![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেদিন ধর্ম প্রসঙ্গে বাসায় কথা বলছিলাম। এক পর্যায়ে আমার বাবাকে বললাম, নবীজীর মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল জানেন? বাবা বললেন, হুজুরপাক বয়েস হয়েছিল, আল্লাপাক তাকে স্বাভাবিক মৃত্যু দিয়েছিলেন। আমি বললাম, নবীকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি।...আরো কিছু বলতে গিয়ে আমি থেমে গেলাম। দেখি আমার মা-বাবার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। তারা এই ইতিহাস জানতেন না। আল্লার নবীর এই করুন শেষ পরিণতি তারা শুনে একটা ধাক্কা খেয়েছেন। আমি বলতে চাচ্ছিলাম, দুনিয়া যার জন্য সৃষ্টি হলো, সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মানিত স্থান যার জন্য নির্ধারিত, আল্লাহ প্রিয় বন্ধুর এই মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের কাছে আল্লাহ কি প্রমাণ করতে চেয়েছেন? বাপ-মার মুখ দেখে আর বলতে ইচ্ছা হলো না। খুব মায়া হলো। বাবা বিব্রতভাবে বললেন, থাক, আল্লাহকে চিনি, রসূলকে চিনি, ব্যস, আর কিছু বুঝতে চাই না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো...আমার অত জেনে লাভ নাই।...
এই হচ্ছে সব নিরহ ধর্মীকের বেকায়দায় পড়লে সরল আত্মসমর্পন। আমার বাবা-মার মত কোটি কোটি মানুষ সরল ধর্মজীবন পালন করে আসছে। আমার স্ত্রী আমার কথা শুনে ভয় পায়। সে ভয়মাখা সতর্কতায় বলে, তোমার কি মুখে কিছু আটকায় না? সেও অতশত বুঝতে চায় না। সিম্পল একটা বিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে চায়। আজন্ম যাদের ভয় পেয়ে এসেছে তাদেরকে আজ কিছুই না ভাবতে পারা সহজ কিছু না। নবী সম্পর্কে তাদের রয়েছে কিছু হাদিস ও গল্প সম্বল। কাফেরদের নবীর প্রতি অকথ্য অত্যাচার, নবীর বিনিময়ে কাফেরদের জন্য আল্লাহ কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, বিখ্যাত বুড়ি ও বড়ই কাঁটা ইত্যাদি হাদিস ও গল্প তাদের কাছে ইসলামের নবীর একটা মিথ গড়ে তুলেছে। নবীর রাষ্ট্র ও শাসক চরিত্র সম্পর্কে কোন ধারনাই তাদের নেই। তার যুদ্ধ ও গণিমতের মাল সম্পর্কে বিন্দু পরিমাণ তথ্য তারা কোনদিন কোথাও থেকে পায়নি। যুদ্ধ সম্পর্কে তারা এটুকু জানে, কাফেররা হুজুরকে আক্রমণ করেছিল, হুজুর মুসলমানদের রক্ষার জন্য আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ করেছিলেন। সাধারণ আমজনতা খলিফাদের সম্পর্কেও অনুরূপ কিছু গালগল্প ও হাদিস জানে। ওসমানের করুন মৃত্যু, আয়েশা ও আলীর মধ্যে উটের যুদ্ধ, খলিফার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ওমর কর্তৃক ফাতিমা ও তার পরিবার পরিজনসহ পুড়িয়ে মারার হুমকি আমজনতার কাছে অজানা। এসব যখন তারা দৈব্য আমাদের মত কারুর মুখ থেকে শুনে তখন নিশ্চিত পাগল ঠাউরায়। হাদিসে কোরআনে আছে ইত্যাদি প্রমাণকে তারা খন্ড করে এভাবে যে, আজ পর্যন্ত কোন হুজুরকে তো বলতে শুনলাম না এসব নিয়ে? হাদিসে থাকলে হুজুররা বলতো না? তাছাড়া এসব জেনে শুনেই বা হুজুররা ধর্ম পালন করছে কেন? তাদের কি চোখ নেই? বিবেক নেই?
হুজুরদের চোখ বিবেক আছে কিনা জানি না। তবে সাধারণ মানুষ এসব জানে না। তারা হঠাৎ এইরকম তথ্যের মুখোমুখি হলে প্রথমটায় বিহ্বল তারপরই ক্রদ্ধ হয়ে উঠে। কোরআন হাদিস থেকে দেখালেও বিশ্বাস করতে চায় না। তাদের যুক্তি যদি এসব মহাপুরুষ অন্যায় করে থাকে তাহলে তাদের প্রেরিত ধর্ম কোটি কোটি মানুষ পালন করছে কেন? এই প্রশ্নটা করার আগে তারা কিন্তু এটা চিন্তা করছে না যে, যে ধর্মগুলোকে তারা বাতিল বলছে বা শয়তানের ধর্ম বলছে সেসব ধর্মও তো কোটি কোটি মানুষ ভক্তিতে গদগদ হয়ে পালন করছে। তারা কিসের জোরে করছে?
না, তারা এভাবে ভাবতে পারে না। ভাবতে পারলে তারা ধর্ম পালন করতে পারতো না। নাস্তিক হতে গেলে চিন্তা লাগে, আস্তিক হতে গেলে কিছুই লাগে না। বাপ-মার দেয়া ধর্ম বিশ্বাস কোন প্রশ্ন ছাড়াই গ্রহণ করে নেয়। এই একটা ব্যাপার ভেবে আমার খুব অবাক লাগে। যখনই কোন নাস্তিক ভূত দেখার মত ঈশ্বরকে দেখতে পেয়ে আস্তিকতায় ফিরে আসে তখন কেন সে তার বাপ-মার থেকে পাওয়া ধর্মেই ফিরে আসে? বলা হয় আল্লাপাক হেদায়াত দেয়ার মালিক। যে খ্রিস্টান নাস্তিক আস্তিক হয়ে ফের খ্রিস্টান ধর্মমতে ফিরে গেলো তার হেদায়াত হলো কিভাবে? ছিল ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাসী, হলো ঈশ্বরে বিশ্বাসী, কিন্তু হেদায়েত হলো কিভাবে? প্রচলিত ধর্মগুলো এমন, শুধু ঈশ্বর বিশ্বাস করলেই হবে না, স্বধর্ম বিশ্বাসী হতে হবে। নইলে আস্তিক হয়েও ঈশ্বরের বানানো দোযগের আগুনে পুড়তে হবে! কি আজব কান্ড! নাস্তিক ও স্বধর্ম বিরোধী একই কথা। যাক সে কথা, বলছিলাম আমজনতার ধর্ম ও ধর্মীয় মহাপুরুষদের নিয়ে তাদের জ্ঞানের কথা।
সাধারণ মানুষ যত বেশি করে ধর্ম ও ধর্মীয় মহাপুরুষদের সম্পর্কে জানবে তত তারা ধর্মের সমালোচনামুখর হয়ে উঠবে। অন্তত নিভৃতে চিন্তা করে দেখবে। ধর্মের অসারতাগুলোকে নিজেরাই উপলব্ধি করতে শিখবে। এই যেমন অনেক নারী এখন প্রশ্ন করছে বেহেস্তে তাদের জন্য কি আছে? তাদের মুমিন স্বামী পুরস্কার সরূপ পাবে ৭২টা হুর। তারা কি পাবে? কোরআন হাদিস থেকে জবাব আসে, পূণ্যবতী নারী ৭২টা হুরের সর্দারনী হবেন! (বলেন সবাই সুবাহানআল্লাহ!) এটা কোন আত্মসম্মান জ্ঞান সম্পন্ন মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব? পরকালে এহেন পুরস্কাকে গ্রহণ করতে পারে কেবল মাত্র বোধবুদ্ধিহীন মানুষ। কাজেই ঈশ্বরের এই একচোখা নীতির সমালোচনা অনুভূতিশীল মাত্রই মনে জাগবে। তেমনি কোন সজ্জন ভাল মানুষ গণিমতের মাল হিসেবে যুদ্ধ বিজিত নারীদের আশ্রয় দেয়ার নামে সেক্স করাকে মানসিকভাবে মেনে নিতে পারে? তারা যখন এসব জানবে মহাপুরুষদের নিয়ে, মহাপুরুষদের এতদিনকার ভাবমূর্তিতে আঁচড় লাগবে না?
