ্গির আলম ৫৬ বলেছেন: ইহা ভালো লেখা

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৯

সুম১৪৩২ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.