নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক। ‘জল পরীর ডানায় ঝাপটা লাগা বাতাস’ (২০১৩), ‘সাদা হাওয়ায় পর্দাপন’ (২০১৫) দুটি কবিতার বই প্রকাশিত। তার লেখা নাটকের মধ্যে ফেরা, তৎকালীন, আদমের সন্তানেরা উল্লেখযোগ্য। লেখালেখির জন্য ২০১৫ সালে হত্যার হুমকি প্রাপ্ত হন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান

আমার পরিচয় খুঁজচ্ছি জন্মের পর থেকেই। কেউ পেলে জানাবেন কিন্তু....

সৈয়দ মেহেদী হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোথাও কেউ নেই আয়েশা খানমের

১০ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৩:৩০


‘নদীর দ্যাশে জন্ম। পান্তে (পানিতে) ভাইস্যাই জীবন শ্যাষ। নদীর পাড় ভাঙনের লগে লগে জীবন ভাইঙা গ্যাছে। স্বামী নেই, পোলা নেই আছে এউক্কা (একজন) মাইয়া। আমার জীবনই নেই, হের আবার দুঃখ কী? কথাগুলো বলছিলেন বরিশালের হিজলা উপজেলার বাসিন্দা আয়েশা খানম।

আয়েশা খানমের বাড়ি ছিল হিজলার দুঃখ মেঘনা নদীর শাখা ধর্মগঞ্জের তীরে। ধর্মগঞ্জের ধর্মপাড় ভাঙার খেলায় বিলীন হয়ে যায় তার পাঁচ পুরুষের বসতঘর। আয়েশা খানমের প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঠিক সাত দিনের মাথায় ঘটে এই দুর্ঘটনা।

অন্যের নৌকায় ভাসতে ভাসতে নতুন জীবনের গোড়াপত্তন করেন বরিশাল নগরীতে। আর এখন নগরীর কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলা নদীর ওপারে চরকাউয়া ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডে ঝুপড়ি ঘরে থাকেন। বয়সে ষাট পার করা জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, শীর্ণকায় শরীর আয়েশা খানমকে এখন আর কোনো কিছুতেই দুঃখ দেয় না। তার কাছে নারী-পুরুষ বলতে কিছুই নেই। যাদের টাকা পয়সা আছে তারাই এ ভাগ করে।



‘ট্যাকে টাহা না থাকলে কাম হইর‌্যা পাইনা দিশা, আবার ব্যাডা-মাতারি’ বলতে বলতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চেহারায় অসংখ্য ভাজ পড়েছে, যেন বরিশাল বিভাগে জালের মতো ছড়ানো নদীর শাখা-প্রশাখা।

শুধু তিনি যে পরিবারসহ সব হারিয়েছেন তা কিন্তু নয়, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলায় নদী ভাঙনে সর্বহারা হওয়ার উদাহরণ মামুলি ব্যাপার। নদীর গ্রাসে ভিটে-জমি হারিয়ে গেলে অনেকেই পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। কিন্তু আয়েশা এসেছেন বরিশাল। স্বামী ইছাহাক বেপারিকে নিয়ে ইট ভেঙে সংসার চালাতে শুরু করেন। তখনো জানতেন না জীবনে আরও ভাঙন অপেক্ষা করছে।

প্রায় ৩০ বছর আগে ভাটারখাল বস্তিতে থাকতেন তিনি। ততদিনে এক ছেলে তিন মেয়ের জননী হয়েছেন। কিন্তু একদিন জানতে পারলেন স্বামী সাগরদী এলাকায় আরেক দিনমজুর নারীকে বিয়ে করে নতুন ঘর বেধেছে। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীর দ্বিতীয় সংসার থেকে ফেরাতে না পেরে ভাঙন মেনে নেন।

আয়েশা খানম জানান, ইছাহাক বেপারি তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তার বছর তিন পর জানতে পারেন মারা গেছেন স্বামী। মৃত্যুর আগে আয়েশা খানমকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ দেখা দিতে যাননি আয়েশা।

তিনি বলেন, যে স্বামী আমারে হালাইয়া থুইয়া যাইতে পারে হেই মরা স্বামীরে দ্যাখতে যামু ক্যা? আমার কী ঘিন নাই। যাউক তুই সবই খা। আমারে খাওয়াইবে আল্লায়।

স্বামীর ওপর অভিমান করে আর কোনোদিন তার কবরও দেখতে যাননি এই নারী। এমনকি ফেরেননি বাবার বাড়িতেও। চার সন্তান নিয়ে ইট ভেঙে সংসার চালাতেন। তখন পাঁচ টাকায় দিনমজুরি দিতেন। আর তাতেই চলত অভাবের সংসার।

মেয়ে দুটিকে বড় করে বিয়েও দেন। কিন্তু মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের চাহিদামতো টাকা দিতে না পারায় বড় মেয়েকে খুব জ্বালাতন করত। শেষে বিষ খেয়ে মারা গেছে সেই মেয়ে। তারপরের মেয়েটিও স্বামীর ঘরে মারা গেছেন। তার ধারণা, শ্বশুর বাড়ির মানুষ মেয়েকে মেরে ফেলেছে। কিন্তু তার বিচার চাইতে পারেনি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে লাশ হয়ে ফেরেন ছেলে।

আয়েশা বলেন, কুঁড়ি রমজানে এশার নামাজের পর ঘরে ফিরে হঠাৎ বুকে ব্যথা উঠছে বলতে বলতে মারা যায় ছেলে। এখন মনোয়ারা নামে এক মেয়ে আছে। তারও জীবনে সংসার হয়নি। মায়ের সঙ্গেই থাকেন। শ্বাস কাশের রোগ আছে। হয়তো তার মৃত্যু আয়েশার আগেই হতে পারে।

এক জীবনের আয়ু ফুরাতে গিয়ে একে একে শেষ হয়ে গেছে চারপাশের সকল স্বজন। অসহায় এই নারীর দিন কাটছে অন্যের সাহায্য সহায়তায়। স্থানীয় ইউপি সদস্য একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে দিয়েছেন। দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ৮ হাত। তাতে ঘুমানোর জন্য একটি চৌকি আর কয়েকটি থালাবাসন আছে। ঝুপড়ি ঘরটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন আয়েশা। অল্পদিনে ঘরটি ভেঙে ফেলবে জুতা প্রস্তুতকারী কারখানার লোক।

স্থানীয়রা জানান, বরিশালের একটি জুতা প্রস্তুতকারী কোম্পানি জমিটি কিনে নিয়েছে। শিগগিরই কারখানার অবকাঠামোর কাজ ধরবে জমিতে। তারা এসে উচ্ছেদের কথা জানিয়ে গেছে।

আয়েশা খানম বলেন, "এই ঘর ভেঙে ফেললে অন্যের বাড়ির বাগানে গিয়ে থাকতে হবে। নয়তো পথের পাশে থেকে বাকি জীবন পার করতে হবে। সরকারি সহায়তা বলতে কিছুই পায় না। কেন পাচ্ছেন না? তারও সহজ জবাব আয়েশার, কিছু পাইতে হইলে কইয়া (তদ্বির) দেওয়ার মানুষ লাগে। মোরতো কোথাও কেউ নাই।"

অসহায় এই নারীর বিষয়ে কথা হয় চরকাউয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুনিরুল ইসলাম ছবির সঙ্গে। তিনি বলেন, তাকে ঘরটি আমি তুলে দেইনি। সম্ভবত ইউপি সদস্য দিয়েছেন। এ ছাড়া কোনো সাহায্যও দেওয়া হয়নি। কারণ এক ইউনিয়নের লোককে অন্য ইউনিয়নের কেউ সহায়তা করতে পারে না। সাহায্য পেতে হলে ভোটার আইডি কার্ড দরকার। ওই নারীর তা সম্ভবত নেই। আর তিনি আমার ইউনিয়নের লোকও নন। সে কারণে তিনি সরকারি সাহায্য পাচ্ছেন না।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৫:০৪

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: এই ব্যার্থতার দায়- আমাদের সকলের।
আমরা কি কোনো ভাবে এই নারীর সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি?

২| ১০ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৫:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:




ইউপি চেয়ারম্যান ইডিয়ট বলছে, আয়শা অন্য ইউনিয়নের লোক? সে এই মহুর্তে যেই ইউনিয়নে রাতে ঘুমায়, সে তো সেটার বাসিন্দ; শালা বলদ, চেডয়ারম্যান হয়েছে?

৩| ১০ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৫:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:



বরিশাল, খুলনার লোকজন হিংস্র ও কমবুদ্ধিমান; ১ জনই বুদ্ধিমান ছিলেন, শেরে বাংলা; বাকীগুলো দুষ্ট।

৪| ১০ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৫:৪২

চাঁদগাজী বলেছেন:




আপনি আয়েশার জন্য কিছু করবেন?

৫| ১০ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৬:৩২

আহমেদ জী এস বলেছেন: সৈয়দ মেহেদী হাসান ,




কবির ভাষাতে বলতে হয় -
"দুঃখে যাদের জীবন গড়া
তাদের আবার দুঃখ কিসের !!!!!!!"


চরকাউয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসলেই " চউরর‍্যা"। এই সব টাকার জোরে হওয়া লোক দেখানো জনপ্রতিনিধিরা
বেশীর ভাগই এমন কথা বলে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলেন।
আয়শা খানম কি বাংলাদেশের নাগরিক নন ? তাহলে তার দায় বাংলাদেশ সরকারকেই নিতে হবে আর সরকারই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেবদের মধ্য দিয়েই তো জনহিতকর কাজগুলো করে থাকেন। জনহিতকর প্রকল্পের এসব জিম্মাদারদের প্রশ্ন করতেই হয় - " জবাবদিহিতা মূলক সরকারে ( সরকারী ভাষ্য ) হেগো কামডা কি ? হেরা আয়শা খানমের গ্রামত্য-
ইউনিয়নত্য লইয়া কি জবাব দেবেন ? কারা হেইডা ঠিক করবে ? "

৬| ১০ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:০৫

আমি সাজিদ বলেছেন: খুব খারাপ লাগলো পড়ে

৭| ১০ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:০২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: জীবনটা তার গেল দুঃখে দুঃখে। সমাজের মানুষের এগিয়ে আসা দরকার তার সহায়তায়।

৮| ১০ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:৩৩

ওমেরা বলেছেন: এক কষ্টের জীবনও থাকে ! আল্লাহ মাফ করুন, একটু খানি কষ্ট পেলেই ধৈর্য হারা হয়ে যাই ।

৯| ১০ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: এই রকম আয়েশা খানম এর অভাব নেই দেশে।

১০| ১০ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:২৫

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: উফ এত কষ্ট লাগে :(

১১| ১০ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৪৫

মিরোরডডল বলেছেন:




এক জায়গার মানুষ কেনো আরেক জায়গার মানুষকে সাহায্য করতে পারবে না ?
এখানে আবার ভোটার আইডিই বা কেনো লাগবে ।
মেহেদী কি কিছু ভাবছে এই অসহায় আয়েশা খানমকে নিয়ে ।
ভাবলে জানাবে প্লীজ ।



১২| ১০ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৫৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এমন শত আয়শা উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাক। তবেই আমরা কানাডা হবো

১৩| ১০ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



"তুমুলভাবে আলোচিত সাংবাদিক" কি জীবিত আছেন?

১২ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:৩৮

সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেছেন: কেন ভাইজান?

১৪| ১১ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:০৭

আজগুবী বলেছেন: এসব আয়েশাদের ভাসিয়ে দিয়ে তবেই কি আমরা সিঙ্গাপুর হবো?

১৫| ১১ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:০৫

করুণাধারা বলেছেন: আমরা কি কোনভাবে সাহায্য করতে পারি এই অসহায় মহিলাটিকে?

১৬| ১৩ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৬:৩১

ডাব্বা বলেছেন: অদ্ভুত লাগল আয়েশা খানমের চারিত্রিক দৃঢ়তা। এত কষ্টেও মানুষ থাকে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.