নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য পলাশ

সূর্য পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাই জীবনের নিশ্চয়তা, চাই স্বাভাবিক মৃত্যু

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩৫

সূর্য পলাশ





শিশির আর কুয়াশা দুই বন্ধু । বিকেলে হাটতে -হাটতে ওরা বস্তিতে যাচ্ছে । সন্ধ্যার পরে ঐ একটু-আধটু জিনিস সেবন না করলে ওদের কোন কিছুই ভাল লাগেনা । যাচ্ছে তো দুজন, সেবন করবে আরও অনেকেই । কিছুক্ষণ যেতেই সাদা রঙের একটা ডিবির গাড়ি দেখতে পায় শিশির, আর অমনিই সে কুয়াশাকে প্রশ্ন করে যে, আচ্ছা মামা ক তো এমনি করে কি দেশ চলবো ? দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ থাকলে কি হইব আমাগো ? পুত্তিদিনি এতো মানুষ পুইরা মারতাছে.....................শিশিরের কথা শেষ না হতেই কুয়াশা বলতে লাগলো - ভাল তো, ভাল না ? শুভ হরতাল, অবরোধ চলছে ! ক্লাসে যেতে হয় না, বিরক্তিকর পাঠ্য বই থেকে নিজেদের অনেক দূরে সরিয়ে রাখতে পারছি, সবার সাথেই ভার্চুয়াল যোগাযোগ দিয়েই কাজ চলছে ! আমাদের তো কোন অসুবিধা হচ্ছে না । আমরা তো ভালই আছি । এভাবেই ব্যস্ততার ভাব দেখিয়ে ওরা ডিবির গাড়িটা ছাড়িয়ে বস্তিতে ঢুকে পড়ল । ঢুকতে-ঢুকতে কুয়াশা বলল শোন মামা, ডিবি দেখলেই এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই । কারণ দেশের অবস্থা যখন খারাপ থাকে তখন ইটটু-আটটু মাদক আটকের ধান্দায় ওরা থাকেনা । ওদের মাথায় এখন বড় বড় ধান্দা ঘুরতাছে, বুঝলি মামা ! তাছাড়া দেশের এমন অবস্থায় সরকারও মনে হয় চায়, যুব সমাজের একটা অংশ মাদক নিয়ে ব্যস্ত থাকুক । এতে করে বিরোধী দল আন্দোলন করার কর্মী অনেক কম পাবে । এছাড়া এই মাদকাসক্ত শ্রেণীটি মাদকের মোহে রাষ্ট্র ও রাজনীতি কোন কিছুই ভাবারও সুযোগ পাবেনা । এসব তো ভাল, ভাল না ? শিশির মাথা দুলিয়ে কুয়াশাকে বোঝাতে চাইল যে, ব্যাপার গুলো ওকেও প্রস্নবিদ্ধ করেছে । আমি ওই বস্তির ভেতর দিয়ে কুরগাও প্রাইভেট পড়াতে যাচ্ছিলাম । ওরা বস্তিতে ফেরু নামে এক ব্যক্তির কাছে ১০০ টাকার গাছন্ত নিল । আমি কৌতুহলের সাথে ওদের কাজ ও কথা লক্ষ্য করছিলাম । কিন্তু প্রাইভেটের সময় হয়ে যাওয়ায় ওদের কাছে বিদায় নিলাম ।



রাত্রে ম্যাসে এসে দেখি ক্যাম্পাসের বহু পুলাপান, সবাই পিনিকে কাতর ! যাদেরকে কখনো সামান্য সিগারেট খেতে দেখিনি তারাও নাকি এখন মদ-গাজায় আসক্ত । আমার পাশের রুমে বর্ষা ও বিজলিকে দেখে ওদের কাছে গেলাম । গিয়ে দেখি ওরা সিজারের সাথে বাবা (ইয়াবা) টানছে । আমাকে দেখে বিজলি বলল দোস্ত দিবি নাকি কয়টান ? আমি না করার আগেই, সিজার বলল ও দেবে বাবায় টান, ওই শালাতো একটা মাগি ! ওদের কথায় আমি না হেসে পারলাম না, হা...হা...হা ! সিজার গত সেমিস্টারে সেমিস্টার ফি-র টাকায় কক্সবাজার গিয়ে ১০ দিন মজা করে এসেছে । কারণ হচ্ছে ওইবার জামাতে ইসলাম ও বিএনপি টানা দশ দিনের হরতাল দিছিল । আর হরতালের ঘোষণা দিছিল বৃহস্পতিবারে, শনিবার থেকে টানা ১০ দিন । হরতালের সময় নাকি পর্যটন এলাকায় সব কিছু সস্তায় পাওয়া যায় । তাই সিজার হরতালের শুফল ভোগ করতে এততুকু কার্পণ্য করেনি । যদিও এখনো ওর সেমিস্টার ফি সময় মত না দেয়ার ফলে জরিমানার ঘানি টানতে হচ্ছে । সবই আসলে ঠিকই আছে । সিজারদের তো আমি কোন দোষ দেখছি না । ওরা বাবার টাকায় ঢাকায় পড়তে এসেছে ক্লাস-টিলাস না হলে ছেলে পুলে আর কিই বা করবে ? কোথাও ঘুরতে গেলে যদি আগুনে পুড়ে মরতে হয় তার চেয়ে মাদকে ধিরে ধিরে মরাই ভাল । এতে করে মরার পাশাপাশি মজাও পাওয়া যায় । ছেলে পুলেতো মরছেই, প্রতিদিনই মরছে কেও ককটেল, কেও পেট্রোল বোমায়, কেও ইটের আঘাতে, কেও সন্ত্রাসের গুলিতে আবার অনেকেই পুলিশের গুলিতেও মরছে । ওরা মরতাছে ওদের মৃত্য তে কোন মজা নাই খালি শোক আর শোক ! এমনি আরও বহু কথা শুনেছি সিজারের কাছে । তাই এখন আর ওকে বুঝাতে চাইনা ।





ওরা এখন বুঝে গেছে পরীক্ষায় পাশ করতে এখন আর তেমন পড়তে হয় না । পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করলে পাশ করানোর দায়িত্ব শিক্ষকের ।শিক্ষকদের উপর এ দায়িত্ব অবশ্য সরকারের সু-পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা জোর পূর্বক চাপিয়ে দিয়েছে । তাহলে দোষ কার ? সিজারদের, শিক্ষকদের, সরকারের নাকি যারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস কায়েম করতে চায় তাদের? দোষ যারই হোক এই অবস্থা থেকে উত্তরণে কারোর কি করার কিছু নেই ?

আসলে কে শুনে কার কথা । সবাইত বুঝে ভালই, দেখেন নি আপনারা পুত্র হারানোর শোকে বেগম জিয়া কেমন মূর্ছা গিয়েছিলো, স্বয়ং প্রধান মন্ত্রিও তার সাথে দেখা করতে পারেন নি । কোকর মৃত্যু সংবাদে অনেকেই ভেবেছিল জ্বালাও পোড়াও সহিংসতা মনে হয় আর হবে না । কিন্তু কই সহিংসতা তো চলছেই, ঢাকা মেডিকেল সহ বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে অগ্নি দগ্ধ আহত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে ।



কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে নয়, প্রাসঙ্গিকতার খাতিরে বলতেই হয়, ফেরারি সন্তানের স্বাভাবিক মৃত্যুতেই তো বেগম জিয়ার ভেতরটা ছারখার হয়েগেছে । তাহলে যে সকল মায়েদের ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র, কারখানার খেটে খাওয়া শ্রমিক, ভ্যান চালক, রিক্সা চালক, দিন মজুর, ক্ষেতমজুর, সে সকল মায়েদের ভেতরের অবস্থা কি , তা কি বেগম জিয়া উপলব্ধি করতে পারেনা ? উনি কি উপলব্ধি করতে পারেননা যে, নাবালক শিশু পিতৃহারা হলে তার ভবিষ্যৎ কতটা অন্ধকার হয়, যুবতি বধূ স্বামীহারা হলে তার জীবনটা কতো বিষময় হয় । আমার তো মনে হয় না উপলব্ধির দিক থেকে বেগম জিয়া বা শেখ হাসিনা কেও এতটা দুর্বল !



হ্যা, সত্যি তাই, উনারা আমাদের থেকে অনেক বেশি বেশি উপলব্ধি করতে পারেন । তাইতো ক্ষমতার বিষয়টা কেউ কারোর হাতছাড়া করতে নারায । ওরা একজন ক্ষমতা ছাড়বে না অপরজন ক্ষমতা কেড়ে নিয়েই ছাড়বে । উনাদের রেষারেষিতে যে সকল নিরীহ মানুষ মরছে তাদের মনে হয় উনারা জাতির আবর্জনা মনে করেন । তা না হলে, জনতার মাংসে আচ্ছাদিত ক্ষমতার হাড্ডিটায় শোষণের স্বাদ উনাদের কুকুরে পরিণত করত না !



যা হোক আমরা এতো কিছু বুঝিনা, আমরা চাই জীবনের নিশ্চয়তা, চাই স্বাভাবিক মৃত্যু । এতে করে কোন তন্ত্র থাকলো আর কোন তন্ত্র গেলো সেই মন্ত্র আর আমরা শুনছিনা । তন্ত্র গুলো যতই ভালো হোক তান্ত্রিক যদি ভালো না হয় তবে প্রচলিত তন্ত্রের সকল নীতি কথাই কেবল বক্তৃতা বাজি-গলাবাজি ছাড়া অন্য কিছু নয় ।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.