নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দূরে থাকুন তারা যারা ধর্মকে পুঁজি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দূরে থাকুন তারা যারা ১৯৭১ থেকে অদ্যাবদি বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং সকল পাকিস্তানী প্রেমী , রাজাকার ও তাদের ছানাপোনা ।
শ্রাবন মাসের বৃষ্টি ছিঁচকাঁদুনে প্রেমিকার মতন, কোন ঠিকঠিকানা নাই, এই বৃষ্টি তো এই রোঁদ। সারাদিন প্রচন্ড রোঁদের পর সন্ধ্যায় অঝর ধারায় ঝরছে, সবাই যেন একটু হাপ ছেড়ে বাচলো, কদমতলি থানার ইন্সপেক্টার ইলিয়াস কপাল কুঁচকে তার টেবিলের উপর পরে থাকা কিছু কাগজপত্র দেখছেন, এক কাপ চায়ের জন্য গলা অনেক্ষন ধরে খুসখুস করছে, কেউ কে বলতে পারছেন না, হাতে থাকা কাগজ গুলো তাকে বেশ উত্তেজিত করে রেখেছে, আলাদা দুই জন লোকের দুইটা পরিচয়পত্র তার হাতে এসেছে, যারা তত্থ্য হুবাহু এক, শুধু পরিচয় পত্রধারির নাম আলাদা, একজন আল-মামুন শিকদার অন্যজন আসমত উল্লাহ শিকদার, বাকি তথ্য যেমন বাবা মা এর নাম জন্মতারিখ সব একই, দুই জনার বাবাই মৃত মা জীবিত, দুই জনার পরিচয়পত্র নাম্বার মাত্র এক নম্বরের পার্থক্য, একজনার শেষ নম্বর নয় অন্যজনার ছয়। ইন্সপেক্টার ইলিয়াস দুই জনার বর্তমান ঠিকানা পরিক্ষা করলেন, বর্তমান ঠিকানা এক না, এমন কি স্থায়ী ঠিকানাও এক না, বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী আল-আমিনের ঠিকানা কদমতলি থানার আওতাধীন, তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না কি করবেন, থানার বড় সাহেব তাকে এই সমস্যার সমাধান করতে দিয়ে সাত দিনের ছুটিতে দেশের বাড়ি চলে গেছেন, কারো সাথে যে পরামর্শ করবেন তারও উপায় নাই। নাহ এক কাপ চা না হলেই হচ্ছে না, এক কাপ চায়ের জন্য আশে পাশে তাকালেন, সন্ধ্যার সময় থানায় তেমন কেউই নাই, দুই জন সিপাহি আর চার জন ছ্যাচড়া চোর ছাড়া তিনি বাদে আর কেউই থানায় নাই, ডিউটি অফিসার রাউন্ডে গেছেন বিকেলে এখনো আসেন নাই। নাহ নিজেকেই উঠে চা খেতে যেতে হবে, হালকা নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালেন ইলিয়াস হঠাত তার মনে হলো আল-আমিন তো এখানেই থাকেন তাকে একবার জিজ্ঞাসা করলে কেমন হয়, চায়ের তেষ্টা ভুলে, হন্তদন্ত হয়ে তিনি ছুটলেন, থানার সিপাহিরা একজন অন্যজনার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো, থানায় ইলিয়াসের নাম কুম্ভকর্ন, প্রচন্ড আলস একটা লোক হঠাত করে এমন কি হলো যে ছুট লাগালো।
কিছুদুর যেয়েই ইলিয়াসের মনে হলো সে ঠিকানাই সাথে আনে নাই, নিজেকে বিশ্রি ভাষায় গালি দিয়ে, একটা চায়ের দোকানে গি্যে বসলো। এক কাপ চায়ের কথা বলে মাথা নিচু করে ভাবতে বসলেন, নাম আলাদা , বংস এক, বাবা মা এর নাম এ্ক, জন্ম তারিখ এক , কি করে সম্ভব। ঘড়িতে তখন বাজে সাতটা, আশে পাশের অনেকেই চা খাওয়ার জন্য চায়ের দোকানে ভির করছে, তাকে দেখে সবাই মোটামুটি অস্বস্তিতে ভুগছে অবশ্য পুলিশ দেখে স্বস্তি পাওয়ার মতো ঘটনা বাংলাদেশে খুব কমই ঘটে। ইলিয়াস হালকা করে সবার দিকে তাকিয়ে হেসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চাইলো, খুক করে কাশি দিয়ে চা ওয়ায়ালা কে জিজ্ঞাসা করলো, চাচা মিয়া , আল-আমিন রে চিনো?
