![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটু বাইরে গিয়েছিলাম সিগারেট কিনতে, বাসায় ফিরে দেখি পরনে সাদা জোব্বা, মাথায় টুপি, মুখ ভর্তি ঘন লম্বা দাড়ি এবং নিখুদ ভাবে কমানো গোফ বিশিষ্ট হাস্যকর আরবীয় পোশাখ এবং চেহারা নিয়ে আমার ধর্মান্ধ বন্ধু তারেকুল ইসলামের আগমন আমার বাসায় ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখছে। তারেকের একটা মজার বিষয় লখ্য করেছি যে সে সুযোগ পেলেই একা একা টিভিতে বিকিনি পরা মেয়েদের ফেসান শো খুব মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করে, উপভোগের কারনটা হলো স্বল্প বস্ত্র, বিবস্ত্র হলে নাজানি উপভোগের মাত্রাটা কোথায় গিয়ে ঠেকতো| আমার অগোচরে এইসব উপভোগ করলেও, আমি সামনে আসলেই বলতে শুরু করে "নাউজুবিল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, কোথায় মেয়েরা পর্দা করবে, সেখানে কিভাবে সবার সামনে নির্লজ্জের মত উলঙ্গ হয়ে হাটছে, সব জাহান্নামী এরা"। এবারও ঠিক তাই হলো, জাহান্নামী মেয়েদের উলঙ্গ শরীর দেখতে থাকা তারেক আমাকে দেখা মাত্রই চেনেলটা পাল্টে জাকির নায়েকের পিসটিভি চেনেলে রেখে, অবুজ শিশুর ভাব ধরে জিজ্ঞাসা করলো
- এই তুই তো বাইরে থেকে আসলি, আজান শুনেছিস? নামাজ পড়তে হবে।আসলে আমার সামনে লজ্জায় পড়ে গিয়ে পরিবেশটা সহজ করতে আজান শুনেছি কিনা জানতে চাওয়ার বাহানা মাত্র, কারণ আমার বাসার খুব কাছেই মসজিদ, আজানের শব্দ এত জোরে শোনা যায় যে কখনো কানে আঙ্গুল চেপে রাখতে হয়। আমি বললাম
- হ্যা আজান দিয়েছে, আমি তোকে জায়নামাজ দিয়ে যাচ্ছি, তুই নামাজটা পড়ে নে।
আমি নিজে কোন ধর্মই করিনা, তবুও সকল ধর্মের পূজা অর্চনার সমানাদি আমার ঘোরে ঠিকই আছে, যেমন আমার ঘোরে তাবিজও আছে সাথে মাদুলীয় আছে, ফ্রিজে এক বোতলে জমজমের পানি রাখা, আরেক বোতলে গঙ্গা জ্বল, আমার ঘোরে মা দুর্গা এবং যিশুর মূর্তি একদম পাশাপাশিই রাখা এবং ঠিক তার উপরেই আরবিতে মোহাম্মদ লেখা এক ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং দেয়ালে ঝোলানো। আমার মতে একজন নিস্তিকের কাছেই সকল ধর্মালম্বী এবং ধর্ম সমান, একমাত্র তারাই নিজেকে ধর্ম নিরপেক্ষ হবার দাবি করার যোগ্যতা রাখে। নামাজ পড়তে জায়নামাজটা তারেকের হাতে দিয়ে, আমি আমার পড়ার ঘরে গিয়ে পড়ার টেবিলে বসে বুদ্ধ দেবের উপরে লেখা বুদ্ধাচারিতা নামক একটা বই পড়তে লাগলাম।
প্রায় মিনিট বিশেক পর নামাজ শেষ করে জায়নামাজ হাতে আমার পড়ার ঘরে আগমন মুসল্লি তারেকের, এই ঘরটাই মূলত তারেক এবং আমার তর্ক যুদ্ধের ময়দান। জায়নামাজটা ভাজ করে আলনার উপর রেখে, আফসোসের স্বরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বললো
- ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের চারটি স্তম্ভ আমার খাড়া করানো শেষ, মানে কালেমায়ে শাহাদাত তো উত্তরাধিকার সুত্রে পেয়েছি, নামাযও আদায় করি, গুনে গুনে যাকাতও কম দেই না, আর প্রতি বছর রামাযান মাসে রোযা রাখেতো তিন কিলো ওজন কমিয়ে ফেলি, এখন শুধু হজ্জ করাটাই বাকি। আশা আছে একবার হলেও হজ্জে গিয়ে হাজরে আসওয়াদ মানে কাবার সেই পবিত্র কালো পাথরটিকে চুম খেয়ে আসবো, কেননা পাথরটি ক্ষমতা অনুযাই আমার সারা জীবনের পাপ সে চুষে নিয়ে আমাকে একদম সদ্য জন্মানো শিশুর মত নিস্পাপ বানিয়ে দিবে।
তারেকের কথাটি কানে ভেষে আসতেই আমার বুদ্ধাচারিতা নামক বইটি পড়া বেহেস্তে গেল। তারেকের এই মুর্খে মত কথাটি শুনে রাগে গা কিছুটা ইস্পিশ করছিলো, আবার হাসিও পাচ্ছিলো, একই সঙ্গে দু ধরনের আবেগ খুব ভয়ানক। নিজেকে সামলে নিতে বইটি বন্ধ করে পড়ার টেবিলের উপর রেখে দিলাম, পকেট থেকে একটু আগে কিনে আনা নতুন সিগারেটের পেকেটের মোড়ক খুলে সযত্নে একটি সিগারেট বের করে দুইপাটি দাতের মাঝে কামড়ে ধরলাম। সিগারেটের আগায় তিন চার বার টান দিয়ে, ফুস ফুস ভর্তি করে ধোয়া গ্রহণ করলাম, এবার বুক ভরা ধোয়া বের করতে করতে শুন্যে প্রায় ছয়টা মত রিং বানালাম। ধোয়া ছাড়া শেষ হলে মাথার ভেতর হাজরে আসওয়াদকে নিয়ে কিলবিল করা জ্ঞানের ধারালো দৃষ্টি, এবং ঠোটের কনে ধারালো হাসি দিয়ে তারেকের দিকে তাকালাম। আমার এই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে তারেকের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আজকে আবারও আমার কঠিন বক্তব্য দিয়ে তাকে এবং তার ধর্মীয় অন্ধ বিশ্বাসকে তুলা ধুনা করতে যাচ্ছি। স্নায়ুচাপে পীড়িত কন্ঠে তারেক আমাকে বললো
- জানি কিছু একটা বলতে চাচ্ছিস, বলে ফেল, আমি শুনার জন্য প্রস্তুত।
- আপাতত বলার কিছু নেই জানার আছে?
- কি জানতে চাস বল?
- জানতে চাই যে হাজরে আসওয়াদ কি ওই কালো পাথরটি না, যা স্ত্রীযোনির মত দেখতে রুপালি ফ্রেমে সিমেন্ট দিয়ে বাধানো? এবং যার স্থাপন মক্কার সেই মুসলিমদের পুজনীয় চারকোনা মূর্তি সরূপ কালো কাপড়ে জড়ানো ঘরের উত্তর পূর্বে দেয়ালে মাটি থেকে পাঁচ ফিট উপরে।
আমার কথাটা শুনে তারেক অনেকটা আক্ষেপের সঙ্গে জোর গলায় বললো
- তুই ধর্ম মানিস না ঠিক আছে, তাই বলে তুই আমাদের পবিত্র ধর্মীয় স্থান এবং জিনিসকে অপমান করতে পারিস না।
- কিভাবে কি অপমান করলাম? কত সুন্দুর ভদ্র ভাবে নিশ্চিত হতে জানতে চাইলাম যে কোন হাজরে আসওয়াদ, এর মাঝে তুই অপমানের কি দেখলি?
- কেন এই যে বললি স্ত্রীযোনির মত দেখতে রুপালি ফ্রেমে সিমেন্ট দিয়ে বাধানো কালো পাথর, মূর্তি সরূপ কালো কাপড়ে জড়ানো চারকোনা ঘর। এগুলো কি অপমান নয়, আমাদের ধর্মীয় স্থান এবং জিনিসের উপর অসম্মান নয়?
আমি তারেকের প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে ড্রয়ের থেকে একটি পিংপং বল এবং প্লাস্টিকের একটি ছোট্ট খেনলা গাড়ি বের করে তারেককে দেখিয়ে জিজ্ঞাস করলাম
- তারেক আমি যদি এই পিংপং বলকে ছোট গোলাকৃতির ফুটবল, আর এই প্লাস্টিকের খেলনা গাড়িকে আসল গাড়ির সঙ্গে তুলনা করি, তাতে কি আমার কোন ভুল হচ্ছে বলে মনে করিস?
