নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আশা নিয়ে বসে আছি ।

রানার ব্লগ

দূরে থাকুন তারা যারা ধর্মকে পুঁজি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দূরে থাকুন তারা যারা ১৯৭১ থেকে অদ্যাবদি বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং সকল পাকিস্তানী প্রেমী , রাজাকার ও তাদের ছানাপোনা ।

রানার ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরাজিতরা

০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৪



সকাল থেকে মেঘ দুড়ুম দুড়ুম আওয়াজ করছে । মাঝে মাঝে বিনা নটিশে কড়াত করে একটা বান এসে কোন ল্যাম্প পোস্টের ঘাড়ে গিয়ে হুড়মুড় করে পরছে । রাশেদ আধ শোয়া হয়ে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে জলে ভড়া পোয়াতি মেঘের দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে । আজ সকালে কেয়ার আসার কথা, তো এমন আবহাওয়ায় কেয়ার আসা গুড়েবালি ।মেজাজ খুব খারাপ , পাক্কা পঁয়ত্রিশ দিন পর কেয়া কোন ভাবে ছুটি ম্যানেজ করেছে আজকের দিনের জন্য অথচ আজি আকাশ মেঘলা হতে হবে । কেয়া অবশ্য বলে আকাশে অনেক মেঘ হলে নাকি ময়ূরের প্রেম ভাব জাগে । ময়ূর পেখম তুলে মেয়ে ময়ূরের আশাপাশে নেচে কুঁদে নিজের প্রেম নিবেদন করে। কিন্তু রাশেদের মোটেই নাচ ফাচ আসছে না । তার এখন মাথার চুল ছিড়ে আঁটি বাঁধতে ইচ্ছে হচ্ছে । কোথায় কেয়া এলে দুজন মিলে খুনসুটি করবে বলে ঠিক করে রেখেছে অথচ বেয়াড়া মেঘ এসে প্রায় সব ভন্ডুল করে বসে আছে । এই মেঘের অন্য কোথাও যাবার কোন প্ল্যান আছে বলে মনে হয় না ।মানুষ চায় বিধাতা নিরাস করে, মাঝে মাঝে কিছু প্রবাদ যেনো অক্ষরে অক্ষরে লেগে যায় । এক সাথে নাস্তা করবে বলে সকালে মেসের নাস্তাও ফিরিয়ে দিয়েছে। এখন বেলা দশ টা বাজে, পেটের মধ্যে ইঁদুর ছানা নর্তন কুর্দন থামিয়ে মোটামুটি নখ দিয়ে আঁচর কাটছে ।

বেলা বাজে দশটা অথচ আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় ভোর পাঁচটা । একবার মোবাইলে কল করে দেখবে কি না ভাবছে রাশেদ। কল করাটাও একটা হ্যাপা । সকল কল কেয়াই করে তার কাজ শুধু কল ধরা । কড়া বাড়ন আছে কল করার। মাঝে মাঝে বাড়ন রাশেদ মানে না । ধুম করে কল করে বসে । কখনো রিং হয় , হতে হতে কেটে যায় বা কখনো লম্বা সময় ওয়েটিং এ থাকে । তখন বড্ড কষ্ট হয় রাশেদের । বুকের ভেতর টা মনে হয় কেউ যেনো চিমটা দিয়ে চেপে ধরে বসে । সহজে দমটাও নিতে পারে না ।ঘেমে নেয়ে এক সা হয়ে যায় আর ঠিক তখনি তার খুব সিগারেটের নেশা হয় । কেয়ার হাজার বারণ থাকা সত্বেও সে সিগারেট ধরায়। লম্বা একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে , যেনো কেয়ার উপর কিছু টা প্রতিশোধ নিলো । কেয়ার সিগারেটে দারুন অপছন্দ । চুমু খেতে নাকি বিরক্ত লাগে, ঠোটে জিবে সিগারেটের স্বাদ লেগে যায় । রাশেদের অবশ্য চুমু খাওয়া নিয়ে উন্মাদতা আছে, চুমু খেতে গেলে ঠোঁট দিয়ে শুরু করে জিব টিব নিয়ে একাকার করে ফেলে । কেয়া ওকে এর জন্য জানোয়ার বলে ডাকে । কেয়া কে যখন প্রথম চুমু খায়, অমনি উন্মাদীয় চুমু খেতে গিয়ে কড়াত করে একখানা চড় খেয়ে ছিটকে গেছিলো । চোখ মুখ লাল করে চেঁচিয়ে ওঠে কেয়া, চুমু খাচ্ছ না আমাকে খাচ্ছ ? চড় খেয়ে হতবুদ্ধি হয়ে গালে হাত দিয়ে খানিক চেয়ে থেকে লাজুক হাঁসি দেয় রাশেদ। চুমু আস্তে ধিরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে খেতে হয়, অমন জানোয়ারের মতো করলে ওটা চুমু হয় না । মুখ কালো করে বলে কেয়ে। আর আমাকে যেদিন তোমার চুমু খেতে মন চাইবে তার এক সপ্তাহ আগে থেকে তোমার ওই সিগারেট টা খাবে না । আকশ বাতাশ কাঁপিয়ে হেঁসে ওঠে রাশেদ।কেয়ার ঠোঁটে আঙ্গুল বুলাতে বুলতে বলে, চুমু খেতে কি আলাদা করে সময় মেপে মন চায় নাকি, আমার তো তোমাকে সারাক্ষন চুমু খেতে মন চায় । তবে সিগারেট খাওয়া ছাড়তে হবে , রাশেদের দিকে পুর্ন চোখে চেয়ে বলে কেয়া । কেয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে নিচু গলায় বলে রাশেদ, অমন করে চেয়ো না, আমার তোমার অমন ঠান্ডা জলে ভাসা রসগোল্লার মতো চোখ দুট খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে । কেয়া পাশে রাখা হাত ব্যাগ দিয়ে রাশেদ কে খুব করে মেরেছিলো , আমি কি খাদ্য দ্রব্য যে আমাকে দেখলেই তোমার খেতে মন চায় ।