কোন আল-আমিন, ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো চা ওয়ালা
ইলিয়াস যে কি বলবে তাই বুঝতেছে না , হঠাত মনে পড়লো আল-আমিনের বাবার নাম, জ্বি আখতার উদ্দিন শিকদারের ছেলে আল-আমিন চিনো?
জ্বে না, চিনি না, ভারাইটা মনে লয়, স্থানীয় না, ভারাইট্টারা আসে যায় , কয়জনার নাম মনে রাখমু কন?
হুম তাও ঠিক, মাথা নারে ইলিয়াস।
আপনারে আর এক কাপ চা দিমু, চায়ের কাপ ধুতে ধুতে জিজ্ঞাসা করে বুড় চা ওয়ালা
আশে পাশের জিজ্ঞাসু দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ইলিয়াস মানা করে দিলো, চাচা যদি আল-আমিন নাম কাউরে পান যারা বাবার নাম আখতার উদ্দিন শিকদার তাহলে একটু থানায় খবর দিয়েন। যেতে যেতে শুনতে পেলো চা ওয়ালা বিরবিরিয়ে বলছে হালার ঠোলা শান্তি মতন বিজনেস ও করতে দিবে না, কোনহানকার কেডা আমিন তারে এখন খোঁজো। মেজাজ খারাপ হলেও কিছু বল্লো না , কয়জনার মুখ বন্ধ করবে ইলিয়াস, বেশিরভাগ মানুষেরই পুলিশ সম্পর্কে এমন ধারনা।
পেছন থেকে বাচ্চা একটা কন্ঠ ডাক দিলো, স্যার আপনি কি আলামিন ভাইরে খুজেন, পেছন ঘুরে হালকা অন্ধকারে একজন সাত আট বছরের বাচ্চা দেখলো, অন্ধকারে ঠিক মুখ দেখা যাচ্ছে না, হাতে কিছু একটা ধরা, ছোট্ট টেনিস বলের মত।
ইলিয়াস একটু কাছে এগিয়ে যেতে ছেলেটি খানিক পিছিয়ে গেলো, সম্ভাবত ভয়ে, হ্যা আমি আলামিন কে খুজি, তুই চিনিস?
স্যার আমি কেলাস টু তে পরি তুই কন কেন, এক পা পিছিয়ে আরো অন্ধকারে ঢুকে গেলো ছেলেটি
আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তুমি বলবো, তুমি চেনো তা কে।
চিনি তয় আপনারে বলবো না, আপনি বদ লোক
ইলিয়াস থমকে দাঁড়িয়ে গেলো, কারন সে যতো আগাচ্ছে ছেলেটি ততো পেছাচ্ছে । তোমার নাম কি ? জিজ্ঞাসা করলো
আমার নাম আলা-আমিন
থমকে গেলো ইলিয়াস, কি ! কি বললি?
