নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবিতার প্রেমে অক্ষরের সঙ্গে শুরু হয়েছিল ঘরবসতি। এখন আমি কবিতার; কবিতা আমার। শব্দচাষে সময় কাটাই...
মিতি ও আবিরের ঝগড়া এখন নিয়মিত। দু’জনের ঝগড়ার মাঝখানে রাতুল একটা দেয়াল। রাতুলকে দেয়াল বলাটা মনে হয় ঠিক হয়নি। সে শুনলে ভীষণ ক্ষেপে যেতে পারে। অবশ্য রাতুল ক্ষেপলেও সমস্যা নেই। ওকে বোঝালে সহজে বোঝে। ও সহজে বুঝলে কী হবে? মিতি আর আবির তো বোঝে না। সো আমরা রাতুলের গল্প রেখে মিতি ও আবিরের গল্পে যাই।
বলছিলাম, ওদের ঝগড়ায় রাতুল একটা দেয়াল। এই রাতুল দেয়ালটা না থাকলে, ওই দু’জনের কেউ একজন এতো দিনে পটল তুলতো। ইতোমধ্যে রাতুল দুই দু’বার আহত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছে। একবার বারোটা সেলাই লেগেছিলো তার মাথায়। আরেকবার তো অল্পের জন্য বাম চোখটা বেঁচে যায়। তবুও চার দিন চক্ষু হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো। রাতুল বলে চোখেও তার সেলাই লেগেছিলো। মিতি নিষেধ করায় সে এখন এটা সবার সঙ্গে বলে না।
রাতুলের সঙ্গে মিতি ও আবিরের কী সম্পর্ক? মিতি ও আবিরের সম্পর্কই বা কী? আগের বর্ণনানুযায়ী রাতুলের যথেষ্ট হ্যাপা সামলিয়ে মিতি ও আবিরের মধ্যে থাকতে হয়। রাতুল কেনো থাকে? মিতি ও আবির কী নিয়ে ঝগড়া করে? এই প্রশ্নগুলো এতক্ষণে আপনার মনে উদয় হয়েছে। উত্তর জানতেও উদগ্রীব হয়ে ওঠছেন! মনে মনে একটা সম্ভাবনার কথাও হয়ত ভাবছেন! আপনার সংবেদনশীল মন রাতুলের প্রতি দয়ার্দ্র হয়ে উঠছে! আবির ও মিতিকে কষে একটা কিছু বলার চেষ্টা করছেন! এদের ঝগড়া থামানোর কোন পদ্ধতিও হয়তো ভাবছেন! অতি রসিক আপনি গল্পের এন্ডিং কী হতে পারে তা নিয়ে নিজের সঙ্গেই নিজে টস্ করতে শুরু করলেন! নিজে নিজেই প্রশ্নগুলোর একটা উত্তর ধরে নিচ্ছেন! বিশ্বাস রাখেন, আপনার কল্পনা এই রহস্যের আশপাশেও যাবে না।
মিতি ও আবিরের সঙ্গে রাতুলের সম্পর্কটাকে কী নাম দেওয়া যায়! এই নিয়ে ওরা দু’জন বেশ টেনশনে। একটা নতুন এলাকায় এসে একটা তরুণীর সঙ্গে দুইজন যুবক একই বাসায় থাকবে সেটা মানুষের মনে নানা কৌতূহল সৃষ্টি করতে পারে। যদিও রাতুল এসব বিষয়ে একদম ভাবে না। ‘আরে ধুর! রাখ তো! আজকাল মানুষের এত সময় কই? কে কোথায় থাকে, কোথায় যায় তার হিসেব কে নেয় এখন? মানুষ এখন নিজেকে নিয়েই ন’প্রহর ব্যস্ত থাকে।’ আবির রাতুলের ন’প্রহর কথাটায় হেসে ওঠে। বলে, ‘রাতুল প্রহর একটা বাড়াইলি কেমনে?’
মানুষের শিডিউল এখন এত বেশি টাইট যে, নিজেরা সময় বাঁচাতে বাঁচাতে একটা নতুন প্রহরই বাড়িয়ে ফেলেছে। আগের মানুষ সামাজিকতা আর স্বজন-সম্পর্ক ঠিক রেখে অষ্টপ্রহর বলতো। এখন এইসব সামাজিক রীতিনীতিকে নির্বাসন দিয়ে আমরা আমাদের সময়কে প্রলম্বিত করেছি। বাড়তি সময়টাকে আমি নবম প্রহর বলি। বললো, রাতুল।
সম্পর্ক বিষয়ে রাতুল জানালো, যদি সময় কখনো এমন আসে, তবে আমিই সব সামলে নেবো। তোদের এ নিয়ে কোন টেনশন করতে হবে না। রাতুলের কথাই মেনে নেয় দু’জন। আবির আর মিতি যতই বাস্তবতাবাদী হোক না কেনো, রাতুলের ওপর কোন রকমের প্রভাব তৈরি করতে পারে না।
রাতুলের পরিচয় দিয়েই শুরু করি। রাতুল শহরের এক ধনাঢ্য বাবার বখে যাওয়া সন্তান। বলা ভালো ছিলো। এখন সে পিতার পরিচয়ও দেয় না। আবার তার বখাটেপনাও নাই। অদ্ভূত এক মিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে। কী সেই মিশন? সময়ে আসবে সবই। এখন বলছি কেনো পিতাকে অস্বীকার করে সে। ঢাকায় পড়তে আসার সময় রাতুলকে তার বাবা এক সঙ্গে পুরো সাত বছরের খরচ ব্যাংক একাউন্ট করে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গিয়েছিলেন। কারণ, রাতুলের মা ছিলেন দেশের বিখ্যাত মডেল। জন্মের ছ’বছরের মাথায় রাতুলের মা তার বাবাকে রেখে সময়ের সেরা এক নায়কের হাত ধরেন। ব্যবসায়ী আফজাল সাহেব, লজ্জায় দেশ ছাড়েন।
দেশ ছাড়ার কয়েক বছরের মধ্যে তিনি আরেকজনকে বিয়ে করেন। রাতুল হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করে বুয়েটে ভর্তি হয়। তখন বাবা দেশে এসে তাকে সাত বছরের খরচ এক সঙ্গে দিয়ে যান। সময় পাল্টে যায় রাতুলের। অনিয়ন্ত্রিত জীবনের সমার্থক হয়ে যায় রাতুল। খেয়ালি জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যায় সে। হিজড়াদের সঙ্গে শুরু করে মেলা-মেশা একসময় পুরুষ হয়েও হিজড়াদের জীবনের সঙ্গে মিশে যায় সে। পৃথিবীর সকল সম্পর্ক অস্বীকার করে হিজড়া সরদারনীর কাছে সমর্পণ করে নিজেকে।
আবিরের অফিসে চাঁদা তুলতে গিয়ে আবিরের সঙ্গে পরিচয় হয় রাতুলের। আবির রাতুলকে দেখেই চিনতে পারে। ডেকে নিয়ে যায় অফিসের করিডোরে। অনেক কথাই হয় তাদের। চলতে থাকে আবিরের কাছে রাতুলের নিয়মিত আসা যাওয়া।
মিতি ভীষণ ক্ষেপে যায়। রাতুলের সঙ্গে তোমার কীসের সম্পর্ক? চিৎকার করে ওঠে মিতি। আবির রাতুলের জীবনের পুরো ঘটনা বলে। মিতি বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ভেতর দিয়ে শান্ত হয়। কিন্তু রাতুলকে ফলো করে। রাতুলের জীবনাচার নিয়ে এক ধরনের গবেষণায় মেতে ওঠে মিতি। আবির এখন মিতির প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। দু’জনের মধ্যে চলে দিনের পর দিন ঝগড়া। এইসব ঝগড়ার সময় কাকতালীয়ভাবে রাতুল এসে হাজির হয়। অল্প কথায় তাদের ঝগড়া শেষ হয়ে যায়।
সময় গড়াতে থাকে। আবির আর মিতির ঝগড়া বাড়তে থাকে। রাতুলের ওপর তাদের নির্ভরতাও বাড়তে থাকে। সবসময় আবির মিতিকে বলে, ‘আচ্ছা মিতি, বলো তো আমরা কেনো এভাবে ঝগড়া করি? আমাদের কীসের অভাব?
— আমারও তো একই প্রশ্ন! কেনো এভাবে সবসময় ঝগড়া করি? এসব করার কোন কারণ তো নাই। বলে মিতি।
— আসলে আমাদের ঝগড়াটা ছেড়ে দিয়ে সংসারে মনযোগ দেওয়া উচিত। বলে আবির।
— কী বললে! আমার সংসারে মনযোগ নেই? আমার মনযোগ তাহলে কোথায়? রেগে ওঠে মিতি।
— আরে! আমি তো বলিনি তোমার সংসারে মনযোগ নাই। বলছি আমরা দু’জনকেই সংসার নিয়ে আরো সিরিয়াস হতে হবে।
— আবির আমি সব বুঝি। সব বুঝি। তুমি কখন কীভাবে, কী এঙ্গেলে কথা বলো, আমি সবই বুঝি।
আবির কথা বলতে না চাইলেই কথা তার থামে না। থামে না মিতিরও। শুরু হয়ে যায় আবার ঝগড়া।
বারান্দায় রাতুলের ডাক শুনা যায়। তোরা তো মানুষ হলি না। রাখ রাখ। থাম। রাতুল দুই মিনিটেই ঝগড়া থামায়।
এভাবে চলতে চলতে একদিন রাতুল পথে ফেরে। জীবনকে বুঝতে পারে। নতুন জীবনের সন্ধান পায় রাতুল। আবিরের প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞতায় নুয়ে আসে রাতুল। মিতিকেও শ্রদ্ধার আসনে বসায়। নেমে পড়ে সংগ্রামের আরেক অধ্যায়ে। আবির, মিতি আর রাতুল মিলে গড়ে তুলে একটি এনজিও। হিজড়াদের নিয়ে কাজ শুরু করে তারা।
রাতুল বাবার কাছে কিছু ডোনেশন চাইলে, তার বারা তাকে বলেন, ‘তোমাকে যা দেওয়ার সব এক সঙ্গে দিয়ে দিয়েছি। নতুন করে তোমাকে আমার দেওয়ার আর কিছু নেই। তুমি জানো আমার এখন সংসার আছে। খরচ আছে। আমি তোমার জন্য যা করার তার সবই করেছি। তুমি তা ধরে রাখতে পারোনি। তাতে আমার কোন দায় নেই।
— বাবা! তুমি পৃথিবীর ধনী দেশে গিয়ে মনটাকে ধনী করতে পারোনি। আমি তোমার কাছে আমার জন্য চাইনি। চেয়েছি একটা এনজিওর জন্য। অথচ তুমি আমাকে নানা কথা শুনাচ্ছো। আমি তোমার সন্তান। তোমার কাছে আমার চাওয়া থাকতেই পারে। অথচ পশ্চিমাদের মতো তুমি কেমন করে কাঠখোট্টা বক্তব্যে পিতা-পুত্রের সম্পর্কটাকে প্রায় অস্বীকার করছো!
— দেখো, আমাকে জ্ঞান দেওয়ার কিচ্ছু নেই। আমি পিতা হিসেবে যা করার করেছি। কিন্তু তোমার মা! তারও তো দায়িত্ব ছিল। সে কি করেছে তোমার জন্য? অথচ আমার কাছ থেকে তোমাকে লালন-পালনের জন্য কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে।
রাতুল বাবার এমন কথায় চুপ করে যায়। ফোন কেটে দেয়। নম্বরটা ফোনবুক থেকে ডিলেট করে দেয়। মনে মনে বলে, পৃথিবীটা উন্নত হচ্ছে, আবার মানুষের মধ্যে জান্তব চরিত্রও বাড়ছে। হেসে ওঠে নিজেই। মনে পড়ে তার স্বল্প সময় আগে অতীত হওয়া অর্ধ যুগের ইতিহাস। ‘কতো না মানুষকে কতো না কৌশলে নাজেহাল করেছি।’ কাঁদতে থাকে রাতুল।
রাতুলের ক্রমাগত চাপে মিতি আর আবির একজন মনোবিদের কাছে যায়। মনোবিদের চেম্বারে দু’জনকে পাঠিয়ে রাতুল বসে থাকে। মনোবিদ জিজ্ঞেস করে, আপনাদের ঝগড়ার কমন টপিক কি?
— আসলে তেমন কোন কমন টপিক নেই। এমনিতেই শুরু হয়ে যায়। বললো আবির।
— যে কোন একটা আলাপ পজেটিভ হোক আর নেগেটিভ হোক ভালোয় ভালোয় শুরু করি কিন্তু সেই আলাপটা শেষ হয় ঝগড়া দিয়ে। বললো মিতি।
— আপনারা বিয়ে করেছেন কতোদিন হল? জানতে চাইলেন ডাক্তার।
এই প্রশ্নে দু’জনই চোখ চাওয়া চাওয়ি করে। কোন উত্তর আসে না। মাথা নিচু করে বসে থাকে দু’জনই। ডাক্তার বলেন, আপনাদের সমস্যাটা সমাধানের জন্য আমাকে সবকিছুই বলতে হবে। কিছু গোপন করলে, ফলাফল আসবে না।
আবির বলে, ‘দেখুন ডাক্তার! বিয়ে একটা সামন্তবাদী চিন্তা। এর মাধ্যমে নারীকে আসলে পণ্য বানিয়ে ফেলা হয়। আমরা প্রচলিত কোন বিয়েতে আস্থা রাখি না। তবে আমাদের একসঙ্গে বসবাস শুরু হয়েছে আজ চৌদ্দ বছর। মিতি বলে, ‘বিয়ে মানুষকে চিরদিনের জন্য পরাধীন করে দেয়। জীবনকে একটা চক্রে বেঁধে ফেলে। মানুষের প্রয়োজন হয় পরিবর্তনের। বিয়ের বন্ধন পরিবর্তনের পথে প্রধান বাঁধা।’
— দেখুন, সুখের জন্য আপনাকে অবাধ স্বাধীনতা ত্যাগ করতে হবে। শান্তির জন্য আপনাকে কিছু শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হবে। আমি আপনাদের এই চিন্তা-ভাবনা নিয়ে কিছু বলছি না। তবে, যদি আপনারা সুখে-শান্তিতে একই ছাদের তলে থাকতে চান; তাহলে আপনাদের সন্তান নিতে হবে। সন্তান হলেই এসব আপনা-আপনি শেষ হয়ে যাবে। আপনাদের ঝগড়ার একটা অবচেতন কারণ আছে। তাহলো, আপনাদের কারোরই কোন পিছুটান নেই। দু’জনই বড় চাকরি-বাকরি করে বিত্তের মালিক হয়েছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে পারছেন না। ফলে এসব ঝগড়া হচ্ছে। খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন আপনাদের ঝগড়ার কারণগুলো কোন কারণই নয়। অথচ প্রতিদিন ঝগড়া করছেন। কখনো-সখনো আহতও হচ্ছেন। এসব হলো আপনাদের নিয়মের বাইরে গিয়ে, মানবিক প্রবণতার বাইরে গিয়ে জীবন পরিচালনার ফাইনাল রেজাল্ট। সন্তানের মাতা-পিতা হন। আশা করা যায়, সুখি হবেন।
ডাক্তার দেখানোর ছয় মাস পর তারা নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। দুই বছর পরে একটি ছেলে সন্তান আসে আবির আর মিতির সংসারে। ইতোমধ্যে রাতুলের ঠিকানা হয়েছে তাদের পাশের ফ্ল্যাটে। কেমন করে যেনো আবির আর মিতির ঝগড়াও থেমে গেছে জীবনের জন্য।
রাতুল, আবির আর মিতি বসে আছে আবিরের বাসায়। এমন সময় এই বিল্ডিংয়ের মালিক ভদ্র মহিলা এসে নক করেন। আবির দরজা খুলে বাইরে আসে। মহিলা বলেন, প্রায় পনেরো বছর পরে দেশে আসলাম। কেয়ারটেকার বললো আপনাদের ঝগড়া-ঝাটি নাকি থেমে গেছে। আমি আসলে আসছি আপনাকে বলতে যে, আগামি মাসে আপনি আমার বাসা ছেড়ে দেবেন।
— ম্যাডাম কেন? কোন সমস্যা। আমরা তো আপনার বাসার জন্য সমস্যা তেরি করে এমন কোন কাজ করিনি। আমরা তো আর ছয়টি মাসই থাকবো। এর পর আমাদের বাড়ির কাজ শেষ হবে তখন চলেই যাবো। আগেই কেনো আমাদের যেতে বলছেন।
— বলবো না। পাঁচটি বছর ধরে আপনারা দুইজন মানুষ একজন স্ত্রী নিয়ে একই ঘরে থাকছেন। মহল্লার মানুষ এসব নিয়ে কানাঘুষা করে। সেসব না হয় করতো। কিন্তু আমি আসার পরপর এলাকার গণ্যমান্য লোকজনও এটা নিয়ে কথা তুলছেন। বলছেন আপনাদেরকে বাসা থেকে বিদেয় করতে। তারা আরও আগেই করতো। কিন্ত আমাকে সম্মান করে বলেই কিছু করেনি।
— ম্যাডাম! লোকজন বললো আর আপনি সব বিশ্বাস করে ফেললেন? আমাদের কাছে তো জানতে পারতেন কেন আমরা একসঙ্গে থাকছি। কি কারণে দু’টি পুরুষ একটি মেয়েলোককে নিয়ে একই বাসায় থাকছি। এর ভেতরে কোন রহস্য আছে কি না? বৃহৎ কোন ঘটনা আছে কি না? তা তো আপনার জানার দরকার?
আবিরের কথায় ভদ্র মহিলা সকালে সবার সঙ্গে একত্রে কথা বলবেন বললেন। তবে আবিরকে বলেন আপনি আমার ড্রইংয়ে আসেন। কথা বলি। আবির ঘরে গিয়ে মিতি আর রাতুলকে সংক্ষেপে ঘটনা বলে মালিকের ফ্ল্যাটে যায়।
‘ম্যাডাম দেখুন রাতুল দেশের একজন বিখ্যাত মডেলের ছেলে। যদিও রাতুল তার মায়ের নাম বা পিতার নাম কোনটাই বলবে না। তবে আমি সেটা জানি। অপর দিকে মিতিও একজন বিখ্যাত নায়কের মেয়ে। আজকে মিতিও তার পিতার নাম মুখে আনে না। কারণ, তার পিতা একজন মডেলকে বিয়ে করেছিলো তার মাকে ডিভোর্স দিয়ে। সেই ডিভোর্সের যন্ত্রণা সইতে না পেরে তার মা সুইসাইড করেছিলো। কিন্তু তার বাবার নতুন স্ত্রী সেই মডেল তাকে মনে নেয়নি। সেজন্য তার জায়গা হয়েছিল সেভহোমে। সেই থেকে মিতির পৃথিবীতে কেবল আমিই তার আপন।
আমাকেই মিতিকে নিয়ে একসঙ্গে থাকার কারণে নিজের পরিবার ছাড়তে হয়। পরিবার মনে করে সেভহোমের একটি মেয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হতে পারে না। আমি আজ সতেরো বছর ধরে নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। অথচ এসব ভেতরের কথা কেউই জানে না। জানার প্রয়োজনও মনে করে না। যাক সেসব…
পৃথিবীর সাময়িক মোহে সেই মডেল আর সেই নায়ক একদিন সন্তানদের রেখেই নিজেরা নিজেদের সুখের জন্য পৃথিবীর উন্নত দেশে পাড়ি[ জমায়। আমিও মিতির সঙ্গে আধুনিক পৃথিবীর জীবন-যাত্রার আধুনিকিকরণের চেষ্টায় পৃথিবীর সব প্রথা-নিয়ম বাদ দিয়ে একই ছাদের নিচে বাসবাস করতে থাকি। সময় একদিন আমাদের বোঝায়, যেভাবে আছি সেভাবে সুখি হওয়া সম্ভব নয়। নতুন করে পৃথিবীর নিয়মের কাছে হারলাম। প্রচলিত নিয়মে বিয়ে করলাম। কিন্তু রাতুলের ভাগ্যে সেটা আর সম্ভব নয়। রাতুল একসময় জীবনের উচ্ছ্বন্নকালে হিজড়াদের সঙ্গে মিশে যায় হিজরাদের সরদার তাকে চিরদিনের জন্য পুরুষ হিসেবে পঙ্গু করে দেয়। তার যাওয়ারও জায়গা নেই। তাই সে আমাদের সঙ্গে থাকে। নিজের এনজিও নিয়ে মেতে থাকে। যখন তীব্র বিষন্নতায় পেয়ে বসে তখনই গান গায়। অসম্ভব তার গানের গলা। আমি আর মিতি তার গানেই নতুন করে শক্তি পাই।’
‘আমি কি ওদের সঙ্গে রাতেই কথা বলতে পারি?’ বললেন বাড়ির মালিক। আবির বলল, ‘না। সারাদিন নানান কাজ করে, এখন ওরা বেশ ক্লান্ত হয়ে শুয়েছে। সকালে কথা হবে।’
সকাল সাতটা। বাড়ির মালিক বসে আছেন বারান্দায়। আবির, মিতি আর রাতুল গিয়ে দাঁড়াল তার সামনে। শুরু হলো সচিৎকার কান্না। প্রচণ্ড ঘৃণায় মিতি এককালের জনপ্রিয় মডেল ও বর্তমানে মার্কিন প্রবাসী এই বাড়ির মালিক নবনিতাকে থাপ্পর বসিয়ে দেয়। রাতুল জড়িয়ে ধরে। নবনিতা কোন কথা বলে না। চোখের জলে কেবল নিজের গণ্ডদেশ ভিজিয়ে যায়।
আবির এই প্রথম জানতে পারে মিতি আর রাতুল এদের আসল নাম নয়।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৮
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। তবুও তো লাগলে। না লাগলে কী করতাম
২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৩
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: পড়তে পড়তে সব তালগোল পাকিয়ে গেল।
তবে সিনেমাতে এসব চরিত্র দেখা যায়।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: স্যরি! তালগোল পাকিয়ে দেওয়ার জন্য।
হুমম! সিনেমাও তো গল্পই। গল্প থেকেই তো সিনেমা। হ্যাঁ এই গল্পটাতে সিনেমাটিক কিছু ব্যাপার-স্যাপার আছে। সেটাও স্বেচ্ছাকৃত।
ধন্যবাদ পাঠ ও মন্তবের জন্য।
৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৯
শায়মা বলেছেন: ভাইয়া তুমি কি আজকাল সেভহোমে জব করছো নাকি? আগের গল্পও পড়লাম এটাও।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৮
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: না আপু সেভহোমে জব করছি না। কনটেম্পোরারি মনস্তত্ব নিয়ে পড়ছি। দেখছি। ভাবছি।
ধন্যবাদ আপু।
৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৫
সুমন কর বলেছেন: হুম, মোটামুটি লাগল।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৩
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: ধন্যবাদ। পাঠ ও মন্তব্যের জন্য।
৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৮
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: গল্প বলার ধরনা অসাধারণ, নতুন এক আঙ্গিক| পাঠককে ধরে রাখার চমৎকার এক ক্ষমতা আছে এই স্টাইলের| পড়ে ভাল লেগেছে| গল্পের প্লটটাও অন্যরকম| শেষটা আকস্মিক| সব মিলিয়ে অনন্য এক গল্প|
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৭
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যে প্রীত হলাম।
ভাল থাকবেন নিরন্তর।
৬| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৯
আমিই মিসির আলী বলেছেন: ধৈর্য্য পরীক্ষা দিলাম।
তয় ভালো লাগছে