মেঘের নড়ন চরণ নাই বললেই চলে । মোবাইল টা হাতে নিয়ে কল করেই ফেললো। যথারীতি অপেক্ষমাণ । আজো, কেয়া কে ফোনে ব্যস্ত থাকতে হবে, বিরক্ত হয় রাশেদ। ইচ্ছা করে দুবার কল দেয় । মোবাইল টা বিছানায় ছুড়ে ফেলে চুপ করে থাকে । আড় চোখে চেয়ে দেখে কোন কল এলো কি না, আধা ঘন্টা কেটে যায় কোন কল আসে না । রাশেদের বুকের ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যায় । রাগের চোটে খামচা দিয়ে ফোন টা তুলে নেয় । শক্ত হাতে মুখস্ত নাম্বার গুলো টিপে যায় , এইবার রিং বাজছে, বাজতে থাকে, বাজতে বাজতে প্রায় কেটেই যাচ্ছিলো, এমন সময় ও পাশ থেকে ভাঙ্গা ব্যস্ত গলায় হ্যালো বলে কেয়া।কেমন আছো, ভাড়ি গলায় জিজ্ঞাসা করে রাশেদ, হ্যা ভালো, ফোন দিচ্ছ কেনো বারবার, ব্যস্ত গলায় বলে কেয়া । ফোন দিচ্ছি কেনো জানো না ? অবাক হয় রাশেদ। না জানি না, কেনো ফোন দিচ্ছ , ওপাশ থেকে বিরক্ত কন্ঠে বলে কেয়া। রাশেদ দাঁতে দাঁত চিপে বলে আজ তোমার আসার কথা ছিলো।
তো কি হইছে
আসবা না?
তোমার মাথায় কি সমস্যা? আকশের অবস্থা দেখছো? এমন অবস্থায় আমি একটা মেয়ে কি ভাবে অতো দুর যাবো ভেবে দেখছো?
ফোনে এতো কথা কার সাথে, কেয়ার প্রশ্ন এড়িয়ে যায় রাশেদ । তাতে তোমার কি, ঝাঝালো গলায় চেঁচিয়ে ওঠে কেয়া । আমি যার সাথে ইচ্ছা যতক্ষন ইচ্ছা কথা বলতে পারি এর কৈফিয়ত তোমাকে দেখাতে হবে এমন কোন চুক্তি কি আমরা করেছি ।না মানে আমার খারাপ লাগছিলো তাই জজ্ঞাসা করলাম, চুপসে যায় রাশেদ । না, আসতে পারবো না, বাসায় অনেক কাজ আছে, আবহাওয়া ভালো থাকলেও যেতে পারতাম না , বাসায় ঝামেলা , আর গেলে তো তোমার সেই একি কাজ , এ ছাড়া তো অন্য কিছুই মাথায় ঘোরে না।
কি করবো বলো, অনেক দিন পর তোমাকে পাই, তাই আর কি ! লাজুক গলায় বলে রাশেদ ।
হু হইছে এইবার ফোন রাখো, হেঁসে ওঠে কেয়া । আর তোমাকে না বলছি তুমি আমাকে কল দেবা না । আমার যখন লাগবে তখন কল দেব । মনে থাকে না কেনো । কট করে ওপাশ থেকে লাইন কেটে গেল।হাতের মোবাইলের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মোবাইল টা বিছানায় ফেলে দিলো ।

বেলা বাজে বারোটা সকালের নাস্তা একসাথে করবে বলে করা হয় নাই, এক সাথে দুপুরের খাবারটাই খেতে হবে । মেস ম্যানেজার ইদ্রিস মিয়া কে বলে রাখতে হবে দুপুরে খাবে। ম্যানেজার টা বড্ড খবিস ধরনের , একবার মিল ক্যান্সেল করলে কোন ভাবেই নতুন করে মিলের আয়োজন করতে চায় না । কটর মটর করতেই থাকে । রাশেদের আজ প্ল্যান ছিলো কেয়া কে নিয়ে দূরে কোথাও যাবে সেখানেই সকাল আর দুপুরের খাবার খাবে । যখন হলোই না কি আর করা , মেস ম্যানেজারের কট কটানি খাওয়া যাক নাস্তার বদলে । রাশেদ কে দেখে ম্যানেজার ইদ্রিস শোয়া থেকে উঠে বসলো, ছোডু বাই, আইজ খেচুড়ি করলাম, লগে রুই মাছে ঝুল, পাইলা না, আল জিব্বা দেখিয়ে হা হা করে হেঁসে উঠলো । রাশেদ কান চুলকে বললো ইদ্রিস ভাই আজ মিল টা বাতিল না করলে হয় না । ইদ্রিস আচমকা উঠে দাড়াতে গিয়ে প্রায় লুঙ্গী খুলে যাচ্ছিলো, কোন রকমে লুঙ্গী সামলে আদ্ভুত কায়দায় লুঙ্গীতে গিট দিতে দিতে দাঁড়িয়ে গেলো , চোখ বড় বড় করে বললো ক্যান তুমি না বললা তুমি দুফুরে খাইবা না ।রাশেদ মাথা চুলকে বলে না ভাই, যেখানে যাবার কথা ছিলো যাওয়া হলো না, তাই যদি একটু অনুরোধ টা রাখতেন । ইদ্রিস মিয়া নাক কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো । সে মোটামুটি রাশেদ থাকবে না জেনেও রাশেদের ভাগের রান্না করেই রেখেছিলো, ভেবেছিলো এই সুজুগে ডাবল মিল খাওয়া যাবে । তার উপরে কামের বেডি ইয়াসমিনরে মাঝে সাঝে এইডা ওইডা বেশি দিতে হয় তার নতুবা ইয়সমিন মাগী ডা কথা শুনতে চায় না । একটু গায়ে হাত দিতে চাইলেই কালি জাইত সাপের মতোন ফোঁস করে ওঠে ।এরা বুঝে সুধু খাওন, ভালোবাসা আদর মহব্বত এদের জন্য না ।কয়দিন ধইরা শারীরের ফাক দিয়ে মাখনের মতো পেট বাহির করে মাজা দুলায়ে হাঁটে আর মাঝেমধ্যে মোটা ঠোঁটের ফাক দিয়া উদ্দেশ্য পুর্ন হাঁসি দিচ্ছে তাতে আইজ ভাবছিলো যে রাশেদের মিল দিয়া কাজ সারবে , সেই সুখে বিছানায় শুয়ে পা নাচাচ্ছিলো কিন্তু শুঁখ সবার সহ্য হয় না, যার খাওন সে আইসা খাওন চায় , মন ডা কেম্ন লাগে। মুখ বাকিয়ে মনে মনে রাশেদের চৌদ্দ গুষ্টির নিপাত করে, একদিন কইবেন খাইবেন না আবার কইবেন খাইবেন এইডা কিন্তুক অইবো না , রাশেদ ইদ্রিসের হাত ধরে বলে ভাই, আজকের মতো একটু দেখেন, সকাল থেকে কিছুই খাই নাই , দুপুরে না খেলে মরে যাবো, আজ মানিয়ে চলেন এর পর এমন আর হবে না । ইদ্রিস পরে বিপদে একদিকে ইয়াসমিনের মাখনের মতো পেট, দুধেল গাইয়ের মতো ভাড়ি স্তন অন্যদিকে রাশেদের আবদার । মনে মনে ইদ্রিস ঠিক করে ফেলে রাশেদ কে না করে দেব । রাশেদের দিকে তাকিয়ে মুখ টা করুন করে বলে না রে ভাই মিল রেডি এর মধ্যে আপনার জন্য কিছু করতে পারবো না। ঘুড়ে ঘরের দড়জা টা কেবল লাগাচ্ছিলো এমন সময় পেছন থেকে কে যেন বলে ওঠে, ইয়াকুব সাহেবের মিল টা দিয়া দেন হ্যারে । ভুরু কুঁচকে ঘুরে দাঁড়ায় ইদ্রিস, দেখে মিলন রাশেদের পাশে দাঁড়িয়ে । ইয়াকুব সাহেব তাইলে কি খাবে কচু? ঠোঁট বাঁকিয়ে খেকিয়ে ওঠে ইদ্রিস । আরে না, হাসতে হাসতে বলে , ইয়াকুব সাহেব কে দেখলাম চুলে টেরি কেটে, পারফিউম মেখে কোথায় যেন গেলো। মনে হয় না , দুপুরে খাবে । তার খাবার টা রাশেদ ভাই কে দেন তাইলেই তো ল্যাটা চুকে যায় । আয় হায় হায় বলো কি , উনি যে খাইবেন না আমারে আগে বললেই হতো, আমি মিল কমায়ে দিতাম ।রাশেদের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে তো আর কি যাও, মিলের ব্যবস্থা তো হইলো, ঘরে গিয়া হুইয়া থাহো, সময় হইলে আইসা পইরো । রাশেদ মাথা দুলিয়ে চলে যায় । ইদ্রিস মিয়ার মেজাজ আরো খারাপ হয় , দুইটা মিল পাইলে আগামী দুই তিন দিনের একটা ব্যবস্থা রফাদফা করা যাইতো ইয়াসমিনের সাথে । ধুর, অভাগা যে দিকে চায় খাল সেই দিকেই শুকায় । চোখের সামনে ইয়াসমিনের গোল পাছা টা ভেসে ওঠে কেমন ডাইনে বায়ে তিরিক তিরিক নাচিয়ে হাঁটে । যা এক খান শরিল বানাইছে , ইচ্ছা করে খাবলা মারি । ঠাস করে ঘড়ের দরজা বন্ধ করে দেয় ইদ্রিস ।

দুপুরের খাবার খেয়ে ভাত ঘুম দেবার জন্য রুমে এসে শুয়ে পরে রাশেদ । কতক্ষন ঘুমিয়েছে বলতে পারবে না, দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় । পুরা ঘর অন্ধকার হয়ে আছে ।দেয়াল ঘড়ির তে রেডিয়ামের আলো তে দেখতে পায় সন্ধ্যা ছয়টা বাজে । অলস পায়ে উঠে দাঁড়ায়।ঘড়ের দরজা খুলে দেখে পাশের ঘরের রিমন দাঁড়িয়ে । কি মিয়া, মেঘলা আকাশ পাইয়া ভালোই একটা ঘুম দিল আমন কয় ? ঘরের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে বলে । সইরা দাড়াও মিয়া, জম দুতের নাহান দরজা আটকাইয়া দাড়ায়ে আছো । আসল জায়গায় আটকানর নাম নাই ঘরের মধ্যে জম দুত । হাসতে হাসতে আশে পাশে বসার জন্য চেয়ার খোজে রিমন ।অপ্রস্তুত হয়ে দরজা থেকে সরে গিয়ে কোনা থেকে চেয়াড় টেনে দেয়।কি বলেন রিমন ভাই, মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।মেঘলা মেঘলা তাই গা ম্যাজ ম্যাজ করছে । হ, ওই ম্যাজ ম্যাজি করাও ওই দিক দিয়া লাভার তো ভাগলো বইলা । মানে, হা করে তাকিয়ে থাকে রাশেদ । আরে তোমার লাভার কি যেন মাইয়াডার নাম, কেয়া, হয় হয় কেয়া , হেরে তো দেখলা আমাগো ইয়াকুব বুইরাডার লগে হাতির ঝিলের বেঞ্চে বইসা বাক বাকুম বাক বাকুম করতে । রাশেদ বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে রিমনের দিকে, সে কিছুই বুঝতে পারে না । না ভাই , আপনি ভুল দেখছেন। ভুল আমি , হা হা হা ! ভালো কইছো, মাথা নাড়তে নাড়তে বলে রিমন । পকেট থেকে পান বের করে মুখে দিয়ে বেশ আয়েশ করে চাবাতে থাকে । তোমার লাভারের নাম কেয়া না? মাথায় ঘন চুল, চোখ গুলা দেশি ষাড়ে মতো কাজল দেয়া, গালে তিল আছে , হাসলে টোল পরে , কাশ ফুলের মতন ধবধবা । মাথা নাড়ে রাশেদ না, না । আপনি ভুল দেখছেন কিন্তু মনের ভেতর খামছে ধরে। রিমনের বর্ননা মিলে যায় কেয়ার সাথে । রিমন উঠে দাঁড়ায়, ভুল হইলেই ভালো ভাই, আইজকাল কাউরে বিশ্বাস নাই, দেখনা তোমার ভাবী আমারে ছাইড়া সেই যে বিদেশ গেলো আর আইলো না । তোমার যেনো এমন না হয় । যেতে যেতে পিচ করে একদল পানের পিক দরজার কোনে ফেলে আড় চোখে চেয়ে হাঁসি দিয়ে চলে যায় । সন্ধ্যার আঁধারে জগদ্দল পাথর হয়ে বশে থাকে রাশেদ ।

ফোন বেজেই চলছে । কেউ ধরে না । জেদ করে আবার ফোণ দেয় রাশেদ । ফোন বন্ধ । ফোনের বাসিন্দা যান্ত্রিক কন্ঠে বলে, আপনার কাংখিত নম্বার টি এই মূহুর্তে বন্ধ রয়েছেম দয়া করে আবার চেষ্টা করুন । রাশেদের অসংখ্যবার চেষ্টা করে। একি জবাব । রাশেদের সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে যায় । দুই হাত থর থর করে কাঁপে । আবার ফোন করে , ফোন বন্ধ । নিশ্চই রিমন ভাই ভুল দেখেছে । কেয়া তো বললো ওর বাসায় কি সব ঝামেলা তাই আসতে পারবে না মনে হয় ঝামেলার কারনে ফোন বন্ধ । নিজেকে সান্ত্বনা দেয় রাশেদ । মেসর পাশে চা এর দোকানে বসে চা খেয়ে মাথার ঝিম ঝিমানি কমাতে চলে আসে রাশেদ । চা ওয়ালা মেজবা , রাশেদ কে দেখে মাথা নাড়তে নাড়তে বলে , ভাই দিনকাল কি হইছে দেখছেন?
কি হইছে ?
আপনাগো মেসের ইয়াকুব সাব, হেয় নাকি হাটুর বয়সি এক মাইয়া লইয়া হাতির ঝিলে বইসা লটকা লটকি করতাছে । দিন কাল খুব খারাপ ।
কে বললো আপনাকে
কেন রিমন ভাইজনে , হেই তো ঘটনা জানাইলো, বড় ভালো মানুষ কিন্তু বউডাই থাকলো না । আমারে খুব ভালো পায় , কয় মেজবারে বিয়া শাদি করিস না । বিয়া হইলো বিষের লাগান, খাইলেই কট !
আরে না, রিমন ভাই ভুল দেখেছেন। ইয়াকুব ভাই বয়স্ক মানুষ , হয়তো তার কোন আত্মীয়র সাথে কথা বলছিলো ।
কি কোন ভাই আত্মিয়রে কেউ কোলে বসায় নি । আপনি ভাই বহুত আলা ভোলা আছেন । দোকানের ভেতর থেকে অদ্ভুত কায়দায় মাথা বের করে ইশারায় কাছে ডাকে রাশেদ কে, হুনলাম হেই মাইয়াডারে আপনি চেনেন। চোখ সরু করে জিজ্ঞাসা করে মেজবা । আপনার লগে কিছু ছিলো টিলো নাকি ? আই মানে ইসক টিসক !! পান খাওয়া লাল দাঁত দেখিয়ে খ্যাক করে হেসে ওঠে মেজবা ।
রাশেদ মেসের দিকে হাটা দেয় । পেছন থেকে মেজবা চিৎকার করে ডাকে , কি অইলো, চা খাইবেন না , রাগ দেখান কিয়ের লাইগা । ভালা কতার জামানা নাই । এক্ষণ এই কাপ চা আমি কারে খিলাই । আমারি খাওন লাগবো । হালার পয়সার জিনিস কেউ ফালায় দেয় ।
মেসে ফিরে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে ঝিম মেরে খাটের উপর বসে থাকে অন্ধকারে । লাইট জ্বালাতে ইচ্ছা হয় না । মোবাইল ফোনের নীল আলো জ্বলে ওঠে । ঝন ঝনিয়ে বাজে রিং টোন । ফোন টা হাতে নিয়ে চেয়ে দেখে কেয়ার ফোন । একবার ভাবে ফোন ধরবে না কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরে । কি ব্যাপার এতো ফোন দাও কেনো ? তোমাকে না বললাম আমি ব্যস্ত থাকবো ফোন দেবা না । কেয়ার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে রাশেদ । হাতির ঝিলে কার সাথে ছিলা , অভিমানে গলা বুজে আসে রাশেদের । ওপাশ থেকে কোন শব্দ আসে না । কিছুক্ষনের জন্য নিঃশব্দ থাকে , এর পর বেশ নড়বড়ে গলায় বলে কেয়া, কি সব আবল তাবল বলো ? আমি হাতির ঝিলে কেনো যাবো? কোথায় পাও এই সব কথা । রিমন তোমাকে দেখছে, ইয়াকুব সাহেবের সাথে । চিৎকার করে ওঠে কেয়া, তুমি কি আমার পেছনে লোক লাগাচ্ছ, ওই রিমন নিজেই তো মহা শয়তান, আর আমি কেনো ইয়াকুব সাহেবের মত একজন বয়স্ক লোকের সাথে হাতির ঝিল যাবো? তোমার রুচি এতো খারাপ হলো কি করে? নিজের প্রেমিকা কে নিয়ে বাজে কথা বলতে তোমার বাধে না ? রাশেদ বুঝতে পারে কোথাও কোন ভুল হচ্ছে , সে তারাতারি নিজেকে শুধরে নেয় । না না , সত্যি বলছি আমি বিশ্বাস করি নাই , কিন্তু সন্ধ্যার সময় রিমন ভাই এমন করে বললো তাই কেমন জানি লাগলো তার উপরে তুমি ফোন ধরো না আবার ফোন বন্ধ ছিলো তাই একটু উ উ, তুমি কিছু মনে করো না । ওপাশ থেকে কেয়ার অভিমানী কন্ঠ শোনা যায়, তুমি আমাকে কি বিশ্বাস করো না ?
না না বিশ্বাস কেনো করবো না , করি তো !!
একদম বিশ্বাস করো না , তুমি আমাকে আর ফোন দিবা না
প্লিজ কেয়া অমন করে বলো না । আমি ভুল করেছি , ক্ষমা চাচ্ছি ।
হ্যা এখন ক্ষমা চাবা আবার আমাকে যা না তাই বলবা । ফোন রাখো আমি অনেক ক্লান্ত । আমি না বললে ফোন দিও না । তুমি কেনো বোঝ না আমাকে সব দিক মানিয়ে চলতে হয় , বাসায় যদি জেনে যায় আমাকে তোমার সাথে কথা বলতে দেবে না , তখন বুঝো । আর শোন কাল আমি একটূ মিটিং এ ব্যাস্ত থাকব, কাল আমাকে কল করো না আমি ফ্রী হয়ে কল করবো ।
ঠিক আছে আমি কল দেব না , রাগ করো না প্লিজ । আকুতি মিনতি করতে থাকে রাশেদ ।
হু ফোন রাখ, রাতে আর কল দেব না। খুব ক্লান্ত, ভালো থেক বাই ।
ফোন রেখে এক চোট গালি দেয় রিমন কে । এই লোক নিজে খারাপ তাই সবাই কে খারাপ ভাবে। ব্যাটা তোর বউ গেছে বলে সবার জীবন এমন হবে এমন টা ভাবিস ক্যান । মন টা তিতা হয়ে গেলো রাশেদের। শুধু শুধু রিমনের কথা শুনে কেয়া কে সন্দেহ করার জন্য নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো । কি দরকার ছিলো রিমনের কথা বিশ্বাস করার । আর রিমন ও আছে দুনিয়ার সবার কাছে যা না তাই বলে বেড়াচ্ছে, চা ওয়ালা পর্যন্ত বাদ দেয় নাই ।