সেই আলামিন না অন্য আলামিন, আপনি যে আলামিন কে খোজেন আমি সেই আলামিন না অন্য আলামিন।
ইলিয়াসের মাথা এলো মেলো হয়ে গেলো, এক আলামিন কে খুজতে এসে অন্য এক আলামিন উদয় হলো। তিনি খানিকটা বিভ্রান্ত গলায় বললেন তুই কি করে জানলি আমি আলামিন কে খুজি
স্যার আমি কেলাস টু তে পড়ি
ওহ আচ্ছা তুমি কি করে জানলা আমি আলামিন কে খুজি
ক্যান আবেদ চাচারে কইলেন তখন আমি শুনছি
কিন্তু আমি তো তোমাকে তখন দেখি নাই, ঠোটের নিচে চিমটি কেটতে কাটতে জিজ্ঞাসা করলেন ইলিয়াস
আমি শুনছি, ঘার বাকা করে বলে আলামিন।
তো থাকে কোথায় এই আলামিন
কইতাম না, ঠোঁট ফুলিয়ে বললো আলামিন, পুলিশ খুব শয়তান হয়, তারা খালি মারে।
ইলিয়াস একটু কাছে গিয়ে ছেলেটার হাত ধরতে চাইলেন, অদ্ভুত ভাবে ছেলেটি পেছন দিকে পিছিয়ে গেলো।
শোন আলামিন আমি কাউকে মারি না, আমি তোমার আলামিনের সাথে দেখা করে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবো, তুমি কি আমাকে তার ঠিকানা বলবে? ইলিয়াস খপ করে বাচ্চাটার হাত চেপে ধরলেন আবার সেই মূহুর্তেই হাত ঝারা দিয়ে ছেড়ে দিলেন, এমন বরফ শিতল হাত তিনি এর আগে কখনই ধরেন নাই। কিছুক্ষনের জন্য তার মনে হলো মৃত কোন মানুষের হাত তিনি ধরে আছেন। ছেলেটি ছিটকে দূরে সরে গেলো, নিচু গলায় ঠিকানা বলে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।
বাড়ি নম্বর বেয়াল্লিশ রাস্তা নম্বর তেইশ, ছোট্ট একটা গেট, অযত্নে মরিচা পরে এক দিকে কাত হয়ে আছে, সামনের বুড়িয়ো যাওয়া বাড়িটা দেখে ইন্সপেক্টার ইলিয়াসের সন্দেহ হলো এই বাড়িতে কেউই থাকে না। পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা না করে চলে এসেছেন কিন্তু বাড়ির চেহারা দেখে তিনি হতাস।ছেলেটা তাকে ভুল ঠিকানা দিয়েছে এই সন্দেহ তার আগেই হচ্ছিল এখন তা বেশ জোরেশোরে হচ্ছে। তাও এতো দূর এসে কিছু না করে যাওয়া ঠিক হবে না মনে করে বা পা দিয়ে গেট ঠেলে বাড়ির ভেতর ঢুকে পরলেন।
সদর দরজা ভেতর থেকে বন্ধ,আশে পাশে কলিং বেলের কোন সুইচ না পেয়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দিলেন দরজায়, বাড়িতে কেউ আছেন? ভেতর থেকে কোন সারা শব্দ নাই, আবার ধাক্কা দিলেন এইবার বেশ জোরের সাথে, ভেতরে কিছু খচমচ করে নড়াচড়ার শব্দ পাও্য়া গেলো, চিকা বা ইদুর জাতীয় কিছু মনে হয় দৌড়ে পালালো।নাহ এই ভাঙ্গা বাড়িতে কে থাকবে, ধুর অযথা সময় নষ্ট। পেছন ফিরতেই দরজা খোলার শব্দ পাও্য়া গেলো। ইলিয়াস ঘুড়ে দাড়িয়ে দেখলো একজন চশমা পরা মধ্য বয়স্ক মাত্রা অতিরিক্ত ফ্যাঁকাসে ব্যাক্তি দরজা খুলে সামনে এসে দাঁড়ালো।
