নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক। ‘জল পরীর ডানায় ঝাপটা লাগা বাতাস’ (২০১৩), ‘সাদা হাওয়ায় পর্দাপন’ (২০১৫) দুটি কবিতার বই প্রকাশিত। তার লেখা নাটকের মধ্যে ফেরা, তৎকালীন, আদমের সন্তানেরা উল্লেখযোগ্য। লেখালেখির জন্য ২০১৫ সালে হত্যার হুমকি প্রাপ্ত হন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান

আমার পরিচয় খুঁজচ্ছি জন্মের পর থেকেই। কেউ পেলে জানাবেন কিন্তু....

সৈয়দ মেহেদী হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

চারটি কারণে গুলশান ট্রাজেডি (পুনঃপোস্ট)

০৯ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৪৩



বাংলাদেশে জঙ্গী আছে ! বাংলাদেশে জঙ্গী নেই !
অনেক বছর ধরে ‘জঙ্গী’র মত একটি স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে এমন কথা চালাচালি ও ঘুটি বাজি চলে আসছিল। এমনকি গোয়েন্দাদের হাতেও তেমন কোন তথ্য ছিলনা কিংবা নেই। কিন্তু বিশ্ব দেখলো খেটে খাওয়া মাুনষের দেশে প্রশাসনের ব্যাপক দলবাজী আর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রবল মিথ্যাবাদীতার কুফল। হয়তো রাজনৈতিক খুনোখুনি চলছিল দেশে। তাই বলে ধর্মের নামে বিশেষ করে ইসলাম নামক তথাকথিত শান্তির ধর্মের ব্যানারে এমন উগ্রবাদীতার অভ্যুত্থান দেখে দেশ-জাতি ও বিশ্ববাসী ম্রিয়মান। শত সহস্র জাগ্রত বিবেকের টিউবলাইটের মধ্যে বিবেকহীনতার এই স্ফুরণ আমাদের বর্জ্রাহত করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মত নিম্নমধ্যবিত্ত রাষ্ট্রে এমন জঙ্গীবাদিতার নেপথ্যে কারা ? প্রশ্ন ওঠাটাই যুক্তিযুক্ত।


জঙ্গীবাদীতার নেপথ্যে যেসব অন্ধকার চরিত্র রয়েছে তাদের পরিচয় কখনোই সামনে আসবে না। তবে সামনে আসা জরুরী। দেশ, রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং জাতির নিরাপত্তার স্বার্থে মুখোশ উন্মোচন দরকার। কিন্তু বাংলা সিনেমার মত গৎবাধা কতগুলো প্রগাগন্ডা ছড়ানো ছাড়া বিশেষ কোন ফায়দা আসবেনা। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে ‘মাইন্কা চিপায়’ পরা জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরানোর জন্য সরকারের দায়িত্বশীল কিছু মন্ত্রীরা বলবেন পুরোনো সংলাপ। বলবেন, এই হামলার ‘জঙ্গী নেত্রী’ খালেদার ডান হাত ঢুকানো ছিল। প্রত্যুত্তরে বিএনপি থেকে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করবেন। বলবে, গুলশান ক্যাফেতে হামলায় আ.লীগ জড়িত। একই সাথে বিদেশে থেকে পলাতক ‘রাজপুত্তুর’ তারেক রহমান বাণী দিবেন। তিনি হয়তো বলবেন, বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিব এই হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে আকাটমূর্খ তারেকের হাতে যথেষ্ট প্রমানাদি আছে। এভাবে কালো রাজনীতির বচন যখন বাংলাদেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠবে তখন হয়তো অন্যকোন ভয়াবহ ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে চলে যাবে গুলশান ট্রাজেডিকে। হাফ ছেড়ে বাঁচবেন সরকার, বিরোধীদল ও রাজনৈতিক নেতারা। এমন ব্লেম গেম কি জাতীয় সংকটের সমাধান করতে পারবে? সুতরাং ব্লেম গেমের অধ্যায় এখানেই শেষ করা উচিৎ। আর যা বলুন বাংলাদেশ এখন আর শান্ত জনপদ নেই। পরিণত হয়েছে টার্গেট জোনে।
এর পিছনে মারাত্মকভাবে দায়ী
১. ধর্মবাদীতার অপপ্রচার চালানোর সুযোগদান
২. সব হাড়িয়ে হলেও হাসিনা সরকারের গদি আকড়ে বাঁচার মানসিকতা এবং
৩. রাজনৈতিক অযোগ্য বিরোধীদল ও তাদের আন্তর্জাতিক টেররিজমের সাথে মৌন সখ্যতার মনোভাব পোষন।

গুলশান ট্রাজেডি হয়তো সরকার ও বিরোধী দলকে কথা বলতে কয়েকদিনের খোড়াক জুগিয়ে গেছে। ব্যর্থ প্রশাসনকে সুযোগ করে দিয়ে গেছে ব্যাংকে একাউন্ট খোলার। কিন্তু জাতি যে চরম নিরাপত্তাহীন, সার্বভৌমত্ব ঝুঁকিতে আছে তার টের পাচ্ছে কি দায়িত্বশীলরা?

গুলশান ট্রাজেডি দেশব্যাপী এমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে, শিশু শ্রেণীর সন্তানটিও মায়ের কোলে থেকে মা’কে প্রশ্ন করে আম্মু এখনো কি গোলাগুলি হচ্ছে?
এই অবস্থান থেকে উত্তরণের গুরুদায়িত্ব সরকারকেই করতে হবে। কারণ সরকারই জঙ্গীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সেই সরকারের আমলেই যদি জঙ্গী হামলার ঘটনা সবচেয়ে বেশী ঘটে তাহলে দেশে সরকারের প্রয়োজন কী?

জিম্মি সংকট নিয়ে মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর আন্তর্জাতিক মহলে জলঘোলা কম হয়নি। যদিও আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ সাংবাদিক ডেকে বলেছেন, এর মাধ্যমে অনেকেই সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করবে। আর থান্ডারবোল্টের পর প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ ঝেড়েছেন গণমাধ্যমের উপর। নিরাশার কথা হল, জনগণ কার উপর ক্ষোভ ঝাড়বেন? তেমন মানুষতো নেই। ফলে জনগণ চুপচাপ। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে যেসব খাটি ‘মোমিন’ রাজপথে এসলাম হেফাজত করতে নেমেছিলেন তারা হয়তো এতিম খানার জন্য চাঁদাবাজী ও ইফতার পার্টিতে যোগ দিতে দিতে ক্লান্ত। একই সাথে বধির, বোবা, প্রতিক্রিয়াহীন। জঙ্গীদের খুনোখুনিতে তাদের ইসলাম ঝুকিতে পরেনা। তাদের ইসলাম ঝুকিতে পরে যখন গণজাগরণ হয় শাহবাগে। গুলশান ট্রাজেডি দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিশাল বিষয়। এতবড় বিষয়ে ঘাটাঘাটি না করতে যাওয়াই শ্রেয়। আমার ধারণা এই হামলা প্রতিহত করা সম্ভব ছিল। কিন্তু করা হয়নি। তার কারণ স্পষ্ট নয়। তবে ৪টি বিষয়ে সমাধানে যেতে পারছিনা। হয়তো এই চারটি কারণ আমাদের ভেতরগত দূর্বলতা জঙ্গী গোষ্ঠীর কাছে প্রকাশ পেয়েছিল বলে টার্গেট হয়ে গেলাম।

প্রথমত: অকার্যকর গোয়েন্দা সংস্থা। দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় প্রশাসনের গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন দল ও দালালিতে ব্যস্ত। এমনও হয়েছে যে, নাশকতা হয়ে যাবার পর খোদ গোয়েন্দাবাহিনী টের পাচ্ছেন, কিছু একটা ঘটেছে। গুলশান ট্রাজেডিতেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। আইজি একেএম শহিদুল হক নিজ মুখে বলেছেন, এই হামলার কোন তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে ছিল না। একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ: কয়েকমাস পূর্বে গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন প্রতিথযশা সাংবাদিক শফিক রেহমান। তাকে রিমান্ডেও নেয়া হল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী পূত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরনের পরিকল্পনা করেছেন এই ‘বুড়ো সাংবাদিক’। জয় কিন্তু অপহরন হননি। অপহরণ করার চিন্তা মাথায় এনেছিলেন কেউ সেই তথ্য চলে আসলো গোয়েন্দাদের দফতরে এবং হাতে নাতে ধরে ফেললেন শফিক রেহমানকে।

এখন প্রশ্ন হল, শফিক রেহমানের পরিকল্পনার কথা যে গোয়েন্দা জানতে পেরেছিল সেই একই গোয়েন্দার হাতেইতো দেশ আছে। তাহলে জাতীয় জীবনে কালো অধ্যায় সংযোজনকারী উগ্র ধর্মবাদীতার এমন জঙ্গী হামলার তথ্য কেন পায়নি গোয়েন্দা? যে গোয়েন্দা শফিক রেহমানের মগজ খুড়ে জয় অপহরনের চিন্তা ধরে ফেলতে পারেন, ধরে ফেরতে পারেন আস্ত শফিক রেহমানকেও। সেই গোয়েন্দারা জঙ্গী হামলর কথা জানতো না এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। তার উপরে ভারি অস্ত্র নিয়ে হামলাকারীরা হলি আর্টিজানে ঢুকলো, হামলা করলো, হত্যার উৎসব করলো। অথচ এর কিছু জানেনা গোয়েন্দ? অর্থাৎ এখানে ব্যর্থ গোয়েন্দাবাহিনী। কিংবা গোয়েন্দারা তথ্য জানতেন না তেমন নয় বরং তারা হামলার বিষয়ে পুরোপুরি অবহিত থাকলেও যে কোন কারণে উচ্চ পর্যায়ে জানায়নি। গোয়েন্দারাও কি চেয়েছিল হামলাটি হোক? এমন বিষয় এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। খতিয়ে দেখা উচিৎ গোয়েন্দা বিভাগকেও। কারণ গোয়েন্দাদের মধ্যেও যে কেউ জঙ্গী কানেকশন নেই তেমন ভাবা উচিৎ নয়।

দ্বিতীয়ত: কারণ হতে পারে জঙ্গীবাদীতা বা উগ্রমৌলবাদকে সরকারের শীর্ষ অবস্থান থেকে প্রশ্রয় দেবার ইঙ্গিত দেয়া যদি হয়। যেহেতু জঙ্গীরা কোন ধর্মের নয়। তবে তারা সমগ্র বিশ্বে এখন ইসলামের ব্যানারে কাজ করছে। এদিকে বাংলাদেশকে তথাকথিত ইসলামিক রাষ্ট্র বলা হলেও এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অসংখ্য ধর্মের লোকদের বসবাস। যেখানে দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত, জাতীয় পার্টি, হেফাজত এবং মতাত্বন্তরে আ.লীগের কিয়দংশ চেষ্টা চালিয়ে আসছিল দেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষনা দেয়ার জন্য। সংবিধানকে এড়িয়ে গিয়ে বা সংবিধানের বুকে চাকু চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিলেন ইসলামিক রাষ্ট্রের। ফলে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী প্রকৃত ইসলাম নিয়ে এগোতে না পারলেও ইসলামী ত্রাস এসে ঢুকে পড়লো রাষ্ট্রের অলি-গলিতে। রোজ রোজ খুন হতে লাগলো লেখক, কবি, ব্লগারসহ অন্যান্য ধর্মালম্বীরা। তার মাঝেও প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করলেন, দেশে মদিনা সনদ বাস্তবায়ন হবে।

তৃতীয়ত: বিরোধীদল বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের দুধ কথায় সাপ পোষার নির্মম বাস্তবতা। ৭৫’ পরবর্তী সময়ে এই বিএনপি’ই রাষ্ট্রবিরোধী জামায়াতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশে। আজ অবধি সেই মানিক-জোড় খাতির বিচ্ছেদ হয়নি। রাষ্ট্র বিরোধী যত কর্মকান্ড তার নব্বই ভাগহ জামায়াত করলেও বিএনপি দিয়ে যাচ্ছে পৃষ্ঠপোষকতা। সেই জামায়াতের সাথে আইএসএর সমঝোতার কথা মাস তিনেক আগে খুব আলোড়ন তুলেছিল। আইএসএর তথাকথিত মুখপত্র ‘দাবিক’ দাবী করেছিল বিপুল পরিমান জামায়াত কর্মী আইএসএ যোগ দিয়েছে। কিন্তু এরপরও বিএনপি জামায়াতকে ছাড়েনি বরংছ আরও আষ্ঠেপৃষ্ঠে আকড়ে ধরে।

চতুর্থ ও শেষ কারণ হতে পারে, ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। বাংলাদেশে খোদ ইসলাম অনুসারীদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিভাজন লক্ষ্যনীয়। এরা প্রতেক্যেই দাবী করে তাদের প্রচারিত বা অনুসারিত মত হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম। এমনকি জঙ্গী বা জেএমবিরাও বলছে তাদের ইসলামই সঠিক। কিন্তু কার ইসলাম সঠিক তা কেউ জানেনা। এর মাঝে সাধারণ যারা খাৎনা করা ইসলামিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠেছেন তারা রয়েছেন বিপাকে। কিছু বুঝে, কিছু না বুঝে ‘ইসলাম’ শব্দ শুনেই বলে যাচ্ছেন ঠিক, ঠিক।


যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছিল তখন দেশে হঠাৎ নাস্তিকের সংখ্যা বেড়েছিল বলে বিশ্বাস বিচার প্রক্রিয়ার বিরোধীদের। বিচার প্রক্রিয়ার বিরোধীদের আমরা দেখেছিলাম বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষে গড়ে ওঠা গণজাগরণের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে দেশব্যাপী তান্ডব চালিয়েছিল। ঢাকাকে তছনছ করে দিয়েছিল হেফাজত।


তখন পাড়া-মহল্লার মসজিদেও গণজাগরণ বিরোধী আলোচনা, ফতোয়া দিতে শুরু করে। কিন্তু জঙ্গীরা যখন তথাকথিত ইসলামের নামে মানুষ জবাই করতে শুরু করলো তখন মসজিদ, মাদ্রাসার সেইসব মুসলমানদের মুখে কুলুপ এঁটে গেছে। মুসলিম ধর্মগুরুরা এখন পাথরের মত চুপচাপ। কোন খুৎবা বা ইসলামি জলসার আলোচনায় এখন আর শুনিনা জঙ্গীবাদ বিরোধী আলোচনা। তাহলে মুসলমানরাই কি এই ‘জবাই’ সংস্কৃতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ? প্রশ্ন থেকে যায়।

উপসংহার:
সরকার যতই বলুক দেশে আইএস নেই, এই দাবী শতভাগ ভূয়া। কারণ আমেরিকা যাদের বন্ধু তাদের শত্র“র প্রয়োজন হয়না। তেমনি জামায়াত যে দেশে টিকে থাকে সে দেশে আইএসএর দরকার কি? তার উপরে দূর্বল গোয়েন্দা সংস্থা, সরকারের ক্ষমতার লোভ, আর বিএনপি’র দেশবিরোধী অবস্থান দিন দিন দেশকে অকার্যকর করেছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রানের পথ সরকারকেই খুঁজতে হবে। আমি বিশ্বাস করি দেশ আস্তিক বা নাস্তিকতায় টৈ-টুম্বুর হলেও কেউ ‘জবাই’ সংস্কৃতি কিংবা জঙ্গীবাদীতাকে চায়না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.