সপ্তাহের একদিনই ছুটি ।আর সেই ছুটি শেষে অফিস যাবার কথা মনে হলেই গায়ের জোর কমে আসে । ইচ্ছা হয় আরো ঘুমাই । কিন্তু রাশেদের এই আলসেমি টা করা হয়ে ওঠে না । অফিসের বস মারাত্বক ঝগড়াটে । লেট করে অফিসে ঢোকার কোন উপায় নাই । ভদ্রলোক নিজেই সকালে এসে বসে থাকে ।বিজ্ঞাপনের অফিস । মিডিয়াতে বেশ ভালো নাম ডাক আছে । ক্রিয়েটিভ ডেস্কের প্রধান ক্রিয়েটিভ কর্মকর্তা রাশেদ।এক দিন দেড়ি করে গেলে পঞ্চাশ দিন শুনতে হয় যার হেড আলসে তার সহকারীরা তো নবাবজাদা হবেই । রাশেদ তাই সকাল সকাল অফিস গিয়ে বসে থাকে । কাজের চাপ না থাকলেও সবার আগে অফিস গিয়ে বসে থাকে । অবশ্য বিজ্ঞাপনী অফিসে কাজের চাপ না থাকা মানে সবার বেতন বন্ধ । ক্ল্যায়েন্টের অদ্ভুত আবদার মেটাতে মেটাতেই দিন শেষ । গতো সপ্তাহে এক আন্ডার গার্মেন্টসের ক্লায়েন্ট এর আবদার নিয়ে এলো এখনকার সেরা মডেল কে তার জাঙ্গিয়ার মডেল করতে হবে সেই জাঙ্গিয়ার রঙ আবার কমলা । প্রথমত সেই মডেল কোন ভাবেই জাঙ্গিয়ার মডেল হতে চাচ্ছে না , বাবা সোনা লক্ষী বলে কোন রকমে রাজী করালেও কমলা কালারের জাঙ্গিয়া সে মরে গেলেও পরবে না, এতে তার রেপুটেশান খারাপ হবে বলে ফোন বন্ধ করে বসে থাকলো । ওদিকে ক্ল্যায়েন্ট বারবার তাগাদা দিচ্ছে তার বিজ্ঞাপন কেনো বিলবোর্ডে দেখা যাচ্ছে না । ক্ল্যায়েন্ট কে মডেল পরিবর্তনের কথা বলতেই সে আরো রেগে গেলো তার ওই মডেল চাইই চাই , শেষে উপায় না দেখে বলতে বাধ্য হলো যে মডেল কমলা রঙের জাঙ্গিয়া পরতে চাচ্ছে না , ক্লায়েন্ট মুখের উপর বলে দিলো হয় মডেল রাজি করাও নতুবা ক্ষতিপুরন সহ চুক্তির টাকা ফেরত দাও । অবস্থা বেগতিক। বস কে জানাতে, বস আরো এক ডিগ্রী বাড়িয়ে বললো যেমনে হোক মডেল রাজি করাও, টাকা ফেরত দেবার প্রশ্নই আসে না ।

অনেক তথ্য তালাশ করে বিশেষ কয়েক জায়গায় খোঁচা দিয়ে জানা গেলো মডেল হোটেল সোনারগাঁও এর এক রুম নিয়ে লুকিয়ে আছে । সোনারগাঁও এর রিসিপশানে বেশ চেনা জানা আছে । অফিস থেকে কেউ কে কিছু না বলে চলে গেলো সোনারগাঁও । রিসিপশানে ইশতিয়াক আছে, ওঁকে মডেলের কথা জিজ্ঞাসা করতে সরাসরি না বলে দিলো , এমন কেউ নাই বলে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলো । রাশেদ ও ছাড়ার পাত্র না, ইশতিয়াক কে পাশে ডেকে এক হাজার টাকা গুঁজে দিলো পকেটে । না ভাই এই লোক নাই বলে টাকা ফেরত দিলো ।
ইশতিয়াক, আমি জানি উনি এখানেই আছে , খবর পাক্কা ।
তো যে বলছে তার কাছে গিয়ে খোঁজ নেন, আমি তো বললাম নাই ।
ছোট ভাই দেখ প্লিজ, আমার চাকরি থাকবে না ওঁকে না পেলে । ইশতিয়াক হাঁসি দিয়ে বললো, চাকরি হারানোর ভয় আপনার একার না আরো অনেকেরেই আছে । আমি কেউ কে বলবো না, তুমি রুম নাম্বার বলো , বাকি সব আমি সামলে নেব । ইশতিয়াক ইশারায় বসতে বলে ভেতরে চলে গেলো । রাশেদ ওয়েটিং হলে গিয়ে বসলো । এক টা জুসের অর্ডার দিয়ে পাঁচ তারা হোটেলের নরম গদিতে গা এলিয়ে দিলো । কিছুক্ষন পর ইশতিয়াক এসে একটা কাগজ ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো অবশ্য যাবার সময় এক হাজার টাকাটা গুনে নিয়ে গেলো ।

রুম নং ৪০১১ । লিফটের তিনে উঠে ডান দিকের প্রথম রুম । নক করার বেশ কিছুক্ষন পর দরজা খুলে দিলো । রাশেদ কে দেখে চমকে যায় মডেল মঞ্জুর রহমান । রাশেদ ভাই আপনার জ্বালায় কি আমি একটু শান্তিতে কোথাও যেতে পারবো না? হেঁসে ফেলে রাশেদ , নারে ভাই আমি কিভাবে জ্বালাই আপনাকে । রুমে ঢুকে কথা বলি? দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় মঞ্জুর । রুম টা বেশ গোছানো, রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে রাশেদ । আমি কিন্তু ওই এ্যাড করবো না, সোফায় বসতে বসতে বলে মঞ্জুর । না ভাই, আমি এসেছিলাম একটা নিউজ নিয়ে সত্য কি না জানার জন্য, মঞ্জুর চমকে ওঠে, কি নিউজ? বসে বলি, রাশেদ মুখ টিপে হাসে ।
আরে হ্যা বসুন, কর্নারের সোফা দেখিয়ে দেয় মঞ্জুর ।
শুনলাম আপনি জার্মানী যাচ্ছেন
হ্যা যাচ্ছি, মাথা দোলায় মঞ্জুর এটা তো সবাই জানে এ আর নতুন কি জানালেন বাঁকা হাঁসি হেসে সিগারেট ধরায় মঞ্জুর ।
অদিতী ম্যাডাম ও যাচ্ছে শুনলাম তাও আবার একি ফ্লাইটে জার্মানী , জানেন নাকি কিছু । মঞ্জুরের সিগারেট ধরা হাত থেমে গেলো , দুই ঠোঁট চেপে ধরে চোখ ছোট করে কিছুক্ষন চেয়ে থাকলো । আপনি কি ভাবে জানলেন ?
এই কিছু খবর তো রাখতেই হয় , আপনার গুনমুগ্ধ যেহেতু তাই টুকটাক খবর চলেই আসে ।
কমলা রঙ টা বাদ দেয়া যায় না এ্যাড থেকে , সিগারেটের ছাই ঝাড়তে ঝাড়তে বলে মঞ্জুর ।
না ভাই ওটা ক্লায়েন্টের দাবী, আমার কিছুই করার নাই ।
ঠিক আছে তাইলে আর কিছু করার নাই। আমার রেপুটেশানের দিকে আমাকে তাকাতে হয়। বুঝতে পারছেন ।
ঠিক আছে বাদ দেন , ও আমরা সামলিয়ে নেব। যখন করবেন না তখন আর কি চলি ।
খুশি হয়ে উঠে দাঁড়ায় মঞ্জুর রহমান, নেক্সট কোন প্রজেক্টে বলবেন , ফ্রী করে দেব , এইবার টা হলো না, মাইণ্ড করবেন না । রাশেদ হাঁসি দিয়ে বললো না না , সে কি মাইন্ড করার কি আছে । দরজার কাছাকাছি এসে ঘুরে দাড়ালো রাশেদ , ভাই সেই দিন ভাবীর সাথে নিউ মার্কেটে দেখা , আশ্চার্য কি জানেন তিনি জানেন না আপনি জার্মানী যাচ্ছেন সাথে যে অদিতী ম্যাডাম যাচ্ছেন তাও জানেন না , আমি তো ভাবলাম এটা আপনাদের ফ্যামিলি ট্রিপ ।
তিন দিনের মধ্যে কাজ শেষ করবেন , আমি আপনাকে তিন দিনের বেশি সময় দিতে পারবো না, গম্ভির গলায় বললো মঞ্জুর রহমান । হাতে যেনো পুর্নিমার চাঁদ পেলো এমন একটা ভাব করে রাশেদ মঞ্জুরের হাত চেপে ধরলো । ভাই আমাকে চিন্তা মুক্ত করলেন, তিন দিন কেনো দুই দিনে কাজ নামিয়ে দেব, সেই সাথে আপনার আর অদিতী ম্যাডামের জার্মানীর আপ ডাউন টিকেট আমাদের পক্ষ থেকে কমপ্লিমেন্টরি ।

খানিক টা জোরে দরজা বন্ধ করে দিলো মঞ্জুর রহমান । অস্পষ্ট একটা গালিও শুনিয়ে দিলো, সোয়াইন । ফুরফুরা মনে লিফটের বোতামে চাপ দিতে যেতেই লিফট খুলে গেলো, ভেতরে ইয়াকুব সাহেব আর কেয়া, দুই জন দুই জন কে জড়িয়ে ধরে আছে। কারোই হুস নাই । রাশেদের শরীর থেকে সমস্ত শক্তি এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো । ইয়াকুব সাহেব প্রথম দেখলো রাশেদ কে , কোমর থেকে কেয়ার হাত সরিয়ে এক পাশে সোরে গেলো । কেয়া খানিক ঢুলু ঢুলু চোখে রাশেদ কে দেখে সোজা দাড়িয়ে গেলো তারপর মাথা নিচু করে রইলো । রাশেদ লিফটের সামনে থেকে সরে দাড়ালো । ইয়াকুব সাহেব দ্রুত লিফট থেকে বেড়িয়ে খানিক টা দৌড়ে তার রুমে ঢুকে গেলেন । কেয়া মাথা উচু করে কিছুক্ষন রাশেদের দিকে তাকিয়ে রইলো তার যেনো অনেক দিনের অভ্যেস এমন ভঙ্গীতে হেটে পাশ কাটিয়ে ইয়াকুব সাহেবের রুমে ঢুকে জোড়ে দরজা বন্ধ করে দিলো ।

মেস ম্যানেজার ইদ্রিস পুরা মেস মাথায় তুলে নিয়েছে চিৎকার করে । ভদ্রলোকের বাড়িতে নটি গিরি চলবে না , তার সামনে মিলন আর ইয়াসমিন দাঁড়িয়ে । আজ তিনি দুই জন কে হাতে নাতে ধরেছেন ।বনানীর মতো জায়গায় পুরা পাঁচ তালার মেস তিনি একা হাতে সামলান । তার নাকের ডগার সামনে দিয়ে এমন কাজ হচ্ছিলো তিনি তা ঘুনাক্ষরেও টের পান নাই , এটা জেনেই তার মেজাজ আরো খারাপ হচ্ছে । ইচ্ছা করছে মিলনের কলার ধরে ইচ্ছা মতো পিটাতে কিন্তু পারছেন না , মিলন দুই বেলা ব্যায়ম করে হাতের মাসেল ভালোই ফুলিয়েছে । তারপরেও মিলনের দিকে বিষ চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললেন মিলন সাব আপনি আইজি মাল পত্র নিয়ে মেস ছাড়বেন , আমার মেসে এমন অন্যয্য কাহ চলবে না । মিলন হাসতে হাসতে বলে, আপনি যে ইয়াসমিনের গায়ে হাত দেন এর ভিডিও আমার কাছে আছে আমি সবাই কে দেখিয়ে দেব ।
অস্তাগফেরুল্লাহ, নিজে পাপা কাজ করে এখন আমাকে দোষ দেন । আমি আইজি থানায় যাবো । আমার সাথে ধোকাবাজি ।
মামা, আমারে মাফ করে দেন, ইয়াসমিন হাত চেপে ধরে ইদ্রিসের, ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয় ইদ্রিস , ধুর মাগী, আমি তোর কোন কালের মামা লাগি । আমারে মামা কছ কোন আক্কলে । এই জন্যই কি তরে আমি খাওয়াইছি ? মাইনসের মিল চুরি কইরা , সব গুলা ধোঁকাবাজ ।
আপনারে তো জেলে দেয়া উচিৎ, মানুষের খাবার চুরি করে কাজের বুয়া কে খাইছেন , মিলন চেঁচিয়ে ওঠে । খবরদার , খবরদার কইলাম, আপনে কতা কইবেন না , চোরের সাক্ষী গাট কাটার । দুইটারেই থানায় দেয়া উচিৎ । দিলাম না , ভাগেন আমার মেস থেকে । আমার মেসে পাপের কোন স্থান নাই ।

