নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক। ‘জল পরীর ডানায় ঝাপটা লাগা বাতাস’ (২০১৩), ‘সাদা হাওয়ায় পর্দাপন’ (২০১৫) দুটি কবিতার বই প্রকাশিত। তার লেখা নাটকের মধ্যে ফেরা, তৎকালীন, আদমের সন্তানেরা উল্লেখযোগ্য। লেখালেখির জন্য ২০১৫ সালে হত্যার হুমকি প্রাপ্ত হন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান

আমার পরিচয় খুঁজচ্ছি জন্মের পর থেকেই। কেউ পেলে জানাবেন কিন্তু....

সৈয়দ মেহেদী হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা ভাষায় মোড়ল ও অস্তিত্বের দায়

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৪৭




শতাব্দীর পর শতাব্দী বাঙলা ভাষা নিয়ে বিভিন্ন কাণ্ড-কারখানা চলছে। কখনো বিষবৃক্ষ, কখনো বন্ধুর পথ টপকে। বাংলা নিয়ে শাখা প্রশাখা বের হয়েছে বিস্তর, যা বাংলা ভাষার অঙ্গেই জড়িয়ে মাধুর্য দিয়েছে। যে ভাষা উৎপাটন হয়নি।
কথা হল, মগধ্ সম্প্রদায় বা মাগধী প্রাকৃত অর্থাৎ ‘হরিজন’ থেকে উৎপত্তি হওয়া এক সময়ের বাংলা ভাষায় চারা গাছটি যে মরে যায়নি বরংছ সবুজ হয়ে উঠেছে সেইতো পরমায়ু। ভাষা যেভাবে বাক বদল করে তেমনি বাক বদল করতে গিয়ে দেশ-কাল-পাত্র জোয়ারে এসেছেন; জোয়ারে মিলিয়ে গেছেন। কিন্তু বাংলা রয়েছে বাঙালীর উৎকর্ষে, সাধনে ও প্রজ্ঞায়। ইদানিং নিঃশ্বাস গুলোও বাংলায় তুলছি-ফেলছি। বাংলা ভাষাটি বুকে নিযে, মুখে নিয়ে, কাগজের ঠোঙায় ফেলে দিয়ে বা রাস্তায় ছেড়া কাগজের সাথে তুলে নিয়ে; মোদ্দা কথা যে করেই হোক বাংলার পাশাপাশি আমাকেও টেনে নিচ্ছি অনির্নিত গন্তব্যে।

বাংলা ভাষা লিপি, হরফ-অক্ষরের উৎস কিভাবে হল সেটা আজও অজানা; তবে সাম্যকভাবে ভাষা বিজ্ঞানীরা সময় থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য খুজে পেয়েছেন সেটা ১১শ’ মতান্তরে ১০০০ বছর বয়স্ক। কারণ, এ যাবৎ বাংলা ভাষা নিয়ে যে সমস্ত গবেষক কাজ করেছেন তারা সবাই-ই এটুকু একমত হয়েছেন যে বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছে জাপানি বোঞ্জি অর্থাৎ ‘সম্পন্ন’ অথবা নিঁখুত বা সিদ্ধং থেকে। সিদ্ধং একটি লিপিমালা। লিপিটি ৬০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্যবহৃত ছিল। এর পর আর বহুল ব্যবহার পাওয়া যায় না। সিদ্ধং থেকে বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছে বলে যেমন ধারনা করা হয়, পাশাপাশি অসমীয়া লিপি উৎপন্ন করেছে এবং কানা লিপি (যা মূলত জাপানি লিপি) উদ্ভুদ্ধ করেছে। অর্থাৎ সিদ্ধং লিপি দ্বারা বেশ কয়েকটি লিপি ভাষা উৎপন্ন হওয়ায় লিপিটি নিজে বহুলভাবে ব্যবহার থেকে বিলোপ হয়েছে।

বাংলা ভাষার সাথে এর মিলটা হল চেহারার। সিদ্ধং স্বরলিপির আঙ্গিক পরিবর্তন হতে হতে বাংলা স্বর-এর দৃশ্যত চরিত্র বা বর্ণ ধরা পড়েছে। একই সাথে উভয়ই ‘শব্দিয়’ বর্ণমালা লিপি। বাংলা লিপির সহোদ লিপি অর্থাৎ সহোদর আছে আরও দু’জন-তিব্বতি লিপি এবং জংখা ভাষা। তবে বাংলা লিপি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত লিখন পদ্ধতির মধ্যে ষষ্ঠ।



সিদ্ধং লিপি ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত থাকলেও একাদশ শতকে সিদ্ধং প্রজ বাংলা স্বর আলাদা করতে পারে ধ্বণি বিশ্লেষক/ গবেষকরা। ফলে এ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে বাংলা লিপির শুরু একাদশ শতকে। যদি লিপির কথা বলা হয় তবে প্রাসঙ্গিক চলে আসে বাংলা ধ্বণি বা শব্দমালার উৎপত্তি কবে থেকে? যেহেতু ভাষা’র গবেষণা কেন্দ্র মানুষের মুখ অর্থাৎ এর মাধ্যমে বদলে যায়, সংশোধিত হয় বিধায় বাংলা ভাষার ধ্বনির উৎপত্তি খুজতে যাওয়া বোধ করি প্রয়োজনীয় কিছু না। শুধু এখানে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত সিদ্ধং লিপি’র (৬০০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ) যাবৎকালের মধ্যেই বাংলা ধ্বণি উৎপত্তি হয়েছে এবং লিপি জন্ম নিতে সংশ্লেষণ শুরু হয়ে গিয়েছিল।

শুরুতেই বলা হয়েছে, বাংলা ভাষা মূলত মাগধী প্রাকৃত থেকে আসা ভাষা। ফলে প্রাকৃত ভাষার প্রয়োগ এর মধ্যে খুব করে ছিল, বিধায় প্রকৃত বা মাগধী প্রাকৃত থেকে ঈষৎ সরে এলেও বিশেষ কোন ভেদাভেদ টানেনি। ফলে মূল ভাষার বাইরে আংশিক বিচ্যুত উচ্চারণ গুলো ব্যবহারে প্রবণতা ছিল পাল সাম্রাজ্যে। পাল সাম্রাজ্যের সময়কাল যেহেতু ৭৫০ থেকে ১১৭৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এবং একই সময়সীমায় ভারতের পূর্বাঞ্চলে প্রাকৃত’র বিচ্যুত উচ্চারণ বহুলভাবে ব্যবহার হয়। অর্থাৎ ধারণা করা যৌক্তিক যে মধ্য যুগের ঐ সময়ে অবহেলা আর বিচ্যুৎ হয়ে যাওয়া ভাষা প্রচলনটা আজ জীবন্ত বাংলা।

আর ১৭৭৮ সালে ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেডের ইংরেজিতে লেখা ‘অ্যা গ্রামার অব দ্যা বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ এর মাধ্যমে বাংলা মুদ্রণের সূত্রপাত। ১৮৩১Ñএ ভিনসেন্ট ফিগিন্স সম্ভবত বাণিজ্যিক চিন্তায় বাংলা হরফ তৈরী করেন। ১৮৪৭ সালে আমরা সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে ছাপাখানার মালিক হয়ে যাওয়া ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাত থেকে পাই আধুনিক বাংলা হরফ।

অর্থাৎ কোথাকার কোন গোষ্ঠির মুখে সূচনা হওয়া অনার্য ধ্বণি একেবারে পুরো দাড়িয়ে গেল। এখানে আরও একটি ব্যাপারে আলোকপাত করা জরুরী যে, বাঙলা ভাষার উৎসমূল মাগধী প্রাকৃত তা প্রায় নিশ্চিত। প্রাকৃত হল মৌখিক ভাষা এবং মাগধী এসেছে বস্তুত মগধ বা মগ রাজ্য থেকে। ওদিকে মাগধী প্রাকৃত হল ইন্দো-আর্য ভাষা। প্রাচীর মগধ (মগ) রাজ্যে প্রধান ভাষা ছিল মাগধী প্রাকৃত। স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ এ ভাষায় কথা বলতেন। ফলে বাঙালা ভাষা নিয়ে কালে আবর্তে যে অপশ্র“তি উঠেছে যে বাঙালা হিন্দুয়ানীর ভাষা আসলে তা নয়। উৎস মূলে বিবেচনা করলে বাঙালা বুদ্ধদের ভাষা। যারা এতদিন বাঙলাকে হিন্দুদের ভাষা বলে গালি দিয়েছেন তাদের আরও পঠন-পাঠনের দরকার আছে যে।

যদিও বাঙলা ভাষা ও বঙ্গাব্দ প্রচলনে দুটি শাসনামল বিশেষ তর্ক ও খাতিরের সৃষ্টি করেছে। প্রথমটি গৌড়রাজ্য শশাঙ্ক এবং পরবর্তীজন সম্রাট আকবর। দুই পথে চলে যাওয়া এ ইতিহাসের সমাধান না হলেও বাধ সাধেনি কোথাও। আলোচনার এ পর্যায়ে এসে অন্তত এটুকু বলতে হচ্ছে এতক্ষণ বাঙলা ভাষার পথ নিরুপনের সাম্যক রূপ দেয়া হল। এর একটা উদ্দেশ্য আছে; বাংলা কতটা পথ হেটে সিদ্ধান্ত; সিদ্ধান্ত বদল এবং খোলস পাল্টাতে পাল্টাতে এসে ভাষার মর্যাদা পেল। ইতিহাস আরও আছে, ১৯৫২ সালের আস্তিনে। অর্থাৎ যে জোরে বাঙালী হয়েছি তার পিছনের আবর্ত সরল অংকের মতই জটিল। স্বস্তির সংবাদ হল, শেষোক্ত আমরা বাঙালীরা কোন ঘটনাকেই বাদ দেইনি। ঘটন-দুর্ঘটন পটিয়সির মত ভাষার জালে ও বাঙালীত্বের জঞ্জাল বয়ে চলছি। এই শতকে এসে আবারও ভাষা নিয়ে কতগুলো সিদ্ধান্তহীনতায় পড়তে হল। আসলে বাংলার কোন রীতি মূলোৎপদ তা নিয়ে সংশয়।

আলোকপাত করা উচিত প্রমিত রূপ নিয়ে। তিতে হলেও বলতে হয়, বাংলা ভাষার পারিভাষিক শব্দের উদ্ভাবন এবং তার ব্যবহারের ঐক্য সাধন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। যদিও অপরিকল্পিত ভাবে বাংলা ভাষার ‘গাছ’টির শেকড়ে জল ঢালা শুরু হয়, তার উৎকর্ষ সাধন হয় দেশ স্বাধীনের পর। বাংলা ভাষার প্রমিত রূপ স্থির হয়ে আছে বিগত দেড়শ বছর ধরে। যদিও বর্তমানে কিছু লেখক আপত্তি তুলেছেন সেটাও তত জোরালো নয়। তাদের দাবী, প্রমিত বাংলা’র রূপটা গড়ে উঠেছে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের মৌখিক ভাষা নিঃস্বরণে। ঐ অংশটি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ। ফলে বাংলাদেশের বাঙালীদের প্রমিত ভাষাটা কি?
ভাষা লালনে রাষ্ট্র ব্যবস্থারও প্রবল দুর্বলতা লক্ষণীয়। ১৯২৫ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ অনুমোদিত বাংলা প্রমিত রীতি এপার ওপার নির্বিশেষে বাংলায় চালু থাকলেও ১৯৮৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি বাংলা বানানের নতুন নিয়ম চালু করে দেয়। এরপর বাংলাদেশ যেন টের পেল তারও বানান রীতি দরকার। এর খাতিরেই দেশে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পুস্তক বোর্ড বানানের নির্দেশিকা প্রকাশ করে। ওদিকে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করে প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম। আবার পশ্চিম বঙ্গে আনন্দ বাজার এবং সাহিত্য সংসদের বানানরীতি রয়েছে। বাংলাদেশেও এখন প্রথম আলো নিজের বানানরীতি ছাপছেন। ফলে বাংলা ভাষা ব্যবহারে সমতা আসেনি। উল্টো ‘ভাঙ্গা’ ভাষায় রূপ নিয়েছে। এর কারণ, বাংলা ভাষায় মোড়ল আধিক্য। বাংলা একাডেমি, প্রথম আলো, বাংলা আকাদেমি, আনন্দবাজার ও সাহিত্য সংসদ এরা যে রূপে স্বয়ংবড়া বলে দাবি করছে এতে মত এবং পথ জন্মাচ্ছে ভাষারীতি নিয়ে। যে কারণে সাধারণ ভাষা-ভাষীরা পড়েছে শ্যাম রাখি না কুল রাখি’র ফাঁদে। কোন প্রতিষ্ঠান ঠিক বলছে আর কোন বানানরীতি গ্রহন করবো সে নিয়ে মহা গোলযোগ। যে কারণে বাংলা ভাষা এখন নির্দিষ্ট মানদণ্ডে স্বাতন্ত্র নিয়ে বয়ে চলছে বলে সন্দেহ হয়।

এই অধিক মোড়লের কারণে ওদিকের নৃগোষ্ঠি বা উপজাতিদের ভাষাতো যথারীতি হুমকির মুখে। কারণ বৃহদাংশের যুদ্ধ-সংগ্রাম, পালা ও পালা বদলের পর যে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা পেল সেটার আত্মিকরণে যদি মোড়লাধিক্যে ভাষাটাই সংশয়ে পড়ে সেখানে নৃ-গোষ্ঠির ভাষাতো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে সেটাই সঙ্গত। অথচ একটি জাতির পরিমণ্ডলে স্বকীয় ভাষা, উপভাষা এবং নৃ-ভাষা তো সম্পদ।


এগুলো বাচিয়ে না রাখলে ছিপি বন্ধ জারের মধ্যে পড়তে হবে যে, তা কি মোড়লগণ জেনেছেন; শুনেছেন?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০৬

শাহ আজিজ বলেছেন: ভাল বিষয় উপস্থাপন করেছেন। প্রতিটি ভাষাই একটি পথ ধরে স্থায়ী রুপ নিয়েছে । আমরা ভাগ্যবান পৃথিবীর অজস্র শ্লোক, গাথা, পুথি নিয়ে বাংলা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা । বাংলাতে জন্ম নেয়া কাঙ্গালরা উর্দু প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। পারেনি এজন্য যে দুটির ভিন্ন রুপ ও উচ্চারন , বর্ণমালা , হরফ আরেকটি সমস্যা। আমরা যাদের মহামানব বলে জানি তাদের অনেকেরই সাংস্কৃতিক , স্থানীয় প্রথা ইত্যাদির ব্যাপারে জ্ঞান কম ছিল। আমার কাছে ৮০০ শতাব্দী থেকে ১৬০০ পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন বর্ণমালার ছবি আছে কিন্তু কোথায় যে লুকিয়ে আছে খুজে বের করা দুস্কর। ভাবনার কারন নেই কারন বাংলা প্রতিষ্ঠিত ভাষা এবং চর্চা শতভাগ ।
আরও লিখুন এসব বিষয় নিয়ে ।

২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০৫

বিজন রয় বলেছেন: একটি সুন্দর লেখা।
++++

প্রিয়তে রাখলাম আবার পড়তে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.