![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অয়ন ক্লাস সেভেনে পড়ে! স্টুডেন্ট হিসেবে খুব ভাল খেলাধুলায়ও বেশ ভাল! ছেলেটা ক্রিকেট পাগল! সময় পেলেই ক্রিকেট মাঠে! কখনো কখন দু একজন পেলেই খেলতে শুরু করে দেয়! খেলার নেশায় লেখাপড়ায় অমনযোগী তা নয়! সন্ধ্যা হলেই হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসে! খুব বেশি পড়া লাগে না দু তিনবার দেখলেই মেমোরাইজ হয়ে যায়! দুরন্তপনা ছেলে মেয়েদের এই একটা বড় গুন সব কাজই তারাতারি ক্যপ্চার করতে পারে! এটা পড়ার টেবিলে, খেলার মাঠে বা অন্য কোথাও হোক! খুব সম্ভাবত এক্সট্রা মনোযোগী হওয়ার কারনে এরা পারে! যা হোক অয়নের বাবা নেই, ছোট বোন আর মাকে নিয়ে ওদের সংসার! ছোট বোন অয়নী সেও খুব টেলেন্টেড! এবার ক্লাস ফাইভে পড়ে সমাপনী পরীক্ষা দিবে! তবে ভাইয়ের মত খেলাধুলায় অত আগ্রহী নয়! লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়ির কাজে সাহায্য করে! বাবা না থাকায় খুব অনাটনে চলে তাদের সংসার! আত্মীয় সজন বলতে এক মামা আর খালা আছেন! খালা খালু ঢাকায় থাকেন! কখনো ওদের যাওয়া হয়নি ঢাকা! দুজনেরই ঢাকা যাওয়ার খুব ইচ্ছে কিন্তু অর্থনৈতিক কারনে যাওয়া হয়না! এবার অয়নীর পরীক্ষার পর যাবে মনস্থির করেছে!
সেদিন অয়নীর ক্লাসে সার জিজ্ঞাসা করছিল কে কি হবে! অয়নী বলছে সে ডাক্তার হবে! এই নিয়ে ক্লাসের অন্য ছাত্ররা তো হেসেই খুন যদিও সারের ধমক শুনে চুপসে গিয়েছিল কিন্তু হাসি যেন থামছে না! সার একজনকে ডেকে বলল হাসছ কেন? ছাত্রটি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকল কোন জবাব দিল না! অন্য একজন জবাব দিল সার ওদের টাকা নেই ও ডাক্তারী পড়বে কেমন করে এই জন্য সবাই হাসছে! সার তখন সবার উদ্দেশ্য করে বললেন, সরকারী ইউনিভার্সিটিতে পড়তে খুব বেশী টাকা লাগে না যে কেউ পড়তে পারে ইচ্ছে থাকলেই হয়! কিন্তু প্রাইভেটে পড়তে অনেক টাকা লাগে! ও তো খুব ভাল ছাত্রী ওর জন্য খুব বেশী টাকা লাগবে না! তাছাড়াও আমাদের দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা শিক্ষা লোন দেয়! এইসব লোন নিয়ে পড়তে পারবে! শিক্ষকের এ কথায় অয়নী আরো আশাবাদী হয়ে উঠল! সার এবার প্রশ্ন করল তুমি ডাক্তার হতে চাও কেন? অয়নী বেশ সহজ সরল কথায় বেশ কঠিন একটা উত্তর দিয়ে বসল! বলল, আমার বাপের ডাক্তার দেহাতি পারি নেই তাই মরে গেছে! আর আমাগো গ্যারামে কোন ডাক্তার নেই তাই ডাক্তার হমু!
ফাইভের ক্লাস হলেও সব নিরব হয়ে গেছে, খুব আল্প বয়সে বাবা হারিয়েছ, চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন তাই এর দায়বদ্ধতা আমাদের সবার!