দূর থেকে ইদ্রিস মিয়ার আহাজারি শোনা যাচ্ছে । রাশেদ অফিসে ফেরত না গিয়ে মেসে ফেরত আসে । রাশেদ কে দেখে ইদ্রিস মিয়া ছুটে এলো , শুনছেন রাশেদ সাব, মিলন আর খানকী ইয়াসমিন কি করছে? শুনলে আপনার মাতায় বাজ পইরবে । তারা নটির কাম করছে , আমার মেস অপবিত্র করছে । আপনি বিচার করেন । আমার মনে আশা ভরসা সব নষ্ট কইরা দিলো ওই খানকি । রাশেদের কানে কোন কথায় ঢুকছে না । ইদ্রিস কে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে গেলো । ইদ্রিস মিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রাশেদের দিকে । কি মাল এইডা , এমন একটা সংবাদ দিলাম কোন হিল দোল নাই । এই হালায় ও ইয়াসমিনের লগে হুইছে মনে কয় । সব হালায় লুইচ্চা । ওই মিলইন্না তুই অক্ষন আমার মেস থেকে ওই নটিরে নিয়া বাইর হ ! দাঁত মুখ খিঁচিয়ে চেঁচাতে থাকে ইদ্রিস মিয়া ।

বিছানার উপর নিথর পরে থাকে রাশেদ । ফ্যানের ব্লেড গুলো সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অথচ ফ্যান ফুল স্পিডে ঘুরছে । ফ্যানের সাথে রশি প্যাচালে কি ফ্যান খুলে পরবে ? নাকি জানালায় রশি পেচাবে । জানালা টা শক্ত পোক্ত আছে । খাটের নিচ থেকে রশির বান্ডিল নিয়ে এগিয়ে যায় রাশেদ । সন্ধার আঁধর এসে রাশদের ঘরের আলো নিভিয়ে দিলো । দূরে কোথাও মাগরীবের আজান শোনা যাচ্ছে । ইমাম সাহেব সবাই কে নামাজের জন্য ডাকছেন ।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৩

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: আপনিও এত বড় বড় পোস্ট লেখা শুরু করছেন? এখন আমার মতো অলস দের কি হবে?

০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৪

রানার ব্লগ বলেছেন: ইহা গপ্প !!

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১৮

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: দেখে বুঝলাম পড়তে অনেক সময় লাগবে।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:২৩

রানার ব্লগ বলেছেন: আশাকরি পড়ে জানাবেন কেমন লাগলো।

৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:২৪

আমার বাংলা টুমি বলেছেন: ভালো লিখচেন

০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:২৬

রানার ব্লগ বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!!

৪| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৫

মিরোরডডল বলেছেন:




কেয়া্র মতো স্বৈরাচারী এবং প্রতারক প্রেমিকার জন্য কি এই ছেলে আত্মহত্যা করবে!!
রানা এই গল্পে ভালো নাটক হতে পারে।


০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২২

রানার ব্লগ বলেছেন: একটা গান মনে পরে গেলো ।

Keno Piriti Baraila Re Bondhu

৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৬

শ্রাবণধারা বলেছেন: গল্প ভালো লাগলো। বর্ননা বেশ হয়েছে। গল্পের নামটিও বেশ সুন্দর।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৪

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ !! কষ্ট করে পড়ার জন্য !!

৬| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: রানার ব্লগ,




বেশ জম্পেশ করেই বাদল দিনের বদলা হাওয়ার গল্প লিখলেন।
তরতর করে পড়েছি। "জলে ভরা পোয়াতি মেঘ" রূপকল্পটি দারুন হয়েছে।
ভালো লেগেছে।

০৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৩৮

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ!!

৭| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২০

খায়রুল আহসান বলেছেন: 'কড়াৎ' করে চড় খেয়ে ছিটকে পড়ার নাটকীয় দৃশ্যপট টা যেন কল্পনায় দেখতে পেলাম। "জলে ভরা পোয়াতি মেঘ" কথাটাতেও লেখকের কল্পনাশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।

২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ !!

৮| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: "আড় চোখে চেয়ে দেখে কোন কল এলো কিনা" - :) :)
গল্পের প্লট শিরোনামের প্রতি সুবিচার করেছে।

২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫০

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ , আপনাদের এমন উৎসাহ পেলে লিখতে আগ্রহ জাগে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.