নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুষুপ্ত পাঠক

লেখক

সুষুপ্ত পাঠক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এমন দেশটি তুমি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো...

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:০৩

সরকার ব্লগারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। 'ইসলাম ধর্ম' সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যকারী ব্লগার ও ফেইসবুক ব্যবহারকারীদেরকে খুঁজে বের করার জন্য সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। রাতের আঁধারে, কোন রকম আইনী তোয়াক্তার ধার না ধরে তারা ব্লগারদের চোর-ডাকাতের মত গ্রেফতার করছে। দাগী আসামীর মত দাঁড় করিয়ে মিডিয়ার সামনে এনে ফটোশেসন করাচ্ছে। গত কয়েকদিনে এই ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। 'নাস্তিক' ব্লগারদের ধরতে সরকার তৌহদী জনতার আহ্ববানে সাড়া দিয়েছে অবশেষে!

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, শুধুমাত্র 'ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারীকে' সরকার শাস্তি দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে, অন্য ধর্ম অবমাননাকারীকে নয়। বাস্তবিকই তাই, অন্য ধর্মের মূর্তি ভাঙ্গা যদি ধর্ম অবমাননা হয়ে থাকে তাহলে সরকার তাদের ধরার জন্য কোন কমিটি গঠন করেছে বা তার কোন বাস্তব উদ্যোগ নিয়েছে বলে এখনো আমরা শুনিনি। হিন্দুদের মন্দিরে হামলা ও তাদের মূর্তি ভাংচুর, তাদের বসতবাড়িতে যারা হামলা করেছে তাদের চিহ্নিত করেছে ক্ষতিগ্রস্তরা। তবু আজ পর্যন্ত সরকার সেই সব দুষ্কৃতকারীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এ থেকে আমরা এটাই ধরে নিতে পারি যে, সরকার শুধু ইসলাম 'হেফাজতের' দায়িত্বই কাঁধে নিয়েছে। অন্য ধর্মকে অবমাননাকারীদের ব্যাপারে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। আমরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলবো আর কার্যে তার বিপরীতটা করবো এটা তো রাষ্ট্রের দ্বৈত নীতি হয়ে গেলো। আজকে কেউ যদি মূর্তি পূজাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে, সমালোচনা করে কোন বক্তব্য দেয় বা প্রকাশ করে তাহলে সেটা কি ধর্ম অবমাননা বলে ধরা হবে না? কোন ধর্ম সম্প্রদায়কে অভিশাপ বর্ষণ করা বা ধ্বংস হয়ে যাবার আকাঙ্খার নিমিত্তে বক্তব্য রাখাকে কোন পর্যায় বলে ধরা হবে? ইসলাম ও ইসলামের প্রফেটকে নিয়ে কোন বিরূপ মন্তব্য করা যদি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে অন্য ধর্ম বা অন্য ধর্মের মহাপুরুষকে হেয় বা কাল্পনিক বলে যখন অভিহত করা হয় কেন সেটা অবমাননা বলে ধরা হবে না? এমন কি যখন অন্যের পবিত্র জ্ঞান করা ধর্মীয় গ্রন্থকে জাল বা বিকৃত বলা হয় তখন সেই ধর্ম আর তার অনুসারীদেরকে কি ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা হয় না? এক্ষেত্রে ইহুদী-খ্রিস্টানরা কি ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হন না। নাকি 'ধর্মানুভূতিতে আঘাত ' এটা শুধুমাত্র ইসলাম ও তার হেফাজতকারীদের জন্য নির্দিষ্ট! যখন এই দেশেই কাদিয়ানীদের অমুসলিম আখ্যা দিয়ে তাদের মসজিদকে জোর করে 'উপসনালয়' সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয় পুলিশি পাহারায় তখন সেটাকে ধর্ম অবমাননা নয়?

এদেশে কারা 'ধর্মানুভূতিতে আঘাত' হননের অভিযোগ আনেন বারবার? এরা হচ্ছে তারাই যাদের প্রতি একই অভিযোগ অনায়াসে তোলা যায়। জাকির নায়েক প্রকাশ্যে বক্তৃতার মাধ্যমে অন্যের ধর্মগ্রন্থের কোথায় কোথায় ভুল, অসংগতি, ত্রুটিপূর্ণ, অবৈজ্ঞানিক তথ্য আছে তুলে ধরেন, সেখানে একই কাজ যখন একজন ব্লগার ব্লগে করে থাকেন তখন কেন সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে? ব্লগারও তো জাকির নায়েকের মত ধর্মগ্রন্থের কোথায় কোথায় ভুল, অসংগতি রয়েছে সেসব নিয়ে লিখে থাকেন। জাকির নায়েক প্রমাণ করতে চান একমাত্র ইসলামই কত বিশুদ্ধ আর অন্য ধর্মগুলি কত অশুদ্ধ আর ভুলে ভরা। বাক স্বাধীনতা যদি জাকির নায়েকের থেকে থাকে তাহলে একজন ব্লগারেরও আছে। পরিস্কারভাবে তাই বলা যায়, ইসলাম নিয়েও কারুর সমালোচনা, ভিন্নমত থাকতেই পারে। কেউ অবশ্যই ইসলামের অসংগতি নিয়ে কথা বলতে পারেন। যেমন পারেন অন্য ধর্ম নিয়েও। যেটা জাকির নায়েক সহ ইসলামের বহু পন্ডিতই করে থাকেন। বাংলাদেশের বাজারে এরকম সিডি-ডিভিডি, বইপুস্তকে সয়লাব। ইসলামীক টিভি ও পত্রিকার মাধ্যমেও এসব এখন সহজলোভ্য। তাহলে ধর্ম অবমাননা আসলে কি? কিভাবে ধর্ম অবমাননা হয়ে থাকে?

সোজা কথা ধর্ম পালন না করাই ধর্ম অবমাননা। কোন কিছুকে না মানাই তো অবমাননা, তাই না? সেই ক্ষেত্রে আমি যদি ধর্ম না মানি তাহলে কি আমি শাস্তি যোগ্য অপরাধে অপরাধী হবো? বাংলাদেশের কোন আইনে সে বিচার করা সম্ভব? আর এই আইন ও শাস্তি কি তাদের জন্যও যারা হিন্দু মন্দির আর বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করেছে? ভাংচুর করেছে তাদের উপাসনার দেবতাকে। নাকি এই আইন শুধুমাত্র কথিত 'ইসলাম অবমাননাকারীদের' জন্য?

শিবিরের নিষ্ঠুর ভয়ংকর কর্মীরা রাজপথে পুলিশের মাথা ইট দিয়ে থেঁতলে দেয়। বাইতুল মোকারমে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। রেললাইন উপড়ে ফেলে। জীবন্ত পুড়িয়ে মারে নিরহ পথচারীকে। অথচ তার বদলে চোর-ডাকাতের মত গ্রেফতার হয় নিরহ ব্লগাররা! ...কবি বলেছেন, এমন দেশটি তুমি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো। সত্যি এমন দেশটি আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোথাও না!



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.