নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক। ‘জল পরীর ডানায় ঝাপটা লাগা বাতাস’ (২০১৩), ‘সাদা হাওয়ায় পর্দাপন’ (২০১৫) দুটি কবিতার বই প্রকাশিত। তার লেখা নাটকের মধ্যে ফেরা, তৎকালীন, আদমের সন্তানেরা উল্লেখযোগ্য। লেখালেখির জন্য ২০১৫ সালে হত্যার হুমকি প্রাপ্ত হন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান

আমার পরিচয় খুঁজচ্ছি জন্মের পর থেকেই। কেউ পেলে জানাবেন কিন্তু....

সৈয়দ মেহেদী হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৌ-ছি খেলায় প্রতিবাদের ভাষা ও স্বরুপ বিশ্লেষণ

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৬




গল্পটা এরকম যে, এমন একটা সময় ছিল বৌ-ছি খেলা ছাড়া ভাল লাগতো না। ফুসরতে ৮/১০ জন মিলে গেলেই উঠানে, অফসলী জমিতে, মাঠে জমে উঠতো খেলাটি। বৌ-ছি যে এখন খেলছে না কেউ, তা কিন্তু নয়। তবে তুলনামুলক আলোচনায় বিলুপ্ত প্রায়। কালে ভদ্রে হয়তো কোথাও জমে ওঠে। আমরা এটুকু নিশ্চিত যে, প্রতিটি উপকরণের উপযোগীতা রয়েছে। আছে প্রয়োজনীয়তা এবং সু-সময়। সে হিসেবে বৌ-ছি খেলার উপযোগিতাটা আসলে কোন স্তরে? নতুবা বৌ-ছি খেলার মোক্ষম কি হাতিয়ার যা পাড়া-মহল্লা-অনুর্বর জমি মাতিয়ে রয়েছে। অঙ্গা-অঙ্গি হয়ে গেছে বাঙালী কৃষ্টি ও সংবেদনশীলতায়। গ্রাম-বাংলার
সংস্কৃতিক বিনোদন হল এটি। বৌ-ছি খেলার জন্ম কোন সালে এমনকি কোন দশকে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। বাংলা এবং বাঙালীর প্রাচীন ইতিহাসের ধুলোজমা অত্যুজ্জল পাতা যত উল্টে পিছনে যাই ততই বৌ-ছি খেলার ইমারত আভা বিকিরিত হতে দেখেছি। অযতেœ অবহেলা আর অখেয়ালে মানুষের মুখে মুখের “রচনা”র এই যে স্থায়ীত্ব এবং দোত্যনা তা সত্যি বিরল। অধিকাংশ গবেষকরা মনে করেন খেলাটি বিকাশমান বাঙালীত্ব ও বাঙালী সংস্কৃতির নির্ভেজাল প্রতিপাদ্য।


আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, বৌ-ছি খেলা একদিকে সংস্কৃতি চর্চা অন্য দিকে শক্তিমান সাহিত্যে ভরা। এতে রয়েছে গতি, উন্মুখতা, ছন্দ, তাল ও সুরের সুষম মিশ্রন। আর তাই ঘাসফুল ভেবে মারিয়ে গেলে চলবে না, চর্চা ধরে রাখতে হব্