- না ভুল হবে কেন? দুটি বস্তুর মধ্যে সদৃশতা থাকলে তাকে একে অপরের সঙ্গে তুলনা করাই যায়।
- তাহলে স্ত্রীযোনির মত দেখতে রুপালি ফ্রেম এবং কালো কাপড়ে জড়ানো চারকোনা ঘর বলায় ধর্মীয় স্থান এবং জিনিসের অসম্মান হয় কি ভাবে? বিষয়টাতো তোর যুক্তিতেই নির্ভুল কারন তুই নিজেই বলেছিস যে দুটি বস্তুর মধ্যে সদৃশতা থাকলে তাকে একে অপরের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আমার বক্তব্যে সম্মত না হলে বলতে পারিস, আমার কাছে আরো উদাহরণ আছে।
তারেক আমার কোথায় জবাব দিল না, বুঝলাম তার কাছে কোনো জবাব নেইও তা ছাড়া মৌনতা সম্মতির লক্ষণ।
আমি জানি তারেক এখন কিছু বলবে না, কেননা কোন কিছু সম্পর্কে বলতে গেলে সে বিষয় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, আর তারেকও অন্য পচানব্বই ভাগ মুসলিমদের মতই জেনে শুনে নয় উত্তরাধিকার সূত্রে মুসলিম। তাই আমি নিজে থেকেই আলোচনার বিষয়টিকে এগিয়ে নিতে বললাম
- তোর এবং তোর মত অজস্র ধর্মান্ধদের ঠিক একই সমস্যা। সমস্যাটা হলো তোরা তোদের ধর্মের বিষয় গুলোকে মানিস কিন্তু জানিস না, আর জানিস না বলেই মানিস। যদি জানতি, তবে আমি নিশ্চিত ভাবে লিখে দিতে পারি যে তুই কোন ধর্মেই বিশ্বাসী হতি না।
- কি জানি না আমি আমার ধর্ম সম্পর্কে? কি বলতে চাইছিস সরাসরি বল?
কথাটা তারেক বেশ উচ্চ স্বরেই বললো, বুঝলাম আমার কথাটা ওর অনুভুতিতে খুব লেগেছে। আমার কথা কারো গায়ে লাগলে সেগুলোকে নিয়ে ভাববার আমার সময় নেই, তাও সেগুলো যদি আবার হয় ধর্মানুভুতি। তারেক এবং তারেকের মত অন্যান্য ধর্মান্ধরা কি কি জানে না তাই জানাতে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম যে
- তোমাদের ওই কালো কাপড়ে জড়ানো ঘনকাকৃতির ঘরের সঙ্গে জোড়া লাগানো যে কালো পাথরটি রয়েছে সেটা তোর দৃষ্টিতে পবিত্র, তর্কের খাতিরে সেটা না হয় মেনে নিলাম। এবার তোর জ্ঞানের পরীক্ষা নেয়া যাক, ওই কালো পাথরটা কি নিখুত?
- অবশ্যই নিখুত, কেননা পাথরটি আল্লাহর তরফ হতে জান্নাত থেকে এসেছে। আর কালো পাথর, কালো পাথর বলছিস কেন? ওটার নাম হাজরে অসয়াদ, সম্মানের সঙ্গে উচ্চারণ করিস।
তারেকের হাস্যকর বিশ্বাসী মার্কা বক্তব্য আমাকে না হাসিয়ে পারলো না। একটু শব্দ করে তাচ্ছিল্যে ভরপুর খোচা দেয়া হাসি হাসলাম, প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে ধরলাম, দু তিনবার জোরে জোরে টান দিয়ে জমে ওঠা ছাই, টেবিলে রাখা ছাই দানিতে ফেলে বললাম
- পাথরটি আল্লাহর তরফ হতে জান্নাত থেকে এসেছে, শুরুতেই এমন হাস্যকর একটা কথা বলে নিজের মুর্খতার পরিচয় দিয়ে দিলি। ধর্মান্ধ হয়ে মিথ্যা বিশ্বাস নিয়ে বেচে না থেকে সত্য জানতে পড়াশুনা করলে আর এমনটা হত না, মহাজাগতিক ধ্বংসাবশেষ বিষয়ে প্রখ্যাত লেখক এবং গবেষক জন জি বার্ক এবং ভূতাত্ত্বিক রবার্ট এস দিয়েটজ কালো পাথরটির শারীরিক গুণাবলী এবং স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান বৈশিষ্ট্যগত বিক্ষেপনের উপর গভীরভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে জানিয়ে ছিলেন যে এটি একটি সামান্য অকীক পাথর। এখনও তুই যদি বলতে চাস যে কালো পাথরটি স্বর্গ থেকে আগত, তবে এমন অকিক পাথরতো জ্যোতিষি কিংবা গণকেরাও ভাগ্য পরিবর্তনের পাথর বলে বাজারে বিক্রি বেড়ায়, এবার তোর মতে ওগুলো কোথা থেকে আগত?