ধর্মকে মারতে হবে ধর্ম দিয়েই। শাস্ত্রকে মারতে হবে শাস্ত্র দিয়ে। ডারউন বা হকিংকের কথা ধার্মীক মানবে না। ধর্মীক ধর্মের কথাই মানবে। কাজেই তাকে তা দেয়াই উত্তম। আর এতেই ঝোঁকের মুখে যে নুন পড়েছে তা তো দেখতেই পাচ্ছি। “কোরআন ওনলি” থিউরির জন্ম হাদিস ভীতি থেকে। অর্থ্যাৎ হাদিস বাদ, শুধু কোরআনকে মানতে হবে। এই তো শুরু, দিন যত গড়াবে দেখবেন শুধু “ওনলি” আছে, তখন কোরআনও নেই!
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:২২
সুষুপ্ত পাঠক বলেছেন: @দিশার, আপনাকে ধন্যবাদ।
২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪০
কাফের বলেছেন: সব যাগায় এই একই চিত্র!
আমি তো প্রশ্ন কইরা বাপের হাতে মাইর পর্যন্ত খাইছি!
সব কিছু বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মস্তিস্কেরও বিবর্তন হচ্ছে, সরল থেকে জটিলের দিকে।
ধর্মীয় সরল ঐ সব গাল গপ্পো খুব বেশীদিন আর টিকবে না।
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৩
সুষুপ্ত পাঠক বলেছেন: যথার্থ বলেছেন। যতদিন যাবে মানুষ ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করবে। আগে এত নাস্তিক ছিল? ছিল না, দিনকে দিন বাড়বে। ধর্মের ব্যবসা এভাবেই শেষ হবে একদিন।
৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৭
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: আমি যখন এই ব্লগে প্রথম আসি তখন এটা ছিল নাস্তিকতার সরব চারণ ক্ষেত্র। বেশ কিছু নিক থেকে ধর্মের বিরুদ্ধে নাস্তিকতার পক্ষে প্রতি নিয়ত বহু পোস্ট দেয়া হত। সময় বদলেছে, সময়ের সাথে সাথে সামুর চরিত্র বা এর নিকের চরিত্রও বদলে গেছে। ইদানিং নাস্তিকতার পক্ষে তেমন একটা লেখা চোখেই পরে না। আপনার লেখাটা পড়ে সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল। তাই আমার ব্লগের শুরুর দিকে নাস্তিকতা নিয়ে লেখা একটি ধারাবাহীক পোস্টের লিংক দিচ্ছি - আশা করি সময় করে পড়বেন। প্রথম লেখাটা পাবেন এখানে:
Click This Link
আপনার এই লেখার একটা কথার সাথে আমি একমত। মানুষ ক্রমশই প্রশ্ন করতে শিখছে। সেই প্রশ্ন ধর্মের ব্যাপারে যেমন তেমনি একই ভাবে ধর্মহীন ভোগবাদী জীবনের ব্যাপারেও - আমরা কেন এই পৃথিবীতে এসেছি? মৃত্যুর পরে কোথায় যাব? এই ক্ষনিকের জীবন কী শুধুই খেয়ে দেয়ে আনন্দ করে কাটিয়ে দেয়ার জন্য?
কাজেই সচেতনতা বা বৃত্ত ভাঙ্গার প্রচেস্টা মানুষকে শুধুমাত্র ধর্মান্ধতা থেকেই মুক্ত করছে না বরং তা মানুষকে ধর্মের দিকে ফিরিয়েও আনছে। সেজন্যই জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত ইউরোপ আমেরিকার মানুষের মধ্যেও ধর্মের দিকে ফিরে আসার প্রবনতা দেখা যাচ্ছে। তাই না?
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৭
সুষুপ্ত পাঠক বলেছেন: @কাঙাল মুরশিদ, আপনার লেখাটা আমি মাত্র পড়ে শেষ করলাম। আপনি ধর্ম বিষয়ে অনেক জানেন। আমি ধর্ম নিয়ে লিখি একটা স্টাইলে, ভবঘুরে বা আকাশ মালিকের মত যোগ্যতা আমার নেই। আপনি তাদের মতই ভাল লেখক সন্দেহ নেই। আর সামুর খবর আমি জানি। এখানে আমি বেশিদিন লিখি না, কিন্তু অন্যত্র আমি লিখছে অনেকদিন থেকে, কাজেই বাংলা ব্লগের বর্তমান হালচাল সম্পর্কে আমি অবগত। হতাশ হওয়ার কিছু নাই ভাই, সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, এসব তো বৈরি সময়েই লিখতে হয়। একটা অসাম্প্রদায়িক সমাজে নিশ্চয় লিখতাম না। এগুলো লেখার বড় কারণই হচ্ছে মানুষকে অসাম্প্রদায়িক হতে সাহায্য করা। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই। পারলে আপনার সাম্প্রতিক কোন লেখার লিঙ্ক দিয়েন। পড়তে চাই।
৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:২৪
মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: আপনার লেখা অন্য ব্লগে পড়েছি । সামুতে কিছুদিন হল এসেছেন বলে প্রতীয়মান হল । জানিনা এই ব্লগে আপনি একটিভ ডিবেট করার মত সময় দিতে পারবেন কীনা । নীচের পোস্টের কয়েক্টি মন্তব্যে কৌতূহল পেলেও পেতে পারেন
নবীজীর আদর্শ তিনি মানুষ না নুরের তৈরি , সত্য জানা ঈমান ও ইসলাম সার
২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০০
সুষুপ্ত পাঠক বলেছেন: @মনিরুল ইসলাম বাবু, অন্য ব্লগে আমার পোস্টে আপনার কমেন্ট আমি দেখেছি। কিন্তু আমাকে উদ্দশ্য করে করা হয়ন বিধায় জবাব দেয়া হয়নি। আপনি যে লেখাটার লিঙ্ক দিলেন সেটা আমি আগেই পড়েছি। নেট সমস্যার কারণে মন্তব্যটা তখন প্রকাশ পায়নি, পরে আর দ্বিতীয়বার দেয়া হয়নি। যাই হোক ভাই, পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
৫| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৪
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: পরিপাটি একটি লেখা। ক্ষুরধার লেখাগুলো আজ কই!
লেখককে শুভেচ্ছা
২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৫
সুষুপ্ত পাঠক বলেছেন: @মঈনুদ্দিন মইনুল ভাই, প্রোফাইল পিকচার দিয়ে আমাকে প্রশংসা করছেন, আপনার সাহস আছে বলতে হবে! পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১০
দিশার বলেছেন: সুন্দর গোছানো লেখা। যুক্তি ও চিন্তার জগতে আপনাকে স্বাগতম . ধর্ম বেবহার করে জনমানুষ কে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই ক্ষমতাসীন দের প্রিয় অস্ত্র ধর্ম। কাথলিক চার্চ থেকে শুরু করে, হালের শিবসেনা, শিবির, সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি , ইরান ক্ষমানি সবার বেবসা একটা , তা হলো ধর্ম। ধর্মের আগুনে পুরে দুনিয়া অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে .