![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের পুকুর-খালে-বিলে ক্ষুদ্রাকার এক ধরনের মাছ পাওয়া যায়, সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় এদেরকে ‘দারকিনা’ বলে। এই মাছগুলোর বৈশিষ্ট্য হল সবসময় দলবেধে চলে আর হঠাৎ করে লাফদিয়ে উঠে। মানুষ ভাবে এখানে না জানি কত মাছ। অনেকে ভূল করে জাল-বড়শি নিয়ে আয়োজন করে মাছ ধরতে নেমে যায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত হল সেই ‘দারকিনা’ মাছের মত। এদের জনসমর্থন কোন ভাবেই ৫% অতিক্রম করবে না, কিন্তু যে কয়জন আছে সবাই মাঠে নেমে আসে। ফলে আ’লীগ আর বিএনপি উভয়দলের কাছে এদের কদর বেশী। বিএনপি যেকোনভাবেই জামায়াতকে সঙ্গে রাখতে চাচ্ছে আর আ’লীগ নিজেদের সাথে না আনতে পেরে পাইক পেয়াদা-শাহবাগের জনগন সবাইকে নিয়ে সেই ‘দারকিনা’সম জাময়াত নিধন করতে চাচ্ছে। আর এই দারকিনা শিকার আর ধরে রাখার প্রতিযোগীতা উভয়দলের জনগনের উপর চরম আস্থাহীনতার নগ্ন প্রকাশ।
পক্ষকেশ জামায়াত নেতারা এদেশের জনগন আর যুগের ভাষা কোনদিনও বুঝতে পারে নাই। একাত্তরেও পারেনাই এখনও পারছেনা। এদেশের জনগন বড়ই আজব চিজ, এরা জামাতের মত অন্ধ ধার্মিকদের যেমন পছন্দ করে না তেমন বামদের মত উগ্রধর্ম বিরোধীদেরও পছন্দ করে না। এরা একবার আ’লীগের লাথি খেয়ে বিএনপির কাছে যায় আবার বিএনপি’র প্যাদানি খেয়ে আ’লীগের কাছে আসে।তারপরও চরম ডান আর চরম বাম এরা কোন চরমের কাছেই যায় না।
তাইতো এককালে নারী নেতৃত্বকে হারাম ফতোয়া দানকারী জামায়াত আজ খালেদা আপার শাড়ির আচল ধরে ক্ষমতার স্বাদ নেয়ার চেষ্টায় মত্ত। আর এক সময়কার আ’লীগের নির্মম নিধনযজ্ঞের শিকার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতায় মুখের ফেনা তোলা বামরা হাসিনা আপার শাড়ির আচল ধরে ক্ষমতার স্বাদ নেয়ায় ব্যস্ত। উভয় দলের এই দারকিনা নিয়ে ব্যস্ত না থেকে সুস্থ্য ভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করা উচিত। ক্ষুদ্র জামায়াত নিধনে মন না দিয়ে হাসিনা আপা যদি এদেশের গনমানুষের ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে পারতেন তাহলে বাংলার মানুষ আজীবন ক্ষমতায় রাখত। রক্তের নদী বইয়েদিয়ে তাঁকে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করতে হত না।
সদ্যপ্রয়াত কমরেড হুগো চাভেজের জন্য যে আজ সারা ভেনিজুয়েলা চোখের পানি ফেলছে তা চাভেজ রক্ত পিপাসু ছিলেন বলে নয়। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতায় চাভেজ আপোষহীন ছিলেন বলে হলুদ মিডিয়ার কাছে তিনি স্বৈরশাসক হলেও ভেনিজুয়েলাবাসীর কাছে তিনি ছিলেন স্বপ্নের নায়ক। না, তাকে স্বপ্নের নায়ক হতে দেশ বাসীর রক্তে হাত রঞ্জিত করতে হয়নি, তিনি শুধু তাদের ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। ক্ষমতারোহনের সময় যে ভেনিজুয়েলার দারিদ্রের হার ছিল ষাট ভাগেরও বেশী একযুগের চাভেজিয় শাষনে তা এখন পচিশ ভাগে নেমে এসেছে। জনগন তাঁর জন্য কাঁদবে নাতো কি আমাদের চানক্যদের জন্য কাঁদবে?
মাহাথির দরিদ্র-নিম্নাঞ্চল মালেশিয়াকে পরিণত করেছেন এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে। দীর্ঘ দুই যুগের শাসন ধরে রাখতে তাকে পুলিশের সাহায্য নিতে হয় নাই।জনগনের ভোটে পরাজিত হয়ে নয় তিনি বীরের মত রাজনীতির মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছেন। আজও দলমত নির্বিশেষে মালেশিয়ানরা মাহাথিরকে দেবতার মত শ্রদ্ধা করে। বাংলার জনগন হাসিনা আপাকে যে বিপুল ভোটে তাদের শাসক নির্বাচিত করেছিল, তা ‘দারকিনা’ শিকার করে দেশে অস্থিতিশলতা তৈরী করার জন্য নয়। দেশের মানুষের আস্থার প্রতিদান দিয়ে যদি উনি তাদের ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে পারতেন তাহলে জামায়াত মেরে বিএনপিকে দূর্বল করে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করতে হত না। জনগনই ভালবেসে আবার ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় নিয়ে আসত। তাই আ’লীগ বিএনপির উচিত দেশের মানুষের হৃদয়ের ভাষা বুঝে রাজনীতি করা। এদেশের মানুষের চাহিদা চিরকালেই খুবই কম, এরা তিনবেলা পেটপুরে খেতে, আর রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারলেই সরকারের উপর খুশি থাকে। তাই ক্ষমতা চীরস্থায়ী করার জন্য “দারকিনা” জামায়াত নিধন না করে জনগনের ভাতের অধিকার নিশ্চিত করে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। না হলে কমপক্ষে এটা বুঝা উচিত ‘দারকিনা’ জামায়াত, কেএম হাসান-আর এম এ আজিজের মাধ্যমে ক্ষমতা মাধ্যমে ক্ষমতা নির্ধারিত হয় না। শেষবেলা জনগনই নির্ধারণ করে দেয় ক্ষমতা কার কাছে যাবে। যত হিসাব কিতাবই করা হোকনা কেন অন্ধকার কক্ষে ব্যালটের মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় ক্ষমতা।
©somewhere in net ltd.