যা আশা করেছিলাম তাই হলো, কোন জবাব পেলাম না তারেকের কাছ থেকে। যাইহোক আমার বক্তব্য গুলো তারেকের মত মুর্খের মাথায় ঢুকুক কিংবা না ঢুকুক কান পর্যন্ত পৌছানো দরকার, তাই বলতে থাকলাম
- এবার তোকে বলি তোর দৃষ্টিতে জান্নাত থেকে আগত ওই কালো পাথর কতটা শক্তিশালী এবং নিখুত। তোমাদের মোহাম্মাদের মৃত্যুর পর কয়েক শতক জুড়েই পাথরটিকে সম্মুখীন হতে হয়েছিল অনেক গুরুতর ক্ষতির। উমাইয়া খেলাফতের দরুন মক্কায় একটি পাথরের গুলতি থেকে ছোড়া একটি পাথর এসে আঘাত হানে হাজরে আসওয়াদের উপর এবং তা পাথরটিকে কয়েক টুকরোয় ভেঙ্গে ফেলে। পরবর্তীতে আব্দাল্লাহ ইবনে জুবায়ের হাজরে আসওয়াদের টুকরো গুলোকে গলিত রূপা দিয়ে একত্রে বাঁধাই করে। ৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে শিয়া ইসমাইলী অর্থাৎ ক্বারামাতিয়ানেরা হাজরে আসওয়াদকে চুরি করে নিয়ে যায় তাদের নগরী হাযারে অর্থাৎ বাহরাইনে। ক্বারামাতিয়ান নেতা আবু তাহের আল ক্বারামাতি হাজরে আসওয়াদকে তার নিজ মসজিদ মসজিদে আল দিরারে স্থাপন করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মক্কা থেকে হজ্জকে সরিয়ে আনা, যদিও তাঁর এই উদ্দেশ্য পুরোপুরি বিফলে গিয়েছিল কারণ ইসলামী তীর্থযাত্রী অর্থাত হজ্জ করতে আসা হাজীদের সেবা এবং শ্রদ্ধা কালো পাথরটি চুরি যাওয়া স্থানের প্রতি অব্যাহত ছিল। ৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ক্বারামাতিয়ানেরা আব্বাসিদের কাছে হাজরে আসওয়াদের মুক্তিপন দাবী করেন এবং পরবর্তীতে পাথরটি একটি বস্তায় ভরে কুফার এক জামে মসজিদে ফেলে রেখে যায়। বস্তায় একটি চিরকুটও ছিল, যাতে লিখাছিল আদেশ অনুযায়ী নিয়ে গিয়েছিলাম আবার আদেশ অনুযায়ী দিয়ে গেলাম। চুরি যাওয়ার পর এই বাইশ বছর ধরে পাথরটির উপর অনেক ধকল গিয়েছিল, যার দরুন এর বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়, ফেরত পাওয়া এই পাথরটি সাতটি টুকরায় ভাঙ্গা ছিল।
এত কিছু বলার পরেও তারেক বলে উঠলো
- আমার তোর মত অত বেশি ইতিহাস জেনে কাজ নাই, ওই পাথর মানুষের পাপ শোষণ করে মানুষকে নিষ্পাপ বানানর ক্ষমতা রাখে এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।
আবার সেই তারেকের মুর্খতা সম্পন্ন ধর্মান্ধ জবাব। আমি প্রায়ই ধর্মান্ধ মুসলিমদের কাছে শুনেছি যে হাজরে আসওয়াদের আসল রং ছিল ধবধবে সাদা, তাদের বিশ্বাস যখন কেউ এই পাথরটিতে চুমু খায় তখন নাকি এই পাথরটি সেই ব্যক্তির জীবনের সকল পাপ শোষন করে নেয়। এভাবে এই পাথরটি বছরের পর বছর মানুষের পাপ শোষন করতে করতে এর রং সাদা থেকে কালোতে পরিনত হয়েছে। আমার বুঝতে খুব কষ্ট হয় যে একটি পাথর কী করে মানুষের পাপ শোষন করতে পারে? আমার এবং অনন্য বুদ্ধিমানের মত ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনে আল খাত্বাবও বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি একটি সামান্য পাথর। আমি তারেকের দিকে করুনা এবং আফসোসের দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম, আর মনে মনে ভাবছি মানুষ কতটা অন্ধবিশ্বাসী হতে পারে। কিছুদিন আগে পিস পাবলিকেশন থেকে সহিহ বুখারীর বইয়ের সেট কিনেছিলাম। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে বইয়ের সেল্ফ থেকে সহিহ বুখারীর ২য় খন্ডের হজ পর্ব বইটি নামালাম। পাতা উল্টিয়ে ৫৬নং চ্যাপটারের ৬৭৫ নং হাদিসটি বের করে তারেকের হাতে দিয়ে হাদিসটি পড়তে বললাম, একটু উচ্চ স্বরে পড়তে অনুরোধ করলাম যেন আমিও শুনতে পাই। তারেক হাদিসটি পড়ে আমার অনুরোধ রক্ষা করলো
- ওমর ইবনে আল খাত্বাব একবার হাজরে আসওয়াদের কাছে গিয়ে তাতে চুম্মন করে বললেন: আমি জানি, তুমি একটি পাথর ছাড়া আর কিছুই নও। কারও কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা তোমার নাই। আমি যদি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে তোমাকে স্পর্শ করতে এবং চুমা খাইতে না দেখতাম তাহলে আমি কখনোই তোমাকে স্পর্শ এবং চুমা দিতাম না।
হাদিসটি পড়ে অবাক হওয়া বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলো
- একটি মানুষের সারা জীবনের পাপ শোষণ করে তাকে নিষ্পাপ বানানোর থেকে বেশি উপকার আর কিছুতেই হতে পারে না। কিন্তু হাদিস অনুযায়ী যা বোঝা যাচ্ছে তা হলো পাথরটির কোন ক্ষমতা নেই কারো উপকার বা ক্ষতি করার। তবে মসজিদ মাদ্রাসার হুজুরেরা যে বলে হাজরে আসওয়াদের আসল রং ছিল ধবধবে সাদা, কিন্তু পাথরটি বছরের পর বছর মানুষের পাপ শোষন করতে করতে এর রং সাদা থেকে কালোতে পরিনত হয়েছে। তার মানে তারা মিথ্যা বলছে?
আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে ফুসফুস ভর্তি করে ধোয়া টেনে, খুব আস্তে আস্তে ধোয়া গুলো ছাড়লাম, ঠোট বাকানো একটু অবজ্ঞার ভঙ্গিতে বললাম
- না তারা মিথ্যা বলছে না, তারাও সত্য বলছে। ইসলাম হলো পৃথিবীর সব থেকে গোলমেলে ধর্ম, কারণ এই ধর্মে হাদিস এবং কুরানে নিয়ম কানুনের এত ছড়াছড়ি যে, মন চাইলেই যেকোন কাজকে কুরআনের আয়াতের দ্বারা হালাল এবং সোয়াবের কাজ বলে গণ্য করা যায়, আবার ওই একই কাজকে আরেক হাদিসের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ডের শাস্তিযোগ্য হারাম কাজ বলে গণ্য করা কোন কঠিন ব্যাপার না।
- সেটা আবার কেমন? তুই কি বলতে চাচ্ছিস ইসলাম স্ববিরোধী?
- অবশ্যই স্ববিরোধী, যেমন এইমাত্র যে হাদিসটি তুই পড়লি সেই হাদিস অনুযায়ী পাথরটি অক্ষম। আবার অন্যদিকে তিরমিজি শরিফের ৮৭৭নং হাদিসে বলা হচ্ছে, হাজরে আসওয়াদ হযরত আদম (আ)-এর সঙ্গে জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়। তখন তা দুধের চেয়েও সাদা ছিল; কিন্তু আদম সন্তানের গুনাহ একে কালো করে দিয়েছে। তিরমিজির ৯৫৯নং হাদিস অনুযায়ী হাজরে আসওয়াদ এবং রুখ আল ইয়ামানি কে স্পর্শ করলে পাপ মোচণ হয়। আবার কুরানে পঞ্চম সূরা অর্থাৎ সূরা মায়েদার ৭৬নং আয়াতে বলা হচ্ছে "বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুর এবাদত কর যে, তোমাদের অপকার বা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না? অথচ আল্লাহ সব শুনেন ও জানেন"। এগুলোকি তোর কাছে স্ববিরোধী বলে মনে হয় না?
আবার তারেকের সেই নিশ্চুপ থমথমে নিরবতা, নিরবতা ঘুচাতে আমি বললাম
- তোর কি ধারণা তোদের ঐ যোনির মত দেখতে কালো পাথরটির চুম্মন পূজা মোহাম্মাদই প্রথম চালু করেছে? কালো পাথরটি ইসলাম ধর্ম প্রচারক মোহাম্মাদের অনেক আগ থেকেই পৌত্তলিক আরবদের মাঝে বেশ পূজনীয় ছিল। মোহাম্মাদের সময় থেকেই এটি কাবার সঙ্গে যুক্ত ছিল, আর কাবা ছিল প্রাক ইসলামী সময়ের একটি মন্দির, এর ভক্তদের জন্য এটা ছিল তীর্থস্থান এবং আশ্রয়স্থল। মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রাচীন প্রথা ছিল যে তারা তাদের উপাসনার স্থান গুলো চিহ্নিত করতে ব্যবহার করত অস্বাভাবিক কিছু পাথর, এই বিষয়টির উল্লেখ পাওয়া যায় হিব্রু বাইবেল এবং এবং কোরানেও।
তোকে ততকালীন একটা ঘটনা বলি, নব্যুয়াত প্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে কাবা ঘরের পুনঃর্নিমাণের কাজ চলছিল। পুনঃর্নিমাণের সুবিধার্থে কালো পাথরটিকে সাময়িকভাবে সরানো হয়। কুরাইশরা কিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না যে কালো পাথরটিকে তাঁরা কোথায় স্থাপন করবে এবং পাথরটি স্থাপন করার সম্মানটা কাকে দেবে। পরে তারা সিদ্ধান্ত নিল যে পরবর্তী যে ব্যক্তি মন্দিরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সে-ই পাথরটি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেবে। দরজা দিয়ে পরবর্তী প্রবেশকারী ছিলেন নবী মোহাম্মদ। তিনি কুরাইশদের কাছে একটি কাপড় চাইলেন এবং পাথরটিকে সেই কাপড়ের মাঝখানে রাখতে বললেন, এরপর কুরাইশ নেতারা কাপড়টির কোণগুলো ধরলেন এবং সেটা উঠিয়ে নিয়ে যথাস্থানে রাখলেন। কুরাইশদের সন্তুষ্টির জন্য মোহাম্মাদ নিজেই পাথরটির স্থান ধার্য করেছিলেন।
তারেক এবার আমার দেয়া ইসলামিক ইতিহাসের বয়ান শুনে রীতিমত অসয্য হয়ে উঠে বিরক্ত স্বরে বলে উঠলো
- তোর এই ফালতু কথা আর শুনতে চাইনা, তুই শুধু বলে দে যে তোর দৃষ্টিতে আমাদের এই পবিত্র হাজরে অসয়াদটা কি?
আমি এবার একটু একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে, একটু নড়েচড়ে বসে কঠিন গলায় বললাম
- আমার দৃষ্টিতে পড়ে গেলে ভেঙে যায় এমন একটি জড় পাথর মানুষের পাপ শোষন করতে পারে একথা আমি মানি না| হাজরে আসওয়াদের মত একটি কালো পাথর পাপ শোষন করতে পারে তবে কয়লার খনিতে পড়ে থাকা হাজারো কালো পাথরের নিশ্চয়ই একই কাজই করা উচিত| মন্দিরের শিবের লিঙ্গের মূর্তিওতো কালো, তাতের চুমু দিলেও নিশ্চই একই ফলাফল হবে, আবার নাও হতে পারে কেননা নিষ্পাপ শিশু জন্ম দেয়ার ক্ষমতা নারী জাতির যোনিপথের ভেতরেই রয়েছে| তবে যাও আসছে সামনে হজ্জের মৌসুমে হজ্জে গিয়ে কালো পাথরে চুমু দিয়ে নিষ্পাপ হয়ে আসো গিয়ে, এমনিতেও তোর পাপের পাল্লা কম ভারী নয়।
©somewhere in net ltd.