বৌ-ছি খেলার সবগুলো উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল এর ভাষার প্রয়োগ। খুব সংক্ষিপ্ত বয়ানে ভাষার সুনিপুন যে বুনন হয় তাতে এরুপ সাহিত্য জন্ম নেয়, যেন চুলচেরা বিশ্লেষণে সাহিত্যের সকলের প্র-পিতামহ। কতক বিষয় ভিত্তিক গবেষককে বৌ-ছি খেলা নিয়ে খেলা করতে দেখা গেছে। একদল ঠেলছেন খেলার কাতারে, অন্যরা লোক সাহিত্য আখ্যা দিয়েই দায়মুক্ত। কিন্তু এর মধ্যকার প্রতিবাদ, সমাজ-সংশ্লেষণ বা লিখিত সাহিত্যের চেয়ে টিকে যাওয়া শক্তিমান সাহিত্য কিনা, তা ভাববার অবকাশ পান না। এরও যুক্তি আছে। বাঙালীর “অনুসরণ’ প্রিয়তা। অলসতা। খেলার বাণীও যে সাহিত্য হতে পারে তাও কিন্তু খুজে পেয়েছেন সাদা চামড়ার প্রশাসকগন। উপমহাদেশ তথা বাঙালী অধ্যুষিত অঞ্চলে বাণিজ্য করতে এসে রাজা বনে যাওয়া খ্রিষ্ট মিশনারীগন পড়েছিলেন বেকায়দায়। ভাষা, সংস্কৃতি, পরিবেশ সব কিছুই ছিল প্রতিকুল। তবে দমে যাননি সাদা-প্রজাতি। যথারীতি ভাবনায় পড়ে যান, জন সম্পৃক্ততার ইপ্সায়। ইংরেজ সুধী ও খ্রিষ্ট মিশনারীরা বাঙালীদের বুঝতে প্রাচীন লোককথা, খেলা সংগ্রহ করতে শুরু করেন। বাঙালীদের দাস বানাতে গিয়ে বের হয়ে আসে লোক সাহিত্যের সম্ভার। যার মধ্যে রেভারেন্ড জেমস লং এর নাম অগ্রগণ্য। একই সাথে রেভারেন্ড উইলিয়াম মর্টন, গের্বন হেনরি ডমন্ট, জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন, এইচ ব্রেভারিজ, উইলিয়াম উইলসন হান্টার, এডওয়ার্ড টুইট ডাল্টন, হার্বাট রিজলি, জেমস ওয়াইজ এবং উইলিয়াম ক্রুক বিস্তর কাজ করেছেন। এরাই সর্বপ্রথম উনবিংশ শতকের শেষার্ধে এদেশের জনসাধারণের সাথে পরিচিত হতে মৌখিক সাহিত্য সংগ্রহে উদ্যোগী হন।

Folk Song and Style নামক গ্রন্থের প্রনেতা ড. এ্যালান হোমাস (Dr. Alan Homase) তো যথারীতি বিশ্ব বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। তিনি কাজ করেছেন সারা বিশ্বের লোক সংস্কৃতি নিয়ে। মৌখিক সাহিত্যের গবেষণায় বিশ্ব বরেণ্য এ্যালান হোমাসের বই ৪০টি। তিনি সমগ্র বিশ্বের সকল অঞ্চলের লোক সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানার জন্য ১২ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে কমিটি করেছিলেন। সেই কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্বের ৮টি দেশ লোক সাহিত্য বা মৌখিক রচনায় সমৃদ্ধ। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রথম ইরান, তৃতীয় জাপান, চতুর্থ ফ্রান্স, পঞ্চম জার্মানী, ষষ্ঠ ইতালী, সপ্তম রাশিয়া এবং অষ্টম অবস্থানে ভারত।


এতকিছু হল উনবিংশ শতকে অত:পর; বাঙালী পন্ডিতগণ চেষ্টা শুরু করেন বিংশ শতকে। অর্জন করেন ব্যাপক সফলতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “লোক রচনার মর্যাদা” পুরোপুরি চেতন জাগায়। এর পরে লাল বিহারী দে, দক্ষিণা রঞ্জন মিত্র, উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দীনেশ চন্দ্র সেন, শরৎ চন্দ্র মিত্র, আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ, ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ্, ডা: সুশীল কুমার দে, গুরু সদয় দত্ত, অজিত কুমার মুখোপাধ্যায়, জসীম উদ্দিন, মুহম্মদ মুনসুর উদ্দিন, ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য, ড. আশরাফ সিদ্দিকী, ড. মযহারুল ইসলাম প্রমুখ পন্ডিতগণ আলোকপাত করেছেন।

যদিও এদের দু-একজনের প্রবন্ধ বিশ্লেষণধর্মী হলেও বাকি সব আবেগী আবার হিন্দুত্ববাদে দুষ্ট। তবে প্রত্যেকের গবেষণায় বৌ-ছি খেলার গুরুত্ব রয়েছে আলাদা।


বিভিন্ন নামে এই খেলাটি অভিহিত হয়ে থাকে। যেমন- বুড়ি কপাটি। ময়মনসিংহ অঞ্চলে বলে ছি-ধরা, ঢাকায় বুড়িছুট বা ছি-রাণী, যশোরে বুড়িয়ার চু বা লাগোছাড়া, নোয়াখালীতে থুম এবং বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে বউগোলা।
বরিশাল অঞ্চলের বৌ-ছি বা বউগোলা খেলায় যেন সংঘবদ্ধ শক্তি পাওয়া যায়। যদিও সারা দেশেই খেলার ধরণ প্রায় একই তবে সঙ্গীত সুর এবং ভাষা প্রয়োগ মারাত্মক রকমের অর্থবহ এ অঞ্চলে। বেশ কিছু ছি-এর বাণী সমস্ত আঙ্গিক থেকে ধারালো।

উত্তম সাহিত্য ছাপিয়েও যেন সমাজ, রাজনীতি, অধিকার এবং প্রতিবাদের রণ-ভূমি হয়ে ওঠে। যেমন-

ছি কুত কুত লাইলী
তবলা বাজাইলি।
তবলার সুরে
প্রজাপতি উড়ে॥

এই ছি-তে ছন্দ, মাত্রা, ভাষার প্রাঞ্জলতা যেমন সুষম তেমনি কিশোরী লাইলীর কর্মকান্ডের সাথে বিমুগ্ধতার অন্তহীন সখ্যতাও দৃশ্যত। এখানে “কুত কুত” শব্দটিও বিশেষ এক প্রকার খেলার নামকরণ বোঝানো হয়েছে। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত এই ছড়াটিকে দুই অংশে বিভক্ত করা যায়। প্রথম লাইনটিকে ধারণা করা হয়ে থাকে লাইলীর “কুত কুত” খেলাটি যেন তবলা বাজানোর মত; সুন্দর সৃ-শৃঙ্খল। আর দ্বিতীয়াংশে আশ্রয় নেয়া হয়েছে প্রতীকের। লাইলী বা কিশোরীরা যখন খেলাটি সীমাবদ্ধ দূরত্বে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলে বা এক ঘর থেকে অন্য ঘর অধিকার করে তখন মনে হয় প্রজাপতি, ফুল থেকে ফুলে উড়ছে। পুরো এই বিষয়টিকে দারুন বর্ণনায় নিয়ে আসা হল বৌ-ছির ছিতে।

ছি- মূলত এক ধরণের লোকগান। যাতে প্রতিবাদ এবং সিদ্ধান্ত একযোগে আসে। সমাগম হয় কথক- শ্লোতার। অপর একটি ছি দেখা যাক:


ওপার গেলাম খেলাইতে
পথে পরছে ডাকাইতে।
ডাকাইতের নাম কালাচাঁন
ঘরে আইন্যা মোড়াবান॥


সমবয়সী দু’জন ব্যক্তি বা বন্ধুর মধ্যকার কথোপকথন এটি। যেখানে ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। আছে কথকের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সরল বর্ণনা। প্রথম কথক তার বন্ধুটিকে জানাচ্ছে খেলতে যাবার পথে যে বিপদে তাকে পরতে হয়েছে। আর মাত্র একটি লাইন অর্থাৎ চতুর্থ লাইনে (উত্তম পুরুষের শ্লোতা) জানিয়েছেন কি করতে হবে। একটু পরিস্কার করা জরুরী যে “মোড়া” শব্দটি আঞ্চলিক শব্দে ব্যবহৃত হয় মুড়ে রাখার অর্থে। যদিও এখন সেসব প্রচলন দেখা যায় না, তবে আগেকার দিনে উৎপাদিত ধান বা ফসল মজুদ করা হত, বাঁশের তৈরী এক ধরণের বিশেষ “চাটাই” দিয়ে গোল আকৃতি করে তার মধ্যে। বিভিন্ন অঞ্চলে এর নাম বিভিন্ন হলেও দক্ষিণাঞ্চলে “মোড়া” বা “গোলা” বলা হয়। ছি-ছড়ায় সেই মোড়ায় যেমন ধান বা ফসল আটকে রাখা হয় তেমনি ডাকাত কালাচানকে ধরে এনে বেধে রাখার কথা বলা হয়েছে। উপ্তার্থে যেন ডাকাত কালাচান কোন ক্ষতি করতে পারে না। এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে দ্বিতীয় কথক তার একটি লাইনে সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নৈরাজ্যের প্রতিবাদও করেছেন। ডাকাত কালাচান দুর্ধর্ষ ও অমঙ্গলজনক হওয়ায় যে তার বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না তেমন নয়, সাফ সাফ জানালো ঘরে এনে বেধে রাখতে। অর্থাৎ কালাচানের ডাকাতির শক্তির চেয়ে কথকদ্বয়ের প্রাণশক্তি অফুরন্ত।


দর্শন, বৌ-ছি’র অপর শক্তিঘর। বেশ কিছু ছি-তে কখনো সরাসরি, আবার কখনো ইঙ্গিতে মানব জীবনের অর্ন্তদর্শন স্পষ্ট হয়েছে।
দর্শণের সরাসরিা বুনন রয়েছে এই ছি-তে:

কুত কুত মালা কুত কুত সই
দই’য়ালাগো বাড়ি কই?
বাড়ি রৈছে চান্দের পার
কুত কুত খেলায় জীবন পার।

চান্দের পার বলতে চন্দ্রদ্বীপ বা বরিশালকে পরোক্ষ ইঙ্গিত করা হয়েছে। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত ছি-তে জীবনকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে নিজস্ব ঢঙে, যা দর্শনের নামান্তর। আমরা জানি যে একটি জনপ্রিয় খেলা “কুত কুত”
সাধারণত ৯ থেকে ১৩/১৪ বছর বয়সী শিশুরা এই খেলা খেলতে পছন্দ করে বেশি। এই খেলা চলে ঘরের মেঝে, স্কুলের বারান্দায়, পুকুরের পাড়ে, বাগানে। খেলোয়াড় কখনো দুইজন, কখনো অনেক। মাটিতে ঘর এঁকে মাটির হাড়ি বা কলসির ভাঙ্গা অংশ (চাড়া) হল খেলার প্রধানতম উপাদান। এই খেলাটিই প্রতিবিম্বিত করা হয়েছে মানুষকে। কুত কুত খেলা ক্ষণে বিলক্ষণে শুরু হয়। আবার মান, অভিমান বা না পারার ক্ষোভে খেলা বাচনাল হয়। অভিমান ভাঙ্গলে আবার শুরু হয় খেলা। এভাবে এক সময় সন্ধ্যা নেমে আসে। মানব জীবনওতো একই ভাষ্যে গ্রথিত। অর্থাৎ পুরো জীবনের অর্থহীন খেলা যেন চার লাইনের এই ছি-তে বাঙময়।

নারী নির্যাতনকে ঘৃণাভরে দুরে দেয়া হয়েছে ছি-তে। ছি-গুলো পড়লে এটা স্পষ্টত যে গোটা সমাজটাকে অন্তদৃষ্টি দিয়ে উল্টে পাল্টে দেখেছেন রচয়িতারা। কখনো প্রতিবাদ করতে গিয়ে গালি’র সরব উপস্থিতি ক্ষিপ্রতা দিয়েছে। যেমনঃ

ছি আত্মা
ছি রাণী
বৌ মারে কোন চুতমারানী? (॥)

এখানে উত্তম পুরুষে খেলোয়াড় জানাচ্ছে বৌ-ছি খেলার ছি তার আত্মা বা রাণী। একই সাথে নব বধুকে শশুরালয়ে শাশুড়ী, ননদ বা জা কর্তৃক নির্যাতনের চিত্র যে গুলো অহরহ ঘটতো সেটার প্রতি যে ঘৃণাভরে গালি দিচ্ছে। জানতে চাইলে এমন স্পর্ধা কার, যে তার ঘরের বা পড়শীর ঘরের নববধু কেন মারধরের শিকার হচ্ছে। যদিও প্রথম দুই লাইনের সাথে শেষের লাইনের অর্থগত সম্পর্ক আবিস্কার করা দুষ্কর, তবে কাব্যগুণে অক্ষরবৃত্ত এবং প্রাঞ্জল ছি-ছড়া।

‘ছি বুড়ি ছাইয়া
বাবুলের মাইয়া
বাবুল কান্দে
কাচা কাঠাল খাইয়া॥’

ছি-টি বর্ণনা এবং প্রতীকি আশ্রয়ে হয়ে গেছে সামাজিকিকরণের দৃশ্যপট। ভাব বিশ্লেষণে বলতে হয়, বাবুলের মেয়ে (যে কোন কারণে নাম) বুড়ি। বুড়ির বিচরণ সর্বত্র ছেয়ে বা ছাইয়া (আঞ্চলিক) আছে। সাম্প্রতি এমন কোন কাজ করেছে যে জন্য তার পিতার ইজ্জত নষ্ট হয়েছে। সেজন্য বাবুল কাঁদে। কাঁচা কাঁঠাল শব্দটি প্রতিকী অর্থে ব্যবহৃত। (ভাবার্থে অনেক ক্ষেত্রে এই শব্দটি অসামঞ্জস্য কিছু বাধ্য হয়ে গ্রহণ করাকেই কাঁচা কাঁঠাল খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়।)

আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গেলে ছোট বাচ্চাদের জন্য মজাদার কিছু নেয়া হয় যাতে তারা খুশি হয়। পাশাপাশি বুড়োদের জন্য পান নেয়ার প্রচলন দীর্ঘদিনের। সেটাও যেন বাদ যায়নি ছি’ থেকে।

‘এক আনার বিস্কুট
দুই আনার পান
লাকি বিস্কুট, পাকিস্তান।’

যদিও ছি’টি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে কারো কারো। অনেকেই মনে করছেন, পাকিস্তান না হয়ে, পাকিস্তান শব্দটি যোগ হয়েছে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ এর মধ্যে পাকিস্তান শাসনামলে। এদের দাবী শব্দটি হবে গুলিস্তান। কারণ ব্রিটিশ শাসনামলেই গুলিস্তানে লাকি বিস্কুটের একটি কারখানা ছিল। মুশকিল হল মুনতাসির মামুন বা ঢাকার ইতিহাস রচনাকারীদের বইতে এই নামের বিস্কুট কারখানার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ফলে, গ্রামে যে শব্দ যুক্ত করে খেলা চলে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে। এখানে এক আত্মীয় অপর আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছে, (ধরে নিন বেয়াই-বেয়াই) তখন সহাস্যতায় জানাচ্ছে তার পোটলা পুটুলিতে কি আছে।


এ কথা এখন স্পষ্ট করে বলা চলে, বৌ-ছি’র ছি সত্যিকার অর্থে শুধু খেলার অর্থহীন উপাদান নয়। যদিও আঞ্চলিক পরিমণ্ডলে এর উত্থান এবং বিনোদনের উৎস সেজন্য নিছকই গুরুত্বহীন। কিন্তু ছি-গুলোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য, এর আঙ্গিক কাঠামো, স্বরুপ এবং বৈশিষ্ট্য তা যেন চিরায়ত বাঙালীত্বের প্রতিনিধি। প্রতিটি ছি’ জন্ম নেয়ার পর হাজার থেকে লাখো মানুষের মুখে ঘুরে ফিরে শোধিত হয়ে যে ভাষায় বর্তেছে তাতো শুদ্ধ সাহিত্য গুণ, সাংস্কৃতিক চেতনা, সর্বোপরি উৎসাহের উৎসমুখ। ফলে এটুকু বলা চলে, বৌছি’র প্রয়োগ এবং ভাষাগত দৌরত্মের হয়তো ভিন্ন আখ্যান রয়েছে, তবে বাঙালীর বাতি ঘরে যতগুলো আয়না এবং বাতি জ্বলছে বা জ্বলবে তার মধ্যে বৌ-ছি একটি অন্যতম।

তথ্য সহায়কঃ
১। বাংলার লোক সংস্কৃতি- ড. ওয়াকিল আহমেদ
২। বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতি- অধ্যাপক নিসার উদ্দিন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.