অয়ন একটা ক্রিকেট ক্লাবে ভর্তি হবে মায়ে কাছে এ আব্দার প্রায় প্রতিদিনই করতে থাকে কিন্তু মায়ের সামর্থ নেই! তাই খালাকে রাজি করিয়েছে! এবা অয়নীর পরীক্ষার পর দুজনই ঢাকা যাবে! আয়ন ক্লাবে ভর্তি হবে আর অয়নী মায়ের সাথে ফিরে চলে আসবে! এজন্য অয়নীর খুব মন খারাপ ভাইয়া ছাড়া একা একা কিভাবে থাকবে! দু ভাই বোন অনেক মারামারি করে আবার মিলেও যায়! একদিনের জন্যেও কেউ কারো ছাড়া থাকতে পারে না! এবার মাসের পর মাস থাকবে! তবে অয়ন খুব খুশিতে আছে ক্লাবে ভর্তি হবে বড় খেলোয়ার হবে! খুশিতে আত্মহারা!
দেখতে দেখতে বেশ কয়েক মাস কেটে গেল দুজনেরই পরীক্ষা শেষ এবার ঢাকা যাওয়ার পালা কিন্তু হরতাল অবরোধে যেতেই পারছে না! প্রথমবারের মত ঢাকা যাবে! খালাত বোন অর্থীও ক্লাস ফাইভে পড়ে! তাই দুজনের বেশ মিল!
হরতাল কিছুটা শিথিল হয়েছে তাই তিনজনই চলে এলো ঢাকা! ঢাকায় যানবাহন স্বাভাবিক তাই তিন ভাই বোন খুব ঘুড়ল আর ছবি তুলল! অর্থীর বাবায় সবাইকে নিয়ে ঘুড়িয়েছে! ওদেরও বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে হল তো বেশ কয়েক দিন! খালুজান একটা ক্লাবে কথা বলে রেখেছে আজ ভর্তি হতে যাবে! বেশ খুশি খুশি লাগছে!
অয়নী ও মা সাথে গেলো! কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবে ভর্তি হয়ে ক্রিকেটের যাবতীয় ইনস্ট্রুমেন্ট কিনে সবাই বাসে উঠল! অয়নের মন উদ্বেলিত হতে লাগল! হঠাৎ একটা পেট্রল বোম্ব এসে পড়ল গাড়িতে! খালুজান ওর আম্মুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল কিন্তু আগুনের লেলিহানে আর দাড়াতে পারল না! নিজেও লাপ দিয়ে বাইরে চলে এলো! অয়নী জানালার কাছে ছিল ধাক্কা দিয়ে অতি কষ্টে বোনকে বাইরে ফেলে দিল ততক্ষনে অনেকাংশ অয়নীর পুড়ে গেছে! আর অয়ন বোনকে ফেলেই নিজেও মাথা বের করে লাপ দেয়ার চেষ্টা করছে! ততক্ষনে শরীরের অনেকাংশ পুড়ে গেছে আর বের হতে পারল না! শতলোকের সামনে পুড়ে ছাই হতে লাগলো! মা বার বার ছুটে আসার চেষ্টা করল কিন্তু খালুজান সহ অন্যান্য লোকজন জোর করে আটকে রাখল! ছটফট করতে করতে একসময় অয়ন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল! মৃত্যু হল একটি স্বপ্নের! মৃত্যু এক মায়ের, এক পরিবারের! এদিকে অয়নী ঢাকা মেডিকেলের আই সি ইউতে কয়েক দিন থাকার পর বার্ণ ইউনিটে নিয়ে আসা হল! ডাক্তাররা বললেন যদি ভাল তাহলে শারীরিক বা মানসিক ড্যামেজ হতে পারে! স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা খুব কম! একটু একটু করে জ্ঞান ফিরছে তখনি ভাইয়া ভাইয়া করে চিৎকার করে উঠছে! সে চিৎকার যেন আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে লাগল! উপস্তিত সবার আত্মা কেপে উঠল সে চিৎকারে! সারা দেশের মানুষের হৃদয় ছুয়ে গেলো শুধু আমাদের সমাজের রাজনীতিবিদদের কর্ণকহরে পৌছাল না ধ্বনি!
১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৬
শুভ্র বিকেল বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।
২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৪৬
সুখেন্দু বিশ্বাস বলেছেন: বেশ মন খারাপের গল্প। গল্পে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি পেলাম।
শুভেচ্ছা রইলো প্রিয় ।
১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৭
শুভ্র বিকেল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ গঠনমূলক সুন্দর মন্তব্যের জন্য!
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪১
মনিরা সুলতানা বলেছেন: