নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাভার ট্রাজেডি: যেন এক লাশের মিছিল

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৪৩

বন্যার পানির মত আসছে লাশ। বাতাসে ভেসে আসছে পঁচা লাশের গন্ধ। নারী পুরুষের আহাজারিতে ভারি হচ্ছে সাভারের আকাশ বাতাস। থমকে দাঁড়িয়েছে সাভারের মানুষ। কারো মুখেই হাসি নেই। কিভাবে হাসি থাকবে বলেন, দুপুরে যার সাথে ভাত খাওয়ার কথা ছিল সে প্রিয় মানুষটি কিনা এখন পরপারে। এর চেয়ে দুঃখজনক কোন সংবাদ বাংলাদেশে আজকের জন্য অন্তত ঘটেনি। যদিও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রতিদিন লাশ পড়ছে দেশে, গুম, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। আমাদের দেশের সরকারী দল ও বিরোধী দল নিজ নিজ অবস্থান থেকে নাশকতামূলক কাজ করেই চলছে। কবে যে তাদের হুশ-জ্ঞান হবে একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন। আবার ফিরে যাই মূল কথায়। বলছিলাম সাভার বাজারের কথা।

একজন মেয়েকে দেখলাম মোবাইলে আপন জননের সাথে কথা বলে জানাচ্ছেন-‘আমি বেঁচে আছি আমার জন্য চিন্তা করবেন না, দোয়া করবেন।’ আর একজনকে দেখলাম মাথায় হাত দিয়ে কান্নাকাটি করছে প্রিয় জনের জন্য। আরেক জনকে দেখলাম বুক থাপড়িয়ে আহাজারি করছে। আরেক জনকে দেখলাম মানুষের ভিড় ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আপন জনকে উদ্ধারের জন্য। সে তাকে বাঁচাতে পারবেনা। উদ্ধার করতেও পারবেনা। এটা তার আবেগ আর ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এমনটাই দেখেছি টিভির পর্দায়।

গত ২৪ এপ্রিল বুধবার সকালে সাভার বাজারের রানা প্লাজায় ৮ তলা বিল্ডিংয়ে এক ভয়াবহ ভবণ ধসের ঘটনা ঘটে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় ৭৬ জনের প্রাণহানির খবার প্রচার করলেও শেষ পর্যন্ত এর সংখ্যা পাঁচ শতাধিকে উত্তীর্ণ হতে পারে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় তিনশজনকে এর সংখ্যা এক হাজারে ছাড়িয়ে যাবে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভবণ ধসের ঘটনা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। যদিও এর আগে মহাখালীর একটা ভবণ ধসে প্রায় ১৫০ জনের মত মানুষ মারা গিয়েছে। এ ঘটনায় নব নিযুক্ত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া, শোক প্রকাশ করেছেন। সাভার থেকে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিএনপি। ঘটনার পর পর স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্বরাষ্টমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি উদ্ধার কাজ পরিদর্শন করছে। উনারা গিয়ে উদ্ধার কাজের অগ্রগতি তো দূরের কথা উল্টো ব্যাহত করতে দেখা যায়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সাধারণ মানুষরা তাদেরকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আমাদের স্বরাষ্টমন্ত্রী মহোদয়কে দেখলাম একজন পুলিশ সদস্যের ছাতার নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন! আর স্বভাব সূলভ ভঙ্গিতে কথা বলছেন। কখনোবা হেসে হেসেও কথা বলতে দেখা গেছে। এই না হলে আমাদের দেশের ডক্টরেট স্বরাষ্টমন্ত্রী। এ ঘটনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে- র‌্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, স্থানীয় এলাকাবাসী।

স্থানীয় সূত্র জানায়: আগেরদিন রানা প্লাজার এ ভবণটিতে ফাঁটল দেখা দেয়। এরপর সিলগালা করে রাখা হয় ভবণটি। কিভাবে সকালে এত শ্রমিক এ ভবণে কাজ করার জন্য ঢুকেছে তা গভীরভাবে চিন্তার বিষয়; রহস্যজনক বটে। এ ভবণটির নির্মাণ কাজ ২০০৭ সালে শুরু হয়ে ২০১০ সালে শেষ হয়েছে। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে ভবণটি ধসে পড়ল। এর নির্মাণ কাজে ত্রুটি ছিল বলে স্থানীয় জনগণ এবং সচেতন মহল মনে করেন। এ ভবণটির মালিকের নাম মো: সোহেল সে স্থানীয় আবদুল খালেকের ছেলে। এ ঘটনায় তিনিও আহত হয়েছেন।

এভাবে আর কত অসহায় মানুষ মারা গেলে আমাদের দেশের কর্তা ব্যক্তিরা শান্তি পাবে তা বলা যায় না। আমাদের দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অবস্থা হলো নিরোর মতো। যিনি দেশ ধ্বংস হওয়ার সময়ও মনের সুখে বাঁশি বাজিয়েছেন। গার্মেন্টস কর্মীদের জীবন নিয়ে আর কত রাজনীতি চলবে আমাদের দেশে। গত বছর তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে এক’শ জনের বেশি মারা গেছে। আরো কত মারা যাবে কে জানে। এভাবে প্রতিদিন আমাদের দেশের অসহায় মানুষ মারা যাচ্ছে। এতে অবশ্য কারো শাস্তি হয়নি হচ্ছে না ভবিষ্যতে হবে কিনা জানি না। যারা এসব গার্মেন্টস্ কর্মীদের শ্রমে-ঘামে মাখানো টাকায় বড় লোক হচ্ছে, গুলশান, ধানমন্ডি, বনানীতে বাড়ি কিনছেন, লেটেস্ট মডেলের গাড়ি হাঁকিয়ে চলছেন। সে সব নাটের গুরুদের কোনই শাস্তি হচ্ছে না। কারণ, তাদের অনেক শক্তি। উপরে নিচে তাদের অনেক হাত। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব সাধারণ মানুষদেরকে নিয়ে খেলা করার জন্য তাদের জীবন লিজ নিয়ে নিয়েছেন তারা। এখন যেমন খুশি তেমন খেলবেন। কেউ তাদেরকে কিচ্ছু বলতে পারবে না। কেননা তারা সরকার চালায়; সরকার তাদেরকে চালায় না। তারা হলেন সরকারের সরকার! এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা থেকে আমরা কি নিষ্কৃতি পাব না।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:০৬

রাজনীতির ভাষা বলেছেন: এ ঘটনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে- র‌্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, স্থানীয় এলাকাবাসী।

ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণধররা কোথায়, বিরোধীদলের ডাকা হরতালে তাদের স্লোগানইতো সবচেয়ে জোরে শোনা যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.