জ্বি আপনি কাউ কে খুজচ্ছেন? ভাঙ্গা ভঙ্গা গলায় জিজ্ঞাসা করলো আগুন্তক
জ্বি, আমি থানা থেকে এসেছি, একটা পাসপোর্টের ভ্যারিফিকেশানের জন্য। আপনি কি আল-আমিন বা এই বাড়িতে কি আল-আমিন নামে কেউ আছেন।
চশমা পরা লোকটা হা করে কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থাকলো, মাথা দুলিয়ে তার সাথে আসার জন্য ইশারা করলো , জ্বি ভেতরে আসুন।
জ্বি অবশ্যই, আপনি কি আল-আমিন? মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকতে ঢূকতে জিজ্ঞাসা করলো ইলিয়াস
জ্বি আমি আল-আমিন, কিন্তু আমিতো সেই ১৫ বছর আগে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলাম আজ এলেন ভ্যারিফিকেশানের জন্য? মৃদু হেসে বললো।
জ্বী? হকচকিয়ে গেলো ইলিয়াস বুঝলাম না ।
হ্যা ঠিকি শুনেছেন, দাঁড়িয়ে কেনো বসুন না, মোড়া দেখিয়ে বললো আমি যদি সিগারেট খাই কোন সমস্যা নাই তো
জ্বী না, সমস্যা নাই, নিচু হয়ে বসতে যেতেই তিব্র কর্পুরের গন্ধে নাক চিরচিড়িয়ে উঠলো। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আল-আমিন সাহেব হেসে দিলেন, ঘরে অনেক ইদুর তেলাপোকা তো তাই কর্পুর দিয়ে রাখি যাতে পোকা মাকড় কম আসে আর কর্পুর আদ্রতার কারনে বাজে গন্ধ দূর করে।
আসলে আমি এসেছি আপনার পাসপোর্টের ভ্যারিফিকেশানের জন্য সেই সাথে এক আদ্ভুত সমস্যা নিয়ে আপনার আই ডি ডিটেলের সাথে অন্য একজনার আই ডি ডিটেল হুবাহু মিলে যাচ্ছে। আপনার কোন জমজ ভাই ছিলো বা আছে যিনিও পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন।
জ্বি না আমার কোন জমজ ভাই নাই, তা কি নাম ভদ্রলোকের
আসমত উল্লাহ শিকদার, থাকে আপনার এলাকাতেই ঠিকানা আপনার বাড়ির দেয়া।
মুচকি হাঁসি দিয়ে ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালো, বসেন চা বানিয়ে নিয়ে আসি, সকাল সকাল আসছেন নিশ্চই নাস্তা করেন নাই।
না না নাস্তা লাগবে না, খালি চা হলেই চলবে ইতস্তত করতে লাগলেন ইন্সপেক্টার ইলিয়াস। আশা পাশে তাকিয়ে দেখেন বেশ পুরানো বাড়ি, এখানে সেখানে পলেস্টার খসে গেছে, ঘরের মধ্যে উঠানের মত এক টা স্থানে তিনি বসে আছেন, মাথার উপর ছাদ নাই খোলা। বাড়ির ভেতর অন্য কেউ আছে বলে মনে হয় না। কোন সারা শব্দ পাও্য়া যাচ্ছে না। দূরে এক কোনে একটা ছাই রঙের বেড়াল লেজ ঝুলিয়ে ভাংগা পাচিলের উপর বসে তিক্ষ দৃষ্টিতে তাকে দেখছে, মাঝে মাঝে লেজ নেড়ে হাই তুলছে। ইন্সপেক্টার ইলিয়াস উঠে দাঁড়ালেন, মোড়ায় বসে থেকে কোমর ধরে গেছে, ঘড়ের দক্ষিণ কোনে একটা মানিপ্ল্যান্ট ঝুলে আছে ছাদের পিলার থেকে বেড়িয়ে আসা রড বেয়ে, দেখেই মনে হয় অনেক দিন যত্ন আত্তি করা হয় না, দক্ষিণ পাশটা দিনের আলোতেও আন্ধকার হয়ে আছে, মানিপ্ল্যান্ট গাছটার পাতায় অনেক দিনের ধুলা জমে আছে, হাত দিয়ে ধুলা ঝাড়তে টুপ করে পাতাটা ঝরে পরে গেলো, নিচু হয়ে পাতাটা তুলতেই চোখের কোন দিয়ে আচমকা একটা পরিচিত মুখ দেখতে পেলেন আধারের মাঝে, চোখ দুইটা অদ্ভুতভাবে জ্বলজ্বল করছে, গতদিনের সেই ছোট ছেলেটা, সোজা হয়ে দাড়িয়ে ভালোকরে তাকালেন কিন্তু আর কিছুই দেখলেন না।কান খাড়া করে চেষ্টা করলেন কিছু শোনা যায় কি না কোন সারা শব্দ, সব দ্বিধা ফেলে অন্ধকার কোনার দিকে যেতে উদ্যত হতেই পেছন থেকে শোনা গেলো আল-আমিন সাহেবের কন্ঠ ও দিকে কিছুই নাই, কিছু ভাঙ্গা জিনিসপত্র ছাড়া, অন্ধকার আর স্যাঁতস্যাঁতে তাই অনেকদিন ওপাশটা ঝাঁরা দেয়া হয় না, সাপ টাপ থাকতে পারে যাবেন না।
পেছন ফিরে দেখলেন আল-আমিন সাহেব হাতে ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, লোকটা কে আগের থেকে বেশি শক্তিশালী লাগছে, সকালে দরজা খোলার সময় বেশ রুগ্ন লাগছিলো। ঠোঁটের কোনে খানিক রক্তের ছোপ লেগে আছে, আপনার ঠোঁট কাটলো কি করে, চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে জিজ্ঞাসা করলেন ইন্সপেক্টার ইলিয়াস।
ও কিছু না, গতোকাল সেভ করতে গিয়ে কেটে ফেলেছি, দ্রুত ঠোট মুছলেন আল-আমিন সাহেব।
আচ্ছা, মাথা নাড়লেন ইলিয়াস, আপনার আইডি কার্ড টা একটু দেখাবেন প্লিজ
ওটা হারিয়ে ফেলেছি নতুন আর তুলি নাই। চায়ের কাপে সো করে এক চুমুক দিয়ে বল্লেন আল-আমিন
আন্ধকারে দেখা মুখটা কোন ভাবেই ভুলতে পারছেন না ইলিয়াস, বারবার আন্দকার কোনাটায় চোখ চলে যাচ্ছে, অমন জ্বলজ্বলে চোখ কিন্তু গতকাল বাচ্চাটার ছিলো না। চায়ের কাপ থেকে ওঠা ফ্রেশ চায়ের সুগন্ধযুক্ত ধোঁয়া নাক দিয়ে টেনে মস্তিষের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে দিয়ে মাথাটা পরিষ্কার করতে চাইলেন, কিছু একটা তাকে খুব বিভ্রান্ত করছে, কিছু এমন আছে যা তার চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা আপনার ছেলে মেয়ে নাই ,নাকি বিয়ে করেন নাই, আল-আমিন সাহেবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ইলিয়াস।
জ্বী না, আমি অবিবাহিত, বিব্রত গলায় উত্তর দিলেন আল-আমিন
কিন্তু ওঁই কর্নারে একটা ছোট্ট ছেলে কে দেখলাম দাড়িয়ে আছে, আপনার কাজের লোক বুঝি?
না না, আমার কোন কাজের লোক নেই, আমি একাই থাকি, তারাহুরা করে উত্তর দিলো আল-আমিন সাহেব।
আচ্ছা আমি তাহলে উঠি, আপনার পাসপোর্টের ভ্যারিফিকেশানে একটু দেরি হবে কারন আমাকে আসমত উল্লাহ শিকদার কে খুজে বাহির করতে হবে, ভালো হতো আপনি যদি নিজে থানায় আসতেন।
জ্বি না আজ আমি পারবো না, আমার একটু কাজ আছে, ভয় নেই আমি এখানেই থাকি, অন্য কোথাও যাই না।আপনি চাইলে আগামীকাল যেতে পারি।
আচ্ছা ধন্যবাদ, আজ আসি তাহলে। বলে উঠে দাঁড়ালেন ইলিয়াস সাহেব। আচমকা তার চোখ আবার অন্ধকার কোনায় চলে গেলো সেই জ্বলজ্বলে চোখ তারদিকে তাকিয়ে আছে দেখতে পেলেন, ঘাড় ফিরিইয়ে তিনি আল-আমিন সাহেব কে বললেন ওঁই ত সেই ছেলেটা।
ওটা আমাদের মেনি বেড়াল, ও ওঁই কোনায় ইদুর টিদুর খোঁজে, হাসতে হাসতে বললেন আল-আমিন সাহেব, আপনারা পুলিশরা অনেক সন্দেহগ্রস্থ হন।
লজ্জা পেলেন ইলিয়াস, তিনি লজ্জিত কন্ঠে বললেন দুঃখিত, আসলে আমি ভুল দেখেছি মনে হয়, আল-আমিন সাহেবের বাসা থেকে বের হলেও তার অস্বস্তি ভাব টা কাটলো না। মাথাটা কেমন শুন্য শুন্য লাগছে, চোখ জুড়িয়ে ঘুম পাচ্ছে, রাতে ভালো হয়েছে, তার অবশ্য কোন কালেই ঘুমের সমস্যা ছিলো না।ইলিয়াস থানার দিকে রওনা দিলেন, পাসপোর্টের কেসটা তাকে ভাবাচ্ছে। কোথাও সুতা ছেঁড়া আছে জোড়া লাগাতে পারছেন না।
সাতসকালে থানার সেকেন্ড অফিসার কে থানায় ঢুকতে দেখে, থানার ডিউটি অফিসার বেলায়েত অবাক হয়ে গেলো, তার উপরে ইন্সপেক্টার ইলিয়াস হলো কুড়ের বাদশা। বেলায়ের মন খুচখুচ করছে, কিছু একটা হয়েছে, ইলিয়াস সাহেবের মেজাজ খারাপ মনে হচ্ছে, দরজার এককোন দিয়ে ইলিয়াস সাহেবের রুমের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখার চেস্টা করলো বেলায়েত। টেবিলের উপর মাথা দিয়ে ইলিয়াস অঘোরে ঘুমচ্ছে, মুচকি হাঁসি দিলো বেলায়েত। সালার কুইড়া। দরজা ধাক্কা দিয়ে ঢুকল বেলায়েত, তারপরেও ইলিয়াসের ঘুম ভাংলো না।
স্যার ওঠেন, আর কতো ঘুমাবেন।
ইলিয়াসের কোন নড়চড় নাই, মাথা নিচু করে টেবিলে পরে আছে, শুধু পিঠটা শ্বাসের তালেতালে ওঠানামা করছে এতে বঝা যায় বেঁচে আছে। বেলায়েত হাত দিয়ে মৃদু ধাক্কা দিলো, স্যার, ওঠেন। নিথর পরে থাকলো ইলিয়াস। এই বার জোরে ধাক্কা দিলো, স্যার ওঠেন। ভয় পেলো বেলায়েত। ধরমরিয়ে জেগে উঠলো ইলিয়াস। হতবুদ্ধি হয়ে কিছুক্ষন চেয়ে থাকলো বেলায়েতের দিকে, তারপর কাশি দিয়ে বললো কি ঘুমিয়ে গেছিলাম নাকি।
জ্বি স্যার, শরির ভালো আপনার
হ্যা শরীর তো ভালোই, কেনো জিজ্ঞাসা করছো
ঠোঁটে লিপিস্টিক লাগিয়ে আসছেন অফিসে তাই জিজ্ঞাসা করলাম , মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো বেলায়েত
কি বলো, লিপিস্টিক কেনো লাগাবো, সকাল সকাল কি ঠাট্টা করো
বাথরুমে গিয়ে আয়নায় দেখুন স্যার
ইলিয়াস উঠে গিয়ে আয়নার সামনে দারাতেই এক অচেনা মুখ দেখতে পেলো যার ঠোঁটে লাল রক্ত লেগে আছে, চমকে গেলো ইলিয়াস, দুই হাত দিয়ে ঠোঁট মুছতে লাগলো, হাত ভর্তি হয়ে গেলো লাল রক্তে, বেসিনে থুথু ফেলতে থুথুর বদলে একদলা রক্ত বেসিন ভাসিয়ে দিলো, ইলিয়াস হাকরে আয়নায় দেখলো তার মুখ ভর্তি রক্ত। তিনি বারবার পানি দিয়ে মুখ দুতে লাগলেন। চিৎকার করে বেলায়েত কে ডাকার চেস্টা করলেন কিন্তু গলা থেকে এক ফোটা স্বর বাহির হলো না, হঠাত পেছনে খুট করে শব্দ হতে পেছন ফিরে দেখলেন গতোকালের সেই ছেলেটা দাড়িয়ে হাতে টেনিস বল। তিনি হাত বাড়িয়ে ছেলেটি কে ধরতে গেলেন। ছেলেটি পেছন ফিরে দৌড়ে গেলো, তিনি দুই চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। অন্ধকার শুধুই অন্ধকার। হাত পা ছড়িয়ে পরে গেলেন বাথরুমের মেঝেতে।
পরিশিষ্ট
ইন্সপেক্টার ইলিয়াসের সুস্থ্য হতে এক বছর লেগে যায়, কোন এক অজানা কারনে তার শরীরে একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু রক্তের প্রয়োজন ছিলো তা ছিলো না, সবার ধারনা মেঝেতে পরে গিয়ে মাথা ফেটে সব রক্ত বাহির হয়ে গেছে। কিন্তু ডাক্তার তন্য তন্য করে ইলিয়াসের মাথায় বা শরীরের অন্য কোন জাগায় কোন ক্ষত পায় নাই।
সুস্থ্য হয়ে ইলিয়াস বাড়ি নম্বর বেয়াল্লিশ রাস্তা নম্বর তেইশে আবার গেলেন, কিন্তু ওঁই নাম্বারের কোন রোড এবং বাড়ি ওঁই এলাকায় নাই। এমন কি আল-আমিন নামেও কেউ নাই যার বাবার নাম আখতার উদ্দিন শিকদার এবং আশ্চার্য জনক ভাবে সেই ডকুমেন্টস গুলো তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে উধাও, বেলায়েত কে তিনি লাগিয়ে রেখেছনে খুজে বাহির করার জন্য পেলেই জেনো তাকে জানানো হয়।
০৭ ই আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৮
রানার ব্লগ বলেছেন: হয়তো অখাদ্য তাই
২| ১৪ ই আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৯
জুন বলেছেন: ভয়ের গল্প রাতের বেলা পড়ে ভয় ভয় লাগছে রানার ব্লগ। খুব সুন্দর প্রাঞ্জল লেখা। পড়তে ভালো লাগলো। প্রথমটুকু পড়ে ভাবছিলাম এতো দেখি হাবিব স্যারের পাসপোর্ট এর অবস্থা
অনেক আগে আলফ্রেড হিচককের একটা ম্যুভি দেখেছিলাম নাম মনে করতে পারছি না। সেখানে খুনি পরিস্কার হাত, কোন কিছু নেই হাতে কিন্তু যতবারই হাত ধুতে যেত গলগল করে রক্ত বের হয়ে পানির সাথে মিশে যেত। পরে সে পুলিশের কাছে মনে হয় আত্মসমর্পণ করেছিল বা ধরা পরেছিল মনে আসছে না।
১৫ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ২:৪৩
রানার ব্লগ বলেছেন: এই গল্প টা পোস্ট করে আমি বেশ হতাশ ছিলাম, ভালো বা মন্দ কেউই একে সেই ভাবে গ্রহন করে নাই। আমি ভেবেছিলাম এটা জমে নাই। যাক অন্তুত আপনার কমেন্ট পেয়ে নিজেকে আশস্ত করলাম। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:১২
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট। কিন্তু পাঠক নেই কেন?