নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অপার হয়ে বসে আছি.........

সুজন দেহলভী

আমি একা রইলাম ঘাটে ভানু সে বসিল পাটে- আমি- তোমা বিনে ঘোর সংকটে না দেখি উপায় পাড়ে লয়ে যাও আমায়.....

সুজন দেহলভী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভ্রমনকালীন সময়ে জোঁক প্রতিরোধে করনীয়:

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:২২

জোঁকের কামড়ের অভিজ্ঞতা সেই ২০০৯ সালে শুরু, দার্জিলিং সফরে লোলেগাঁও এর গহীন জঙ্গলে প্রথমবার একটি জোঁকে ধরেছিল। সেইবার রক্তপাত বন্ধের কোন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার সুযোগ হয়নি। তারপর জুন ২০১৫ তে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় দুটি জোঁকে ধরেছিল, এবারও প্রাথিমক চিকিৎসার প্রস্তুতি না থাকায়, সবুজ দূর্বাঘাস চিবিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রক্তপাত থামাতে সক্ষম হয়েছিলাম।

জুলাই ২০১৫ তে বান্দরবন ভ্রমনে, টানা ছয়দিন বৃষ্টিপাতের দরূন আমরা বৈরিপরিবেশ মোকাবেলায় বাধ্য হই, সেই আর্দ্র পরিবেশ ছিল জোঁকের জন্য অাদর্শ। আমার ১৫ জনের দলে অধিকাংশের ব্যাপক প্রস্তুতি স্বতেও জোঁক প্রতিরোধে কেউ-ই সম্পূর্ণ সফল হতে পারিনি। আমাদের মাঝে দুজন স্থানীয় বাসিন্দাও ক্রমাগত পরাস্ত হয়েছিল। আমি প্রথম তিনদিনেই ১২টি জোঁকের কামড়ে অস্থির হয়ে সিদ্ধান্ত নেই যে, বাড়ি ফিরেই প্রথম কাজ হবে জোঁক প্রতিরোধের বিষয়ে তথ্য খুজেঁ নিজেকে গড়ে তােলা এবং সকলের মাঝে তা বিলিয়ে দেয়া।



প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

১. প্রথমেই সহজে বহনযোগ্য ছুরি বা আর্মি নাইফ এবং টর্চ লাইট (রাতের ভ্রমন হলে) সংগ্রহ করুন। খেলাধূলার সামগ্রী বিক্রয়কেন্দ্র থেকে থ্রি কোয়ার্টার ট্রাউজার, ফুটবলারদের লম্বা মোজা (হাটুঁ পর্যন্ত), এন্কলেট এবং নিক্যাপ সংগ্রহ করুন। পরিমানটা নির্ভর করবে কতোদিনের জন্য জোঁক উপদ্রুত অঞ্চলে থাকছেন তার উপর । প্রথমে থ্রি কোয়ার্টার ট্রাউজারটা পরিধান করুন, তারপর লম্বা মোজা পরিধান করে ট্রাউজারের নিম্মাংশ মোজার ভেতরে ভালোভাবে ঘুঁজে দিন। অতঃপর নিক্যাপটি এমনভাবে পরিধান করুন যাতে মোজা ও ট্রাউজারের সন্ধিস্থলকে নিক্যাপটি দৃঢ়ভাবে ঢেকে দেয়। যদি নিক্যাপের চাপে হাটুতে অস্বস্তি লাগে তবে মোজা ও ট্রাউজারের সন্ধিস্থলটিকে হাটুর নিচে নামিয়ে তার উপর নিক্যাপ পড়তে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে নিক্যাপটি যেন মোজা ও ট্রাউজারের সন্ধিস্থলকে দৃঢ়ভাবে ঢেকে দেয়, নয়তো জোঁক মোজা বেয়ে উঠে মোজা ও ট্রাউজারের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করার সম্ভাবনা থেকে যাবে। এবার এন্কলেটটি পড়ে ফেলুন। মনে রাখবেন উল্লেখিত ব্যবস্থায়, জোঁকের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ সম্পূর্ন নিশ্চিত করে না। তবে জোঁক মোজা বেয়ে যথেষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করে চামড়ায় স্বান্নিধ্যে এসে কামড় বসাতে যে সময় লাগবে, তাতে আপনার সর্তক দৃষ্টি জোকঁ খুজে বের করে নিবৃত্ত করার পর্যাপ্ত সময় পাবে।
আমাদের বান্দরবন সফরে যারা উল্লেখিত ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং যারা নেননি, তাদের দুই শ্রেণীকেই প্রায় সমান সংখ্যক বার জোঁকের অাক্রমনের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তবে যারা প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি গ্রহন করে সর্তক ছিলেন, তারা প্রায় ৮৫% ভাগ ক্ষেত্রেই জোঁক নিবৃত্ত করতে সক্ষম হন। জোঁক নিবৃত্ত করতে ছুরি দিয়ে ছেঁচে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলুন। মানবদেহের পা থেকে মাথা র্পযন্ত যেকোন স্থানে বিশেষ করে যে সকল অংশ তুলনামূলকভাবে উষ্মতম সেখানেই জোঁকের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।



২. জোঁক সাধারণত নদী, পুকুর বা জলস্রোতের আশেপাশে পাশে অার্দ্র ও ছায়াময় স্থানে থাকতে পছন্দ করে। বর্ষাকালে জোঁকের উপদ্রব অত্যাধিক হয়ে থাকে। জোঁক শুধু মাটি ছাড়াও গাছে, গাছের ডালে বা পাতায় থাকতে পারে। তাই জোঁকের উপদ্রবের খ্যাতি আছে এমন স্থান এড়িয়ে চলুন, তা সম্ভব না হলে স্থানটি অতিদ্রুত সর্তকতার সাথ অতিক্রম করুন এবং নিরাপদ স্থানে ফিরে ভালো করে শরীর এবং কাপড় নিরিক্ষা করে দেখুন জোঁক আছে কিনা। বান্দরবন ভ্রমনে এমনো দেখেছি যে, রাতে বারান্দায় মেলে দেয়া কাপড় থেকে জোঁক নেমে দরজার নিজ দিয়ে এসে আমাদের শোবার স্থানে চলে এসেছে। তাই কাপড় পাল্টাবার সময় সর্তকতার সাথে নিরীক্ষা করে ঘরে প্রবেশ করুন।

৩. জোঁক হাতে ধরে ছুড়ে ফেলার সময় সাবধান, অনেক সময় তা হাতেই লেগে থাকতে পারে। তাই ছুরি দিয়ে ছেঁচে ফেলে এর মৃত্যু নিশ্চিত করুন, নয়তো তা আপনাকে বা আপনার পেছনের সহযাত্রিকে পুনরায় আক্রমন করতে পারে।

৪. কামড়ে ধরা জোঁক থেকে তাৎক্ষনিকভাবে মুক্তি পেতে ছুরির বিকল্প হিসাবে তামাক পাতার গুড়া, ডেটল বা লবন ব্যবহার করা যেতে পারে। জরুরী পরিস্থিতিতে সিগারেটের লাইটারের আগুন বা সিগারেটের আগুন দিয়ে কামড়ে ধরা জোঁক থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

অনলাইন থেকে প্রাপ্ত প্রতিরোধক পরামর্শ:

১. দেহে কামড়ে ধরা জোঁক টেনে তুলবেন না : আপনার ত্বকে কামড়ে থাকা অবস্থায় জোঁক হাতে দিয়ে টেনে তুলে না ফেলতে ইন্টারনেটে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়ে সাবধান করা হয়েছে। এতে ক্ষতস্থান তুলনামূলক ভাবে বড় হয়ে যাবার বা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে এবং আক্রান্ত জোঁকের বমি করা দূষিত রক্ত দেহে প্রবেশের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিম্ন আলোচিত যে কোন একটি জোকঁ বিতাড়ক পদার্থ দিয়ে জোকঁ নিষ্ক্রিয় করাই উত্তম।

২. তামাক পাতার গুড়া: জোঁক উপদ্রুত অঞ্চল পরিভ্রমনের আগের রাতে একটি পানিপূর্ণ পাত্রে কিছু তামাক পাতার গুড়া মিশিয়ে সে দ্রবনে মোজা, এন্কলেট এবং নিক্যাপ সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। এ পরিস্থিতিতে জোঁক মোজা বেয়ে উঠলেও তামাকের গন্ধে তা কিছুক্ষণের মাঝে ঝরে পড়বে। মনে রাখবেন যদি আপনাকে পানির মধ্যে দিয়ে হাটতে হয়, তাহলে পানির সংস্পর্সে তামাকের দ্রবনটা ধুয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সংগে পর্যাপ্ত পরিমানে তামাকের দ্রবন সংরক্ষন করুন। পানি থেকে উঠে তামাকের দ্রবনটি স্প্রে করে নিন। ক্ষেত্রবিশেষে তামাকের দ্রবনের বিকল্প হিসাবে পান পাতার রসের দ্রবনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

৩. ডেটলের দ্রবণ: কথিত আছে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের সেনাদল জোঁক উপদ্রুত জঙ্গল পরিভ্রমণের সময় হাতে, পায়ে এবং গলায় ডেটলের দ্রবণ মেখে নিতো। ডেটলের তীব্র গন্ধ জোঁককে দূরে রাখে।

৪. পতঙ্গনাশক ঔষধ: লম্বা মোজা পরিধান করে বেগন (Baygon) ব্রান্ডের পতঙ্গনাশক ঔষুধ মোজা ও জুতায় স্পে করে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

৫. পতঙ্গ বিতাড়ক ঔষধ: পূর্বে উল্লেখিত একই ভাবে মসি গার্ড (Mosi-Guard) ব্রান্ডের পতঙ্গ বিতাড়ক ঔষুধ মোজা ও জুতায় স্পে করে সুফল পাওয়া স্বম্ভব।

৬. প্যান্টিহস: নারীদের ক্ষেত্রে প্যান্টিহস (pantyhose) পরিধানে সুফল পাবার নজির আছে।

৭. অনেক সাইটে ব্যথানাশক ঔষধ Salonpas Spray বা Siddhalepa herbal blam ব্যবহারের উদাহরন আছে।

৮. কিছুক্ষেত্রে লেবুর রস বা ইউক্যলিপটাসের তৈল দিয়ে জোঁক থেকে তাৎক্ষনিকভাবে মুক্তির পরামর্শ দেয়া আছে।

জোঁক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন। Leeches Max Shelock

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৪৬

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আমার পদ্ধতি হলো নিচে পা খোলা রাখো আর সতর্ক দৃষ্টি রেখে হাটো, আমার সঙ্গী ট্রাউজার মোজা পড়ে অনেকটা আপনার দেখানো কৌশল অবলম্বন করে এমন জায়গায় জোঁকের কামড় খেলো যে, কাউকে দেখানোর আর উপায় রইলোনা। তাই বৃষ্টিতে যখন পুরো জোঁকের উপদ্রব থাকে তখন পাহাড়ে আমার আদর্শ হলো ভালো গ্রিপ করে এমন বন্ধনী ওয়ালা খোলা জুতা পড়ে হাটা এবং কিছুক্ষণ পর পর পায়ের উপর দৃষ্টি দিয়ে জোঁক ফেলে দেওয়া। জোঁক যখন দেহের নিচের অংশেই খোলা জায়গা পাবে তখন উপরে উঠার চিন্তা করবেনা। তবে হ্যাঁ গাছ লাতাপাতার উপরের দিকেও কিছু জোঁক থাকে, সেখান থেকে দেহের উপরের দিকে আক্রমন করার আশংকা থেকেই যায়, মূলত ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ রাখতে পারলে জোঁক থেকে রেহাই পাওয়া কিছুটা সহজ।

০২ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০০

সুজন দেহলভী বলেছেন: ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ রাখা সব কৌশলেই প্রজোয্য। তবে খোলা পায়ে জুতা পড়লে (আমি নিজে খালি পায়ে বেল্টযুক্ত স্যান্ডাল পড়া ছিলাম), জুতার ভেতরে ঢুকে পড়া জোঁক দৃশ্যমান হয় না, ফলে কামড়ের পূর্বেই তা সনাক্ত করা অসম্ভবের কাছাকাছি। পিচ্ছিল বা ঝুকিপূর্ণ পথ চলাকালীন সময়ে পায়ের দিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি মানে তারচেয়ে অধিক বড় বিপদ ডেকে আনার শামিল। আমাদের ১৫ জনের দলে সবরকম পদ্ধতি বিদ্যমান ছিল, তার মধ্য থেকে শুধু সফলতর পদ্ধতিগুলি আলোচনায় এনেছি। আমার প্রস্তাবিত পদ্ধতিগুলি পরীক্ষিত বলেই সুপারিশ করা হয়েছে।

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৭:৩৮

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, ভবিষ্যতে আপনার পরামর্শ মতো করার চেষ্টা ও করে দেখতে পারি।

৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৩

ক্রন্দসী বলেছেন: দারূন লাগলো।দয়া কপিরা বাতের রোগিরা এরকম প্রিকশন নিবেন না।বাত আক্রান্ত যায়গায় জোক রক্ত খাইলে বাত ভাল হয়

২৭ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫১

সুজন দেহলভী বলেছেন: হা হা হা

৪| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৬

নতুন নকিব বলেছেন:



জোঁক প্রতিরোধে দারুন গবেষনা করেছেন। খুবই ভালো লাগলো। কখনও প্রয়োজনে কাজে দিতে পারে।

ভাল থাকবেন।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:০৫

সুজন দেহলভী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় দেবার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.