![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমটা ভেঙে গেল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে আর হালকা কুয়াশায় চারদিক ঘেরা। পাশে আমার স্ত্রী মানে জুঁই ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায় মেয়েটাকে অনেক মায়াবী লাগে। মাথাটা ব্যথা করছে , তাই এখন চা দরকার। বিছানা থেকে নেমে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালাম। জুঁইকে আর ডাকলাম না। বেচারীকে অযথা ডিস্টার্ব করে লাভ নেই।
মগ ভরে চা নিয়ে বারান্দায় এসে বসলাম। চা এর মগে চুমুক দিতে দিতে চারপাশ টা দেখছি। চা শেষ করে চোখটা বন্ধ করলাম আর হঠাত্ করে কিভাবে যেন অতীতে হারিয়ে গেলাম ...
তখন মাত্র ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয়েছি। নতুন পরিবেশ , ডিপার্টমেন্টের সবার সাথে ও নতুন পরিচয়। আস্তে আস্তে সবার সাথে চলাফেরা , কথাবার্তা বাড়তে থাকে। সবার মধ্যে ও আমরা ৫ জন ছিলাম আলাদা। আমি , নাহিদ , শরীফ , জুঁই আর শিমু। গ্রুপওয়ার্ক গুলো আমরা একসাথে করতাম আর এভাবেই আমরা নিজেরা ই একটা গ্রুপ হয়ে গেলাম। অনেক ভাল বন্ধু ছিলাম আমরা। নাহিদ আর শরীফ ছিল একদম অলস , কোন কাজ ই ওদের কে পাওয়া যেত না। দুইটা মিলে সারাদিন ঘুরে বেড়াত। প্রজেক্টের সব কাজ করতে হতে আমাদের তিন জনের। তারপর ও কারো প্রতি কোন অভিযোগ ছিল না। আবার জুঁই আর শিমুর বন্ধুত্ব ছিল কলেজ লাইফ থেকে। বলতে গেলে তারা একজনকে ছাড়া অন্য জন চলতে ই পারতো না।
কিন্তু , সবকিছুর উপরে ছিল আমাদের বন্ধুত্ব। সুযোগ পেলে ই আড্ডায় মেতে উঠতাম আমরা। মাঝে মাঝে অন্য সবার মিস গেলে ও আমার আর শিমুর আড্ডা , দেখা হওয়া কোনদিন মিস যেত না। অনেক গভীর ছিল আমাদের দুইজনের বন্ধুত্ব। মাঝে মাঝে রাতভর ফোনে গল্প করতাম দুইজন। মেয়েটা সব সময় আমার পাশে থেকে সব হ্মেত্রে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে যেত। আর এসব কারণেই ওর প্রতি একটু বেশি দুর্বল ছিলাম।
শিমুর প্রতি এই দুর্বলতা ই যে ভালবাসায় রূপ নিবে তা কখনো ভাবতে পারি নি। থার্ড ইয়ারে উঠে বুঝলাম যে আমি শিমুকে ভালবাসতে শুরু করেছি কিন্তু একথা ওকে কখনো বলতে পারি নি। ভয় ছিল মনে যদি শিমু আমাকে ভুল বুঝে !
তখন আমার অবস্থা খারাপ ছিল। পড়ালেখায় মন ছিল না , উদাস থাকতাম। ব্যাপারগুলো কারো চোখ এড়াতে পারলো না। সবার ই এক ই প্রশ্ন ছিল , কি হয়েছে তোর ? তবে নাহিদ মনে হয় এক ধাপ বেশি বুঝে ফেলেছিল। বেটা এসে সরাসরি বললো , আমি সিউর তুই প্রেমে পড়েছিস সো , লুকোচুরি না করে বল ! না লুকিয়ে নাহিদকে সব বলে ফেললাম। আমার কথা শুনে নাহিদ তো হাসতে হাসতে শেষ। ওর কথা আমি কেন এইকথা এতদিন ধরে শিমুকে বলি নি। বললে শিউর শিমু আমাকে গ্রহণ করবে !
আমি বেচারা দ্বিধায় পড়ে গেলাম। কি করা যায় ? আর ঐদিকে নাহিদ শরীফকে ও সব বলে দিল। তা ও ভাগ্য ভাল জুঁই বা শিমুকে বলে নাই ! এরপর থেকে শয়তান দুইটা আমাকে দেখলেই খালি হাসে।
তখন আবার বর্ষাকাল চলে। তো হঠাত্ একদিন ক্লাস শেষে বের হলাম সবাই আর তখন ই শুরু হল বৃষ্টি ! শরীফ বললো আজকে সবাই একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবো। আমার না করা সত্ত্বেও বাকি সবাই রাজি হয়ে গেল। কি আর করা রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর বৃষ্টিতে গোসল করছি। জুঁই আর শিমু সামনে ! আমি , নাহিদ আর শরীফ পিছনে। হঠাত্ করে নাহিদ একটা কদম ফুল হাতে ধরিয়ে বললো , যা শিমুকে গিয়ে প্রপোজ কর। আমি তো অবাক ! আমি না করলাম। কিন্তু , দুইটা আমাকে টানতে টানতে শিমুর সামনে নিয়ে গেল আর জুঁইকে সরে যেতে বললো। ওরা তিনজন একপাশে আর আমরা দুইজন একপাশে। আমার হাতে কদমফুল। আর সংকোচ না করে ফুলটা শিমুর সামনে ধরে বলে ফেললাম ,
~ আমি তোকে ভালবাসি
~ গাধা , সে তো আমি আগে ই জানি ! তোর এতদিন লাগলো এই কথা বলতে ? আর কদম ফুলদিয়ে কেউ প্রপোজ করে ?
~ এখন গোলাপ পাব কই ?
~ হইছে আর পেতে হবে না ! বোকার মত দাঁড়িয়ে না থেকে হাতটা ধর !
বুঝতে পারলাম এইসব ওদের আগের প্ল্যান করা। পিছনে তাকিয়ে দেখি শয়তান তিনটা খিলখিল করে হাসছে !
আমার আর কি করার আছে ? ধরলাম শিমুর হাতটা। তারপর হাঁটতে লাগলাম দুইজন।
সেই যে হাত ধরেছিলাম তা আর কখনো ছাড়া হয় নি। বছরের বছর ধরে একে অপরকে ভালবেসে এসেছি আমরা। একটা দিনের জন্য কেউ কাউকে মিস করতে চাই নি। স্বপ্নের মত ছিল আমাদের ভালবাসা। সারাজীবন একসাথে কাটাবো এই ছিল আমাদের বিশ্বাস ! কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ছিল অন্য ইচ্ছা।
মাস্টার্স ফাইনাল পরীহ্মার কিছুদিন আগে শিমুর ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে। ডাক্তার শিমুকে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এক সপ্তাহের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার সব ব্যবস্থা হয়ে যায়। বিদেশ যাওয়ার দুই সপ্তাহ পর অপারেশনের তারিখ ঠিক হয়। এই দুই সপ্তাহের প্রতিদিন আমরা কথা বলেছি। শিমুকে বুঝিয়েছি যে তোমার কিছু হবে না। কিন্তু শিমু শুধু কেঁদেই যেত !
দুই সপ্তাহ পর শিমুর অপারেশন হয়। আমি আল্লাহর কাছে এটা ই চেয়েছিলাম আল্লাহ যেন শিমুর বদলে আমাকে নিয়ে যান কিন্তু শিমু যেন সুস্থ হয়ে উঠে ! কিন্তু আল্লাহ আমার ডাক শুনেননি। আমাকে একা ফেলে শিমু চলে যায় না ফেরার দেশে !
শিমুর লাশ দেশে আনার পর যথন ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম তখন ওর মা শিমুর লেখা একটা চিঠি আমার হাতে ধরিয়ে দেন । আমি চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম ...
আরিফ ,
আমি জানি না আমার কি হবে ! আমি আবার তোমার কাছে ফিরে আসতে চাই। যদি ফিরে আসি তাহলে আবার দেখা হবে আর যদি না আসি তাহলে তুমি জুঁইকে আপন করে নিও। জুঁই তোমাকে অনেক ভালবাসে ! আমি জুঁইএর ডায়েরী পড়ে সব জানতে পেরেছি। আর এটা ই আমার শেষ ইচ্ছা। প্লিজ , তুমি আমার ইচ্ছাটা পূরণ কর। ভাল থেকো আমার ভালবাসা।
ইতি
তোমার শিমু
সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম চিঠিটা পড়ে । প্রতিদিন কাঁদতাম শিমুর কবরের পাশে বসে !
এরপর শুধু শিমুর শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য ই আমি জুঁইকে বিয়ে করি । কিন্তু আমি কখনো ই জুঁইকে শিমুর জায়গা দিতে পারি না । তারপর ও চেষ্টা করি জুঁইকে ভালবাসার .....
চোখ বন্ধ অবস্থায় ই হঠাত্ জুঁইয়ের হাতের স্পর্শ পেলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। নাস্তা খেতে আস বলে চলে গেল।
নিজেকে অপরাধী লাগছে আজ। আর কষ্ট দিতে পারব না এই মেয়েটাকে , এতে হয়তো শিমু ও কষ্ট পাচ্ছে !
শিমু তুমি যেখানেই থাক ভাল থেকো , শান্তিতে থেকো।
©somewhere in net ltd.