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩০
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
শুভকামনা নিরন্তর।
৭| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৩
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: বুঝতে সময় লেগেছে , তবে ভাল লেগেছে । লাইক হাকাইলাম -
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৫
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
শুভকামনা নিরন্তর।
৮| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৪
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
ভাল লাগা রইলো ভাই।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৭
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: থেঙ্কিউ ভাই...
৯| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩
আহমেদ জী এস বলেছেন: সুপান্থ সুরাহী ,
বেশ তালগোল পাকানো লেখা হয়ে গেছে। শুরুতে যে ষ্টাইলের চমক ছিলো ,তার দেখা পাওয়া যায়নি বেশীর ভাগটা জুড়েই ।
তবুও বলবো , একদম খারাপ নয় ।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
ভাল থাকবেন। শুভকামনা।
হ্যাঁ গল্পটা একটু তালগোল পাকানোই। তালগোল পাকানো সময়ের খণ্ডচিত্র তো!
১০| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২০
হাসান মাহবুব বলেছেন: লেখার স্টাইলে নিজেকে ভাঙার ব্যাপক প্রয়াস লক্ষ্যনীয়। এটা সাধুবাদযোগ্য।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৩
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: আপনার মন্তব্যে প্রীত হলাম।
শুভেচ্ছা জানবেন।
১১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৬
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: বাড়ির মালিক কি মিতির বাবার দ্বিতীয় বউ ?
যেরকম ভাবে লেখাটা শুরু হয়েছিলো শেষ টা সেরকম না। এই গল্পের থীম নিয়ে রাতুল কে নিয়ে আলাদা গল্প লেখা সম্ভব তেমনি মিতির জীবন নিয়েও সম্ভব।
সব ঘটনাই খুব দ্রুত ঘটে গেলো এমন মনে হচ্ছে।
গল্প মোটামুটি লাগলো।
শুভকামনা রইলো
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৬
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: হ্যাঁ দ্বিতীয় বউ।
গল্পটাতে ছোট ছোট দৃশ্য নির্মাণ করে সামনে যেতে চাচ্ছিলাম। বক্তব্য ও বর্ণনায়ও কিছুটা ভিন্ন ঢং আনতে চাইছিলাম। বর্তমান সময়ের জটিলতাকে ধরতে চেয়েছি গলল্পের জটিলতায়।
হুমম! বাকি থিমগুলো নিয়ে ভাবলে আরও কিছু গল্প বেড়িয়ে আসতে পারে। তবে আমি আপাতত তেমনটা ভাবছি না।
ছোটগল্পের জন্য ঘটনাগুলো দ্রুতই ঘটানো হয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ।
১২| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২০
শান্তির দেবদূত বলেছেন: যদিও শেষের দিকে প্যাচ লেগে গেছে, তবে ভাল লেগেছে। বর্ননাভঙ্গি সাবলিল স্মুথ। শুভেচ্ছা রইল।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৯
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: মোটামুটি লাগলো